জরায়ুমুখের ক্যান্সার

জরায়ুমুখ ক্যান্সার বা জরায়ুর ক্যান্সার (ইংরেজি: Cervical cancer) নারীদের জন্য একটি ভয়াবহ ব্যাধি এবং জরায়ুমুখ ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী নারীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে একজন নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন এবং প্রতি বছর ৫০ লক্ষাধিক নারী নতুন করে আক্রান্ত হন (প্রেক্ষিত ২০১০)।

জরায়ুমুখের ক্যান্সার
জরায়ু ক্যান্সারের বিকাশের পর্যায়গুলি

জরায়ুমুখ ক্যান্সার ১৫-৪৫ বছর বয়সের নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, কিন্তু ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশের প্রায় ২ থেকে ২০ বছর আগেই একজন নারী এ রোগের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন। তবে সচেতনতার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়। সাধারণত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের নারীরা স্বাস্থ্য বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন না বলে এই রোগের বিস্তার বেশি। তবে উন্নত দেশের নারীরা এবিষয়ে সচেতন এবং উন্নত জীবনযাপনের কারণে অনেকটাই এই রোগ থেকে নিরাপদ। জরায়ু-মুখ ক্যান্সার শনাক্ত করার জন্য ‘পেপস স্মেয়ার টেস্ট’ রয়েছে, যা উন্নত দেশের নারীরা দ্বিধাহীনভাবে গ্রহণ করতে পারেন, যা অনুন্নত দেশে গ্রহণ করতে অনেক পারিবারিক ও সামাজিক বাধা রয়েছে।

সংক্রমণ

২০ বছরের কম বয়সীদের নিচে এ রোগ সাধারণত হয় না। আক্রান্তরা সাধারণত ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী হয়ে থাকেন। ৬০ বছরের পরও এ রোগ হতে পারে, তবে সংখ্যা তুলনামূলক কম। উপযুক্ত চিকিৎসায় শতভাগ আরোগ্য সম্ভব। হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) হিউম্যান পেপিলোমা বা এইচপি ভাইরাস জরায়ুমুখের ক্যানসারের একটি অন্যতম কারণ, তবে এটি একমাত্র কারণ নয়। যৌন সংযোগে এর সংক্রমণ ঘটে। সংক্রমণের এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জরায়ুমুখের স্বাভাবিক কোষ পরিবর্তিত হতে থাকে এবং একসময় তা ক্যান্সারে রূপ নেয়। এযাবৎ (প্রেক্ষিত ২০১০) ১০০ ধরনের এইচপি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, যার বেশিরভাগই জরায়ু ক্যান্সারের জন্য অতোটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে এইচপিভি-১৬, এইচপিভি ১৮, এইচপিভি-৬, এইচপিভি-১১ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত নারীদের জরায়ু প্রায়ই এইচপি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। এতে কোনো উপসর্গ থাকে না বা শারীরিক পরীক্ষায় কোনো চিহ্ন বা ক্ষত পাওয়া যায় না। এর জন্য কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন নেই। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাবলে ১৮-২৪ মাসের মধ্যে জরায়ু প্রায় সব এইচপি ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে যায়। জরায়ুতে এইচপি ভাইরাস দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে, জরায়ু কোষে পরিবর্তনের সূত্রপাত হয় এবং ধীরে ধীরে তা ক্যান্সারে রূপ নেয়।

পেপস স্মেয়ার টেস্ট

পেপস স্মেয়ার টেস্ট বা প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট, এজাতীয় ক্যান্সার শনাক্তকরণের একটি সহজ পরীক্ষা। জরায়ুমুখ থেকে রস নিয়ে অণুবীক্ষণযন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে ক্যান্সার, ক্যান্সার হওয়ার পূর্বাবস্থা ও জরায়ুমুখের অন্যান্য রোগ যেমন প্রদাহ (ইনফ্লামেশন) শনাক্ত করা যায়। এটি একটি ব্যথামুক্ত ও সাশ্রয়ী পরীক্ষা পদ্ধতি। সাধারণত বিবাহিত নারীদের ২১ বছরের পর থেকে এ পরীক্ষা শুরু করা যেতে পারে এবং দুই বছরে একবার করে পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেয়া হয়। ৩০ থেকে ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত, যাদের ফলাফল তিনবার 'স্বাভাবিক' এসেছে, তারা প্রতি তিন বছর পর পর এই পরীক্ষা করা উচিত। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে এ রুটিনের পরিবর্তন হতে পারে।

প্রতিরোধক

সাধারণত ১০ বছর বয়সের পর থেকেই জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধক টিকা নেয়া যায়। মোট তিন ডোজ টিকা নিতে হয় – প্রথম ডোজের এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজ এবং প্রথম ডোজের ছয় মাস পর তৃতীয় ডোজ টিকা নিতে হয়। টিকা গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত পরীক্ষা করালে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের আক্রমণ হার কমিয়ে আনা যায়। ভাইরাস এইচপিভি-১৬, এইচপিভি-১৮, এইচপিভি-৬, এইচপিভি-১১-এর প্রতিরোধক টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) নিয়মানুযায়ী নয় থেকে ২৫ বছর বয়সে এ টিকা কার্যকর হয়। গর্ভাবস্থায় এ টিকা প্রদানের অনুমোদন নেই। আক্রান্ত হয়ে ক্যান্সার সংঘটনের পর এই টিকা আর কোনো কাজে আসে না।

তবে ঔষধি প্রতিরোধকের চেয়ে আচরণগত প্রতিরোধকের দিকে বিজ্ঞানীরা বেশি গুরুত্বারোপ করেছেন। যেমন: বাল্য বিবাহ রোধ; অধিক সন্তান প্রসব; ধূমপান করা (এমনকি পরোক্ষ ধূমপানের স্বীকার হওয়া); পানের সাথে জর্দা, সাদা পাতা, দাঁতের গোড়ায় গুল (তামাকের গুঁড়া) রাখা ইত্যাদি কারণে এই ক্যান্সারে আক্রান্তের সম্ভাবনা বাড়ে। আর সুষম খাবার গ্রহণ; দৈনিক তিন-চারবার ফল, শাকসব্জি, তরকারি খাওয়া; পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ও সামাজিক অনুশাসন মান্য করা এই রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এর পাশাপাশি নারীর, নিয়মিত পেপস স্মেয়ার টেস্টে অংশ নেওয়া উচিত, তাতে রোগ আগেভাগে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

বিশ্বব্যাপি বিস্তার

জরায়ুমুখের ক্যান্সার 
সারাবিশ্বে ২০০৪ সালে প্রতিলাখে বয়স অনুসারে গড় নারীমৃত্যুর হার
  ২.৪এর কম
  ২.৪-৪.৮
  ৪.৮-৭.২
  ৭.২-৯.৬
  ৯.৬-১২
  ১২-১৪.৪
  ১৪.৪-১৬.৮
  ১৬.৮-১৯.২
  ১৯.২-২১.৬
  ২১.৬-২৪
  ২৪-২৬.৪
  ২৬.৪এর বেশি

জরায়ুমুখ ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী ১২তম সবচেয়ে পরিচিত রোগের নাম। নারীদের জন্য ৫ম প্রাণঘাতী রোগের নাম জরায়ুমুখ ক্যান্সার। প্রতিলাখে প্রতিবছর ১৬ জন নারী এই রোগে আক্রান্ত হন। যাদের ৮জনই মৃত্যুবরণ করেন। আনুমানিক ৮০শতাংশ উন্নয়নশীল দেশের নারীরা এই ব্যাধিতে আক্রান্ত। ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী ৪৭৩,০০০ টি জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঘটনা জানা যায়। ২৫৩,০০০ জনের প্রতিবছরে মৃত্যু হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জরায়ুমুখ ক্যান্সারে ৮ম কমন রোগ। ১৯৯৮ সালে ১২,৮০০ মার্কিন নারীর মধ্যে ৪,৮০০ জন মৃত্যুবরণ করেন।২০০৮ সালে ৩,৮৭০ জন মার্কিন নারী এই রোগে মারা যায় বলে ধারণা করা হয়।

বাংলাদেশ

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৩,০০০ নারী নতুন করে জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং প্রতিবছর মৃত্যুবরণ করেন প্রায় ৬,৬০০ নারী (প্রেক্ষিত ২০১০)। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে সারাদেশে ১৮ জন নারী মারা যাচ্ছেন জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগ থেকে সর্বশেষ প্রকাশ করা প্রতিবেদনমতে, ২০০৫ সালে পাঁচ হাজার ৪১১ জন মোট ক্যান্সার শনাক্ত রোগীর মধ্যে নারীর সংখ্যা ছিল দুই হাজার ২৭৫ জন। এর মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৬১ জন।এ ক্যান্সারে আক্রান্ত ৫৬১ জনের মধ্যে ২১৩ জনেরই বয়স ছিল ৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়সের মধ্যে। আর ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সের মধ্যে ছিল ২৬ জন।

তথ্যসূত্র

Tags:

জরায়ুমুখের ক্যান্সার সংক্রমণজরায়ুমুখের ক্যান্সার পেপস স্মেয়ার টেস্টজরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধকজরায়ুমুখের ক্যান্সার বিশ্বব্যাপি বিস্তারজরায়ুমুখের ক্যান্সার তথ্যসূত্রজরায়ুমুখের ক্যান্সারইংরেজি ভাষা

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

শান্তিনিকেতনমুকেশ আম্বানিবীর উত্তমবাংলাদেশী টাকাশবনম বুবলিওয়েব ধারাবাহিকসূরা ইখলাসইব্রাহিম (নবী)বিকাশকরকুলম্বের সূত্রশেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডইসলামে যৌনতামিশনারি আসনবঙ্গভঙ্গ (১৯০৫)২০২৪ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কালীঈমানদোয়া কুনুতধানকনডমইসলামের ইতিহাসমশাআল্লাহশিবমানুষবিপাশা বসুবিজয় দিবস (বাংলাদেশ)রঙের তালিকাটেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষকআফগানিস্তানউইকিপিডিয়াপিঁয়াজগুগল ম্যাপসএপেক্সসহীহ বুখারীতুরস্কঐশ্বর্যা রাইমিজানুর রহমান আজহারীইসরায়েল–হামাস যুদ্ধঅকাল বীর্যপাতমহেন্দ্র সিং ধোনিশেখ হাসিনাসিলেটউপন্যাসঅধিবর্ষআবু হুরাইরাহহরপ্পা২৭ মার্চকলকাতামোহাম্মদ সাহাবুদ্দিননিষ্ক্রিয় গ্যাসবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিআর্জেন্টিনা–ব্রাজিল ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাবাংলার শাসকগণপলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমসার্বজনীন পেনশনউসমানীয় খিলাফতব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলসিফিলিসএকাদশ রুদ্রজীবনানন্দ দাশউমাইয়া খিলাফতসূরা ফাতিহাতরমুজলোটে শেরিংভাষানিউটনের গতিসূত্রসমূহভারতের জাতীয় পতাকাবর্তমান (দৈনিক পত্রিকা)মার্চমূত্রনালীর সংক্রমণজসীম উদ্‌দীনচাকমা১ (সংখ্যা)প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদআসরের নামাজ🡆 More