ভারতে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি

রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি ভারতে আইন রচনা ও সরকারি নীতিনির্ধারণের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে দেওয়া সাংবিধানিক পথনির্দেশিকা। ভারতীয় সংবিধানের চতুর্থ অংশের A বিভাগে(ধারা:-36 থেকে 51)এই নীতিগুলি বর্ণিত হয়েছে। এগুলি আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য নয়। তবে নাগরিকদের আর্থ-সামাজিক অধিকার সুনিশ্চিত করে ভারতকে একটি জনকল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এই নীতিগুলির মাধ্যমে ভারতে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক লক্ষ্যগুলি স্থির করা হয়েছে । ভারতীয় সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতিগুলি আইরিশ সংবিধানের সামাজিক নীতিগ্রহণের নির্দেশাত্মক আদর্শ এবং গান্ধীবাদের আদর্শ থেকে গৃহীত। এগুলি সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক কল্যাণ, বৈদেশিক নীতি এবং বিচারবিভাগীয় ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত।

নির্দেশাত্মক নীতিগুলি নিম্নলিখিত বিষয়শ্রেণীগুলির অন্তর্গত: গান্ধীবাদ, অর্থনৈতিক ও সমাজতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক, ন্যায় ও বিচারবিভাগীয়, পরিবেশ-সংক্রান্ত, সৌধরক্ষণ-সংক্রান্ত এবং শান্তি ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত।

ইতিহাস

রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতিগুলি আইরিশ সংবিধান থেকে গৃহীত। ভারতীয় সংবিধানের নির্মাতারা আয়ারল্যান্ডের জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাই আইরিশ সংবিধানের সামাজিক নির্দেশাত্মক নীতিগুলি ভারতীয় সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতিগুলির উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে। এই জাতীয় নীতির ধারণা পাওয়া যায় "ফরাসি বিপ্লবের সময় ঘোষিত নাগরিক ও মানবাধিকার সনদ এবং আমেরিকান উপনিবেশগুলির স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্যে।" তাছাড়া ভারতীয় সংবিধান রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার সনদ দ্বারাও প্রভাবিত হয়।

১৯১৯ সালে রাওলাট আইন ব্রিটিশ সরকার ও পুলিশকে নির্বিচার গ্রেফতার ও আটক, বিনা-পরোয়ানায় তল্লাসি ও বাজেয়াপ্তকরণ, জনসমাবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং গণমাধ্যম ও প্রকাশনা শিল্পের উপর ব্যাপক সেন্সরশিপের চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রদান করে। এই আইনের বিরুদ্ধে নাগরিক স্বাধীনতা ও সরকারি ক্ষমতা সীমিত করার দাবিতে সারা দেশে অহিংস আইন অমান্য গণআন্দোলন গড়ে ওঠে। স্বাধীনতাকামী ভারতবাসী এই সময় আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা আন্দোলন ও আইরিশ সংবিধানের ক্রমবিকাশের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন। ভারতীয়রা মনে করেন, উক্ত সংবিধানের নির্দেশাত্মক নীতি স্বাধীন ভারতের সরকারকে ভারতের মতো একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশের জটিল সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাধাবিপত্তি অপসারণে সহায়তা করবে।

১৯২৮ সালে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত নেহেরু কমিশন ভারতের জন্য অধিরাজ্য বা ডোমিনিয়ন মর্যাদা এবং সার্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার রক্ষা এবং সরকারি ক্ষমতার সীমাবদ্ধকরণের জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের প্রস্তাব রাখে। ১৯৩১ সালে সেযুগের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস মৌলিক নাগরিক অধিকার রক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক অধিকার রক্ষার (ন্যূনতম মজুরি ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং অস্পৃশ্যতা ও ভূমিদাসত্ব প্রথা নিবারণ) জন্য প্রস্তাব কমিটি গঠন করে। ১৯৩৬ সালে এই কমিটি সমাজতান্ত্রিক আদর্শ গ্রহণ করে। কংগ্রেস নেতৃত্ব দেশের জনসাধারণের মধ্যে জাতীয় স্বার্থরক্ষা ও বাধাবিপত্তি মোকাবিলায় দেশপ্রেম ও কর্তব্যবোধ জাগিয়ে তোলার জন্য পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের সংবিধান থেকে মৌলিক নাগরিক কর্তব্যের ধারণাটি গ্রহণ করেন।

১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা অর্জন করে। এরপর নতুন রাষ্ট্রের সংবিধান রচনার কাজ ড. রাজেন্দ্র প্রসাদের সভাপতিত্বে নির্বাচিত গণপরিষদের হাতে ন্যস্ত হয়। কংগ্রেস নেতারাই এই গণপরিষদের সিংহভাগ আসন অধিকার করে ছিলেন। তবে তারা সংবিধান ও জাতীয় আইন রচনায় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও নানা দায়িত্ব দিয়ে নিয়োগ করেছিলেন। উল্লেখযোগ্য, সংবিধানের খসড়া সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন ভীমরাও রামজি আম্বেডকর। বিভিন্ন বিষয়ের দায়িত্ব পাওয়া সমিতি ও উপসমিতিগুলির চেয়ারম্যান ছিলেন জওহরলাল নেহেরুসর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। ইতিমধ্যে ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘ সাধারণ সভা মানবাধিকার সনদ ঘোষণা করে সকল সদস্য রাষ্ট্রকে নিজ নিজ সংবিধানে এই অধিকারগুলি স্বীকার করার আহ্বান জানায়। ভারতের সংবিধান রচনার কাজ তখন মাঝপথে ছিল।

খসড়া সমিতি দ্বারা রচিত মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতিগুলি সংবিধানের প্রথম খসড়া (ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮), দ্বিতীয় খসড়া (১৭ অক্টোবর, ১৯৪৮) ও তৃতীয় তথা সর্বশেষ খসড়ার (২৬ নভেম্বর, ১৯৪৯) অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।

বৈশিষ্ট্য

নির্দেশাত্মক নীতিগুলির উদ্দেশ্য এমন এক আর্থ-সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে নাগরিকেরা সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপন করতে সক্ষম হবে। তাছাড়া একটি জনকল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাও এই নীতিগুলির উদ্দেশ্য। এই নীতিগুলি সরকারের প্রতি নজরদারির একটি মাধ্যম। তত্ত্বগতভাবে এই নীতিগুলিই সরকারের কাজকর্মে জনগণের নজরদারি ও সরকারের ব্যর্থতায় সরকারকে ভোট না দেওয়ার অধিকারের স্বীকৃতি। নির্দেশাত্মক নীতি আদালতে অগ্রহণযোগ্য নাগরিক অধিকার। ১৯৭১ সালে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী আইনের মাধ্যমে ৩১-গ ধারার অন্তর্ভুক্তি ঘটিয়ে এই নীতিগুলির মর্যাদা বৃদ্ধি ঘটানো হয়। বলা হয়, কোনো আইন যদি মৌলিক অধিকারের উপর নির্দেশাত্মক নীতিকে স্থান দেয়, তাহলে শুধুমাত্র মৌলিক অধিকারকে লঙ্ঘন করছে, এই অভিযোগে সেই আইনকে খারিজ করা যাবে না। আবার মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতির মধ্যে সংঘাত বাধলে, নির্দেশাত্মক নীতি যদি সেক্ষেত্রে সমাজের বৃহত্তর স্বার্থের পক্ষে থাকে, তবে আদালতে নির্দেশাত্মক নীতিই গ্রাহ্য হবে। তাই নির্দেশাত্মক নীতি আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য না হলেও দেশের সরকার পরিচালনার কাজে অপরিহার্য্য। রাষ্ট্রের কর্তব্য এই নীতিগুলিকে আইনে পরিণত করা। তাছাড়া সব সরকারি সংস্থাই এই নীতিগুলির দ্বারা পরিচালিত। এমনকি বিচারকার্যে বিচারবিভাগকেও এই নীতিগুলি স্মরণে রাখতে হয়।

নির্দেশসমূহ

নির্দেশাত্মক নীতি অনুযায়ী, রাষ্ট্র সামাজিক, আর্থিক ও রাষ্ট্রনৈতিক ন্যায়ের ভিত্তিতে একটি সমাজব্যবস্থা গঠন করে জনকল্যাণ সাধনে সচেষ্ট হবে এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আয়-বৈষম্য কমাতে চেষ্টা করবে; অর্থনৈতিক সম্পদের সুষম বণ্টন ঘটাবে; শিশু ও মহিলাদের স্বাস্থ্যরক্ষা ও শোষণের হাত থেকে রক্ষা করবে; সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র সবাইকে বিনামূল্যে আইনি সাহায্য দেবে এবং খেয়াল রাখবে যাতে আর্থিক দুরবস্থার কারণে কেউ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়; গ্রাম পঞ্চায়েত গঠনের মাধ্যমে গ্রামীণ স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকার সুনিশ্চিত করবে; কাজ ও শিক্ষার অধিকার রক্ষার পাশাপাশি আর্থিকভাবে দুর্গতদের বেকার, বৃদ্ধ ও অসুস্থ অবস্থায় রাষ্ট্র সাহায্য করবে।; এবং রাষ্ট্র কাজের শর্তাবলি মানবাধিকার-সম্মত করবে এবং প্রসূতিদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

রাষ্ট্র নাগরিকদের জীবনযাপনের উপযোগী মজুরি ও সুন্দর জীবনযাত্রার সুযোগ দেবে। কুটির শিল্পের বিকাশে সহায়তাদানও রাষ্ট্রের কর্তব্য হবে। তাছাড়া রাষ্ট্র শিল্প পরিচালনায় শ্রমিকদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে।

রাষ্ট্র সকল নাগরিকের জন্য অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার চেষ্টা করবে; চোদ্দো বছরের কম বয়সী ছেলেমেয়েদের বাধ্যতামূলক বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করবে। শিশুশিক্ষা-সংক্রান্ত এই নির্দেশটি ২০০২ সালের ৮৬তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে গৃহীত হয়। তফসিলি জাতি, উপজাতি ও অনুন্নত শ্রেণীর মানুষের অর্থনৈতিক ও শিক্ষার স্বার্থের উন্নতিবিধান এবং তাদের সামাজিক অন্যায় ও অন্যান্য শোষণের হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র সচেষ্ট হবে।

রাষ্ট্র জনস্বার্থের উন্নতিকল্পে পুষ্টি ও জীবনধারণ পদ্ধতির উন্নতি ঘটাবে এবং ঔষধের প্রয়োজন ছাড়া অন্যান্য উদ্দেশ্যে মদ ও মাদক দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করবে। গোরু-বাছুর প্রভৃতি হিতকারী গৃহপালিত পশু ও অন্যান্য দুগ্ধবতী ও ভারবাহী পশু হত্যা বন্ধ করবে। রাষ্ট্র পরিবেশ, বন ও বন্যপ্রাণীকে রক্ষা করবে। ১৯৭৬ সালের ৪২ তম সংশোধনীর মাধ্যমে বন ও বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত নির্দেশটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ঐতিহাসিক স্থান ও স্মারক এবং জাতীয় গুরুত্ব ও শিল্পমূল্যসম্পন্ন বস্তু ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা, এবং শাসনবিভাগ থেকে বিচারবিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্রের কর্তব্য হবে। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি, অন্যান্য রাষ্ট্রের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত ও সম্মানজনক সম্পর্ক রক্ষা, আন্তর্জাতিক আইন ও সন্ধির প্রতি শ্রদ্ধা বৃদ্ধি এবং সালিশির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মীমাংসার ব্যাপারে রাষ্ট্র সচেষ্ট থাকবে।

প্রয়োগ

রাষ্ট্র নির্দেশাত্মক নীতি প্রয়োগে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সর্বশিক্ষা অভিযান ও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় চোদ্দো বছরের নিচে সব শিশুর শিক্ষায় বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। ২০০২ সালে অন্তর্ভুক্ত ৮৬তম সংবিধান সংশোধনীতে ২১-ক নামক যে নতুন ধারাটি অন্তর্ভুক্ত হয় তার লক্ষ্যই ছিল ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী সব শিশুর বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। সমাজের দুর্বল অংশের কল্যাণার্থে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলি নানা কল্যাণমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, তফসিলি জাতি ও উপজাতির ছেলেমেয়েদের জন্য ছাত্রাবাস নির্মাণের কর্মসূচি। ড. বি. আর. আম্বেডকরের স্মৃতিরক্ষার্থে ১৯৯০-৯১ বর্ষটিকে "সামাজিক ন্যায়বিচার বর্ষ" ঘোষণা করা হয়। সরকার চিকিৎসাবিদ্যা ও ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠরত তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে পাঠ্যবইও দিয়ে থাকে। ২০০২-০৩ সালে শুধু এই খাতেই সরকার ব্যয় করেছিল ৪.৭৭ কোটি টাকা। তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্তদের নিষ্ঠুরতার হাত থেকে রক্ষা করতে ১৯৯৫ সালে নিষ্ঠুরতা বিরোধী আইন বলবৎ করে অপরাধকারীদের কঠোর শাস্তির বন্দ্যোবস্ত করা হয়।

গরিব চাষীদের জমির অধিকার দেওয়ার জন্য অনেকগুলি ভূমিসংস্কার আইন পাস হয়েছে। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, ২০,০০০,০০০ একরেরও (৮০,০০০ বর্গকিমি) বেশি জমি তফসিলি জাতি, উপজাতি ও ভূমিহীন গরিবদের মধ্যে বিতরিত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে ব্যাংকিং নীতির উপর জোর দিয়ে এই সব এলাকায় ব্যাংক ব্যবস্থার সুবিধা প্রসারিত করা হয়েছে। ১৯৪৮ সালের ন্যূনতম মজুরি আইনের মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রের কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে দেওয়ার ক্ষমতা হাতে নেয়। ১৯৮৬ সালের ক্রেতা সুরক্ষা আইন বলবৎ করে ক্রেতাদের সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। ১৯৭৬ সালের সম-আয় আইনের মাধ্যমে নারী ও পুরুষদের অভিন্ন বেতনব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। ২০০১ সালে চালু হওয়া সম্পূর্ণ গ্রামীণ রোজগার যোজনা গ্রামাঞ্চলে গরিব মানুষের কর্মনিযুক্তির ব্যবস্থা করেছে। পঞ্চায়েতের মাধ্যমে এই কর্মসূচি পরিচালিত হয়ে থাকে।

পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ভারতের সকল রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেই রয়েছে। পঞ্চায়েতের প্রতিটি স্তরে এক-তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। বিহারে অর্ধেক আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। ফৌজদারি বিধিতে কোনো অভিযুক্ত দারিদ্রের কারণে আইনজীবী নিয়োগে ব্যর্থ হলে, তার আইনি ব্যয় বাধ্যতামূলকভাবে সরকার বহন করে। জম্মু ও কাশ্মীরনাগাল্যান্ড ছাড়া সকল রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে শাসনবিভাগ ও বিচারবিভাগ পৃথক করা হয়েছে।

ভারতের বিদেশনীতিও নির্দেশাত্মক নীতির দ্বারা কিছুটা প্রভাবিত। অতীতে ভারত সকল প্রকার আগ্রাসনের বিরোধিতা ও রাষ্ট্রসংঘের শান্তিরক্ষা কর্মসূচিকে সমর্থন করে এসেছে। ২০০৪ সালের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনী ৩৭টি রাষ্ট্রসংঘ শান্তিরক্ষা অভিযানে অংশ নেয়। ২০০৩ সালে নিরাপত্তা পরিষদ ও সেনা-সহযোগিতাকারী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি সনদ গ্রহণে প্রধান ভূমিকা নেয় ভারত। ভারত পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে মত প্রকাশ করে।

সংশোধনী

নির্দেশাত্মক নীতিগুলিকে সংশোধন করতে হলে ভারতীয় সংসদের উভয় কক্ষের বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হয়। এর অর্থ, একটি সংশোধনী আনতে হলে উপস্থিত ও ভোটদাতা সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সম্মতি প্রয়োজন হয়। যখন, ভোটদাতা সদস্যদের সংখ্যা উভয়কক্ষেই অর্থাৎ লোকসভায় এবং রাজ্যসভায় সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার থেকে বেশি হতে হবে ।

  • ধারা ৩১-গ ১৯৭১ সালের ২৫তম সংবিধান-সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দেশাত্মক নীতির উন্নতিকল্পে নীতিসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দেশাত্মক নীতিগুলিকে মৌলিক অধিকারের উপরে স্থান দেওয়া হয় এবং মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করলেও যাতে নির্দেশাত্মক নীতি চিরতরে জন্য চালু হয়, সেই ব্যবস্থা বা বন্দোবস্ত করা হয়।
  • ধারা ৪৫ শিশুদের বিনামূল্যে ও বড়দের বৈতনিক ন্যায্যমূল্যে বাধ্যতামূলক গণশিক্ষার ব্যবস্থা বা বন্দোবস্ত করে। এটি ২০০২ সালের ৮৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত।
  • ৪৮-ক পরিবেশ, বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষার্থে ১৯৭৬ সালের ৪২তম সংশোধনীর মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত।

আরও দেখুন

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

Tags:

ভারতে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি ইতিহাসভারতে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি বৈশিষ্ট্যভারতে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি নির্দেশসমূহভারতে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি প্রয়োগভারতে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি সংশোধনীভারতে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি আরও দেখুনভারতে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি পাদটীকাভারতে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি তথ্যসূত্রভারতে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতিগান্ধীবাদভারতীয় সংবিধান

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

পর্তুগালহনুমান (রামায়ণ)সনি মিউজিক২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপহিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমাবর্ষণবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ক্লিওপেট্রাপশ্চিমবঙ্গের জেলারাবণইউরোপীয় দেশগুলো ও অধীনস্থ ভূভাগের তালিকারামকৃষ্ণ পরমহংসজওহরলাল নেহেরুপাঞ্জাব, ভারতসাতই মার্চের ভাষণশ্রীকৃষ্ণকীর্তনসংযুক্ত আরব আমিরাতথানকুনিরূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রপিরামিডকাতারমেটা প্ল্যাটফর্মসতুলসীকালিদাসসমকামিতাকুরাকাওকৃষ্ণগহ্বরআইসোটোপহরমোনআসরের নামাজমরক্কোভারতের রাষ্ট্রপতিদের তালিকানারায়ণগঞ্জ জেলারমাপদ চৌধুরীযুক্তফ্রন্টসন্ধিডিরেক্টরি অব ওপেন অ্যাক্সেস জার্নাল্‌সরঙের তালিকাকোষ (জীববিজ্ঞান)প্রধান পাতানোয়াখালী জেলাজামালপুর জেলাআর্-রাহীকুল মাখতূমমাহরামহা জং-উঅমেরুদণ্ডী প্রাণীপ্রতিবেদনসিপাহি বিদ্রোহ ১৮৫৭হুমায়ূন আহমেদঅশোক (সম্রাট)জাহাঙ্গীরফুটিদুধকাজী নজরুল ইসলামআন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসদৈনিক প্রথম আলোনেলসন ম্যান্ডেলাবুরহান ওয়ানিসামরিক বাহিনীতাকওয়াসূরা আরাফপ্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়চেঙ্গিজ খানবৃহস্পতি গ্রহযাকাতইউরোপীয় ইউনিয়নরাশিয়ায় ইসলামকম্পিউটারবিড়ালবিধবা বিবাহজ্ঞানগোলাপব্রহ্মপুত্র নদকুরআনের ইতিহাসস্ক্যাবিসশর্করাযতিচিহ্নসিংহঈদুল ফিতর🡆 More