জয়া মাসউদ (বা জয়া আহসান) হলেন একজন বাংলাদেশী মডেল ও অভিনেত্রী। তিনি পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রেও কাজ করেন। অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পাঁচটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সাতটি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ও তিনটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পূর্বসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন।
জয়া আহসান | |
---|---|
জন্ম | জয়া মাসউদ ১ জুলাই ১৯৮৩ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
পেশা | মডেল, অভিনেত্রী, প্রযোজক |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | পূর্ণ তালিকা |
দাম্পত্য সঙ্গী | ফয়সাল আহসান (বি. ১৯৯৮; বিচ্ছেদ. ২০১১) |
পিতা-মাতা | এ এস মাসউদ (পিতা) রেহানা মাসউদ (মাতা) |
পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
তাঁর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ব্যাচেলর (২০০৪)। তিনি নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত সৈয়দ শামসুল হক'র নিষিদ্ধ লোবান উপন্যাস অবলম্বনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত গেরিলা চলচ্চিত্রে ও রেদওয়ান রনি পরিচালিত চোরাবালি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে টানা দুইবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর তিনি অনিমেষ আইচ পরিচালিত জিরো ডিগ্রী (২০১৫), অনম বিশ্বাস পরিচালিত দেবী (২০১৮) ও মাহমুদ দিদার পরিচালিত বিউটি সার্কাস (২০২২) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে আরও তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
জয়া আহসান জন্মগ্রহণ করেন গোপালগঞ্জ জেলায়। তাঁর বাবা মুক্তিযোদ্ধা এ এস মাসউদ এবং মা রেহানা মাসউদ ছিলেন একজন শিক্ষিকা। তাঁরা দুই বোন এক ভাই। অভিনয় শুরুর আগে জয়া নাচ ও গানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি ছবি আঁকা শিখেছিলেন। তিনি একটি সংগীত স্কুলও পরিচালনা করেন।
জয়ার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ২০০৪ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ব্যাচেলর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। পরে দীর্ঘ ৬ বছর পর নুরুল আলম আতিক পরিচালিত ডুবসাঁতার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০১১ সালে তানিম নূর পরিচালিত ফিরে এসো বেহুলা এবং নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত গেরিলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। গেরিলায় বিলকিস বানু চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-এ জুরিদের বিচারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। একই বছর প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ সমালোচকদের বিচারে শ্রেষ্ঠ নারী চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৩ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া ২০১৪ সালে প্রদত্ত বাচসাস পুরস্কার-এ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন।
গেরিলা চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর থেকে তিনি নিয়মিত বাংলাদেশ ও ভারতের কলকাতার চলচ্চিত্রে কাজ করা শুরু করেন। ২০১২ সালে রেদওয়ান রনি পরিচালিত চোরাবালিতে একজন সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করেন। এতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন কলকাতার ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০১৩ সালে প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ নারী চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি টানা দ্বিতীয়বারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
জয়া আহসান ২০১৩ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে নিমন্ত্রণ পান। এই বছর তিনি অরিন্দম শীল পরিচালিত আবর্ত দিয়ে কলকাতায় অভিনয় শুরু করেন। এতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন আবীর চট্টোপাধ্যায়। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পূর্বে শ্রেষ্ঠ নবীন অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পান। একই বছর বাংলাদেশের সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্র পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী-এ অভিনয় করেন। এতে প্রথমবারের মত বিপরীতে অভিনয় করেন শাকিব খান। এটি ঈদুল আযহায় মুক্তি পায় এবং ব্যবসা সফল হয়। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ২০১৪ সালে প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ টানা দ্বিতীয়বারের মত তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ নারী চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৪ সালে মারুফ হাসান পরিচালিত পারলে ঠেকা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন কিন্তু ছায়াছবিটি এখনো মুক্তি পায় নি।
২০১৫ সালে অভিনয় করেন বাংলাদেশের অনিমেষ আইচ পরিচালিত মনস্তাত্ত্বিক-থ্রিলারধর্মী জিরো ডিগ্রী চলচ্চিত্রে। এতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন মাহফুজ আহমেদ। চলচ্চিত্রটি ব্যবসাসফল না হলেও জয়ার অভিনয় প্রশংসিত হয় এবং তিনি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ সমালোচকদের বিচারে শ্রেষ্ঠ নারী চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী বিভাগে মনোনীত হন এবং ২০১৭ সালে প্রদত্ত ৪০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর কলকাতার ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী পরিচালিত একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো ও সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ নিয়ে নির্মিত রাজকাহিনী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রে যৌবনাশ্রিত ও আপত্তিকর দৃশ্যে অভিনয় করে তিনি সমালোচিত হয়েছেন। রাজকাহিনী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ১৬তম টেলি সিনে পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন।
২০১৬ সালে মুক্তি পায় সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি ২। এটি ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনীর অনুবর্তী পর্ব। এতে অভিনয়ের জন্য তিনি চতুর্থবারের মত শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এই বছর আরো অভিনয় করেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় রচিত জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র শবর দাশগুপ্তর ওপর লেখা উপন্যাসের ভিত্তিতে অরিন্দম শীল পরিচালিত ঈগলের চোখ-এ। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত পুত্র। সাইফুল ইসলাম মান্নু পরিচালিত এই ছবিতে একজন অটিস্টিক শিশুর মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। আগস্ট মাসে বিরসা দাশগুপ্ত পরিচালিত নারীবাদী চলচ্চিত্র ক্রিসক্রস মুক্তি পায়। ছবিটিতে তিনি কর্মজীবনে সফল, কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে একা এক নারীর চরিত্রে অভিনয় করেন।
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে জয়া ছিলেন মডেল ও অভিনেতা ফয়সাল আহসানের সহধর্মিনী। ১৪ মে ১৯৯৮ সালে বিয়ে করেন। ২০১১ সালে ফয়সালের সাথে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
এনেছি সূর্যের হাসি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের পর জয়া জাতিসংঘের নারী ও শিশু সহায়তা বিভাগের শুভেচ্ছা দূত হন। ২০১৬ সালে তিনি চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য ইন্সপায়ারিং ওমেন অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২০২২ সালে বিনিসুতোয় চলচ্চিত্রের জন্য তিনি বাংলা ভাষার জনপ্রিয় সাময়িকী আনন্দলোক সেরা অভিনেত্রী সম্মাননা অর্জন করেন।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article জয়া আহসান, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.