বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী ১৯৭৫ সালে কার্যকরা হয়েছিল। সংবিধান (চতুর্থ সংশোধনী) আইন ১৯৭৫ এর মাধ্যমে এই সংশোধনী কাযর্কর করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারি তারিখে আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এতদসংক্রান্ত বিলটি উত্থাপন করেছিলেন। একই দিনে তা ২৯৪-০ ভোটে পাস হয়েছিল। একই দিনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান তা অনুমোদনপূর্বক কার্যকর করেছিলেন।
এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে সংসদীয় শাসন পদ্ধতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল এবং বহুদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে একদলীয় রাজনীতি প্রবর্তন করা হয়েছিল। এই দলের নাম বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল)। অন্য সকল রাজনৈতিক দলকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি ও সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রপতি অপসারণ পদ্ধতি জটিল করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতিকে আইনের ঊর্ধ্বে রাখা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি প্রতিরক্ষা বিভাগের সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হন। রাষ্ট্রপতিকে যে কোন আদেশ দান ও চুক্তি সম্পাদন করার ক্ষমতা প্রদান অর্পণ করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতিকে যে কোন সময় সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল।
চতুর্থ সংশোধনীর দ্বারা সংবিধানে কতিপয় বড় পরিবর্তন আনা হয়। সংসদীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়; বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থলে আনা হয় একদলীয় ব্যবস্থা; জাতীয় সংসদের কতক ক্ষমতা খর্ব করা হয়; বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অনেকটা খর্ব হয়; সুপ্রিম কোর্ট নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহ রক্ষা ও প্রয়োগের এখতিয়ার থেকে বঞ্চিত হয়। এই আইন দ্বারা (১) সংবিধানের ১১, ৬৬, ৬৭, ৭২, ৭৪, ৭৬, ৮০, ৮৮, ৯৫, ৯৮, ১০৯, ১১৬, ১১৭, ১১৯, ১২২, ১২৩, ১৪১ক এবং ১৪৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়; (২) ৪৪, ৭০, ১০২, ১১৫ ও ১২৪ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করা হয়; (৩) সংবিধানের তৃতীয় ভাগ সংশোধন করা হয়; (৪) তৃতীয় ও চতুর্থ তফসিল পরিবর্তন করা হয়; (৫) প্রথম জাতীয় সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়; (৬) রাষ্ট্রপতির পদ ও এই পদের প্রার্থী সম্পর্কে বিশেষ বিধান করা হয়; (৭) সংবিধানে একটি নতুন (একাদশ) ভাগ সংযুক্ত করা হয়; এবং (৮) সংবিধানে ৭৩ক ও ১১৬ক অনুচ্ছেদ দুটি সংযুক্ত করা হয়।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণ করেন যে ১৯৭৫ সালের চতুর্থ সংশোধনী ছিল সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী। ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার যে পূর্ণাঙ্গ রায় ২৫ শে জুলাই ২০১৭ তারিখে প্রকাশিত হয় এতে দেখা যায়, আপিল বিভাগের সাতজন বিচারপতির সকলেই এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন। জিয়াউর রহমানের সামরিক ফরমান নয়, বরং চতুর্থ সংশোধনীর দ্বারাই সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে সংসদের ক্ষমতা খর্ব করে বিচারক অপসারণের কর্তৃত্ব রাষ্ট্রপতির কাছে ন্যস্ত করা হয়েছিল। আর সেই ব্যবস্থা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য হুমকি বিবেচনা করে এবং তার তুলনায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে ‘অধিকতর স্বচ্ছ’ পদ্ধতি বিবেচনায় আপিল বিভাগ পঞ্চম সংশোধনীর মামলার রিভিউতে তা মার্জনা করেছিলেন।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.