তুরস্ক: ইউরেশিয়ার দেশ

তুরস্ক (তুর্কি: Türkiye ত্যুর্‌কিয়ে), সরকারি নাম প্রজাতন্ত্রী তুরস্ক (তুর্কি: Türkiye Cumhuriyeti ত্যুর্‌কিয়ে জুম্‌হুরিয়েতি), পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। তুরস্কের প্রায় পুরোটাই এশীয় অংশে, পর্বতময় আনাতোলিয়া বা এশিয়া মাইনর উপদ্বীপে পড়েছে। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা আনাতোলিয়াতেই অবস্থিত। তুরস্কের বাকী অংশের নাম পূর্ব বা তুর্কীয় থ্রাস এবং এটি ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় অবস্থিত। এই অঞ্চলটি উর্বর উঁচু নিচু টিলাপাহাড় নিয়ে গঠিত। এখানে তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুল অবস্থিত। সামরিক কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি জলপথ এশীয় ও ইউরোপীয় তুরস্ককে পৃথক করেছে মার্মারা সাগর, এবং বসফরাস প্রণালী ও দার্দানেলেস প্রণালী। এই তিনটি জলপথ একত্রে কৃষ্ণ সাগর থেকে এজিয়ান সাগরে যাবার একমাত্র পথ তৈরি করেছে।

প্রজাতন্ত্রী তুরস্ক

Türkiye Cumhuriyeti (তুর্কি)
তুরস্কের জাতীয় পতাকা
জাতীয় সঙ্গীত: 
ইস্তিকলাল মার্সি (তুর্কি)
"স্বাধীনতার কুচকাওয়াজ"
তুরস্কের অবস্থান
রাজধানীআঙ্কারা
৩৯° উত্তর ৩৫° পূর্ব / ৩৯° উত্তর ৩৫° পূর্ব / 39; 35
বৃহত্তম নগরীইস্তাম্বুল
৪১°১′ উত্তর ২৮°৫৭′ পূর্ব / ৪১.০১৭° উত্তর ২৮.৯৫০° পূর্ব / 41.017; 28.950
সরকারি ভাষাতুর্কি
কথ্য ভাষাসমূহধারা দেখুন
নৃগোষ্ঠী
(২০১৬)
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ
  • তুর্কি
  • তুর্ক
সরকারএককেন্দ্রিক রাষ্ট্রপতি শাসিত সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র
রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ান
• উপরাষ্ট্রপতি
ফুয়াত ওকতাই
• অ্যাসেম্বলির স্পিকার
মুস্তাফা শেনতপ
আইন-সভাগ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি
প্রতিষ্ঠা
১৯শে মে ১৯১৯
২৩শে এপ্রিল ১৯২০
• লোজানের চুক্তি
২৪শে জুলাই ১৯২৩
২৯শে অক্টোবর ১৯২৩
• বর্তমান সংবিধান
৯ই নভেম্বর ১৯৮২
আয়তন
• মোট
৭,৮৩,৩৫৬ কিমি (৩,০২,৪৫৫ মা) (৩৬তম)
• পানি (%)
২.০৩ (২০১৫ অনুযায়ী)
জনসংখ্যা
• ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ আনুমানিক
নিরপেক্ষ বৃদ্ধি ৮,৩৬,১৪,৩৬২ (১৯তম)
• ২০১৬ আদমশুমারি
৭,৯৪,৬৩,৬৬৩ (১৮তম)
• ঘনত্ব
১০৯/কিমি (২৮২.৩/বর্গমাইল) (১০৭তম)
জিডিপি (পিপিপি)২০২১ আনুমানিক
• মোট
বৃদ্ধি $২.৭৪৯ ট্রিলিয়ন (১১তম)
• মাথাপিছু
বৃদ্ধি $৩২,২৭৮ (৪৫তম)
জিডিপি (মনোনীত)২০২১ আনুমানিক
• মোট
বৃদ্ধি $৭৯৪.৫৩০ বিলিয়ন (২০তম)
• মাথাপিছু
বৃদ্ধি $১০,৮৮০ (৬৭তম)
জিনি (২০১৭)নেতিবাচক বৃদ্ধি ৪৩.০
মাধ্যম · ৫৬তম
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৯)বৃদ্ধি 0.৮২০
অতি উচ্চ · ৫৪তম
মুদ্রাতুর্কি লিরা (₺) (TRY)
সময় অঞ্চলইউটিসি+৩ (টিআরটি)
তারিখ বিন্যাসdd.mm.yyyy (CE)
গার্হস্থ্য বিদ্যুৎ230 V–50 Hz
গাড়ী চালনার দিকডান
কলিং কোড+৯০
আইএসও ৩১৬৬ কোডTR
ইন্টারনেট টিএলডি.tr

তুরস্কের পশ্চিমে এজিয়ান সাগরগ্রিসবুলগেরিয়া; উত্তর-পূর্বে জর্জিয়া, আর্মেনিয়া ও স্বায়ত্বশাসিত আজারবাইজানি নাখচিভান স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র; পূর্বে ইরান; দক্ষিণে ইরাক, সিরিয়াভূমধ্যসাগর, সাইপ্রাস দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত। তুরস্কের উপকূল দেশটির সীমান্তের তিন-চতুর্থাংশ গঠন করেছে। তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমে আছে উর্বর সমভূমি। পশ্চিমে আছে উঁচু, অনুর্বর মালভূমি। পূর্বে আছে সুউচ্চ পর্বতমালা। দেশের অভ্যন্তরের জলবায়ু চরমভাবাপন্ন হলেও ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলের জলবায়ু মৃদু।

ইউরোপ সঙ্গমস্থলে অবস্থিত বলে তুরস্কের ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিবর্তনে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব পড়েছে। গোটা মানবসভ্যতার ইতিহাস জুড়েই তুরস্ক এশিয়া ও ইউরোপের মানুষদের চলাচলের সেতু হিসেবে কাজ করেছে। নানা বিচিত্র প্রভাবের থেকে তুরস্কের একটি নিজস্ব পরিচয়ের সৃষ্টি হয়েছে এবং এই সমৃদ্ধ সংস্কৃতির প্রভাব পড়েছে এখানকার স্থাপত্য, চারুকলা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে। গ্রামীণ অঞ্চলে এখনও অনেক অতীত ঐতিহ্য ও রীতিনীতি ধরে রাখা হয়েছে। তবে তুরস্ক বর্তমানে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানকার অধিকাংশ লোকের ধর্ম ইসলাম এবং মুখের ভাষা তুর্কি ভাষা।

বহু শতাব্দী ধরে তুরস্ক ছিল মূলত কৃষিপ্রধান একটি দেশ। বর্তমানে কৃষিখামার তুরস্কের অর্থনীতির একটি বড় অংশ এবং দেশের শ্রমশক্তির ৩৪% এই কাজে নিয়োজিত। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তুরস্কতে শিল্প ও সেবাখাতের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, বিশেষত অর্থসংস্থান, পরিবহন, এবং পেশাদারী ও সরকারি সেবায়। অন্যদিকে কৃষির ভূমিকা হ্রাস পেয়েছে। টেক্সটাইল ও বস্ত্র শিল্প দেশের রপ্তানির প্রধান উৎস।

অর্থনৈতিক রূপান্তরের সাথে সাথে নগরায়নের হারও অনেক বেড়েছে। বর্তমানে তুরস্কের ৭৫% জনগণ শহরে বাস করে। ১৯৫০ সালেও মাত্র ২১% শহরে বাস করত। জনসংখ্যার ৯০% তুরস্কের এশীয় অংশে বাস করে। বাকী ১০% ইউরোপীয় অংশে বাস করে।

তুরস্কের ইতিহাস দীর্ঘ ও ঘটনাবহুল। প্রাচীনকাল থেকে বহু বিচিত্র জাতি ও সংস্কৃতির লোক এলাকাটি দখল করেছে। ১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে এখানে হিটাইটদের বাস ছিল। তাদের সময়েই এখানে প্রথম বড় শহর গড়ে ওঠে। এরপর এখানে ফ্রিজীয়, গ্রিক, পারসিক, রোমান এবং আরবদের আগমন ঘটে। মধ্য এশিয়ার যাযাবর তুর্কি জাতির লোকেরা ১১শ শতকে দেশটি দখল করে এবং এখানে সেলজুক রাজবংশের পত্তন করে। তাদের শাসনের মাধ্যমেই এই অঞ্চলের জনগণ তুর্কি ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে মিশে যায়। ১৩শ শতকে মোঙ্গলদের আক্রমণে সেলজুক রাজবংশের পতন ঘটে। ১৩ শতকের শেষ দিকে এখানে উসমানীয় সাম্রাজ্যের পত্তন হয়। এরা পরবর্তী ৬০০ বছর তুরস্ক শাসন করে এবং আনাতোলিয়া ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃতি লাভ করে।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্রাজ্যটির পতন ঘটে।

১৯২৩ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্যের তুর্কি ভাষী এলাকা আনাতোলিয়া ও পূর্ব থ্রাস নিয়ে মুস্তাফা কেমাল (পরবর্তীতে কেমাল আতাতুর্ক)-এর নেতৃত্বে আধুনিক তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের তথা তুর্কি জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৩৮ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আতাতুর্ক তুরস্কের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি একটি শক্তিশালী, আধুনিক ইউরোপীয় রাষ্ট্র হিসেবে তুরস্কের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তার সরকারের মূলনীতিগুলি কেমালবাদ নামে পরিচিত এবং এগুলি পরবর্তী সমস্ত তুরস্ক সরকারের জন্য নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করেছে।

আতাতুর্কের একটি বিতর্কিত মূলনীতি ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। কেমালের কট্টর অনুসারীরা মনে করেন ব্যক্তিগত জীবনের বাইরে ধর্মের স্থান নেই এবং রাজনৈতিক দলগুলির ধর্মীয় ইস্যু এড়িয়ে চলা উচিত। ১৯৫০-এর দশক থেকে রাজনীতিতে ধর্মের ভূমিকা তুরস্কের একটি বিতর্কিত ইস্যু। তুরস্কের সামরিক বাহিনী নিজেদেরকে কেমালবাদের রক্ষী বলে মনে করে এবং তারা ১৯৬০, ১৯৭১, ১৯৮০ এবং ১৯৯৭ সালে মোট চারবার তুরস্কের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার স্বার্থে হস্তক্ষেপ করেছে।

নাম

বাংলা তুরস্ক নামটি সংস্কৃত তুরুষ্ক শব্দটি থেকে এসেছে, সংস্কৃত শব্দটি আরবি তুর্কিয়া থেকে এসেছে। ভারত উপমহাদেশে তুরুষ্ক শব্দটি তুর্কি-পাঠান মুসলিম শাসকদের দেশকে বোঝাতে ব্যবহৃত হতো, যেটি মূলত মধ্য এশিয়ার তুর্কোমেনিয়াকে (বর্তমানে তুর্কমেনিস্তান) নির্দেশ করতো। ১৪ শতকে আরব উৎসসমূহে তুর্কিয়া শব্দটি সাধারণত তুর্কমানিয়ার (তুর্কোমেনিয়া) সঙ্গে অথবা সম্ভবত বৃহৎ অর্থে ওঘুজ তুর্কি অঞ্চলের সঙ্গে বৈসাদৃশ্য বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। ১৩৩০-এর দশকে ইবনে বতুতা এই অঞ্চলটিকে বার আল-তুর্কিয়া আল-মা'রুফ বি-বিলাদ আল-রুম ("তুর্কি ভূমি যা রুমের ভূমি হিসাবে পরিচিত") হিসাবে সম্বোধন করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটির বিভাজন তুর্কি জাতীয়তাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে এবং তুর্কিদের মাঝে Türkler için Türkiye ("তুর্কিদের জন্য তুরস্ক") মনোভাব জেগে ওঠে। আর্মেনিয়ার সঙ্গে গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি সরকার কর্তৃক স্বাক্ষরিত আলেক্সান্দ্রোপোল চুক্তির পর তুর্কিয়ে নামটি প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক নথিতে উঠে আসে। আফগানিস্তানের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে দেভলেত-ই আলিইয়ে-ই তুর্কিইয়ে ("মহত্তম তুর্কি রাষ্ট্র") অভিব্যক্তিটি উসমানীয় সাম্রাজ্যেকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছিল।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ান একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেন যাতে রপ্তানি পণ্যে "মেড ইন তুর্কিয়ে" লেবেল লাগানোর আহ্বান জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয় যে, “অন্যান্য সরকারি যোগাযোগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত ‘Turkey’, ‘Turkei’, ‘Turquie’ ইত্যাদি শব্দের পরিবর্তে তুর্কি Türkiye (তুর্কিয়ে) শব্দটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিক সংবেদনশীলতা দেখানো হবে।” বিজ্ঞপ্তিতে ‘তুর্কিয়ে’ শব্দটিকে উপস্থাপন করার কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছিল যে, শব্দটি “তুর্কি জাতির সংস্কৃতি, সভ্যতা ও মূল্যবোধকে সর্বোত্তম উপায়ে উপস্থাপন করে এবং প্রকাশ করে”। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডের মতে, 'টার্কি' পাখির সাথে তুরস্কের ইংরেজি নাম ‘Turkey’-র নিন্দনীয় সম্পর্ককে এড়ানোর জন্যেও এই বিজ্ঞপ্তিটি জারি করা হয়েছিল। ১ জুন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুশওলুর পক্ষ থেকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে ‘টার্কি’ নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩ জুন ২০২২ তারিখে জাতিসংঘের মহাসচিব তা অনুমোদন দেন। বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে তুরস্কের নাম ‘Türkiye’। এ নাম পরিবর্তন সম্পর্কে তিনটি কারণ বলা হচ্ছে-(১) টার্কি এক ধরনের পাখি যা আমেরিকানরা বিশেষ দিনে খায়। এটা তুরস্কের কাছে অপমানজনক। (২) রাজনৈতিক কারণ। (৩) এরদোগানের জনসমর্থন বাড়ানোর কৌশল।

ইতিহাস

তুরস্ক: নাম, ইতিহাস, রাজনীতি 
১৩৫ খ্রিস্টাব্দে ইফালাসে রোমান সাম্রাজ্য কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সেলসিয়াসের গ্রন্থাগার।
তুরস্ক: নাম, ইতিহাস, রাজনীতি 
৬ষ্ঠ শতকে প্রথম জাস্টিনিয়ান কর্তৃক নির্মিত হাজিয়া সোফিয়া গির্জা, যা পরবর্তীতে ১৪৫৩ সালে মসজিদে রূপান্তর করা হয়।

তুর্কি জাতির প্রাচীন ইতিহাস পুরোপুরিভাবে স্পষ্ট নয়। এর অনেকটা লোকশ্রুতি ও কিংবদন্তি নির্ভর। কয়েক[কত?] যুগ আগেও কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করতেন তুর্কিরা উরালীয়-আলতীয় ভাষাভাষী গোষ্ঠীগুলোর অন্যতম। আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ফিনিশ, এস্তোনীয়, হাঙ্গেরীয় প্রভৃতি উরালীয় ভাষার সাথে তুর্কি, মঙ্গোলীয় ও কোরীয় ভাষার মতো আলতাই ভাষা গোষ্ঠীর খুব বেশি সম্পর্ক নেই। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক স্বীকার করেন যে, মঙ্গোল, মাঞ্চু, বালগার এবং সম্ভবত হানদের মতো তুর্কিরাও বৃহৎ আলতীয় মানবগোষ্ঠীর অন্তর্গত।

বাইফলে হ্রদের দক্ষিণে এবং গোটা মরুভূমির উত্তরে তুর্কি জাতির উদ্ভব। চৈনিক সূত্র থেকে জানা যায়, চীন সাম্রাজ্যের প্রান্তদেশে এক বৃহৎ যাযাবর গোষ্ঠী বসবাস করতো। এদের মধ্যে মোঙ্গল ও তুর্কি জাতির লোক ছিল বলে অনুমান করা হয়। ষষ্ঠ শতকে জাতিগত যুদ্ধবিগ্রহের মধ্যে ‘তুর্কি’ নামক জাতির নাম জানা যায়। চৈনিক ঐতিহাসিকরা এদের ‘তু-চিউ’ নামে অভিহিত করেছেন।

তোপকাপি ও দোলমাবাচে প্রাসাদ, অটোমান সুলতানদের প্রধান ও কেন্দ্রীয় আবাসস্থল।

সপ্তম শতকে আরবদের ইরান বিজয়ের পর কিছু কিছু তুর্কি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং ইসলামি রাজ্যের মধ্যে বসবাস শুরু করে। নবম ও দশম শতকে তুর্কিদের অনেকে সৈন্য বিভাগে ও শাসনযন্ত্রের অন্যান্য বিভাগে প্রবেশ করতে শুরু করে। দশম শতকে তুর্কিদের অধিকাংশই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে, এদের মধ্যে সেলজুক তুর্কিরা উল্লেখযোগ্য। সুলতান তুঘরিল বেগও তুর্কি জাতির অন্তর্ভুক্ত, তুর্কিতেই উনার জন্ম। ১২৪৩ সালে সেলজুকরা মঙ্গোলদের কাছে পরাজিত হয়। এতে তুর্কি সুলতানদের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়ে। পরে প্রথম উসমান উসমানীয় সাম্রাজ্যের (অটোমান সাম্রাজ্য) সূচনা করেন। তাঁর বংশধররা পরবর্তী ৬০০ বছর শাসন করে। এ সময় তাঁরা তুরস্কে পূর্ব ও পশ্চিমা সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটলে ১৬ ও ১৭ শতকে উসমানীয় তুর্কি রাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশগুলোর একটি ছিল।

১৯১৪ সালে উসমানীয় তুর্কি রাষ্ট্র অক্ষশক্তির পক্ষে প্রথম বিশ্বযুদ্ধতে অংশ নেয় এবং পরাজিত হয়। এ সময় চারটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্টে তুর্কি বাহিনী নিয়োজিত ছিল। ফ্রন্ট চারটি হলো দার্দানেলিস, সিনাই-প্যালেস্টাইন, মেসোপটেমিয়া ও পূর্ব আনাতোলিয়া। যুদ্ধের শেষের দিকে প্রতিটি ফ্রন্টেই তুর্কি বাহিনী পরাজিত হয়। তুর্কি বাহিনীর মধ্যে এ সময় হতাশা দেখা দেয়। প্রতিটি ফ্রন্টে পর্যুদস্ত তুরস্কের পক্ষে যুদ্ধবিরতি গ্রহণ করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না। ১৯১৮ সালের অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখে তুর্কি ও ব্রিটিশ প্রতিনিধিরা লেমনস দ্বীপের সমুদ্র বন্দরে অবস্থিত ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ‘আগামেমনন’ জাহাজে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর অটোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। খণ্ডিত তুরুস্কের মূল ভূখণ্ডেই পরে গড়ে ওঠে আধুনিক তুরস্ক বা তুর্কিয়ে। এর পত্তন করেন মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক। তাঁকে আধুনিক তুরস্কের জনক বলা হয়। এর ফলে পতন ঘটে ৬০০ বছরের উসমানীয় সাম্রাজ্যের। একই সাথে মুসলিম বিশ্ব থেকে বিলুপ্তি ঘটে খিলাফত ব্যবস্থার। কামাল আতাতুর্ক ক্ষমতা গ্রহণের পর তুরস্ককে একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেন। ১৯২৩ সালে তিনি তুরস্ককে একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন। তিনি হন প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট।

১৯৪৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি দেশটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেয়। মূলত উদ্ভূত কিছু পরিস্থিতি মোকাবেলায় এর কোনো বিকল্প ছিল না দেশটির সামনে। যুদ্ধের পর দেশটি জাতিসংঘ ও ন্যাটোতে যোগ দেয়। এ সময় থেকে তুরস্কে বহুদলীয় রাজনীতির প্রবর্তন হয়। ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করে। ফলে ১৯৬০, ১৯৭১ ও ১৯৮০ সালে তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থান হতে দেখা যায়। দেশটিতে সর্বশেষ সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টা ঘটে ১৯৯৭ সালে। কিন্তু পরে আবার দেশটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু ২০১৩-তে গাজি পার্কের বিক্ষোভ ও ২০১৫-তে সুরুক বোমা হামলা পুনরায় অস্থিরতার জন্ম দিয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৬ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করা হয় তবে শেষ পর্যন্ত তুর্কি জনগনের ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে তা ব্যর্থ হয়। ২০১৮ সালে দেশটিতে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা কায়েম হয়। বর্তমানে দেশটিতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার রয়েছে।

রাজনীতি

ফুয়াত ওকতায়,
উপরাষ্ট্রপতি

তুরস্কের রাজনীতি একটি বহুদলীয় রাষ্ট্রপতি-শাসিত গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির উপর ন্যাস্ত। তুরস্কে ৫৫০ আসনের একটি সংসদ আছে, যার সদস্যরা ৫ বছরের জন্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালের গণভোটের পর থেকে রাষ্ট্রপতিও জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হচ্ছেন। রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ান দেশটির বর্তমান রাষ্ট্রপতি এবং ফুয়াত ওকতায় দেশটির বর্তমান উপ-রাষ্ট্রপতি। তুরস্কের সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধনে ধর্মনিরপেক্ষতাকে জোর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ

প্রশাসনিক সুবিধার্থে তুরস্ককে ৮১টি প্রদেশে বিভক্ত করা হয়েছে। সব বিভাগ আবার সাতটি অঞ্চলে বিভক্ত। তবে এই সাতটি অঞ্চল কোনো প্রশাসনিক বিভাজন নয়। প্রতিটি প্রদেশ কয়েকটি করে জেলায় বিভক্ত। তুরস্কে মোট জেলা আছে ৯২৩টি। প্রতিটি প্রদেশের নামই সেই প্রদেশের রাজধানীর নাম। আর প্রতিটি প্রাদেশিক রাজধানী সংশ্লিষ্ট প্রদেশের কেন্দ্রীয় জেলা। সবচেয়ে বড় শহর ইস্তাম্বুল। এটি হচ্ছে তুরস্কের বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দু। তুর্কি জনগণের প্রায় ৭০ দশমিক ৫ শতাংশ লোক শহরে বসবাস করে।

ভূগোল

তুরস্ক: নাম, ইতিহাস, রাজনীতি 
তুরস্কের ভৌগোলিক মানচিত্র

তুরস্ক দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার আনাতোলিয়া উপদ্বীপের সম্পূর্ণ অংশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বলকান উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত। ফলে ভৌগোলিকভাবে দেশটি একই সাথে ইউরোপ ও এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত। আনাতোলীয় অংশটি তুরস্কের প্রায় ৯৭% আয়তন গঠন করেছে। এটি মূলত একটি পর্বতবেষ্টিত উচ্চ মালভূমি। আনাতোলিয়ার উপকূলীয় এলাকায় সমভূমি দেখতে পাওয়া যায়। তুরস্কের দক্ষিণ-ইউরোপীয় অংশটি ত্রাকিয়া নামে পরিচিত; এটি আয়তনে তুরস্কের মাত্র ৩% হলেও এখানে তুরস্কের ১০% জনগণ বাস করে। এখানেই তুরস্ক ও গোটা ইউরোপের সবচেয়ে জনবহুল শহর ইস্তানবুল অবস্থিত (জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১৩ লক্ষ)। ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণ সাগরকে সংযুক্তকারী বসফরাস প্রণালী,মার্মারা সাগর ও দার্দানেলেস প্রণালী ত্রাকিয়া ও আনাতোলিয়াকে পৃথক করেছে।

অর্থনীতি

তুরস্ক: নাম, ইতিহাস, রাজনীতি 
১৯৩৭ সালের ৯ই অক্টোবরে নাযিল্লির একটি টেক্সটাইল ফ্যাক্টরি পরিদর্শনরত অবস্থায় কামাল আতাতুর্ক ও সেলাল বায়ার।
তুরস্ক: নাম, ইতিহাস, রাজনীতি 
তুরস্কের বেঁকো ও ভেস্টেল হল ইউরোপের অন্যতম ইলেক্ট্রনিকস ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।

১৯২৩ সালে তুরস্ক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর দেশটিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। পরবর্তী ছয় দশকব্যাপী অর্থাৎ ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত সে উন্নয়ন প্রচেষ্টা একই ধারাবাহিকতায় চলতে থাকে। এরপর অধিকতর উন্নয়নের জন্য ১৯৮৩ সালে সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তুরগুত ওজাল। তিনি বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করেন এবং বাজার অর্থনীতির প্রসার ঘটান। এই সংস্কারের ফলে প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকে। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ১৯৯৪ সালে এই প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। ১৯৯৯ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। এসব সমস্যার কারণে ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। ২০০১ সালের সৃষ্ট অর্থনৈতিক সমস্যার পর নতুন করে সংস্কার কর্মসূচি শুরু করেন অর্থমন্ত্রী কামাল দারবিশ। তার সংস্কারের ফলে মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ব অনেক কমে যায়। তুরস্ক তার বাজার ধীরে ধীরে মুক্ত করতে শুরু করে। ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির হার ছিল গড়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০০৮ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।

২০০৯ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা তুরস্কেও লাগে। দেশটির অর্থমন্ত্রী জানান, এ বছর ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ হচ্ছে ২৩ দশমিক ২ বিলিয়ন তুর্কি লিরা। ২০০৭ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী তুরস্কে মোট জাতীয় আয়ের ৮ দশমিক ৯ শতাংশ আসে কৃষি থেকে, ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ আসে শিল্পখাত থেকে এবং ৫৯ দশমিক ৩ শতাংশ আসে সেবাখাত থেকে। তুরস্কের পর্যটন শিল্প দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রেখে চলছে। ২০০৮ সালে দেশটিতে পর্যটকের সংখ্যা ছিল তিন কোটি ৯ লাখ ২৯ হাজার ১৯২ জন। যাদের কাছ থেকে কর আদায় হয় দুই হাজার ১৯০ কোটি ডলার। এ ছাড়া তুর্কি অর্থনীতির অন্যান্য খাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ব্যাংকিং খাত, নির্মাণ খাত, গার্মেন্টস, বিদ্যুৎ, তেল, পরিশোধন, খাদ্য, লোহা, স্টিল, অটোমোটিভ ইত্যাদি। ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী অটোমোটিভ তৈরির দিক থেকে তুরস্কের অবস্থান বিশ্বে ১৭তম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি ব্যাপকভাবে কমে এসেছে। ১৯৯৫ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে এক চুক্তি করে তুরস্ক। ২০০৭ সালে বিদেশী বিনিয়োগ থেকে তুরস্কের আয় হয়েছে দুই হাজার ১৯০ কোটি ডলার।

উন্নত অর্থনীতির দেশ এটি। দেশটির স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন মান ভারতের এক চতুর্থাংশ ।

পররাষ্ট্র ও দেশরক্ষা নীতি

তুরস্ক: নাম, ইতিহাস, রাজনীতি 
তুরস্ক ও ইউরোপের সম্পর্কের মানচিত্র।

জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তুরস্ক। এ ছাড়া ওইসিডি, ওআইসি, ওএসসিই, ইসিও, বিএসইসি, ডি৮, জি২০ ইত্যাদি সংগঠনের সদস্য তুরস্ক। ২০০৮ সালের ১৭ অক্টোবর তুরস্ক ১৫১টি দেশের সমর্থন পেয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হয়। তার এ সদস্যপদ ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। এর আগেও তুরস্ক জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য ছিল ১৯৫১-১৯৫২, ১৯৫৪-১৯৫৫ এবং ১৯৬১ সালে। পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্ক, বিশেষ করে ইউরোপের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখাই তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতির মূল কাজ। কাউন্সিল অব ইউরোপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তুরস্ক। দেশটি ১৯৫৯ সালে ইইসি’র সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করে এবং ১৯৬৩ সালে দেশটি সংস্থাটির সহযোগী সদস্যের মর্যাদা পায়। ১৯৮৭ সালে তুরস্ক ইইসি’র পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আবেদন করে। ১৯৯২ সালে ওয়েস্টার্ন ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর সহযোগী সদস্যপদ লাভ করে। দেশটি ইইউ’র পূর্ণ সদস্যপদ লাভের জন্য ১৯৯৫ সালে একটি চুক্তি করে। এ চুক্তি অনুসারে ২০০৫ সালের ৩ অক্টোবর সমঝোতা শুরু হয়। তবে সে সমঝোতা এখনো শেষ হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে গ্রিক-সাইপ্রাসকে কেন্দ্র করে ইউরোপের অন্যান্য দেশের সাথে তুরস্কের যে বিরোধ তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সমঝোতা চলতেই থাকবে।

এ ছাড়া তুর্কি পররাষ্ট্রনীতির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক। এখানে উভয় দেশেরই অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। আর তা হলো সোভিয়েত আগ্রাসন মোকাবেলা। আর সে লক্ষ্যে তুরস্ক ১৯৫২ সালে ন্যাটোতে যোগ দেয়। এর মাধ্যমে দেশটি ওয়াশিংটনের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলে। স্নায়ুযুদ্ধের পর তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। ইরাক ও সিরিয়া সীমান্তের কাছে তুরস্কে ন্যাটোর বিমান ঘাঁটি রয়েছে। ওআইসির সদস্য হওয়ার পরও ইসরাইলের সাথে তুরস্কের ভালো সম্পর্ক রয়েছে, তবে ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির অধীনে সাম্প্রতিক সময়ে দেশ দুটির সম্পর্ক স্থিতিশীল। ১৯৮০ সালের পর তুরস্ক পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিশেষ করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে বড় ধরনের লেনদেনে জড়ায় দেশটি। আর এসব ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল সমর্থন পেয়েছে তুরস্ক।

তুুুরস্ক-বাংলাদেশের সম্পর্ক

তুরস্ক: নাম, ইতিহাস, রাজনীতি 
তুুুরস্ক-বাংলাদেশ মানচিত্র

বাঙালি মুসলমানসহ দক্ষিণ এশিয়ার সকল মুসলিমগণ তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধে সমর্থন দিয়েছিল। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২১ সালে তার রচিত "কামাল পাশা" নামক কবিতায় কামাল আতাতুর্কের প্রতি সম্মান ও প্রশংসা জ্ঞাপন করেন। পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি স্থানকে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ নামে নামকরণ করা হয়। উপরন্তু ফেনীতে আতাতুর্ক মডেল উচ্চ বিদ্যালয় এবং ঢাকায় মুস্তফা কামাল তুর্কি ভাষা কেন্দ্র নামে একটি ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সবশেষে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরকে হজরত শাহজালালের নামানুসারে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে নামকরণ করা হয়, যিনি নিজেও একজন তুর্কি এবং তুর্কি সুফি পণ্ডিত জালালুদ্দিন রুমির শিষ্য ছিলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসির সম্মেলনে তুরস্ক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৬ সালে ঢাকায় তুরস্কের দূতাবাস এবং ১৯৮১ সালে আঙ্কারায় বাংলাদেশের দূতাবাস প্রতিষ্ঠিত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

সামরিক শক্তি

তুরস্ক: নাম, ইতিহাস, রাজনীতি 
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের রিপোর্ট অনুযায়ী, সামরিক শক্তিতে তুরস্ক বর্তমানে বিশ্বের ১১তম রাষ্ট্র

সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী নিয়ে তুরস্কের প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠিত। জেন্ডারমেরি ও কোস্টগার্ডরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করলেও যুদ্ধের সময় এরা যথাক্রমে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর কমান্ড অনুসরণ করে। এ সময় বাহিনী দু’টিতে নিজস্ব আইন কার্যকর থাকলেও এরা সামরিক কিছু নিয়মকানুন মেনে চলে।

ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কের প্রতিরক্ষা বাহিনী হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেরই রয়েছে তুরস্কের চেয়ে বড় প্রতিরক্ষা শক্তি। তুরস্কে প্রতিরক্ষা বিভাগে মোট ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৫৫০ জন সামরিক সদস্য রয়েছে। ন্যাটোভুক্ত যে পাঁচটি দেশ যৌথ পরমাণু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তুরস্ক তার অন্যতম সদস্য। বাকি দেশগুলো হলো বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালি ও নেদারল্যান্ডস। প্রতিরক্ষা বিভাগকে আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে তুরস্ক ১৬ হাজার কোটি ডলারের কর্মসূচি গ্রহণ করে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিশনে তুর্কি বাহিনী কাজ করছে। জাতিসংঘ ও ন্যাটোর অধীনেই তারা বিভিন্ন মিশনে অংশ নিচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর অধীনে তুর্কি বাহিনীর সদস্যরা বর্তমানে সোমালিয়ায় কাজ করছে। এছাড়া সাবেক যুগোস্লাভিয়ায় শান্তি মিশনে ও প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধে যৌথ বাহিনীর সাথে সহায়তা করেছে। বর্তমানে তুর্কি স্বীকৃত সাইপ্রাসে ৩৬ হাজার তুর্কি সেনা দায়িত্ব পালন করছে এবং ন্যাটো নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সাথে ২০০১ সাল থেকে আফগানিস্তানেও দায়িত্ব পালন করছে তুর্কি সেনারা। ইসরাইল-লেবানন সঙ্ঘাত এড়াতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতায় ২০০৬ সালে সংশ্লিষ্ট এলাকায় তুরস্ক কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ ও ৭০০ সৈন্য মোতায়েন করে।

দেশটির সেনাপ্রধানকে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট। ২০১৮ সালের সংবিধান সংশোধনীর পর থেকে জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপারে দেশটির প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ নন। কোনো যুদ্ধ ঘোষণা, বিদেশে সৈন্য প্রেরণ কিংবা দেশের ভেতরে বিদেশী সৈন্যদের ঘাঁটি স্থাপন প্রত্যেকটি বিষয়েই রাষ্ট্রপতি অনুমোদন লাগে।

তুরস্কের বিমানবাহিনী তার প্রয়োজনের তুলনায় ক্ষুদ্র। বেশ কিছু ক্ষেত্রে মার্কিন নীতির বিরোধিতা করলেও দেশের বিমান বাহিনী মূলত ৯০টি একক আসনের একক ইঞ্জিনের মার্কিন এফ-১৬সি যুদ্ধ বিমানে সজ্জিত।

জনপরিসংখ্যান

তুরস্কে শতকরা কুর্দি জনসংখ্যা (২০১০)
ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় তুরস্কের প্রথম প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়।

তুরস্কের জনসংখ্যা প্রায় সাত কোটি ১৫ লাখ। দেশটির জন্মহার গড়ে ১ দশমিক ৩১। প্রতি বর্গকিলোমিটারে এর জনসংখ্যা ৯২ জন। এর মধ্যে শহরে বসবাস করে ৭০ দশমিক ৫ জন। ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী লোক রয়েছে ৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ। শূন্য থেকে ১৪ বছরে বয়সী লোকের সংখ্যা ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী লোকের সংখ্যা ৭ দশমিক ১ শতাংশ। সিআইএ ফ্যাক্টবুক অনুসারে তুর্কি পুরুষের গড় আয়ু ৭০ দশমিক ৬৭ বছর ও মহিলাদের গড় আয়ু ৭৫ দশমিক ৭৩ বছর। মোট জনসংখ্যার গড় আয়ু ৭৩ দশমিক ১৪ বছর।

শিক্ষা

৬ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক। শিক্ষার হার পুরুষের ৯৫ দশমিক ৩ শতাংশ ও নারীদের ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশ। গড় শিক্ষার হার ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ। তুর্কি সংবিধানের ৬৬ নম্বর আর্টিক্যাল অনুসারে, ‘তুরস্কের নাগরিকত্ব যাদের আছে তারাই তুর্কি বলে পরিচিত।

ভাষা

তুর্কি ভাষা তুরস্কের সরকারি ভাষা। এখানকার প্রায় ৯০% লোক তুর্কি ভাষাতে কথা বলেন। এছাড়াও এখানে আরও প্রায় ৩০টি ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে আদিগে,আরবি, আর্মেনীয়, আজারবাইজানি, জর্জীয়, কুর্দি (প্রায় ৪০ লক্ষ বক্তা), এবং রোমানি উল্লেখযোগ্য। আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে ইংরেজি ব্যবহার করা হয়।

সংস্কৃতি

তুরস্কের সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময়। গ্রিক, রোমান, ইসলামিক ও পশ্চিমা সংস্কৃতির মিশ্রণে তাদের একটি সংকর সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। অটোমান সম্রাটদের সময় তুরস্কে পশ্চিমা সংস্কৃতি ভিড়তে থাকে এবং আজও তা দেশটিতে অব্যাহত আছে। ১৯২৩ সালে তুরস্ক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সময় সাংস্কৃতিক জগতের আধুনিকায়নে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করা হয়। ললিতকলার বিভিন্ন শাখায় বিশেষ করে জাদুঘর, থিয়েটার, অপেরা হাউজ এবং অন্যান্য স্থাপত্যসহ বিভিন্ন শাখায় এসব বিনিয়োগ করা হয়।

শিল্প ও সাহিত্য

তুরস্ক: নাম, ইতিহাস, রাজনীতি 
উসমান হামদি বে'র আঁকা দ্য টরটইজ ট্রেইনার।

তুর্কি সাহিত্য ও অন্যান্য রচনায় ইসলামি বিশ্বের ছাপ স্পষ্ট। তুর্কি সাহিত্যে পারসিক ও আরব সাহিত্যের প্রভাব লক্ষ করা যায়। এক সময় তুর্কি লোকসাহিত্যে ইউরোপীয় সাহিত্যের প্রভাব বেড়ে গেলেও এখন তা আবার ধীরে ধীরে কমছে।

ধর্ম

সেমা চলাকালের দারভিশ (দরবেশ) নৃত্য।
তুর্কি রিভেরিয়াতেই এর অধিকাংশ বিচ রিসোর্ট অবস্থিত।

বর্তমানকালে তুরস্ক একটি সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষ দেশ যার কোনো রাষ্ট্রধর্ম নেই এবং সংবিধানে এর প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তায় গুরুত্তারোপ করা হয়েছে। তবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তুরস্কের ৯৬.৫ শতাংশ লোক ইসলাম ধর্মাবলম্বী ০.৩ শতাংশ খ্রিস্টান ও ৩.২ শতাংশ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে তুরস্কে ধর্মকে রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে পৃথক করা হয়। তবে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে দীর্ঘদিন পর সে ব্যবস্থায় আবার পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।

খেলাধুলা

তুরস্ক: নাম, ইতিহাস, রাজনীতি 
তুরস্কের জাতীয় বাস্কেটবল দল ২০১০ FIBA বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্য পদক অর্জন করে।

তুরস্কে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ফুটবল। ফুটবলে তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য হচ্ছে ২০০২ সালে জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অর্জন। সর্বশেষ সাফল্য হিসেবে তুরস্ক ফুটবল দলটি ২০০৮ সালের ইউরো কাপের সেমিফাইনালে উঠতে সক্ষম হয়। অন্যান্য খেলার মধ্যে বাস্কেটবল ও ভলিবল খেলা খুব জনপ্রিয়। ২০০১ সালে ইউরো বাস্কেটবলের আয়োজক দেশ ছিল তুরস্ক। ওই টুর্নামেন্টে তুরস্ক দল দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। এ ছাড়া ভলিবলেও তাদের অর্জন খুব ভালো। তবে তুরস্কের জাতীয় খেলা হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ইয়াগলি গুরেস বা অয়েলড রেসলিং। অটোমানদের সময় থেকেই এ খেলাকে জাতীয় খেলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তুরস্কের জাতীয় রেসলাররা বিশ্ব ও অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। এ ছাড়া অন্যান্য খেলার মধ্যে ভারোত্তোলন এবং মোটর রেসিং তুর্কিদের খুবই প্রিয়। ভারোত্তোলনে তুর্কিরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। এ ক্ষেত্রে তারা অলিম্পিক পদক ও ইউরোপিয়ান পদকও জিতেছে কয়েকবার।

আরও দেখুন

টীকা

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

    সাধারণ
    সরকারী
    ভ্রমণ
    অর্থনীতি

Tags:

তুরস্ক নামতুরস্ক ইতিহাসতুরস্ক রাজনীতিতুরস্ক প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহতুরস্ক ভূগোলতুরস্ক অর্থনীতিতুরস্ক পররাষ্ট্র ও দেশরক্ষা নীতিতুরস্ক জনপরিসংখ্যানতুরস্ক সংস্কৃতিতুরস্ক আরও দেখুনতুরস্ক টীকাতুরস্ক তথ্যসূত্রতুরস্ক আরও পড়ুনতুরস্ক বহিঃসংযোগতুরস্কআঙ্কারাআনাতোলিয়াইউরোপইস্তাম্বুলএজিয়ান সাগরকৃষ্ণ সাগরতুর্কি ভাষাদক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপদার্দানেলেস প্রণালীপশ্চিম এশিয়াবসফরাস প্রণালীমার্মারা সাগররাজধানীরাষ্ট্রশহর

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

কোষ বিভাজনযৌনপল্লিমূত্রনালীর সংক্রমণক্রিয়েটিনিনআকিজ গ্রুপইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগমুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভাইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতইব্রাহিম (নবী)চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়খন্দকার মোশতাক আহমেদঅর্শরোগচিরস্থায়ী বন্দোবস্তভাষা আন্দোলন দিবসওয়াহাবি আন্দোলনইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিবিজয় দিবস (বাংলাদেশ)০ (সংখ্যা)লোকসভা কেন্দ্রের তালিকাআতাসাইবার অপরাধতানজিম সাইয়ারা তটিনীআহল-ই-হাদীসপেশাসাতই মার্চের ভাষণআশারায়ে মুবাশশারাবাংলাদেশের অর্থনীতিমেটা প্ল্যাটফর্মসবাংলাদেশের উপজেলার তালিকাটাঙ্গাইল জেলামুহাম্মাদের বংশধারালোকনাথ ব্রহ্মচারীসতীদাহক্ষুদিরাম বসুফেসবুকন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালবাল্যবিবাহফরিদপুর জেলারশ্মিকা মন্দানামাবঙ্গবন্ধু সেতুবাঙালি জাতিশিবহানিফ সংকেতডায়মন্ড হারবারজাপানসার্বিয়াকৃত্তিবাস ওঝাসুন্নি ইসলামভাইরাসবাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদআদমআইজাক নিউটনইশার নামাজএশিয়াঅস্ট্রেলিয়াদৈনিক যুগান্তরওমাননিউটনের গতিসূত্রসমূহব্রিটিশ ভারতবৈশাখ১৭ এপ্রিলতাজউদ্দীন আহমদবাংলা সংখ্যা পদ্ধতিইউরোপীয় দেশগুলো ও অধীনস্থ ভূভাগের তালিকানাটকবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪শুক্রাণুহস্তমৈথুনসিলেট বিভাগমাওবাদবাংলাদেশের সংস্কৃতিবীর্যনারায়ণগঞ্জ জেলাআল্লাহর ৯৯টি নামরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম🡆 More