ভূত্বকীয় পাত সংস্থান তত্ত্ব

ভূত্বকীয় পাত সংস্থান তত্ত্ব বা ভূত্বক গঠনের পাত তত্ত্ব বা টেকটনিক প্লেট বলতে একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে নির্দেশ করা হয়, যার দ্বারা পৃথিবীর অশ্মমণ্ডলে একে অপরের দিকে চলাচল করতে সক্ষম কিছু পাতলা, অনমনীয় খণ্ড তথা পাতের সমন্বয়ে তৈরি ভূত্বক বা পৃথিবীর উপরিতলের বর্ণনা দেওয়া হয়।

ভূত্বকীয় পাত সংস্থান তত্ত্ব
১৯২০-এর দশকের দ্বিতীয় অর্ধাংশে ভূত্বকীয় পাতের অবস্থান নির্ণীত হয়।

পাতের সংজ্ঞা: সিয়াল ও সিমা সমেত পৃথিবীর মহাদেশ ও মহাসাগরীয় তলে কতগুলি অনমনীয় এবং কঠিন খণ্ড আপেক্ষিকভাবে গুরুমণ্ডলের অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের উপর চলমান । এই খণ্ডগুলিকে সাধারণভাবে টেকটনিক পাত বলা হয়।

সর্বপ্রথম ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান আবহবিদ আলফ্রেড ওয়েগনার প্রকাশ করেন "মহীসঞ্চারণ তত্ত্ব" ,(Continental Drift Theory) যার থেকেই এই ধারণাটির জন্ম হয়। ভূত্বক গঠনের পাত সংস্থান তত্ত্ব (Plate tectonics) আধুনিক বিজ্ঞানের একটি আবিষ্কার। গবেষণার দৌলতে এটি এখন আর নিছক কোনো তত্ত্ব নয়, বরং বিজ্ঞানসম্মত একটি ঘটনা, যা পৃথিবীতে সংঘটিত ভূমিকম্পের জন্য দায়ী বলে ভূবিজ্ঞানীরা মনে করেন। বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্বটিকে ব্যবহার করে ভূমিকম্প ছাড়াও আগ্নেয়গিরির উদগীরণ, পর্বত সৃষ্টি এবং মহাসাগর ও মহাদেশ সৃষ্টির ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন।

ব্যুৎপত্তি

ইংরেজি পারিভাষিক নাম Tectonic plate-এর tectonic শব্দটি লাতিন ভাষা tectonicus হয়ে গ্রিক ভাষার গ্রিক: τεκτονικός ("গড়ার গুণসম্পন্ন") শব্দটি থেকে এসেছে।

আবিষ্কারের সূত্র

আলফ্রেড ওয়েগনার লক্ষ্য করেন, পৃথিবীর মানচিত্রে মহাদেশগুলোর পার্শ্বদেশ বা সীমানা বা তটরেখা একটি আরেকটির থেকে অনেক অনেক দূরে হলেও অদ্ভুতভাবে পরস্পরের সাথে মিলে যায়। তা দেখেই তিনি তার তত্ত্বটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ব্যাখ্যা দেন যে, বহুকাল আগে সবগুলো মহাদেশ মিলে একত্রে একটি অতিমহাদেশ তৈরি হয়েছিল, প্যানজিয়া নামে পরিচিতি পায়। কালের আবর্তে এটি ভূত্বকীয় পাতগুলির নড়াচড়ায় আলাদা আলাদা মহাদেশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই তত্ত্বটিকে বলা হয় মহীসঞ্চারণ তত্ত্ব (Continental Drift Theory)। তিনি তার তত্ত্বের সমর্থনে মাদাগাস্কার দ্বীপ ও ভারতে প্রাপ্ত ফসিলের সাদৃশ্য দেখান। তার এই তত্ত্বটির উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা পরবর্তীতে বিভিন্ন গবেষণা ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে প্রতিষ্ঠিত করেন আধুনিকতম তত্ত্ব নব-বৈশ্বিক ভূত্বকীয় পাত, যা সাধারণ্যের কাছে ভূত্বকীয় পাত (টেকটনিক প্লেট) হিসেবে সমধিক পরিচিত।

বিবরণ

ভূত্বকীয় পাত মূলত পৃথিবীর অভ্যন্তরের গলিত অংশটির সবচেয়ে বাইরের আবরণ, যা আসলে পাথরের একটি স্তর, যার উপরে পৃথিবীর উপরস্থ সবকিছু অবস্থান করছে।

ভূত্বকীয় পাতসমূহের সীমানার ধরন

ভূত্বকীয় পাত সংস্থান তত্ত্ব 
পরিবর্তক সীমা
ভূত্বকীয় পাত সংস্থান তত্ত্ব 
বিমুখগামী সীমা
ভূত্বকীয় পাত সংস্থান তত্ত্ব 
অভিসারমুখী সীমা

তিন ধরনের ভূত্বকীয় পাত সীমানা লক্ষ্য করা যায়। সেগুলো হলঃ

  • পরিবর্তক সীমা: দুটি ভূত্বকীয় পাত যখন সমান্তরাল ভাবে একে অন্যের বিপরীতে সরতে থাকে, তখন তাদের মধ্যবর্তী স্থানকে পরিবর্তক সীমা (Transform boundaries) বলা হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে ভূত্বকীয় পাত সৃষ্টি বা ধ্বংস হয়না, তাই এদের সংরক্ষণশীল ভূত্বকীয় পাতসীমাও বলা হয়।
  • বিমুখগামী সীমা: এই ক্ষেত্রে ভূত্বকীয় পাতে ফাটল ধরে এবং এরপর তারা পরস্পরের বিপরীতমুখী ভাবে অগ্রসর হতে থাকে। একে গঠনমূলক ভূত্বকীয় পাতসীমাও বলা হয়, কারণ এর ফলে নতুন ভূত্বকীয় পাতের উদ্ভব হয়।
  • অভিসারমুখী সীমা: এই ক্ষেত্রে একাধিক টেকটনিক পাত পরস্পরগামী থাকে এবং একসময় সম্মিলিত হয়ে যায়। সাধারণত এইসকল ক্ষেত্রে পর্বতমালার সৃষ্টি হয়। একাধিক টেকটনিক পাত সম্মিলিত হয়ে একটাতে রুপান্তরিত হয় বলে একে বিধ্বংসীমূলক টেকটনিক সীমাও বলা হয়।

ভূত্বকীয় পাতসমূহ

পৃথিবীতে নিচের ভূত্বকীয় পাতসমূহ শনাক্ত করা হয়েছে।

প্রধান পাতসমূহ

সংজ্ঞাগত দিক দিয়ে এদের মধ্যে প্রধান ভূত্বকীয় পাত মোটামুটি ৬টি:

অপ্রধান ভূত্বকীয় পাতসমূহ

ডজনখানেক অপ্রধান পাত থাকলেও মোটামুটি ৭টি হলো:

  • আরবীয় পাত
  • ক্যারিবীয় পাত
  • হুয়ান দে ফুকা পাত
  • কোকাস পাত
  • নাজকা পাত
  • ফিলিপিনীয় পাত
  • স্কোশিয়া পাত

অন্যান্য জ্যোতিষ্কের ভূত্বকীয় পাত

ভূত্বকীয় পাত তত্ত্ব যদিও পৃথিবীকে ঘিরে শুরু হয়েছিল এবং পৃথিবীকেন্দ্রীকই আছে, কিন্তু বিজ্ঞানের আধুনিক গবেষণা অনুযায়ী ভূত্বকীয় পাত শুধু পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ নয়, এই তত্ত্ব অন্যান্য অনেক জ্যোতিষ্ক বা মহাকাশীয় বস্তুতে প্রযোজ্য। আমাদের সৌরজগতের শুক্র গ্রহ, মঙ্গল গ্রহ ছাড়াও বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহসমূহে, শনি গ্রহের উপগ্রহ টাইটানে ভূত্বকীয় পাত অস্তিত্ব দেখা যায়। এছাড়াও আমাদের সৌরজগতের বাইরের অন্যান্য জ্যোতিষ্ককে ঘিরে আবর্তিত পৃথিবীসদৃশ মহাকাশীয় বস্তুতেও, বিশেষ করে যেসকল মহাকাশীয় বস্তুতে পানির বিশাল উৎস বা সমুদ্র রয়েছে, সেগুলোতে ভূত্বকীয় পাতের অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

ভূত্বকীয় পাত সংস্থান তত্ত্ব ব্যুৎপত্তিভূত্বকীয় পাত সংস্থান তত্ত্ব আবিষ্কারের সূত্রভূত্বকীয় পাত সংস্থান তত্ত্ব বিবরণভূত্বকীয় পাত সংস্থান তত্ত্ব ভূত্বকীয় পাতসমূহের সীমানার ধরনভূত্বকীয় পাত সংস্থান তত্ত্ব ভূত্বকীয় পাতসমূহভূত্বকীয় পাত সংস্থান তত্ত্ব অন্যান্য জ্যোতিষ্কের ভূত্বকীয় পাতভূত্বকীয় পাত সংস্থান তত্ত্ব তথ্যসূত্রভূত্বকীয় পাত সংস্থান তত্ত্ব বহিঃসংযোগভূত্বকীয় পাত সংস্থান তত্ত্বঅশ্মমণ্ডলপৃথিবীভূত্বক

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থাহস্তমৈথুনবাংলা বাগধারার তালিকামুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাবরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৮৬১–১৯০১)পহেলা বৈশাখঅসমাপ্ত আত্মজীবনী১৫ এপ্রিলবনলতা সেন (কবিতা)এশিয়ামুজিবনগর দিবসইউরোজাতিপারমাণবিক ভরের ভিত্তিতে মৌলসমূহের তালিকাফরাসি বিপ্লববাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের তালিকাঅন্নপূর্ণা (দেবী)বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবাদের তালিকাহিজরি সনমাহরাম১৬ এপ্রিলজাতিসংঘসার্বভৌমত্বসিলেট২০২৩–২৪ ইন্ডিয়ান সুপার লিগমেটা প্ল্যাটফর্মসকৃষ্ণহাসান রুহানিআয়িশাডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসিআয়াতুল্লাহশিউলি ফুলসিরাজগঞ্জ জেলারাষ্ট্ররচনা বন্দ্যোপাধ্যায়সামরিক ব্যয় অনুযায়ী দেশের তালিকাসাহাবিদের তালিকাআনন্দবাজার পত্রিকাঋগ্বেদপেয়ারাজাতিসংঘের মহাসচিবদুর্গাপূজাঢাকা মেট্রোরেলঅপু বিশ্বাসফুটবলশাকিব খান অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকাচন্দ্রনাথ পাহাড়সূরা আর-রাহমানবেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশচার্লি চ্যাপলিনত্রিপুরাবাংলাদেশের প্রশাসনিক অঞ্চলরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরইসলামের নবি ও রাসুলএপ্রিলকালেমাশেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডবৈশাখী মেলাকলি যুগখ্রিস্টধর্মব্যাকটেরিয়াপলাশীর যুদ্ধপ্রিমিয়ার লিগমহাত্মা গান্ধীপশ্চিমবঙ্গে ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪রুহুল্লাহ খোমেনীউপন্যাসশারীরিক ব্যায়ামবসুন্ধরা গ্রুপজনি সিন্সস্কোপোলামিনমানব শিশ্নের আকারপ্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণহিন্দুধর্মের ইতিহাস🡆 More