আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (আরবি :عبد اللہ ابن عباس) ইসলামের নবী মুহাম্মাদের একজন সাহাবী। মুহাম্মাদের আবদুল্লাহ নামক চার জন বিশিষ্ট সাহাবী - যাদেরকে একত্রে ' عبادلۃ اربعۃ 'বলা হয়, তিনি তাদের অন্যতম। তিনি কুরাইশ বংশের হাশেমি শাখার সন্তান। মুহাম্মাদের সর্বকনিষ্ঠ চাচা আব্বাসের জ্যেষ্ঠ ছেলে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ছিলেন একজন বিশিষ্ট সুবিজ্ঞ ফকিহ ও আল-কুরআনের তাফসীরের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় মুফাস্সির। মুসলিম বিশ্বে তাকে রইসুল মুফাস্সিরিন বা সাইয়্যিদুল মুফাস্সিরিন (> প্রধান) বলা হয় ।
সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) عبد الله ابن عباس | |
---|---|
উপাধি | হিবর-উল-উম্মাহ,রইসুল মুফাস্সিরিন |
জন্ম | 'আবদুল্লাহ ইবনে আল- আব্বাস (রাঃ)' ৬১৯ খ্রি. মক্কা, হেজাজ |
মৃত্যু | ৬৮৭ খ্রি. তায়েফ, সৌদি আরব |
অন্য নাম | আল -হিবর, (চিকিৎসক); আল -বাহর, (সমুদ্র) |
জাতিভুক্ত | আরব |
পেশা | তাফসির, কুরআন এবং সুন্নাহ, হাদিস ইসলামি স্বর্ণযুগে |
শিষ্য ছিলেন | মুহাম্মদ (স:)-এর |
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেন
| |
দাম্পত্য সঙ্গী | যাহরা বিনতে মিসরাহ |
সন্তান | ছেলে:আল -আব্বাস, আলী ইবনে আব্দুল্লাহ, মুহাম্মাদ, উবায়দুল্লাহ, আল-ফাদল এবং সাদ। কন্যা: লুবাবা এবং আসমা |
পিতা-মাতা |
|
আল হিবর বা হিবরুল উম্মাহ্ অর্থাৎ মহাজ্ঞানী বা আল-বাহ্র অর্থাৎ সাগর। কারণ যে কোন দ্বীনি জিজ্ঞাসার জবাব তিনি প্রজ্ঞার সাথে উপস্থাপন করতেন। এক অনন্য ইসলাম ধর্মবিশারদ বলে তাকে মনে করা হতো। আর এ জন্যেই তার উপাধি হিবরুল উম্মাহ্।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশেম ইবনে আবদে মান্নাফ ।
তার পিতা হলেন মুহাম্মাদের আপন চাচা আব্বাস। পুরো নাম আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব। মাতার নাম উম্মুল ফাদল লুবাবা বিনতে আল হারিস।
তিনি মুহাম্মাদের হিজরতের তিন বছর পূর্বে মক্কায় ' শিআবে আবি তালিব '-এ জন্ম গ্রহণ করেন। কারো কারো মতে, হিজরতের পাঁচ বছর পূর্বে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন । তবে প্রথম মতটিই অধিক গ্রহণযোগ্য ও সঠিক । কুরাইশরা তার গোত্র বনু হাশিমকে বয়কট করার কারণে তারা তখন শিয়াবে আবী তালিবে জীবন যাপন করছিলেন৷ হযরত আব্দুল্লাহর পিতা হযরত আব্বাস দৃশ্যতঃ মক্কা বিজয়ের অল্প কিছুদিন পূর্বে হিজরি চতুর্থ সনে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইবনে সাদের বর্ণনা মতে, উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদিজার পর উম্মুল ফজলই (আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস এর মাতা ) মহিলাদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইমান আনেন। তাই হযরত আব্দুল্লাহ জন্মের পর থেকেই তাওহিদের পরিবেশে বেড়ে উঠেন এবং বিবেক বুদ্ধি হওয়ার পর এক মজবুত ঈমানের অধিকারী মুসলমান হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেন।
আল্লামা ইবনে কাসির বলেন,- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস স্বীয় জন্মের ওয়াকিয়া এভাবে বর্ণনা করেন যে, যখন হযরত নবি করিম (স.) শিআবে আবু তালিবে অন্তরীণ অবস্থায় জীবন যাপন করছিলেন - সে সময় একদিন আমার পিতা নবীজির খেদমতে উপস্থিত হয়ে বললেন, "হে মুহাম্মাদ (স.)! উম্মুল ফজল তো সন্তান প্রসবা-গর্ভবতী ।" নবী করিম (স.) এই খবর শুনে বললেন, " চাচা, আল্লাহ আপনাদের চক্ষুদ্বয় শীতল করুক (অর্থাৎ চোখ জুড়ানো সন্তান দান করুক) ।" ইবনে আব্বাস বলেন - যখন আমার সম্মানিত মা-এর পবিত্র গর্ভ থেকে জন্ম গ্রহণ করলাম তখন আমার পিতা আমাকে এক টুকরো কাপড়ে জড়িয়ে কোলে করে নবীজির কাছে নিয়ে গেলেন। নবি করিম (স.) আমার মুখে উনার একটু থুথু মোবারক দিয়ে 'তাহ্নিক' করলেন । অন্য বর্ণনায় এসেছে যে,- নবীজি শিশু আবদুল্লাহর মুখে একটু থুথু মোবারক দিয়ে তাহ্নিক করেন এবং এই বলে দোয়া করেন - اللَّهُمَّ فَقِّهْهُ فِي الدِّينِ وَعَلِّمْهُ التَّأْوِيلَ
(আল্লাহুম্মা ফাক্কিহহু ফিদ্দিন ওয়া আল্লিমহুত তাওয়িল) অর্থাৎ- " হে আল্লাহ! আপনি তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করুন এবং তাকে তাফসিরের অগাধ জ্ঞান দান করুন !"
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস এর জননী হিজরতের পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেছেন বিধায় তকে আশৈশব মুসলিম হিসেবে গণ্য করা হয়।
তিনি সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবীদের অন্যতম । আল্লামা আইনির মতে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস এর বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ১৬৬০ টি । কারো মতে ২৬৬০ টি । বুখারী শরিফে ও মুসলিম শরিফে যৌথভাবে ৯৫ টি, এককভাবে বুখারীতে ১২০ টি এবং মুসলিমে ৪৯ টি হাদিস উল্লেখ রয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর তাফসিরের নাম “তানওয়ীর আলমিকবাস মিন তাফসীর ইবন আব্বাস” ।
“ | ইবনে আব্বাস তোমাদের সকলের অপেক্ষা বড় বিদ্বান । | ” |
উমর তার সম্পর্কে আরও বলতেন যে,
“ | সে বয়সে তরুণ, জ্ঞানে প্রবীণ ! | ” |
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বার্ধক্য জীবনে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন । তিনি ইবনে জুবায়েরের শাসনামলে ৬৮ হিজরি, ৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দে তায়েফে মৃত্যুবরণ করেন । মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়্যা তার নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন ।তায়েফ নগরে ‘মসজিদে ইবন আব্বাস’ নামক বিশাল মসজিদটি আজও তাঁর স্মৃতি বহন করে চলেছে। এ মসজিদেরই পেছনের দিকে এক পাশে এ মহান সাহাবীর কবর। তাঁকে কবরে সমাহিত করার পর কুরআনের এ আয়াতটি পঠিত হয়েছিলঃ
يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ – ارْجِعِي إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً – فَادْخُلِي فِي عِبَادِي – وَادْخُلِي جَنَّتِي –
‘হে পরিতুষ্ট আত্মা! তুমি প্রসন্ন ও সন্তুষ্ট অবস্থায় তোমার প্রতিপালকের দিকে প্রত্যাবর্তন কর। অতঃপর আমার বান্দাগণের মধ্যে প্রবিষ্ট হও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (আল-ফজরঃ ২৭-৩০)
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.