মালুকু দ্বীপপুঞ্জ

মালুকু দ্বীপপুঞ্জ বা মালাক্কাস (মালাকান ) হল পূর্ব ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপপুঞ্জ। গঠন অনুসারে এগুলো মালাক্কা সমুদ্রের সংঘর্ষ অঞ্চলের হালমহেরা প্লেটে অবস্থিত। ভৌগোলিকভাবে এগুলি সুলাওসির পূর্বে, নিউ গিনির পশ্চিমে এবং তিমুরের উত্তর এবং পূর্বে অবস্থিত। এখানে জায়ফল, জয়ত্রি এবং লবঙ্গ পাওয়া যায় বলে দ্বীপপুঞ্জগুলি মসলা দ্বীপপুঞ্জ হিসাবে পরিচিত ছিল। এ কারনে ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপীয়রা এখানে উপনিবেশের জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠে।

মালুকু দ্বীপপুঞ্জ
মালুকু দ্বীপপুঞ্জ
ভূগোল
অবস্থানপ্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়া
স্থানাঙ্ক৩°৯′ দক্ষিণ ১২৯°২৩′ পূর্ব / ৩.১৫০° দক্ষিণ ১২৯.৩৮৩° পূর্ব / -3.150; 129.383
মোট দ্বীপের সংখ্যা~১০০০
প্রধান দ্বীপসমূহহালমহেরা, ছেরাম, বুরু, আম্বন, তারনাত, তিদোর, আরু দ্বীপপুঞ্জ, কাই দ্বীপপুঞ্জ, লুসিপাড়া দ্বীপপুঞ্জ
আয়তন৭৪,৫০৫ বর্গকিলোমিটার (২৮,৭৬৭ বর্গমাইল)
সর্বোচ্চ উচ্চতা৩,০২৭ মিটার (৯,৯৩১ ফুট)
সর্বোচ্চ বিন্দুবিনাইয়া পাহাড়
প্রশাসন
প্রদেশসমূহমালুকু
উত্তর মালুকু
বৃহত্তর বসতিআম্বন, মালুকু
জনপরিসংখ্যান
জনসংখ্যা২,৮৪৪,১৩১ (2015)
জাতিগত গোষ্ঠীসমূহআলফুর, নুয়াউলু, বুগিস

মালুকু দ্বীপপুঞ্জ ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার একটি একক প্রদেশ ছিল। পরে দুটি প্রদেশে বিভক্ত হয়েছিল। মোরোটাই এবং সুলার নিয়ে নতুন প্রদেশ, উত্তর মালুকু ও বুরু এবং সেরাম থেকে ওয়েটার পর্যন্ত বাকী অংশ নিয়ে মালুকু প্রদেশ। উত্তর মালুকুতে মূলত মুসলিম জনসংখ্যা বেশি এবং এর রাজধানী হলমহেরা দ্বীপের সোফিফি। মালুকু প্রদেশে খ্রিস্টীয় জনসংখ্যা বেশি, এবং এর রাজধানী অ্যাম্বন। যদিও সপ্তদশ শতাব্দীতে ডাচ-পর্তুগিজ যুদ্ধের সময় মেলানেশিয়ান অনেক দ্বীপে, বিশেষত বান্দা দ্বীপপুঞ্জে গণহত্যা হয়েছিল যা মসলা যুদ্ধ নামেও পরিচিত। প্রাথমিকভাবে জাভা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্বিতীয় আগমন বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ডাচদের অধীনে শুরু হয়েছিল এবং ইন্দোনেশিয়ান যুগে চলছিল। ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে, মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মধ্যে বিরোধের ফলে হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং অর্ধ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।

ব্যুৎপত্তি

নামটি চৌদ্দ শতকের মাঝপাহিত স্তুতি, নাগরক্রেটগামাতে স্থানীয় ভাষায় "ষাঁড়ের মাথা" বা "বড় কোনও কিছুর মাথা" অর্থে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রশাসনিক বিভাগ

মালুকু দ্বীপপুঞ্জ ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ায় একক প্রদেশ ছিল, পরে উত্তর মালুকু এবং মালুকুতে বিভক্ত হয়েছিল।

উত্তর মালুকু প্রদেশের মধ্যে রয়েছে তারনাত (প্রাদেশিক রাজধানীর প্রাক্তন স্থান), তিদোর, বাকান এবং হালমহেরা (মালুকু দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম)।

ইতিহাস

মালুকু দ্বীপপুঞ্জ 
উইলেম ব্লেউ (১৬৩০) এর ম্যাপ

প্রাথমিক ইতিহাস

আরব বণিকরা চৌদ্দ শতকে এখানে ইসলাম প্রচারে এসেছিল। পার্বত্য অঞ্চলে এবং আরও বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলিতে আদিবাসীদের শত্রুতা থাকা সত্ত্বেও অনেক দ্বীপের বিশেষত বাণিজ্য কেন্দ্রগুলিতে বাসিন্দারা মুসলমান হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এখানে শুকরের মাংস খাওয়ার বা তার থেকে বিরত থাকার প্রমাণ হিসাবে প্রত্নতাত্ত্বিক শূকরের দাঁত উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

পর্তুগীজ

মালুকু দ্বীপপুঞ্জ 
সম্ভবত একটি ডাচ শিল্পীর আঁকা তারনেতের ছবি। ইনসেটে দ্বীপে পর্তুগিজ-নির্মিত দুর্গ দেখাচ্ছে ।
মালুকু দ্বীপপুঞ্জ 
মালুকু দ্বীপপুঞ্জের প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী নৌযান, ওরেম্বাই।

পর্তুগিজদের অস্তিত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী প্রভাব হল দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় বাণিজ্যে ব্যাহত হওয়া ও পুনর্গঠন এবং মালুকু-সহ পূর্ব ইন্দোনেশিয়ায় খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তন । পর্তুগিজরা ষোল শতকের গোড়ার দিকে মালাক্কা শহর-রাজ্য জয় করেছিল এবং তাদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি ছিল মালুকু এবং পূর্ব ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে। ১৫১১ সালের আগস্টে পর্তুগিজরা মালাক্কাকে অধিগ্রহণ করে।

আফনসো ডি আলবুকার্ক বান্দা দ্বীপপুঞ্জ এবং অন্যান্য 'মশলা দ্বীপপুঞ্জের' রুটের ব্যাপারে জানার পরে আন্তোনিও ডি অ্যাব্রেউ, সিমো আফোনসো বিসিগুডো এবং ফ্রান্সিসকো সেরিওর নেতৃত্বে তিনটি জাহাজের একটি অনুসন্ধান দল পাঠান। ফেরার সময় ১৫১২ সালে হিটু দ্বীপে (উত্তর অ্যাম্বন) সেরিওর জাহাজ ভেঙে পড়েছিল। সেখানে তিনি স্থানীয় শাসককে তাঁর সামরিক দক্ষতায় মুগ্ধ করে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। মালাক্কার ১৫১১ সালের সংঘাতের পরে জাভানিজ এবং মালয় যাত্রা সাময়িকভাবে ব্যাহত হওয়ার কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী দ্বীপরাষ্ট্র তারনেত এবং তিদোরের শাসকরাও আঞ্চলিক বাণিজ্যের এই নিস্তেজ সময়ে পর্তুগিজদের সরবরাহ এবং মশলা ক্রেতা হিসেবে চেয়েছিলেন এবং নতুন আগতদের এই অঞ্চলে স্বাগত জানিয়ে ছিলেন। মশালার বাণিজ্য শীঘ্রই চালু হয়েছিল কিন্তু পর্তুগিজরা এই বাণিজ্যে পুরোপুরি একচেটিয়া থাকতে বা বিঘ্নিত করতে পারে নি।

তারনেতের শাসকের সাথে নিজেকে যুক্ত করে সেরিও সেই ছোট দ্বীপে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন এবং মশালার বেশিরভাগ ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণকারী দুটি স্থানীয় সামন্ত সুলতানের একজনের অধীনে ভাড়াটে পর্তুগিজ জলদস্যু দলের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেরিও এবং ফার্দিনান্দ ম্যাগেলান উভয়ই একে অপরের সাথে দেখা হওয়ার আগেই মারা গিয়েছিলেন।

পর্তুগিজরা ১৫১৩ সালে প্রথমে অ্যাম্বনে নামে, যা তারনেত থেকে বহিষ্কারের পর মালুকুতে তাদের ক্রিয়াকলাপের জন্য নতুন কেন্দ্রে পরিনত হয়। এই অঞ্চলে ইউরোপীয় শক্তি দুর্বল ছিল এবং সুলতান বাব উল্লাহ (১৫৭০-১৫৮৩) এবং তাঁর পুত্র সুলতান সাইদী বরকত (১৫৮৩-১৬০৬) এর শাসনামলে টেরনেট প্রসারিত, মারাত্মকভাবে ইসলামী এবং ইউরোপীয় বিরোধী রাষ্ট্র হয়ে ওঠে।

পর্তুগিজ মিশনারিদের জন্য, পূর্ব ইন্দোনেশিয়ায় সমসাময়িক সময় পর্যন্ত খ্রিস্টান সম্প্রদায় বড় হয় যা ইউরোপীয়দের সাথে বিশেষত অ্যাম্বোনিকদের আগ্রহী করে তোলে।

মালুকু দ্বীপপুঞ্জ 
১৮৪৬ সালে সাপারুয়ায় ফোর্ট ডুরসিটে

ত্তলন্দাজ

ওলন্দাজরা ১৫৯৯ সালে এই অঞ্চলে আসে এবং পর্তুগিজদের সাথে বাণিজ্যের জন্য প্রতিযোগিতা করেছিল। ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তারানেতের সুলতানকে মিত্র করে ১৬০৫ সালে অ্যাম্বন এবং তিদোরকে জয় করে, পর্তুগিজদের তাড়ায়. ফিলিপিন থেকে একটি স্পেনীয় পাল্টা আক্রমণ মালুকুর কিছু অংশে ১৬৬৩ অবধি আইবেরিয়ান শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। তবে ওলন্দাজরা নির্মম ভাবে মশালার উৎপাদন ও বাণিজ্যকে পরিচালনা করত। এর মধ্যে রয়েছে ১৬২১ সালে জায়ফল উৎপাদনকারী বান্দা দ্বীপপুঞ্জের গণহত্যা বিজয়, ১৬২৩ সালে অ্যাম্বনে ইংরেজদের নির্মূল এবং ১৬৫০ এ তারনেত এবং তিদোরের অধীনস্থতা। ১৭৮০-১৮১০ সালে তিদোরের রাজপুত্র নুকুর নেতৃত্বে একটি উপনিবেশ বিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলন মালুকু এবং পাপুয়ার বৃহত অংশে চলে এবং এতে ব্রিটিশদের সমর্থন ছিল। ১৭৯৬-১৮০১ সালে ফরাসী বিপ্লব যুদ্ধের সময় এবং ১৮১০ সালে নেপোলিয়োনিক যুদ্ধেও , ব্রিটিশ বাহিনী দ্বীপগুলি দখল করে নেয় এবং ১৮১৭ পর্যন্ত দখলে রেখেছিল। সেই সময় তারা সমগ্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্য জুড়ে প্রতিস্থাপনের জন্য অনেক মশালাদার গাছ উপড়ে ফেলেছিল।

মালুকু দ্বীপপুঞ্জ 
তানিমবার যোদ্ধা

ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতার পরে

১৯৫০ সালে ইন্দোনেশিয়ার একক প্রজাতন্ত্রের ঘোষণার সময় ফেডারেল রাষ্ট্রটি প্রতিস্থাপন করতে, ক্রিস সৌমোকিল (পূর্ব ইন্দোনেশিয়া রাজ্যের প্রাক্তন সুপ্রিম প্রসিকিউটর) নেতৃত্বে এবং নেদারল্যান্ডসের বিশেষ বাহিনীর মলুকান সদস্যদের সমর্থনে দক্ষিণ মালুকু প্রজাতন্ত্র (প্রজাতন্ত্রী মালুকু সেলাতান, আরএমএস) ঘোষিত হয়েছিল এবং আলাদা করার চেষ্টা করা হয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এই আন্দোলনটি ইন্দোনেশীয় সেনাবাহিনী দমন করে এবং নেদারল্যান্ডের সাথে বিশেষ চুক্তির মাধ্যমে সেনাবাহিনী নেদারল্যান্ডে ফেরত পাঠায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

১৯৪৫ সালে ঘোষণার পর থেকে মালুকু ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রদেশগুলির মধ্যে একটি ছিল, ১৯৯১ এ মালুকু উটারা এবং হালমহেরা টেংগা রিজেন্সিগুলি আলাদা হয়ে উত্তর মালুকু প্রদেশ গঠন করে। এর রাজধানী ছিল বিশাল হালমাহেরা দ্বীপের পশ্চিমে একটি ছোট দ্বীপ তারনেট , পরে হালমহেরার সোফিফিতে সরানো হয়। মালুকু প্রদেশের অবশিষ্ট অংশের রাজধানী অ্যাম্বন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

১৯৯৯-২০০৩ আন্ত-সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব

১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে ধর্মীয় সংঘাতের শুরু হয়। পরবর্তী ১৮ মাস মুসলমান এবং খ্রিস্টানদের স্থানীয় দলগুলির মধ্যে লড়াই চলে, কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস, প্রায় ৫০০,০০০ লোকের বাস্তুচ্যুতি, হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং মুসলিম এবং খ্রিস্টানরা আলাদা হয়ে যায়।

ভূতত্ত্ব এবং ভূগোল

মালুকু দ্বীপপুঞ্জ 
ওয়ালেসার মানচিত্র; উপরের ডানদিক হল উত্তর। লাল রেখাটি ওয়ালাসিয়ার পশ্চিম সীমান্তকে বোঝায়। পূর্ব সীমানা কিছুটা অস্ট্রেলিয়া – নিউ গিনি শেল্ফের সাথে মিলে যায়।

মালুকু দ্বীপপুঞ্জের মোট আয়তন ৮৫০,০০০ বর্গকিলোমিটার, যার ৯০ ভাগ সমুদ্র। আনুমানিক ১০২৭ টি দ্বীপ রয়েছে। বৃহত্তম দুটি দ্বীপ, হালমহেরা এবং ছেরাম খুব কম জনবহুল, সর্বাধিক উন্নত অ্যাম্বন এবং তারনেত ছোট

বেশিরভাগ দ্বীপপুঞ্জই বনভূমি এবং পর্বতময়। তানিমবার দ্বীপপুঞ্জটি শুষ্ক ও পাহাড়ী এবং অরু দ্বীপপুঞ্জ সমতল এবং জলাবদ্ধ। ছেরামের বিনাইয়া (৩০২৭ মি) পর্বতটি সর্বোচ্চ পর্বত। বেশ কয়েকটি দ্বীপ, যেমন তারনেত (১৭২১ মি) এবং টিএনএস দ্বীপপুঞ্জ, সমুদ্র থেকে উদ্ভূত আগ্নেয়গিরি, উপকূলের আশেপাশে গ্রামে অবস্থিত। গত ৫০০ বছরে ৭০ টিরও বেশি মারাত্মক আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ঘটেছে এবং ভূমিকম্প প্রায়ই ঘটে।

মালুকু দ্বীপপুঞ্জ 
তারনেত দ্বীপ, যেমনটি হালমহেরা থেকে দেখা যায়

মালুকু দ্বীপপুঞ্জের ভূতত্ত্ব নুসা টেংগারা অঞ্চলের সাথে মিলে। ইন্দোনেশীয় উপনিবেশিক কাল থেকেই এই অঞ্চলগুলির ভূতাত্ত্বিক গবেষণা চলছে; তবে ভূতাত্ত্বিক গঠন এবং অগ্রগতি পুরোপুরি বোঝা যায় নি এবং সাম্প্রতিক দশকে দ্বীপের ভূতাত্ত্বিক বিবর্তনের তত্ত্বগুলি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। চারটি ভূতাত্ত্বিক প্লেট এবং দুটি মহাদেশীয় ব্লকের মিটিং পয়েন্টে তাদের অবস্থানের জন্য মালুকু দ্বীপপুঞ্জ হল বিশ্বের সবচেয়ে ভূতাত্ত্বিক জটিল এবং সক্রিয় অঞ্চল।

বায়োটা এবং পরিবেশ

জীবভূগোল অনুসারে, অরু পুঞ্জ বাদে সমস্ত দ্বীপপুঞ্জ সুন্দা শেল্ফের (এশিয়া ব্লকের অংশ) এবং আরাফুরা শেল্ফের (অস্ট্রেলিয়ান ব্লকের অংশ) মাঝে ওয়ালেসায় অবস্থিত। আরও নির্দিষ্টভাবে, তারা ওয়েবারের লাইন এবং ল্যাডেক্কার্স লাইনের মধ্যে থাকে, এবং এখানে এশিয়ান-অস্ট্র্রালিয়ান জাতীয় একটি প্রাণীকুল রয়েছে। মালুকানের জীব বৈচিত্র্য এবং বণ্টন বিভিন্ন টেকটোনিক ক্রিয়াকলাপ দ্বারা প্রভাবিত। বেশিরভাগ দ্বীপপুঞ্জ ভূতাত্ত্বিকভাবে তরুণ, ১ মিলিয়ন থেকে ১৫ মিলিয়ন বছর পুরানো, এবং ভূমির সাথে কখনও সংযুক্ত হয়নি। মালুকু দ্বীপপুঞ্জ ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল থেকে আলাদা; এতে দেশের কয়েকটি ছোট দ্বীপ রয়েছে, প্রবাল দ্বীপের প্রাচীরগুলি বিশ্বের কয়েকটি গভীর সমুদ্রের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, এবং জাভা বা সুমাত্রার মতো কোনও বড় দ্বীপ নেই। দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে উদ্ভিদ এবং প্রাণিকুলের অভিবাসন সীমাবদ্ধ থাকায় স্থানীয় বায়োটা সর্বোচ্চ বিকশিত হচ্ছে।

মালুকু দ্বীপপুঞ্জের বাস্তুশাস্ত্র বহু শতাব্দী ধরে প্রকৃতিবিদদের মুগ্ধ করেছে; আলফ্রেড ওয়ালেসের বই, দ্য মালয় দ্বীপপুঞ্জ, এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ইতিহাসের প্রথম উল্লেখযোগ্য বই এবং ইন্দোনেশিয়ান জীব বৈচিত্র্য অধ্যয়নের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। জর্জ এবারহার্ড রাম্পিউস এর প্রাকৃতিক ইতিহাসের উপর দুটি প্রধান ঐতিহাসিক রচনা হার্বেরিয়াম অ্যামবিনেন্স এবং অ্যাম্বোইনশে রারিটিটকেমার এর বিষয় হল মালুকু।

উত্তর এবং মধ্য মালুকুর বেশিরভাগ অংশ জুড়ে বৃক্ষরোপণ, স্থানীয় লবঙ্গ এবং জায়ফলের এলাকাসহ ছোট দ্বীপগুলিকে ঘনবর্ষণ বনাঞ্চল বানিয়েছে। তানিমবার দ্বীপপুঞ্জ এবং অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব দ্বীপপুঞ্জ শুকনো এবং খুব কম গাছপালাযুক্ত, অনেকটা পার্শ্ববর্তী তিমুরের মতো। বিপন্ন প্রজাতির সুরক্ষার জন্য ১৯৯৭ সালে মানুসেলা জাতীয় উদ্যান এবং ২০০৪ সালে আকতাজাও-ললোবাতা জাতীয় উদ্যানটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

মালুকু দ্বীপপুঞ্জ 
আলফ্রেড ওয়ালেসের (১৮৬৯) মালয় দ্বীপপুঞ্জ, কিং এবং বারো-তারযুক্ত বার্ড-অফ-প্যারাডাইস

নিশাচর শাবকবাহী জীব, যেমন কুসকাস এবং এক জাতীয় বড় ইদুঁর নিয়ে স্তন্যপায়ী প্রজাতির বেশিরভাগ অংশ এবং প্রবর্তিত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে মালায়ান গন্ধগোকুল এবং বন্য শুকর রয়েছে. পাখির প্রজাতিগুলিতে হালমহেরা এবং সেরামের বড় দ্বীপগুলিতে সর্বাধিক বৈচিত্র সহ প্রায় ১০০ টি স্থানীয় প্রজাতি রয়েছে। উত্তর মালুকুতে বার্ড অফ প্যারাডাইস বর্গের দুটি স্থানীয় প্রজাতির পাখি রয়েছে। মালুকু দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে অনন্যভাবে, অরু দ্বীপপুঞ্জে ক্যাঙ্গারু, এমুজাতীয় বড় পাখি এবং বার্ড অফ প্যারাডাইস বর্গ সহ পুরোপুরি পাপুয়ান প্রাণীকূল রয়েছে।

অনেক পরিবেশগত সমস্যা ছোট দ্বীপপুঞ্জ এবং বড় ভুমি উভয়কেই প্রভাবিত করে, ছোট দ্বীপপুঞ্জগুলি বিশেষ সমস্যা ভোগ করে। ছোট দ্বীপগুলিতে বিকাশের চাপ বাড়লেও সবসময় কার্যকর হয় না। ইন্দোনেশিয়া প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও, মালুকুর ছোট দ্বীপগুলিতে সংস্থান সীমিত ফলে মানব সম্পদও সীমিত।

মালুকু দ্বীপপুঞ্জে প্রয়োগ করা যেতে পারে এমন কিছু সাধারণ পর্যবেক্ষণ (ছোট দ্বীপপুঞ্জ সম্পর্কে)

  • ভুমির অধিকাংশ আগ্নেয়গিরির ক্রিয়াকলাপ, ভূমিকম্প, ভূমিধস এবং ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত ;
  • জলবায়ু সমুদ্রের জন্য প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি;
  • নিষ্কাশন অববাহিকা খুব ছোট এবং ক্ষয় বেশি;
  • বেশির ভাগ ভুমি উপকূলীয় অঞ্চল নিয়ে গঠিত;
  • অধিকাংশ স্থানীয় প্রজাতিসহ পরিবেশগত বিশেষায়িতকরণের একটি বড় অংশ নিয়ে দরিদ্র বাস্তুসংস্থান গঠিত;
  • সমাজগুলো সংস্কৃতির জোরালে প্রভাবের জন্য তুলনামূলকভাবে বিছিন্ন।
  • ক্ষুদ্র দ্বীপের জনসংখ্যা অর্থনৈতিক কারনে স্থানান্তর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

জলবায়ু

মধ্য ও দক্ষিণ মালুকু দ্বীপপুঞ্জে অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে গ্রীষ্মকাল এবং মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত বর্ষাকাল, যা ইন্দোনেশিয়ার বাকি অংশগুলির বিপরীত। গ্রীষ্মকাল গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বর্ষায় গড় সর্বোচ্চ ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তর মালুকুতে ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য অংশের সাথে মিল রেখে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বর্ষাকাল। প্রতিটি দ্বীপপুঞ্জের নিজস্ব জলবায়ু বৈচিত্র রয়েছে । বড় দ্বীপগুলিতে শুকনো উপকূলীয় নিম্নভূমি এবং পার্বত্য অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ অঞ্চলগুলি ভেজা থাকে।

জনসংখ্যা-বিষয়ক

মালুকু দ্বীপপুঞ্জ 
USNS Mercy (T-AH-19) ভাসমান হাসপাতালের ভ্রমনের সময় তিদোরের জনগণ

মালুকুর জনসংখ্যা প্রায় ২ মিলিয়ন, ইন্দোনেশিয়ার জনসংখ্যার ১% এরও কম।

একসময় এই দ্বীপগুলিতে ১৩০ টিরও বেশি ভাষায় কথা বলা হত; তবে অনেকেই এখন ক্রিওল ভাষার উত্তর এবং দক্ষিণ মালুকুর লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা তারনেতের মালয় এবং আম্বনের মালয় ভাষায় কথা বলে।

বাণিজ্য ও সমুদ্রে ভ্রমণের দীর্ঘ ইতিহাসের ফলে মালুকানদের মধ্যে একটি উচ্চ মাত্রার মিশ্র বংশধর দেখা যায়। খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে অস্ট্রোনীয় জনগণ মেলানেশিও জনসংখ্যার সাথে যুক্ত হয়েছিল। মেলানেশীয় বৈশিষ্ট্যগুলি কেই ,অরু ,সেরাম এবং বুরু দ্বীপপুঞ্জগুলির লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। পরবর্তীতে এই অস্ট্রোনীয়-মেলানেশিয়ান মিশ্রণে কিছু ভারতীয় ও আরব বংশ যুক্ত হয়েছিল। সাম্প্রতিক আগমনকারীদের মধ্যে সুলাওসি এবং জাভানিজ ট্রান্সমিগ্র্যান্টস থেকে আগত বুগিস ব্যবসায়ী বসতি স্থাপন করেছে।

অর্থনীতি

কোকো, কফি এবং ফলের সাথে লবঙ্গ এবং জায়ফল এখনও চাষ করা হয়। মাছ ধরা দ্বীপপুঞ্জে, বিশেষত হালমহেরা এবং বেকান জুড়ে একটি বড় শিল্প। অরু দ্বীপপুঞ্জ মুক্তো উৎপাদন করে এবং ছেরাম লবস্টার রফতানি করে। লগিং(গাছ পরিবহনযোগ্য খণ্ডে কাটা) বৃহত্তর দ্বীপপুঞ্জের একটি উল্লেখযোগ্য শিল্প। ছেরামে লোহার কাঠ এবং সেগুন ও বুরুতে আবলুস উৎপাদন করে।

তথ্যসূত্র

টীকা

সার্বিক

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

Tags:

মালুকু দ্বীপপুঞ্জ ব্যুৎপত্তিমালুকু দ্বীপপুঞ্জ প্রশাসনিক বিভাগমালুকু দ্বীপপুঞ্জ ইতিহাসমালুকু দ্বীপপুঞ্জ ভূতত্ত্ব এবং ভূগোলমালুকু দ্বীপপুঞ্জ বায়োটা এবং পরিবেশমালুকু দ্বীপপুঞ্জ জলবায়ুমালুকু দ্বীপপুঞ্জ জনসংখ্যা-বিষয়কমালুকু দ্বীপপুঞ্জ অর্থনীতিমালুকু দ্বীপপুঞ্জ তথ্যসূত্রমালুকু দ্বীপপুঞ্জ আরও পড়ুনমালুকু দ্বীপপুঞ্জ বহিঃসংযোগমালুকু দ্বীপপুঞ্জ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

শেষের কবিতাবাংলাদেশ নৌবাহিনীতরমুজকুমিল্লা জেলাকালো জাদুআতিকুল ইসলাম (মেয়র)প্রযুক্তিআনারসওয়ালাইকুমুস-সালামঅসমাপ্ত আত্মজীবনীওমানঅশ্বত্থকোষ বিভাজনকলাম্যালেরিয়াবিশ্ব বই দিবসমুহাম্মাদের সন্তানগণবিশ্ব ব্যাংকবাংলাদেশের জেলাকুরআনের সূরাসমূহের তালিকাসুভাষচন্দ্র বসুকমনওয়েলথ অব নেশনসজোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনভাষারাজস্থান রয়্যালসসমাজরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৮৬১–১৯০১)সেলজুক সাম্রাজ্যমুদ্রাস্ফীতিউত্তম কুমারবিজ্ঞাপনদর্শনবৃহস্পতি গ্রহকবিতাবাংলাদেশ আওয়ামী লীগপশ্চিমবঙ্গের জেলাচ্যাটজিপিটিফেসবুকইন্দোনেশিয়াআগ্নেয় শিলাপলাশীর যুদ্ধমুহাম্মাদের বংশধারাডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসিসংস্কৃত ভাষাযৌন প্রবেশক্রিয়াইতালিজনি সিন্সদৈনিক যুগান্তরসৌরজগৎন্যাটোপশ্চিমবঙ্গক্লিওপেট্রামিয়ানমারবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীরাগ (সংগীত)মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ময়মনসিংহসহজ পাঠ (বই)দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাবাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের তালিকাভৌগোলিক আয়তন অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাজিয়াউর রহমানবৌদ্ধধর্মব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাবীর শ্রেষ্ঠজাকির নায়েকআকিজ গ্রুপইউরোপসহীহ বুখারীসুকুমার রায়উপজেলা পরিষদসন্ধিজলবায়ুহনুমান জয়ন্তীবৃষ্টিবিজ্ঞানসার্বজনীন পেনশন🡆 More