চলচ্চিত্র সম্পাদনা হল চলচ্চিত্র নির্মাণ এর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত কৌশল। চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় চিত্র ও শব্দগ্রহণ সম্পূর্ণ হবার পর সেগুলি যথাযথভাবে সম্পাদনা করে তবেই একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র তৈরী হয়। পূর্বে সম্পাদনা করা হত আলোকচিত্রগ্রাহী ফিল্ম এর উপর, কিন্তু বর্তমানে এই ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমবর্ধমান।
একজন চলচ্চিত্র সম্পাদক আলোকচিত্রগ্রাহী ফিল্মের উপরে গৃহীত ছবিগুলি থেকে প্রথমে প্রয়োজনীয় শট গুলি আলাদা করেন, তারপর সেগুলি নির্দিষ্ট ক্রম অনুসারে সাজিয়ে পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্রটি তৈরী করেন। চলচ্চিত্র সম্পাদনা এক বিশেষ ধরনের শিল্পনৈপুণ্য যা কিনা চলচ্চিত্রশিল্পের একান্ত নিজস্ব প্রয়োগকৌশল, আর এই কৌশলই চলচ্চিত্রকে বাকি সমস্ত পূর্বসূরী শিল্পের তুলনায় স্বাতন্ত্র্য এনে দিয়েছে। চলচ্চিত্র সম্পাদনাকে বলা হয়ে থাকে ‘অদৃশ্য শিল্প’ কারণ যদি চলচ্চিত্রটি সঠিকভাবে সম্পাদিত হয় তাহলে দর্শক এমনভাবে তার মধ্যে অঙ্গীভূত হয়ে পড়েন যে আলাদা করে সম্পাদকের কৃতিত্ত্ব চোখে পড়েনা।
চলচ্চিত্র সম্পাদনা প্রধানত এমন এক শিল্প, প্রযুক্তি এবং পদ্ধতির মিশ্রণ, যা অনুসরণ করে একধিক শট এর বিভিন্ন অংশ সুসঙ্গত ক্রমে জুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সম্পাদক এই কাজটি যান্ত্রিকভাবে করতে পারেন না, উল্টে একটা চলচ্চিত্র শেষ পর্যন্ত কেমন হবে, তার অনেকটাই সম্পাদকের সৃজনশীলতার উপর নির্ভর করে। চলচ্চিত্রটির কাহিনীর বিভিন্ন স্তর, ছবি, কথোপকথন, অভিনয়, সঙ্গীত, গতি, সবকিছুকে একত্রিত করে ছবিটিকে পুনর্নির্মাণ করতে হয় সম্পাদককে। তাই বিশ্বজুড়ে অনেক সৃষ্টিশীল চলচ্চিত্র পরিচালক নিজের ছবি নিজেই সম্পাদনা করেন, যেমন আকিরা কুরোসাওয়া, বাহরাম বেজাই, কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয়, ইত্যাদি।
ডিজিটাল সম্পাদনার আবির্ভাবের পর থেকে সম্পাদকের দায়িত্ত্বেরও পুনর্বিন্যাস হয়েছে। পুরোনো জমানায় চলচ্চিত্র সম্পাদক প্রধানত ছবিই সম্পাদনা করতেন। শব্দ ও সঙ্গীত পুনর্যোজনা, ভিস্যুয়াল এফেক্ট, ইত্যাদি অন্যান্য খুঁটিনাটি দেখাশোনা করতেন অন্য ব্যক্তি, অবশ্যই সম্পাদক এবং পরিচালকের নির্দেশনায়। বর্তমানে, বিশেষ করে কম বাজেটের ছবিতে, এই সমস্ত কিছুর দায়িত্ত্ব একজন সম্পাদকই সামলান, কখনো কখনো এক বা একাধিক সহকারীর সাহায্যে।
গোড়ার দিকে চলচ্চিত্র হত ছোট, প্রধানত একটিই লম্বা আর স্থিতিশীল শট থাকত। কোনও জনবহুল রাস্তায় চলচ্চিত্র ক্যামেরা বসিয়ে দেওয়া হত, ক্যামেরা চলত যতক্ষণ না ফিল্ম শেষ হয়ে যায়! চলচ্চিত্রের মাধ্যমে যে গল্প বলা সম্ভব, এই ধারণাই তখন আসেনি। পর্দায় চলন্ত গাড়িঘোড়া, মানুষজন, ইত্যাদি দেখে দর্শকরা আমোদ পেতেন। সেই চলচ্চিত্রে সম্পাদনার কোনো ভূমিকাই ছিলনা।
অগ্রণী ব্রিটিশ নির্মাতা রবার্ট ডবলিউ. পল এর তৈরী কাম এলং, ডু! ছবিকেই প্রথম সম্পাদিত ছবি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৮৯৮ সালে তৈরী এই ছবিতেই প্রথম দুটো শট কে জোড়া লাগিয়ে ঘটনার ধারাবাহিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রথম দৃশ্যে এক প্রবীণ যুগলকে দেখা গেল মধ্যাহ্নভোজন সেরে একটি শিল্পকলা প্রদর্শনীকক্ষের বাইরে থেকে দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে, আর পরের দৃশ্যেই দেখা গেল তারা প্রদর্শনীকক্ষের ভেতরে কী কী করছেন। পল এর ‘সিনেমাটোগ্রাফ ক্যামেরা নং ১’ ছিল প্রথম ক্যামেরা যাতে ফিল্মের কোনো অংশ একবার এক্সপোজ করে আবার ঘুরিয়ে নিয়ে এসে দ্বিতীয়বারও এক্সপোজ করা যেত। ১৮৯৮ সালে জর্জ মেলিয়েজ এই ক্যামেরার সাহায্যে তার দ্য ফোর ট্রাবলসাম হেডস ছবিতে মাল্টিপল এক্সপোজার ব্যবহার করে ছবি তোলেন। তার ছবিতে ডিজল্ভ সম্পাদনা রীতির ব্যবহার দেখা যায়।
এই সময়ে ইংল্যান্ডের ব্রাইটন এবং হোভ অঞ্চলে কিছু চলচ্চিত্র নির্মাতা একাধিক শট বহুল ছবি তৈরির ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন জর্জ এলবার্ট স্মিথ আর জেমস উইলিয়ামসন। পরবর্তীকালে এদের গোষ্ঠীকে একত্রে ব্রাইটন স্কুল নামে অভিহিত করা হয়। ১৯০০ সালে স্মিথ তৈরী করেন অ্যাস সিন থ্রু এ টেলিস্কোপ, এই ছবির মুখ্য দৃশ্য ছিল রাস্তায় এক যুবক খুব যত্নের সঙ্গে তার বান্ধবীর জুতোর ফিতে বেঁধে দিচ্ছেন, আর একজন বৃদ্ধ ভদ্রলোক দূর থেকে টেলিস্কোপের সাহায্যে সেই দৃশ্য দেখছেন। তারপর কাট করে যুবতীর পায়ের ক্লোজ-আপ দেখান হয়, এবং তারপরেই কাট ব্যাক করে মূল দৃশ্যে ফিরে যাওয়া হয়।
ঐ একই সময়ে তৈরী জেমস উইলিয়ামসন এর অ্যাটাক অন এ চায়না মিশন স্টেশন ছবিটিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চৈনিক বক্সার বিদ্রোহ অবলম্বনে তৈরী এই ছবির প্রথম দৃশ্যে দেখা যায় বিদ্রোহীরা একটি ব্রিটিশ মিশন আক্রমণ করছে, পরের দৃশ্যে দেখা যায় মিশনের ভিতরের বাগানে টানা যুদ্ধ চলছে। এরপর একদল সশস্ত্র ব্রিটিশ নৌসেনা এসে পৌঁছায় এবং বিদ্রোহীদের পরাজিত করে মিশনারিদের উদ্ধার করে। চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক দৃশ্য থেকে কাট করে সম্পূর্ণ ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে উল্টো দিক থেকে একই দৃশ্য দেখানো, পরিভাষায় যাকে বলে ‘রিভার্স কাট’, এই ছবিতেই প্রথম দেখা যায়।
এক শট থেকে অন্য শটে বহে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে জেমস উইলিয়ামসন একাধিক ছবি বানান, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১৯০১ সালে বানানো স্টপ থিফ, ফায়ার!, ইত্যাদি। ছবিতে ক্লোজ-আপের ব্যবহার নিয়েও তিনি অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। দ্য বিগ সোয়ালো ছবিতে একটি চরিত্র তো ক্যামেরাকেই গিলে খেতে আসে। ব্রাইটন স্কুলের এই দুই চলচ্চিত্র নির্মাতা ফিল্মের উপর রঙ করে আর নানারকম ফটোগ্রাফিক কৌশল ব্যবহার করে চলচ্চিত্রের কাহিনী অংশের উৎকর্ষ বাড়ানোর চেষ্টা করেন। তারা প্রায় পাঁচ মিনিট লম্বা ছবিও তৈরী করেছিলেন।
অন্যান্য চলচ্চিত্র নির্মাতারা ব্রাইটন স্কুলের এই ধ্যানধারণাগুলি গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে ছিলেন আমেরিকার চলচ্চিত্র নির্মাতা এডউইন এস. পোর্টার। তিনি ১৯০১ সালে এডিসন উৎপাদন কারখানা র হয়ে ছবি তৈরী করতে শুরু করেন। অনেকগুলো ছোটখাটো গৌণ ছবি বানানোর পর ১৯০৩ সালে তিনি বানালেন লাইফ অফ অ্যান অ্যামেরিকান ফায়ারম্যান। এই ছবিটি আমেরিকায় নির্মিত প্রথম ছবি যাতে গল্পের প্লটের অস্তিত্ব ছিল, ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনা ছিল, এমনকি ক্লোজ-আপের সাহায্যে খুব কাছ থেকে দেখানো হয়েছিল হাত দিয়ে ফায়ার-অ্যালার্ম বাজানো হচ্ছে। এই ছবিতে সাতটি দৃশ্য নয়টি শটের সাহায্যে বর্ণনা করা হয়েছিল। জর্জ মেলিয়েজ এর মতো তিনিও শটের মাঝখানে ডিজল্ভ সম্পাদনা রীতি ব্যবহার করতেন আর একই ঘটনা ঘনঘন ডিজল্ভ দিয়ে জুড়ে দিতেন। ঐ ১৯০৩ সালেই তিনি বানান প্রায় বারো মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবি দ্য গ্রেট ট্রেন রবারি, যাতে মোট কুড়িটি আলাদা আলাদা শট ছিল। ছবির অন্তর্দৃশ্য ও বহির্দৃশ্য গ্রহণ করা হয়েছিল দশটি বিভিন্ন স্থানে, আর দুটি আলাদা জায়গায় দুটি আলাদা ঘটনাপ্রবাহ একই সময়ে চলছে বোঝাতে ক্রস-কাটিং সম্পাদনা রীতি অনুসরণ করা হয়েছিল।
এই গোড়ার দিকের পরিচালকরা চলচ্চিত্রভাষার কিছু প্রাথমিক অথচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিপ্রেক্ষিত আবিষ্কার করেছিলেন – যেমন, পর্দায় কোনো ব্যক্তির উপস্থিতি বোঝাতে ব্যক্তির পা থেকে মাথা পর্যন্ত পুরো শরীরটা দেখানোর কোনো দরকার নেই, শরীরের অংশবিশেষ দেখলেই কাজ চলে যায়; অথবা দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গের শট পরপর জুড়ে দিলে দর্শকের কাছে প্রসঙ্গদুটি সম্পর্কিত বলে মনে হয়। চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনের যাবতীয় প্রক্ষেপণ কিন্তু এই নীতির উপরেই দাঁড়িয়ে – সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা জায়গায়, সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা সময়ে (সময়ের তফাৎ কয়েক ঘণ্টা, দিন, বা মাস হলেও) গৃহীত আলাদা আলাদা শট একসঙ্গে করে নিয়ে একটা গোটা আখ্যান বর্ণনা। দ্য গ্রেট ট্রেন রবারি ছবির দৃশ্যগ্রহণ হয়েছিল বিভিন্ন জায়গায় – যেমন অন্তর্দৃশ্যগুলো তোলার জন্য বানানো হয়েছিল সেট – টেলিগ্রাফ স্টেশন, মালগাড়ির কামরার ভিতর, আর একটা নৃত্যশালা। ছবির বহির্দৃশ্যগুলো তোলা হয়েছিল রেললাইনের ধারে পানিট্যাঙ্কির কাছে, রেললাইনের উপর, ট্রেনের উপর, আর একটা জঙ্গলে! কিন্তু ফিল্মে যখন দেখানো হল ডাকাতরা টেলিগ্রাফ স্টেশন থেকে বেরোল আর পরের দৃশ্যেই তারা পানিট্যাঙ্কির সামনে, দর্শক সঙ্গে সঙ্গে বুঝে নিতে পারল যে তারা এক্ষুনি স্টেশন থেকে বেরিয়ে এখানে এল। আবার যখন একটা দৃশ্যে ডাকাতদের মালগাড়িতে উঠতে দেখা গেল (বহির্দৃশ্য), পরমুহূর্তে তাদের গাড়ির কামরার মধ্যে দেখান হল (অন্তর্দৃশ্য), দর্শক বিশ্বাস করলেন যে সেটা একই ট্রেনের দৃশ্য।
দর্শকমনে বিশ্বাসযোগ্যতা উৎপাদনের ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের এই জাদুকরী ক্ষমতা হাতেকলমে প্রমাণ করে দেখানোর জন্য রুশ পরিচালক লিও কালশভ ১৯১৮ সালের আশেপাশে একটি অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত পরীক্ষা করেন, ইতিহাসে যা কালশভ এফেক্ট নামে পরিচিত। এক বিখ্যাত রুশ অভিনেতার মুখমন্ডলের ছবির মধ্যে মধ্যে তিনি কিছু অপ্রাসঙ্গিক দৃশ্য গুঁজে দিলেন – একবাটি স্যুপ, ক্রীড়ারত শিশু, কফিনে বৃদ্ধা মহিলা, এইরকম সব দৃশ্য। এরপর তিনি যখন পুরো সম্পাদিত অংশটা দর্শকদের দেখালেন, সবাই অভিনেতার প্রশংসা করতে লাগলেন – তারা ভাবলেন অভিনেতা কি অসাধারণ ক্ষুধার অভিব্যক্তি দিয়েছেন স্যুপের বাটি দেখে, আনন্দরত শিশুকে দেখে খুশি হয়েছেন আর মৃত বৃদ্ধাকে দেখে দুঃখ পেয়েছেন! আসলে কিন্তু ঐ অভিনেতার মুখমন্ডলের দৃশ্যটা ছিল বেশ কয়েক বছরের পুরোনো, আর তিনি শট দেওয়ার সময় ঐরকম কিছুই দেখেননি! শুধুমাত্র দৃশ্যগুলো পরপর জোড়া লাগিয়ে দিয়ে একসঙ্গে দেখানো হচ্ছিল বলেই দৃশ্যগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত মনে হচ্ছিল। পরবর্তীকালে অনেক মনোবৈজ্ঞানিক এবং আধুনিক চলচ্চিত্রকাররাও এই কালশভ এফেক্ট নিয়ে বহুল পরিমাণ আলোচনা করেছেন।
অরৈখিক সম্পাদনা পদ্ধতি -র ব্যাপক প্রচলনের আগে ছবির প্রাথমিক সম্পাদনা করা হত ফিল্মের একটি পজিটিভ কপির উপর। এই কপিকে যুক্তরাষ্ট্রে বলা হত ওয়ার্কপ্রিন্ট আর যুক্তরাজ্যে কাটিং কপি। তখন ফিল্মকে হাতে করে কেটে, ফিতে দিয়ে (পরবর্তীকালে আঠা দিয়ে) জুড়তে হত। সম্পাদককে এই কাজে বিশেষভাবে দক্ষ হতে হত, কারণ একটু ভুল জায়গায় কাঁটাছেঁড়া মানেই আবার একটা নতুন পজিটিভ প্রিন্ট দরকার হয়ে পড়ত, টাকা আর সময় দুইয়েরই অপচয় ঘটত। যখন স্লাইডার আর থ্রেডিং মেশিনের আবিষ্কার হল, আর তার সঙ্গে এল মুভিওলা জাতীয় ভিউয়ার, আর কেইএম বা স্টীনবেক এর মত ফ্ল্যাটবেড যন্ত্র, তখন সম্পাদনার কাজে গতি এল আর কাজ হতে লাগল আরও সূক্ষ্ম এবং নির্ভুল। ওয়ার্কপ্রিন্ট কাটা আর জোড়ার পর একটা সন্তোষজনক যায়গায় পৌঁছলে একটা ‘এডিট ডিসিশন লিস্ট’ তৈরী করতে হত, তাতে থাকত কোথায় কতটা পরিমান কাটা আর জোড়া হয়েছে। তারপর এই তালিকা ধরে ধরে নেগেটিভগুলো কেটে নিয়ে তার কনট্যাক্ট প্রিন্ট নিয়ে তৈরী হত চূড়ান্ত প্রিন্ট, পরিভাষায় ‘আন্সার প্রিন্ট’।
বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং ব্যাপক প্রসারের পরে এইভাবে সত্যিকারের নেগেটিভ নিয়ে কাটাকাটি করা হয়না। পুরো নেগেটিভটাই অপটিক্যাল পদ্ধতিতে স্ক্যান করে কম্পিউটার এর হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ এর মধ্যে নিয়ে নেওয়া হয়। কম্পিউটারে ঐ ডিজিটাল কপির উপরেই চলচ্চিত্র সম্পাদক বিভিন্ন কম্পিউটার সফটওয়্যার এর সাহায্য নিয়ে (ফাইনাল কাট প্রো, প্রিমিয়ার প্রো ইত্যাদি) যাবতীয় সম্পাদনার কাজ করেন।
চলচ্চিত্রের ইতিহাসের প্রাথমিক যুগে সম্পাদনাকে একটা প্রযুক্তিগত বা প্রায়োগিক কাজ হিসেবেই ভাবা হত। এমনকি সম্পাদক সঙ্ঘও নিজেদের সৃজনশীল কর্মীর দল বলে দাবি করতেন না। মহিলারা তখন সাধারণত ‘সৃজনশীল’ পদে সেরকমভাবে স্বাগত ছিলেন না – পরিচালক, চিত্রগ্রাহক, বা প্রযোজক, সকলেই হতেন পুরুষ। যেহেতু সম্পাদনা সৃজনশীল কাজ হিসেবে গণ্য হতনা, তাই পুরো চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়ার মধ্যে একমাত্র এই ক্ষেত্রেই মহিলাদের নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ ছিল। সেই যুগে অনেক মহিলা চলচ্চিত্র সম্পাদনায় নিজস্ব কৃতিত্ত্বের ছাপ রেখে গেছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ডেড় অ্যালেন, অ্যান বুশানস, মার্গারেট বুথ, অ্যান ভি. কোটস, আদ্রিয়ান ফ্যান, ভার্না ফিল্ডস, ব্লানচে সিউয়েল, এডা ওয়ারেন এবং আরো অনেকে।
চলচ্চিত্রের জন্য প্রয়োজনীয় চিত্রগ্রহণ শেষ হওয়া মানে হল উৎপাদন শেষ হওয়া! এবার ওই গৃহীত ছবির উপর অতিরিক্ত যা কিছু করা হবে তা সবই পোস্ট-প্রোডাকশনের অন্তর্গত। পোস্ট-প্রোডাকশনের তিনটে কালবিভাগ বা ধাপ আছে, এডিটর্স কাট, ডিরেক্টর্স কাট এবং সবশেষে গিয়ে ফাইনাল কাট।
এডিটর্স কাট হল সম্পাদনার প্রথম পর্যায়, একে অনেক সময় ‘এসেম্বলি কাট’ বা ‘রাফ কাট’ও বলা হয়। ছবিটা শেষ পর্যন্ত কেমন দেখতে গিয়ে দাঁড়াবে তার একটা আন্দাজ এই পর্যায়েই পাওয়া যায়। এডিটর্স কাট সচরাচর ফাইনাল কাটের তুলনায় বড় হয়। সাধারণত চিত্রগ্রহণ শুরু হওয়া থেকেই সম্পাদক তার কাজ শুরু করে দেন। সম্পাদক আর পরিচালক একসঙ্গে বসে প্রতিদিনের তোলা শটগুলো (পরিভাষায় ‘ডেইলিস’) পর্যালোচনা করেন, তার মধ্যে দিয়ে সম্পাদক বুঝে নেন পরিচালক ঠিক কী কী চাইছেন। তারপর শুটিং এর সঙ্গে সঙ্গে সম্পাদকও তার পরিমার্জনার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।
শুটিং শেষ হয়ে গেলে পরিচালক এবার সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে সম্পাদককে সহযোগিতা করতে পারেন। এই পর্যায়ে চলচ্চিত্রের এডিটর্স কাট পরিবর্তিত হয় ডিরেক্টর্স কাট-এ। পরিচালক এবং সম্পাদক মিলে ছবির প্রতিটি মুহূর্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খুঁটিয়ে দেখেন, শটের বিন্যাস পুনর্বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করেন, কোনও দৃশ্য অপ্রয়োজনীয় মনে হলে কেটে বাদ দেন বা ছোট করেন, আবার খুব প্রয়োজন মনে হলে কিছু দৃশ্য নতুন করে শুটিং করার সিদ্ধান্ত নেন, ইত্যাদি। এই পর্যায়ে খুব ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রয়োজন হয় বলে সাধারণত পরিচালক আর সম্পাদকের মধ্যে একধরনের শৈল্পিক বন্ধন গড়ে উঠতে দেখা যায়।
পরিচালক আর সম্পাদক তাদের কাজ শেষ করার পরেও অনেকসময় প্রযোজকদের তরফ থেকে ছবিতে কিছু কাটছাঁট করা হয়। এই নিয়ে পরিচালক ও প্রযোজকের মধ্যে বিবাদের বহু নিদর্শন আছে, এমনকি এই কারণে অনেক পরিচালক ছবি থেকে নিজের নাম তুলেও নিয়েছেন। আবার অনেক সময় একটি বা দুটি প্রেক্ষাগৃহে আলাদা করে ডিরেক্টর্স কাট রিলিজ করা হয়।
মন্তাজ হল একটি বিশেষ ধরনের সম্পাদনা পদ্ধতি। মূল ফরাসী ভাষায় এই শব্দের অর্থ হল সমাবেশ বা একত্রিত করা। দেশ-কাল সাপেক্ষে শব্দটি অন্তত তিন ধরনের অর্থ বহন করে। ফরাসী চলচ্চিত্র-এ মন্তাজ শব্দটি আক্ষরিক অর্থেই ব্যবহৃত হয়, অর্থাৎ সম্পাদনার ফরাসী প্রতিশব্দই হল মন্তাজ। ১৯২০ র সোভিয়েত চলচ্চিত্র-এ মন্তাজ শব্দটি সম্পূর্ণ অন্য একটি অর্থ নির্দেশ করে। এককভাবে আলাদা আলাদা অর্থবোধক বেশ কিছু শট পাশাপাশি রেখে জুড়ে দিলে যদি পুরোটা মিলিয়ে একটা সম্পূর্ণ আলাদা অর্থ বহন করে, তবে সেই সম্পাদনা পদ্ধতিকে মন্তাজ বলা হয়। আর চিরায়ত হলিউড চলচ্চিত্র-এর যে অংশে অল্প সময়ের মধ্যে ছবির কাহিনীর বেশ কিছু অংশ সংক্ষেপ করে বলে দেওয়া হয়, তাকে বলা হয় মন্তাজ সিকোয়েন্স।
মন্তাজ তত্ত্বের প্রাথমিক প্রবক্তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন সোভিয়েত নির্মাতা লিও কালশভ এবং সের্গেই আইজেনস্টাইন। কালশভ মনে করতেন চলচ্চিত্রের মূল সত্তাই হল সম্পাদনা। যেভাবে ইঁটের পরে ইঁট সাজিয়ে বাড়ি তৈরী করতে হয়, সেইভাবেই শটের পরে শট সাজিয়ে ছবিকে নির্মাণ করতে হয়। তার বিখ্যাত পরীক্ষার সাহায্যে তিনি দেখান, কেমন করে পরপর জোড়া শটের পূর্বাপর সম্বন্ধটা দর্শকরা নিজে থেকেই অনুমান করে নেন। আইজেনস্টাইন আবার এই ব্যাপারে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করতেন। তিনি ভাবতেন শুধুমাত্র এই সম্বন্ধ তৈরীই মন্তাজের একমাত্র উদ্দেশ্য হতে পারেনা। তিনি পরস্পর সম্পর্কহীন শটও পরপর দেখিয়ে, দর্শককে একরকম ধাক্কা দিয়ে, তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করতেন। তার এই চলচ্চিত্রভাবনার উজ্জ্বল নিদর্শন হল তারই নির্দেশিত ছবি ব্যাটেলশিপ পটেমকিন(১৯২৫)।
হলিউডের ছবিতে মন্তাজ সিকোয়েন্সের এরকম কোনও প্রতীকী তাৎপর্য্য থাকে না, প্রধানত কাহিনীকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই তা’ ব্যবহার করা হয়। যেমন ১৯৬৮ সালে নির্মিত ২০০১: আ স্পেস অডিসি ছবিতে মানুষের বিবর্তন দেখান হয়েছিল। আবার ১৯৭৬ সালের রকি ছবিতে একজন ক্রীড়াবিদ কীভাবে প্রশিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে আরও উন্নত হয়ে উঠছেন সেটা বোঝাতে এইরকম বিন্যাস ব্যবহার করা হয়।
চলচ্চিত্ৰ যে সবসময় ঘটনার পারম্পর্য মেনে তোলা হয়, তা একেবারেই নয় – কলাকুশলীদের এবং অন্যান্য পরিস্থিতিগত সুবিধা অনুযায়ী কোন শট কখন নেওয়া হবে সেটা স্থির করা হয়। এই রকম ক্ষেত্রে ‘কন্টিন্যুইটি’ বা অবিচ্ছেদ্যতা বজায় রাখা একটি খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ ব্যাপার। একটি শটে অভিনেতার জামার একটা বোতাম খোলা থাকলে সেই একই সময়ের অন্য শটেও যেন সেই বোতামটিই খোলা থাকে, অথবা টেবিলের ওপর সাজানো কোনো সামগ্রী যেন শটবিশেষে স্থানান্তরিত না হয়ে যায়, সেটা খেয়াল রাখতে হয়। সম্পাদককেও এই অবিচ্ছেদ্যতা মাথায় রেখেই সম্পাদনার কাজ করতে হয়। ‘স্ক্রিপ্ট সুপারভাইজার’ এই বিষয়গুলোর একটা তালিকা তৈরী করে সম্পাদককে দেন। প্রয়োজনে সম্পাদক ইচ্ছে করে অবিচ্ছেদ্যতা ভঙ্গ করে বিশেষ অর্থ তৈরী করতে পারেন।
চিরায়ত হলিউড চলচ্চিত্র-এ এই কন্টিন্যুইটি সম্পাদনার ব্যাপারে অগ্রণী ছিলেন প্রসিদ্ধ নির্মাতা ডি ডব্লিউ গ্রিফিথ। তিনি প্রযুক্তিগত কলা-কৌশলের প্রভূত উন্নতিসাধন করেন, যেমন ১৮০ ডিগ্রির নীতি, এস্টাবলিশিং শট, শট রিভার্স শট, ইত্যাদি। তার নির্মিত ছবিগুলির মধ্যে, যেমন দ্য বার্থ অফ আ নেশন(১৯১৫), ইনটলারেন্স(১৯১৬), ইত্যাদি, এইসব কৌশলের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
সেকালের রুশ নির্মাতাদের এই ব্যাপারে চিন্তাভাবনা, যেমন লিও কালশভ, সমকালীন হলিউডের চেয়ে ভাবাদর্শগতভাবে অনেকটাই আলাদা ছিল। সের্গেই আইজেনস্টাইন তার নিজস্ব স্টাইলের মাধ্যমে এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ নতুন এক দিগন্ত খুলে দেন।
পরাবাস্তববাদী এবং ডাডা শিল্পীরা এই চিরাচরিত সম্পাদনা রীতির বিকল্প নিয়ে প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন, যেমন লুই বুনুয়েল তার আঁ শিঁয়া আঁদালু(১৯২৯) ছবিতে বা রেনে ক্লেয়ার তার এনট্রাক্টে(১৯২৪) ছবিতে।
১৯৫০ ও ৬০ দশকের ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ বা ফরাসি নবকল্লোল যুগের নির্মাতারা, যেমন জঁ-লুক গদার, ফ্রঁসোয়া ত্রুফো, এবং তাদের সমসাময়িক আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতারা, যেমন অ্যান্ডি ওয়ারহল বা জন ক্যাসভেৎস, সম্পদনার পদ্ধতিতে অনেক নতুন চিন্তাধারার আমদানি করেন। এই যুগের ছবিতে আখ্যানের গুরুত্ত্ব কম থাকত আর নির্মাতারা সম্পাদনাসহ চলচ্চিত্র নির্মাণের সর্বক্ষেত্রেই চিরাচরিত হলিউড স্টাইলকে অস্বীকার করে কাজ করতেন। ডাডা এবং পরাবাস্তববাদী পূর্বসূরীদের মত এরাও ছবিতে অবিচ্ছেদ্যতা বজায় রাখার পরোয়া করতেন না, এবং জাম্প কাট বা অন্যান্য প্রয়োগিক কৌশলের মাধ্যমে দর্শককে বারবার বুঝিয়ে দিতেন যে তারা যেটা দেখছেন সেটা আসলে একটা সিনেমা!
বিংশ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে ছবিতে সম্পাদনার কৌশলে একটা বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে ছবিতে অতি দ্রুত কর্মকাণ্ড, অরৈখিক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনাক্রম দেখানোর প্রবণতা বেড়েছে।
কিংবদন্তি রুশ পরিচালক ভি আই পুদভকিন লক্ষ্য করেন যে সম্পাদনাই হল সমস্ত চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়ার একমাত্র অংশ যা চলচ্চিত্রের একেবারে নিজস্ব। আলোকচিত্র গ্রহণ, শিল্প নির্দেশনা, চিত্রনাট্য রচনা, শব্দগ্রহণ — চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত এই সমস্ত প্রক্রিয়াই অন্য কোনো না কোনো শিল্পমাধ্যম থেকে উদ্ভূত, কিন্তু একমাত্র সম্পাদনাই হল অনন্য! প্রসিদ্ধ আধুনিক মার্কিন পরিচালক স্ট্যানলি কুবরিক বলেছেন "আমি সম্পাদনা ভালোবাসি। আমার ধারণা চলচ্চিত্র নির্মাণের অন্য যেকোনো বিভাগের তুলনায় আমি সম্পাদনাই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি। একটু চপলতা করতে চাইলে বলতে পারি, সম্পাদনার আগে যা কিছু করা হয় তার উদ্দেশ্যই হল সম্পাদনার জন্য ছবিগুলো প্রস্তুত করা!"
বিখ্যাত মার্কিন লেখক-নির্দেশক প্রেস্টন স্টার্জ-এর মতে, "প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত দর্শকের মাথায় সম্পাদনার একটা নিজস্ব নিয়মনীতি কাজ করে। চলচ্চিত্রের সম্পাদকের কাজ হল যতটা সম্ভব সেই রীতির কাছাকছি যাওয়া, তিনি যত কাছাকাছি যেতে পারবেন তত তার সম্পাদনা আরও বেশি করে অদৃশ্য থাকবে। ক্যামেরা এক ব্যক্তির মুখের ওপর থেকে সরে গিয়ে অন্য ব্যক্তির মুখের উপর স্থির হওয়ার দৃশ্যে, ঠিক মাথা ঘোরাবার মুহূর্তে যদি কাট করা হয়, তাহলে দর্শক সেই কাট সম্পর্কে অনবহিত থাকেন। যদি কাট করতে গিয়ে এক সেকেণ্ডের এক-চতুর্থাংশও এদিক-ওদিক হয় তবে দর্শকের চোখে ধাক্কা লাগতে পারে। আরেকটি আবশ্যিক শর্ত হল দুটি শটের মধ্যে বর্ণসঙ্গতি! একটা কাট করে কালো থেকে সাদায় চলে গেলে একধরণের ঝাঁকুনি বোধ হয়। প্রতিটি প্রদত্ত মুহূর্তে ক্যামেরা সেদিকেই তাক করা উচিত দর্শক যেদিকে তাকাতে চান। সেই নির্দিষ্ট দিকটা খুঁজে পাওয়াও অদ্ভুতভাবে সহজ, শুধু মনে রাখতে হবে চোখটা কোনদিকে যাচ্ছে।"
সম্পাদনার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় উপাদান সংগ্রহ এবং সংগঠনের কাজে সম্পাদক ও পরিচালককে সাহায্য করার জন্য উপস্থিত থাকেন ‘সহকারী সম্পাদক’। সম্পাদনা শেষ হয়ে গেলে, ছবিকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশিকার তত্ত্বাবধান তিনিই করেন। বড় বাজেটের ছবিতে সম্পাদকের সঙ্গী হিসাবে একাধিক সহকারীর একটি দল থাকে। সেই দলের দায়িত্ত্বে থাকেন প্রধান সহকারী সম্পাদক, প্রয়োজনে তিনি নিজেও অল্পবিস্তর ছবি সম্পাদনা করেন। বাকি সহকারীদের প্রত্যেকের কাজ নির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকে, সচরাচর তারা নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার জন্য পরস্পরকে সাহায্য করেন। শিক্ষানবীশ সম্পাদকরা সাধারণত এই সহকারীদের সাহায্য করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। কম বাজেটের ছবি বা তথ্যচিত্রের ক্ষেত্রে অবশ্য একজনের বেশি সহকারী রাখা সম্ভব হয়না। দূরদর্শনের কাজেও সাধারণত সম্পাদকের একজনই সহকারী থাকেন।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে সহকারী সম্পাদকের সাংগঠনিক কাজটা অনেকটা ডেটাবেস ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে তুলনীয়। শুটিংয়ের পরে প্রতিটি ছবি এবং শব্দ বিশেষ সাংকেতিক সংখ্যা ব্যবহার করে চিহ্নিত করা হয়। সহকারী সম্পাদক এই সংকেতগুলো ডেটাবেসে তুলে রাখেন, পরবর্তীকালে এই ডেটাবেসটিকে কম্পিউটার প্রোগ্রামে সংযুক্ত করা হয়। সম্পাদক এবং পরিচালক ছবির এই ডিজিটাল কপির উপরই যাবতীয় কাটাছেঁড়া করেন, একে ‘অফলাইন’ সম্পাদনাও বলে। সম্পাদনা চূড়ান্ত হলে সহকারী সম্পাদক তাকে ‘অনলাইন’-এ নিয়ে আসেন। এর অর্থ হল নির্দেশিকা মিলিয়ে মিলিয়ে ছবির মূল উচ্চগুণমানসম্পন্ন ছবি ও শব্দ উপাদানগুলিকে সম্পাদনা করা। সম্পাদকের সহকারী হিসাবে কাজ করা আসলে পরবর্তীকালে প্রধান সম্পাদক হওয়ার পেশাগত ধাপ, তবে অনেকেই আবার চিরকাল সহকারীর কাজ করেই সন্তুষ্ট থাকেন, প্রধান সম্পাদক হওয়ার দুঃসাহসিক পথে পা বাড়ান না।
|
|
'পাদটীকা
গ্রন্থপঞ্জি
আরও পড়ুন
উইকিবই
উইকিবিশ্ববিদ্যালয়
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article চলচ্চিত্র সম্পাদনা, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.