চান্দু বোর্দে: ভারতীয় ক্রিকেটার

চন্দ্রকান্ত গুলাবরাও চান্দু বোর্দে (জন্ম: ২১ জুলাই, ১৯৩৪) পুনেতে জন্মগ্রহণকারী সাবেক ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৫৮ থেকে ১৯৭০ সময়কালে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর ক্রিকেট প্রশাসক হন ও জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন চান্দু বোর্দে। ক্রিকেটের বাইরে ও ভিতরে অবস্থান করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার তাকে অনেকগুলো সম্মাননায় অভিষিক্ত করে।

চান্দু বোর্দে
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামচন্দ্রকান্ত গুলাবরাও বোর্দে
জন্ম (1934-07-21) ২১ জুলাই ১৯৩৪ (বয়স ৮৯)
পুনে, ভারত
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি লেগ ব্রেক
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৮৩)
২৮ নভেম্বর ১৯৫৮ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
শেষ টেস্ট৯ নভেম্বর ১৯৬৯ বনাম অস্ট্রেলিয়া
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৫২–১৯৭৩মহারাষ্ট্র
১৯৫৪–১৯৫৫বোম্বে
১৯৫৪–১৯৬৩বরোদরা
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৫৫ ২৫১
রানের সংখ্যা ৩,০৬১ ১২,৮০৫
ব্যাটিং গড় ৩৫.৫৯ ৪০.৯১
১০০/৫০ ৫/১৮ ৩০/৭২
সর্বোচ্চ রান ১৭৭* ২০৭*
বল করেছে ৫,৬৯৫ ২০,৩০৪
উইকেট ৫২ ৩৩১
বোলিং গড় ৪৬.৪৮ ২৭.৩২
ইনিংসে ৫ উইকেট ১৪
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৫/৮৮ ৮/৫২
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৩৭/– ১৬০/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রারম্ভিক জীবন

১৯৫৪-৫৫ মৌসুমের ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে বরোদার সদস্যরূপে আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত খেলায় গুজরাতের বিপক্ষে বোর্দের অভিষেক ঘটে। হোলকারের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে অংশ নেয় তার দল। তবে শূন্য রানে বোল্ড হয়ে তাকে প্যাভিলিয়নে ফেরৎ যেতে হয়। পরের মৌসুমে তিনি বেশ সফলতা পান। বোম্বের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকান। ১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে রঞ্জী ট্রফির চূড়ান্ত খেলায় সার্ভিসেসের বিপক্ষে অর্ধ-শতক করেন। এছাড়াও বল হাতে ঐ খেলায় ৫ উইকেট লাভ করেন তিনি। ১৯৬৪ সালে দল পরিবর্তন করে মহারাষ্ট্রের সদস্য হন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে বোর্দের টেস্ট অভিষেক হয়। প্রথম দুই টেস্টে তার খেলার মান সাধারণ পর্যায়ের ছিল। ফলশ্রুতিতে তৃতীয় টেস্টে দলের বাইরে থাকেন ও রামনাথ কেনি’র টেস্ট অভিষেক ঘটে। তবে কেনি নিজেকে তুলে ধরতে ব্যর্থ হলে বোর্দেকে আবারও দলে ফিরিয়ে আনা হয়। দলে ফিরেই তিনি নিজস্ব প্রথম টেস্ট অর্ধ-শতক করেন। সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে প্রথম শতরানের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ১০৯ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৬ রান তুলেন তিনি। ঐ টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।

পরবর্তী সিরিজ হিসেবে ভারত দল ইংল্যান্ড গমন করে। সিরিজের প্রথম টেস্টে বামহাতের কনিষ্ঠায় চির ধরে বোর্দের। ফলে দ্বিতীয় টেস্টে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হয় তাকে। পরবর্তী ১১ খেলায় তিনি মাত্র দুইটি অর্ধ-শতক পান। পাশাপাশি ভারত সফরে আসা অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান দলের ১৪ উইকেট দখল করেছিলেন বোর্দে। মাদ্রাজের চতুর্থ টেস্টে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে অংশ নেন তিনি। অপরাজিত ১৭৭ রান করেন তিনি যা তার টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ ছিল। এ সময় পলি উমরিগড়ের সাথে একই অঙ্কের জুটি গড়েন।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের প্রথম টেস্ট জয়ে বোর্দে অন্যতম ভূমিকা রাখেন। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে ভারতের এ টেস্ট জয়ে প্রভূতঃ সহায়তা করেন তিনি। ঐ টেস্টে তিনি ৬৮ ও ৬১ রান তুলেন। এছাড়াও প্রথম টেস্টে ৩ উইকেট দখল করেছিলেন তিনি। মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত পরবর্তী টেস্টে আবারও ভারত দল জয় পায়। ঐ টেস্টে তিনি পাঁচ উইকেট পেয়েছিলেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর

১৯৬১-৬২ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করে ভারত দল ও হতাশাব্যঞ্জক ফলাফল করে। ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয় তার দল। মাঝারীমানের ২৪.৪০ গড়ে ২৪৪ রান করলেও মাত্র ৬ উইকেট দখল করেন তিনি। অবশ্য নিজ দেশে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এবং অস্ট্রেলিয়া সফরে বেশ ভালো করেন তিনি। সিরিজ দুটোয় আট টেস্টে অংশ নিয়ে ৪২.৫৫ গড়ে ৩৮৩ রান এবং দশ উইকেট লাভ করেন তিনি।

১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে নিউজিল্যান্ড দল ভারত সফরে আসে। বোম্বের ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে একহাত নেন। এ সিরিজে এটি তিন সেঞ্চুরির একটি ছিল। ৬০.৮১ গড়ে ৩৭১ রান তুলেন তিনি। এ সিরিজেই শেষবারের মতো বল হাতে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সফলতম সিরিজ খেলার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ভারত সফরে আসে। ব্যক্তিগত ক্রীড়া নৈপুণ্যে ভাস্বর ছিলেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুইটি সেঞ্চুরি হাঁকালেও তিন টেস্টের ঐ সিরিজে ভারত দল ২-০ ব্যবধানে পরাভূত হয়েছিল।

অধিনায়কত্ব লাভ

ডিসেম্বর, ১৯৬৭ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। অ্যাডিলেড ওভালে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব ছিলেন। পরের খেলায় অবশ্য নিয়মিত অধিনায়ক পতৌদির নবাব পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসেন। এ সফরে তেমন কোন সফলতা পাননি চান্দু বোর্দে।

অস্ট্র্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড সফরে মাত্র ২৪.৬৭ গড়ে ৪৬৮ রান তুলেছিলেন। ১১ টেস্টে অংশ নিয়ে মাত্র চারটি অর্ধ-শতকের সন্ধান পান। শুধুমাত্র ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালনের প্রেক্ষিতে তরুণদের সুযোগ দানের নীতি অনুসরণ করায় বোর্দেকে দল থেকে বাদ দেয়া হয়। ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলার পর গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথ তার স্থলাভিষিক্ত হন।

১৯৮৪-৮৬ ও ১৯৯৯-২০০২ - এ দুই মেয়াদে জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন চান্দু বোর্দে। এছাড়াও, ১৯৮৯ সালে ভারত দলকে নিয়ে পাকিস্তান সফরে এবং ২০০৭ সালে আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড সফরে দলীয় ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন।

অর্জনসমূহ

একমাত্র ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বহিঃর্বিশ্ব একাদশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ ঘটেছিল তার। মার্চ, ১৯৬৭ সালে বার্বাডোসের বিপক্ষে অংশ নেন তিনি।

১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে এক পঞ্জিকাবর্ষে ১,৬০৪ রান তুলে নতুন ভারতীয় রেকর্ড গড়েন। পরবর্তীতে ২০১৬-১৭ মৌসুমে চেতেশ্বর পুজারা তার এ রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন।

সম্মাননা

ক্রিকেট খেলায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে তাকে অর্জুন পদকে ভূষিত করে। ১৯৬৯ সালে পদ্মশ্রী ও ২০০২ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণ লাভ করেন। ২০০৬ সালে বিসিসিআই কর্তৃক সিকে নায়ড়ু আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পান।

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

পূর্বসূরী
রবি শাস্ত্রী
ভারত ক্রিকেট দলের কোচ/ব্যবস্থাপক
২০০৭-০৮
উত্তরসূরী
গ্যারি কার্স্টেন

Tags:

চান্দু বোর্দে প্রারম্ভিক জীবনচান্দু বোর্দে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটচান্দু বোর্দে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরচান্দু বোর্দে অধিনায়কত্ব লাভচান্দু বোর্দে অর্জনসমূহচান্দু বোর্দে সম্মাননাচান্দু বোর্দে তথ্যসূত্রচান্দু বোর্দে আরও দেখুনচান্দু বোর্দে বহিঃসংযোগচান্দু বোর্দে

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

তক্ষকজবাগায়ত্রী মন্ত্রআয়িশাবঙ্গবন্ধু সেতুপর্নোগ্রাফিমিশরহাইড্রোজেনবিটিএসসুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখরবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিবায়ুদূষণআনন্দবাজার পত্রিকামূত্রনালীর সংক্রমণমেটা প্ল্যাটফর্মসবিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সবঙ্গবন্ধু টানেলস্বরধ্বনিছোটগল্পদশাবতারমুসাফিরের নামাজমৌলসমূহের ইলেকট্রন বিন্যাস (উপাত্ত পাতা)ইসলামের নবি ও রাসুলমেঘনাদবধ কাব্যজন্ডিসসবচেয়ে বেশি গোলকারী ফুটবলারের তালিকাদৈনিক প্রথম আলোবলআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের ইতিহাসসংক্রামক রোগচেঙ্গিজ খানই-মেইলউৎপল দত্তরামসার কনভেনশনবাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের তালিকাগুগলসহীহ বুখারীদুর্গানেইমারবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাবাংলাদেশ নৌবাহিনীবাংলা ভাষা আন্দোলনপ্রশান্ত মহাসাগরইক্বামাহ্‌বাংলা উইকিপিডিয়াঋতুশিবপর্যায় সারণীপাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭০আলহামদুলিল্লাহবিষ্ণুআন্তর্জাতিক নারী দিবসআয়াতুল কুরসিফোরাতশ্রীবিজয়া এয়ার ফ্লাইট ১৮২জরায়ুকালেমারামকোষ নিউক্লিয়াসনিউমোনিয়াসুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ক্যালাম চেম্বার্সফিফা বিশ্বকাপ ফাইনালের তালিকাচট্টগ্রাম জেলাজেলা প্রশাসকশশাঙ্কক্লিওপেট্রাআবদুর রব সেরনিয়াবাতখালিদ বিন ওয়ালিদপ্রধান পাতাবিজয় দিবস (বাংলাদেশ)উহুদের যুদ্ধজাতীয় সংসদআবদুর রহমান আল-সুদাইসদুবাইউত্তর চব্বিশ পরগনা জেলাঢাকা🡆 More