জগন্নাথ মন্দির, কলকাতা

কলকাতার জগন্নাথ মন্দির কলকাতার খিদিরপুরের বন্দরের উপকণ্ঠে কলকাতা পৌরসংস্থার ১০৮ নং ওয়ার্ডে ২০০২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। অবশ্য ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ হতে বন্দর এলাকার ভক্ত শ্রমিকেরা জগন্নাথ দেবের পূজার সূত্রপাত করেন। শ্রীক্ষেত্রের আদলে কলকাতায় এই মন্দির নির্মিত হয় বহু মানুষের বহু বছরের কঠোর পরিশ্রম এবং আর্থিক সহায়তায়। মহাপ্রভু শ্রী জগন্নাথ, শ্রী বলভদ্র এবং দেবী সুভদ্রা এবং সুদর্শন চক্র এই মন্দিরে ঐতিহ্য মেনেই পূজিত হন। সেই সঙ্গে মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশপথের পাশে নির্মিত বট মঙ্গলাদেবীর মন্দিরে মা মঙ্গলার পূজা করা হয়।

জগন্নাথ মন্দির, কলকাতা
জগন্নাথ মন্দির
জগন্নাথ মন্দির, কলকাতা
জগন্নাথ মন্দির কলকাতা
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাকলকাতা
ঈশ্বরজগন্নাথ দেব
উৎসবসমূহরথযাত্রা
অবস্থান
অবস্থানডক ইস্ট বাউন্ডারি রোড, সি পি টি কম্পাউণ্ড, খিদিরপুর, কলকাতা
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
দেশভারত
জগন্নাথ মন্দির, কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ-এ অবস্থিত
জগন্নাথ মন্দির, কলকাতা
কলকাতায় অবস্থান
জগন্নাথ মন্দির, কলকাতা ভারত-এ অবস্থিত
জগন্নাথ মন্দির, কলকাতা
কলকাতায় অবস্থান
স্থানাঙ্ক২২°৫৩′৪৬″ উত্তর ৮৮°৩১′৫৯″ পূর্ব / ২২.৮৯৬১১° উত্তর ৮৮.৫৩৩০৬° পূর্ব / 22.89611; 88.53306
স্থাপত্য
সৃষ্টিকারীশ্রীজগন্নাথ সেবা সমিতি
সম্পূর্ণ হয়২০০২
উচ্চতা৯.১৪ মি (৩০ ফু)
ওয়েবসাইট
https://www.jagannathtemplekolkata.org/

ইতিহাস

১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার খিদিরপুর বন্দরে ১০৮ নং ওয়ার্ড এলাকার শ্রীজগন্নাথদেবের ভক্ত শ্রমিকরা একটি টিনের ঘেরা মন্দির তৈরি করে জগন্নাথদেবের কাগজের ছবিতেই পূজা-অর্চনা শুরু করেন। মনের ক্লান্তি দূর করতে জগন্নাথের স্তোত্র গাইতেন। পারুত্তম দাস নামে এক ব্রাহ্মণ নিত্য পূজা করতেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের এক স্বপ্নাদেশে এখানে বসবাসকারী ওড়িয়া জনগণ একটি মন্দির নির্মাণের কথা ভাবেন। সেইমত ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারী লক্ষ্য স্থির করে 'শ্রীজগন্নাথ সেবা সমিতি' নামে এক সংগঠন গড়েন এবং সমিতির সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মন্দির নির্মাণের জন্য অনুদান সংগ্রহ করেন। কলকাতা বন্দরের তৎকালীন এক কর্মকর্তা জনাব এস. রহমানও মন্দির নির্মাণের জন্য ২০০০ টাকা দান করেন। সংগৃহীত অর্থে জানুয়ারী, ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে ২০ ফুট উচ্চতার একটি মন্দিরের নির্মাণ সম্পন্ন হয়। একসময় প্রসন্নকুমার দাস নামক এক আয়কর কমিশনার তার পিতাকে নিয়ে জগন্নাথ দর্শনে আসেন। মন্দিরের প্রবেশদ্বার সংকীর্ণ হওয়ায় তার পিতা মন্দিরের উন্নতিকল্পে সাহায্য করতে বলেন। এটিই ছিল মন্দির পুনর্নির্মাণের প্রথম প্রচেষ্টা। পরবর্তীতে বহু ওড়িয়া ও বাঙালি জনসাধারণ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে পূজারীর দল এসেছিলেন। তারা শিলান্যাসের পাশাপাশি মহাযজ্ঞে অংশ নেন মঙ্গল কামনায়। অবিকল পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে মন্দিরটি। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অনুকরণে এই মন্দিরেরও সিংহ দরজায় রয়েছে অরুণাস্তম্ভ। অরুণা স্তম্ভ থেকে ১৮টি সিঁড়ি উপরে স্থাপিত হয়েছে গেরুদা স্তম্ভ। গেরুদা স্তম্ভের পরই মন্দিরের মূল দরজা। সেকারণে স্থানটিকে কলকাতার শ্রীক্ষেত্র বা জগন্নাথ ধাম নামে আখ্যায়িত করা হয়। সাদা ও বেলেপাথরে বিশ্বমানের স্থাপত্যে ভগবান বিষ্ণুর দশাবতার চিত্রিত হয়েছে। মন্দিরে চতুর্ধা মূর্তি তৈরি করেছিলেন খুরদার পাথরের রাজমিস্ত্রি হাদু মহারানা। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে মূল মন্দিরের রত্নবেদিতে স্থাপন করা হয় মহাপ্রভু শ্রীজগন্নাথ, শ্রীবলভদ্র এবং দেবী সুভদ্রার বিগ্রহ।

জগন্নাথ মন্দির, কলকাতা 
অধিষ্ঠিত বিগ্রহ

মূল মন্দিরের চারপাশে খোদাই করা হয়েছে শ্রী গণেশ, দেবী সরস্বতী, মহাবীর হনুমান, সূর্য নারায়ণ, মা বিমলা, মা লক্ষ্মী এবং ভগবান শিবের মূর্তি।

ব্যবস্থাপনা

মন্দির পরিচালন ভার শ্রীজগন্নাথ সেবা সমিতির উপরই ন্যস্ত হয়েছে। সমিতির অধীনে রয়েছে ৪টি বিভাগ।

পূজা অর্চনা ও দর্শন

সুপরিকল্পিত এবং সম্পাদিত মন্দিরটি সপ্তাহের সমস্ত দিনই ভক্তদের জন্য খোলা থাকে। তবে দর্শনের সময় সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা, বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা। প্রতিদিন সূর্যাস্তের সময় সন্ধারতি হয়। ভোগ নিবেদন করা হয় প্রতিদিন দুবার—বেলা সাড়ে বারোটায় একবার এবং রাত সাড়ে আটটায় আর একবার। সমিতির পূজা কমিটি অষ্টম প্রহরী, রথযাত্রা, নেত্রোৎসব, জন্মাষ্টমী, শিবরাত্রি, সরস্বতী পূজা, গণেশ পূজা, দোকানের, ভাগবত সপ্তাহ ইত্যাদির আয়োজন করে থাকে।

উৎকল

সমিতির "উৎকল নামের বিভাগটি শ্রীজগন্নাথ সেবা সমিতি কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। নয় দিনব্যাপী ওড়িশা উৎসব উদযাপন, ওড়িশার নৃত্য সঙ্গীত সহযোগে খাবার এবং অন্যান্য উপাদেয় আহার্য পরিবেশনের ব্যবস্থা করে। পদযাত্রা সল্টলেক সিটির সেন্ট্রাল পার্ক থেকে শুরু হয়ে ই.এম. বাইপাস সংলগ্ন স্বভূমি এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উৎকল সম্মান প্রদান করে। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে কিংবদন্তি ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী কেলুচরণ মহাপাত্রকে এবং ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে সঙ্গীত পরিচালক শান্তনু মহাপাত্রকে এই সম্মান প্রদান করা হয়। এছাড়াও এই বিভাগ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ইংরাজী ভাষায় জগন্নাথ ইন অ্যালিয়েন আইজ ও ওড়িয়া ভাষায় স্মৃতির সরণী শীর্ষক দুটি গ্রন্থ প্রকাশ করে।

উৎকর্ষ

শ্রীজগন্নাথ সেবা সমিতিরউৎকর্ষ নামের বিভাগ দরিদ্রদের বিনামূল্যে খাদ্য, বস্ত্র এবং রক্তদান শিবির ও স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করে।

শ্রীজগন্নাথ গ্রন্থাগার

মন্দিরে এক হাজারেরও বেশি ধর্মীয় পুস্তকের সংগ্রহ রয়েছে শ্রীজগন্নাথ গ্রন্থাগারে। গ্রন্থাগারে বাইশি পাহাচ শিরোনামে এক দেওয়াল পত্রিকাসহ অন্যান্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়।

শ্রী জগন্নাথ সেবা সমিতি জগন্নাথের নিত্যপূজা, বর্ষব্যাপী বিভিন্ন উৎসব উদযাপনের পাশাপাশি মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও রয়েছে সমিতির হাতে।

তথ্যসূত্র

Tags:

জগন্নাথ মন্দির, কলকাতা ইতিহাসজগন্নাথ মন্দির, কলকাতা ব্যবস্থাপনাজগন্নাথ মন্দির, কলকাতা পূজা অর্চনা ও দর্শনজগন্নাথ মন্দির, কলকাতা উৎকলজগন্নাথ মন্দির, কলকাতা উৎকর্ষজগন্নাথ মন্দির, কলকাতা শ্রীজগন্নাথ গ্রন্থাগারজগন্নাথ মন্দির, কলকাতা তথ্যসূত্রজগন্নাথ মন্দির, কলকাতাকলকাতা পৌরসংস্থাকলকাতা বন্দর

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

অব্যয় পদদেশ অনুযায়ী ইসলামজলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবফরাসি বিপ্লবস্বামী বিবেকানন্দবক্সারের যুদ্ধকক্সবাজারহিন্দি ভাষাবাংলাদেশের নদীবন্দরের তালিকাইউক্রেনে রুশ আক্রমণ (২০২২-বর্তমান)নোয়াখালী জেলাপ্রাকৃতিক দুর্যোগলালবাগের কেল্লাতামান্না ভাটিয়াবঙ্গভঙ্গ আন্দোলননাটকবাংলাদেশ সরকারমহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলপশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকাবুর্জ খলিফাপাট্টা ও কবুলিয়াতযোনিবাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাধর্মীয় জনসংখ্যার তালিকাধানগাঁজাময়মনসিংহশেখ হাসিনাকিশোরগঞ্জ জেলাদক্ষিণ এশিয়াভূমি পরিমাপরামমানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কুরআনের সূরাসমূহের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেললিওনেল মেসিআমার সোনার বাংলাত্রিভুজজনগণমন-অধিনায়ক জয় হেহরে কৃষ্ণ (মন্ত্র)প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরবাংলাদেশের জাতিগোষ্ঠীসুকান্ত ভট্টাচার্যপর্তুগিজ সাম্রাজ্যকাতারবর্তমান (দৈনিক পত্রিকা)যৌনসঙ্গমএইচআইভিবাংলাদেশের জনমিতিফরিদপুর জেলানিজামিয়া মাদ্রাসারামমোহন রায়দিনাজপুর জেলাউপজেলা পরিষদবাংলাদেশ সেনাবাহিনীপ্রথম মালিক শাহভারতের রাষ্ট্রপতিলক্ষ্মীপুর জেলাতুরস্কবাস্তুতন্ত্রপশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থাইহুদি গণহত্যাভাইরাসসিফিলিসইহুদি ধর্মবাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিদের তালিকাহুমায়ূন আহমেদবাংলা লিপিতারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়আকবরঅভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়আবুল কাশেম ফজলুল হকবাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশনের তালিকাকালেমাউসমানীয় খিলাফতফুসফুসনামাজের নিয়মাবলীশাহরুখ খানসাধু ভাষা🡆 More