সিমন সিনিয়রে: ফরাসি অভিনেত্রী

সিমন সিনিয়রে (ফরাসি: Simone Signoret, ফরাসি : ; জন্ম: ২৫শে মার্চ, ১৯২১ – ৩০শে সেপ্টেম্বর, ১৯৮৫) ছিলেন একজন ফরাসি অভিনেত্রী। তাকে ফ্রান্সের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র তারকা বলে অভিহিত করা হয়। তিনি একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী প্রথম ফরাসি ব্যক্তি। এছাড়া তিনি তার অভিনয় জীবনে দুটি সেজার পুরস্কার, তিনটি বাফটা পুরস্কার, একটি এমি পুরস্কার, একটি কান চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার, একটি রৌপ্য ভল্লুক, একটি ন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ পুরস্কার লাভ করেন এবং দুটি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।

সিমন সিনিয়রে
Simone Signoret
সিমন সিনিয়রে: প্রারম্ভিক জীবন, কর্মজীবন, ব্যক্তিগত জীবন
জন্ম
সিমন অঁরিয়েত শার্লত কামিনকের

(১৯২১-০৩-২৫)২৫ মার্চ ১৯২১
ভিসবাডেন, জার্মানি
মৃত্যু৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৮৫(1985-09-30) (বয়স ৬৪)
ওতোই-ওতুইলে, ফ্রান্স
মৃত্যুর কারণঅগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার
সমাধিপের লাশেজ সমাধিস্থল
জাতীয়তাফরাসি
পেশাঅভিনেত্রী
কর্মজীবন১৯৪২–১৯৮৫
দাম্পত্য সঙ্গীইভ আলেগ্রে
(বি. ১৯৪৪; বিচ্ছেদ. ১৯৪৯)

ইভ মোঁতঁ
(বি. ১৯৫১; মৃ. ১৯৮৫)
সন্তানকাত্রিন আলেগ্রে

১৯৪২ সালে ল্য বিয়েলফেতু চলচ্চিত্র দিয়ে তার বড় পর্দায় অভিষেক হয়। ১৯৫২ সালে কাস্ক দর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ বিদেশি অভিনেত্রী বিভাগে বাফটা পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫৭ সালে লে সর্সিয়ের দ্য সালেম ছবির জন্য তিনি আরেকটি বাফটা পুরস্কার লাভ করেন। পরের বছর রুম অ্যাট দ্য টপ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি তার প্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন, এছাড়া তিনি তার তৃতীয় বাফটা পুরস্কার ও প্রথমবারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে কান চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার, ন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ পুরস্কার লাভ করেন এবং গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।

১৯৬০-এর দশকে তিনি শিপ অব ফুলস্‌ (১৯৬৫) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি পুনরায় শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি, বাফটা ও গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। তার আরও দুটি বাফটা পুরস্কারের মনোনয়ন আসে ডেডলি অ্যাফেয়ার (১৯৬৬) এবং গেমস (১৯৬৭) চলচ্চিত্রের জন্য। তার একটি এমি পুরস্কার আসে বব হোপ প্রেজেন্টস দ্য ক্রিসলার থিয়েটার (১৯৬৬) টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ের জন্য। ১৯৭০-এর দশকে ল্য চাট (১৯৭১) ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি ২১তম বার্লিনেলে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে রৌপ্য ভল্লুক এবং মাদাম রোজা ছবিতে অভিনয়ের জন্য ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে দাভিদ দি দোনাতেল্লো ও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে সেজার পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি লেতুইল দ্যু নর্দ (১৯৮২) ছবিতে অভিনয়ের জন্য অপর একটি সেজার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।

প্রারম্ভিক জীবন

সিনিয়রে ১৯২১ সালের ২৫শে মার্চ জার্মানির ভিসবাডেনে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ণ নাম সিমোন অঁরিয়েত শার্লত কামিনকের। তার পিতা অঁদ্রে কামিনকের ও মাতা জর্জেত (সিনিয়রে) কামিনকের। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি সর্বজ্যেষ্ঠ। তার ছোট দুই ভাই রয়েছে। তার পিতা সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে কাজ করতেন এবং দোভাষীদের অগ্রদূত ছিলেন। তিনি পোলীয় ইহুদি পরিবারে ফরাসি সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি তার পরিবার নিয়ে প্যারিসের ন্যয়ি-সুর-সেন শহরতলীতে চলে আসেন। তার মাতা জর্জেত ছিলেন একজন ফরাসি ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী। তার পিতা একজন ফরাসি বিপ্লবী ছিলেন, যিনি ১৯৪০ সালে ইংল্যান্ডে জেনারেল দ্য গোলে যোগ দিতে ফ্রান্স থেকে পালিয়ে যান।

কর্মজীবন

সিমন সিনিয়রে: প্রারম্ভিক জীবন, কর্মজীবন, ব্যক্তিগত জীবন 
১৯৪৭ সালে সিনিয়রে।

জার্মান কর্তৃক ফ্রান্স দখলের সময়ে সিনিয়রে সাঁ-জেরমাঁ-দে-প্রে কোয়ার্টারের কাফে দ্য ফ্লোরে লেখক ও অভিনয়শিল্পীদের একজটি শৈল্পিক দলের সাথে পরিচিত হন। এই সময়ে তার অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মে এবং তিনি তার প্রেমিক দানিয়েল গেলাঁ-সহ বন্ধুদের অনুপ্রেরণায় অভিনয় শুরু করেন। ১৯৪২ সালে ল্য বিয়েলফেতু চলচ্চিত্র দিয়ে তার বড় পর্দায় অভিষেক হয়। তিনি এই সময়ে ছোট খাট চরিত্রে কাজ করতে থাকেন এবং তার মাতা ও ভাইদের ভরণপোষণ করার মত অর্থ উপার্জন করতে শুরু করেন। তিনি তার ইহুদি পরিচিতি লুকাতে পর্দায় ব্যবহারের জন্য তার মায়ের বিবাহ-পূর্ব নাম গ্রহণ করেন।

সিনিয়রে লা রোন্দ (১৯৫০) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সকলের নজর কাড়েন, যদিও ছবিটি অনৈতিক বিবেচনায় নিউ ইয়র্ক সিটিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। সিনিয়রের কামোদ্দীপক ও স্বাভাবিক প্রকৃতি তাকে একই ধরনের কাজ পেতে সাহায্য করে এবং তাকে প্রায়ই যৌনকর্মী চরিত্রে দেখা যায়। তিনি ১৯৫২ সালে জাক বেকারের কাস্ক দর চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আরও সমাদৃত হন এবং শ্রেষ্ঠ বিদেশি অভিনেত্রী বিভাগে বাফটা পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫০-এর দশকে ফ্রান্সে তার অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল মার্সেল কার্নে পরিচালিত তেরেস রাকুঁ (১৯৫৩), অঁরি-জর্জ ক্লুজো পরিচালিত মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলারধর্মী লে দিয়াবোলিক (১৯৫৪) এবং আর্থার মিলারের দ্য ক্রুসিবল নাটক অবলম্বনে লে সর্সিয়ের দ্য সালেম (১৯৫৬)। ১৯৫৭ সালে লে সর্সিয়ের দ্য সালেম ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ বিদেশি অভিনেত্রী বিভাগে আরেকটি বাফটা পুরস্কার লাভ করেন।

সিমন সিনিয়রে: প্রারম্ভিক জীবন, কর্মজীবন, ব্যক্তিগত জীবন 
অস্কার জয়ের পর ১৯৫৯ সালে চিত্রশিল্পী নিকোলাস ভোল্পের আঁকা ছবিতে সিনিয়রে।

১৯৫৮ সালে সিনিয়রে ইংরেজ স্বাধীন চলচ্চিত্র রুম অ্যাট দ্য টপ-এ অভিনয় করে সমাদৃত হন। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এ এইচ ওয়েইলার তার চরিত্র সম্পর্কে লিখেন, "তিনি সুখের শেষ সুযোগটুকু ছোঁ মেরে নিয়েছেন।" এই কাজের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন, তন্মধ্যে রয়েছে তার প্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে কান চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার ও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য একাডেমি পুরস্কার। তিনি অস্কার বিজয়ী প্রথম ফরাসি অভিনেত্রী, এরপর ১৯৯৭ সালে জুলিয়েত বিনোশ (শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে) ও ২০০৮ সালে মারিয়োঁ কোতিয়ার (শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে) ফরাসি অভিনেত্রী হিসেবে অস্কার জয় করেন। এছাড়া তিনি এই কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে তার তৃতীয় বাফটা পুরস্কার ও ন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ পুরস্কার অর্জন করেন এবং গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। পরবর্তী কালে তিনি হলিউডের চলচ্চিত্রে কাজের প্রস্তাব পেলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে কাজ চালিয়ে যান। এই সময়ে তার উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল লরন্স অলিভিয়ের বিপরীতে টার্ম অব ট্রায়াল (১৯৬২)।

তিনি কলাম্বিয়া পিকচার্সের শিপ অব ফুলস্‌ (১৯৬৫) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে আরেকটি অস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এছাড়া এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে বাফটা ও গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। দ্য টাইমস-এর বসলি ক্রাউদার তার ও অস্কার ভের্নারের রসায়নের প্রশংসা করে লিখেন, "দুজন হতাশ ও লুপ্তপ্রায় মানুষের মধ্যে এত স্নিগ্ন, বোঝাপড়া ও দুঃখ, যা মানুষের মর্যাদা ও নিরাশার ঝাপসা উপস্থাপন।"

ব্যক্তিগত জীবন

সিমন সিনিয়রে: প্রারম্ভিক জীবন, কর্মজীবন, ব্যক্তিগত জীবন 
পের লাশেজ সমাধিস্থলে সিনিয়রে ও মোঁতঁর সমাধি।

সিনিয়রে ১৯৪৪ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা ইভ আলেগ্রেকে বিয়ে করেন। তাদের এক কন্যা রয়েছে। তাদের কন্যা কাত্রিন আলেগ্রে একজন অভিনেত্রী। ১৯৪৯ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ১৯৫১ সালে তিনি ইতালিতে জন্মগ্রহণকারী ফরাসি অভিনেতা ইভ মোঁতঁকে বিয়ে করেন।

সিনিয়রের স্মৃতিকথা নস্টালজিয়া ইজন্ট হোয়াট ইট ইউজড টু বি ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয়। তার রচিত উপন্যাস আদিও ভলদিয়া ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয়।

সিনিয়রে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৮৫ সালে ৩০শে সেপ্টেম্বর ৬৪ বছর বয়সে ফ্রান্সের ওতোই-ওতুইলে শহরে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে প্যারিসের পের লাশেজ সমাধিস্থলে সমাধিস্থ করা হয়। ইভ মোঁতঁকেও পরে তার পাশে সমাধিস্থ করা হয়।

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

  • ফরাসি একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী ও মনোনীতদের তালিকা

বহিঃসংযোগ

Tags:

সিমন সিনিয়রে প্রারম্ভিক জীবনসিমন সিনিয়রে কর্মজীবনসিমন সিনিয়রে ব্যক্তিগত জীবনসিমন সিনিয়রে তথ্যসূত্রসিমন সিনিয়রে আরও দেখুনসিমন সিনিয়রে বহিঃসংযোগসিমন সিনিয়রেউইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় ফরাসি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণএকাডেমি পুরস্কারএমি পুরস্কারকান চলচ্চিত্র উৎসবগোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ অব মোশন পিকচার্সফরাসি ভাষাফ্রান্সবাফটা পুরস্কারশ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে রৌপ্য ভল্লুকসেজার পুরস্কার২৫ মার্চ৩০ সেপ্টেম্বর

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসপ্রবাসী বাংলাদেশীদ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনরাহুল গান্ধীকানাডাডেল্টা প্ল্যান-২১০০রাজশাহীখালেদা জিয়াকাজী নজরুল ইসলামচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ইউক্যালিপটাসঅ্যাটর্নি জেনারেলআবু বকরহিন্দুধর্মবাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রমকাঠগোলাপঅপারেশন সার্চলাইটব্রিটিশ ভারতবিশ্ব পরিবেশ দিবসকারকবাংলাদেশ পুলিশরবীন্দ্রজয়ন্তীআন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্ববাংলাদেশের বিমানবন্দরের তালিকাপ্রাণ-আরএফএল গ্রুপবাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রসমূহের তালিকাভাষাসরকারি বাঙলা কলেজমিশরবঙ্গভঙ্গ (১৯০৫)পুলিশবাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলবাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিচাণক্যমূল (উদ্ভিদবিদ্যা)কলকাতা নাইট রাইডার্সনারীভারতের সংবিধানই-মেইলকুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টমিজানুর রহমান আজহারীবালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রলোকসভা কেন্দ্রের তালিকাপূর্ণিমা (অভিনেত্রী)শহীদুল জহিরবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীআরবি ভাষাভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০১৯টাইফয়েড জ্বরইহুদি ধর্মব্রহ্মপুত্র নদশ্রীনিবাস রামানুজনবাংলা ভাষাআবুল খায়ের গ্রুপকৃষ্ণলালবাগের কেল্লাসতীদাহনুসরাত ইমরোজ তিশাপ্রথম ওরহানগোবিন্দ চন্দ্র দেবনরসিংদী জেলাপেপসিমানবজমিন (পত্রিকা)দোয়া কুনুতসার্বিয়াইসলামের ইতিহাসভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনহৃৎপিণ্ডইরানমৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটএ. পি. জে. আবদুল কালামসৌদি আরবআর্জেন্টিনা–ব্রাজিল ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিভিন্ন দেশের মুদ্রা৬৯ (যৌনাসন)শর্করাআয়তন অনুযায়ী ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহের তালিকা🡆 More