গোকুলানন্দ গীতিস্বামী (নভেম্বর ২৬, ১৮৯৬ - জুলাই ১০, ১৯৬২) বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ। তিনিই সর্বপ্রথম বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের ভেতর জাতীয়তাবোধ ও মাতৃভাষার প্রতি চেতনা জাগ্রত করেন। গোকুলানন্দ মুলত ছিলেন একজন চারণকবি। তৎকালীন মণিপুরী সমাজের শিক্ষিত একটি বৃহদাংশ যখন সাহেবি এবং বাঙালি চালচলন রপ্ত করতে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময় মাতৃভাষায় নানান কবিতা, গান, গীতিপালা লিখে সেগুলোর পরিবেশনা নিয়ে ঘুরতেন গ্রাম থেকে গ্রামে। নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি আচার নিয়ম সবকিছু বিস্মৃত হয়ে এই সমাজ যখন প্রায় নিশ্চিহ্ন হবার দ্বারপ্রান্তে, তখন গীতিস্বামী সক্রেটিসের মতো নতুন আশার, নতুন সম্ভাবনার বাণী ঘরে ঘরে ফেরী করে বেড়িয়েছেন ক্লান্তিহীনভাবে। তিনি দেখিয়ে দিলেন, এই ভাষা এই সংষ্কৃতির ভেতরেও বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। শুধুমাত্র লোকমুখে প্রচারিত এই দরিদ্র ভাষাটি দিয়েও রচিত হতে পারে উৎকৃষ্ট সাহিত্য, শিল্পরস।
গোকুলানন্দ গীতিস্বামী | |
---|---|
যুগ | আধুনিক যুগ |
অঞ্চল | দক্ষিণ এশিয়া |
ধারা | বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী জাতির পুনর্জাগরণ |
প্রধান আগ্রহ | কবিতা, সঙ্গীত, নাটক, সমাজ সংস্কার |
ভাবগুরু | |
ভাবশিষ্য
|
গোকুলানন্দের জন্ম বাংলাদেশের বর্তমান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার মাধবপুর ইউনিয়নের জবলারপার নামের এক প্রত্যন্ত গ্রামে, ১৮৯৬ সালের ২৬ নভেম্বর তারিখে। তিনি মাধবপুরে নিম্নবাংলা পাশ করার পর ইংরেজি পড়ার জন্য ত্রিপুরায় চলে যান। সেখানে অস্টম মান পর্যন্ত পড়েছিলেন। এরপর ১৯২৫ সালে ত্রিপুরার রাতাছড়া গ্রামে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানে নিজে শিক্ষক হয়ে পাঠদান শুরু করেন। পাশাপাশি শুরু করেন মাতৃভাষা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীতে গান ও নাট্যপালা লেখার কাজ।
গান গেয়ে সমাজকে জাগানোর দ্বায়িত্বে স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নেন, পাশাপাশি চলে নাট্যপালা মঞ্চায়ন। সমাজ রাজনীতি বিষয়ে গোকুলানন্দের জ্ঞান ও মতাদর্শ ছিল স্বচ্ছ ও শক্তিশালী। গোঁড়ামি ও পশ্চাৎপদতার বিরুদ্ধে তার অবস্থান গানে গানে স্পষ্ট করেন। এজন্যে কম লাঞ্ছনা গঞ্জনা সইতে হয়নি গোকুলানন্দকে। সমাজের উচ্চশ্রেণীর ব্যক্তিরা যারা তাকে একসময় 'পাগল', 'কাক' ইত্যাদি বিশেষনে অভিহীত করেছে, তারাই একসময় তাকে "গীতিস্বামী" নামক সম্মানসূচক উপাধিতে ভূষিত করতে বাধ্য হয়েছে।
গীতিস্বামীর সামাজিক সংস্কার মুলক রচনারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো - 'মাতৃমঙ্গল গীতাভিনয়', 'সমাজ সংস্কার' ইত্যাদি নাটকগুলো। গোকুলানন্দ গীতিস্বামী রচিত পদাবলী কীর্ত্তনের মধ্যে - বাসক, নৌকাবিলাস, মোহিনীবেশ, মান, মাথুর ইত্যাদি নানান রসকীর্ত্তনগীতির কথা উল্লেখ করা যায়। এছাড়া বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সমাজ নিয়ে অসংখ্য সমাজ-সংস্কারমুলক গান, কবিতা এবং নাটকের পাশাপাশি নীতিশাস্ত্র বা চরিত্র গঠনমুলক নানান বাণী রেখে গিয়েছেন।
বাংলাদেশ ভারত দুদেশেই মণিপুরী সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয় এই গীতিকবি ১৯৬২ সালের ১০ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন, সেদিন ত্রিপুরা সরকার গোটা রাজ্যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article গোকুলানন্দ গীতিস্বামী, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.