আসামের পর্যটনস্থলসমূহের তালিকা

অসম বা আসাম হল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মুখ্য দ্বার ও সাতবোনীর প্রাণকেন্দ্র স্বরূপ৷ অসম প্রাকৃতিক সম্পদ ও নানান ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধিশালী একটি রাজ্য। পর্যটনের কারণে অসম জাতীয় উদ্যান, মঠ-মন্দির ও ঐতিহাসিক স্থাপত্যের জন্য জনপ্রিয়৷ অসমের পর্যটন উদ্যোগ কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান, মানাহ জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি ছাড়াও অন্যান্য জাতীয় উদ্যান এবং কামাখ্যা, উমানন্দ-এর মতো মঠ-মন্দির ও রংঘর, তলাতল ঘর ও কারেংঘর-এর মতো নানান ঐতিহাসিক স্থাপত্য ইত্যাদি জনপ্রিয় করে তুলেছে৷

আসামের পর্যটনস্থলসমূহের তালিকা
কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানর বিখ্যাত এশিঙীয়া গঁড়৷

ঐতিহাসিক পর্যটনস্থল

অসমের বিভিন্ন মঠ মন্দির

অসমের জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্য

অসমে মোট ৫ টি জাতীয় উদ্যান (রাজ্যর আয়তনের ২.৫১% শতাংশ) ও ১৮ টি অভয়ারণ্য (রাজ্যর আয়তনের ১.৮৮% শতাংশ) আছে। ইউনেস্কো কাজিরাঙা ও মানস জাতীয় উদ্যানক প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানবলে স্বীকৃতি দিয়েছে। পৃথিবীর প্রায় দুই তৃতীয়াংশ এশিঙীয়া গঁড় কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান-এ পাওয়া যায়। কাজিরাঙাতেই সংরক্ষিত বনাঞ্চল সমূহের মধ্যে সর্বাধিক ঘনত্বে ঢেঁকীয়াপতীয়া বাঘের বসতি আছে। অসমের বনাঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির বনফুল (Orchid), বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির জীব-জন্তু পাওয়া যায়।

    জাতীয় উদ্যান
    অভয়ারণ্য

ব্রহ্মপুত্র নদী

ব্রহ্মপুত্র হল ভারত তথা অসমের এক প্রধান নদী। এই নদীকে লুইত, বরলুইত, চিরিলুইত, লৌহিত্য ইত্যাদি নামেও জানা যায়। প্রায় ২৯০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ব্রহ্মপুত্র এশিয়ার মধ্যে অন্যতম দীর্ঘ নদী। এই নদীর ওপরে চারটি সেতু আছে: শরাইঘাট সেতু, কলীয়াভোমোরা সেতু, নরনারায়ণ সেতুবগীবিল সেতুর নির্মাণ কার্য চলছে। এই নদীর প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি মনোরম। অসমের সংস্কৃতি ও সভ্যতার সাথে ব্রহ্মপুত্র নদী অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত৷ সভ্যতা সদাই নদী-কেন্দ্রিক৷ প্রাগজ্যোতিষ-কামরূপ-অসমের সভ্যতাকে ব্রহ্মপুত্র কেন্দ্রিক সভ্যতা আখ্যা দেওয়া যায়। এই ব্রহ্মপুত্র নদীকে আশ্রয় করে নানা জাতি-উপজাতি অসমে এসে অসমের বুকে স্থায়ীভাবে বসবাস করে সমন্বয় ও সমাহার প্রক্রিয়ার সংযোগে অসমীয়া জাতি গঠন করেছে।

জেলা অনুসারে অসমের বিভিন্ন পর্যটন স্থানসমূহ

জোড়হাট জেলা

গুয়াহাটির থেকে ৩১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উজনি অসমের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। আহোম শাসনের শেষ রাজধানী জোড়হাটকে অসমের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। অসমের চা উৎপাদনের অন্যতম স্থান জোড়হাট প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে জনপ্রিয়। মাজুলী মহকুমা জোড়হাট জেলার এক অংশ। মাজুলী জোড়হাট জেলার সাথে অসমের একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটনস্থল। জোড়হাটে টোকোলাই চা গবেষণা কেন্দ্র, হাতীগড় শিবদোল, বুঢ়ীগোসানী দেবালয়, গরখীয়া দোল, ঢেকীয়াখোরা বর নামঘর, লাচিত বরফুকন মৈদাম, অসম সাহিত্য সভার মুখ্য কার্য্যালয় সাল্দ্রকান্ত সন্দিকৈ ভবন ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য পর্যটন স্থান আছে।

    জোড়হাট জিমখানা ক্লাব

স্থাপিত হবার বছর থেকে এখানে ঘোড়দৌড় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, সব বিজয়ীকে "গভার্ণরস্ কাপ" প্রদান করা হয়। এখানে থাকা 'নাইন হোল গল্ফ কোর্স' এশিয়ার অন্যতম পুরানো গল্ফ কোর্স ও বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ পুরানো এখানে অনেক লন টেনিস গ্রাস কোর্ট, সুইমিং পুল, বিলিয়ার্ডস্, পোলো ও সিনেমা থিয়েটারের সুবিধা আছে।

দক্ষিণপাট সত্র হল অসমের চারটি রাজসত্রের মধ্যে দ্বিতীয় সারির সত্র। শিষ্যের সংখ্যা অন্যান্য রাজসত্রের মধ্যে তুলনায় বেশি। আহোম রজা জয়ধ্বজ সিংহের সময় ১৫৮৪ শকে মাজুলিতে স্থাপন করা হয়। প্রথম সত্রাধিকার ছিলেন শ্রীশ্রী বনমালিদেব।

আউনীআটী সত্র হল অসমএর প্রথম শ্রেণীর রাজসত্র। আহোম রাজা জয়ধ্বজ সিংহ মাজুলীতে ১৫৭৫ শকে (ইং ১৬৫৩ সাল) এই সত্র নির্মাণ করান। বর্তমান সত্রাধিকারী হলেন শ্রীশ্রী পীতাম্বর দেব গোস্বামী।

    ঠেঙাল ভবন

ঠেঙাল ভবন হল অসমের জোড়হাট জেলাতে অবস্থিত একটি পুরানো ভবন রায়বাহাদুর শিরপ্রসাদ বরুয়া ১৮৮০এর দশকে ঠেঙাল ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন। ১৯২৯ সালে তিনি এখানে একটি ছাপাশাল স্থাপন করান। প্রথমে, এর থেকে একটি সাপ্তাহিক বাতরি কাকত প্রকাশিত হয়েছিল।

শোণিতপুর জেলা

অসমের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি অনুপম স্থান হল শোণিতপুর জেলা। উষা পাহাড়, অগ্নিগড়, মহাভৈরব মন্দির, চিত্রলেখা উদ্যান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান।

তেজপুর শহরের একটি ঐতিহাসিক উদ্যান। পূর্বে এই উদ্যানের নাম কোল পার্ক ছিল। চিত্রলেখা উদ্যানকে তেজপুরের এক যাদুঘর বলা যায়। ১৯০৬ সালে সেই সময়ের উপায়ুক্ত এইচ ডব্লিউ জি কোলে (H W G Cole) তেজপুরের বিভিন্ন স্থানে আলাই-আথানি হয়ে পড়ে থাকা মনোমহা শিলায় খোদিত মূর্তি গোটা এক উদ্যান গঢ়ার চেষ্টা করেছিল। পরে এর নাম "চিত্রলেখা উদ্যান" রাখা হয়।

ঢেকীয়াজুলি শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার ভিতর ব্রহ্মপুত্র নদীর পাড়ে শিঙরী পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত হিন্দু ধর্ম-এর এক দেবালয়। এই দেবালয় শিঙরী মন্দির হিসেবেও জানা যায়, কালিকা পুরাণএ শৃংগটক নামে এর উল্লেখ আছে।

আসামের পর্যটনস্থলসমূহের তালিকা 
জ্যোতি ভারতীর সন্মূখর দৃশ্য

১৮৭৮ সালে তার ককাদেউতাক হরবিলাস আগররালার নির্মাণ করা ঘরটির নাম পূর্বে ছিল 'পকী'। সেই সময়ে তেজপুর-এ একমাত্র পকী ব্যক্তিগত বাসভবন ছিল জন্যই এই ঘরটি 'পকী' নামে জনা যেত। এখানে জ্যোতিপ্রসাদ আগররালার গানের গ্রামোফোন রেকর্ড, তার হস্তাক্ষর থাকা কাগজ, বিভিন্ন তথ্য-পাতি, শোরা পালেং ইত্যাদি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।

    বিশ্বনাথ ক্ষেত্র

বিশ্বনাথ চারিআলি শহর থেকে প্রায় ১০ কি.মি. দক্ষিণে একটি প্রাচীনতম পবিত্র স্থান। দশম শতাব্দীতে রচিত কালিকাপুরাণএ বিশ্বনাথকে হিন্দুধর্ম-এর একটি প্রধান তীর্থক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ হতে দেখা যায়। আহোম রাজত্বে বিশ্বনাথ ক্ষেত্রে কেবাটাও দৌল-দেবালয় নির্মাণ করা হয়েছিল।

শিবসাগর জেলা

আহোম সাম্রাজ্যর একটি ঐতিহাসিক স্থান। ছশ বছরীয়া আহোম রাজবংশের বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী এই শিবসাগর। সমগ্র জেলাটিতে আহোম শাসনকালের অলেখ স্থাপত্য,ভাস্কর্য, মৈদাম, পুখুরী, গড়, আলিবাট ইত্যাদি সিঁচরতি হয়ে আছে। রংঘর, কারেংঘর, তলাতল ঘর, চরাইদেউ, শির দ'ল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য পর্যটনের স্থান।

তলাতল ঘর শিবসাগরর মূল কেন্দ্র থেকে মাত্র ৩ কি.মি. দূরে রংপুর-এ অবস্থিত। এই আহোম স্বর্গদেউদের দ্বারা নির্মিত একটি রাজমহল। তলাতল ঘর আহোম রাজ্যর স্মৃতিচিহ্নসমূহের মধ্যে আকারে অনেকটা বড়। প্রসাদটি সাতমহলীয়া; চারটি মহল মাটির ওপর ও তিনটি মহল মাটির তলায় আছে।

    সরাইদেউর মৈদাম বা সরাইদেও

সোণারি শহর থেকে প্রায় ২০ কি.মি. দূরে অবস্থিত। একসময় আহোম রাজপরিবার ও উচ্চ পদস্থ রাজকর্মচারীদের সমাধিস্থল। মাটি নির্মিত পিরামিড সদৃশ বহু মৈদাম আজও অক্ষত অবস্থাতে আছে। মৈদামের অভ্যন্তরে থাকা ধন-সোনা বৃটিশরা লুঠ করে নিয়ে গেছিল বলে মনে করা হয়।

শরাগুরি চাপরিতে এই দরগাহ অবস্থিত। শিবসাগর থেকে ২২ কি.মি. দূরত্বে সুদূর পারস্য থেকে আসা সন্ত জিকির ও জারির স্রষ্টা আজানপীরের সমাধিস্থল। সকল ধর্মের লোক এখানে শ্রদ্ধা জনায়।

    জয়দৌল

লালুকসোলা রাজা চাউদাঙর হাতে নৃশংসভাবে মৃত্যুবরণ করা মাতা জয়মতীর স্মৃতিতে রুদ্রসিংহ জয়সাগর পুখুরী ও জয়দৌল নির্মাণ করেন।

    রুদ্রদৌল

পিতা রুদ্রসিংহ-এর স্মৃতিতে ১৭৭৩ সালে রাজা লক্ষীসিংহ রুদ্রসাগর পুখুরী ও তার পারত রুদ্রদৌল নির্মাণ করে। এর শিবসাগর শহর থেকে দূরত্ব প্রায় ৪ কি.মি.।

    গৌরীদৌল

বররাজা ফুলেশ্বরী কুঁররী একটি পুখুরী খন্দাই তার পাড়ে এই দৌলটি নির্মাণ করে। শিবসাগর শহর থেকে ১২ কি.মি. দূরত্বে গৌরীসাগরে গৌরীদৌল অবস্থিত।

অন্যান্য স্থান

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহর৷ গুয়াহাটি মহানগরের মধ্যে কামাখ্যা মন্দির, অসম রাজ্যিক সংগ্রহালয়, গুয়াহাটি চিড়িয়াখানা, শংকরদেব কলাক্ষেত্র, উমানন্দ ইত্যাদি বিভিন্ন পর্যটন স্থান আছে৷ এছাড়াও, গুয়াহাটি শহর থেকে কিছু নিকটে অবস্থিত বাইহাটা চারিআলির মদন কামদের দেবালয় ও দক্ষিণ কামরূপ চানডুবি বিল আকর্ষণীয় পর্যটনস্থল।

    বটদ্ররা থান বা বরদোরা থান

নগাঁও শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার নিকটে এই তীর্থস্থান অবস্থিত। বটদ্ররা থানের অন্য এক বিশেষত্ব হল যে, এটিই মহাপুরুষ শঙ্করদেবের প্রতিষ্ঠা করা সর্বপ্রথম থান ও এখানে তার আরম্ভ করা একশরণ নাম ধর্ম-এর প্রচার করা হয়েছিল।

    জাতিঙ্গা

উত্তর-কাছাড় পর্বতের চূড়া আত্মহত্যার স্থান হিসেবে জাতিঙ্গা বিখ্যাত।

চিত্রাবলী

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:Tourism in India

Tags:

আসামের পর্যটনস্থলসমূহের তালিকা ঐতিহাসিক পর্যটনস্থলআসামের পর্যটনস্থলসমূহের তালিকা অসমের জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্যআসামের পর্যটনস্থলসমূহের তালিকা ব্রহ্মপুত্র নদীআসামের পর্যটনস্থলসমূহের তালিকা জেলা অনুসারে অসমের বিভিন্ন পর্যটন স্থানসমূহআসামের পর্যটনস্থলসমূহের তালিকা অন্যান্য স্থানআসামের পর্যটনস্থলসমূহের তালিকা চিত্রাবলীআসামের পর্যটনস্থলসমূহের তালিকা তথ্যসূত্রআসামের পর্যটনস্থলসমূহের তালিকা বহিঃসংযোগআসামের পর্যটনস্থলসমূহের তালিকাউত্তর-পূর্ব ভারতকাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানকামাখ্যা মন্দিরকারেংঘরতলাতল ঘররংঘর

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

কুমিল্লা জেলাআল্লাহর ৯৯টি নামমাহদীকোষ (জীববিজ্ঞান)ফরাসি বিপ্লবের কারণ২০২৩উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতানদের তালিকাবুড়িমারী এক্সপ্রেসবৌদ্ধধর্মের ইতিহাসমানুষভারতরমজানবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীপরমাণুআকবররুকইয়াহ শারইয়াহরক্তের গ্রুপনামসূরা কাফিরুনবাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসলিঙ্গ উত্থান ত্রুটিমিয়া খলিফাবিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সজনি সিন্সমুহাম্মদ ইউনূসঈমানমৌলিক সংখ্যাপুনরুত্থান পার্বণপেশাবাংলা একাডেমিপর্তুগাল জাতীয় ফুটবল দলকালীবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রঅর্শরোগফিলিস্তিনশাকিব খানপর্যায় সারণী (লেখ্যরুপ)ভিসাবাংলা লিপিরাজনীতিসিফিলিসস্বামী বিবেকানন্দবিটিএসবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদবিআলিব্রাজিললামিনে ইয়ামালদেশ অনুযায়ী ইসলামকম্পিউটারওয়েব ব্রাউজারউদ্ভিদকোষসিলেট সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ডসমূহসৌরজগৎক্রোমোজোমমহাস্থানগড়সিরাজউদ্দৌলাশাহ জাহানসূরা ক্বদরপানিপথের প্রথম যুদ্ধব্র্যাকঅধিবর্ষবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিসাপকাজী নজরুল ইসলামজেলা প্রশাসকপুণ্য শুক্রবারক্রিয়াপদদৈনিক প্রথম আলোইতিহাসমহেন্দ্র সিং ধোনিইন্দোনেশিয়াফ্রান্সিস স্কট কী সেতু (বাল্টিমোর)উজবেকিস্তানফ্রান্সপাবনা জেলাসায়মা ওয়াজেদ পুতুল🡆 More