ফরাসি ভাষা: রোমান্স ভাষা

ফরাসি ভাষা (ফরাসি: français ফ্রঁসে বা langue française লা লঁগ ফ্রঁসেয) ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাপরিবারের একটি রোমান্স ভাষা। অন্য ব রোমান্স ভাষার মতো এটিও রোমান সাম্রাজ্যের প্রাকৃত লাতিন থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ফরাসি গালো রোমান্স থেকে বিবর্তিত হয়েছে, যা গল বা আরও নির্দিষ্টভাবে উত্তর গলে কথিত লাতিন। এর নিকটতম আত্মীয় হল অন্যান্য অইল ভাষাসমূহ—ঐতিহাসিকভাবে উত্তর ফ্রান্স ও দক্ষিণ বেলজিয়ামে কথ্য ভাষা, যেগুলোকে ফরাসি (ফ্রঁসিয়াঁ) বহুলাংশে প্রতিস্থাপিত করেছে। গালিয়া বেলজিকার মতো উত্তর রোমান গলের স্থানীয় কেল্টীয় ভাষাসমূহ এবং রোমানোত্তর ফ্রাঙ্ক হানাদারদের জার্মানীয় ফ্রাঙ্কীয় ভাষা দ্বারাও ফরাসি প্রভাবিত হয়েছে। ফ্রান্সের অতীতের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য বিস্তারের কারণে বর্তমানে প্রচুর ফরাসিভিত্তিক ক্রেওল ভাষা রয়েছে, বিশেষত হাইতীয় ক্রেওল। একজন ফরাসিভাষী ব্যক্তি বা জাতিকে ফরাসি ভাষাতে ফ্রঁকোফোন হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে।

ফরাসি ভাষা
français
langue française
উচ্চারণ[fʁɑ̃sɛ]
দেশোদ্ভবফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, লুক্সেমবুর্গ
মাতৃভাষী
বিশ্বব্যাপী ৭৬.৮ মিলিয়ন
৩২১ মিলিয়ন ফরাসিভাষী (মাতৃভাষা২য় ভাষা; ২০২২)
ইন্দো-ইউরোপীয়
  • ইতালীয়
    • রোমান্স
      • পশ্চিমা রোমান্স
        • গালো-রোমান্স
          • অইল
            • ফরাসি ভাষা
পূর্বসূরী
প্রাচীন লাতিন
লাতিন লিপি (ফরাসি বর্ণমালা)
ফরাসি ব্রেইল
স্বাক্ষরিত রূপ
সাংকেতিক ফরাসি
(français signé)
সরকারি অবস্থা
সরকারি ভাষা


১০টি পরাধীন ও উপাঞ্চলিক সত্তা
নিয়ন্ত্রক সংস্থা
ভাষা কোডসমূহ
আইএসও ৬৩৯-১fr
আইএসও ৬৩৯-২fre (বি)
fra (টি)
আইএসও ৬৩৯-৩fra
গ্লোটোলগstan1290
লিঙ্গুয়াস্ফেরা51-AAA-i
ফরাসি ভাষা: ইতিহাস, ব্যাকরণ, আরও দেখুন
  যেসব রাষ্ট্রে ফরাসি সংখ্যাগরিষ্ঠ স্থানীয় ভাষা
  যেসব রাষ্ট্রে এটি দাফতরিক বা প্রশাসনিক ভাষা কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ স্থানীয় ভাষা নয়
  যেসব রাষ্ট্রে এটি সংখ্যালঘু বা গৌণ ভাষা
  যেসব রাষ্ট্রে স্থানীয় সংখ্যালঘু ফরাসিভাষী আছে
এই নিবন্ধটিতে আধ্বব ধ্বনিমূলক চিহ্ন রয়েছে। সঠিক পরিবেশনার সমর্থন ছাড়া, আপনি ইউনিকোড অক্ষরের পরিবর্তে প্রশ্নবোধক চিহ্ন, বক্স, অথবা অন্যান্য চিহ্ন দেখতে পারেন।

ফরাসি একাধিক মহাদেশ জুড়ে ২৯টি দেশের দাপ্তরিক ভাষা, যাদের বেশিরভাগই অর্গানিজাসিওঁ অ্যাঁতেরনাসিওনাল দ্য লা ফ্রঁকোফোনির (ওইএফ) সদস্য, ৮৪টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত একটি সম্প্রদায় যারা ফরাসি ভাষার দাফতরিক ব্যবহার বা শিক্ষা দেয়। ফরাসি জাতিসংঘে ব্যবহৃত ছয়টি দাফতরিক ভাষার মধ্যে একটি। এটি মাতৃভাষা হিসেবে কথিত হয় (বক্তার সংখ্যার নিম্নক্রম মোতাবেক): ফ্রান্স; কানাডা (বিশেষত কেবেক, অন্টারিওনিউ ব্রান্সউইক প্রদেশের পাশাপাশি অন্যান্য ফরাসিভাষী অঞ্চল); বেলজিয়াম (ওয়ালোনিয়া ও ব্রাসেলস-রাজধানী অঞ্চল); সুইজারল্যান্ড (পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষত ক্যান্টনগুলো নিয়ে গঠিত রোমান্ডি অঞ্চল); লুক্সেমবুর্গের কিছু অংশ; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশ (লুইজিয়ানা, মেইন, নিউ হ্যাম্পশায়ারভার্মন্ট রাজ্য); মোনাকো; ইতালির আওস্তা উপত্যকা অঞ্চল; এবং অন্যত্র বিভিন্ন সম্প্রদায়ে।

২০১৫ সালে ফরাসিভাষী জনসংখ্যার প্রায় ৪০% (দ্বিতীয় ও আংশিক ভাষাভাষী-সহ) ইউরোপে, ৩৬% সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা ও ভারত মহাসাগরে, ১৫% উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে, ৮% আমেরিকা মহাদেশি দ্বয়ে এবং ১% এশিয়া ও ওশেনিয়ায় বসবাসরত ছিল। ফরাসি হল ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয় সর্বাধিক কথ্য মাতৃভাষা। ইউরোপীয়রা যারা স্থানীয়ভাবে অন্যান্য ভাষায় কথা বলে, তাদের মধ্যে প্রায় এক-পঞ্চমাংশ দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ফরাসিতে কথা বলতে সক্ষম। ফরাসি হল ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয় সর্বাধিক পড়ানো বিদেশি ভাষা। সংস্থাটির সমস্ত প্রতিষ্ঠান ইংরেজি ও জার্মানের সঙ্গে ফরাসিকে একটি দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে; এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠানে ফরাসি হল একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা (যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ন্যায়বিচারিক আদালতে)। এছাড়াও ফরাসি হল বিশ্বের ১৮শ সর্বাধিক স্থানীয়ভাবে কথ্য ভাষা, মোট বক্তার সংখ্যার ভিত্তিতে পঞ্চম সর্বাধিক কথ্য ভাষা এবং বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় বা তৃতীয় সর্বাধিক অধীত ভাষা (২০১৭ সালের জরিপমতে প্রায় ১২ কোটি শিক্ষার্থীসহ)৷ ১৬শ শতকের পর থেকে ফরাসি ও বেলজীয় উপনিবেশবাদের ফলস্বরূপ ফরাসি ভাষা আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার নতুন এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছিল। বেশিরভাগ দ্বিতীয় ভাষাভাষীরা ফরাসিভাষী আফ্রিকাতে বসবাস করে, এবং আরও নির্দিষ্টভাবে বললে গাবোঁ, আলজেরিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়া, মরিশাস, সেনেগাল ও কোত দিভোয়ারে (আইভরি কোস্ট)।

অনুমান করা হয় যে ফরাসি ভাষার প্রায় ৭ কোটি ৬০ লক্ষ মাতৃভাষী বক্তা আছে ভাষাভাষী। সব মিলিয়ে প্রায় ২৩ কোটি ৫ লক্ষ লোক দৈনন্দিন ফরাসি ভাষায় সাবলীল কথা বলেন। এছাড়া আরও ৭ কোটি ৭০ লক্ষ থেকে ১১ কোটি ব্যক্তি দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ফরাসি ভাষায় কথা বলতে পারে; এরা মূলত আফ্রিকায় বাস করে। আন্তর্জাতিক ফরাসিভাষী সংস্থার মতে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৩২ কোটি মানুষ “এই ভাষায় কথা বলতে সক্ষম”, তবে এই অনুমানের মানদণ্ড বা এটি কাদের অন্তর্ভুক্ত করে তার উল্লেখ নেই। লাভাল বিশ্ববিদ্যালয় ও আজঁস উ্যনিভের্সিতের দ্য লা ফ্রঁকোফোনির নেতৃত্বাধীন একটি জনমিতিক প্রক্ষেপণ অনুসারে ২০২৫ সালে মোট ফরাসিভাষীর সংখ্যা প্রায় ৫০ কোটি এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৬৫ কোটিতে গিয়ে পৌঁছাবে। আন্তর্জাতিক ফরাসিভাষী সংস্থার অনুমান মোতাবেক ২০৫০ সালে ৭০ কোটি ফরাসিভাষীর ৮০ শতাংশই হবে আফ্রিকার বাসিন্দা।

সাহিত্য ও বৈজ্ঞানিক মানসম্পন্ন আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ফরাসির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং এটি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, উত্তর অতলান্তিক চুক্তি সংগঠন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটিসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রাথমিক বা দ্বিতীয় ভাষা। ২০১১ সালে ব্লুমবার্গ বিজনেসউইক ইংরেজি ও প্রমিত ম্যান্ডারিন চীনার পর ফরাসিকে ব্যবসায়ের জন্য তৃতীয় সবচেয়ে উপযোগী ভাষা হিসেবে স্থান দিয়েছে।

চীনা, ইংরেজি, হিন্দি, স্পেনীয় এবং আরবি ভাষার পর ফরাসি ভাষা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৩০ কোটি লোক মাতৃভাষা কিংবা দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ফরাসিতে কথা বলে। বিশ্বের প্রায় ৫৪টি দেশে এটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত। ফ্রান্সে ৬ কোটি, কানাডাতে ৭৩ লক্ষ, বেলজিয়ামে প্রায় ৪০ লক্ষ, সুইজারল্যান্ডে প্রায় ১৮ লক্ষ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৩ লক্ষ, ইতালিতে ১ লক্ষ, এবং মোনাকোতে প্রায় ৮০ হাজার ব্যক্তির মাতৃভাষা হল ফরাসি ভাষা। অন্যদিকে আফ্রিকা মহাদেশের ৩৪টি দেশে প্রায় ১৪ কোটি লোক দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ফরাসি ভাষায় কথা বলতে পারে। এশিয়াতে ইন্দোচীন উপদ্বীপের ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়াতে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি মূল আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ফরাসি ব্যবহার করে। এছাড়া ফরাসি ক্রেওল ভাষাভাষীরাও (যেমন হাইতির অধিবাসীরা) আনুষ্ঠানিক পরিস্থিতিতে মান্য ফরাসি ভাষা ব্যবহার করতে পারে।

ফরাসি ২৯টি দেশের সরকারি ভাষা; এগুলিকে একত্রে লা ফ্রঁকোফোনি (La Francophonie) বা “ফরাসিভাষী বিশ্ব” বলে অভিহিত করা হয়। এছাড়াও ফরাসি ভাষা জাতিসংঘ, ইউরোপীয় কমিশন এবং আরও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার দাপ্তরিক ভাষা।

ইতিহাস

রোমানদের গল বিজয় ও সেখানে উপনিবেশ স্থাপনের মধ্য দিয়ে ফরাসি ভাষার ইতিহাসের শুরু। সে সময় কেল্টীয় গল জাতি ছিল গল রাজ্যের অধিবাসী। কেল্টীয়রা ছিল ইন্দো-ইউরোপীয় জাতি। গ্রিক, রোমান ও জার্মানীয় জাতিদের সাথে তাদের মিল ছিল। কেল্টীয়রা শুরুতে মধ্য বা পূর্ব ইউরোপে বাস করত, কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকের দিকে তারা পশ্চিমদিকে যাত্রা শুরু করে এবং প্রায় দুশ বছর পর স্থানীয় লোকদের (বিশেষত আইবেরীয়দের) হটিয়ে দিয়ে গল রাজ্যে বাস করা শুরু করে। এই সময় ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী এলাকাগুলি ছিল গ্রিক সাম্রাজ্যের অধীন, যেমন - মার্সেই, নিস ও অঁতিব। গলদের আক্রমণে অতিষ্ঠ হয়ে এই সব শহরের গ্রিকরা গলে রোমান হস্তক্ষেপ কামনা করে। রোমানরা ১৫৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১২৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত গল আক্রমণ করে এবং ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বে প্রোভিঙ্কিয়া (Provincia) নামের অঞ্চলটি দখল করে (রোমানদের দেয়া এই নাম আজও রয়ে গেছে; ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রেজিওঁ বা প্রশাসনিক অঞ্চলটির বর্তমান নাম প্রোভঁস (Provence))। শুরুতে রোমানদের উপনিবেশ আল্পস পর্বতমালা থেকে পূর্ব পিরেনিজ পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইউলিয়ুস কায়েসার বা জুলিয়াস সিজার গলের বাকী অংশ বিজয়ে মনোযোগ দেন। ৫২ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যেই সমস্ত গল রোমানদের অধীনের আসে। গলেরা ছিল বিচ্ছিন্ন কতগুলি গোত্রের অসংগঠিত সমবায়, তাই রোমানদের গল বিজয় সহজতর হয়।

রোমানদের নতুন অধিকৃত এই উপনিবেশে লাতিন ছিল সরকারি ভাষা। যেসমস্ত গল লাতিন জানত, তাদের সুবিধা ছিল বেশি। রোমানদের আসার আগে গলদের লিখন পদ্ধতি বা শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে কিছুই ছিল না। কিন্তু গলদের শিক্ষার রোমানীকরণের গতি ছিল ধীর। খ্রিস্টীয় ২য় বা ৩য় শতকেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষেরা লাতিন নয়, স্থানীয় গলীয় ভাষাতেই কথা বলত। তবে গ্রামীণ অঞ্চলের ভাষা ছিল বলেই গলীয় ভাষার গর্ব হ্রাস পায়; অন্যদিকে রোন ব-দ্বীপ অববাহিকার ধর্মালয়গুলিতে ৬ষ্ঠ শতক পর্যন্তও লাতিন বা গ্রিকের প্রচলন ছিল।

এরপর ফ্রান্সের উত্তরাংশে জার্মানীয় ভাষাভাষী ফ্রাঙ্ক গোত্র (যাদের নাম থেকে ফ্রান্স নামটি এসেছে) অনুপ্রবেশ করে, ফলে উত্তর ফ্রান্স ও দক্ষিণ ফ্রান্সের ভাষায় পার্থক্য দেখা দেয়। সারা মধ্যযুগ ধরে উত্তর ও দক্ষিণের ভাষাগুলি আরও বিভিন্ন উপভাষায় ভাগ হতে থাকে। ফলে উত্তরে ফ্রঁসিয়াঁ, পিকার, নর্মান, লোরেন, ওয়ালন, ইত্যাদি উত্তর ফরাসি উপভাষা এবং দক্ষিণের প্রোভঁসাল ভাষা ভাগ হয়ে লঁগদোসিয়াঁ, ওভের্নিয়া, ও আরও বহু উপভাষার উৎপত্তি ঘটে। এদের মধ্যে প্যারিসের উপভাষাটি রাজধানীর রাজনৈতিক মর্যাদার কারণে ধীরে ধীরে জাতীয় ভাষায় পরিণত হয়। প্যারিসের উপভাষার আদর্শ রূপ সারা ফ্রান্সে ও পরবর্তীকালে সারা পৃথিবীতে মূল ফরাসি ভাষা হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে।

ফরাসি ভাষার ইতিহাসকে মূলত নিচের ছয়টি পর্বে ভাগ করা যায়।

১. গালো-রোমান্স পর্ব (৫ম-৮ম শতক): গলে প্রচলিত প্রাকৃত লাতিন ভাষা এসময় এমন সব বৈশিষ্ট্য অর্জন করে, যা রোমান সাম্রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলে প্রচলিত লাতিন ভাষা থেকে এটিকে আলাদা করে দেয়। রেশ্‌নো গ্লসগুলি এই পর্বের ধ্বনিব্যবস্থা ও শব্দভাণ্ডারের সাক্ষ্য বহন করছে।

২. প্রাচীন ফরাসি ভাষা (৯ম-১৩শ শতক): উত্তর গলের উপভাষাগুলি নিজস্ব ব্যাকরণবিশিষ্ট একটি আলাদা ভাষায় পরিণত হয়, যার নাম দেয়া হয়েছে লং দই (Langue d'oil)। ৮৪২ সালে রচিত স্ত্রাসবুর শপথগুলি (Strasbourg Oaths) এই ভাষার প্রাচীনতম লিখিত নিদর্শন। ১০ম শতকে প্রাচীন ফরাসি সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। এসময় পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে, বিশেষত জার্মানিতে ফরাসি ভাষা পড়ানো হত। ১১শ-১৩শ শতক পর্যন্ত ইংরেজ প্রশাসনের মূল ভাষা ছিল এই প্রাচীন ফরাসি।

৩. মধ্য ফরাসি (১৪শ-১৫শ শতক): এই পর্বে ফরাসি উচ্চারণ ও ব্যাকরণে পরিবর্তন ঘটে। লেখক-সাহিত্যিকেরা প্যারিস ও তার আশেপাশের এলাকা তথা ইল-দ্য-ফ্রঁস (Île de France) অঞ্চলের উপভাষাকে একটি আদর্শ সাহিত্যিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেন। এসময় ফ্রান্সের সরকারি প্রশাসনের বিভিন্ন লেখায় ফরাসি ভাষা লাতিনের স্থান দখল করতে থাকে।

৪. প্রাথমিক আধুনিক ফরাসি (১৬শ শতক): এই পর্বে ফরাসি লেখকদের উদ্দেশ্য ছিল ফরাসি ভাষাকে সাহিত্যের মাধ্যম হিসেবে লাতিন ভাষার সমমর্যাদায় উন্নীত করা। ১৫৩৯ সালে রাজকীয় আদেশ জারির মাধ্যমে ফরাসিকে ফ্রান্সের সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়। তখন থেকেই ফরাসি সরকার ফরাসি ভাষার উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ও আদর্শায়নের ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে।

৫. ধ্রুপদী আধুনিক ফরাসি (১৭শ-১৮শ শতক): আধুনিক ফরাসি ভাষার ব্যাকরণের মূল অংশগুলি এই পর্বেই স্থিতিশীল রূপ লাভ করে। এই সময় ফরাসি গোটা ইউরোপের আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এমনকি জার্মানির প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডেও ফরাসি ভাষাই ব্যবহৃত হত। এ সময় ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণের ফলে ফরাসি ভাষা ইউরোপের সীমানা ছাড়িয়ে আমেরিকা মহাদেশে (কানাডা, লুইজিয়ানা, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ, ইত্যাদিতে) ছড়িয়ে পড়ে ।

৬. সমসাময়িক আধুনিক ফরাসি (১৯শ শতক-বর্তমান): আধুনিক আদর্শ ফরাসি ভাষার বর্তমান উচ্চারণের ধরন এই পর্বে এসে স্থির হয়, মূলত ১৭৮৯ ও ১৯১৮ সালের মধ্যবর্তী সময়ে। ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের আফ্রিকান উপনিবেশগুলিতে ফরাসি ভাষাকে মূল সরকারি ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।

ব্যাকরণ

ফরাসি ব্যাকরণ লাতিন ব্যাকরণের ওপর ভিত্তি করে রচিত। ফরাসি ব্যাকরণের সাথে অন্যান্য রোমান্স ভাষার ব্যাকরণের অনেক ক্ষেত্রে মিল আছে।

ফরাসি বিশেষ্যগুলির দুইটি ব্যাকরণিক লিঙ্গ (পুং ও স্ত্রী) আছে এবং এগুলি বিশেষ্যের রূপ দেখে সহজে নির্ণয় করা যায় না। এছাড়াও বিশেষ্যের একবচন ও বহুবচন হয়। বিশেষ্যগুলিতে কারকচিহ্ন বা বিভক্তি বসে না।

ফরাসি বিশেষণগুলি সাধারণত বিশেষ্যের পরে বসে এবং বিশেষ্যের লিঙ্গ ও বচনের সাথে সাযুজ্য রেখে পরিবর্তিত হয়। ফরাসিতে নির্দিষ্ট ও অনির্দিষ্ট নির্দেশক (article) ব্যবহৃত হয়, যেগুলি বিশেষ্যের লিঙ্গ ও বচনের সাথে সাযুজ্য রক্ষা করে। যেমন - une voiture blanche উ্যন্‌ ভোয়াত্যুর্‌ ব্লঁশ্‌ "একটি সাদা গাড়ি" --- এই উদাহরণটিতে voIture বিশেষ্যটি একবচন ও স্ত্রীলিঙ্গ বলে নির্দেশক une এবং বিশেষণ blanche-ও একবচন ও স্ত্রীলিঙ্গের রূপ ধারণ করেছে।

ফরাসি সর্বনামগুলি পুরুষ, লিঙ্গ ও বচনের জন্য চিহ্নিত। এছাড়া বাক্যে ভূমিকা (কর্তা, মুখ্য কর্ম, গৌণ কর্ম) অনুযায়ী এগুলিতে বিভক্তি যুক্ত হয়। ফরাসিতে দ্বিতীয় পুরুষের সর্বনামে নৈকট্যসূচক tu এবং সম্ভ্রমসূচক vous-এর মধ্যে পার্থক্য করা হয়।

ক্রিয়া

বেশির ভাগ ফরাসি ক্রিয়াকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করে নেয়া যায়, যার দুইটি নিয়মিত (regular) শ্রেণী (-er এবং -ir-এ শেষ হওয়া ধাতুমূল) এবং একটি অনিয়মিত (irregular) শ্রেণী। প্রতিটি নিয়মিত শ্রেণীতে কাল (tense), প্রকার (aspect), পুরুষ ও বচনভেদে ক্রিয়ামূল বা ধাতুর (root) সাথে একই রকম বিভক্তি যুক্ত হয়। ফরাসি ক্রিয়াগুলি পুরুষ ও বচনের জন্য চিহ্নিত। ক্রিয়ার চারটি সরল কাল ও পাঁচটি যৌগিক কাল আছে। Être এত্র্‌ "হওয়া" কিংবা avoir আভোয়ার্‌ "থাকা" ক্রিয়ার সাহায্য নিয়ে যৌগিক কালগুলি গঠন করা হয়। ক্রিয়াগুলির চারটি ভাব (mood) আছে: নির্দেশক (indicative) ভাব, অনুজ্ঞাবাচক (imperative) ভাব, অভিপ্রায়ার্থক (subjunctive) ভাব ও সাপেক্ষ (conditional) ভাব। আরও আছে দুইটি বাচ্য: কর্তৃবাচ্য ও কর্মবাচ্য। কর্মবাচ্য "être"-কে সহায়িকা ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহার করে গঠন করা হয়। ফরাসি নঞকরণ (negation) দুইটি অংশ নিয়ে সম্পন্ন হয়, যেমন - Je ne sais pas জ্য ন্য সে পা "আমি জানি না।" এখানে ne ন্য সামগ্রিকভাবে নঞর্থকতা নির্দেশ করছে এবং pas পা নির্দেশ করছে নঞর্থকতার ধরন। তুলনার জন্য দেখুন: Je ne sais rien জ্য ন্য সে রিয়াঁ "আমি কিছুই জানি না", Je ne le dis plus জ্য ন্য ল্য দি প্লু "আমি তা আর বলি না", এবং Je ne le dis jamais জ্য ন্য ল্য দি জামে "আমি কখনো তা বলি না"

পদক্রম

যৌগিক ক্রিয়া, কর্ম, ক্রিয়াবিশেষণীয় সর্বনাম, উৎক্রম (inversion), অনুজ্ঞা, ক্রিয়াবিশেষণ, ও নঞর্থক গঠনগুলির মধ্যকার আন্তঃসম্পর্কের কারণে ফরাসি ভাষার পদক্রম বেশ জটিল। তবে কর্তা ক্রিয়া কর্ম পদক্রমই প্রধান। যেমন - Je prends un café জ্য প্রঁ আঁ কাফে "আমি কফি খাই" বাক্যটিতে প্রথমে বসেছে কর্তা Je, তারপরে ক্রিয়া prends, এবং তারপর কর্ম café।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

ফরাসি ভাষা ইতিহাসফরাসি ভাষা ব্যাকরণফরাসি ভাষা আরও দেখুনফরাসি ভাষা তথ্যসূত্রফরাসি ভাষা বহিঃসংযোগফরাসি ভাষাইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহউইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় ফরাসি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণকেল্টীয় ভাষাসমূহগলজার্মানীয় ভাষাসমূহপ্রাকৃত লাতিনফরাসি ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যফ্রাঙ্ক জাতিফ্রান্সবেলজিয়ামরোমান সাম্রাজ্যরোমান্স ভাষাসমূহহাইতীয় ক্রেওল ভাষা

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

যুক্তফ্রন্টক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামইব্রাহিম (নবী)সাকিব আল হাসানচঞ্চল চৌধুরীদর্শনসমকামিতাবাংলাদেশ নৌবাহিনীর পদবিবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধজাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালকৃষ্ণচূড়াপৃথিবীর বায়ুমণ্ডলবাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীযোহরের নামাজবাংলাদেশ সেনাবাহিনীসত্যজিৎ রায়সাহাবিদের তালিকাকুরআনের ইতিহাসজুনাইদ আহমেদ পলকজ্বীন জাতিথ্যালাসেমিয়াআন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলদশাবতারমিশনারি আসনধর্মপাল (পাল সম্রাট)পলাশীর যুদ্ধবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়আব্দুল সামাদশুক্র গ্রহমহাত্মা গান্ধীশাবনূরআল্লাহবাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরদের তালিকাইউনিলিভারইসরায়েলইসলামে বিবাহবেনজীর আহমেদজাতিসংঘের মহাসচিবমহাদেশ অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাবাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসবাংলাদেশের ইউনিয়নআর্সেনাল ফুটবল ক্লাবলালসালু (উপন্যাস)মাওয়ালিসমাসসিন্ধু সভ্যতাবৃত্ত২০২৪মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কোণপিরামিডপদ (ব্যাকরণ)খালেদা জিয়াযুক্তরাজ্যঅকাল বীর্যপাতমুহাম্মাদের সন্তানগণবাংলাদেশ ছাত্রলীগবাংলাদেশী অভিনেত্রীদের তালিকাময়মনসিংহ বিভাগমিজানুর রহমান আজহারীঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানদারাজকাজলবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীলোকসভা কেন্দ্রের তালিকাচুম্বকপূরণবাচক সংখ্যা (ভাষাতত্ত্ব)প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় (বাংলাদেশ)কর্কটক্রান্তিইহুদিইসরায়েলের ইতিহাসবাঙালি হিন্দু বিবাহ১ (সংখ্যা)পৃথিবীশিক্ষককাজী নজরুল ইসলামজয়া আহসানপানিপথের প্রথম যুদ্ধ🡆 More