ভারতে পতিতাবৃত্তি (অর্থের বিনিময়ে যৌন আদানপ্রদান) আইনসম্মত, কিন্তু এই সংক্রান্ত কিছু কার্যকলাপ, যেমন প্রকাশ্য স্থানে পতিতা নিয়োগ করা, পতিতালয়ের আশেপাশে ঘুরে বেড়ানো, পতিতালয় চালানো, হোটেলে পতিতাবৃত্তি করা, শিশু পতিতাবৃত্তি, কুটনিগিরি করা, পতিতাদের দালালি করা, আইনত অপরাধ। কেবলমাত্র পতিতাদের কিংবা অন্য কারুর ব্যক্তিগত বাসস্থানে যৌনবৃত্তি করাই আইনসম্মত। কিন্তু কলকাতা, মুম্বাই এবং দিল্লির মত ভারতের নানা শহরে অনেক পতিতালয় অবৈধভাবে চালানো হয়।
প্রাচীন ভারতে, ধনিক শ্রেণীর মধ্যে একটি রীতি প্রচলিত ছিল - তারা 'নগরবধূ'দের নৃত্যগীতের জন্য আহ্বান জানাত। আচার্য্য চতুর্সেন বিরচিত 'বৈশালী কি নগরবধূ'তে বর্ণিত রাষ্ট্র বারাঙ্গনা ও ভগবান বুদ্ধের শিষ্যা আম্রপালি এবং খ্রীষ্টপূর্ব ২য় অব্দে শূদ্রক বিরচিত ধ্রুপদী সংস্কৃত নাটক 'মৃচ্ছকটিক' - এর একটি চরিত্র বসন্তসেনা সেযুগের পতিতাদের উদাহরণ।
১৬শ ও ১৭শ শতকে তৎকালীন ভারতের পর্তুগীজ উপনিবেশ গোয়া ছিল পর্তুগীজ দাস নামক সম্প্রদায় নিয়ে গঠিত পর্তুগীজদের একটি শক্তিশালী ঘাঁটি। এই পর্তুগীজ দাস সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল অল্পবয়সী জাপানী মহিলারা যাদের পর্তুগীজ বণিকেরা ধরে বেঁধে এনে যৌন দাসী হিসেবে ব্যবহার করত - এদের বলা হত জাপানী দাস এবং এছাড়াও ছিল জাপান থেকে আগত বন্দী দক্ষিণ এশীয় খালাসী।
অষ্টাদশ শতকের শেষে এবং উনবিংশ শতকের শুরুতে ভারতে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর শাসনের আমলে, ব্রিটিশ সৈন্যরা তাদের কামনা চরিতার্থ করবার জন্য অল্পবয়সী মেয়েদের সেক্স টুল হিসেবে ব্যবহার করে কিছু আরামপ্রদ স্থান তৈরী করেছিল; ব্রিটিশ সেনারা এই স্থানগুলি তাদের নিজেদের বেশ্যাবলয় হিসেবে ব্যবহার করত। 'বিবিসি'র একটি নিবন্ধ জানাচ্ছে, ব্রিটিশ সৈন্যরা মুম্বাইয়ের মত ভারতের বিভিন্ন শহর জুড়ে বেশ্যালয় তৈরী করতে সাহায্য করেছিল; মুম্বাই এখন শিশু পতিতাবৃত্তির অন্যতম স্থান, ভারতীয় খালাসী সমুদ্র নাবিকরা, যাদের জোর করে যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ সেনাবিভাগে নিয়োগ করা হত, তারা তাদের মালিকদের অনুকরণ করে অহরহ সেখানকার স্থানীয় ব্রিটিশ বেশ্যালয়ে গমন করত। ১৯শ শতকে ও ২০শ শতকের শুরুতে, উপমহাদেশীয় ইউরোপ এবং জাপান থেকে হাজার হাজার মেয়েদের ব্রিটিশ অধিকৃত ভারতবর্ষে পাচার করা হত; সেখানে তারা পতিতা হিসেবে ব্রিটিশ সৈন্য ও ভারতীয় পুরুষদের সেবায় নিয়োজিত থাকত।
মুদ্রিত রচনা বিলিতে এবং প্রচারকার্যে সাহায্যের মাধ্যমে এইচ.আই.ভি/এইডস্ ইত্যাদি রোগের সম্বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান, যেমন এম.ডি.এ.সি.এস. (মহারাষ্ট্র ডিস্ট্রিক্ট এইডস্ কন্ট্রোল সোসাইটি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সাধারণ জনগণকে এস.টি.আই./এস.টি.ডি. জাতীয় রোগের প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান তহবিল গড়ে তোলে; ন্যাকো (NACO - National AIDS Control Organisation) এমনই একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান যেটি এইসকল এনজিওগুলিকে পরিচালনা করে।
দেশে প্রায় কুড়ি লক্ষ মহিলা যৌনকর্মী রয়েছে। ২০০৭ সালে, নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে ৩০ লক্ষেরও বেশি মহিলা যৌনকর্মী বিদ্যমান, যাদের ৩৫.৪৭ শতাংশ ১৮ বছর পূর্ণ হবার আগেই এই ব্যবসায় নিয়োজিত হয়। ১৯৯৭ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে ভারতে পতিতাদের সংখ্যা ৫০% বৃদ্ধি পায়।
পতিতালয় প্রকৃতপক্ষে বেআইনি, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে একটি শহরের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে এর কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ। যদিও এই পেশার কোন সরকারী অনুমোদন নেই, তা সত্ত্বেও এটি বন্ধ করতে বা একে নিশ্চিহ্ন করতে সামান্যই প্রচেষ্টা দেখা যায়।
ভারতের বৃহত্তম এবং সর্ব পরিচিত নিষিদ্ধপল্লীগুলি হল কলকাতার সোনাগাছি, গোয়ালিয়রের রেশমপুর, মুম্বাইয়ের কামাঠিপুর ও সোনাপুর এবং নতুন দিল্লির জি. বি. রোড; এগুলিতে হাজার হাজার যৌনকর্মী কাজ করে। আগে বেশ্যবৃত্তির জন্য কিছু কেন্দ্র ছিল - যেমন, সাহারাহানপুরের নাক্কাসা বাজার, মুজফফরপুরে চতুর্ভূজ স্থান, বারাণসীতে লালপুর, মাধুবেদী, এলাহাবাদের মীরগঞ্জ এবং মীরাটের কাবাডিবাজার।
সার্ভে করে দেখা গেছে, আনুমানিক ১২ লক্ষ নাবালিকা বেশ্যাবৃত্তির সাথে যুক্ত। Free a Girl - এর মত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি পাচারকারী, কুটনি এবং যৌন অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে ভারতীয় পুলিশদের সাহায্য করার ব্যাপারে খুবই ইচ্ছুক। সম্প্রতি মুম্বাইয়ের উচ্চতর পুলিশ কর্মচারীরা বিদেশী সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে অখুশি হওয়ায় শিশুরক্ষার কিছু কাজ বাতিল হয়ে গেছে।
২০১১ সালের এপ্রিলে ভারতে যৌনকর্ম সংক্রান্ত সার্ভে করে বেশ কিছু নতুন তথ্য হাতে এসেছে। SANGRAM নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান যেটি যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করে, তার একটি অংশ সেন্টার ফর অ্যাডভোকেসি অন স্টিগমা অ্যাণ্ড মার্জিনালিসেশন (সি.এ.এস.এ.এম.) পূর্বোক্ত সার্ভেটি করেছে।
বেশ্যাবৃত্তি সংক্রান্ত আইনটিই অস্পষ্ট। যৌনকর্মীদের অবস্থা সংক্রান্ত প্রাথমিক আইন গঠিত হয়েছিল ১৯৫৬ সালে, যার নাম অনৈতিক পাচার (দমন) আইন। এই আইন অনুসারে, বেশ্যারা কেবল ব্যক্তিগত স্তরেই তাদের ব্যবসা চালাতে পারে, আইনত তারা প্রকাশ্যে খরিদ্দারদের 'সলিসিট' করতে পারে না। যদিও বিবিসির একটি নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে যে ভারতে বেশ্যাবৃত্তি বেআইনি; তবে ভারতের আইনবিধিতে কোথাও যৌনতা বিক্রি করার প্রথাকে 'বেশ্যাবৃত্তি' হিসেবে দেখানো হয়নি। প্রকাশ্য স্থানের আশেপাশে যৌন ক্রিয়াকলাপের জন্য ক্লায়েন্টদের শাস্তি হতে পারে। সাংগঠনিক বেশ্যাবৃত্তি (যেমন, বেশ্যালয়, পতিতাবলয়, কুটনিগিরি প্রভৃতি) আইনত অপরাধ। যতক্ষণ পর্যন্ত এটি ব্যক্তিগত স্তরে সীমাবদ্ধ এবং ঐচ্ছিক, একজন মহিলা বৈষয়িক লাভের জন্য তার দেহ ব্যবহার করতে পারে (কোন ভারতীয় আইন অনুযায়ী পুরুষ বেশ্যাবৃত্তি স্বীকৃত নয়, অথচ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী, সম্মতিসূচক যৌন সহবাস আইনসিদ্ধ নয়)। প্রকৃত অর্থে, প্রকাশ্য স্থানের ২০০ গজের মধ্যে যৌনকর্মীর দেহব্যবসা চালানোর ওপর আইনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অন্যান্য পেশার মত যৌনকর্মীরা কোন শ্রম আইনের আওতায় পড়ে না, কিন্তু যদি তারা অন্যান্য নাগরিকদের মতোই অধিকার পেতে চায়, তবে তাদের উদ্ধারকৃত হওয়ার এবং পুনর্বাসনের অধিকার রয়েছে।
কার্যক্ষেত্রে, এসআইটিএ বড়ো একটা ব্যবহৃত হয় না। এসআইটিএ-এর থেকে পুরনো ভারতীয় দণ্ডবিধি প্রায়শই যৌনকর্মীদের অপরাধের জন্য প্রয়োগ করা হয়; জনসমক্ষে অশ্লীলতা অথবা উপদ্রব সৃষ্টির মত কিছু অপরাধে, যেগুলি মোটেই যথাযথভাবে নির্ধারিত নয়, সেগুলি যৌনকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়। সম্প্রতি পুরনো আইনটিতে সংশোধন করে নতুন নামকরণ হয়েছে অনৈতিক পাচার (রোধ) আইন। ক্লায়েন্টদের অপরাধী হিসেবে গণ্য করে সংশোধনী প্রবর্তনের বিরোধিতা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং তারাও যথেষ্ট বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। কলকাতার নারী যৌনকর্মীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক দিক দেখা গেছে - রাজ্য অধিকৃত একটি বীমা সংস্থা ২৫০ জন ব্যক্তিকে জীবন বীমা সুরক্ষা দান করেছে।
মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণ থেকে যৌনকর্মী ও তাদের সন্তানদের বাঁচাতে ও ক্রমবর্ধমান এইচআইভি/এইডসের মত রোগের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে বছরের পর বছর ধরে ভারতে বেশ্যাবৃত্তিকে আইনসঙ্গত করে তোলার দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
১৯৫০ সালে নিউ ইয়র্ক শহরে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের পাচার-দমন সংক্রান্ত ঘোষণায় ভারত চুক্তিস্বাক্ষর করে; এর ফলস্বরূপ ১৯৫৬ সালে প্রবর্তিত একটি আইনের সংশোধন পাস করে ১৯৮৬ সালে অনৈতিক পাচার (রোধ) আইন আনা হয়। সেই সময় এই আইনটিকে বলা হত All India Suppression of Immoral Traffic Act (SITA) [সর্বভারতীয় পাচার দমন আইন]; একে সংশোধন করেই বর্তমান আইনটি বলবৎ করা হয়। এই আইনটির উদ্দেশ্যই ছিল প্রথমে সীমিতকরণ এবং এইরূপে যৌনকর্ম সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ ক্রমান্বয়ে অপরাধকরণের মাধ্যমে ভারতে পতিতাবৃত্তিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা। আইটিপিএ - এর মূল দিকগুলি হল -
প্রকাশ্য স্থান অথবা "বিজ্ঞাপিত স্থানের" কাছাকাছি বেশ্যাবৃত্তির জন্যও যৌনকর্মীদের শাস্তি হবে (জরিমানাসহ তিনমাস পর্যন্ত কারাদণ্ড, পয়েন্ট ৭),
এই আইন মোতাবেক প্রকাশ্য স্থানগুলি হল – সর্বসাধারণের ধর্মীয় পূজাঅর্চনার স্থান, শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান, ছাত্রাবাস/হস্টেল, হাসপাতাল ইত্যাদি। PITA আইন মোতাবেক রাজ্য সরকার যেসব স্থানগুলিকে বেশ্যাবৃত্তি-মুক্ত ঘোষণা করেছে সেগুলিকে বলা হবে ‘বিজ্ঞাপিত স্থান’। এই আইন অনুসারে বেশ্যালয় হল এমনই একটি স্থান যেখানে দুই অথবা ততোধিক যৌনকর্মী রয়েছে (২এ)। বেশ্যাবৃত্তি এমনিতে কোন অপরাধ নয়, কিন্তু সলিসিটিং, বেশ্যালয়, কুটনি ইত্যাদি হল বেআইনি।
মানব পাচার কমানোর জন্য নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক ২০০৬ সালে একটি বিল আনে। এই বিলে পাচারকৃত বেশ্যাদের ক্লায়েন্টদের অপরাধী হিসেবে বিচার করবার প্রস্তাব আনা হয়। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়ায় এটি আটকে যায়, এবং পরবর্তীকালে ভারতীয় দণ্ডবিধি সংশোধন করে মানব পাচারের বিরুদ্ধে আইনটিকে বলবৎ করা হয়।
‘পতিতাদের আয়ের অর্থে জীবনযাপন করা’ সংক্রান্ত আইটিপিএ আইনের কিছু দফার বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়; এছাড়াও পতিতালয় চালানোকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা, ‘বিজ্ঞাপিত স্থান’ – এ বেশ্যাবৃত্তি করা, সলিসিটিং করা, যৌনকর্মীদের মুক্ত করা এবং তাদের পুনঃপ্রবেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করার ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটকে ক্ষমতা দান ইত্যাদির বিরুদ্ধেও কোর্টে আপিল করা হয়। অন্যান্য দলগুলি এ ব্যাপারে আইনের সংশোধন আনার ব্যাপারেই সমর্থন জানায়।
২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট বিধান দেয় যে বেশ্যাবৃত্তিকে আইনসঙ্গত করা হোক এবং এই মর্মে আইনটিকে সংশোধনের জন্য একটি প্যানেলের আহ্বান করে। ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট জানায় যে ‘সম্ভ্রমের সাথে বাঁচার অধিকার’ একটি সাংবিধানিক অধিকার এবং ‘যৌনকর্মীদের সম্ভ্রমের সাথে কাজ করবার শর্ত’ তৈরী করবার জন্য একটি আদেশ জারি করে। সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে দেশে পুনর্বাসনের জন্য ইচ্ছুক যৌনকর্মীর সংখ্যা নির্ধারণ করতে সার্ভে করার জন্য নির্দেশ দেয়।
তবে, সাংবিধানিক ‘সম্ভ্রমের সাথে বেঁচে থাকবার অধিকার’ – এর ছত্রছায়ায় যৌনকর্মীরা যাতে তাদের ব্যবসা চালাতে না পারে সেই মর্মে ২০১২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা রুজু করা হয়। সরকারী উকিলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আদালতের এ হেন অনুমোদন ITPA –এর বৈধতাকে নষ্ট করবে যেহেতু ITPA অনুযায়ী বেশ্যাবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। বিরোধীপক্ষের উকিল জানায় যে উক্ত আইনটি শুধুমাত্র বেশ্যালয়ের কার্যকলাপ ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং কুতনিদের বিরুদ্ধে শাস্তি বিধান করে। সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি নিয়ে আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে সম্মত হয়।
‘সংলাপ’ –এর গবেষণা থেকে জানা যায় যে ভারতের অধিকাংশ যৌনকর্মীদের নিজেদের এবং তাদের সন্তানদের ভরণপোষণ করানোর মত আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় তারা পতিতাবৃত্তি শুরু করে। বেশিরভাগই এই পেশাটিকে বেছে নেয় না, বরং প্রয়োজনের তাড়নায় তারা বাধ্য হয়,এ প্রায়শই বিবাহিত জীবন ভেঙে গেলে অথবা পরিবারের লোক তাড়িয়ে দিলে কিংবা গ্রহণ করতে অস্বীকার করলে। নাবালক যৌনকর্মীদের মধ্যে এই ধরনের কাজে যোগ দেওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। কলকাতায় অল বেঙ্গল উইমেন্স ইউনিয়নের ১৯৮৮ সালের একটি সার্ভেতে অক্রম নমুনা হিসেবে ১৬০ জন যৌনকর্মীর থেকে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল; তাদের মধ্যে ২৩ জানায় যে তারা নিজে থেকে এই পেশায় এসেছে, যেখানে ১৩৭ জনের দাবি যে এজেন্ট মারফৎ তারা যৌনব্যবসায় নিযুক্ত হয়েছে। এর পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ নিম্নরূপঃ
লিঙ্গের ভিত্তিতে এজেন্টদের পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ নিম্নরূপঃ – ৭৬% এজেন্ট হল নারী এবং ২৪% হল পুরুষ। ৮০% -এরও বেশি এজেন্ট অল্পবয়সী মেয়েদের এই পেশায় প্রবেশ করায় এবং তারা কেউই পাচারকারী নয়; প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ইত্যাদি।
এছাড়াও, বাংলার কিছু কিছু অঞ্চলে চুকরি প্রথা চালু আছে, যেখানে একজন মহিলাকে ধার শোধ করবার জন্য ‘ধারী-শ্রম’ স্বরূপ জোর করে বেশ্যাবৃত্তিতে প্রবেশ করানো হয়। এই প্রথা অনুযায়ী, বেশ্যাটি সাধারণত বিনা পারিশ্রমিকে একবছর বা তারও বেশি সময় ধরে খাবার, পোশাক, সাজসজ্জা এবং ভরণপোষণের বিনিময়ে বেশ্যালয়ের মালিকের কাল্পনিক ঋণ শোধ করে। ভারতে, সরকারের ‘কেন্দ্র পরিচালিত স্কিম’ মুক্তিপ্রাপ্ত এইসকল ‘ধারী-শ্রমিক’দের এবং তাদের পরিবারকে আর্থিক বা এইপ্রকার কোন অনুদান দিয়ে থাকে। রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে যে এতে আজ পর্যন্ত ২৮,৫০,০০০ জনেরও বেশি মানুষ উপকৃত হয়েছে। বণ্ডেড লেবার সিস্টেম (অ্যাবোলিশন) অ্যাক্ট, ১৯৭৬ দ্বারা প্রায় ৫০০০টি অপরাধ নথিভুক্ত হয়েছে।
কিছু মহিলা তাদের পরিবারকে সাহায্য করবার জন্য প্রথাগত পদ্ধতিতে বেশ্যাবৃত্তিতে প্রবেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, বাছারাদের মধ্যে এই একই নিয়ম চালু আছে যেখানে বাড়ির বড় মেয়েরা সাধারণত বেশ্যায় পরিণত হয়।
১৯৯৬ সালে মুম্বাইয়ের বেশ্যালয়গুলিতে পুলিশ হানা দেইয়ে ৪৮৪ জন মহিলাকে উদ্ধার করে যার ৪০% -এরও বেশি ছিল নেপাল থেকে আগত। ভারতে প্রায় ২ লক্ষ নেপালী মহিলা যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি হয়ে যায়; এদের অনেকেরই বয়স ১৪র নিচে।
মুম্বাই ও কলকাতা হল ভারতের সবথেকে বড় পতিতালয় নির্ভর যৌন শিল্প; মুম্বাইয়ে ১,০০,০০০-এর বেশি যৌনকর্মী রয়েছে। ধারণা করা হয়, গত দশকে পতিতাদের মধ্যে এইসআইভি –এর প্রকোপ কমেছে।
কলকাতার নিষিদ্ধ পল্লী সোনাগাছিতে পতিতাদের মধ্যে একটি প্রতিরোধ কর্মসূচীতে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। প্রায় ৫০০০ পতিতাকে শিক্ষা কর্মসূচীর আওতায় আনা হয়েছে। দুই জোড়া সদস্য নিয়ে গঠিত একটি দল তাদের প্রচারকার্যে শিক্ষা, নিরোধ ব্যবহারের জন্য উৎসাহদান, এস টি আই কেসগুলি পর্যালোচনা ইত্যাদি কর্মসূচী অন্তর্ভুক্ত করেছে। ১৯৯২ সালে যখন এই প্রকল্পটি আরম্ভ করা হয়, তখন যৌনকর্মীদের ২৭% জানায় যে তারা নিরোধ ব্যবহার করে। ১৯৯৫ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ৮২%, এবং ২০০১ সালে সেটা হয় ৮৬%।
পতিতালয়ে কাজ করা মহিলাদের কাজ খুব নির্জন আর গৃহবন্দী পরিবেশে হওয়ার জন্য তাদের কাছে পৌঁছনো খুব ঝকমারি; কুটনী, মাসি, এবং বেশ্যালয় রক্ষক তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বাধা দেয় এবং বেশ্যাদের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রেও বাধার সৃষ্টি করে যার দরুণ যৌনকর্মীদের মধ্যে শিক্ষার হার নিচু থেকে মাঝারি মানের হয়ে থাকে।
শুধু HIV নয়, ৮৬৮টি প্রতিরোধ প্রকল্প অনুসন্ধান করে জানা গেছে যে পতিতাদের মধ্যে অন্যান্য সংক্রমণও কমানো গেছে; ১৯৯৫ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ৫,০০,০০০ মহিলা যৌন কর্মী উক্ত প্রকল্পগুলির আওতায় এসেছে। গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, প্রতিরোধ প্রকল্পের দ্বারা যৌন কর্মীদের মধ্যে HIV এবং সিফিলিস সংক্রমণের মত রোগ কমানো গেছে; অল্পবয়সী গর্ভবতী মহিলারা সরকারী জন্মপূর্ব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত পরীক্ষা করায়।
দেখা গেছে, ভারতে বেশ্যাবৃত্তি করবার জন্য আরব, জাপান, রাশিয়া, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং অন্যান্য স্থান থেকে মহিলারা আসে। ম্যাসেজ পার্লারের নাম করে দুটি বেশ্যালয় চালানোর জন্য ২০১৫ সালে দশজন থাইল্যাণ্ডীয় মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আফগান মহিলাদের পতিতা হিসেবে ভারতে পাচার করা হয়।
উজবেকিস্তানের মহিলারা ভারতে বেশ্যাবৃত্তি করবার জন্য যায়।
শত শত কাল ধরে বেশ্যাবৃত্তি ভারতীয় সাহিত্য ও শিল্পের বিষয় হয়ে আসছে; খ্রীষ্টপূর্ব ২য় শতকে শূদ্রক বিরচিত একটি দশ অঙ্কের নাটক মৃচ্ছকটিক এর উদাহরণ। এতে বসন্তসেনা নামে এক বেশ্যার কথা বর্ণিত আছে। এটিকে নিয়ে ১৯৮৪ সালে উৎসব নামে একটি হিন্দি ছবি রূপায়িত হয়। বৈশালী রাজত্বের নগরবধূ আম্রপালি (আম্বপালি) যে পরবর্তী জীবনে বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে, তার জীবনগাথা নিয়ে ‘আম্রপালি’(১৯৬৬) নামে একটি হিন্দি সিনেমা তৈরী হয়।
তোয়াইফ, অথবা মুঘল আমলের বেশ্যা, অনেকগুলি সিনেমার বিষয়বস্তু ছিল, যেমন পাকিজা (১৯৭২), উমরাও জান(১৯৮১), তোয়াইফ (ছবি) (১৯৮৫) এবং উমরাও জান (২০০৬ সালের ছবি)। নাচনে ও বেশ্যাদের জীবন নিয়ে অন্যান্য ছবিগুলি হল শরাবি, অমর প্রেম (১৯৭২), মাসুম (১৯৭৫), মাণ্ডি (১৯৮৩), দেবদাস (২০০২), চাঁদনী বার (২০০১), চামেলী (২০০৩), লগা চুনরী মেঁ দাগ (২০০৭), দেব দি (২০০৯), বি এ পাস (২০১৩) এবং থিরা (২০১৩)।
মনোরঞ্জন (১৯৭৪) সম্ভবত প্রথম কোন বলিউড ছবি যেখানে বেশ্যাবৃত্তিকে নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখিয়ে একটি ‘মজাদার’ কার্যকলাপ হিসেবে দেখানো হয়েছে এবং যেখানে প্রধান চরিত্র তার নিজের ইচ্ছায় বেশ্যাবৃত্তিকে বেছে নিয়েছে।
কলকাতার সোনাগাছির পতিতাদের সন্তানদের নিয়ে ২০০৪ সালে করা একটি আমেরিকান তথ্যচিত্র বর্ন ইন্টু ব্রথেলস্, ঐ একই বছর অ্যাকাডেমী অ্যাওয়ার্ড ফর ডকুমেন্টারি ফিচার পুরস্কার লাভ করে।
ভারতে বেশ্যাবৃত্তি নিয়ে দুটি মালায়ালাম চলচ্চিত্র হল ক্যালকাটা নিউজ ও সূত্রধরণ।
২০০৮ সালের স্লামডগ মিলিয়নেয়ার – ছবিতে শিশু বেশ্যাবৃত্তিও একটি দিক ছিল। মণীশ হরিশঙ্কর পরিচালিত চারফুটিয়া ছোকারে নামে একটি আসন্ন ছবিতে ভারতে শিশু বেশ্যাবৃত্তিকে খুব জোর দিয়ে দেখানো হয়েছে।
২০১৪ সালে হিন্দিতে একটি সামাজিক সমস্যা নিয়ে তৈরী ছবি হলও নগেশ কুকুনুর পরিচালিত লক্ষ্মী। ভারতের গ্রাম এলাকায় কীভাবে মানব পাচার আর শিশু বেশ্যাবৃত্তি চলে তার কঠোর বাস্তবতাকে এই ছবিতে দেখানো হয়েছে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article ভারতে পতিতাবৃত্তি, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.