নারী: প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা মানুষ

নারী বলতে একজন পূর্ণ বয়স্ক মহিলা মানুষকে বোঝায়। যৌবনকালে পৌছাবার পূর্বে একজন নারীকে মেয়ে বলে সম্বোধন করা হয়। নারী শব্দটিকে যখন নারী অধিকার শব্দগুচ্ছে ব্যবহার করা হয় তখন বয়সের ব্যাপারটিকে প্রাধান্য দেয়া হয়না।

নারী: পরিভাষা, জীববিদ্যা, স্বাস্থ্য
একজন নারী

সাধারণত, মহিলাদের দেহে দুটি X ক্রোমোজোম থাকে এবং তারা বয়ঃসন্ধি থেকে মেনোপজ পর্যন্ত গর্ভধারণ করতে এবং জন্ম দিতে সক্ষম। মহিলাদের শরীরকে পুরুষদের শরীর থেকে মহিলা প্রজনন ব্যবস্থা -এর মাধ্যমে আলাদা করা যায়।  মহিলা প্রজনন ব্যবস্থা-এর মধ্যে রয়েছে ডিম্বাশয়, ফ্যালোপিয়ান টিউব, জরায়ু, যোনি এবং ভালভা । প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের পেলভিসনিতম্ব চওড়া এবং স্তন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের তুলনায় বড় হয়ে থাকে। মহিলাদের মুখের এবং অন্যান্য শরীরের লোম উল্লেখযোগ্যভাবে কম হয়, শরীরে চর্বি বেশি থাকে এবং পুরুষদের তুলনায় গড় উচ্চতা কম হয় এবং শরীররে পেশি কম থাকে।

মানব ইতিহাস জুড়ে, ঐতিহ্যগত ভাবে লিঙ্গ দৃঢ়তা প্রায়ই মহিলাদের কার্যকলাপ ও সুযোগকে সংজ্ঞায়িত এবং সীমিত করেছে; অনেক ধর্মীয় মতবাদ নারীদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম বেঁধে দেয়। বিংশ শতাব্দীতে অনেক সমাজে বিধিনিষেধ শিথিল হতে থাকে এবং এর ফলে নারীরা প্রথাগত গৃহকর্মীর বাইরের ক্যারিয়ারে প্রবেশ করতে শুরুকরে এবং উচ্চ শিক্ষা অর্জনের সুযোগ  পেয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং এটি প্রাথমিকভাবে পুরুষরাই করে থাকে তা সে পরিবারেই হোক বা সম্প্রদায়ের মধ্যেই হোক। কিছু নারী তো  প্রজনন অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়। নারীবাদী আন্দোলন এবং মতাদর্শের মধ্যে লিঙ্গ সমতা অর্জনের একটি যৌথ লক্ষ্য রয়েছে।

ট্রান্স মহিলারা(যারা নিজেদের লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তন করে) একটি লিঙ্গ পরিচয় বিকাশ করে যা জন্মের সময় তারা যে পুরুষ লিঙ্গ পরিচয় পায় তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, অন্যদিকে  আন্তঃলিঙ্গ মহিলাদের এমন যৌন বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে যা সাধারন মহিলাদের  শারীরিক বিশিষ্টর সাথে খাপ খায় না।

পরিভাষা

নারীত্ব বলতে বুঝায় শৈশব, বয়ঃসন্ধি এবং কৈশোর পার হওয়ার পর একজন নারীর পরবর্তী জীবনকাল । বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আইন রয়েছে, কিন্তু 18 বছর বয়সকে প্রায়শই প্রাপ্তবয়স্ক বিবেচনা করা হয় (যে বয়সে একজন ব্যক্তিকে আইনত পূর্ণয়স্ক হিসাবে বিবেচনা করা যায়)।

নারী শব্দটি সাধারণভাবে যে দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবহার করা হয় তা হল, যে কোনো মহিলা মানুষ বোঝাতে, বা বিশেষভাবে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা মানবকে বোঝাতে যা "মেয়ে" শব্দটির পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়ে থাকে । মেয়ে শব্দটি মূলত ইংরেজিতে "young person of either sex" হিসেবে বোঝায়; এটি 16 শতকের শুরুতে বিশেষভাবে একটি কন্যা শিশুকে বোঝাতে ব্যাবহার করা শুরু হয়েছিল। মেয়ে শব্দটি কখনও কখনও অল্পবয়সী বা অবিবাহিত মহিলাকে বোঝাতে কথায়কথায় বব্যাবহার করা হয়; যাইহোক, 1970-এর দশকের গোড়ার দিকে, নারীবাদীরা এই ভাবে শব্দটির ব্যবহারকে চ্যালেঞ্জ করেছিল কারণ পূর্ণ বয়স্ক একজন মহিলাকে বোঝাতে এই শব্দের ব্যবহার অপরাধমূলক কাজ হতে পারে। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে,office girl-এর মতো পূর্ব সাধারণ ভাবে ব্যবহৃত শব্দ আর ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় না বিপরীতভাবে,এমন কিছু সংস্কৃতি আছে যেখানে পারিবারিক মর্যাদাকে মহিলাদের কুমারীত্বের সাথে যুক্ত করে দেখা হয়, এ দৃষ্টিকোণ থেকেমেয়ে শব্দটিকে (বা অন্যান্য ভাষায় এর সমতুল্য) এখনও কখনও বিবাহিত মহিলাদেরকে বোঝাতে ব্যাবহার করা হয়; এদিক থেকে এটি একটি ফ্যাশনে ব্যবহৃত হয় যা মোটামুটিভাবে কম-বেশি অপ্রচলিত ইংরেজি maid or maiden সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

নারীর বিশিষ্ট বোঝাতে বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করা হয়। "নারীত্ব" শব্দটি দ্বারা শুধু একজন মানুষের মহিলা হওয়াকে বুঝায়,যে ব্যক্তি(নারী) মাসিক অতিক্রম করেছে; "নারীত্ব" লিঙ্গ দৃঢ়বদ্ধতা-র একটি নির্দিষ্ট মনোভাবের সাথে যুক্ত এবং এর দ্বারা মহিলাদের গুণাবলীর একটি সেটকে বোঝানো হয়; "womanliness" এবং "femininity" অনেকটা একই রকম, কিন্তু সাধারণত লিঙ্গ ভূমিকার ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ব্যাবহার করা হয়। "Distaff" হল একটি প্রাচীন বিশেষণ যা স্পিনার হিসাবে মহিলাদের প্রচলিত ভূমিকা থেকে উদ্ভূত, এখন শুধুমাত্র একটি ইচ্ছাকৃতভাবেপ্রত্নতাত্ত্বিকতা হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

মাসিক মূলত ১২-১৩ গড় বয়সের মধ্যে শুরু হয়। এমন বহু সংস্কৃতি আছে যেখানে মেয়েদের এই আগত সময়টাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান ও আয়োজন করা হয় যেমন খ্রিস্টানদের কিছু শাখায় স্বীকৃতিদান অনুষ্ঠান, ইহুদি ধর্মে bat mitzvah অথবা এমন একটি আচার-অনুষ্ঠান যেখানে একটি নির্দিষ্ট জন্মদিনকে(12 থেকে ২১ বছরের মধ্যে) বিশেষভাবে পালন করা হয়- যেমন লাতিন আমেরিকার কুইন্সিনারা উৎসব।

লিঙ্গ পরিবর্তনকারী মহিলারা(যারা নিজেদের লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তন করে) একটি লিঙ্গ পরিচয় বিকাশ করে যা জন্মের সময় তারা যে পুরুষ লিঙ্গ পরিচয় পায় তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, অন্যদিকে  আন্তঃলিঙ্গ মহিলাদের এমন যৌন বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে যা সাধারন মহিলাদের  শারীরিক বিশিষ্টর সাথে খাপ খায় না।

জীববিদ্যা

নারী: পরিভাষা, জীববিদ্যা, স্বাস্থ্য 
একটি মানব মহিলার বর্ণালী ক্যারিওটাইপ

জেনেটিক বৈশিষ্ট্য

সাধারণত মহিলাদের শরীর থেকে সংগৃহীত কোষে দুটি X ক্রোমোজোম থাকে এবং পুরুষদের শরীর থেকে সংগৃহীত কোষে একটি X এবং একটি Y ক্রোমোজোম থাকে। ভ্রূণের প্রথমিক বিকাশকালে অর্থাৎ ১ম 6 বা 7 সপ্তাহের আগ পর্যন্ত উভয় লিঙ্গের ভ্রূণই আকারে একই রকম থাকে কিন্তু এর পর Y ক্রোমোজোমের ক্রিয়াকলাপের কারণে পুরুষদের মধ্যে গোনাডগুলি অণ্ডকোষে পার্থক্য করে। লিঙ্গের পার্থক্য মহিলাদের মধ্যে এমনভাবে এগিয়ে যায় যেন তা গোনাডাল হরমোনের ক্রিয়া মুক্ত। যেহেতু মানুষ শুধুমাত্র মায়ের ডিম্বাণু থেকে মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ উত্তরাধিকার সূত্রে পায়, তাই বংশবৃতান্ত সংক্রান্ত গবেষকরা অনেক পুরনো মাতৃ বংশের সন্ধান করতে পারেন।

নারী: পরিভাষা, জীববিদ্যা, স্বাস্থ্য 
তুলনা করার জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের সাথে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা মানুষের ফটোগ্রাফ। উল্লেখ্য যে উভয় মডেলের পিউবিক চুল অপসারণ করা হয়।

হরমোনের বৈশিষ্ট্য, মাসিক এবং মেনোপজ

মহিলাদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকাল শরীরে এমন পরিবর্তন ঘটায় যা নিষিক্তকরণের মাধ্যমে যৌন প্রজনন সক্ষম করে। পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে রাসায়নিক সংকেতের প্রতিক্রিয়ায়, ডিম্বাশয় হরমোন নিঃসরণ করে যা শরীরের পরিপক্কতাকে উদ্দীপিত করে এবং এর ফলে উচ্চতা এবং ওজন বাড়ে, শরীরের চুলের বৃদ্ধি ঘটে, স্তনের বিকাশ হয় এবং মাসিক (ঋতুস্রাবের শুরু) হয় এবং এগুলো সাধারণত 12-13 বছর বয়সের মধ্যে ঘটে।

বেশিরভাগ মেয়েদের ক্ষেত্রেই তারা মাসিকের মধ্য দিয়ে যায় এবং তারপর গর্ভবতী হতে এবং সন্তান ধারণ করতে সক্ষম হয়ে ওঠে। এটির জন্য সাধারণত যৌন মিলনের মাধ্যমে পুরুষের শুক্রাণুর সাথে তার ডিমের অভ্যন্তরীণ নিষিক্তকরণের প্রয়োজন হয়, যদিও প্রজনন প্রযুক্তিতে এর বিকল্প রয়েছে।

সাধারণত 49 থেকে 52 বছর বয়সের মধ্যে একজন নারীর মেনোপজ হয় (এটি ক্লাইম্যাক্টেরিক নামেও পরিচিত), যা নারীদের জীবনের এমন সময়কে নির্দেশ করে যখন মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং তারা আর সন্তান ধারণ করতে সক্ষম হয় না।

নারী: পরিভাষা, জীববিদ্যা, স্বাস্থ্য 
মানুষের মহিলা প্রজনন সিস্টেম

রূপগত এবং শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য

জীববিজ্ঞানের পরিপ্রেক্ষিতে, মহিলাদের যৌন অঙ্গগুলি প্রজনন ব্যবস্থার সাথে জড়িত, যেখানে সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্যগুলি শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো এবং একজন সঙ্গীকে আকর্ষণ করার সাথে জড়িত।  

ডিম্বাশয়, হরমোন উৎপাদনের নিয়ন্ত্রক রুপে কাজ করে এবং একই সাথে ওভা নামক স্ত্রী গ্যামেট তৈরি করে যা পুং গ্যামেট ( শুক্রাণু ) দ্বারা নিষিক্ত হলে নতুন জেনেটিক ব্যক্তিত্ব তৈরি করে। জরায়ু হল একটি অঙ্গ যা প্রয়োজনীয় টিস্যু এবং পেশি নিয়ে তৈরি যেন বিকাশকারী ভ্রূণকে রক্ষা এবং লালন পালন করতে পারে এবং জন্ম দেওয়ার সময় এটিকে বের করে দিতে পাড়ে। যোনিটি(vagina) সহবাস এবং জন্মদানের ক্ষেত্রে কাজ করে, যদিও vagina শব্দটি প্রায়শই কথোপকথনে ভুলভাবে ইংরেজি ভাষায় ভালভা (vulvaবা বাহ্যিক মহিলা যৌনাঙ্গ)-কে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, ।ভালভা (vulva) যা যা নিয়ে গঠিত তার মধ্যে রয়েছে (যোনিপথের উভয় পাশে ভাল্ভার ভিতরের এবং বাইরের ভাঁজ।) ল্যাবিয়া, ভগাঙ্কুর, এবং মহিলাদের মূত্রনালী । স্তন্যপায়ী গ্রন্থিগুলিকে অনুমান করা হয় যে দুধ উৎপাদনের জন্য এপোক্রাইন-এর মতো গ্রন্থি থেকে বিবর্তিত হয়েছে। দুধ একটি পুষ্টিকর নিঃসরণ যা স্তন্যপায়ী প্রাণীর সবচেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের একটি, অপর একটি বিশিষ্ট হল এরা জীবিত প্রাণীর জন্ম দিয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের(মানুষ) মধ্যে, স্তন সাধারণত অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর তুলনায় বেশি বিশিষ্ট হয়; এই বিশিষ্টতা, দুধ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় নয়,(তাই) অন্তত আংশিকভাবে যৌন নির্বাচনের ফলাফল বলে মনে করা হয়।  

নারী: পরিভাষা, জীববিদ্যা, স্বাস্থ্য 
গর্ভবতী মহিলা

লিঙ্গ বন্টন এবং আয়ু

নারী: পরিভাষা, জীববিদ্যা, স্বাস্থ্য 
একজন নারীকে বিভিন্ন বয়সে এঁকে দেখানো হয়েছে

যদিও পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের জন্ম গ্রহণের হার কম (অনুপাত প্রায় 1:1.05), কিন্তু নবজাতক ছেলেদের তুলনায় নবজাতক মেয়েরা নিজেদের প্রথম জন্মদিনে পৌঁছতে পারে। এবং অন্যদিকে নারীদের আয়ু পুরুষদের তুলনায় 6 থেকে 8 বছর বেশি হয়ে থাকে কিন্তু কিছু কিছু অঞ্চলে নারীদের প্রতি লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে তাদের এই অতিরিক্ত আয়ু পুরুষদের প্রায় সমান কিংবা তাদের থেকে কম হয়ে গেছে। 2015 সালে মোট জনসংখ্যার মধ্যে, প্রতি 100 জন মহিলার বিপরীতে 101.8 জন পুরুষ ছিল। আয়ুষ্কালের পার্থক্য আংশিকভাবে অন্তর্নিহিত শারীরিক সুবিধার কারণেই হয়, তবে তারা পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে আচরণগত পার্থক্যও প্রতিফলিত করে। কিছু উন্নত দেশে অতিরিক্ত বয়সের এই ব্যবধানটা কমে আসছে, খুব সম্ভবত মহিলাদের মধ্যে ধূমপান বৃদ্ধি এবং পুরুষদের মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার রোগটির হার হ্রাসই এর কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) লিখেছে যে এটি "উল্লেখ্য যে মহিলাদের জীবনের অতিরিক্ত এই সময়টুকু সুস্বাস্থ্যের মধ্য দিয়ে যায় না।"

স্বাস্থ্য

বিশেষ করে নারী বনাম পুরুষের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়গুলি প্রজনন সম্পর্কিত বিষয়গুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট, কিন্তু আণবিক থেকে আচরণগত স্কেল পর্যন্ত লিঙ্গের পার্থক্য চিহ্নিত করা যায় এই পার্থক্যগুলির মধ্যে কিছু আছে যা সূক্ষ্ম এবং ব্যাখ্যা করা কঠিন, আংশিকভাবে এই কারণে যে সহজাত জৈবিক কারণগুলো স্বাস্থ্যের উপর যে প্রভাব ফেলে তা পার্শ্ববর্তী পরিবেশ স্বাস্থ্যের উপর যে প্রভাব ফেলে তা থেকে আলাদা করা কঠিন । যৌন ক্রোমোজোম এবং হরমোন, সেইসাথে লিঙ্গ-নির্দিষ্ট জীবনধারা, বিপাক, ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা এবং পরিবেশগত কারণগুলির প্রতি সংবেদনশীলতা শারীরবিদ্যা, উপলব্ধি এবং জ্ঞানের স্তরে স্বাস্থ্যের লিঙ্গের পার্থক্যে অবদান রাখে বলে মনে করা হয়। মহিলাদের ওষুধ এবং ডায়গনিস্টিক পরামিতিগুলির জন্য থ্রেশহোল্ডগুলির জন্য স্বতন্ত্র প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।

কিছু রোগ আছে যেগুলো প্রাথমিকভাবে মহিলাদের কে প্রভাবিত করে এবং একচেটিয়াভাবে মহিলাদের মধ্যেই পাওয়া যায়, যেমন লুপাস, স্তন ক্যান্সার, সার্ভিকাল ক্যান্সার বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার । মহিলা প্রজনন এবং প্রজনন অঙ্গগুলির সাথে সম্পর্কিত চিকিৎসা বিদ্যাকে স্ত্রীরোগবিদ্যা ("নারীদের বিজ্ঞান") বলা হয়।

মাতৃমৃত্যু

নারী: পরিভাষা, জীববিদ্যা, স্বাস্থ্য 
সিয়েরা লিওনিয়ান মা একটি শিশুকে লালনপালন করছেন

মাতৃমৃত্যুকে WHO এই ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে- "গর্ভাবস্থায় বা গর্ভাবস্থা শেষ হবার 42 দিনের মধ্যে একজন মহিলার মৃত্যু, গর্ভাবস্থার সময়কাল এবং স্থান নির্বিশেষে, গর্ভাবস্থা বা এর ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পর্কিত বা গর্ভাবস্থার কারনে ত্বরান্বিত কোনো কারণ থেকে। কিন্তু এই মৃত্যু আকস্মিক বা আনুষঙ্গিক অন্য কোন কারন থেকে সংগঠিত নয়।" 2008 সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মা ও নবজাতককে শক্তিশালী করার জন্য মিডওয়াইফ প্রশিক্ষণের আহ্বান জানায়। উল্লেখ্য যে প্রতি বছর 100,000 এরও বেশি মহিলা গর্ভাবস্থা এবং প্রসবজনিত জটিলতার কারণে মারা যায় এবং কমপক্ষে 7 মিলিয়ন গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং 50 মিলিয়নের বেশি প্রসবের পরে স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর পরিণতি হয়। মিডওয়াইফারি দক্ষতার মানোন্নয়নে সহায়তা করার জন্য ডব্লিউএইচও একটি মিডওয়াইফ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, অ্যাকশন ফর সেফ মাদারহুড প্রতিষ্ঠা করেছে।

মাতৃমৃত্যুর প্রায় 99%-ই উন্নয়নশীল দেশগুলিতে হয়ে থাকে। এর অর্ধেকের বেশি সংগঠিত হয় সাব-সাহারান আফ্রিকায় এবং প্রায় এক তৃতীয়াংশ দক্ষিণ এশিয়ায় ঘটে। মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে প্রি-এক্লাম্পসিয়া এবং একলাম্পসিয়া, অনিরাপদ গর্ভপাত, ম্যালেরিয়া এবং এইচআইভি/এইডস। গর্ভাবস্থার জটিলতা এবং প্রসবের পরে গুরুতর রক্তপাত এবং সংক্রমণের কারনে। বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশ, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং সিঙ্গাপুর শিশু জন্মের ক্ষেত্রে খুবই নিরাপদ।

1990 সালে 14টি উন্নত দেশের মধ্যে বিশ্লেষণ করে জানা যায় US 12 তম স্থান পেয়েছে এবং সেই সময় থেকে প্রতিটি দেশের মৃত্যুর হার ক্রমাগতভাবে উন্নত হয়েছে অর্থাৎ কমেছে। কিন্তু US এর ক্ষেত্রে এই হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। 1990 সালে বিশ্লেষণ করা অন্যান্য দেশ গুলি 2017 সালে প্রতি 100,000 শিশু জন্মে 10 টিরও কম মৃত্যুর হার দেখায় অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এক্ষেত্রে হার বেড়ে 26.4-এ দাঁড়িয়েছে।একইসাথে, গর্ভাবস্থা বা প্রসবের সময় প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মারা যাওয়া 700 থেকে 900 জন মহিলার মধ্যে 70 জন উল্লেখযোগ্য জটিলতার সম্মুখীন হন, যা মোট শিশু জন্মের এক শতাংশেরও বেশি।

প্রজনন অধিকার এবং স্বাধীনতা

নারী: পরিভাষা, জীববিদ্যা, স্বাস্থ্য 
1921 ইউজেনিক্স কনফারেন্সের একটি পোস্টার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলিকে প্রদর্শন করে যারা নির্বীজন আইন প্রয়োগ করেছিল।

প্রজনন অধিকার বলতে বুঝায় প্রজনন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আইনি অধিকার এবং স্বাধীনতা। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ গাইনোকোলজি অ্যান্ড অবস্টেট্রিক্স বলেছে যে:

    ... নারীর মানবাধিকারের মধ্যে রয়েছে কোন বলপ্রয়োগ, বৈষম্য এবং সহিংসতামুক্ত ছাড়া তাদের যৌনতা সম্পর্কিত বিষয়ে স্বাধীনভাবে এবং দায়িত্বশীলতার সাথে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার এবং তাদের এগুলো নিয়ন্ত্রণের অধিকার যার মধ্যে রয়েছে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য, । ব্যক্তির অখণ্ডতার প্রতি পূর্ণ সম্মান সহ যৌন সম্পর্ক এবং প্রজননের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে সমান সম্পর্কের জন্য পারস্পরিক সম্মান, সম্মতি এবং যৌন আচরণ এবং এর পরিণতির জন্য দায়িত্ব ভাগ করা প্রয়োজন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 2010 থেকে 2014 সালের তথ্যের উপর ভিত্তি করে রিপোর্ট করে এবং বলে যে, প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী 56 মিলিয়ন ইচ্ছাকৃত গর্ভপাত ঘটেছিল (যা ঐ সময়ের সমস্ত গর্ভধারণের 25%)। এর মধ্যে প্রায় 25 মিলিয়ন গর্ভপাত অনিরাপদ হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। WHO রিপোর্ট করেছে যে উন্নত অঞ্চলগুলতে প্রতি 100,000 অনিরাপদ গর্ভপাতের জন্য প্রায় 30 জন মহিলার মৃত্যু হয় এবং উন্নয়নশীল অঞ্চলের ক্ষেত্রে 100,000 অনিরাপদ গর্ভপাতের জন্য 220 জন নারীর মৃত্যু হয় এবং সাব-সাহারান আফ্রিকায় প্রতি 100,000 অনিরাপদ গর্ভপাতের জন্য 520 জন নারী মারা যায়। ডাব্লুএইচও এই মৃত্যুকে দায়ী করে:

  • আইনের সীমাবদ্ধতা
  • পরিষেবার দুষ্প্রাপ্যতা
  • উচ্চ মূল্য
  • কলঙ্ক
  • স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের বিবেকপূর্ণ আপত্তি যার ফলে গর্ভপাতে সমস্যা হয়
  • অপ্রয়োজনীয় বাধ্যবাধকতা, যেমন বাধ্যতামূলক ভাবে "কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে"-এরকম সময়কাল, বাধ্যতামূলক কাউন্সেলিং, বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিধান, তৃতীয় পক্ষের অনুমোদন, এবং চিকিৎসাগতভাবে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা যা যত্নে বিলম্ব করে।

সংস্কৃতি এবং লিঙ্গ ভূমিকা

সম্প্রতিক সময়কালে সমাজের লিঙ্গভিত্তিক অবদানে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। ইতিহাসে পূর্বেকার সময় কম বয়সী বাচ্চাদের মধ্যে তাদের পেশাগত আকাঙ্ক্ষা তাদের লিঙ্গের ওপর  নির্ভর করত। ঐতিহ্যগত ভাবেই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মহিলারা তাদের শিশুদের প্রতি যত্নশীল হবার প্রতি জোর দিয়ে ঘরোয়া কাজে জড়িত থাকত। দরিদ্র মহিলাদের জন্য, বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণীর মহিলাদের জন্য, অর্থনৈতিককারনে এটি তাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ছিল যে তারা বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ খুজবে। তারা পেশা হিসেবে যে কাজগুলো খুঁজে পেত সেগুলোতে তাদেরকে পুরুষদের তুলনায় কম বেতন পেত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

শ্রমবাজারে মহিলাদের জন্য যে পরিবর্তন এসেছিল তা নারীদের কর্মসংস্থানে যে পরিবর্তন এনেছিল তা হল পূর্বে তারা "নোংরা" কারখানাতে দীর্ঘ সময় চাকরি করত আর পরিবর্তনের পর তারা "পরিচ্ছন্ন" কারখানাতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিল (অধিক সম্মানজনক অফিসের চাকরিতে এই পরিবর্তিত হয়েছিল যেখানে আরও শিক্ষার দাবি ছিল)। মার্কিন শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ 1900 সালে 6% থেকে 1923 সালে 23% এ উন্নীত হয়। শ্রমশক্তির এই পরিবর্তনগুলি কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের মনোভাবের পরিবর্তনে ভুমিকা রাখে এবং বিপ্লবের দিকে ধাবিত করে যার ফলে নারীরা কর্ম(প্রাতিষ্ঠানিক) ও শিক্ষামুখী হয়ে ওঠে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

1970-এর দশকে, মহিলা বিজ্ঞানী সহ অনেক মহিলা শিক্ষাবিদ সন্তান ধারণকে এড়িয়ে যেতেন। 1980-এর দশক জুড়ে, প্রতিষ্ঠানগুলি কর্মক্ষেত্রে পুরুষ এবং নারীদের জন্য তাদের নিয়মগুলোকে সমান করার চেষ্টা করেছি। তা সত্ত্বেও, সাংসারিক বৈষম্যতা মহিলাদের সুযোগকে বাধাগ্রস্ত করছিল: পেশাদার মহিলাদের ক্ষেত্রেও তাদেরকে গৃহশ্রম এবং শিশু যত্নের জন্য দায়ী বলে মনে করা হত, এর ফলে তাদের সময় এবং শক্তি কমে যেত যা তারা তাদের কর্মজীবনে ব্যাবহার করতে পারত। 20 শতকের শুরুর দিকের আগপর্যন্ত, মার্কিন মহিলা কলেজগুলি তাদের মহিলা ফ্যাকাল্টি সদস্যদের অবিবাহিত থাকতে বাধ্য করেছিল কারন হিসেবে তারা বলেছিল যে একজন মহিলা একবারে দুটি পূর্ণ-সময়ের পেশা চালিয়ে যেতে পারে না। Schiebinger এর মতে, "এই সমাজে একজন বিজ্ঞানী একইসাথে একজন স্ত্রী এবং একইসাথে একজন মা হওয়া একটি বোঝা আর এই সমাজ পুরুষদের তুলনায় নারীদের ক্ষেত্রেই বেশী আশা করে যে তারা নিজেদের ক্যারিয়ারের থেকে নিজের পরিবারকে বেশি এগিয়ে রাখবে।" (পৃ.93)।

আন্দোলনগুলো লিঙ্গ নির্বিশেষে উভয় লিঙ্গের জন্য সমান সমতা ও অধিকারের পক্ষে। অর্থনৈতিক পরিবর্তন এবং নারীবাদী আন্দোলনের প্রচেষ্টার মাধ্যমে, সাম্প্রতিক দশকগুলিতে অনেক সমাজের মহিলারা ঐতিহ্যগত ভাবে তারা যে ঘরের কাজ করত তার বাইরে এসে নিজেদের ক্যারিয়ারে প্রবেশের অধিকার পেয়েছে। এই অগ্রগতি সত্ত্বেও, পশ্চিমা সমাজের বর্তমান সময়ের নারীরা এখনও কর্মক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হয়। এর পাশাপাশি তারা শিক্ষা, সহিংসতা, স্বাস্থ্যসেবা, রাজনীতি ও মাতৃত্ব এবং অন্যান্য বিষয়গুলির ক্ষেত্রেও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে থাকে। যৌনতা প্রায় সব ক্ষেত্রে নারীদের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগ এবং বাধা হতে পারে, যদিও এর রূপ, উপলব্ধি এবং পরিমাণ সমাজ এবং সামাজিক শ্রেণীর মধ্যে একেক রকমের হয়ে থাকে। নারী ও পুরুষ উভয়ের দ্বারাই পারিবারিক ক্ষেত্রে সমান লিঙ্গ ভূমিকার কথা অনুমোদন পাচ্ছে এবং এর পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। [যাচাইকরণ ব্যর্থ হয়েছে]

যদিও প্রচুর সংখ্যক মহিলা উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন, তবুও প্রায়ই দেখা যায় তাদের বেতন পুরুষদের তুলনায় কম। CBS নিউজ 2005 সালে বলেছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 30 থেকে 44 বছর বয়সী নারীরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী তারা তাদের মতো অনুরূপ যোগ্য পুরুষদের তুলনায় মাত্র 62% আয় করে থাকে। যে 19টি দেশের ক্ষেত্রে গননা করা হয়েছিল তাদের মধ্যে তিনটি বাদে সবকটির তুলনায় এই হার সবথেকে কম। জার্মানি, নিউজিল্যান্ড এবং সুইজারল্যান্ড হল পশ্চিমা কিছু দেশ যাদের ক্ষেত্রে এই বৈষম্য আরও বেশি।

নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা

নারী: পরিভাষা, জীববিদ্যা, স্বাস্থ্য 
মহিলাদের যৌনাঙ্গ ছেদনের বিরুদ্ধে একটি প্রচারণা - কাপচোরওয়া, উগান্ডার কাছে একটি রাস্তার পাশে অঙ্কিত চিহ্ন

নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নির্মূলের বাপারে জাতিসংঘের ঘোষণায় "নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা"-কে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে তা হল: লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার যে কোনো কাজ যা নারীর শারীরিক, যৌন বা মানসিক ক্ষতি বা ক্ষতির কারণ হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে এই ধরনের কাজের করার হুমকি, জবরদস্তি বা স্বাধীনতার স্বেচ্ছাচারী বঞ্চনা, তা সে জনসাধারণের সামনে হোক কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে এবং এই ধরনের সহিংসতার তিনটি রূপ চিহ্নিত করে যা হল - যে সহিংসতা গুলো পরিবারে সংগঠিত হয়, যা সাধারণ সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘটে এবং যা রাষ্ট্র দ্বারা সংঘটিত হয় বা যে সহিংসতা রাষ্ট্র দ্বারা ক্ষমা করা হয়। এছাড়া আরও উল্লেখ করে বলে যে "নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা হল পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে অসম ক্ষমতা সম্পর্কিত একটি প্রকাশ"।

নারীর প্রতি সহিংসতা একটি বিস্তৃত সমস্যা হিসেবে বিদ্যমান আছে, বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের বাইরে- পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক মূল্যবোধের কারনে, পর্যাপ্ত আইনের অভাবে এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োগের অভাবের কারণে। বিশ্বের বহু অংশে বিদ্যমান সামাজিক নিয়ম নারীকে সহিংসতা থেকে রক্ষার অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। উদাহরণস্বরূপ, ইউনিসেফের সমীক্ষা থেকে জানা যায়,আফগানিস্তান এবং জর্ডানে 90%, মালিতে 87%, 86% গিনি এবং তিমুর-লেস্টে %, লাওসে 81% এবং মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে 80%, 15-49 বছর বয়সী নারীরা মনে করে যে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে আঘাত করা বা মারধর করা ন্যায়সঙ্গত। পিউ রিসার্চ সেন্টার দ্বারা পরিচালিত 2010 সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে মিশর এবং পাকিস্তানের 82% উত্তরদাতারা, জর্ডানে 70%, নাইজেরিয়ায় 56% এবং ইন্দোনেশিয়ায় 42% ব্যভিচারের শাস্তি হিসাবে পাথর ছুড়ে মারাকে সমর্থন করেছিলেন।

সহিংসতার কিছু নির্দিষ্ট ধরন যা নারীদের প্রভাবিত করে তার মধ্যে রয়েছে নারীদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ(মহিলাদের সুন্নত), যৌন পাচার, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি, জোরপূর্বক বিবাহ, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, অনার কিলিং, এসিড নিক্ষেপ এবং যৌতুক সংক্রান্ত সহিংসতা । সরকারগুলো মহিলাদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় জড়িত হতে পারে, যেমন পাথর ছুঁড়ে মারাকে একটি আইনি শাস্তি হিসাবে ব্যবহার করা হয়, বেশিরভাগই ব্যভিচারের অভিযোগে অভিযুক্ত মহিলাদের জন্য।

এছাড়াও নারীর প্রতি সহিংসতার অনেক রুপ রয়েছে যা সময়ের সাথে প্রচলিত হয়ে এসেছিল, বিশেষ করে ডাইনিদের পোড়ানো, বিধবাদের বলিদান (যেমন সতীদাহ ) এবং পা বাঁধা । জাদুবিদ্যার দায়ে অভিযুক্ত নারীদের বিচারের আওতায় আনার একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে; উদাহরণস্বরূপ, আধুনিক যুগের প্রথম দিকে (অর্থাৎ 15 এবং 18 শতকের মধ্যে), ডাইনিদের বিচারকাজ ইউরোপে এবং উত্তর আমেরিকার ইউরোপীয় উপনিবেশগুলিতে সাধারণ একটি ব্যাপার ছিল। এখনও, বিশ্বের এমন কিছু অঞ্চল রয়েছে (যেমন সাব-সাহারান আফ্রিকার কিছু অংশ, উত্তর ভারত, এবং পাপুয়া নিউগিনি) যেখানে অনেক লোক জাদুবিদ্যায় বিশ্বাস করে এবং ডাইনি হিসেবে অভিযুক্ত নারীরা গুরুতর ভাবে সহিংসতার শিকার হয়। এছাড়াও, এমন কিছু দেশ রয়েছে যেখানে জাদুবিদ্যার চর্চার বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইন রয়েছে। সৌদি আরবে, জাদুবিদ্যা মৃত্যুদন্ডযোগ্য অপরাধ হিসেবে রয়ে গেছে এবং ২০১১ সালে দেশটি 'জাদুবিদ্যা ও মায়াবিদ্যা'র জন্য একজন মহিলার শিরশ্ছেদ করেছিল।

এমনকি এটাও বাস্তব যে নারীর প্রতি সহিংসতার কিছু ধরন শুধুমাত্র সাম্প্রতিক দশকগুলোতেই ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে, এবং সর্বজনীনভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি, যে কারণে অনেক দেশই এই সহিংসতাকে অনুমোদন দিয়ে থাকে। এটা বিশেষ করে হয়ে থাকে বৈবাহিক ধর্ষণের ক্ষেত্রে। পশ্চিমা বিশ্বে, বিবাহের ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করার এবং গার্হস্থ্য সহিংসতার বিচারের একটি প্রবণতা রয়েছে, কিন্তু বিশ্বের অনেক অংশে নারীরা এখনও বিবাহে প্রবেশ করার সময় উল্লেখযোগ্য আইনি অধিকার হারান।

যুদ্ধ এবং সশস্ত্র সংঘর্ষের সময়, সামরিক দখলদারিত্বের সময়, বা জাতিগত সংঘাতের সময় নারীদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়; প্রায়শই এটি হয়ে থাকে যুদ্ধের ধর্ষণ এবং যৌন দাসত্বের আকারে। যুদ্ধের সময় যৌন সহিংসতার সমসাময়িক উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে আর্মেনিয়ান গণহত্যার সময় ধর্ষণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ধর্ষণ, বসনিয়ান যুদ্ধে ধর্ষণ, রুয়ান্ডার গণহত্যার সময় ধর্ষণ এবং দ্বিতীয় কঙ্গো যুদ্ধের সময় ধর্ষণ । কলম্বিয়াতে, সশস্ত্র সংঘাতের কারনেও নারীদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা বেড়েছে। সাম্প্রতিক কালের যে ঘটনা ঘটেছে তা হল আইএসআইএল দ্বারা করা যৌন জিহাদ যেখানে ইয়াজিদি এবং খ্রিস্টান নারীদের গণহত্যা এবং ধর্ষণের সময় 5000-7000 ইয়াজিদি এবং খ্রিস্টান মেয়ে ও শিশুকে যৌন দাসই হিসেবে বিক্রি করা হয়েছিল, একটি প্রত্যক্ষ সাক্ষীর মাধ্যমে জানা যায়, সেই মেয়ে ও নারীদের মধ্যে কিছু সংখ্যক সিনজার পর্বত থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছিল।

নারীর প্রতি সহিংসতা সংক্রান্ত আইন ও নীতি বিচারব্যবস্থা অনুসারে পরিবর্তিত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নে, যৌন হয়রানি এবং মানব পাচার নির্দেশাবলীর অধীন।

ইতিহাস

আদিকালে যে সকল নারীর কথা জানা যায়:

  • নিথহোটেপ (সি. ৩২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ), নারমারের স্ত্রী এবং প্রাচীন মিশরের প্রথম রানী।
  • মারনিথ (সি. 3000 খ্রিস্টপূর্ব), প্রথম রাজবংশের সময় প্রাচীন মিশরের সঙ্গী এবং শাসক। তিনি তার নিজের অধিকারে মিশরের শাসক হতে পারেন।
  • Merit-Ptah (c. 2700 BCE), এছাড়াও মিশরে বাস করতেন এবং তিনিই প্রথম পরিচিত মহিলা চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী
  • পেসেশেট (আনুমানিক 2600 খ্রিস্টপূর্বাব্দ), প্রাচীন মিশরের একজন চিকিৎসক
  • পুয়াবি (আনুমানিক 2600 BCE), বা শুবাদ - উরের রানী যার সমাধি অনেক দামী নিদর্শন সহ আবিষ্কৃত হয়েছিল। উরের অন্যান্য পরিচিত প্রাক-সার্গনিক রাণী (রাজকীয় স্ত্রীদের) মধ্যে রয়েছে আশুসিকিলদিগির, নিনবান্দা এবং গানসামান্নু।
  • কুগবাউ ( আনুমানিক 2,500 খ্রিস্টপূর্বাব্দ), সুমেরের আধিপত্যবাদী শাসক হওয়ার জন্য নিপপুর যাজকদের দ্বারা বেছে নেওয়া কিশের একটি টেভারেস, এবং পরবর্তী যুগে "কুবাবা" হিসাবে দেবতা।
  • তাশলুল্টুম (আনুমানিক 2400 খ্রিস্টপূর্বাব্দ), আক্কাদের রানী, আক্কাদের সারগনের স্ত্রী এবং এনহেডুয়ানার মা।
  • বারানমতরা (সি. 2384 খ্রিস্টপূর্ব), লাগাশের লুগাল্যান্ডের বিশিষ্ট এবং প্রভাবশালী রানী। প্রথম লাগাশ রাজবংশের অন্যান্য পরিচিত প্রাক-সার্গনিক রানীদের মধ্যে রয়েছে মেনবারা-আবজু, আশুমে'য়েরেন, নিনখিলিসুগ, দিমতুর এবং শাগশাগ এবং বেশ কয়েকটি রাজকুমারীর নামও জানা যায়।
  • এনহেডুয়ানা (আনুমানিক 2285 খ্রিস্টপূর্বাব্দ), সুমেরীয় শহর-রাজ্য উর -এ চাঁদ ঈশ্বরের মন্দিরের মহাযাজক এবং সম্ভবত প্রথম পরিচিত কবি এবং যে কোনো লিঙ্গের প্রথম নামধারী লেখক।
  • শিবতু (আনুমানিক 1775 খ্রিস্টপূর্বাব্দ), রাজা জিমরিলিমের সহধর্মিণী এবং সিরিয়ার শহর-রাজ্য মারির রাণী। তার স্বামীর অনুপস্থিতিতে, তিনি মারির রিজেন্ট হিসাবে শাসন করেছিলেন এবং রানী হিসাবে ব্যাপক প্রশাসনিক ক্ষমতা উপভোগ করেছিলেন।

পোশাক, ফ্যাশন এবং পরিধান রীতি - নীতি

বিশ্বের বিভিন্ন অংশের মহিলারা বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরিধান করে থাকে, তাদের পোশাকের পছন্দ যে বিভিন্ন দিক গুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে তার মধ্যে রয়েছে সংস্কৃতি, ধর্মীয় নীতি, ঐতিহ্য, সামাজিক নিয়ম এবং ফ্যাশন প্রবণতা ইত্যাদি। শালীনতা সম্পর্কে একেক সমাজে একেক রকমের ধারণা রয়েছে। যাইহোক, অনেক বিচারব্যবস্থায়, পোশাকের ক্ষেত্রে মহিলাদের পছন্দগুলি সবসময় স্বাধীন হয় না, আইনদ্বারা সীমিত করে দেয়া হয় যে তারা কী পরতে পারবে বা কি পরতে পারেবে না৷ এটা বিশেষ করে হয়ে থাকে ইসলামিক পোশাকের ক্ষেত্রে। যদিও এক্ষেত্রে একদিকে কিছু বিচারব্যবস্থা আইনত ভাবে এই ধরনের পোশাক (হেডস্কার্ফ পরা) বাধ্যতামূলক করে, অন্যদিকে অন্যান্য দেশ পাবলিক প্লেসে নির্দিষ্ট পোষাক (যেমন বোরকা /মুখ ঢেকে রাখা) পরা নিষিদ্ধ বা সীমাবদ্ধ করে (এমন একটি দেশ হল ফ্রান্স – মুখ ঢাকে রাখার ব্যাপারে ফ্রেঞ্চ আইন দেখুন)। এই আইন - যারা বাধ্যতামূলকভাবে কোন নির্দিষ্ট পোশাক পড়াকে বাধ্য করে বা নিরদিস্দিষ্ট পশাক পরতে বারণ করে উভয়ই - অত্যন্ত বিতর্কিত।

উর্বরতা এবং পারিবারিক জীবন

নারী: পরিভাষা, জীববিদ্যা, স্বাস্থ্য 
মা ও শিশু, ভুটানে
নারী: পরিভাষা, জীববিদ্যা, স্বাস্থ্য 
জনসংখ্যা রেফারেন্স ব্যুরো অনুসারে উর্বরতার হার (2020) অনুসারে দেশের মানচিত্র
নারী: পরিভাষা, জীববিদ্যা, স্বাস্থ্য 
অবিবাহিত মহিলাদের জন্মের হার, নির্বাচিত দেশ, 1980 এবং 2007

মোট উর্বরতার হার (TFR) - একজন মহিলার তার জীবদ্দশায় জন্ম দেওয়া সন্তানের গড় সংখ্যা- বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে এর পার্থক্য রয়েছে। 2016 সালে, সর্বোচ্চ আনুমানিক টিএফআর ছিল নাইজারে (প্রতি মহিলার জন্ম 6.62 শিশু) এবং সিঙ্গাপুরে ছিল সবচেয়ে কম (0.82 শিশু/মহিলা)। যদিও বেশিরভাগ সাব-সাহারান আফ্রিকান দেশগুলিতে উচ্চ টিএফআর রয়েছে, যা তাদের জন্য সমস্যা তৈরি করে যেহেতু তাদের সম্পদের অভাব আছে এবং অতিরিক্ত জনসংখ্যা সৃষ্টিতেও এই উচ্চ টিএফআর অবদান রাখে। বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশগুলি বর্তমানে একটি উপ-প্রতিস্থাপন উর্বরতার হার অনুভব করে যা জনসংখ্যার বার্ধক্য এবং জনসংখ্যা হ্রাসের দিকে পরিচালিত করতে পারে।

বিশ্বের অনেক দেশেই গত কয়েক দশক ধরে পারিবারিক কাঠামোতে পরিবর্তন এসেছে। উদাহরণ স্বরূপ, পশ্চিমে, বর্ধিত পরিবারের বসবাসের ব্যবস্থা থেকে দূরে সরে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে এবং নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি বা ছোট পরিবারের বসবাসের ব্যবস্থার দিকে ঝুকে পরার প্রবনতা দেখা যাচ্ছে।। বৈবাহিক উর্বরতা থেকে অ-বৈবাহিক উর্বরতার দিকে যাওয়ার প্রবণতাও রয়েছে। বিবাহের বাইরে জন্ম নেওয়া শিশুরা বিবাহ ছাড়া একত্রে বসবাস কারী দম্পতি বা অবিবাহিত নারীর ক্ষেত্রে জন্ম নিতে পারে। যদিও বিবাহের বাইরে সন্তানের জন্ম বিশ্বের কিছু অংশে সাধারণ এবং সম্পূর্ণরূপে গৃহীত, অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা অত্যন্ত কলঙ্কজনক, অবিবাহিত মায়েরা পরিবারের সদস্যদের সহিংসতা সহ বঞ্চনার শিকার হয় এবং চরম ক্ষেত্রে অনার কিলিং বা সম্মানের জন্য হত্যা- এর মতো ঘটনাও ঘটে । এও বলে রাখা দরকার , বিবাহের বাইরে যৌন সম্পর্ক অনেক দেশেই অবৈধ (যেমন- সৌদি আরব, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, কুয়েত, মালদ্বীপ, মরক্কো, ওমান, মৌরিতানিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুদান, এবং ইয়েমেন )।

মায়ের সামাজিক অবদান বা দায়িত্ব সংস্কৃতি থেকে সংস্কৃতিতে ভিন্ন ভিন্ন হয়। বিশ্বের অনেক জায়গায়, অসহায় শিশু সম্পন্ন মহিলাদের ক্ষেত্রে এটা আশা করা হয় যে তারা বাড়িতে থাকবেন এবং সন্তান লালন-পালনের জন্য তাদের সমস্ত শক্তি উৎসর্গ করবেন। অন্যদিকে অন্যান্য স্থানের ক্ষেত্রে প্রায়শই নারীরা তাদের কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসেন ( কর্মজীবী মা এবং বাড়িতে থাকা মা দেখুন)।

ধর্ম

বিশেষ ধর্মীয় মতবাদগুলিতে নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে যা নারিকে এবং সমাজে তার অবস্থানকেও প্রভাবিত করে যেমন ভিন্ন লিঙ্গের মধ্যে সামাজিক এবং ব্যক্তিগত মিথস্ক্রিয়া, মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান এবং মহিলাদের ব্যাপারে অন্যান্য বিষয় । অনেক দেশে সেই দেশের বিচারব্যবস্থায় এই ধর্মীয় শিক্ষাগুলি ফৌজদারি আইন বা পারিবারিক আইনকে প্রভাবিত করে (উদাহরণস্বরূপ শরিয়া আইন দেখুন)। ধর্ম, আইন এবং লিঙ্গ সমতার মধ্যকার সম্পর্ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি আলোচনা করেছে

শিক্ষা

নারী: পরিভাষা, জীববিদ্যা, স্বাস্থ্য 
বলিভিয়ার লা পাজের এল আল্টো বিভাগে প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষরতার ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন নারীরা

একক-লিঙ্গ শিক্ষা ঐতিহ্যগতভাবে প্রভাবশালী এবং অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। সার্বজনীন শিক্ষা, যার অর্থ নরনারী নির্বিশেষে রাষ্ট্র-প্রদত্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা , এটি এখনও একটি বৈশ্বিক আদর্শ নয়, অধিকাংশ উন্নত দেশে  সর্বজনীন শিক্ষা কে বৈশ্বিক ভাবে সাধারণ বলে ধরে নেয়া হয় । কিছু পশ্চিমা দেশে, নারীরা শিক্ষার অনেক স্তরে পুরুষদের ছাড়িয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 2005/2006 সালে, মহিলারা 62% সহযোগী ডিগ্রী, 58% ব্যাচেলর ডিগ্রী, 60% স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং 50% ডক্টরেট অর্জন করেছেন।

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)ভুক্ত দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে লিঙ্গ ব্যবধান গত 30 বছরে হ্রাস পেয়েছে। 30টি OECD দেশের মধ্যে 19টিতে, এখন অল্পবয়সী নারীদের তৃতীয় যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি:যে পরিমাণ 55 থেকে 64 বছর বয়সী নারী তৃতীয় শিক্ষা সম্পন্ন করেছে তার দ্বিগুণেরও বেশি 25 থেকে 34 বছর বয়সী নারী তৃতীয় শিক্ষা সম্পন্ন করেছে। তুলনামূলক তথ্যের মাধ্যমে দেখা যায় 27টি OECD দেশের মধ্যে 21টিতে, বিশ্ববিদ্যালয়-স্তরের প্রোগ্রামগুলি থেকে স্নাতক হয়েছে এমন মহিলাদের সংখ্যা পুরুষদের সমান বা তার বেশি। 15 বছর বয়সী মেয়েরা একই বয়সের ছেলেদের তুলনায় তাদের ক্যারিয়ারের প্রতি অনেক বেশি আশাবাদী হয়। যদিও বেশ কয়েকটি OECD ভুক্ত দেশে বিশ্ববিদ্যালয় হতে হওয়া স্নাতকদের অর্ধেকেরও বেশি নারীরা, তারা বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল ক্ষেত্রে প্রদত্ত তৃতীয় ডিগ্রির মাত্র 30% পান, এবং বেশিরভাগ OECD দেশের গবেষকদের মধ্যে মহিলারা মাত্র 25% থেকে 35%।

গবেষণা দেখায় নারীরা যদিও নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পুরুষদের সমান হারে অধ্যয়ন করছেন তবুও সংশ্লিষ্ট অনুষদে যোগদানের ক্ষেত্রে তাদের একই রকম সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। সমাজবিজ্ঞানী হ্যারিয়েট জুকারম্যান পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, একটি ইনস্টিটিউট যত বেশি মর্যাদাপূর্ণ হয়, সেখানে নারীদের জন্য ফ্যাকাল্টি পদ অর্জন করা তত বেশি কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠে। 1989 সালে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় রসায়নে প্রথম মহিলা, সিনথিয়া ফ্রেন্ড, এবং 1992 সালে পদার্থবিদ্যায় প্রথম মহিলা মেলিসা ফ্র্যাঙ্কলিনকে নিয়োগ দেয়। তিনি আরও লক্ষ্য করেছেন যে, মহিলাদের ক্ষেত্রে তাদের প্রথম পেশাগত পদে প্রশিক্ষক এবং লেকচারার হিসাবে অধিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে অন্যদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে তাদের প্রথম কাজ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে অধিকারী বা স্থায়ী পদগুলোতে। স্মিথ এবং ট্যাং-এর মতে, 1989 সালে, পুরুষদের 65% এবং মহিলাদের মাত্র 40% স্থায়ী পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং চার বছরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত সমস্ত বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীর মাত্র 29% ছিলেন মহিলা ।

১৯৯২ সালে, মহিলারা প্রকৌশলে পুরস্কৃত পিএইচডিগুলোর 9% অর্জন করেছিলেন কিন্তু তার মাত্র এক শতাংশ অধ্যাপক হয়েছিলেন। 1995 সালে, বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের নারী অধ্যাপক ছিলেন 11% । সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলের মাত্র 311 জন ডিন ছিলেন মহিলা, যা মোট ডিনের 1% এরও কম। এমনকি মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা, এখানে বেশিরভাগ পিএইচডি নারীরা অর্জন করে থাকেন, তারা অনেক কম পরিমাণে কম মেয়াদী পদে অধিষ্ঠিত হন যা 1994 সালে ছিল প্রায় 19%।

বিশ্বে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে সাক্ষরতা কম। সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক ২০১০ সাল থেকে একটি তুলনামূলক ধারণা উপস্থাপন করে যা দেখায় যে ৮০% মহিলা শিক্ষিত, পক্ষান্তরে পুরুষদের মধ্যে তা ৮৮.৬% (১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী)। দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ায় এবং সাব-সাহারান আফ্রিকার কিছু অংশে সাক্ষরতার হার সবচেয়ে কম।

রাজনীতিতে নারী

নারী: পরিভাষা, জীববিদ্যা, স্বাস্থ্য 
সিরিমাভো বন্দরনায়েকে ছিলেন প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী; তিনি ১৯৬০ সালে শ্রীলঙ্কায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হন।
নারী: পরিভাষা, জীববিদ্যা, স্বাস্থ্য 
একটি বিশ্ব মানচিত্র যেখানে দেশ অনুসারে মহিলাদের সরকারী অংশগ্রহণ দেখায়, 2010৷

বেশিরভাগ দেশের সরকারে নারীদের কম প্রতিনিধিত্ব প্রদান করা হয়। জানুয়ারী 2019-এ, জাতীয় পরিষদে মহিলাদের বিশ্বব্যাপী গড় অংশগ্রহণ ছিল ২৪.৩%। ভোটাধিকার হল ভোট দেওয়ার নাগরিক অধিকার, এবং নারীদের ভোটাধিকার আন্দোলনের আছে একটি দীর্ঘ ঐতিহাসিক কালযাত্রা । উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের ভোটাধিকারের কথা যা ধীরে ধীরে অর্জিত হয়েছিল, প্রথমে 19 শতকের শেষের দিকে এবং 20 শতকের প্রথম দিকে রাজ্য এবং স্থানীয় পর্যায়ে নারীরা ভোটাধিকার পেয়েছিল, তারপর 1920 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঊনবিংশ সংশোধনী পাস হওয়ার সাথে সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীরা সর্বজনীন ভোটাধিকার লাভ করে। কিছু পশ্চিমা দেশ মহিলাদের ভোটাধিকার প্রদানের ব্যাপারে অনেকটাই ধীরগতিসম্পন্ন ছিল, বিশেষ করে সুইজারল্যান্ড, এক্ষেত্রে মহিলারা ১৯৭১ সালে ফেডারেল নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার অর্জন করেছিলেন অন্যদিকে যখন ক্যান্টনকে সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল সুপ্রিম কোর্ট বাধ্য করেছিল তখন অ্যাপেনজেল ইনারহোডেনের ক্যান্টনে মহিলাদের প্রথমবার ১৯৯১ সালে স্থানীয় ইস্যুতে ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছিল, । লিচেনস্টাইন, 1984 সালে, মহিলাদের ভোটাধিকার গণভোটের মাধ্যমে ।

বিজ্ঞান, সাহিত্য ও শিল্প

লেখালেখিকে সাধারণত উচ্চ শ্রেণীর মহিলাদের জন্য গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হত। যদিও পুরুষ-শাসিত বিশ্বে একজন মহিলা লেখক হিসাবে সাফল্য অর্জন করা খুব কঠিন একটি ব্যাপার; ফলে বেশ কিছু নারী লেখক পুরুষের ছদ্মনাম গ্রহণ করেছিলেন[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

নারী: পরিভাষা, জীববিদ্যা, স্বাস্থ্য 
মেরি কুরি ছিলেন প্রথম নারী যিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে (ক্লাসিকাল গান) যন্ত্রসঙ্গীত হিসেবে শিল্পীদের একটি উল্লেখযোগ্য অনুপাত হল নারীরা এবং অর্কেস্ট্রাতে মহিলাদের অংশগ্রহণ শতাংশের হিসেবে বেড়েই চলছে। প্রধান কানাডিয়ান অর্কেস্ট্রাগুলিতে কনসার্টো শিল্পী নিয়ে 2015 সালের একটি নিবন্ধ ইঙ্গিত করে যে অর্কেস্টার সিম্ফোনিক ডি মন্ট্রিয়েলের 84% একক শিল্পী ছিলেন পুরুষ। 2012 সালে, এখনও শীর্ষস্থানীয় ভিয়েনা ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রার মাত্র 6% হল মহিলা। রক এবং হেভি মেটালের মতো জনপ্রিয় মিউজিক জেনারে বাদ্যযন্ত্রের বাদক হিসেবে নারীদের কম দেখা যায়, যদিও বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য মহিলা যন্ত্রশিল্পী এবং সর্ব-মহিলা ব্যান্ড (যেখানে ব্যান্ডের সব সদস্যই নারী) রয়েছে। চরম ধাতু(এক্সট্রিম মেটাল) ধারার সঙ্গিতে নারীদের বিশেষভাবে উপস্থাপিত করা হয়। এছাড়াও যেসকল ক্ষেত্রে নারীদের কম মূল্যায়ন করা হয় তার মধ্যে রয়েছে- অর্কেস্ট্রাল পরিচালনা, সঙ্গীত সমালোচনা/সংগীত সাংবাদিকতা, সঙ্গীত উৎপাদন এবং সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং । ১৯ শতকে যখন নারীদেরকে সংগীত রচনা করতে নিরুৎসাহিত করা হতো তখনও কিছু সংখ্যক নারী সঙ্গীত রচনাকারী করেছিলেন, মহিলারা পরবর্তীতে সঙ্গীত শিক্ষায় জড়িত হয়েছিলেন "... এমন মাত্রায় যে উনিশ শতকের শেষদিকে নারীরা এই ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন এবং ২০ শতকেও ভালোভাবই এই আধিপত্য বিস্তারকে বজায় রেখেছিলেন ।"

লন্ডনের দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট -এর একজন সঙ্গীত লেখক জেসিকা ডুচেনের মতে, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে নারী সঙ্গীতশিল্পীদেরকে "... প্রায়শই তাদের প্রতিভার চেয়ে তাদের চেহারার জন্য বেশি বিচার করা হয়" এবং তাদের চাপের সম্মুখীন হতে হয় ...মঞ্চে এবং ছবিতে যেন তাদের সেক্সি দেখায় " ডুচেন বলেছেন যে "[ওখানে বা]এখানে এমন মহিলা সঙ্গীতশিল্পীরা আছেন যারা তাদের চেহারা এবং আচা পরিবর্রতন করতে অস্বীকার করেন, ... যারা এ ধরনের পরিবর্তন করেন তারা বস্তুগতভাবে বেশি সফল হন।"

জেন্ডার প্রতীক

গ্রহ এবং রোমান দেবী শুক্রের জন্য গ্লিফ (♀) বা গ্রীক ভাষায় আফ্রোদিতি, নারী জেন্ডারের জন্য জীববিজ্ঞানে ব্যবহৃত প্রতীক। প্রাচীন অ্যালকেমিতে, শুক্র প্রতীকটি তামা অর্থে ব্যবহৃত হতো এবং নারীত্বের সাথে যুক্ত ছিল।

নারীত্ব

নারীত্ব (যাকে নারীত্ব বা বালিকাসুলভ হিসেবেও অভিহিত করা হয়) হলো একগুচ্ছ বৈশিষ্ট্য, আচরণ এবং ভূমিকা যা সাধারণত নারী এবং মেয়েদের সাথে সম্পর্কিত। যদিও নারীত্ব সামাজিকভাবে নির্মিত হয়, কিছু নারীসুলভ আচরণ জৈবিকভাবে প্রভাবিত হয়। নারীত্ব জৈবিক বা সামাজিকভাবে কতটা প্রভাবিত হয় তা বিতর্কের বিষয়। এটি জৈবিকভাবে প্রদত্ত নারী লিঙ্গের সংজ্ঞা থেকে ভিন্ন, কারণ পুরুষ এবং নারী উভয়ই নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করতে পারে।

তথ্যসূত্র

Tags:

নারী পরিভাষানারী জীববিদ্যানারী স্বাস্থ্যনারী প্রজনন অধিকার এবং স্বাধীনতানারী সংস্কৃতি এবং লিঙ্গ ভূমিকানারী ইতিহাসনারী পোশাক, ফ্যাশন এবং পরিধান রীতি - নীতিনারী উর্বরতা এবং পারিবারিক জীবননারী ধর্মনারী শিক্ষানারী রাজনীতিতে নারী বিজ্ঞান, সাহিত্য ও শিল্পনারী জেন্ডার প্রতীকনারী ত্বনারী তথ্যসূত্রনারী

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

বাংলাদেশের সংবিধানহিমেল আশরাফআফগানিস্তানএ. পি. জে. আবদুল কালামবিদ্যাপতিবাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলচাকমাইস্তেখারার নামাজজয়া আহসানসম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিস্বামী বিবেকানন্দকাজী নজরুল ইসলামহিজবুল্লাহপদ্মা সেতুচন্দ্রগুপ্ত মৌর্যআসসালামু আলাইকুমদুবাই আমিরাতবঙ্গাব্দঅসমাপ্ত আত্মজীবনীবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানআরবি বর্ণমালাহজ্জরাজ্যসভাবাংলাদেশের মেডিকেল কলেজসমূহের তালিকাকলাকনডমপারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রসমূহের তালিকাকালবৈশাখীটাঙ্গাইল জেলাউসমানীয় খিলাফতফাতিমামুজিবনগর সরকারইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগদিল্লি ক্যাপিটালসসার্বজনীন পেনশনমহাত্মা গান্ধীসোনালী ব্যাংক পিএলসিলোকনাথ ব্রহ্মচারীপৃথিবীমামধুমতি এক্সপ্রেসদেশ অনুযায়ী ইসলামবেল (ফল)আমবাংলাদেশের কোম্পানির তালিকা২০২৪ কোপা আমেরিকাসাঁওতালউসমানীয় সাম্রাজ্যচট্টগ্রাম জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থানবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়বাংলাদেশ রেলওয়েসাহাবিদের তালিকাবঙ্গবন্ধু-১বাংলাদেশের ঔষধ শিল্পমুহাম্মাদ ফাতিহব্যঞ্জনবর্ণজসীম উদ্‌দীনচট্টগ্রাম বিভাগসাধু ভাষাওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবধানরূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানী লিমিটেডহনুমান চালিশানদীকোষ (জীববিজ্ঞান)নামাজের নিয়মাবলীবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহসলিমুল্লাহ খানসালমান খানমিয়া খলিফাবাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানী লিমিটেডনাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, ২০১৯অগ্নিমিত্রা পালকম্পিউটার কিবোর্ডরশিদ চৌধুরীওজোন স্তরবাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার তালিকা🡆 More