খ্রিস্টাব্দ: পশ্চিমা পঞ্জিকা সাল

খ্রিস্টাব্দ (খ্রি.) এবং খ্রিস্টপূর্বাব্দ (খ্রি.পূ.) শব্দ দুটো জুলীয় বর্ষপঞ্জি ও গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির বছর গণনার জন্য ব্যবহৃত হয়। খ্রিস্টাব্দ শব্দটি মূলত মধ্যযুগীয় লাতিন শব্দ অ্যানো ডোমিনি (Anno Domini) এর পরিভাষা যার অর্থ ঈশ্বরের বছর, তবে প্রায় সময় এর স্থলে আমাদের ঈশ্বরের বছর ব্যবহৃত হয়। এটি লাতিন ব্যাকাংশ অ্যানো ডোমিনি নস্ট্রি জেসু ক্রিস্টি থেকে নেওয়া হয়েছে যার অনূদিত বাক্য হচ্ছে আমাদের ঈশ্বর যিশু খ্রিষ্টের বর্ষ।

খ্রিস্টাব্দ: ইতিহাস, যিশুর জন্ম তারিখ, অন্যান্য সাল
অস্ট্রিয়ার ক্লেজেনফুর্ট ক্যাথেড্রালে একটি খ্রিস্টাব্দ যুক্ত ফলক

এই পঞ্জিকা সাল যিশুর জন্মের মতবাদের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে যা যুগ শুরুর পরের বছরের সংখ্যার সাথে খ্রিষ্টাব্দ (ইংরেজিতে AD) ও যুগের পূর্বের বর্ষ সংখ্যার সাথে খ্রিষ্টপূর্ব কিংবা খ্রিষ্টপূর্বাব্দ (ইংরেজিতে BC) বসানোর মাধ্যমে নির্দেশ করা হয়। এই বর্ষ যুগ পদ্ধতিতে কোন শূন্য বর্ষ নেই বরঞ্চ ১ খ্রিস্টাব্দের পূর্বের বছরটিকে ১ খ্রিস্টপূর্ব বলা হয়। এই বর্ষ গণনা যুগটি সিথিয়া মাইনরের ডায়োনিসিয়াস এক্সিগুয়াস কর্তৃক ৫২৫ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত হয় যা নবম শতাব্দীর পূর্বে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়নি।

ঐতিহ্যগতভাবে ইংরেজি ভাষায় বর্ষ সংখ্যার পূর্বে "এডি" শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে লাতিন শব্দ ব্যবহারের অলিখিত নিয়ম পালন করা হয়, যদিও এডি শব্দটি বর্ষ সংখ্যার পরে বসানো হয়ে থাকে। বিপরীতে বিসি শব্দটি সবসময় বর্ষ সংখ্যার পরে বসাতে হয় (উদাহরণ: এডি ২০২৪, কিন্তু ৬৮ বিসি), যা বাক্যধারা মেনে চলে। খ্রিস্টাব্দ ও খ্রিষ্টপূর্ব শব্দ দুটি ইংরেজিতে বহুলভাবে শতাব্দী বা সহস্রাব্দের সাথেও ব্যবহৃত হয় কিন্তু কেউ কেউ শতাব্দী বা সহস্রাব্দের সাথে এর ব্যবহারের সমালোচনা করেন।

পারিভাষিক ব্যবহার অনুসারে অ-খ্রিষ্টীয় লোকজন ইংরেজিতে এডি এর বদলে কমন এরা (CE) এবং বিসি এর বদলে "বিফোর কমন এরা" (BCE) ব্যবহার করে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় বর্ষ সংখ্যা পদ্ধতি ও আইএসও ৮৬০১-এ খ্রিষ্টান ধর্ম সম্পর্কিত শব্দাংশ পরিহার করে খ্রিষ্টানদের ন্যায় একই বর্ষ সংখ্যা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। খ্রিষ্টপূর্ব বর্ষের ক্ষেত্রে জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় সংখ্যা ব্যবহৃত হয় যেমন ১ বিসি কে ০, ৪৫ বিসি কে -৪৪ ইত্যাদি।

বাংলা ভাষায় এডি কে খ্রিস্টাব্দ এবং বিসি-কে খ্রিস্টপূর্ব ব্যবহার করার ফলে যেকোনো ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি এই শব্দ দুটি ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন কেননা এই দুটি বাংলা শব্দের ক্ষেত্রে ঈশ্বর বা ঈশ্বর সংক্রান্ত শব্দের পরিবর্তে খ্রিস্ট (মশিহ) ব্যবহার করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ইতিহাস

অ্যানো ডোমিনি তথা খ্রিস্টাব্দ পঞ্জিকা যুগটি ডায়োনিসিয়াস এক্সিগুয়াস দ্বারা পুনরুত্থান পার্বণ সারণীর বছর গণনার উদ্দেশ্যে ৫২৫ সালে প্রণয়ন করা হয়। তিনি এই ব্যবস্থাটি প্রণয়নের দ্বারা ডিওক্লেটীয় সালকে প্রতিস্থাপিত করতে চেয়েছিলেন যা পুরনো পুনরুত্থান পার্বণ সারণীতে ব্যবহার হয়ে আসছিলো কেননা তিনি কোন অত্যাচারীর স্মৃতি রাখতে চাননি যে খ্রিস্টানদের উপর নির্যাতন চালিয়েছিলো। ডিওক্লেটীয় শহীদদের যুগ (লাতিন: Anno Martyrium) ২৪৭ সাল তথা পুরনো সারণীর শেষ বছরটি অবিলম্বে খ্রিস্টাব্দ ৫৩২ তথা তার সারণীর প্রথম বছর দ্বারা অনুসৃত হয়। যখন ডায়োনিসিয়াস তার সারণী প্রণয়ন করে তখন জুলীয় বর্ষপঞ্জির বছরগুলো রোমক অধিনায়কীয়দের গদিপ্রাপ্তির বছর দ্বারা চিহ্নিত হতো। ডায়োনিসিয়াস নিজে বিবৃতি দেন যে "বর্তমান বছর ছিলো প্রবুস জুনিয়র এর প্রতিনিধিত্বের সময়, যা আমাদের প্রভু যিশু খ্রিস্টের আবির্ভাবের ৫২৫ বছর পর।" এর মাধ্যমে ডায়োনিসিয়াস নির্দিষ্ট বছর ব্যতিরেক ইঙ্গিত করেন যে যিশুর মনুষ্য রূপে আবির্ভাব হয়েছিলো ৫২৫ বছর পূর্বে। "যদিও, সারণীর কোথাও ডায়োনিসিয়াস যিশু নির্ভর সালের সাথে অন্যান্য সালের কোন সম্পর্ক দেখাননি যেমন, অধিনায়কীয় সাল, অলিম্পিয়াড সাল, সৃষ্টাব্দ, বা সম্রাট অগাস্টাসের শাসনের সাল এমনকি তিনি তার সাল হিসাবের কোন ব্যাখ্যা বা কারণ বর্ণনা করেননি।

বনি জে. ব্ল্যাকবার্ন এবং লিওফ্র‍্যাংক হলফোর্ড-স্ট্রিফেন্স বিস্তারিতভাবে ২ খ্রিস্টপূর্ব, ১ খ্রিস্টপূর্ব বা ১ খ্রিস্টপূর্বকে ডায়োনিসিয়াসের যিশুর জন্ম বা আবির্ভাবের বছর হিসেবে গ্রহণ করার বিতর্ক পেশ করেছে। উৎসগুলোর মধ্যে সমস্যাগুলো নিম্নরূপ:

  • আধুনিক যুগে মনুষ্য দেহে আবির্ভাবকে এর আক্ষরিক অর্থে দেখা হলেও কিছু প্রাচীন যুগের লেখক, যেমন বিড, আবির্ভাবকে জন্মগ্রহণের সমার্থক হিসেবে ধরতেন।
  • বেসামরিক বা অধিনায়কীয় বছর শুরু হতো ১ জানুয়ারিতে, কিন্তু ডিওক্লেটীয় সাল শুরু হতো ২৯ আগস্ট (অধিবর্ষের পূর্বের বছরে ৩০ আগস্ট)।
  • রোমক অধিনায়কীয়দের তালিকায় ত্রুটি বিদ্যমান।
  • সম্রাটদের শাসন করার বছরের হিসাবে বিভ্রান্তি বিদ্যমান।

এটা জানা যায়নি কীভাবে ডায়োনিসিয়াস যিশুর জন্মের বছর নির্ধারণ করেছেন। দুটো প্রধান তত্ত্ব রয়েছে যার প্রথমটি হলো ডায়োনিসিয়াস সন্ত লূকের সুসমাচারে উল্লেখিত "তাইবেরিয়াস সিজারের পনেরো তম বছরের শাসনামলে কিছু পরে যিশুর ত্রিশ বছর বয়স হওয়া" এর বর্ণনা থেকে ত্রিশ বছর বিয়োগ করে হিসেব করেছেন, অথবা দ্বিতীয় তত্ত্ব অনুসারে ডায়োনিসিয়াস তার নতুন সারণীর প্রথম বছর থেকে ৫৩২ বছর বিয়োগ করে নির্ণয় করেছেন। জর্জেস ডেকলার্ক অনুমান করেন যে ডায়োনিসিয়াসের ডিওক্লেটীয় সালকে যিশুর জন্মনির্ভর সাল দ্বারা প্রতিস্থাপিত করার উদ্দেশ্য ছিলো মানুষকে আসন্ন পৃথিবীর ধ্বংসের বিশ্বাস থেকে দূরে রাখা। সেই সময় খ্রিস্টানদের একটা অংশ বিশ্বাস করতো যে যিশুর জন্মের ৫০০ বছর পরে পুনরুত্থানের ঘটনা ঘটবে। পুরনো সৃষ্টাব্দ ব্যবস্থা আদিপুস্তকের মহাবিশ্ব সৃষ্টির ঘটনার উপর ভিত্তি করে নির্মিত। এটা বিশ্বাস করা হতো যে যিশু ৫৫০০ সৃষ্টাব্দে জন্মেছেন এবং ৬০০০ সৃষ্টাব্দে পৃথিবী ধ্বংস হবে। ৬০০০ সৃষ্টাব্দকে (আনুমানিক ৫০০ খ্রিস্টাব্দ) পৃথিবীর শেষ বলা হতো। কিন্তু এই সালটি ডায়োনিসিয়াসের সময় ইতিমধ্যে পার হয়ে গিয়েছিলো। নবম শতাব্দীর নিনিয়াসের লেখা "হিস্টোরিয়া ব্রিটোনিয়াম" বইয়ে লেখক অ্যানো প্যাশনিস (AP) এর ব্যবহার করেন যা খ্রিস্টাব্দের মতো সবার নিকট পরিচিত ছিলো। এপি ব্যবস্থা 'যীশুর দুঃখভোগের বছর' থেকে শুরু হয়। গবেষকদের দ্বারা এটি সাধারণভাবে স্বীকৃত যে এপি এবং এডি (খ্রিস্টাব্দ) এর মধ্যে ২৭ বছরের পার্থক্য রয়েছে।

জনপ্রিয়করণ

অ্যাংলো-স্যাক্সন ইতিহাসবিদ শ্রদ্ধেয় সন্ত বিড, যিনি ডায়োনিসিয়াস এক্সিগুয়াসের কর্মের সাথে পরিচিত, ৭৩১ সালে সম্পন্ন করা তার এক্লিজিঅ্যাস্টিক্যাল হিস্ট্রি অব দি ইংলিশ পিপল বইটিতে খ্রিস্টাব্দ ব্যবহার করেন। ইতিহাস অংশে তিনি লাতিন "খ্রিস্টপূর্ব" শব্দের প্রায় সমার্থক ব্যাকাংশ আন্তে [...] ইনকারনেশনিস ডোমিনিকায় টেম্পুস অ্যানো সেক্সাগেসিমো ("প্রভুর আবির্ভাবের সময়ের ষাটতম বছর পূর্বে") ব্যবহার করেন যা সেই সালের প্রথম বছরের পূর্ব সময়কে চিহ্নিত করে। ডায়োনিসিয়াস ও বিড দুজনই খ্রিস্টাব্দকে যিশু খ্রিস্টের মনুষ্য দেহে আবির্ভাবের বছর হিসেবে বিবেচনা করেন, কিন্তু মনুষ্য দেহে আবির্ভাব এবং জন্মের পার্থক্য নবম শতাব্দীর আগে করা হয়নি, আবার কিছু স্থানে আবির্ভাবের সাল খ্রিস্টের জন্ম ঘোষণা দ্বারা চিহ্নিত হত, উদাহরণ ২৫ শে মার্চের যিশুর জন্মের ঘোষণা দিবস।

খ্রিস্টাব্দ: ইতিহাস, যিশুর জন্ম তারিখ, অন্যান্য সাল 
ভ্যাটিকেনের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় আগোস্টিনো কর্নাকচিনি দ্বারা নির্মিত শার্লমাইনের ভাষ্কর্য (১৭২৫)। শার্লমাইন ক্যারোলিংশীয় সাম্রাজ্যে খ্রিস্টাব্দ ব্যবহারে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেছিলো।

ইউরোপ উপমহাদেশে খ্রিস্টাব্দ পদ্ধতিটি ক্যারোলিংশীয় মহাজাগরণের পঞ্জিকা যুগ নির্বাচন হিসেবে অষ্টম শতাব্দীর ইংরেজ আমলা ও পণ্ডিত আলকুইন দ্বারা পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। শার্লমাইন কর্তৃক খ্রিস্টাব্দ ব্যবহারের অনুমোদন এবং তার উত্তরাধিকারীদের দ্বারা এই পঞ্জিকা যুগের সাম্রাজ্য জুড়ে জনপ্রিয়করণ নিশ্চিতভাবেই সরকারি ব্যবস্থাপনার সফলতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো। ক্যাথলিক বিশ্বকোষ অনুযায়ী, পোপেরা কাগজপত্রের তারিখ তাদের কর্মজীবনের বছর অনুসারে কিছু সময় লেখা চালিয়ে গেলেও খ্রিস্টাব্দের ব্যবহার ক্যাথলিক দেশগুলোতে একাদশ থেকে চতুর্দশ শতাব্দীর খুবই স্বাভাবিক হয়ে পড়ে। ১৪২২ সালে পর্তুগাল শেষ পশ্চিম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে স্পেনীয় সাল এর বদলে ডায়োনিসিয়াসের খ্রিস্টাব্দ গ্রহণ করে। ১৭০০ সালে রাশিয়া খ্রিস্টাব্দকে গ্রহণ করার পরে উনবিংশ-বিংশ শতাব্দীরে পূর্বদেশীয় সনাতনপন্থী দেশগুলো বাইজেন্টাইন বর্ষপঞ্জীর বদলে খ্রিস্টাব্দকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়।

খ্রিস্টাব্দ নবম শতাব্দীতে ভালোভাবে প্রচলিত হলেও খ্রিস্টপূর্ব তখন খুব বেশি প্রচলিত ছিলো না। বিড "অ্যানো [...] আন্টে ইনকারনেশনেম ডোমিনিকাম" (প্রভুর আবির্ভাবের বছরের পূর্বে) দুই বার ব্যবহার করেছেন। ১৪৭৪ সালের লেখা এক জার্মান যাজকের বইতে "অ্যানো আনটে ক্রিস্টি ন্যাটিভিটাটেম" (খ্রিস্টের জন্মের বছরের পূর্বে) বাক্যাংশটি পাওয়া যায়। ১৬২৭ সালে, ফরাসি জেসুইট ধর্মতত্ত্ববিদ ডেনিস পেটাউ (লাতিন ভাষায় ডায়োনিসিয়াস পেটাভিয়াস) তার ডি ডক্ট্রিনা টেম্পোরামে লাতিন আন্টে ক্রিস্টাম (খ্রিস্টপূর্ব) বাক্যাংশটি জনপ্রিয় করেন।

নববর্ষ

যখন যিশুর জন্মের হিসাব পশ্চিম ইউরোপের পূর্বের বর্ষ গণনা পদ্ধতিগুলোকে প্রতিস্থাপন করতে শুরু করলো তখন বিভিন্ন মানুষ বর্ষ শুরু করার জন্য বিভিন্ন খ্রিস্টীয় উৎসব বেছে নিতে শুরু করে: বড়দিন, যিশুর জন্মবার্তা ঘোষণা দিবস, বা পুনরুত্থান পার্বণ। যদিও, সময় ও স্থানের ভিত্তিতে বছরের সংখ্যা বছরের বিভিন্ন দিনে পালটে যায় যার ফলে বিভিন্ন পঞ্জিকা সালগুলোতে পার্থক্য দেখা দেয়:

  • ২৫ মার্চ ৭৫৩ নগরাব্দ (বর্তমানে ১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ), ধারণাগতভাবে যিশুর জন্মের নববর্ষ। প্রথম ঘোষণা দিবসটি নবম শতাব্দীর শেষের দিকে আরলেসে দেখা যায় তারপর উত্তর ইতালি ও বারগান্ডিতে ছড়িয়ে পড়ে। পিসা অবলম্বিত এই পঞ্জিকা যুগের নাম ছিলো ক্যালকুলাস পিসানুস যা খুব বেশি ব্যবহৃত হতো না এবং ১৭৫০ সাল পর্যন্ত টিকে ছিলো।
  • ২৫ ডিসেম্বর ৭৫৩ নগরাব্দ (বর্তমানে ১ খ্রিস্টপূর্ব), ধারণাগতভাবে যিশুর জন্মদিনের নববর্ষ। এই পদ্ধতি বেডে দ্বারা সৃষ্টাব্দ সহ মধ্য যুগের শুরুতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো। এটি নববর্ষটি বড়দিন থেকে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড এবং পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চলে (স্পেন ব্যতীত) ১২ তম শতাব্দী পর্যন্ত এবং জার্মানিতে ১৩ তম শতাব্দী পর্যন্ত ব্যবহৃত হতো।
  • ২৫ মার্চ ৭৫৪ নগরাব্দ (বর্তমানে ১ খ্রিস্টাব্দ) থেকে, দ্বিতীয় জন্মবার্তা ঘোষণা পদ্ধতি যা সম্ভবত একাদশ শতাব্দীতে ফ্লিউরি অ্যাবে তে তৈরি হয়েছিলো কিন্তু সিস্টারসিয়ান দ্বারা ছড়ানো হয়। ফ্লোরেন্স এই পদ্ধতিটি পিসার বিরুদ্ধচারণের জন্য গ্রহণ করে। এর নাম দেওয়া হয় ক্যালকুলাস ফ্লোরেন্টিনাস। এটি শীঘ্রই ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে দ্বাদশ শতাব্দীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৭৫২ পর্যন্ত টিকে থাকে।
  • ৭৫৪ নগরাব্দের পুনরুত্থান পার্বণ (১ খ্রিস্টাব্দ) থেকে। এর নাম ছিলো মোস গ্যালিকানুস (ফ্রেঞ্চ ঐতিহ্য) যা ছিলো ফিলিপ অগাস্টাস (১১৮০-১২২৩) কর্তৃক চালুকৃত পরিবর্তনশীল উৎসব। তবে এটি উচ্চপদস্থ পরিবার ছাড়া কারো কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি।

এসব বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে, একই দিবস কিছু কিছু ক্ষেত্রে ১০৯৯, ১১০০ বা ১১০১ খ্রিস্টাব্দে বসানো যায়।

যিশুর জন্ম তারিখ

নাসরৎ এর যিশুর জন্মতারিখ সুসমাচার বা কোন ঐতিহাসিক লেখাপত্রে উল্লেখ নেই। কিন্তু অধিকাংশ গবেষক যিশুর জন্ম তারিখ হিসেবে ৬ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে ধারণা করে থাকেন। ঐতিহাসিক প্রমাণগুলো নির্দিষ্ট জন্ম সাল নির্ধারণের ক্ষেত্রে বেশ সমস্যাপূর্ণ, কিন্তু দুটি ভিন্ন পদ্ধতিতে যিশুর জন্ম তারিখ অনুমান করা সম্ভব — এক, সুসমাচারগুলোয় উল্লেখিত যিশুর জন্ম সংক্রান্ত ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে এবং দুই, যিশুর পরিচার্যকের তারিখ নির্ধারণপূর্বক জন্ম তারিখ নির্ধারণ করে।

অন্যান্য সাল

খ্রিস্টীয় সাল নামক প্রথম ছয়টি শতাব্দীতে ইউরোপীয় দেশগুলো বর্ষ গণনার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করতো। সেগুলো হচ্ছে রোমান অধিনায়কীয় সাল, সম্রাটের শাসনের বর্ষ সাল এবং সৃষ্টির বছর গণনা।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

যদিও ৫৪১ সালে সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান দ্বারা বাসিলিউসকে শেষ অরাজকীয় অধিনায়কীয় পদে নিয়োগ দেওয়া হয়, দ্বিতীয় কনস্টানুস (৬৪১-৬৬৮) পর্যন্ত পরবর্তী সম্রাটগণ গদিপ্রাপ্তির পর জানুয়ারির এক তারিখে অধিনায়কীয়দের নিয়োগ করতেন। জাস্টিনিয়ান ছাড়া সমস্ত সম্রাটরাই নিজেদের শাসন বর্ষ সহ রাজকীয় অধিনায়কীয় সাল ব্যবস্থা ব্যবহার করতেন। ৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে ষষ্ঠ লিও কর্তৃক জারিকৃত নোভেল ৯৪ আইনের ফলে এই প্রথা বাতিল করা হয়।

আরেকটি গণনা ব্যবস্থা আলেকজান্দ্রিয়ার যাজক অ্যানিনিয়াস ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে প্রবর্তন করেছিলেন। এটি যিশুর জন্ম ঘোষণা জুলীয় বর্ষপঞ্জির ৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ শে মার্চ তারিখে প্রদর্শন করে যা ডায়োনিসিয়াসের নির্ধারিত তারিখের আট থেকে দশ বছর পরে। এই ব্যবস্থা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে জনপ্রিয় হলেও খুব বেশি ব্যবহৃত হতো না এবং এখনো ইথিওপিয়ায় ব্যবহৃত হয় যার ফলে গ্রেগরীয় ও ইথিওপীয় বর্ষপঞ্জির মাঝে ৭-৮ বছরের পার্থক্য দেখা যায়। মাক্সিমাস দ্যা কনফেসর, জর্জ সিন্সেলাস ও থিওফানেসের মত পঞ্জিকাবিদরা নিজেদের মতে পৃথিবী সৃষ্টির যুগ নির্ণয় করেছেন। এই পঞ্জিকা যুগ পদ্ধতির নাম সৃষ্টাব্দ (লাতিন: Anno Mundi, পৃথিবীর বর্ষ; যার আদ্যক্ষর ইংরেজিতে AM) যেখানে প্রথম বছর শুরু হয়েছে ২৫ মার্চ ৫৪৯২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। পরবর্তী যুগের বাইজেন্টাইন পঞ্জিকাবিদেরা সৃষ্টাব্দের প্রথম বছর বাইজেন্টাইন বর্ষপঞ্জির ১ সেপ্টেম্বর ৫৫০৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্ধারণ করে। কোন নির্দিষ্ট সৃষ্টাব্দ পদ্ধতি পুরো খ্রিস্টীয় বিশ্ব জুড়ে প্রচলিত ছিলো না। ইউসেবিয়াস তার ঘটনাপঞ্জিতে আব্রাহামের জন্মের বছর ২০১৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু করেছেন (১ খ্রিস্টাব্দ = ২০১৭ আব্রাহামাব্দ বা অ্যানো আব্রাহামি)।

স্পেন ও পর্তুগাল স্পেনীয় সাল ব্যবহার করতো (আরেক নাম সিজারদের সাল), যার প্রথম বছর শুরু হয় ৩৮ খ্রিস্টপূর্ব থেকে। ১৪২২ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগাল ইউরোপের শেষ ক্যাথলিক সম্প্রদায় হিসেবে খ্রিস্টাব্দ পদ্ধতি গ্রহণ করে।

শহিদী সাল আরেকটি পঞ্জিকা সাল যার বর্ষ ২৮৪ খ্রিস্টাব্দে ডিওক্লেটিয়ান নামক খ্রিস্ট ধর্মালম্বীদের উপর চরম নির্যাতনকারীর গদিপ্রাপ্তির বছর থেকে শুরু হয়। এটি আলেক্সান্দ্রীয় কিবতীয় সনাতনপন্থী মণ্ডলী দ্বারা ব্যবহৃত হতো এবং এখনো তাদের দ্বারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি ইথিওপীয় সনাতনী খ্রিস্টীয় সম্প্রদায়ও ব্যবহার করতো। আরেকটি পঞ্জিকা যুগ ব্যবস্থা ছিলো যা যীশুর ক্রুশারোহণের বছর থেকে শুরু হয় যার বর্ষ হিসেবে প্রথমদিকে হিপোলাইটাস ও টারটুলিয়ানরা ২৯ খ্রিস্টাব্দ বিশ্বাস করতেন বলে বিভিন্ন মধ্যযুগীয় কাগজপত্রে উল্লেখ রয়েছে।

সি.ই ও বি.সি.ই

লাতিন ভাষায় খ্রিস্টাব্দের বিকল্প হিসেবে ভুলগারিস এরাই, "ভুলগার এরা" (১৬৩৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজিতে প্রাপ্ত), "ক্রিস্টিয়ান এরা" (বাংলায় খ্রিস্টীয় সাল; ১৬৫২ সালে ইংরেজিতে প্রাপ্ত), "কমন এরা" (১৭০৮ সালে ইংরেজি ভাষায়), এবং "কারেন্ট এরা" ব্যবহার করা হয়েছে। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে, বিকল্প শব্দ সংক্ষেপ সি.ই ও বি.সি.ই কখনো কখনো এডি ও বিসির স্থানে লেখা হয়।

কমন/কারেন্ট এরা (সি.ই) শব্দাংশ তাদের দ্বারা ব্যবহৃত হয় যারা অধর্মীয় বাক্যাংশ ব্যবহারে আগ্রহী। উদাহরণস্বরূপ, কিউনিংহাম ও স্টের (১৯৯৮) লিখেছেন যে "বি.সি.ই./সি.ই. […] যিশু খ্রিস্টের প্রতি বিশ্বাসের চিহ্ন বহন করে না এবং সেজন্য এই দুটি প্রচলিত বি.সি/এ.ডি এর চাইতে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের জন্য অধিক উপযুক্ত।" এর উপর ভিত্তি করে চীনা প্রজাতন্ত্র মিঙ্গু সাল গ্রহণ করে কিন্তু আন্তর্জাতিক কাজে পশ্চিমা বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করা হয়। এর অনূদিত অর্থ হচ্ছে 西元 (xī yuán; "পশ্চিমা যুগ")। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন যেকোন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কাজে 公元 (gōngyuán; "কমন এরা বা সাধারণ সাল") গ্রহণ করে।

শূন্য বর্ষহীন পঞ্জিকা সাল

খ্রিস্টাব্দ বর্ষ সংখ্যা পদ্ধতিতে, হোক সেটা জুলীয় বর্ষপঞ্জি কিংবা গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি, ১ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে ১ খ্রিস্টপূর্ব আসে এবং কোন শূন্য বর্ষ থাকেনা। নতুন শতাব্দী, সহস্রাব্দ বা যুগ শূন্য বর্ষ থেকে নাকি ১ থেকে শুরু হয়েছে সেটা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে।

গণনার সুবিধার্থে জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় বর্ষ সংখ্যা পদ্ধতি ও আইএসও ৮৬০১ সুস্পষ্ট অবস্থানগত বছর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে যার ফলে ১ খ্রিস্টাব্দ = বর্ষ ১, ১ খ্রিস্টপূর্ব = বর্ষ ০ (শূন্য বর্ষ), ২ খ্রিস্টপূর্ব = -১, ইত্যাদি এভাবে বর্ষ সংখ্যা লেখা হয়। সাধারণ অর্থে প্রাচীন তারিখগুলো জুলীয় বর্ষপঞ্জিতে দেখানো হলেও আইএসও ৮৬০১ গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করে এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা উদ্দেশ্য অনুযায়ী বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে। আর তাই শূন্য বা ঋণাত্মক বর্ষ ব্যবহারকারী তারিখগুলো খ্রিস্টাব্দ বা খ্রিস্টপূর্বাব্দে রূপান্তরের পূর্বে ভালোভাবে বিবেচনা করে নেওয়াটা প্রয়োজন।

আরও দেখুন

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

উদ্ধৃতি

উৎস

বহিঃসংযোগ

Tags:

খ্রিস্টাব্দ ইতিহাসখ্রিস্টাব্দ যিশুর জন্ম তারিখখ্রিস্টাব্দ অন্যান্য সালখ্রিস্টাব্দ সি.ই ও বি.সি.ইখ্রিস্টাব্দ শূন্য বর্ষহীন পঞ্জিকা সালখ্রিস্টাব্দ আরও দেখুনখ্রিস্টাব্দ পাদটীকাখ্রিস্টাব্দ তথ্যসূত্রখ্রিস্টাব্দ বহিঃসংযোগখ্রিস্টাব্দখ্রিস্টপূর্বগ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জিজুলীয় বর্ষপঞ্জিযিশু

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ব্যঞ্জনবর্ণবিশেষণযোনিলেহনমুনাফিকআকবরদেব (অভিনেতা)দৈনিক ইত্তেফাকলগইনসুন্দরবন গ্যাস কোম্পানী লিমিটেডভৌগোলিক নির্দেশকখুলনা বিভাগঅমর্ত্য সেনপরমাণুফেসবুকইসরায়েলের ইতিহাসইলুমিনাতিবাংলার প্ৰাচীন জনপদসমূহসিঙ্গাপুরশেখ হাসিনাবাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রমবাংলা একাডেমিপৃথিবীর বায়ুমণ্ডলহামাসমুহাম্মাদের বংশধারাচর্যাপদের কবিগণযৌনাসনকৃত্রিম উপগ্রহজাতিসংঘধানরোমান সাম্রাজ্যআন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসবেদজীববৈচিত্র্যশেখ মুজিবুর রহমানকলকাতাকম্পিউটারশুভমান গিলঅভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ইসলামে যৌনতাআর্দ্রতাপৃথিবীর ইতিহাসবাঘক্রিকেটঘূর্ণিঝড়সুলতান সুলাইমানবৈশাখী মেলাআফগানিস্তানফুটবল ক্লাব বার্সেলোনাঢাকা জেলামৌর্য সাম্রাজ্যবিরাট কোহলিবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানবিতর নামাজভালোবাসাখাদ্যযুক্তরাজ্যমৃণাল ঠাকুরবাংলা সংখ্যা পদ্ধতিহরে কৃষ্ণ (মন্ত্র)চর্যাপদকুমিল্লা জেলাকোকা-কোলাকৃষ্ণ২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগমুর্শিদাবাদ জেলাবিজ্ঞানসহীহ বুখারীসংস্কৃত ভাষারিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবের খেলোয়াড়ের তালিকাআনন্দবাজার পত্রিকাচেন্নাই সুপার কিংসবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাদোয়া কুনুতকুমিল্লাভগবদ্গীতাঢাকা মেট্রোরেলের স্টেশনের তালিকাওয়েব ধারাবাহিকজাযাকাল্লাহ🡆 More