অঁরি মাতিস (ফরাসি: Henri Matisse; আ-ধ্ব-ব: ; ৩১ ডিসেম্বর ১৮৬৯ – ৩ নভেম্বর ১৯৫৪) একজন ফরাসি শিল্পী। তিনি রেখাচিত্র, ছাপচিত্র ও ভাস্কর্য সৃষ্টিতে পটু হলেও মূলত চিত্রকর হিসেবেই খ্যাতি লাভ করেন।.
তাঁকে ফোভ ঘরানার নেতৃস্থানীয় শিল্পী ও ২০শ শতকের আধুনিক শিল্পকলার পথপ্রদর্শনকারী মহাশিল্পীদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়।. শৈল্পিক আবেগের অভিব্যক্তি প্রকাশের বাহক হিসেবে রঙ ও আকৃতির সুনিপুণ ব্যবহারে মাতিস প্রতিভা ও দক্ষতার পরিচয় দেন।
অঁরি মাতিস | |
---|---|
জন্ম | অঁরি এমিল ব্যনোয়া মাতিস ৩১ ডিসেম্বর ১৮৬৯ ল্য কাতো-কঁব্রেজি, ফ্রান্স |
মৃত্যু | ৩ নভেম্বর ১৯৫৪ নিস, ফ্রান্স | (বয়স ৮৪)
জাতীয়তা | ফরাসি |
শিক্ষা | আকাদেমি জুলিয়ঁ, উইলিয়াম-আডলফ বুগরো, গ্যুস্তাভ মোরো |
পরিচিতির কারণ |
|
উল্লেখযোগ্য কর্ম | লা ফাম ও শাপো (১৯০৫) ল্য বোনর দ্য ভিভ্র (১৯০৬) ন্যু ব্লো (১৯০৭) লা দঁস (১৯০৯) লাত্যলিয়ে রুজ (১৯১১) |
আন্দোলন | ফোভবাদ, আধুনিকবাদ, উত্তর-অন্তর্মুদ্রাবাদ |
দাম্পত্য সঙ্গী | আমেলি নোয়েল পারের (বি. ১৮৯৮; বিচ্ছেদ. ১৯৩৯) |
সন্তান | ৩ |
পৃষ্ঠপোষক | সের্গেই শ্চুকিন, গেরট্রুড স্টাইন, এটা কোন, ক্ল্যারিবেল কোন, সারা স্টাইন, আলবার্ট সি. বার্নস |
মাতিসের পূর্ণ নাম অঁরি এমিল ব্যনোয়া মাতিস (ফরাসি: Henri Émile Benoît Matisse; আ-ধ্ব-ব: [ɑ̃ʁi emil bənwɑ matis])। তিনি ১৮৬৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর তারিখে উত্তর ফ্রান্সের নর দেপার্ত্যমঁ-র (জেলার) লে কাতো (বর্তমান ল্য কাতো-কঁব্রেজি) শহরে জন্মগ্রহণ করেন। মধ্যবিত্ত দোকানদার পরিবারের সন্তান মাতিস প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অনুষদে ১৮৮৭ থেকে ১৮৮৯ সালে পড়াশোনা করা শেষ করে আইনি পেশায় ঢুকেছিলেন। কিন্তু ১৮৯০ সালে অ্যাপেন্ডিক্স-কর্তন অস্ত্রোপচার থেকে ধীরে ধীরে সেরে ওঠার সময় তিনি রঙচিত্র অঙ্কনের ব্যাপারে উৎসুক হয়ে ওঠেন। ১৮৯২ সালে তিনি আইনি পেশাজীবন ত্যাগ করেন এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিল্পকলা নিয়ে পড়াশোনা করতে আবার প্যারিস নগরীতে চলে আসেন। সেখানে গ্যুস্তাভ মোরোকে তাঁর আঁকা কিছু রেখাচিত্র দেখিয়ে তাঁর কর্মশালায় যোগদান করেন।
মাতিসের প্রথম শিক্ষকেরা ছিলেন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাপ্রাপ্ত এবং আপেক্ষিকভাবে বেশ রক্ষণশীল। মাতিসের যৌবনের প্রথম দিককার চিত্রকর্মগুলির শৈলী ছিল প্রকৃতিবাদের প্রাতিষ্ঠানিক রীতিসম্মত একটি রূপ। এ সময় তিনি পুরাতন ঐতিহ্যবাহী বহু মহাশিল্পীর চিত্র নকল করতেন। এছাড়া তিনি সমসাময়িক শিল্পকলাও অধ্যয়ন করতেন, বিশেষ করে অন্তর্মুদ্রাবাদীদের শিল্পকর্মগুলি। এসময় তাঁর চিত্রকর্মে "লে নাবি" (Les Nabis) শিল্পী সম্প্রদায়ের প্রকৃতিবাদের প্রতি আকর্ষণ লক্ষ্য করা যায়। এরপরে তিনি অঙ্কন নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেন এবং তাঁর কর্মশালা শ্রেণীর একজন বিদ্রোহী সদস্য হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। এসময় উত্তর-পশ্চিম ফ্রান্সের ব্র্যতাইন অঞ্চল ও ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ কর্স (কর্সিকা) ভ্রমণ করার পরে তিনি অন্তর্মুদ্রাবাদীদের প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য-সংবলিত চিত্রকর্মগুলিতে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান।
মাতিস মোটামুটি ১৮৮৯ সালের পর থেকে ফরাসি চিত্রশিল্পী পোল গোগাঁ এবং ওলন্দাজ চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভান গখের চিত্রকর্মগুলি গভীরভাবে অধ্যয়ন করা শুরু করেন, এবং এর পরেই রঙের নিপুণ ব্যবহারের মাধ্যমে আকৃতিকে রূপদান করা ও স্থানিক তলগুলিকে সুসংগঠিত করার ক্ষেত্রে তাঁর প্রকৃত শৈল্পিক স্বাধীনতা আসতে শুরু করে। এরপর ১৯০৩ ও ১৯০৪ সালে মাতিস যথাক্রমে অঁরি-এদমোঁ ক্রস এবং পোল সিনিয়াকের বিন্দুবাদী চিত্রকর্মগুলির দেখা পান। ১৯০৪ সালে তিনি দক্ষিণ ফ্রান্সের সাঁ-ত্রোপে শহরে পোল সিনিয়াকের বাসাতে অতিথি হিসেবে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ক্রস ও সিনিয়াক পরীক্ষামূলকভাবে তুলির অতিক্ষুদ্র বিন্দুবৎ বিশুদ্ধ রঙের আঁচড় পাশাপাশি স্থাপন করে করে গাঢ় রঙ বা বর্ণের সবচেয়ে জ্বলজ্বলে দৃশ্যমান কম্পন সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। মাতিস তাদের এই কৌশল নিজের কাজে প্রয়োগ করেন, যার উদাহরণ ল্যুক্স, কাল্ম এ ভোল্যুপ্তে (১৯০৪, ম্যুজে দর্সে, প্যারিসে সংরক্ষিত), এবং বারংবার এর পরিবর্তন সাধন করেন। মাতিস প্রশস্ত আঁচড় দিতে পছন্দ করতেন।
১৯০৫ সাল নাগাদ মাতিস তাঁর সবচেয়ে সাহসী রঙিন চিত্রকর্মগুলি সৃষ্টি করে ফেলেন। এদের মধ্যে ১৯০৫ সালে সৃষ্ট লা রে ভের্ত (La Raie Verte, "সবুজ ডোরা", বা Le Portrait de Madame Matisse, ল্য পোর্ত্রে দ্য মাদাম মাতিস, "শ্রীমতি মাতিসের প্রতিকৃতি") নামের তাঁর স্ত্রীকে উপজীব্য করে আঁকা একটি চিত্রকর্ম ছিল খুবই সাহসী। চিত্রকর্মটি বর্তমানে ডেনমার্কের রাষ্ট্রীয় শিল্পকলা জাদুঘর (স্টাটেনস মুজেউম ফর কুন্সট)-এ সংরক্ষিত আছে। চিত্রটিতে মাদাম মাতিসের কপাল, ভুরু ও নাককে সংজ্ঞায়িত করার জন্য মাতিস অত্যন্ত উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের একটিমাত্র প্রশস্ত আঁচড় ব্যবহার করেন।
১৯০৫ সালেই মাতিস তাঁর সহযোগী শিল্পীদের সাথে (যাদের মধ্যে অঁদ্রে দ্যরাঁ ও মোরিস দ্য ভ্লামিংক অন্যতম) এই চিত্রকর্মটিসহ আরও অন্যান্য একই ধরনের বেশ কিছু চিত্রকর্ম তৃতীয় শরৎকালীন শিল্পমেলাতে (সালোঁ দোতন Salon d'Automne) প্রদর্শন করেন। এই শিল্পীদেরকে বিদ্রূপ করে সমষ্টিগত ডাকনাম দেওয়া হয় "লে ফভ" (Les Fauves), যার আক্ষরিক অর্থ "বন্য পশুর দল", কেননা রঙের "হিংস্র" ব্যবহার ও আকার-আকৃতির বিকৃতি ঘটিয়ে তাঁরা অনুভূতিবাদের চরম পর্যায়ে যেতে পছন্দ করতেন।
মাতিসকে শিল্পকলায় আমূলসংস্কারবাদের একজন নেতা হিসেবে গণ্য করা হলেও ধীরে ধীরে তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শিল্প সমালোচক ও সংগ্রহকের তারিফ পাওয়া শুরু করেন, যাদের মধ্যে মার্কিন প্রবাসী লেখক গেরট্রুড স্টাইন ও তাঁর পরিবার ছিল অন্যতম। এসময় তিনি অর্থের বিনিময়ে অনেক শিল্পকর্ম সৃষ্টির কাজ লাভ করেন, যাদের একজন রুশ চিত্র সংগ্রাহক তাঁকে নৃত্য ও সঙ্গীতের চিত্র প্রদর্শনকারী দেয়ালচিত্রের প্যানেল অঙ্কনের কাজে নিয়োগ দেন। ১৯১১ সালে সমাপ্ত প্যানেলগুলি বর্তমানে রাশিয়ার সাংত পেতেরবুর্গ (সেন্ট পিটার্সবার্গ) নগরীর হার্মিটেজ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। মাতিসও এ ধরনের বড়ো ব্যাপ্তির বিষয়বিস্তু পছন্দ করতেন, কেননা এতে তাঁর উদ্ভাবনশীলতার স্বাধীনতা থাকার পাশাপাশি আকৃতি ও অভিব্যক্তি নিয়ে খেলা করার সুযোগ থাকত। মাতিসের আঁকা নৃত্যশিল্পী ও আরও সাধারণভাবে মানবদেহের রূপায়নগুলিতে সর্বাগ্রে থাকত অভিব্যক্তির রূপায়ন, আর শারীরিক আকৃতির খুঁটিনাটির মতো ব্যাপারগুলি ছিল গৌণ। মাতিস এই মূলনীতি শিল্পকলার অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করেন। রেখাচিত্র, বিভিন্ন দৃশ্যমান মাধ্যম এমনকি ব্রোঞ্জের মূর্তিতেও তিনি তাঁর চিত্রকর্মগুলির মতোই একই রকমের অভিব্যক্তিমূলক অবয়ব-রেখার প্রকাশ ঘটান।
বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অত্যন্ত পরিশীলিত হলেও মাতিস সবসময়েই কোনও শিল্পকর্ম সৃষ্টির সময়ে স্বতঃস্ফূর্ত প্রেরণা ও সহজাত জ্ঞানের গুরুত্বের উপর জোর দিতেন। তিনি যুক্তি দেন যে একজন শিল্পী কখনোই রঙ ও আকৃতির উপরে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন না। বরং রঙ, আকৃতি ও রেখা একজন সংবেদনশীল শিল্পীকে প্রভাবিত এমনকি নিয়ন্ত্রণও করতে পারে, যাতে তিনি বুঝতে পারেন কীভাবে এগুলিকে একে অপরের সাপেক্ষে ব্যবহার করা যায়। তিনি রঙ ও নকশার শক্তির খেলাতে তাঁর বিলীন হয়ে যাবার আনন্দের উপরে জোর দিয়ে বলেন। তিনি বলেন তাঁর চিত্রকর্মগুলির আকৃতিগুলির ছান্দিক কিন্তু বিকৃত রূপ এক ধরনের চিত্রভিত্তিক ঐকতানের ফসল।
১৯২০-এর দশক থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাতিস তাঁর শেষজীবনের বেশির ভাগ সময় ফ্রান্সের দক্ষিণভাগে, বিশেষ করে নিস শহরে, অতিবাহিত করেন। সেখানে তিনি উজ্জ্বল রঙের পাতলা, প্রবাহী প্রয়োগ ঘটিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন দৃশ্যাবলি আঁকতেন। শেষ বয়সে কান শহরের কাছে অবস্থিত সাঁ-মারি দ্যু রোজের নামের একটি ছোট্ট গির্জার শোভাবর্ধক নকশা আঁকার জন্য তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়, যে কাজ তিনি ১৯৪৭ ও ১৯৫১ সালের মধ্যে সমাপ্ত করেন। জীবনের একেবারে শেষ বছরগুলিতে তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন। এসময় তিনি "দেকুপাজ" (Découpage, "কাগজ কাটা") নামের এক ধরনের শিল্পকলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সেখানে তিনি উজ্জ্বল বর্ণের কাগজ কেটে কেটে সেগুলিকে পটের কাপড়ে সাজিয়ে নকশা বানাতেন।
১৯৫৪ সালের ৩রা নভেম্বর মাতিস শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সৌভাগ্যবান এই শিল্পী জীবদ্দশাতেই আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তা, শিল্প সংগ্রাহকদের দাক্ষিণ্য, সমালোচকদের সুদৃষ্টি ও তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের সম্মান লাভ করেন। দুইটি জাদুঘরে মাতিসের শিল্পকর্মগুলি সংরক্ষিত আছে; একটি হল ল্য ম্যুজে মাতিস দ্য নিস (Musée Matisse de Nice)এবং অপরটি হল ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত ম্যুজে দ্যু কাতো-কঁব্রেজি (Musée du Cateau-Cambrésis)।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article অঁরি মাতিস, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.