টেক্সাস: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য

টেক্সাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্য। ১৮৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ২৮তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে টেক্সাস অন্তর্ভুক্ত হয়। আয়তন ও জনসংখ্যা উভয় দিক থেকে টেক্সাস যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম অঙ্গরাজ্য। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী অংশের সবচেয়ে দক্ষিণের রাজ্য টেক্সাসের দক্ষিণে রয়েছে মেক্সিকোর সাথে সুদীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমারেখা। সীমান্তবর্তী অন্য অঙ্গরাজ্যের মাঝে রয়েছে পশ্চিমে নিউ মেক্সিকো, উত্তরে রয়েছে ওকলাহোমা , উত্তর-পূর্বে আর্কানসাস এবং পূর্বে লুইজিয়ানা।

টেক্সাস
রাষ্ট্রমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
রাজ্য প্রতিষ্ঠার আগেরিপাবলিক অব টেক্সাস
ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্তি২৯ ডিসেম্বর, ১৮৪৫ (২৮ তম)
বৃহত্তম শহরহিউস্টন
বৃহত্তম মেট্রোডালাস-ফোর্ট ওয়ার্থ-আর্লিংটন
সরকার
 • গভর্নরগ্রেগ এবট (R)
 • লেফটেন্যান্ট গভর্নরDavid Dewhurst (R)
জনসংখ্যা
 • মোট২,৫১,৪৫,৫৬১ (২,০১০ Census)
 • জনঘনত্ব৯৬/বর্গমাইল (৩৭.২/বর্গকিমি)
ভাষা
 • দাপ্তরিক ভাষাNo official language
(see Languages spoken in Texas)
 • কথ্য ভাষাEnglish 68.7%
Spanish 27.0%
অক্ষাংশ25° 50′ N to 36° 30′ N
দ্রাঘিমাংশ93° 31′ W to 106° 39′ W

ইতিহাস

টেক্সাসের সূচনালগ্ন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যার নাম প্রজাতন্ত্রী টেক্সাস

১৮৩৫ সালের আগে টেক্সাস মেক্সিকোর অধীনে ছিল। মেক্সিকোতে সেসময় ফেডারালিস্ট এবং সেন্ট্রালিস্টদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এই উত্তেজনার রেশ ধরে ১৮৩৫ সালের শেষদিকে টেক্সানরা ব্যাটল অফ গনজালেসে মেক্সিকোর সাথে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী দু'মাসের মধ্যেই মেক্সিকো টেক্সাসের সবগুলো যুদ্ধে পরাজয় বরণ করে। টেক্সাস সে সময় প্রতিনিধি নির্বাচন করে, যারা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে। তবে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে এই সরকার শীঘ্রই ক্ষমতা হারায়। ফলে ১৮৩৬ সালের প্রথম দু'মাস টেক্সাস বস্তুত সরকারবিহীন অবস্থায় থাকে।

টেক্সাস: ইতিহাস, ভূ-প্রকৃতি, জনপরিসংখ্যান 
রিপাবলিক অফ টেক্সাস (১৮৩৬-১৮৪৫)

রাজনৈতিক এ গোলযোগের মাঝে মেক্সিকোর তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি এন্টোনিও লোপেজ ডি সান্তা আনা টেক্সাস বিদ্রোহ দমন করতে নিজেই সেনাবাহিনী নিয়ে অগ্রসর হন।প্রাথমিকভাবে মেক্সিকোর অভিযান সফল হতে থাকে। জেনারেল হোসে ডি উরেয়া উপকূলজুড়ে টেক্সান প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেন। মেক্সিকান সেনাবাহিনী কর্তৃক এসময় গোলিয়াদ গণহত্যার ঘটনা ঘটে।ব্যাটল অফ আলামোতে ১৩ দিন সান্তা আনার সৈন্যদল কর্তৃক অবরুদ্ধ থাকার পর টেক্সান প্রতিরোধ যোদ্ধারা পরাস্ত হয়। পরাজয়ের খবরে টেক্সাসের বসতি স্থাপনকারীদের মাঝে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। নির্বাচিত টেক্সান প্রতিনিধিরা সম্মেলনের মাধ্যমে দ্রুত টেক্সাসের স্বাধীনতা ঘোষণা করতে উদ্যোগী হন। ১৮৩৬ সালের ২রা মার্চ টেক্সাস মেক্সিকো থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হওয়ার ঘোষণা দেয়। অন্যান্য অনেক বসতি স্থাপনকারীর মত নব গঠিত সরকারও অগ্রসরমান মেক্সিকান সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে যায়। কয়েক সপ্তাহ পিছু হটার পর স্যাম হিউস্টনের নেতৃত্বে টেক্সান বাহিনী ব্যাটল অফ স্যান জানকিতো তে সান্তা আনার সেনাবাহিনীকে আক্রমণ এবং পরাজিত করতে সমর্থ হয়। মেক্সিকান রাষ্ট্রপতি সান্তা আনা গ্রেপ্তার হয়ে ভালেস্কোর চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য হন। ফলে যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে।

টেক্সাস: ইতিহাস, ভূ-প্রকৃতি, জনপরিসংখ্যান 
ব্যাটল অফ স্যান জানকিতো তে মেক্সিকান জেনারেল আন্তোনিও লোপেজ ডি সান্তা আনার আত্মসমর্পণ

টেক্সাস স্বাধীন হলেও দু'টি প্রতিপক্ষ টেক্সান দলের মাঝে চরম রাজনৈতিক মতবিরোধ দেখা দেয়। লামারের নতৃত্ব জাতীয়তাবাদী অংশটি টেক্সাসের স্বাধীনতা সুসংহত করে এর সীমানা প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত করার উদ্যোগে ব্রতী হয়। আমেরিকার আদিবাসীদেরকেও তারা টেক্সাস থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যদিকে স্যাম হিউস্টনের নেতৃত্ব প্রতিপক্ষ দলটি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে টেক্সাসের একীভূত হয়ে যাওয়া এবং আদিবাসীদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে। এ ঘটনার সূত্র ধরে ১৮৪২ সালে স্যাম হিউস্টন টেক্সাসের রাজধানী অস্টিন থেকে হিউস্টনে স্থানান্তরের চেষ্টা করেন। ইতিহাসে এটিকে টেক্সাসের আর্কাইভ যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত।

১৮৪২ সালে মেক্সিকো ছোট পরিসরে দু'বার টেক্সাস অভিযান চালায়। স্যান অ্যান্টোনিও শহরটি এসময় দু'দফায় মেক্সিকান বাহিনীর পদানত হয়। অভিযানে সাফল্য সত্ত্বেও মেক্সিকো টেক্সাস ভূ-খণ্ডে তাদের সেনা উপস্থিতি দীর্ঘায়িত করেনি। ফলে টেক্সাস প্রজাতন্ত্র টিকে থাকে। একই সময় আত্মরক্ষায় টেক্সাস প্রজাতন্ত্রের দুর্বলতা প্রকাশিত হয়ে পড়ায় , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একীভূত হয়ে যাবার আন্দোলনটি গতিশীল হতে থাকে।

ভূ-প্রকৃতি

৬,৯৬,২০০ বর্গমাইলের আয়তন বিশিষ্ট টেক্সাস , আলাস্কার পরেই বৃহত্তম মার্কিন অঙ্গরাজ্য। ফ্রান্সের তুলনায় এ রাজ্যটি ১০ শতাংশ বড়। জার্মানি অথবা জাপানের তুলনায় আয়তনে প্রায় দ্বিগুণ। আলাদা দেশ হিসেবে বিবেচনা করলে টেক্সাস হত বিশ্বের ৪০ তম বৃহত্তম রাষ্ট্র।

রাজ্যের সীমানা তিনদিকে নির্ধারিত হয়েছে নদী দিয়ে।মেক্সিকোর সাথে পুরো বিভাজনরেখা বরাবর চলে গেছে রিও গ্রান্দে নদী। রেডরিভার নির্ধারণ করে টেক্সাসের সাথে ওকলাহোমা এবং আরকানসাসের সীমানা। পূর্বে সাবিনে নদী টেক্সাস এবং লুইজিয়ানাকে বিভাজন করেছে।

১০ টি ভিন্ন ভিন্ন জলবায়ু অঞ্চল, ১৪ টি ভিন্ন ধরনের ভূমি এবং ১১ টি ভিন্ন বাস্তুসংস্থানের কারণে টেক্সাসের জলবায়ু, ভূ-তত্ত্ব এবং জীব-বৈচিত্র্যের বিন্যাসটি বেশ জটিল।একটি ধারণা অনুযায়ী রাজ্যকে মূলত তিনটি অংশ ভাগ করে বর্ণনা করা যায়: উপসাগর তীরবর্তী সমতলভূমি, মধ্যভাগের নিচুভূমি, বিশাল সমভূমি-অববাহিকার বিন্যাস অঞ্চল।

জনপরিসংখ্যান

২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী টেক্সাসের জনসংখ্যা ২৪,৭৮২,৪০৬ জন । ২০০০ সালের তুলনায় এ সংখ্যাটি প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি । ২০০৪ সালের হিসাব অনুযায়ী রাজ্যের সাড়ে তিন মিলিয়ন বাসিন্দার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে , যা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১৫.৬ শতাংশ

টেক্সাসের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গমাইলে ৩৪.৮ জন যা সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার ঘনত্ব ৩১ এর চাইতে খানিকটা বেশি ।

প্রধান শহর

টেক্সাস: ইতিহাস, ভূ-প্রকৃতি, জনপরিসংখ্যান 
হিউস্টন

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল ১০ টি শহরের মাঝে ৩ টিরই অবস্থান টেক্সাসে. এ তিনটি শহর যথাক্রমে হিউস্টন,ডালাস এবং স্যান অ্যান্টোনিও। যুক্তরাষ্ট্রের বড় পঁচিশটি শহরের মাঝেও এছাড়াও রয়েছে টেক্সাসের অস্টিন , ফোর্ট ওয়ার্থ এবং এল প্যাসো শহর। অন্তত ১০ লাখ বা তদূর্ধ্ব জনসংখ্যার চারটি মেট্রোপ্লেক্স হল ডালাস-ফোর্ট ওয়ার্থ-আর্লিংটন , হিউস্টন-সুগারল্যান্ড-বে টাউন, স্যান অ্যান্টোনিও-নিউ ব্রন্সফেল, অস্টিন-রাউন্ড রক-স্যান মার্কোস । এর মাঝে ডালাস-ফোর্ট ওয়ার্থ-আর্লিংটন মেট্রোপ্লেক্সের বাসিন্দা প্রায় ৬৩ লাখ মানুষ। হিউস্টন মেট্রোপলিটন এলাকায় বাস করে ৫৭ লাখ জন। টেক্সাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তিনটি আন্তঃ-রাজ্য হাইওয়ে যথাক্রমে আই-৩৫ চলে গেছে ডালাস-ফোর্ট ওয়ার্থ থেকে দক্ষিণে অস্টিন হয়ে স্যান অ্যান্টোনিও । আই-৪৫ সংযুক্ত করে ডালাস আর হিউস্টনকে । আর আই-১০ সংযুক্ত করেছে স্যান অ্যান্টোনিও এবং হিউস্টিনকে। এ তিনটি হাইওয়ের শীর্ষের তিনটি বড় শহর এবং মধ্যবর্তী ত্রিভুজাকৃতি এলাকাতেই মূলত টেক্সাসের সবচেয়ে জনবহুল অন্যান্য শহরের এবং কাউন্টির অবস্থান । রাজ্যের জনসংখ্যার তিন চতুর্থাংশ মূলত এই অঞ্চলটিতেই বাস করে। ডালাস এবং হিউস্টন বিশ্বের বেটা সিটিগুলির মাঝে ইতোমধ্যেই স্বীকৃত ।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

টেক্সাস ইতিহাসটেক্সাস ভূ-প্রকৃতিটেক্সাস জনপরিসংখ্যানটেক্সাস প্রধান শহরটেক্সাস তথ্যসূত্রটেক্সাস আরও দেখুনটেক্সাস বহিঃসংযোগটেক্সাসআর্কানসাসওকলাহোমানিউ মেক্সিকোমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রমেক্সিকোলুইজিয়ানা

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকাতারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়রামকৃষ্ণ পরমহংসবাংলার প্ৰাচীন জনপদসমূহবায়ুদূষণবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়অশ্বত্থবসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রর‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নবিষ্ণুসাধু ভাষাইরাকঅনন্যা পাণ্ডেবাংলাদেশের মেডিকেল কলেজসমূহের তালিকাবর্ডার গার্ড বাংলাদেশউপসর্গ (ব্যাকরণ)আদমশিশ্ন বর্ধনমৌলিক পদার্থের তালিকাভিয়েতনাম যুদ্ধজীববৈচিত্র্যশামসুর রাহমানরামায়ণবৌদ্ধধর্মবাংলা সংখ্যা পদ্ধতিবাংলাদেশের ইউনিয়নের তালিকাপাকুড়বৈসাবি উৎসবহরমোনসুনীল নারাইনভীমরাও রামজি আম্বেদকরবিশ্বের মানচিত্রবাংলাদেশের জেলাসমূহের তালিকামাইটোকন্ড্রিয়াইউক্রেনে রুশ আক্রমণ (২০২২-বর্তমান)বাক্যইসরায়েলটপ্পা গানলোকসভাসাইপ্রাসকক্সবাজার সমুদ্র সৈকতবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীস্বপ্ন যাবে বাড়িইব্রাহিম (নবী)অবতারআলবার্ট আইনস্টাইনবাংলাদেশের জাতিগোষ্ঠীবাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রসমূহের তালিকাহাতিশুঁড়ঢাকা মেট্রোরেলমেটা প্ল্যাটফর্মসবাংলাদেশের সংস্কৃতিমাওবাদবেদে জনগোষ্ঠী৬৯ (যৌনাসন)সূরা নাসকলকাতা নাইট রাইডার্সরাধাঅষ্টাঙ্গিক মার্গপ্রথম উসমানঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েবেগম রোকেয়াশ্যামলী পরিবহনঢাকা জেলাদক্ষিণ কোরিয়াক্রিকেটদুর্গাআহল-ই-হাদীসকানাডাহানিফ সংকেতনারায়ণগঞ্জ জেলাখালিদ হাসান মিলুবাংলাদেশের ইতিহাসআকিজ গ্রুপইস্তেখারার নামাজমোশাররফ করিম🡆 More