দক্ষিণ সুদানের ইতিহাস বলতে বুঝায় বর্তমানের দক্ষিণ সুদানের ভূখণ্ড ও এর মধ্যে বসবাসরত মানুষদের ইতিহাস।
সুদান প্রজাতন্ত্র থেকে ২০১১ সালে দক্ষিণ সুদান আলাদা হয়। ভৌগোলিকভাবে, দক্ষিণ সুদান মোটেই সুদান অঞ্চলের (সহিল) মধ্যে পড়েনা। বরং এটি সাহারা-নিম্ন আফ্রিকার মধ্যে পড়ে। বর্তমানের পরিভাষায় এটিকে সুদান অঞ্চলের মধ্যে ফেলা হয়। যদিও ভূখণ্ডটির মধ্যে পূর্ব সুদানিয়ান সভানার কিছু অংশও রয়েছে। সুদান অঞ্চলের মধ্যে ভূখন্ডটি অন্তর্ভুক্ত হয় মূলত ১৯ শতকে। তখন মিশরের অটোমান খেদিভ দক্ষিণ দিকে তার রাজ্য বিস্তৃত করছিলেন। এছাড়াও ১৮৮৫ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে এটি মাহদিস্ট সুদান, এংলো মিশরীয় সুদান এবং সুদান প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
দক্ষিণ সুদানে নিলো-সাহারার ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা বেশি। এছাড়াও নাইজেরিয়া-কংগো ভাষায় কথা বলা অল্পসংখ্যক মানুষও রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে, কেন্দ্রীয় সুদানের ভাষায় কথা বলা মানুষরাই বর্তমানের দক্ষিণ সুদানের প্রতিনিধিত্ব করতো। কিন্তু ১৪শ শতকের পরে, খ্রিস্টান শাসকগোষ্ঠী মাকুরিয়া এবং আলোডিয়া বিলুপ্ত হওয়ার পর, নিলো-সাহারার মানুষরাই এই অঞ্চলটির দখল নিতে শুরু করে।
প্রায় দীর্ঘ সময়ের জন্য সুদের শস্যক্ষেত, নীলের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বাঁধা ছিল। ৬১ সালে, রোমান রাজা নিরো তার কিছু সৈন্যকে সাদা নদের মধ্য দিয়ে পাঠালো ইকুয়েটোরিয়াল আফ্রিকাকে জয় করার জন্য। কিন্তু সুদের জন্য তারা ব্যর্থ হয়। একই কারণে পরবর্তী সময়ে নদী পথে আফ্রিকা জয় করা কষ্টসাধ্য ছিল।
ভাষাগত দলিল প্রমাণ করে আগে নিলোটিক ভাষায় কথা বলা নিগোষ্ঠী ডিংকা, শিল্লুক এবং লুও এদের অস্তিত্ব ছিল। এই নিগোষ্ঠীগুলো সুদের আশপাশের জলাভূমি থেকে উঠে এসেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রমাণ করে, প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সাল থেকে এক ধরনের যাযাবর জাতি এখানে বসবাস করে আসছিল এবং এরাই মূলত নিলোটিক ছিল। এছাড়াও নিলোটিকদের গম্বুজ আকৃতির বাড়িঘর এবং টুকুল প্রমাণ করে ২৫তম নুবিয়া সাম্রাজ্যে তাদের অনেক অবদান ছিল।
১৪শ শতকের পরে সুদের আশপাশের অঞ্চল থেকে নিলোটিকরা বর্তমানের দক্ষিণ সুদান ভূখণ্ডে নিজেদের দখল বাড়াতে থাকে। বিশেষ করে নুবিয়ার সাম্রাজ্য মুকুরিয়া এবং আলোডিয়ার পতন, মধ্য সুদানে আরবদের দখল-দারিত্ব তাদেরকে আরো সুবিধা করে দেয়। আর আরবদের থেকে নিলোটিকরা শিনা ছাড়া গবাদি পশু পালন শুরু করে। প্রত্নতত্ত্ববিদ রোনাল্ড অলিভার বলেন নিলোটিকদের মাঝে লোহার যুগের ছোয়াও পাওয়া যায়। এইসকল ব্যাপারগুলো আসলে দেখিয়ে দেয় কীভাবে নিলোটিকরা নিজেদের অস্তিত্ব সুদানে আরো ভালো ভাবে পাকাপোক্ত করে।
১৫০০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ সুদান সম্পূর্ণভাবে মধ্য সুদানীয় ভাষায় কথা বলা মানুষদের দ্বারা শাসিত হতো। এখনও এমন কিছু নৃগোষ্ঠী রয়ে গেছে যেম মাদি এবং মরু।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ষোড়শ শতকে, নিলোটিকদের সবচেয়ে শক্তিশালী নৃগোষ্ঠী ছিল শিল্লুকরা। তারা পূর্ব দিক থেকে সাদা নদের তীড় পর্যন্ত নিজেদের বসতি স্থাপন করেছিল। তাদের নেতা ছিল বিখ্যাত নাইকাং যে ১৪৯০ সাল থেকে ১৫১৭ সাল পর্যন্ত শাসন করে। শিল্লুকরা পশ্চিম তীর থেকে উত্তর পর্যন্ত নিজেদের বসতি স্থাপন করেছিল। তাদের অর্থনীতি ছিল মূলত গবাদি পশু, শস্য ক্ষেত, মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল। নদীর তীর ধরে তাদের ছোট ছোট গ্রাম ছিল। তাদের কৃষিকাজের ধরন ছিল কিছুটা ভিন্ন। ১৭শ শতকে শিল্লুকদের বসতি ঘনত্বের দিক দিয়ে মিশরের নীল নদের তীরে বসবাসরত মানুষদের মতো ছিল।
একটি তত্ত্ব অবশ্য বলে শিল্লুকদের চাপে, ফাঞ্জ নৃগোষ্ঠীরা নিজেদের বসতি গুটিয়ে উত্তরের দিকে চলে যায়। সেখানে গিয়ে তারা সেন্নার শাসনামল শুরু করে। কিন্তু ডিংকা নৃগোষ্ঠীরা সুদের অঞ্চলেই থেকে যায়। সেখানে তারা তাদের যাযাবর অর্থনীতি বজায় রাখে।
মজার বিষয় হচ্ছে, ডিংকারা যখন নিজেদের আলাদা রেখে সুখে শান্তিতে ছিল, শিল্লুকরা বিদেশী শক্তিগুলোর সাথে বোঝাপড়ায় ব্যস্ত। শিল্লুকরা সাদা নদের পশ্চিম পাশ শাসন করতো। আর সাদা নদের অন্য তীর শাসন করতো ফাঞ্জাইরা। আর তাদের মধ্যে নিয়মিত ঝগড়া-ঝাটি লেগেই থাকতো। শিল্লুকদের ছিল যুদ্ধ করার মতো নৌকা। এটি দ্বারা তারা নীল নদকে নিয়ন্ত্রণে রাখতো। অন্য দিকে ফাঞ্জাইদের ছিল সেনাবাহীনি। এর দ্বারা তারা সাহিলের সমতলভূমি শাসন করতো।
শিল্লুকদের রাজা ওদাক অচল্লো ১৬৩০ সালে তাদের শাসন করে এবং তিনি সেন্নাদের সাথে তিন দশক ধরে নীলের মধ্য দিয়ে বাণিজ্য দিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করে। শিল্লুকরা দারফার সুলতান এবং তাকালি সাম্রাজ্যের সাথে মিলিত হয়ে ফাঞ্জের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু ফাঞ্জরাই যুদ্ধে জিতে যায়। ১৭শ শতকে শিল্লুক এবং ফাঞ্জরা একত্রিত হয়ে জিয়েং নামে একটি ডিংকা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। কারণ তারা ফাঞ্জাই এবং শিল্লুকদের সীমানায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করছিল। ধীরে ধীরে শিল্লুকদের শাসন ব্যবস্থা একজন রাজার অধীনে তৈরি হচ্ছিল। যার নাম ছিল রেথ তুগো। তিনি ১৬৯০ সাল থেকে ১৭১০ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। এবং ফাশোদা নামে একটি রাজধানী তৈরি করেন। কিন্তু একই সময়ে ফাঞ্জাইদের অধঃপতন ঘটলো। ফলে শিল্লুকরা সাদা নীলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল। সাথে এর মধ্য দিয়ে বাণিজ্যও শিল্লুকদের অধীনে চলে আসলো। মূলত নদী কে কেন্দ্র করেই শিল্লুকদের সামরিক শক্তি গড়ে ওঠে।
নিলোটিকদের বাইরের গোষ্ঠী ছিল আজান্দে। ১৬শ শতকে তারা দক্ষিণ সুদানে প্রবেশ করে এবং সেই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় প্রদেশ তৈরি করে। দক্ষিণ সুদানের তৃতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী হচ্ছে আজান্দে। তাদেরকে মারিদি, ইবা, ইয়াম্বিও, নিজারা, ইজন, তাম্বুরা এবং নাগেরে প্রদেশগুলোয় পাওয়া যায়। বিশেষ করে ইকুয়েটোরিয়া এবং বাহের এল ঘাজালের বৃষ্টিস্নাত বনে খুঁজে পাওয়া যায়। ১৮শ শতকে আভুঙ্গারার মানুষরা দ্রুত ঢুকে পড়ে আজান্দের মানুষদের ওপর কতৃত্ত্ব প্রদর্শন শুরু করে। তাদের এই আধিপত্য বৃটিশরা আসার আগ পর্যন্ত ছিল। বৃটিশরা ১৯ শতকে এখানে আগমন করে। ভৌগলিকভাবে দক্ষিণের অধিবাসীরা ইসলামের ছোঁয়া থেকে দূরেই ছিল। সুদের জলাভূমিতে ডিংকারা সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত ছিল। তাদেরকে বাইরের শক্তি থেকে আলাদা রেখেছিল। এমনকি বড় কোন সেনাবাহীনি ছাড়াই তারা সুন্দর ভাবে জীবন যাপনে সক্ষম ছিল। কিন্তু শিল্লুক, আজান্দে এবং বারির মানুষরা নিয়মিত অন্যান্য প্রতিবেশি শক্তিগুলোর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল।
১৮২১ সালে সেন্নার সুলতানের শাসনামল অধপতিত হয় উসমানীয় সাম্রাজ্য সুলতান মোহাম্মদ আলীর হাতে। এরপর মোহাম্মদ আলীর সৈন্যরা দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হওয়া শুরু করে। ফলে তারা দারফুর, কুরদুফান এবং ফাঞ্জিস্তানের দখল নিয়ে নেয়। ১৮২৭ সালে আলি খুরশীদ পাশা ডিংকা ভূমির মধ্য দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসরিত হন। ১৮৩০ সালে সাদা নদ এবং সোবাত নদীর সংযোগস্থলে অভিযান পরিচালনা করেন। তবে সবচেয়ে সাফল্যমন্ডিত অভিযান পরিচালনা করেছিলেন সেলিম কাবুদান। বরত্তমানে যুবা নামক স্থানে তিনি অভিভান পরিচালনা করেন।
তুর্কি-মিশরীয় বাহীনি চেষ্টা করেছিল সেই অঞ্চলে কিছু দুর্গ গড়ে তুলতে। কিন্তু সৈন্যদের মধ্যে নানান রোগ ছড়িয়ে পড়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। ১৮৫১ সালে, বিদেশী শক্তিদের চাপে মিশরের সরকার বাধ্য হয়ে ইউরোপিয়ান বণিকদের হাতে জায়গাটি ছেড়ে দেয়।
ইউরোপিয়ানরা এখানে প্রচুর হাতির দাঁত খুঁজে পায়। কিন্তু সেখানে বসবাসরত বারি মানুষদের মধ্যে এটি নিয়ে কোন প্রকার আগ্রহ ছিল না। কিছু খ্রিস্টান মিশনারিশরা এখানে এসে নিজেদের চার্চ তৈরি করেছিল। কিন্তু তাদের প্রভাব এই এলাকায় খুব একটা পড়েনি।
১৮৫০ এর দশকে দক্ষিণ সুদানে কিছু বণিকদের আধিপত্য তৈরি হয়েছিল। পূর্ব দিকের অঞ্চলগুলো শাসন করতো মোহাম্মদ আহমাদ আল-আক্কাদ। কিন্তু সবচেয়ে শক্তির দিক থেকে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ছিল আল-জুব্যাএর রাহমা মনসুরের। তিনি বাহের আল গাজাল এবং দক্ষিণ সুদানের বেশি কিছু অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতো। খারতুন থেকে আল-জুবায়ের ব্যবসা করতে এসেছিলেন এবং তার নিজেরই আলাদা সেনাবাহীনি ছিল।
"জারিবাস" নামে কিছু বাণিজ্য কুঠি তিনি তৈরি করেছিলেন। এখান থেকে তিনি আঞ্চলিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তার হাতির দাঁত নিয়ে ব্যবসা ছিল। সেসময় এটি খুবই মূল্যবান একটি বস্তু ছিল। বিগত শতকগুলোয় হাটির দাঁত নিয়ে সুদানের মানুষদের ওতো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু হুট করেই ইউরোপিয়ানদের কাছে এবং বিশ্বের কাছে এর চাহিদা বেড়ে যায়।
বাণিজ্য পরিচালনা করতে জুবায়েরের দরকার ছিল অনেক দাদ-দাসী যারা ব্যবসায় সাহায্য করবে। তিনি অনেক দাস যোগার করা শুরু করলেন। এমনকি বাণিজ্য পরিচালনার জন্য দাসদের নিয়ে ছোটখাটো একটি সেনাবাহীনি তৈরি করে ফেললেন। দরফারের সুলতানের সাথে বাণিজ্য নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আল-জুবায়ের তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। এবং যুদ্ধে তিনি ফুরের সবচেয়ে শেষ সুলতান, ইবরাহিমকে হত্যা করেন।
অটোমান সম্রাজ্যের ঈসমাইল পাশা আল-জুবায়েরের ক্রমেই আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। ফলে তিনি ইকুয়েটোরিয়া নামক একটি প্রদেশ তৈরি করলেন এবং সেই পুরো অঞ্চলকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ফন্দি আঁটলেন। ঈসমাইল পাশা এর জন্য ১৮৬৯ সালে স্যামুয়েল বেকার নামে একজন ইংরেজ ভ্রমনপিপাসু মানুষকে নিয়ে আসলেন। তাকে তিনি টাকা পয়সা এবং অনেক সৈন্যও দিলেন। কিন্তু বেকার শেষ পর্যন্ত সেই অঞ্চলটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারেন নি।
আল-জুবায়েরকে হত্যার জন্য ঈসমাইল পাশা আরেক বণিক মোহাম্ম আল-বুলাউয়ি কে ঠিক করলেন। শর্ত দিলেন, জুবায়েরকে পরাজিত করতে পারলে তিনি তাকে বাহের আল গজলের নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দিবেন। কিন্তু উল্টোটা হল যুদ্ধে। আল-জুবায়েরের হাতে বুলাউয়ি নিজেই মৃত্যুবরণ করলেন। ফলে ১৮৭৩ সালে, ঈসমাইল পাশা জুবায়েরকে অটোমান শাসক হিসেবে নিযুক্ত করলেন এবং তাকে পাশা বানিয়ে দিলেন। ফলে তার নাম হল আল-জুবায়ের রাহমা মনসুর পাশা।
আল-জুবায়েরকে পাশা বানানোর পরেও ঈসমাইল পাশা তার থেকে হুমকি পাচ্ছিলেন। ব্রিটিশ গণমাধ্যমেও জুবায়েরের ব্যাপারে লেখালেখি চলছিল। তাকে বলা হচ্ছিল "দাসদের রাজা"। ১৮৭৪ সালে চার্লস জর্জ গরডন কে ইকুয়েটোরিয়ার শাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ১৮৭৭ সালে আল-জুবায়ের কায়রোতে ফিরে যায় এবং দরফুরের শাসন তাকে ফিরিয়ে দিতে বলে। কিন্তু ঈসমাইল পাশা তাকে গ্রেপ্তার করে। এদিকে আল-জুবায়েরের ছেলেকে গরডন হারিয়ে দেয়। এভাবেই ঐ অঞ্চলে বণিকদের শাসন শেষ হয়। কিন্তু তবুও গরডন তার আধিপত্য সব জায়গায় বিস্তার করতে পারেনি।
১৮৭৮ সালে, গরডন কে বদলি করে এমিন পাশা কে নিয়োগ করা হয়। অমুসলিম অঞ্চলে অবশ্য মিশরীয়দের বিস্তৃতি ছিল না। মিশরের সাথে দক্ষিণ সুদানের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এমিন পাশাকে আলাদা রাখা হয়। হেনরি মর্টন স্টেনলি এমিন পাশাকে উদ্ধার করেন। যা এমিন পাশা উদ্ধার অভিযান নামে পরিচিত।
১৮৮৯ সালে ইকুয়েটোরিয়া মিশরের আলাদা একটা অংশই ছিল। এসময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বসতি সেখানে লক্ষ্য করা যায়। যেমন লাডো, গোন্ডোকরো, দুফাইল এবং ওয়াদেলাই। ১৯৪৭ সালে, ব্রিটিশরা জুবা কনফারেন্সের মাধ্যমে উগান্ডার সাথে সুদানের দক্ষিণাঞ্চলকে যুক্ত করতে চেয়েছিল। যাতে উত্তর এবং দক্ষিণ সুদান একসাথে থাকে।
স্বাধীনতার আগে এই অঞ্চলটি দুইবার গৃহযুদ্ধের স্বীকার হয়। ফলে অঞ্চলটিতে অভাব, অর্থনৈতিক অনুন্নতি লেগেই ছিল। গৃহযুদ্ধে প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ৫ লক্ষ মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। আবার অনেকে দেশের ভেতরেই উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে।
১৯৫৫ সালে, স্বাধীনতার চার মাস আগে প্রথম সুদানীয় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এর মূল কারণ ছিল আঞ্চলিকভাবে স্বাধীনতা অর্জন করা। প্রায় সতেরো বছর ধরে সুদান সরকার অনন্যা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে যুদ্ধ করে। ১৯৭১ সালে, প্রাক্তন সেনাবাহীনির লেফটেন্যান্ট জোসেফ লাগু সবগুলো গেরিলা দলকে একত্রিত করলেন। তিনি দক্ষিণ সুদান স্বাধীনতার আন্দোলনের নেতৃত্ত দিচ্ছিলেন। যুদ্ধের ইতিহাসে এটাই হয়তো কোন প্রথম উদাহরণ যে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর একটি সুসংগঠিত দল ছিল। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ সুদানকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা।
এমন কি জোসেফ লাগুর এই সংগঠন দক্ষিণ সুদানের হয়ে কথা বলতে পারতো। ১৯৭২ সালে, বিশ্ব গির্জা কাউন্সিল এবং আফ্রিকান গির্জা কাউন্সিল মিলে আদ্দিস আবাবা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ফলে দক্ষিণ সুদান একটি স্বাধীন অঞ্চল হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
১৯৮৩ সালে রাষ্ট্রপতি গাফার নিমেরি পুরো সুদান রাষ্ট্রকেই একটি ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। যদিও সুদানের দক্ষিণ অঞ্চলে অমুসলিমদের সংখ্যাই ছিল অনেক বেশি। দক্ষিণ সুদান অঞ্চলের স্বাধীনতা ১৯৮৩ সালের ৫ জুন শেষ হয়ে যায়। ফলে আদ্দিস আবাবা চুক্তিও আর থাকেনা। এর ফলে পুনরায় সুদান স্বাধীনতা বাহীনি আবার গড়ে ওঠে। এর নেতৃত্ব দেন জন গোরাগ। এবং সুদানে দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। তারা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটাতে থাকে। এবং তাদেরকে অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে খারতুম। যারা এস পি এল এ নাসির নামেই বেশি পরিচিত ছিল। এর নেতৃত্বে ছিল রিক মাচার।
ফলে যুদ্ধচলাকালীন সময়ে দক্ষিণ অঞ্চলের অধিবাসীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। অনেক মানুষ মারা যাচ্ছিল। ১৯৯১ সালের বোর গণহত্যার সময়ে, এস পি এল এ নাসিরের দ্বারা ২০০০ সাধারণ মানুষ খুন হয়। আরো ২৫০০০ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা যায়। এই গৃহযুদ্ধ প্রায় পঁচিশ বছর ধরে স্থায়ী ছিল। যা ২০০৫ সালে শেষ হয়। আফ্রিকাতে এটিই সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধ।
২০০৫ সালে, আন্ত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নাইরোবিতে একটি সার্বজনীন শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এর ফলে দক্ষিণ সুদান আবারো স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে পরিণিত হয়। ২০১১ সালে তারা নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করে। ফলে দক্ষিণ সুদান নামে একটি নতুন রাষ্ট্র তৈরি হয়।
২০১১ সালের ৯ থেকে ১৫ জানুয়ারী পর্যন্ত দক্ষিণ সুদানের মানুষরা একটি গণভোটে অংশগ্রহণ করে যেখানে তারা ভোট দেয় যে তারা সুদানের সাথে থাকবে নাকি আলাদা একটি রাষ্ট্র গঠন করবে। ৩০ জানুয়ারী ভোটের ফলাফল দেওয়া হয়। ফলাফলে দেখা যায় ৯৮.৮৩% মানুষ আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ভোট দেয়।
২০১১ সালের ৯ জুলাই, দক্ষিণ সুদান "গণতান্ত্রিক দক্ষিণ সুদান" নামে সম্পূর্ণ আলাদা একটি রাষ্ট্র গঠন করে। একই বছরের ১৪ জুলাই জাতিসংঘের ১৯৩তম রাষ্ট্র হিসেবে যোগ দেয় দক্ষিণ সুদান। ২০১১ সালের ২৮ জুলাই আফ্রিকান ইউনিয়নের ৫৪তম রাষ্ট্র হিসেবে যোগ দেয়।
দক্ষিণ সুদান আলাদা হলেও কিছু ব্যাপারে জটিলতা থেকেই গেছে। যেমন তেল ভাগাভাগি নিয়ে এখনো দুটো দেশের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। আবেই অঞ্চল নিয়ে এখনো দুটো রাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ইদানীংকালে ইথিওপিয়ান শান্তিরক্ষীরা দুটো দেশের সামরিক বাহীনিকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। যাতে তারা অঞ্চলটির দখল নিতে না পারে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
২০১২ সালের মার্চ মাসে সুদানের বিমানবাহীনি দক্ষিণ সুদানের ইউনিটি প্রদেশে বোমা হামলা চালায়। ইউনিটি প্রদেশটি সুদানের দক্ষিণ কুর্দুফান প্রদেশের কাছে অবস্থিত। এই হামলার পালটা জবাব হিসেবে দক্ষিণ সুদান হেগলিগ তেলক্ষেত্র নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। এর বিপরিতে সুদানের সুদানও হামলা চালায় এবং নয়দিন পরেই দক্ষিণ সুদানের সেনাবাহীনিকে বাধ্য করে হেগলিগ তেলক্ষেত্র থেকে সড়ে দাড়াতে। ২০ এপ্রিল দক্ষিণ সুদানের সেনাবাহীনি এটি অস্বীকার করে। অন্যদিকে সুদানের সেনাবাহীনি এটি নিজেদের বিজয় হিসেবে উল্লেখ করে। সুদানের রাষ্ট্রপতি ওমর আল-বশির খারতুমে একটি বিজয় র্যালি করে।
২২ এপ্রিল, সুদান আরো কিছু পালটা আক্রমণ করে। তারা ট্যাংক এবং আরো কিছু সৈন্য নিয়ে দক্ষিণ সুদানের ১০ কিলোমিটার (৬ মা) ভেতরে আক্রমণ চালায়। এতে একজন দক্ষিণ সুদানের সৈন্য মারা যায় এবং দুইজন আহত হয়।
আফ্রিকান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত থাবো এমবেকি মধ্যস্থতায় ২০১২ সালের জুনে দু'পক্ষই পুনরায় আলোচনা শুরু করে।
২ সেপ্টেম্বর, সুদানের রাষ্ট্রপতি ওমর আল-বশির এবং দক্ষিণ সুদানের রাষ্ট্রপতি সালভা কির ইথিওপিয়ার অ্যাডিস আবাবাতে আটটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। যার ফলে দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে তেল রফতানি পুনরায় শুরু হয়। এবং সীমান্তে ১০ কিমি (৬০০) জায়গা জুড়ে কোন প্রকার সামরিক বাহীনি না থাকার পক্ষে দুটি পক্ষ রাজি হয়। চুক্তিগুলোর ফলে দক্ষিণ সুদান তাদের তেলের ৫,৬০,০০,০০০ লিটার (৩,৫০,০০০ ব্যারেল) বিশ্ববাজারে রপ্তানি করার সুযোগ পায়। আরো কিছু বিষয় চুক্তিতে ছিল। যেমন স্বীমান্তে দুটি রাষ্ট্রেরই কিছু নীতিমালা, দুই পক্ষের মধ্যে একটি সুন্দর অর্থনৈতিক সাম্যবস্থা এবং দুটি দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা রক্ষা করা। তবে কিছু বিষয় অমিমাংসিতই রয়ে যায়। এগুলো পরে আলোচনা স্বাপেক্ষে সমাধান করা হবে বলে ঠিক করা হয়। একই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৭তম অধিবেশন ছিল। এই সময় বক্তব্য দেন দক্ষিণ সুদানের রাষ্ট্রপতি রিক মাচার। তিনি কোন কোন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে সে সম্পর্কে বলেন, তবে আবাইয়ের বিষয়ে কোন সমাধান না থাকার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
২০১৩ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে দুটি রাষ্ট্রই তাদের সৈন্য সরিয়ে ফেলতে শুরু করে যাতে করে তাদের সীমান্তে শান্তি ফিরে আসে। এপ্রিল মাসে দক্ষিণ সুদান, সুদানকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল দেয়া শুরু করে। পরবর্তীতে, দক্ষিণ সুদানের রাষ্ট্রপতি সুদানকে তেল দেয়া বন্ধ করার হুমকি দেন। তার অভিযোগ ছিল তারা দক্ষিণ সুদানের বিপক্ষে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু তিনি আরও বলেন তার তেল নিয়ে যুদ্ধ করার কোন ইচ্ছা নেই।
২০১১ সালের ৬ জুন উত্তর এবং দক্ষিণ সুদানের মধ্যে আবারো সংঘাতের সৃষ্টি হয়। এমন সময় এটি হয় যখন এক মাস পর, ৯ জুলাই দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতা দিবস। এর ফলে দুইটি পক্ষই আবেই থেকে নিজেদের আধিপত্য প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়।
জুনের শেষের দিকে জাতিসংঘসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক সংঘঠন আবেই প্রদেশে শান্তিরক্ষী হিসেবে ৪২০০ সৈন্য নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন।
শিল্লুক এবং মুরি বিদ্রোহীদের দমন করতে এস পি এল এ তাদের গ্রামে আক্রমণ চালায়। তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। শত শত নারীকে ধর্ষণ করে। অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে। সাধারণ মানুষরা হত্যার বর্ণনা দিয়েছিল এভাবে, তাদের নখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল। জ্বলন্ত পলিথিন তাদের সন্তানদের ওপর ফেলা হয়েছিল যাতে তাদের বাবা-মায়েরা অস্ত্র জমা দেয়। যদি এমন কোন খবর পাওয়া যেত কোন বিদ্রোহী কারো ঘরে থেকেছে, তাহলে ঐ বাড়ি ঘরের সবাইকে জ্বলন্ত পুড়ে ফেলা হতো। ২০১১ সালের মে মাসে, এস পি এল এ ইউনিটি প্রদেশের প্রায় ৭০০০ ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। জাতিসংঘ এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। জুবা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিচালক এটিকে মানবাধিকারের চরম অবমাননা হিসেবে উল্লেখ করে।
২০১০ সালে সি আই এ ধারণা করেছিল, "৫ বছরের মধ্যে আবারো হয়তো দক্ষিণ সুদানে নতুন করে গণহত্যার মতো কিছু হতে পারে"। জঙ্গলি রাজ্যে লং নুয়ের হোয়াইট আর্মি এবং মুরলি জাতি দুইটির এর মধ্যে ২০১১ সালে বিদ্বেষ তীব্র হয়েছিল। হোয়াইট আর্মি এটাও হুমকি দিয়েছিল যে তারা জাতিসংঘ এবং দক্ষিণ সুদানের সাথে যুদ্ধ করবে। তারা একটি বিবৃতি প্রকাশ করে যেখানে বলা হয়েছে, নুয়ের জাতির টিকে থাকার জন্য একমাত্র উপায় হচ্ছে মুরলি জাতিকে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলা। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এই পরিস্থিতিতে আরো গণহত্যার আশঙ্কা করেছিল।
স্বাধীনতার সময় দক্ষিণ সুদান কমপক্ষে সাতটি সশস্ত্র দল নিয়ে যুদ্ধে করেছিল। জাতিসংঘের তথ্যমতে, দক্ষিণ সুদানের ১০ টি প্রদেশের ৯টিই ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছিল। জোসেফ কোনির লর্ড রেজিস্টেন্স আর্মি দক্ষিণ সুদানের বেশিরভাগ এলাকা নিজেদের দখলে নিয়েছিল। বিদ্রোহীদের অভিযোগ ছিল সরকারের প্রতি। যে তারা জাতিগুলোর দিকে তাকাচ্ছে না। এমনকি গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নের দিকেও তাদের কোন মনোযোগ নেই।
রাষ্ট্রপতি সালভা খির, ২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর অভিযোগ করেন, এস পি এল এ-র কিছু সংখ্যক যোদ্ধা যারা পূর্বে সহ-রাষ্ট্রপতি রিক মাচারের প্রতি অনুগত ছিল, তৎকালীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার একটি পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু তাদের এই প্রচেষ্টা প্রতিহত করা হয়। এর ফলাফলস্বরূপ পুনরায় দক্ষিণ সুদানে গৃহযুদ্ধ শুরু হল। রিক মাচার তার প্রতি আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং ক্ষমতায় থাকা রাষ্ট্রপতি খিরকে পদত্যাগ করা প্রস্তাব দেন। উগান্ডা থেকে আসা সৈন্যরা খিরের পক্ষে যোগ দেয়। এছাড়া জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীবাহীনিও অবস্থান নেয়। ২০১৪ সালে যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। যদিও যুদ্ধ এরপরও চলতে থাকে। কিছু যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পর রিক মাচার জুবায় ফিরে আসে এবং সহ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করে। and he fled to Sudan রিক মাচার সহ-রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর আবারো সংঘাত শুরু হয়। এই সংঘাতে ডিংকা গোষ্ঠীও যোগ দিয়েছিল।
এই যুদ্ধে দিনকা এবং নূরের মধ্যে ছিল জাতিগত মিল। তারা মিত্র শক্তি হিসেবে যুদ্ধে নেমেছিল। যুদ্ধে প্রায় ৪০০,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে অনুমান করা হয়, ২০১৪ সালের বেন্টিয়ু গণহত্যার মতো উল্লেখযোগ্য নৃশংসতাও ছিল উল্লেকযোগ্য। ৪ কোটি বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, অভ্যন্তরীণভাবে ঘরবাড়ি হারায় প্রায় ১৮ লক্ষ মানুষ। প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোয় পালিয়ে যায়।।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article দক্ষিণ সুদানের ইতিহাস, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.