কোচ রাজবংশ (ইংরেজি: Koch Dynasty;অসমীয়া: কোচ ৰাজবংশ), কোচ জাতির নাম থেকে,অধুনা ভারতের অসম ও বঙ্গের অন্তর্গত কমতা রাজ্যের প্রাচীন শাসকগোষ্ঠী। ১৪৯৮ সনে খেন রাজবংশ -এর পতনের পর ১৫১৫ সনে কোচ রাজবংশ নিজেকে শক্তিশালী রুপে প্রকাশ করে। কোচ রাজবংশের প্রথম রাজা বিশ্ব সিংহ ও তার পুত্র নরনারায়ন এবং সেনাপতি চিলারায় অল্প দিনের মধ্যে কামরুপ রাজ্যের পশ্চিম অংশ ও দক্ষিণ অসমের কিছু অংশ দখল করে। পরবর্তী সময়ে রাজবংশটি দুইটি ভাগে বিভক্ত হয়ে কোচ বিহার ও কোচ হাজো নামে শাসন করা আরম্ভ করেন। অবশেষে কোচ বিহার মোগলের অধীনস্থ হয় ও কোচ হাজো আহোমের নিয়ন্ত্রণে আসে।
কোচ রাজ্য কোচ রাজবংশ | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১৫১৫–১৯৪৯ | |||||||||
কোচ বিহারের পতাকা | |||||||||
কোচ বিহারের ঐতিহাসিক মানচিত্র | |||||||||
অবস্থা | রাজ্য | ||||||||
রাজধানী | চিকনা কমতাপুর | ||||||||
প্রচলিত ভাষা | অসমীয়া কামতাপুরী সংস্কৃত বাংলা (১৯ ও ২০ শতিকায় কোচ বিহার অঞ্চলে) | ||||||||
ধর্ম | হিন্দুত্ব | ||||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||||
মহারাজ | |||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | মধ্যযুগীয় ভারত | ||||||||
• প্রতিষ্ঠা | ১৫১৫ | ||||||||
• বিলুপ্ত | ১৯৪৯ | ||||||||
|
পাল রাজবংশ পতনের পর কামরুপ রাজ্য কয়েকটি ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয়। ব্রহ্মপুত্র নদীর উত্তর পাড়ে শুতীয়া রাজ্য স্থাপিত হয়। ব্রহ্মপুত্র নদীর দক্ষীন পাড়ে আহোম রাজ্য ও পশ্চিমে কছাড়ী রাজ্য, বারভূইঞা রাজ্য ও কমতা রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কমতা রাজ্যের শেষ রাজার নাম নিলাম্বর। ১৪৯৮ সনে গৌরের আলাউদ্দিন হুসেইন সাহ নীলাম্বরকে যুদ্ধে পরাস্ত করে কমতা রাজ্য দখল করে ও তার পুত্র দানিয়েলকে কমতা রাজ্যের শাসনকর্তা ঘোষণা করেন। কিছুদিন পর হারুপ নারায়নের নেতৃত্বে বারভূইঞারা দানিয়েলকে যুদ্ধে পরাস্ত করে হত্যা করেন। এই সময়ে কোচ (মেচ) জনগোষ্ঠীর নেতা হাড়িয়া মণ্ডল ও তার পত্নী হীরার গর্ভে বিশু নামক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। বিশু পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে একত্রিত করে বারভূইঞাদের পরাস্ত করে সমগ্র কমতা রাজ্যের শাসন নিজের হাতে ন্যাস্ত করেন। রাজসিংহাসনে বসে তিনি বিশ্ব সিংহ নামে বিখ্যাত হন।
কোচ রাজবংশের প্রথম রাজার নাম বিশ্ব সিংহ। তিনি ১৫১৫ সনে কমতা রাজ্যের সিংহাসনে বসেন। জে এন সরকারের মতে, তিনি ছিলেন একজন ক্ষমতাশালী কোচ জনগোষ্ঠীর লোক যা মেস,গারো,থারু ও ড্রাবিয়ান গোষ্ঠীর সংহতি ও মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর সমষ্টি ছিল।
কোচ নামক রাজ্যটি ৪র্থ থেকে ১২ শতক পর্যন্ত কামরুপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল ও এখানে বর্মন বংশ, পাল বংশ ও ম্লেছ বংশ রাজত্ব করেছিল। ১২ শতক অঞ্চলটি কমতা রাজ্যের অন্তর্গত হয় ও খেন রাজবংশ রাজধানী কমতায় রাজত্ব করে। প্রখাত খেন রাজবংশের রাজারা হলেন নীলধ্বজ, চক্রধ্বজ ও নীলাম্বর। প্রায় ১৪৯৮ সন পর্যন্ত খেন রাজবংশ কমতায় রাজত্ব করেন কিন্তু আলাউদ্দিন হুসেইন সাহ যুদ্ধে পরাস্ত করে কমতা রাজ্য দখল করে ও পুত্র দানিয়েলকে সিংহাসনে বসান। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় বারভূঞা ও আহোম রাজা চুহুংমংয়ের সহিত সংঘর্ষ হয় ফলে রাজ্যটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। দানিয়েলের পতনের পর রাজ্যটিতে অশান্তি বিরাজমান হয়। বারভূঞারা কয়েকটি ছোট ছোট অঞ্চল শাসন করা আরম্ভ করেন। এদের মধ্যে হাজো নামক ব্যক্তির জীরা ও হীরা নামক দুইটি কন্যা ছিল। অঞ্চলটির অপর পাড়ে চিকনা পাহাড় নামক স্থানে হাড়িয়া মণ্ডল নামক একজন মেস নেতার শাসন ছিল। চিকনা অঞ্চলের সহিত সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য তিনি তার দুই কন্যাকে হাড়িয়া মণ্ডলের সহিত বিবাহ করান। জীরার গর্ভে মদন ও চন্দন নামক সন্তান ও হীরার গর্ভে শিশু(শিষ্য সিংহ) ও বিশু(বিশ্ব সিংহ) জন্ম গ্রহণ করেন। চারজন ভাতৃর মধ্যে বিশু (বিশ্ব সিংহ) বেশি বুদ্ধিমান ও শক্তিমান ছিলেন। বিশ্ব সিংহের পিতা হাড়িয়া মণ্ডলকে কোচ বংশের আদি পুরুষ বলা হয়।
বিশ্ব সিংহ গোত্রের প্রধানের সহযোগিতা চান এবং শক্তিশালী বারভূঞাদের পরাস্ত করার জন্য ১৫০৯ সনে অভিযান চলান। তিনি ঔগুরি, বনগাঁও, ফুলগুরী, বিজনী ও পাণ্ডুতে বারভূঞাদের পরাস্ত করেন। ১৫১৫ সনে তিনি পূর্বে বরনদী ও পশ্চিমে করতোয়া নদীকে সীমানা নির্ধারন করে নিজেকে কমতা রাজ্যের রাজা রুপে প্রকাশ করেন। তিনি রাজধানী চিকনা থেকে কমতাপুরে (বর্তমানে কান্তাপুর) স্থানান্তর করেন।
বিশ্ব সিংহ ক্ষমতায় আসার পর ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের কোচ রাজবংশের দৈবীক শক্তির অধিকারী বলে প্রচার করে তাদের ক্ষত্রিয়ের মর্যদা দেন। এইভাবে তারা হিন্দুধর্মাবলম্বী হয়ে পরে।
বিশ্ব সিংহের পর নরনারায়ণ হলে ও শুক্লধ্বজ (চিলারায়) সেনাপতি হলে কোচ রাজ্য উন্নতির শিখরে পৌছায়। নরনারায়ণ চিলারায়ের পুত্ৰ রঘুদেবকে রাজ্যের পূর্ব অংশ কোচ হাজোর শাসক করেন। নরনারায়ণের মৃত্যুর পর রঘুদেব নিজেকে স্বাধীন রাজা ঘোষণা করে।তারপর কামতা রাজ্য স্থায়ীভাবে কোচ বিহার ও কোচ হাজোতে ভাগ হয়।
নরনারায়ণ মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের সংস্পৰ্শে এসেছিলেন ও জীবনের শেষের দিকে তিনি তার সভাতে গুরুজন্দের স্থান দিয়েছিলেন। শঙ্করদেব কোচ রাজ্যে সত্ৰ স্থাপন করেছিলেন।
কোচ বিহারের মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্ৰ নারায়ণ
কোচ বিহারের লক্ষ্মী নারায়ণের সহযোগিতায় ১৬১২ সনে মোগলরা পরীক্ষিত নারায়ণকে আক্ৰমণ করে।তার রাজত্ব কোচ হাজো, পশ্চিমে সংকোশ নদী ও পূর্বে বরনদী দ্বারা আবদ্ধ ছিল, সে বছরের শেষ নাগাদ যা দখল করা হয়েছিল। মোগল সম্রাটের সঙ্গে শ্রোতা হিসেবে পরীক্ষিত নারায়ণকে দিল্লীতে পাঠানো হয় যদিও তার ভাই বলিনারায়ণ আহোম রাজ্য এ আশ্ৰয় নেয়। ভরলী নদী ও বরনদীর পূর্ব অংশে কিছু বারভূঞা রাজার শাসন ছিল কিন্তু শীঘ্রই মোগলরা তাদের ক্ষমতাচ্যুত করে । ১৬১৫ সনে সৈয়দ হাকিম ও সৈয়দ আবু বকরের নেতৃত্বতে মোগলরা আহোম রাজ্য আক্ৰমণ করে। আহোমদের হাতে তারা পরাস্ত হয়ে বরনদী থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। আহোম রাজা প্ৰতাপ সিংহ তারপর বলিনারায়ণকে বরনদী ও ভরলী নদীর মাঝে নতুন লাভ করা অঞ্চল মিত্র হিসেবে দান করে ও অঞ্চলটিকে "দরং" নাম দেয়। ১৮২৬ সনে ব্ৰিটিশ শাসন শুরু হবার আগ পর্যন্ত এতে বলিনারায়ণের বংশ রাজত্ব করে।
বিজনীর শাসকরা কোচ বিহারের পূর্বে সংকোশ ও মানস নদীর মাঝের অঞ্চলে রাজত্ব করেছিল।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article কোচ রাজবংশ, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.