মধুবনী চিত্রশিল্পী গঙ্গা দেবী

গঙ্গা দেবী (১৯২৮-১৯৯১) একজন ভারতীয় চিত্রশিল্পী ছিলেন, যাঁকে অনেকে মধুবনী চিত্রকলার ঐতিহ্যের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পী রূপে বিবেচনা ও সম্মান করেন। তিনি ভারতের বাইরেও মধুবনী চিত্রকলাকে জনপ্রিয় করে তোলার কৃতিত্বের অধিকারী।ভারত সরকার তাঁকে জাতীয় গুরু কারিগর পুরস্কার প্রদান করে এবং ১৯৮৪ সালে চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী দ্বারা ভূষিত করে।

মধুবনী চিত্রশিল্পী গঙ্গা দেবী
গঙ্গা দেবী তাঁর কাজ করছেন

১৯৮০-এর দশকে, গঙ্গা দেবী দিল্লির ক্রাফটস মিউজিয়ামে বিখ্যাত মুরাল 'কোহবর ঘর' বা বাসরঘরের চিত্র এঁকেছিলেন। দিল্লির একটি হাসপাতালে যখন গঙ্গা দেবীর কেমোথেরাপি চলছিল, সেই সময়ে প্রায় তিন থেকে চার মাস ধরে ম্যুরালটি আঁকা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে, মুরালটি ২০১৫ সালের শুরুতে যাদুঘরে একটি সংস্কার পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ভেঙে ফেলা হয়েছিল।1

শৈশব ও ব্যক্তিগত জীবন

১৯৩৮ সালে ভারতেবিহার রাজ্যের মিথিলায় এক কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন গঙ্গা দেবী এবং পারিবারিকভাবেই মধুবনী চিত্র আঁকাতে তাঁর হাতেখড়ি। গঙ্গা দেবীর শৈশবে তাঁর মা তাঁক ধানের খড় এবং শাড়ির পাড় থেকে ছিঁড়ে নেওয়া রেশম দ্বারা তৈরি প্রথম তুলি ধরিয়েছিলেন। আর তখন রং বলতে ছিল রান্নার হাঁড়ির নীচ থেকে অথবা লণ্ঠনের চিমনির পলতে থেকে তুলে নেওয়া ভুসোকালি। এরপর এই ভুসোকালিকে গবাদি পশুদের প্রস্রাব বা কখনও কখনও ছাগলের দুধের সাথে মিশ্রিত করে দীর্ঘস্থায়ী রং তৈরি করা হত। মূলত মধুবনী চিত্রকলার কাচনি (রেখা অঙ্কন) রীতিতে তিনি আঁকা শুরু করেন। গ্রামে প্রকৃত ক্যানভাসের অভাবের কারণে, তিনি তাঁর খাতার পাতা কেটে কাপড়ের উপরে আটকে নিয়ে তার ওপরেই অভ্যাস করতেন। গ্রামীণ ঐতিহ্য মেনে কৈশোরেই তাঁর বিয়ে হয়ে যায় কিন্তু তাঁর বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি। সন্তান ধারণ করতে না পারায় স্বামী তাঁকে ছেড়ে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। এরপরে গঙ্গাদেবী পুরোপুরি ভাবে মধুবনী চিত্রাঙ্কনেই মনোনিবেশ করেন।

কর্মজীবন

মিথিলার গ্রামের ঐতিহ্য মেনে গঙ্গা দেবী চিত্রাঙ্কন করতে থাকলেও, গ্রামের বাইরে তখনও মধুবনী চিত্রকলার কদর ছিল না। একজন ফরাসি শিল্প সংগ্রাহক যখন মিথিলায় তাঁর গ্রামে গিয়ে অর্থের বিনিময়ে তাঁর আঁকা চিত্রাবলী সংগ্রহ করেন, তখন থেকে তাঁর ভাগ্যের মোড় ঘুরতে শুরু করে। এরপরে আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। গঙ্গা দেবী "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের উৎসব" বা 'ফেস্টিভ্যাল অফ ইন্ডিয়া ইন ইউএস"-য়ের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর মধুবনী চিত্রাবলী প্রদর্শন করেছিলেন। এই ভ্রমণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি 'আমেরিকা সিরিজ' শিরোনামে বেশ কয়েকটি চিত্রকর্ম সৃষ্টি করেছিলেন যার মধ্যে রয়েছে মস্কো হোটেল, ফেস্টিভ্যাল অফ আমেরিকান ফোক লাইফ, এবং রাইড ইন আ রোলার কোস্টার। এছাড়া তিনি রাশিয়া ও জাপানেও তাঁর শিল্পসম্ভার নিয়ে গিয়েছিলেন এবং প্রদর্শনী করেছিলেন।

বিখ্যাত চিত্রাবলী

রামায়ণ অঙ্কন

গঙ্গা দেবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ বিখ্যাত ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণের দৃশ্যাবলীর চিত্রায়ণ। অত্যন্ত পরিশীলিত এবং নিয়ন্ত্রিত ভাবে অঙ্কিত এই চিত্রাবলীতে সূক্ষ্ম রঙের ব্যবহার রামায়ণ চিত্রাঙ্কনটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। তাঁর অঙ্কনশৈলীর আর একটি বিশেষত্ব হল সীমিত জায়গায় একাধিক দৃশ্যের প্রদর্শন এবং একই ছবিতে সময়ের গতি বোঝানো।

মানব জীবন অঙ্কন

তাঁর অন্য একটি বিখ্যাত চিত্রাঙ্কন হ'ল 'মানবজীবন' ক্রমটি। এই ছবিগুলির মাধ্যমে তিনি একজন সাধারণ গ্রামীণ মহিলার জীবনচক্র এঁকেছিলেন। জন্মের সময় থেকে যৌবনপ্রাপ্তি, বিবাহ এবং গর্ভবতী হওয়া এবং বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানও এই সিরিজটির অংশ ছিল। ক্রমটি শেষ হচ্ছে যখন সন্তানের জন্ম হওয়ার পরে শিশুটি নিজের জীবনের আরও একটি চক্র শুরু করে। তাঁর চিত্রগুলি সময় এবং স্থানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক ধরনের দলিল রচনা বলা যেতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ থেকে অনুপ্রাণিত চিত্রাঙ্কন

গঙ্গা দেবী যখন আমেরিকার মতো পাশ্চাত্য দেশগুলিতে ভ্রমণ করেছিলেন, তখন সেখানকার জীবনযাত্রা যা তাঁর আজীবনের দেখা জীবনযাত্রা থেকে অনেকটাই আলাদা, তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করে। এই অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি একটি চিত্রকর্মের সিরিজ অঙ্কন করেছিলেন। এই সিরিজটি প্রাচ্যের লোকশিল্প এবং পশ্চিমী সমাজের দৃশ্যায়নের একটি দুর্দান্ত সংশ্লেষ। তিনি তাঁর অন্যান্য ভ্রমণ যেমন বদ্রীনাথ তীর্থ দর্শনের অভিজ্ঞতাও একই ভাবে চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করে গেছেন।

তথ্যসূত্র

Tags:

মধুবনী চিত্রশিল্পী গঙ্গা দেবী শৈশব ও ব্যক্তিগত জীবনমধুবনী চিত্রশিল্পী গঙ্গা দেবী কর্মজীবনমধুবনী চিত্রশিল্পী গঙ্গা দেবী বিখ্যাত চিত্রাবলী [৯]মধুবনী চিত্রশিল্পী গঙ্গা দেবী তথ্যসূত্রমধুবনী চিত্রশিল্পী গঙ্গা দেবীপদ্মশ্রী

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

জাতীয় সংসদসূরা ফালাকজি২০ক্ষুদিরাম বসুঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসৌরজগৎনোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকামার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ২০২৪বাংলা বাগধারার তালিকাবাংলাদেশ ব্যাংকমহাভারতভারতের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকাপাকিস্তানহরপ্পাচন্দ্রযান-৩ধানবনলতা সেন (কবিতা)আতাকবিতাবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ২০২৩মোবাইল ফোনবিশ্বের মানচিত্রফেসবুকবিড়ালতামান্না ভাটিয়ামহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলবাংলাদেশের জাতিগোষ্ঠীকিশোর কুমারপশ্চিমবঙ্গআল্লাহর ৯৯টি নামহস্তমৈথুননগরায়নকৃত্তিবাসী রামায়ণমুদ্রাবাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরদের তালিকামহেন্দ্র সিং ধোনিইবনে সিনাবিভিন্ন দেশের মুদ্রাজসীম উদ্‌দীনকলাহুনাইন ইবনে ইসহাকমানিক বন্দ্যোপাধ্যায়বাংলাদেশের জেলাপেপসিসাধু ভাষারাশিয়াহিট স্ট্রোকপ্রথম মালিক শাহবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধজয়নুল আবেদিনবাংলাদেশ ছাত্রলীগধর্ম১৮৫৭ সিপাহি বিদ্রোহঅসহযোগ আন্দোলন (ব্রিটিশ ভারত)সাজেক উপত্যকাসিলেটঋতুশাহ জাহানইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজিবাউল সঙ্গীতটাঙ্গাইল জেলাণত্ব বিধান ও ষত্ব বিধানশর্করাবাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রমএ. পি. জে. আবদুল কালামমৌলসমূহের ইলেকট্রন বিন্যাস (উপাত্ত পাতা)উসমানীয় সাম্রাজ্যনরেন্দ্র মোদীফুসফুসতাসনিয়া ফারিণঘূর্ণিঝড়দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশআল-মামুনবাংলাদেশের সংবাদপত্রের তালিকাসাদ্দাম হুসাইনপুলিশসংস্কৃতি🡆 More