বাইবেল: খ্রিস্ট ধর্মগ্রন্থ

বাইবেল বা ধর্মপুস্তক (হিব্রু ভাষায়: ביבליה‎; প্রাচীন গ্রিক: τὰ βιβλία, tà biblía, “পুস্তকসমূহ”) একটি ধর্মগ্রন্থ সংকলন যা খ্রীষ্টান, যিহূদী, শমরীয়, রাস্তাফারি ও অন্যান্যদের নিকট পবিত্র। এটি একটি সংহিতার আকারে আবির্ভূত হয়, বিভিন্ন ধরনের পুস্তকের সংকলন যা এই বিশ্বাসের দ্বারা সংযুক্ত যে তারা সম্মিলিতভাবে ঈশ্বরের দৈববাণী। এই পুস্তকগুলির মধ্যে রয়েছে ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিনিবদ্ধ ঐতিহাসিক বিবরণ, স্তব, প্রার্থনা, প্রবাদ-প্রবচন, নীতিগর্ভ রূপক কাহিনী, পত্র, আদিরসাত্মক গল্প, কাব্য ও ভাববাণী। বিশ্বাসীরা সাধারণত বাইবেলকে ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণার একটি সৃষ্টিকর্ম হিসাবে বিবেচনা করে।

বাইবেল: বিভিন্ন ধর্মের দৃষ্টিকোণ, আরও দেখুন, পাদটীকা
গুটেনবার্গ বাইবেল, প্রথম মুদ্রিত বাইবেল (মধ্য ১৫শ শতাব্দী)

একটি ঐতিহ্য বা গোষ্ঠী দ্বারা বাইবেলে অন্তর্ভুক্ত সেই পুস্তকগুলিকে ধর্মসম্মত বলা হয়, যা সূচিত করে যে সেই ঐতিহ্য বা গোষ্ঠীটি সংকলনটিকে সদাপ্রভুর বাক্য এবং ইচ্ছার প্রকৃত উপস্থাপনা হিসাবে দেখে। বাইবেলের প্রচুর ধর্মপুস্তক মণ্ডলী থেকে মণ্ডলীতে অধিক্রমণ ও অপসৃত বিষয়বস্তুর মাধ্যমে বিবর্তিত হয়েছে। হিব্রু বাইবেল বা তানাখ গ্রীক সপ্ততি ও খ্রীষ্টান পুরাতন নিয়মের সাথে সমাপতিত হয়। খ্রীষ্টান নূতন নিয়ম হল প্রথম শতাব্দীর কোইনি গ্রীক ভাষায় প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের, যাদের নাসরতীয় যীশুর যিহূদী শিষ্য বলে ধারণা করা হয়, দ্বারা রচিত গ্রন্থের সংকলন। খ্রীষ্টান মণ্ডলীগুলির মধ্যে ধর্মপুস্তকে কী অন্তর্ভুক্ত করা উচিত সে সম্পর্কে কিছুটা দ্বিমত রয়েছে, মূলত বাইবেলের অপ্রামাণিক অংশসমূহ, একটি রচনা তালিকা যা বিভিন্ন মাত্রার শ্রদ্ধার সাথে বিবেচিত হয়।

বাইবেলের প্রতি মনোভাবের ক্ষেত্রেও খ্রীষ্টীয় দলগুলির মধ্যেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। রোমীয় কাথোলিক, উচ্চমণ্ডলী ইঙ্গবাদী, পদ্ধতিবাদী ও পূর্বদেশীয় অর্থোডক্স খ্রীষ্টানরা বাইবেল ও পবিত্র ঐতিহ্য উভয়ের সঙ্গতি আর গুরুত্বের উপর জোর দেয়, আবার অনেক প্রতিবাদী মণ্ডলী সোলা স্ক্রিপতুরা ধারণার উপর বা কেবল ধর্মগ্রন্থের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। সংস্কারকালে এই ধারণাটি প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল এবং বর্তমানে অনেক মণ্ডলী খ্রীষ্টীয় শিক্ষার একমাত্র অভ্রান্ত উৎস হিসাবে বাইবেলের ব্যবহারকে সমর্থন করে। অন্যরা যদিও অনেক জ্ঞানী খ্রিস্টান ব্যক্তিবর্গ বাইবেলে প্রচুর ইতিহাস ও বিজ্ঞান বিষয়ক ভুল খুঁজে পেয়েছেন।

সাহিত্য এবং ইতিহাসে বাইবেলের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে, বিশেষত পশ্চিমা বিশ্বে, যেখানে গুটেনবার্গ বাইবেল প্রথম সচল মুদ্রাক্ষর ব্যবহার করে ছাপা হয়েছিল। টাইম ম্যাগাজিনের মার্চ ২০০৭ সংস্করণ অনুসারে, “বাইবেল রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে সাহিত্য, ইতিহাস, বিনোদন এবং সংস্কৃতি গঠনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্ব ইতিহাসে এর প্রভাব অতুলনীয় এবং এর প্রভাব হ্রাসের কোনো লক্ষণ দৃশ্যমান নয়।” আনুমানিক মোট ৫ বিলিয়নের অধিক কপি বিক্রীত। ২০০০ এর দশক হিসাবে বার্ষিক এটির প্রায় ১০০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়।

বাইবেল খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। বাইবেল শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে কইনি গ্রীক τὰ βιβλία, tà biblía, "বইগুলো" থেকে; বাইবেল অর্থাৎ ধর্ম শাস্ত্র, লিপি বা পুস্তক, ঈশ্বরের বাক্য

প্রচলিত প্রোটেস্ট্যান্ট বাইবেল ৬৬টি পুস্তকের (বা অধ্যায়ের) একটি সংকলন, যা দুটি প্রধান পর্বে বিভক্ত — ৩৯টি পুস্তক সংবলিত পুরাতন নিয়ম বা ওল্ড টেস্টামেন্ট এবং ২৭টি পুস্তক সংবলিত নতুন নিয়ম বা নিউ টেস্টামেন্ট। তবে ক্যাথলিক বাইবেলে পুস্তকসংখ্যা প্রোটেস্ট্যান্টদের চেয়ে ৭টি বেশি, অর্থাৎ ৭৩টি। খ্রিস্টধর্ম মতে ১৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ৪০জন লেখক বাইবেল লিপিবদ্ধ করেছিলেন। বাইবেলের মুখ্য বিষয়বস্তু বা কেন্দ্রমণি হলেন যীশু।

পুরাতন নিয়ম মূলত হিব্রু ভাষায় লিখিত, তবে দানিয়েল ও ইষ্রা পুস্তক দুটির কিছু অংশ আরামীয় ভাষায় লিখিত। নতুন নিয়ম গ্রিক ভাষায় রচিত। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এই বাইবেল লিপিবদ্ধ করেছেন বলা হয়। অনেক খ্রিস্টান বিশ্বাস করেন, এই বাইবেল লিপিবদ্ধ হয়েছিল খ্রিস্টীয় ত্রিত্ববাদের অন্যতম পবিত্র আত্মার সহায়তায়। পৃথিবীর অনেক ভাষায় বাইবেল অনুদিত হয়েছে।

ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণের ক্ষেত্রে বাইবেল ও কুরআন-এর ভাষ্য কিছুু ক্ষেত্রে অভিন্ন।

তবে বাইবেলে কুরআনের বিপরীত কথাও পাওয়া যায়।

বাইবেলের (আল কিতাব) অনেক ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণ সমূহ আছে I ইংরেজী ভাষাতে আপনি পেতে পারেন যেমন দি কিং জেমস সংস্করণ, দি নিউ ইন্টারন্যাশনাল সংস্করণ, দি নিউ  আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড সংস্করণ, দি নিউ ইংলিশ সংস্করণ এবং ইত্যাদি ইত্যাদিজেম। যেহেতু বাইবেলের অনেক বিভিন্ন সংস্করণ আছে সেইহেতু এটি দেখায় যে বাইবেল (আল কিতাব) বিকৃত হয়েছে, বা কমপক্ষে ‘সত্য’ একটিকে জানি না I হ্যাঁ বাস্তবিকই এই বিভিন্ন সংস্করণগুলো আছে – কিন্তু এর সাথে বাইবেলের বিকৃতির কোনো সম্পর্ক নেই বা এইগুলো সত্যই      ভিন্ন ভিন্ন বাইবেল কি না I প্রকৃতপক্ষে সেখানে কেবলমাত্র একটি বাইবেল/কিতাব আছে I   

উদাহরণস্বরূপ, যখন দি নিউ ইন্টারন্যাশনাল সংস্করণের কথা বলি, তখন মূল গ্রীক (ইঞ্জিল) এবং হিব্রু (তৌরাত এবং যাবুর) থেকে ইংরেজিতে এক নির্দিষ্ট অনুবাদের কথা বলছি I দি নিউ আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড ইংরেজির আর একটি অনুবাদ কিন্তু সেই একই গ্রীক এবং হিব্রু পাঠ্য থেকে I

বিভিন্ন ধর্মের দৃষ্টিকোণ

ইহুদি ধর্ম

আব্রাহামীয় ধর্মের মধ্যে ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্টধর্মের বাইবেলকে স্বীকার করে না, যেমনটা স্বীকার করে না 'যীশু' নামক ঈশ্বরের কোনো বাণীবাহককে। তবে খ্রিস্টানগণ যেখানে বাইবেলের পুরাতন নিয়ম বলতে ইহুদি ধর্মের ধর্মগ্রন্থগুলোকে বুঝিয়ে থাকেন, সেখানে ইহুদি ধর্মে এজাতীয় কোনো বিভাজন দেখা যায় না, বরং খ্রিস্টধর্মমতে পুরাতন নিয়মই ইহুদি ধর্মের ঐশ্বিক ধর্মগ্রন্থ তোরাহ

ইসলাম ধর্ম

ইসলাম ধর্মে পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরিফে "বাইবেল" বলে কোনো ধর্মগ্রন্থের উল্লেখ পাওয়া যায় না। উল্লেখ পাওয়া যায়, আল্লাহর বার্তাবাহক নবি ঈসা (আ.) এর উপর অবতীর্ণ "ইঞ্জিল" নামক ধর্মগ্রন্থের। কুরআনে বলা হয়েছে,

"আর আমি তাদের পেছনে মারইয়াম পুত্র ঈসাকে পাঠিয়েছিলাম তার সম্মুখে বিদ্যমান তাওরাতের সত্যায়নকারীরূপে এবং তাকে দিয়েছিলাম "ইঞ্জিল", এতে রয়েছে হিদায়াত ও আলো এবং (তা ছিল) তার সম্মুখে অবশিষ্ট তাওরাতের সত্যায়নকারী, হিদায়াত ও মুত্তাকীদের জন্য উপদেশস্বরূপ।"[কুরআন ৫:৪৬]

খ্রিস্টানদের যীশুকেই পবিত্র কুরআনে ঈসা (আ.) বলা হয়েছে। তবে মুসলিমদের মতে খ্রিস্টান ধর্মযাজকরা আল্লাহর কিতাব "ইঞ্জিল" পরিবর্তন ও বিকৃত করেছে। তাই বর্তমান বাইবেলকে তারা আল্লাহর কিতাব হিসেবে মানে না, বরং আল্লাহর কিতাবের পরিবর্তিত ও বিকৃত রূপ বলে।

বাইবেলের বিষয়ে মুসলিমরা ইযহারুল হক সহ বিভিন্ন বই লিখেছে।

আরও দেখুন

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:Bible Lists

This article uses material from the Wikipedia বাংলা article বাইবেল, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.

Tags:

বাইবেল বিভিন্ন ধর্মের দৃষ্টিকোণবাইবেল আরও দেখুনবাইবেল পাদটীকাবাইবেল তথ্যসূত্রবাইবেল বহিঃসংযোগবাইবেলইহুদিখ্রিস্টানপ্রাচীন গ্রিকরাস্তাফারিশমরীয়হিব্রু ভাষা

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ফজরের নামাজলগইনইমন চক্রবর্তীশেখ মুজিবুর রহমানজলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজাতিসংঘের মহাসচিবমহাদেশএ. পি. জে. আবদুল কালামবাংলাদেশের ইতিহাসপাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭০রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরদৈনিক প্রথম আলোকুলদীপ যাদবটিকটকবাংলাদেশ বিমান বাহিনীবিকাশসিন্ধু সভ্যতাএশিয়াগুগলসর্বনামগঙ্গা নদীফিলিস্তিনবসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রসৈয়দ মুজতবা আলীখন্দকের যুদ্ধকামদা একাদশীআবদুল হামিদ খান ভাসানীপশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদআবুল কাশেম ফজলুল হকজীববৈচিত্র্যস্নাতক উপাধিকুমিল্লাগাঁজা (মাদক)ভৌগোলিক নির্দেশকশিবনারায়ণ দাসতাজউদ্দীন আহমদদিনাজপুর জেলাকাতারসৌদি আরবের ইতিহাসস্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল্‌স লিমিটেডবাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার তালিকাবাংলাদেশের সংবাদপত্রের তালিকাপুরুষাঙ্গের চুল অপসারণকাজল আগরওয়ালপশ্চিমবঙ্গের জেলামোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনডায়াজিপামচট্টগ্রাম বিভাগনিতিশ কুমার রেড্ডিইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজিসিলেটপ্রথম বিশ্বযুদ্ধশ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়সূরা ইয়াসীনআয়তন অনুযায়ী ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহের তালিকামানব শিশ্নের আকার২০২৩ বাংলায় তাপপ্রবাহমাইকেল মধুসূদন দত্তমেয়েহনুমান চালিশাসূর্যোদয়নাটকমুহাম্মাদের স্ত্রীগণজিয়াউর রহমানপদ্মা নদীকোণঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলঢাকা বিভাগপারমাণবিক ভরের ভিত্তিতে মৌলসমূহের তালিকাঅ্যান্টিবায়োটিক তালিকাদক্ষিণবঙ্গচেলসি ফুটবল ক্লাবএকাদশীবাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলপুদিনাভূমি পরিমাপবাংলাদেশের জেলা🡆 More