রসায়ন

রসায়ন পদার্থের উপাদান, কাঠামো, ধর্ম ও পারস্পরিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া সংক্রান্ত বিজ্ঞান। রসায়নবিদেরা মনে করেন বিশ্বের যাবতীয় বস্তু পরমাণু দিয়ে গঠিত। দুই বা ততোধিক পরমাণু রাসায়নিক বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ হয়ে অণুর সৃষ্টি করে। এক বা একাধিক ইলেকট্রন পরমাণু বা অণু থেকে সরিয়ে নিলে বা যোগ করলে আধানযুক্ত কণা তথা আয়ন সৃষ্টি হয়। ধনাত্মক আয়ন ও ঋণাত্মক আয়নের সংযোগে সৃষ্টি হয় আধান-নিরপেক্ষ লবণ (মূলত এটি ক্লোরিন বা সালফেটের যৌগ)। রসায়নবিদেরা আণবিক ও পারমাণবিক স্তরে পদার্থ সম্পর্কে তাদের জ্ঞান দিয়ে কীভাবে বিভিন্ন ধরনের পদার্থ একে অপরের সাথে ক্রিয়া করে এবং এগুলি কীভাবে বিভিন্ন অবস্থায় রূপান্তরিত হয়, তা ব্যাখ্যা করতে পারেন। রসায়নবিদেরা পদার্থের পরিবর্তন সাধন করতে পারেন ও নতুন নতুন যৌগ সৃষ্টি করতে পারেন যাদের মধ্যে আছে ঔষধ, বিস্ফোরক, প্রসাধনী ও খাদ্য। রাসায়নিক সংশ্লেষণ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন শিল্পে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন করা হয়।

রসায়ন
ফ্লাস্কে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান
রসায়ন
রসায়ন পদার্থের নিজেদের মধ্যে এবং শক্তির সাথে পারস্পরিক ক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করে।
sulphur.
সালফার যার অপর নাম গন্ধক

পদার্থের প্রকারভেদ কিংবা গবেষণার সাদৃশ্য বিবেচনা করে রসায়নের বিভিন্ন শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রসায়নের প্রধান শাখাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অজৈব রসায়ন অর্থাৎ রসায়নের যে শাখায় অজৈব যৌগ নিয়ে আলোচনা করা হয়, জৈব রসায়ন বা যে শাখায় জৈব যৌগ নিয়ে আলোচনা করা হয়, প্রাণরসায়ন, রসায়নের যে শাখায় জীবদেহের রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে আলোচনা করা হয়, ভৌত রসায়ন, এই শাখায় আণবিক পর্যায়ে শক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত রাসায়নিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়, বিশ্লেষণী রসায়ন, এক্ষেত্রে পদার্থের বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের গঠন, সংযুক্তি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সাম্প্রতিক কালে রসায়নের আরও অনেক নতুন শাখার উদ্ভব হয়েছে, যেমন- স্নায়ু রসায়ন। স্নায়ুতন্ত্রের রাসায়নিক গঠন নিয়ে এই শাখায় আলোচনা করা হয়।

তত্ত্ব

ল্যাবরেটরি, ইন্সটিটিউট অফ বায়োকেমিস্ট্রি, ইউনিভার্সিটি অফ কনজ এই সকল প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঐতিহ্যবাহী রসায়ন চর্চা শুরু হয়। এখানে মৌলিক উপাদান, পরমাণু, পদার্থ, গলন, ক্রিস্টাল ও পদার্থ একত্র করা, কঠিন পদার্থ, তরল, বায়বীয় পদার্থ, যৌগ তৈরির নীতি, কথাবার্তা, বিক্রিয়া এবং রূপান্তর ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করা হয়।

ইতিহাস

রসায়নের ইতিহাস একটি অনেক বড় বিষয়।এটি প্রাচীন ও প্রধান বিজ্ঞানগুলোর অন্যতম। বলা চলে আগুন আবিষ্কারের পর থেকেই মানব সভ্যতার হাত ধরে এগিয়ে চলেছে রসায়ন। ভারতবর্ষে প্রায় ৫০০০ বছর পূর্বেই কাপড়কে আকর্ষণীয় করে তুলতে রঙের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। রসায়ন 'চর্চায় প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অবদান অনেক। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় রসায়ন চর্চা আল-কেমি (Alchemy) নামে পরিচিত। আল-কেমি আরবি আল-কিমিয়া থেকে উদ্ভূত, যা দিয়ে মিশরীয় সভ্যতাকে বুঝানো হতো। জাবির ইবন হাইয়ানকে রসায়ন শাস্ত্রের ও লাভোয়াজিয়েকেকে আধুনিক রসায়ন শাস্ত্রের জনক বলা হয়ে থাকে। মধ্যযুগে ধাতুকে সোনায় পরিণত করতে পারার পদ্ধতি আবিষ্কারের প্রচেষ্টায় শুরু হয় আলকেমি বিদ্যা, যা লাভোয়াজিয়ে, মেন্ডেলিফদের হাতে পূর্ণতা লাভ করেছে।

রসায়ন শব্দের উৎপত্তি

রসায়ন শব্দের ইংরেজি Chemistry (কেমিস্ট্রি)। মধ্যযুগে পরশ পাথরের সন্ধানে পরীক্ষারত মুসলিম বিজ্ঞানীরা একটি শাস্ত্র বা পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এটাকে তারা বলতেন আলকামিস্তা বা আলকেমি। আলকেমি এসেছে আরবী শব্দ আল-কিমিয়া থেকে। আল-কিমিয়া শব্দটি এসেছে 'কিমি' থেকে। কিমি থেকেই chemistry শব্দের উৎপত্তি। আলকেমি আল অর্থ দি(The), এবং কেমি বা কিমি অর্থ ব্লাক সয়েল বা কালো মাটি। এই কালো মাটি আসলে মিশরের নীল নদের তীরের মাটি। প্রাচীন মিশরকে রসায়নের জন্মক্ষেত্র বলা যায়। কারণ, মিশরীয়রা সভ্যতার আদি লগ্নে যে মমি তৈরি করতো তাতেই তারা নানান রকমের রাসায়নিক ব্যবহার করতো। প্রাচীন গ্রীসেও রসায়নের চর্চা শুরু হয়েছে সুপ্রাচীনকাল থেকেই।

তারা চিন্তা করতো এ্যালিক্সির বা জীবন সঞ্জিবনীর কীভাবে তৈরি করা যায়! কারণ, মানুষ চিরদিন বেঁচে থাকতে চায় অমর হতে চায়। ভারতীয় উপমহাদেশের ঋষিরাও চাইতেন তেমন কিছু তৈরি করার। তারা একে বলতেন পরশ পাথর!

গ্রিসদের এই চিন্তা ভাবনা ও কাজের সাথে পরিচিত ছিলেন জাবির ইব্নে হাইয়ান। তাঁর পিতা ইবনে হাইয়ানও একজন গুপ্তবিদ্যাচর্চাকারী ছিলেন। প্রাচীনকালে রসায়ন গুপ্ত বিদ্যা বলে পরিচিত ছিলো। কারণ রসায়নবিদরা লোক চক্ষুর অন্তরালে তাদের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতেন। কারণ সাধারণ মানুষের কৌতুুহল বেশি থাকে এবং তারা কাজে বাঁধা সৃষ্টি করতে তৎপর থাকে।

পরবর্তী সময়ে জাবির ইবনে হাইয়ান তাঁর নিজ বাসভূমি আরবীয় অঞ্চলে ফিরে আসেন এবং রসায়ন শাস্ত্রের উপর ১০৮ খানা গ্রন্থ লেখেন। তাঁর এই মহামূল্য গ্রন্থগুলো রসায়ন গবেষণায় সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। তাকে প্রাচীন রসায়নের জনক বলে অভিহিত করা হয়।

মৌলিক ধারণা

আমরা জানি যে, যার ভর আছে, কোন স্থান দখল করে অবস্থান করে এবং যা স্থিতিশীল বা গতিশীল অবস্থার বাধা প্রদান করে, তাকে পদার্থ বলে। পদার্থের মধ্যে অণু থাকে যা আবার পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত। পরমাণু সমূহ গঠিত হয় ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন এর সমন্বয়ে। এসব ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন পদার্থের অনুর সাথে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত থাকে এবং এদের বিক্রিয়ার সময় এরা কি ধরনের আচরণ করে সেসব নিয়ে আলোচনা করা হয় রসায়নে।

সংজ্ঞাসমূহ

রসায়ন শাস্ত্রে অনেক গুলো মৌলিক বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে

পরমাণু

মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা যা ঐ পদার্থের বৈশিষ্ট্য রক্ষা করে। যাকে বিশ্লেষিত করলে আরো ক্ষুদ্রতম কণা ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন পাওয়া যায়। পরমাণুকে দুটি ভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করা যায়। একটিকে কেন্দ্র বলা হয়- যে অংশে পরমাণুর সকল ভর ও ধনাত্বক চার্জ পুঞ্জীভূত থাকে। অর্থাৎ নিরপেক্ষ নিউট্রন ও ধনাত্বক প্রোটন একত্রে কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াসে থাকে আর দ্বিতীয়টিকে বলা হয় বহিঃঅঞ্চল- যে অংশে নির্দিষ্ট শক্তির কতক শক্তিস্তর থাকে আর ঐ শক্তিস্তরে নির্দিষ্ট শক্তির ঋণাত্বক চার্জ যুক্ত ইলেক্ট্রন পরিক্রমণরত অবস্থায় থাকে।

পদার্থ

যার ভর আছে, কোনো স্থান দখল করে অবস্থান করে এবং যা স্থিতিশীল বা গতিশীল অবস্থার বাধা প্রদান করে, তাকে পদার্থ বলে। পৃথিবীর সমস্ত পদার্থকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা: কঠিন, তরল ও বায়বীয়। এছাড়াও পদার্থের আরেকটি অবস্থাও হিসাব করা হয়, যাকে প্লাজমা বলে। এটিকে উচ্চ তাপমাত্রায় আয়নিত গ্যাস বলা হয়।

যৌগ

একাধিক মৌলের সমন্বয়ে গঠিত নতুন পদার্থকে যৌগ বলে। যেমন: সোডিয়াম ক্লোরাইড, কার্বন‌ ডাই অক্সাইড, সালফিউরিক এসিড ইত্যাদি।

বস্তু

যেকোন পদার্থের নির্দিষ্ট একটা অংশকে বস্তু বলে। যেমনঃ মৌল, এক অণু বিশিষ্ট যৌগ। অর্থাৎ হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, পানি ইত্যাদি।

অণু

দুই বা ততোধিক পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত ক্ষুদ্র কণাকে বলা হয় অণু। যেমন: হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু পরস্পর যুক্ত হয়ে অণু গঠন করে।

হাইড্রোজেনের পরমাণু H এবং হাইড্রোজেনের অণু H2

মোল

কোনো পদার্থের পারমাণবিক ভর বা আণবিক ভরকে গ্রাম এককে প্রকাশ করলে যে পরিমাণ পাওয়া যায়, তাকে ঐ পদার্থের এক মোল বলে। ১ mole=৬.০২২x১০ ২৩ টি অণু/পরমাণু/আয়ন।

এই সংখ্যাটিকে অ্যাভোগেড্রোর সংখ্যা বলা হয়। কোন পদার্থের যে পরিমাণের মধ্যে অ্যাভোগেড্রোর সংখ্যার সমান সংখ্যক অণু/পরমাণু/আয়ন বিদ্যমান থাকে তাকে ঐ পদার্থের একমোল বলে।

কার্বনের পারমাণবিক ভর ১২

একে গ্রাম এককে প্রকাশ করলে,

১২ গ্রাম কার্বন = ১ মোল কার্বন

আবার পানির আণবিক ভর ১৮

সুতরাং ১ মোল পানি = ১৮ গ্রাম পানি।

অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব

অম্ল বা ক্ষারের কয়েকটি তত্ত্ব রয়েছে; তার মধ্যে সবচেয়ে চেয়ে সহজতর তত্ত্বটি হচ্ছে 'আরহেনিয়াসের তত্ত্ব'। তার মতে, অম্ল হচ্ছে এমন ধরনের বস্তু যা পানির সাথে দ্রবীভুত হলে হাইড্রনিয়াম আয়ন উৎপন্ন করে এবং ক্ষার হল যা পানির সাথে দ্রবীভূত হলে হাইড্রোক্সাইড আয়ন উৎপন্ন করে। ব্রনস্টেড-লাউরি‘র অম্ল-ক্ষার সূত্রানুসারে, রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় যদি একটি মৌল অন্য একটি মৌলকে ধনাত্মক হাইড্রোজেন আয়ন প্রদান করে তবে তাকে অম্ল বলে; অপরপক্ষে ক্ষার হচ্ছে ঐ বস্তু যা ঐ হাইড্রোজেন আয়ন গ্রহণ করে। এ সম্বন্ধে লুইস এর অম্ল-ক্ষার তত্ত্ব নামে তৃতীয় একটা তত্ত্ব রয়েছে, যার ভিত্তি হল নতুন রাসায়নিক বন্ধন গঠন করা। লুইসের তত্ত্বানুসারে অম্ল হচ্ছে ঐ মৌল যা বন্ধন গঠনের সময় অন্য মৌল হতে এক জোড়া ইলেক্ট্রন গ্রহণ করতে সক্ষম; অন্যদিকে ক্ষার হচ্ছে ঐ মৌল যা নতুন বন্ধনে এক জোড়া ইলেক্ট্রন দিতে পারে। তাছাড়া আরো অনেক ভাবেও অম্ল এবং ক্ষার কে সংজ্ঞায়িত করা হয়ে থাকে।

অম্লের ক্ষমতা প্রধানত ২ পদ্ধতিতে পরিমাপ করা হয়ে থাকে।একটা পদ্ধতি হচ্ছে আরহেনিয়াসের অম্লত্বের বর্ণনার উপর ভিত্তি করে, pH, যেটা দ্রবণে ঘণীভূত হাইড্রোনিয়াম আয়ন কে বোঝায়। যেটাকে ঋণাত্মক লগারিদ্মিক স্কেল এ প্রকাশ করা হয়। এভাবে, যে দ্রবণের pH এর মান কম ও উচ্চ ঘণীভূত হাইড্রনিয়াম আয়ন তবে সেটা অধিক অম্লীয়। অন্য পদ্ধতি টা হচ্ছে, ব্রনস্টেড-লাউরি‘র বর্ণনার উপর ভিত্তি করে,যে বস্তুর ka এর মান অধিকতর এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় নিম্নতর ka মানের তুলনায় অত্যধিক পরিমাণে হাইড্রোজেন আয়ন প্রদান করে। ব্রনস্টেড-লাউরি‘র অম্ল-ক্ষার সূত্রানুসারে, রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় যদি একটি মৌল অন্য একটি মৌলকে ধনাত্মক হাইড্রোজেন আয়ন প্রদান করে তবে তাকে অম্ল বলে। অপরপক্ষে, ক্ষার হচ্ছে ঐ বস্তু যা ঐ হাইড্রোজেন আয়ন গ্রহণ করে। এ সম্বন্ধে লুইস এর অম্ল-ক্ষার তত্ত্ব নামে তৃতীয় একটা তত্ত্ব রয়েছে,যার ভিত্তি হল নতুন রাসায়নিক বন্ধন গঠন করা। লুইসের তত্ত্বানূসারে অম্ল হচ্ছে ঐ মৌল যা বন্ধন গঠনের সময় অন্য মৌল হতে এক জোড়া ইলেক্ট্রন গ্রহণ করতে সক্ষম; অন্যদিকে ক্ষার হচ্ছে ঐ মৌল যা নতুন বন্ধনে এক জোড়া ইলেক্ট্রন দিতে পারে। তাছাড়া আরো অনেক ভাবেও অম্ল ও ক্ষার কে সঙ্গায়িত করা হয়ে থাকে।

অম্লের ক্ষমতা প্রধানত ২ পদ্ধতিতে পরিমাপ করা হয়ে থাকে।একটা পদ্ধতি হচ্ছে আরহেনিয়াসের অম্লত্বের বর্ণনার উপর ভিত্তি করে, pH ,যেটা দ্রবণে ঘণীভূত হাইড্রোনিয়াম আয়ন কে বোঝায়,যেটাকে ঋণাত্মক লগারিদ্মিক স্কেল এ প্রকাশ করা হয়। এভাবে,যে দ্রবণের pH এর মান কম ও উচ্চ ঘণীভূত হাইড্রনিয়াম আয়ন তবে সেটা অধিক অম্লীয়।

অন্য পদ্ধতি টা হচ্ছে, ব্রনস্টেড-লাউরি‘র বর্ণনার উপর ভিত্তি করে, যে বস্তুর ka এর মান অধিকতর এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় নিম্নতর ka মানের তুলনায় অত্যধিক পরিমাণে হাইড্রোজেন আয়ন প্রদান করে।

দশা

পদার্থের নির্দিষ্ট ভৌত অবস্থাকে (কঠিন, তরল,গ্যাসীয় ও প্লাজমা ) নির্দেশ করা হয়।

জারণ-বিজারণ

যে বিক্রিয়ায় ইলেক্ট্রন আদান প্রদান হয় তাকে জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া বলে । যে বিক্রিয়ায় ইলেক্ট্রন ত্যাগ বা বর্জন করা হয় তাকে জারণ বলে । আবার যে বিক্রিয়ায় ইলেক্ট্রন গ্রহণ করা হয় তাকে বিজারণ বলে । জারক ইলেক্ট্রন গ্রহণ করে নিজে বিজারিত হয় এবং অপরকে জারিত করে আর বিজারক ইলেক্ট্রন ত্যাগ করে নিজে জারিত হয় এবং অপরকে বিজারিত করে ।

বন্ধন

অণুতে পরমাণুসমূহ পরস্পর যেভাবে বন্ধন শক্তিতে যুক্ত থাকে, তাকে রাসায়নিক বন্ধন বলে।

বিক্রিয়া

রসায়নের পরিভাষায় যে পদ্ধতিতে দুই বা ততোধিক মৌল বা যৌগ পরস্পর যুক্ত হয়ে এক বা একাধিক নতুন যৌগ উৎপন্ন করে তাকে বিক্রিয়া বলে। যদি একাধিক মৌল বা যৌগ পরস্পর যুক্ত নতুন যৌগ উৎপন্ন না-করে তবে তাকে বিক্রিয়া বলা যাবে না। বিক্রিয়ায় মূলত পরমাণু বা ইলেকট্রনের আদান প্রদান ঘটে।এখানে তাপ উৎপন্ন হয়।

রাসায়নিক সমীকরণ

রাসায়নিক বিক্রিয়াকে সংক্ষেপে উপস্থাপন করার জন্য রাসায়নিক সমীকরণ ব্যবহার করা হয় ৷ অর্থাৎ সমীকরণ হলো রাসায়নিক শর্টহ্যান্ড (Chemical Shorthand ) ও কোনো রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে রসায়নের ভাষায় প্রকাশ৷ রাসায়নিক সমীকরণ লেখার নিয়ম:

  1. রাসায়নিক বিক্রিয়া যে সকল পদার্থ নিয়ে শুরু হয় তাদেরকে বিক্রিয়ক ( Reactant ) এবং যে সকল পদার্থ উৎপন্ন হয়, তাদেরকে উৎপাদ (Product) বলে ৷ রাসায়নিক সমীকরণে বিক্রিয়কসমূহ বামপাশে এবং উৎপাদসমূহ ডানপাশে লিখে মাঝখানে সমান (=) অথবা তীর( → ) চিহ্ন দেয়া হয় ৷
  2. বিক্রিয়ায় একাধিক বিক্রিয়ক এবং একাধিক উৎপাদ থাকলে তাদেরকে (+) চিহ্ন দিয়ে লেখা হয় ৷
  3. সমীকরণের বামপাশে বিভিন্ন মৌলের পরমাণু সংখ্যা এবং ডানপাশে একই মৌলের পরমাণু সংখ্যা সমান করা হয় ৷ বিক্রিয়ক এবং উৎপাদ ভিন্ন যৌগ হলেও তা অভিন্ন মৌলের পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত হয় ৷ এতে ভরের সংরক্ষণ নীতি অনুসরণ করে ৷
  4. বিক্রিয়ক ও উৎপাদের ভৌত অবস্থা যৌগের ডানপাশে নিচে প্রথম বন্ধনীর মধ্যে লেখা হয় ৷ যৌগের ভৌত অবস্থা কঠিন (Solid)

হলে (s), তরল (Liquid) হলে (l) এবং গ্যাসীয় (Gaseous) হলে (g) লেখা হয় ৷ বিক্রিয়ক এবং উৎপাদ হিসেবে কোনো যৌগের জলীয় দ্রবণ (Aqueous solution) থাকলে (aq) লেখা হয় ৷

রাসায়নিক সাম্যাবস্থা

উভমুখী বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে সময়ের সাথে এক সময় বিক্রিয়ার সম্মুখবেগ ও পশ্চাৎবেগ সমান হয়। এ অবস্থাকে রাসায়নিক সাম্যাবস্থা বলে। সাম্যাবস্থা তখনই হয়, যখন কোনো পদার্থের বিভিন্ন ধরনের গঠন সম্ভব হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, বিভিন্ন যৌগের একটি মিশ্রণ যারা একজন আরেকজন এর সাথে বিক্রিয়া করতে পারে অথবা যখন একটি যৌগ একাধিক অবস্থায় থাকতে পারে সেটাই সাম্যাবস্থা।

শক্তি

বস্তুর শক্তি হচ্ছে ঐ বস্তু মোট যতখানি কাজ করতে পারে।

উপবিভাগ

রসায়ন বিভাগ

রসায়ন বিজ্ঞানের একটি অন্যতম দিক । রসায়নের অনেক গুলো বিভাগ রয়েছে । যা বিজ্ঞান এর জন্য মঙ্গলজনক

সবুজ রসায়ন

সবুজ রসায়ন হলো রসায়নের একটি শাখা যাতে কম পরিবেশ দূষণ করে এবং ঝুঁকি হ্রাস করে এমন রাসায়নিক প্রক্রিয়া বা উৎপাদন-পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা হয়। কার্যত: 'সবুজ রসায়ন' এমন একটি গবেষণাদর্শন যার উদ্দেশ্য এমন রাসায়নিক পদ্ধতির উদ্ভাবন ও অবলম্বন করা যাতে শিল্পজাত বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস পায়, ঝুকিঁপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার হ্রাস পায় এবং শক্তির অপচয় হ্রাস পায়। এটি রসায়নের একটি নবতর শাখা। এর লক্ষ্য মানবদেহের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান বর্জিত পণ্য ও পদ্ধতি আবিষ্কার। এটি পরিবেশ রসায়ন থেকে ভিন্ন।

রাসায়নিক শিল্প

১. কাচ শিল্প

২. জ্বালানি শিল্প

৩. সিরামিক শিল্প

৪. পেট্রোলিয়াম শিল্প

৫. ঔষধ শিল্প

৬. সিমেন্ট শিল্প

৭. সার শিল্প

৮. পলিমার শিল্প

৯. চিনি শিল্প

১০. কাগজ শিল্প

১১. রং শিল্প

১২. কীটনাশক শিল্প

১৩. তেল শিল্প

১৪. সাবান ও ডিটারজেন্ট শিল্প

১৫. চামড়া শিল্প

১৬. লৌহ শিল্প

১৭. বিস্ফোরক শিল্প

পেশাদার প্রতিষ্ঠান

নিরাপত্তা

কিছু রাসায়নিক উপাদান খুবই ক্ষতিকারক ও বিপজ্জনক। মার্কারী (২) ক্লোরাইড অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ। ক্রোমেট ক্যান্সার সৃষ্টি করে। টিন (২) ক্লোরাইড খুব সহজেই পানি দূষণ করে থাকে। হাইড্রোক্লোরিক এসিড শরীরের চামড়া পুড়িয়ে ফেলে। হাইড্রোজেনের মতো পদার্থ বিস্ফোরক কিংবা অগ্নিসংযোগে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাই, যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা রসায়ন পরীক্ষাগারে করা উচিত। সেখানে বিশেষ নিরাপত্তামূলক উপকরণ এবং কাপড়ের ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও রাসায়নিক উপকরণসমূহ সুবিন্যস্ত আকারে রাখা হয়। ঔষুধাদি তৈরীতে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। ব্লিচের ন্যায় পদার্থের সাহায্যে পরীক্ষা করা হয় যে রাসায়নিক পদার্থটি নিরাপদ।

কিছু রাসায়নিক বস্তু

পদার্থ সংকেত মন্তব্য/বৈশিষ্ট্য
পানি H2O সার্বজনীন দ্রাবক
সালফিউরিক অ্যাসিড H2SO4 সব চেয়ে ব্যবহিত অ্যাসিড
খাবার লবণ NaCl আয়নিক যৌগ
বেকিং পাউডার/খাবার সোডা/সোডা মিন্ট NaHCO3 ক্ষার
হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড HCl অ্যাসিড
চিনি C12H22O11

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

Tags:

রসায়ন তত্ত্বরসায়ন ইতিহাসরসায়ন শব্দের উৎপত্তিরসায়ন মৌলিক ধারণারসায়ন সংজ্ঞাসমূহরসায়ন রাসায়নিক সমীকরণরসায়ন রাসায়নিক সাম্যাবস্থারসায়ন উপবিভাগরসায়ন বিভাগরসায়ন সবুজ রসায়ন রাসায়নিক শিল্পরসায়ন পেশাদার প্রতিষ্ঠানরসায়ন নিরাপত্তারসায়ন কিছু রাসায়নিক বস্তুরসায়ন আরও দেখুনরসায়ন তথ্যসূত্ররসায়নঅণুআধানআয়নইলেকট্রনঔষধক্লোরিনজ্ঞানধনাত্মক আয়নপদার্থপরমাণুবিস্ফোরকযৌগরাসায়নিক বন্ধনলবণ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ইসলামে যৌনতামহাস্থানগড়জগদীশ চন্দ্র বসুভীমরাও রামজি আম্বেদকরযোনি পিচ্ছিলকারকদারাজহিন্দুভারতের সংবিধানযুক্তরাজ্যফজরের নামাজহরে কৃষ্ণ (মন্ত্র)১৮৫৭ সিপাহি বিদ্রোহফরিদপুর জেলাযৌন প্রবেশক্রিয়াইউরোপীয় দেশগুলো ও অধীনস্থ ভূভাগের তালিকা২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ২০২৪ ইসরায়েলে ইরানি হামলাউহুদের যুদ্ধযিনাস্পিন (পদার্থবিজ্ঞান)সুকান্ত ভট্টাচার্যগর্ভধারণকবিতামুসলিমবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীগোলাপসুনামগঞ্জ জেলাঅক্ষয় তৃতীয়ামার্ক জাকারবার্গদেশ অনুযায়ী ইসলামরাজস্থান রয়্যালসলগইনবাংলাদেশ পুলিশবাংলা একাডেমিকুষ্টিয়া জেলাজায়েদ খান (বাংলাদেশী অভিনেতা)হনুমান (রামায়ণ)ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদপশ্চিমবঙ্গ সরকারসাকিব আল হাসানআলুকুষাণ সাম্রাজ্যমুহাম্মদ ইউনূসবিশ্বের মানচিত্রবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানঅশোকনদীবিহীন দেশগুলির তালিকাসূরা ইখলাসওয়াহাবি আন্দোলনজাপানচিকিৎসকত্রিপুরারাজশাহী বিভাগনেপোলিয়ন বোনাপার্টবিড়ালবাঘইমাম বুখারীদ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মরত জেনারেলদের তালিকাবায়ুদূষণইসরায়েলের জনসংখ্যার পরিসংখ্যানবাংলা ভাষাবাংলা ভাষা আন্দোলন১৭ এপ্রিলআমমাযহাবরিয়ান পরাগম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাবরাশিয়াসূরা ইয়াসীনআকিজ গ্রুপবঙ্গবন্ধু-১যৌনপল্লিজসীম উদ্‌দীনওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবশনি (দেবতা)তাপমাত্রা🡆 More