ঘূর্ণিঝড় সিডর

ঘূর্ণিঝড় সিডর (সুপার ঘূর্ণিঝড় সিড্‌র, ইংরেজিতে Super Cyclonic Storm Sidr) হচ্ছে ২০০৭ সালে বঙ্গোপসাগরে এলাকায় সৃষ্ট একটি ঘূর্ণিঝড়। ২০০৭ সালে উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে এটি ৪র্থ নামকৃত ঘূর্ণিঝড়। এটির আরেকটি নাম ট্রপিক্যাল সাইক্লোন ০৬বি (Tropical Cyclone 06B)। শ্রীলংকান শব্দ 'সিডর' বা 'চোখ'-এর নামের এর নাম করণ করা হয়েছে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সকাল বেলা পর্যন্ত বাতাসের বেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিমি/ঘণ্টা এবং ৩০৫ কিমি/ঘণ্টা বেগে দমকা হাওয়া বইছিলো। একারণে সাফির-সিম্পসন স্কেল অনুযায়ী একে ক্যাটেগরি-৫ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় আখ্যা দেয়া হয়। এই ঝড়ে কমপক্ষে ৩,৪৪৭ জন মানুষ মারা যায়, তবে কিছু ধারণা অনুযায়ী এই সংখ্যা ১৫,০০০ পৌঁছেছে। বাংলাদেশ সরকার এ ঘটনাকে জাতীয় দূর্যোগ বলে ঘোষণা করেছে। এ ঘূর্ণিঝড়ে ৮.৯ মিলিয়ন হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় সিডর
অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় (আইএমডি স্কেল)
শ্রেণী ৫ (স্যাফির-সিম্পসন স্কেল)
ঘূর্ণিঝড় সিডর
গঠননভেম্বর ১১, ২০০৭
বিলুপ্তিনভেম্বর ১৬, ২০০৭
সর্বোচ্চ গতি৩-মিনিট স্থিতি: ২১৫ কিমি/ঘণ্টা (১৩০ mph)
১-মিনিট স্থিতি: ২৬০ কিমি/ঘণ্টা (১৬০ mph)
সর্বনিম্ন চাপ৯৪৪ hPa (mbar); ২৭.৮৮ inHg
হতাহতসর্বমোট ৩,৪৪৭–১৫,০০০
ক্ষয়ক্ষতি$2.31 বিলিয়ন (২০০৭ $)
প্রভাবিত অঞ্চলবাংলাদেশ, পূর্ব ভারত
২০০৭ উত্তর ভারত মহাসাগরীয় ঘূর্ণিঝড় মৌসুম অংশ

আবহাওয়ার ইতিহাস

ঘূর্ণিঝড় সিডর 
সাফির-সিম্পসন স্কেল অনুযায়ী, মানচিত্রে ঝড়টির পথ ও তীব্রতা দেখানো হয়েছে।
মানচিত্রের ব্যাখ্যা
     গ্রীষ্মমন্ডলীয় নিম্নচাপ (≤৩৮ মা/ঘ, ≤৬২ কিমি/ঘ)
     গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় (৩৯–৭৩ মা/ঘ, ৬৩–১১৮ কিমি/ঘ)
     শ্রেণি ১ (৭৪–৯৫ মা/ঘ, ১১৯–১৫৩ কিমি/ঘ)
     শ্রেণি ২ (৯৬–১১০ মা/ঘ, ১৫৪–১৭৭ কিমি/ঘ)
     শ্রেণি ৩ (১১১–১২৯ মা/ঘ, ১৭৮–২০৮ কিমি/ঘ)
     শ্রেণি ৪ (১৩০–১৫৬ মা/ঘ, ২০৯–২৫১ কিমি/ঘ)
     শ্রেণি ৫ (≥১৫৭ মা/ঘ, ≥২৫২ কিমি/ঘ)
     অজানা
ঝড়ের ধরন
ঘূর্ণিঝড় সিডর  উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়
ঘূর্ণিঝড় সিডর  অক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়, ছোট নিম্নচাপ, গ্রীষ্মমন্ডলীয় গোলযোগ বা মৌসুমী নিম্নচাপ

সিডর এর ইতিহাস

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে ২০০৭ সালের ৯ নভেম্বর একটি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। ১১ নভেম্বর আবহাওয়ায় সামান্য দুর্যোগ এর আভাস পাওয়া যায়, এবং এর পরেরদিনই এটি ঘূর্ণিঝড় সিডর-এ পরিণত হয়। বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশিতে এটি দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে এবং বাংলাদেশে একটি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সৃষ্টি করে।

মোকাবেলার প্রস্তুতি

নভেম্বর ১৭ তারিখে ক্যাটাগরি-৪ সমতুল্য ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার সাথে সাথে কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক পূর্বাঞ্চলীয় ভারত এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অগ্রিম মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলাদেশের ১১টি উপকূলীয় জেলায় ৪২ হাজার ৬৭৫ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। যদিও উপকূল অঞ্চল থেকে জনগনকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে কিন্তু উপকূলের ১০ মিলিয়ন লোকের জন্য মাত্র ৫০০,০০০ লোকের আশ্রয়ের ব্যবস্থা আছে। আইএমডি ওড়িশা এবং পশ্চিম বঙ্গে নভেম্বর ১৪ তারিখে বিপদ সংকেত ঘোষণা করেছে। নভেম্বর ১৪ তারিখ রাত ৮টার পর মংলা বন্দরের সকল কার্যক্রম এবং রাত ১০টায় চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান উঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঝড়ের আশঙ্কায় ঢাকা জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিশেষ সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং নভেম্বর ১৫ তারিখে ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় অঞ্চলে নৌ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় সিডর সম্পর্কিত বর্তমান তথ্য

ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী প্রভাব

ঘূর্ণিঝড় সিডর 
নভেম্বর ১৬ তারিখে ঘূর্ণিঝড় সিডরের অংশবিশেষ

ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রীয় অংশ নভেম্বর ১৫ তারিখ সন্ধ্যা ৬টার পর বাংলাদেশের পাথরঘাটায় বালেশ্বর নদীর কাছে উপকূল অতিক্রম করে। ঝড়ের তান্ডবে উপকূলীয় জেলা সমূহে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ঝড়ো হাওয়া বইছে সাথে বিপুল পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশের দেশের বিদ্যুত ব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিদ্যুত বিপর্যয়ের ফলে ঢাকা সহ সাড়া দেশেই দেখা দিয়েছে পানি সমস্যা। কৃষি মন্ত্রনালয়ের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশের প্রায় ৬০০,০০০ টন ধান নষ্ট হয়েছে যার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে। সুন্দর বনের পশুর নদীতে বেশ কিছু হরিণের মৃত্য দেহ ভাসতে দেখা গেছে এবং বিপুল সংখ্যক প্রাণীর মৃত্যুর আশঙ্কা করা হয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে প্রায় ৯৬৮,০০০ ঘরবাড়ী ধ্বংস এবং ২১০,০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এ ঝড়ে প্রায় ২৪২,০০০ গৃহপালিত পশু এবং হাঁসমুরগী মারা গেছে।

পরিণাম

ঝড়ের পরেই বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ৫টি জাহাজ খাদ্য, ঔষধ এবং ত্রাণ সামগ্রীসহ সর্বাধিক ঘূর্ণি ঝড় কবলিত এলাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। ইউরোপীয়া কমিশন €১.৫ মিলিয়ন ইউরো($২.৪ মিলিয়ন ইউএসডি) সমপরিমাণ ত্রাণ সামগ্রি বাংলাদেশকে প্রদান করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড স্টেট নেভী প্রায় ৩,৫০০ জন নৌ সেনা ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রমে সাহায্যের জন্য প্রেরণ করেছে।

অন্যান্য সংস্থাও সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে ওয়ার্ল্ড ভিশন ২০,০০০ ঘড়ে গৃহহীন লোকজনের গৃহ নির্মানে সাহায্যের জন্য স্বেচ্ছাসেবক প্রেরণ করেছে। সাথে রেড ক্রশ এ উদ্ধার তৎপরতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দুর্গত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য ইউএসএস এসেক্সইউএসএস কিয়ারসার্জ নামে দুটি নৌযান বাংলাদেশের পথে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় দুর্গতদের সাহায্যের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ২১ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রফিলিপাইন সরকার বাংলাদেশে ত্রাণ তৎপরতায় সাহায্যের জন্য মেডিকেল টিম পাঠাবে। পোপ বেনেডিক্ট ষোড়শ রবিবারের প্রার্থনায় বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় দুর্গতদের ত্রাণসহ সব রকমের সাহায্যের আহ্ববান জানিয়েছেন। ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, যুক্তরাজ্য সরকার, ইউএসএইড, ইসলামিক রিলিফ-ইউকে এবং স্পেন ৩০ মিলিয়িন মার্কিন ডলারের সাহায্যের অঙ্গিকার করেছে। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডাব্লএফপি) দুর্গত মানুষের জন্য ১০,০০০ মেট্রিক টন চাল এবং ২০০ টন উচ্চ প্রোটিন সম্মৃদ্ধ বিস্কুটের অনুমোদন দিয়েছে।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

ঘূর্ণিঝড় সিডর আবহাওয়ার ইতিহাসঘূর্ণিঝড় সিডর সিডর এর ইতিহাসঘূর্ণিঝড় সিডর মোকাবেলার প্রস্তুতিঘূর্ণিঝড় সিডর সম্পর্কিত বর্তমান তথ্যঘূর্ণিঝড় সিডর ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী প্রভাবঘূর্ণিঝড় সিডর পরিণামঘূর্ণিঝড় সিডর তথ্যসূত্রঘূর্ণিঝড় সিডর বহিঃসংযোগঘূর্ণিঝড় সিডরইংরেজি ভাষাবঙ্গোপসাগর

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ইতালিনিজামিয়াভূমণ্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধিবাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টথাইল্যান্ডভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহবাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্রইসরায়েলরামবিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের তালিকাহিন্দি ভাষামুসাক্লিওপেট্রাঅমর্ত্য সেনবিষ্ণুকুমিল্লাআল-মামুনমামুনুল হকসহীহ বুখারীলোকসভা কেন্দ্রের তালিকাবাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিসুকান্ত ভট্টাচার্যআমার সোনার বাংলাসার্বজনীন পেনশনসুন্দরবনজ্ঞানফেনী জেলামৃত্যু পরবর্তী জীবনসত্যজিৎ রায়সৌদি আরবফিলিস্তিনবাংলাদেশের অর্থনীতিমাদারীপুর জেলাভারতের রাষ্ট্রপতিকোষ (জীববিজ্ঞান)অব্যয় পদভারতে নির্বাচনশাকিব খানব্যঞ্জনবর্ণমিমি চক্রবর্তীদুরুদবিজ্ঞানদ্বৈত শাসন ব্যবস্থাশ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়দেব (অভিনেতা)বাংলাদেশের জেলাসমূহের তালিকারূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রবাংলাদেশের মন্ত্রিসভামুস্তাফিজুর রহমানমিয়া খলিফাহরপ্পাভারত বিভাজনডিএনএমেঘনাদবধ কাব্যরেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাঝড়জনি সিন্সজীববৈচিত্র্যচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ওয়েবসাইটকলকাতা নাইট রাইডার্সতেভাগা আন্দোলনদীন-ই-ইলাহিকুরআনের সূরাসমূহের তালিকাবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ২০২৩রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুল এন্ড কলেজপৃথিবীইউরোআসামসন্ধিবাংলাদেশ পুলিশহার্নিয়াপ্রাণ-আরএফএল গ্রুপঅর্শরোগজওহরলাল নেহেরুপারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রসমূহের তালিকা🡆 More