১৯৮৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপ আইসিসি আয়োজিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার ৪র্থ আসর। ব্যবসায়িক অংশীদারীত্বের কারণে এ প্রতিযোগিতাটি রিলায়েন্স বিশ্বকাপ নামে পরিচিত। ১৯৮৭ সালের ৮ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তান - যৌথভাবে আয়োজন করে যা প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের বাইরে ২১টি ভিন্ন ভিন্ন মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। দুইটি সেমি-ফাইনাল এবং একটি ফাইনালসহ সর্বমোট ২৭টি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ সালের প্রতিযোগিতায় ব্যবহৃত নিয়ম-কানুন একদিনের ক্রিকেটের রূপরেখা অনুযায়ী অপরিবর্তিত থাকে। শুধুমাত্র ওভার সংখ্যা কমিয়ে ৬০ থেকে ৫০-এ নিয়ে আসা হয়; যা বর্তমান মানদণ্ডে প্রচলিত রয়েছে।
তারিখ | ৮ অক্টোবর – ৮ নভেম্বর ১৯৮৭ |
---|---|
তত্ত্বাবধায়ক | আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল |
ক্রিকেটের ধরন | একদিনের আন্তর্জাতিক |
প্রতিযোগিতার ধরন | রাউন্ড-রবিন ও নক-আউট |
আয়োজক | ভারত পাকিস্তান |
বিজয়ী | অস্ট্রেলিয়া (১ম শিরোপা) |
রানার-আপ | ইংল্যান্ড |
অংশগ্রহণকারী দলসংখ্যা | ৮ |
খেলার সংখ্যা | ২৭ |
সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী | গ্রাহাম গুচ (৪৭১) |
সর্বাধিক উইকেটধারী | ক্রেগ ম্যাকডারমট (১৮) |
প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া দল এ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়। স্বাগতিক দলদ্বয় সেমি-ফাইনালে হেরে চূড়ান্ত খেলায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়। পূর্বতন চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ গ্রুপ পর্বেই বিদায় নেয়। কোর্টনি ওয়ালশের বদন্যতায় সেলিম জাফর বেঁচে যাওয়ায় তাদের এ দুর্গতি হয়।
বিশ্বকাপে ৮টি দেশের জাতীয় ক্রিকেট দল অংশগ্রহণ করে। প্রাথমিক পর্বের খেলাগুলো দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে চারটি দল একে-অপরের বিরুদ্ধে দুইবার করে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়। প্রতি গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় দু’টি দল সেমি-ফাইনালে পৌঁছে যাবে। সেমি-ফাইনালের বিজয়ী দলগুলো ফাইনালে লড়বে। প্রতিটি দল ৫০ ওভারব্যাপী ইনিংসে অংশ নেয়। সকল খেলাই দিনের আলোয় অনুষ্ঠিত হয়; পাশাপাশি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বশেষবারের মতো সনাতনী ধারায় সাদা পোশাক ও লাল বল দিয়ে খেলা হয়।
আইসিসি’র পূর্ণাঙ্গ সদস্যভূক্ত দেশগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে যোগ্যতা লাভ করে। শ্রীলঙ্কা দল পূর্বতন বিশ্বকাপে টেস্ট খেলুড়ে দেশের মর্যাদা পেয়েছিল। অতিরিক্ত একটি দেশ নির্বাচনের লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালের আইসিসি ট্রফি বিজয়ী দলকে নির্ধারণ করা হয়। এতে জিম্বাবুয়ে দল নেদারল্যান্ডসকে পরাভূত করে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা লাভ করে।
নিচের আটটি দল চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে:
দল | খেলা | জয় | টাই | পরাজয় | নেট রান | পয়েন্ট |
---|---|---|---|---|---|---|
ভারত | ৬ | ৫ | ০ | ১ | ৫.৪১ | ২০ |
অস্ট্রেলিয়া | ৬ | ৫ | ০ | ১ | ৫.১৯ | ২০ |
নিউজিল্যান্ড | ৬ | ২ | ০ | ৪ | ৪.৮৯ | ৮ |
জিম্বাবুয়ে | ৬ | ০ | ০ | ৬ | ৩.৭৬ | ০ |
দল | খেলা | জয় | টাই | পরাজয় | নেট রান | পয়েন্ট |
---|---|---|---|---|---|---|
পাকিস্তান | ৬ | ৫ | ০ | ১ | ৫.০১ | ২০ |
ইংল্যান্ড | ৬ | ৪ | ০ | ২ | ৫.১৪ | ১৬ |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ৬ | ৩ | ০ | ৩ | ৫.১৬ | ১২ |
শ্রীলঙ্কা | ৬ | ০ | ০ | ৬ | ৪.০৪ | ০ |
৯ অক্টোবর, ১৯৮৭ স্কোরকার্ড |
বনাম |
ইংল্যান্ড ২ উইকেটে বিজয়ী মিউনিসিপ্যাল স্টেডিয়াম, গুজরানওয়ালা, পাকিস্তান |
১৭ অক্টোবর, ১৯৮৭ স্কোরকার্ড |
বনাম |
ইংল্যান্ড ১০৮ রানে বিজয়ী আরবাব নিয়াজ স্টেডিয়াম, পেশাওয়ার, পাকিস্তান |
সেমি-ফাইনাল | ফাইনাল | |||||
৪ নভেম্বর, ১৯৮৭ – লাহোর, পাকিস্তান | ||||||
অস্ট্রেলিয়া | ২৬৭/৬ | |||||
৮ নভেম্বর, ১৯৮৭ – কলকাতা, ভারত | ||||||
পাকিস্তান | ২৫২ | |||||
অস্ট্রেলিয়া | ২৫৩/৫ | |||||
৫ নভেম্বর, ১৯৮৭ – বোম্বে, ভারত | ||||||
ইংল্যান্ড | ২৪৬/৮ | |||||
ইংল্যান্ড | ২৫৪/৬ | |||||
ভারত | ২১৯ | |||||
প্রথম সেমি-ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া দল টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ডেভিড বুন-ডিন জোন্স দ্বিতীয় উইকেটে ৮২ রান সংগ্রহ করেন। ডেভিড বুন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৫ রান করেন ৯১ বলে ৪টি চারের সাহায্যে। একসময় ধারণা করা হচ্ছিল দলটি তিন শতাধিক রান করবে। কিন্তু ইমরান খান ৫ ওভারে ১৭ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট সংগ্রহ করে রানের চাকা কিছুটা থামিয়ে দিতে সক্ষম হন। একপর্যায়ে অস্ট্রেলিয়া ৩১ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারায়। কিন্তু পাকিস্তানি বোলাররা অধিক সংখ্যায় অতিরিক্ত ৩৪ রান দেয়। অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাড়ায় নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৬৭ রান। ২৬৮ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে খেলতে নেমে শুরুতেই পাকিস্তানের ৩৮ রানের মধ্যে ৩ উইকেটের পতন ঘটে। ইমরান খান-জাভেদ মিয়াঁদাদ জুটি ২৬ ওভারে ১১২ রান করে। মিয়াঁদাদের আউটের সময় জয়ের প্রয়োজনীয় রান রেট ৭.৮৭ ছিল। কিন্তু পরবর্তী ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার পালায় পরবর্তী ৬ উইকেট হারায় ৯৯ রানের ব্যবধানে। ক্রেগ ম্যাকডারমট ৪৪ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট লাভ করেন। ফলে পাকিস্তান ৪৯ ওভারে অল-আউট হয়ে সংগ্রহ করে ২৪৯ রান এবং ১৫ রানে অস্ট্রেলিয়া বিজয়ী হয়।
দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে টসে জয়ী হয়ে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। ৭৯ রানে ২ উইকেটের পতনের পর গ্রাহাম গুচকে সাথে নিয়ে অধিনায়ক মাইক গ্যাটিং জুটি ১৯ ওভারে ১১৭ রান করে। স্ট্যাম্পিংয়ে গুচ ১১৫ রান করে আউট হন। ইংল্যান্ড ২৫৪ রান করে ৬ উইকেটের বিনিময়ে। জবাবে ভারত ৭৩ রানে ৩ উইকেট হারায়। মাঝারিসারির ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন ও এডি হ্যামিংসের বলে এলবিডব্লিউ হন। তখন দলের রান ছিল ২০৪/৫ ও শেষ ১০ ওভারে ৫ রান গড় এবং ৫ উইকেট হাতে ছিল। কিন্তু শেষ ৫ উইকেটের পতন ঘটে মাত্র ১৫ রানের ব্যবধানে। ফলে ইংল্যান্ড খেলায় জয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে পৌঁছে ও চার বছর পূর্বেকার সেমি-ফাইনালে হারার প্রতিশোধ নেয়।
৫ নভেম্বর, ১৯৮৭ স্কোরকার্ড |
ব | ||
গ্রাহাম গুচ ১১৫(১৩৬) Maninder সিং ৩/৫৪ (১০ ওভার) | মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন ৬৪(৭৪) এডি Hemmings ৪/৫২ (৯.৩ ওভার) |
অস্ট্রেলিয়া টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিংয়ে নামে। ডেভিড বুন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৫ রান করেন ১২৫ বলের বিনিময়ে। বুন তার অসাধারণ এ ইনিংসের জন্যে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার অর্জন করেন। অন্যান্য ব্যাটসম্যানরাও ভাল রান করেছেন। শেষদিকে মাইক ভেলেটা ছয়টি চারের সাহায্যে ৩১ বলে ৪৫ রান করেন। শেষ ছয় ওভারে অস্ট্রেলিয়া ৬৫ রান করতে পেরেছে। ফলে, নির্ধারিত ৫০ ওভারে দলটি ২৫৩ রান করে ৫ উইকেটের বিনিময়ে।
২৫৪ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে খেলতে নেমে টিম রবিনসন প্রথম বলেই শূন্য রানে আউট হন। বিল অ্যাথে ১০৩ বলে ২ চারের সাহায্যে ৫৮ রান উঠান। অধিনায়ক মাইক গ্যাটিং ৪৫ বলে ৪১ রান সংগ্রহ করেন। অ্যাথে-গ্যাটিং জুটি ১৩ ওভারে ৬৯ রান করে। অ্যালান ল্যাম্বও ৪৫ রান করেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় রান-রেট শুরু থেকেই বৃদ্ধি পেতে থাকায় চূড়ান্ত ওভার শেষে ১৭ রানের পার্থক্য থাকে। এরফলে বিশ্বকাপ ট্রফি অস্ট্রেলিয়া দলের অনুকূলে চলে যায়।
|
|
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article ১৯৮৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপ, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.