হ্যাট্রিক (ইংরেজি: hat-trick) কোন ক্রীড়ায় ব্যবহৃত পরিভাষা যা কোন খেলোয়াড় কর্তৃক খেলা চলাকালীন পরপর তিনবার লক্ষ্যস্থলে আঘাত হানার বিরল কৃতিত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ: ক্রিকেট খেলায় উইকেট লাভ, ফুটবলে গোল করা ইত্যাদি। ১৮৫৮ সালে এ পরিভাষাটি ক্রিকেট খেলায় সর্বপ্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল। এইচএইচ স্টিফেনসন নামীয় ক্রিকেটার ধারাবাহিকভাবে তিন বলে তিনটি উইকেট লাভ করে এ সম্মাননার দাবীদার হয়েছেন। স্টিফেনসনের এ অর্জনের প্রেক্ষিতে তাঁকে একটি হ্যাট প্রদান করা হয়েছিল। মুদ্রণশিল্পে হ্যাট্রিক পরিভাষাটির প্রথম ব্যবহার হয় ১৮৭৮ সালে। পরবর্তীকালে ফুটবল, ওয়াটার পোলো, হ্যান্ডবলের ন্যায় বিভিন্ন খেলায় ব্যবহৃত হতে শুরু করে। কিন্তু ১৯৪০-এর মধ্যভাগের পূর্ব পর্যন্ত উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর জাতীয় হকি লীগে ব্যবহার করা হয়নি।
এক্সটেনডেড অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত সংস্করণ মোতাবেক জানা যায়, ১৮৫৮ সালে শেফিল্ডের হাইড পার্ক গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত অল-ইংল্যান্ড ইলাভেনের হয়ে হাল্লামের ২২জনের দলের বিপক্ষে এইচএইচ স্টিফেনসন পরপর তিন বলে তিন উইকেট দখল করেছিলেন। স্টিফেনসনের সম্মানে সকলে একত্রিত হয়ে তাঁকে একটি হ্যাট প্রদান করা হয়েছিল।
ক্রিকেট খেলায় যখন একজন বোলার ধারাবাহিকভাবে তিনটি বল ছুড়ে তিনজন ভিন্ন ভিন্ন ব্যাটসম্যানকে আউট করার মাধ্যমে তিনটি উইকেট লাভ করেন, তখন ক্রিকেটের পরিভাষায় তা হ্যাট্রিক নামে পরিচিত পায়। টেস্ট ক্রিকেট খেলায় এটি একটি অন্যতম সম্পর্কযুক্ত বিষয়, কিন্তু বিরল ঘটনা হিসেবে বিবেচ্য। ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ তারিখ পর্যন্ত দুই সহস্রাধিক টেস্ট ক্রিকেটে মাত্র ৪১বার এ ধরনের হ্যাট্রিকের ঘটনা ঘটেছে। দশটি টেস্টখেলুড়ে দেশের কমপক্ষে একজন বোলার টেস্ট হ্যাট্রিক করার মর্যাদা লাভ করেছেন।
প্রথম টেস্ট হ্যাট্রিকটি করেছেন - অস্ট্রেলীয় পেস বোলার ফ্রেড স্পফোর্থ। তিনি মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ২ জানুয়ারি, ১৮৭৯ সালে অনুষ্ঠিত ৩য় টেস্টে ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে এ কীর্তিগাঁথাটি সৃষ্টি করেছিলেন। সাম্প্রতিককালের সর্বশেষ হ্যাট্রিকের ঘটনাটি ঘটে ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার খেলায়। ইংল্যান্ডের বোলার স্টুয়ার্ট ব্রড ২০ জুন, ২০১৪ তারিখে এ বিরল কৃতিত্বের অন্যতম অংশীদার হন। বাংলাদেশী ক্রিকেট খেলোয়াড়দের মধ্যে অলোক কাপালি’র পর বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয় হ্যাট্রিক লাভ করেন সোহাগ গাজী। এছাড়াও, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ১ম টেস্ট সোহাগ গাজী হ্যাট্রিকসহ ৬ উইকেট ও সেঞ্চুরি করে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। তিনি ধারাবাহিকভাবে কোরে অ্যান্ডারসন, বিজে ওয়াটলিং এবং ডগ ব্রেসওয়েলকে আউট করে এ বিরল নজির স্থাপন করেন।
বোলার কর্তৃক একই টেস্ট ম্যাচের দুই ইনিংসে দুইটি হ্যাট্রিক লাভের ঘটনা ঘটেছে মাত্র একবার। অস্ট্রেলীয় লেগ স্পিনার জিমি ম্যাথুজ ২৮ মে, ১৯১২ তারিখে ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এ অসম্ভব কীর্তিগাঁথা রচনা করেছিলেন। উভয় হ্যাট্রিকই পূর্ণ করেন দক্ষিণ আফ্রিকার টমি ওয়ার্ডকে আউট করার মাধ্যমে। ক্রিকেট বিশ্বকাপ ও টি২০ বিশ্বকাপ উভয়েই হ্যাট্রিক করার বিরল কীর্তি আছে অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলিং কিংবদন্তি ব্রেট লি'র| পাকিস্তানের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরাম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৪বার হ্যাট্রিক করেন|
হ্যাট্রিক হিসেবে স্বীকৃতি লাভের জন্য ফুটবল খেলায় বিভিন্ন শর্তাবলী রয়েছে। তন্মধ্যে প্রধান শর্ত হচ্ছে কোন ফুটবল খেলায় একজন ফুটবলারকে ৩ গোল করতে হয়। বিশেষ সম্মাননা হিসেবে সাধারণতঃ তিনি খেলার বলটি নিজের কাছে রেখে দেন। পেনাল্টি শ্যুট আউটের মাধ্যমে গোল করা এর অন্তর্ভুক্ত নয়। জার্মান হ্যাট্রিকে নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে হতে হবে। যখন খেলোয়াড় প্রথম গোল ডান পায়ে, দ্বিতীয় গোল বাম পায়ে ও মাথা দিয়ে গোল করেন তখন তা ক্লাসিক বা পারফেক্ট হ্যাট্রিক নামে পরিচিত। মাঝে-মধ্যে জার্মানরা পরাজয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ হ্যাট্রিকলাভকারী খেলোয়াড়কে ৩ পদক প্রদান করে থাকে। নেদারল্যান্ডসে প্রত্যেক অর্ধে কোন খেলোয়াড় তিন গোল করলে ও বিপক্ষে কোন গোল না করলে তা হ্যাট্রিক হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
দ্রুততম সময়ে হ্যাট্রিক হয়েছে মাত্র ৭০ সেকেন্ডের মধ্যে। ২০১৩ সালে সানডে লীগ ফুটবলে অ্যালেক্স টোর এ রেকর্ড স্থাপন করেন। বিশ্বকাপ ফুটবলে এ পর্যন্ত ৪৯বার হ্যাট্রিকের ঘটনা ঘটেছে। তন্মধ্যে ১৯৬৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে একমাত্র হ্যাট্রিকটি সম্পন্ন করেছেন ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্ট।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article হ্যাট্রিক, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.