গোলোক: কৃষ্ণ ও রাধার চিরন্তন সর্বোচ্চ আবাস

গোলোক (সংস্কৃত: गोलोक) বা গোলোক বৃন্দাবন হলো ভগবান কৃষ্ণ ও রাধার চিরন্তন আবাস। ভাগবত পুরাণে, কৃষ্ণকে গোলোকে বসবাসকারী সর্বোচ্চ ব্যক্তি এবং পরমেশ্বর ভগবান হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।

গোলোক: বুৎপত্তি, বিবরণ, সাহিত্য
গোপিগণের সঙ্গে রাধা এবং গোলোকের অধিপতি কৃষ্ণ

গৌড়ীয় বৈষ্ণববাদ, স্বামীনারায়ণ সম্প্রদায়, প্রনামী সম্প্রদায়, পুষ্টিমার্গ এবং নিম্বার্ক সম্প্রদায় সহ বিভিন্ন বৈষ্ণবধর্মীয় ঐতিহ্যে গোলোককে সম্মান করা হয়। ভাগবত পুরাণ ছাড়াও, পঞ্চরাত্রগর্গ সংহিতাব্রহ্ম সংহিতাব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ এবং দেবীভাগবত পুরাণ-এর মতো সংস্কৃত শাস্ত্রেও গোলোকের উল্লেখ আছে।

জীব গোস্বামীর মতে, গোলোক (বা বৃন্দাবন) হলো সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক চিন্ময় গ্রহ। গোলোকের আরও তিনটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে, যাদেরকে মথুরাদ্বারকা ও  গোকুল বলা হয়। ভগবান কৃষ্ণ বিভিন্ন প্রকার লীলা-বিলাসের বৈশিষ্ট্য অনুসারে গোলোকের মথুরা, দ্বারকা ও গোকুলে বিরাজ করেন।

বুৎপত্তি

গোলোকের আক্ষরিক অর্থ "গোরু ও গাভীসমূহের বাসস্থান"। সংস্কৃত শব্দ গো বলতে "গোরু" কে বোঝায় এবং লোক বলতে "জগৎ" কে বোঝায়।

বিবরণ

ব্রহ্ম সংহিতা, ৫.২৯ শ্লোকে বলা হয়েছে, "আমি চিন্তামণি পাথর দ্বারা নির্মিত এবং লক্ষ লক্ষ কল্পবৃক্ষ দ্বারা পরিবেষ্টিত ধামে, পরমেশ্বর ভগবান, আদি পুরুষ গোবিন্দের ভজনা করি। তিনি সমস্ত অভীষ্ট পূরণকারী অসংখ্য সুরভি গাভীকে পালন করেন, তিনি সর্বদা শতসহস্র লক্ষ্মীদেবীসদৃশ গোপসুন্দরীগণের দ্বারা অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও স্নেহের সাথে সেবিত হচ্ছেন ।"

সনাতন গোস্বামী, যিনি গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের ভক্তি ঐতিহ্যের অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ রচনার লেখক ছিলেন,তিনি বলেছেন, "শ্রীগোলোক হলো সমস্ত আধ্যাত্মিক প্রচেষ্টার চূড়ান্ত গন্তব্য ।"

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে যে, গোলোক বৃন্দাবন বৈকুণ্ঠ লোকের প্রায় ৫০০ মিলিয়ন যোজন (৪ বিলিয়ন মাইল) উপরে অবস্থিত ও ৩০ মিলিয়ন যোজন (২৪০ মিলিয়ন মাইল) পর্যন্ত বিস্তৃত। ব্রহ্ম সংহিতা ৫.৪৩-এ পাওয়া শ্লোকের সাথে সাদৃশ্যটি একই রকম।

গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের আচার্যগণ একে শাশ্বত ধাম বলে ব্যাখ্যা করেন। বৈকুণ্ঠ ও গোলোক উভয়কেই নিত্য ধাম (আনন্দের চিরন্তন নিবাস) হিসাবে বিবেচনা করা হয় যা সম্পূর্ণ জড় জগতের প্রলয় হওয়ার পরেও ধ্বংস হয় না। কৃষ্ণ তাঁর দ্বি-ভুজ রূপে চিরকাল গোলোকধাম ও তাঁর চতুর্ভুজ বিষ্ণু রূপে তিনি নিত্যকাল বৈকুণ্ঠ লোকে বাস করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

সাহিত্য

বেদ

বেদে গোলোক শব্দটি নেই। তবে ঋগ্বেদে বিষ্ণুর পরম পদকে গরু ও গাভীর আবাসস্থল বলে বর্ণনা করেছে। যেমন,

তা বাং বাস্তুন্যুশ্মসি গমধৈ যত্র গাবো ভূরিশৃঙ্গায়াসঃ।
অত্রাহ তদুরুগায়স্য বর্ষ্ণঃ পরমং পদমব ভাতি ভূরি।।

যে সকল সুখের স্থানে ভূরিশৃঙ্গবিশিষ্ট ও ক্ষিপ্রগামী গো-সমূহ বিচরণ করে, সে সকল স্থানে গমনার্থ তোমাদের উভয়ের কাছে প্রার্থনা করি। এ সকল স্থানে বুহ লোকের স্তুতিযোগ্য, অভীষ্টবর্ষী বিষ্ণুর পরম পদ স্ফুর্তি প্রাপ্ত হচ্ছে।

— ঋগ্বেদে, ১.১৫৪.৬

পুরাণ

গোলোক: বুৎপত্তি, বিবরণ, সাহিত্য 
চিত্রঃ রাধা ও কৃষ্ণ।

স্কন্দপুরাণ এবং মার্কণ্ডেয় পুরাণেও গোলোকের উল্লেখ পাওয়া যায়। বৃহদ্ভাগবতামৃত গ্রন্থে, সনাতন গোস্বামী স্কন্দপুরাণ থেকে একটি শ্লোক উদ্ধৃত করেছেন, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন,

এবং বহু-বিধৈ
রূপৈশ্চরামিহ বসুন্ধরাম্
ব্রহ্মলোকং চ কৌন্তেয়
গোলোকং চ সনাতনম্।

হে কৌন্তেয়, আমি বহুবিধ রূপে পৃথিবী, ব্রহ্মলোক ও সনাতন্ গোলোকধামে নিত্যকাল বিরাজ করি।

মার্কণ্ডেয় পুরাণে, কৃষ্ণ বলেছেন,

গোলোকং চ পরিত্যজ্য লোকানাং ত্রাণ-কারণাৎ
কলৌ গৌরাঙ্গ-রূপেন লীলা-লাবণ্য-বিগ্রহঃ।

আমি গোলোক পরিত্যাগ পূর্বক জীব উদ্ধারের জন্য কলিযুগে লীলা গৌরাঙ্গ রূপে লীলা মাধুর্য বিগ্রহ রূপ ধারণ করি।

গঠন

বলা হয়, সমস্ত বৈকুণ্ঠ গ্রহগুলি হলো পদ্ম ফুলের পাপড়ির মতো এবং সেই পদ্মের প্রধান বীজকোষ বা কর্ণিকাকে বলা হয় গোলোক বৃন্দাবন যা সমস্ত বৈকুণ্ঠ জগতের কেন্দ্রস্বরূপ। এইভাবে কৃষ্ণের বিভিন্ন রূপের বিস্তৃতি,সেইসাথে চিন্ময় আকাশে চিন্ময় গ্রহগুলিতে তাঁর বিভিন্ন বাসস্থান বা ধাম সংখ্যায় অনন্ত(সীমাহীন)। গোলোক তিনটি ভিন্ন অংশে বিভক্ত: গোকুল, মথুরা এবং দ্বারকাব্রহ্ম সংহিতায় (৫.৪৩) বলা হয়েছে, চিন্ময় আকাশের (বিষ্ণুলোক নামে পরিচিত) সমস্ত বৈকুণ্ঠ গ্রহগুলি গোলোক বৃন্দাবনে বিরাজমান পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দেহনির্গত রশ্মিচ্ছটার জ্যোতি দ্বারা আলোকিত হয়। গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতে অবশ্য ভৌম (পৃথিবীর) বৃন্দাবন ও গোলোক বৃন্দাবনের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই।

তথ্যসূত্র

Tags:

গোলোক বুৎপত্তিগোলোক বিবরণগোলোক সাহিত্যগোলোক গঠনগোলোক তথ্যসূত্রগোলোককৃষ্ণভগবানভাগবত পুরাণরাধাসংস্কৃত ভাষা

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

জাতীয় স্মৃতিসৌধইসরায়েলআহ্‌মদীয়াএইচআইভিআল্প আরসালানমারি অঁতোয়ানেতপদার্থবিজ্ঞানসাহাবিদের তালিকাইসলামে বিবাহঅশোক (সম্রাট)বিভিন্ন দেশের মুদ্রাপরিমাপ যন্ত্রের তালিকাউপন্যাসনাইট্রোজেনগোলাপতাওরাতরাধানিমবাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসবাংলা স্বরবর্ণসামন্ততন্ত্রআন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসইসলামশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়চাঁদপুর জেলাকুরাকাওরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৮৬১–১৯০১)বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীআদমকুয়েতরামমোহন রায়আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের ইতিহাসতারাবীহযৌন প্রবেশক্রিয়াওয়ালাইকুমুস-সালামদক্ষিণ আফ্রিকাফুটিধানময়ূরবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাফিদিয়া এবং কাফফারাদুধআহসান মঞ্জিলআডলফ হিটলারক্রিস্তিয়ানো রোনালদোগঙ্গা নদীদুর্গাপ্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়দুর্গাপূজাজয়নুল আবেদিনরাবণবেলারুশমঙ্গল গ্রহজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়শিবঋগ্বেদতাজমহলকনমেবলগুপ্ত সাম্রাজ্যহিন্দুধর্মের ইতিহাসবাংলাদেশের জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ইউটিউবসালোকসংশ্লেষণআসরের নামাজরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরহান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনবিতর নামাজদেব (অভিনেতা)বাল্যবিবাহঅপু বিশ্বাসদোয়ানরেন্দ্র মোদীরাদারফোর্ড পরমাণু মডেলজিৎ অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকাগাণিতিক প্রতীকের তালিকাসূর্য সেনরুশ উইকিপিডিয়াপাঠশালাস্নায়ুকোষ🡆 More