সামষ্টিক অর্থনীতি

সামষ্টিক অর্থনীতি (বা বৃহৎ অর্থনীতি) হচ্ছে অর্থনীতির একটি শাখা যা জাতীয় বা আঞ্চলিক অর্থনীতির সামগ্রিক কর্মদক্ষতা, কাঠামো ও আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।

সামষ্টিক অর্থনীতি
সামষ্টিক অর্থনীতির ত্রিমুখী চক্রাকার প্রবাহ চিত্র

সামষ্টিক অর্থনীতি অর্থনীতির দুইটি সাধারণ মুল ক্ষেত্রের একটি। সামষ্টিক অর্থনীতিবিদগন পুরো অর্থনীতি কর্মকাণ্ড বোঝার জন্য জিডিপি, বেকারত্বের হার ও মূল্য সুচকের মত সামগ্রিক নির্দেশক নিয়ে আলোচনা করে। সামষ্টিক অর্থনীতিবিদগন মডেল উন্নয়ন করে থাকে যা কিছু উপাদানের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে, যেমন জাতীয় আয়, উৎপাদন, ভোগ, বেকারত্ব, মুদ্রাষ্ফীতি, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থা। অন্য দিকে, ব্যষ্টিক অর্থনীতি একক উপাদানের কর্মকাণ্ডের উপর প্রাথমিক আলোকপাত করে যেমন, ফার্ম ও ভোক্তা, এবং তাদের আচরণ নির্দিষ্ট বাজারে দাম ও পরিমাণ কীভাবে নির্ধারন করে তা নিয়ে আলোচনা করেন।

সামষ্টিক অর্থনীতি একটি বিশাল শিক্ষাক্ষেত্র, এখানে গবেষণার দুইটি দিক রয়েছে:জাতীয় আয়ে (বাণিজ্য চক্র) স্বল্পকালীন স্থানান্তরের কারণ ও প্রভাব এবং দীর্ঘকালীন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জাতীয় আয় বৃদ্ধি) নির্ধারনের চেষ্টা করা।সামষ্টিক অর্থনীতি মডেল ও তাদের প্রভাব সরকার ও বৃহৎ [সংস্থা] উভয়েরই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক নীতি ও ব্যবসা পরিস্থিতি মুল্যায়নের জন্য ব্যবহৃত হয়।

সামষ্টিক অর্থনৈতিক তত্ত্ব উন্নয়ন

সামষ্টিক অর্থনীতি 
মাইক্রোইকোনমিকস সার্কুলেশন

"সামষ্টিক অর্থনীতি" ধারনাটি ১৯৩৩ সালে নরওয়েজিয়ান অর্থনীতিবিদ রাগনার ফ্রিশের একই উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত "সামষ্টিক পদ্ধতি" ধারণা থেকে এসেছে। এবং বিগত সময়ে এই ক্ষেত্রের প্রচুর বিস্তৃত উপাদান অনুধাবন করার একটি দীর্ঘ প্রচেষ্টা রয়েছে। ইহা বিগত সময়ের বাণিজ্য বিচ্যুতি ও আর্থিক অর্থনীতি গবেষণার সামগ্রিক ও বিবর্ধন।

মার্ক ব্লাগ, অর্থনৈতিক চিন্তাধারার একজন উল্লেখযোগ্য ইতিহাসবিদ, তার "Great Economists before Keynes: 1986" রচনায় বলেন যে, সুইডিশ অর্থনীতিবিদ নুট উইকসেল " কম কিংবা বেশি হউক আধুনিক সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিষ্টায় অবদান রয়েছে।

বুনিয়াদী অর্থনীতি ও অর্থের পরিমাণ তত্ত্ব

মূল নিবন্ধ: অর্থের পরিমাণ তত্ত্ব
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে অর্থের পরিমাণ তত্ত্ব সামষ্টিক অর্থনীতি মডেলের সমর্থনে বুনিয়াদী অর্থনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণে আসে। এই তত্ত্ব বিনিময় সমীকরন সৃষ্টি করে: সমীকরনটিতে বলা হয় যে, অর্থের যোগানের সময় অর্থের প্রবাহ (একটি বিনিময় প্রক্রিয়ায় নগদ অর্থ একজন থেকে অন্য জনের নিকট কত গতিতে স্থানান্তরিত হয়) হচ্ছে অপ্রকৃত উৎপাদনের (মূল্যস্তর কালীন উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবার পরিমান) সমান। বুনিয়াদী অর্থনীতিবিদগন, যেমন ইর্ভিং ফিশার দেখান যে, স্বল্প কালে প্রকৃত আয় ও অর্থের প্রবাহ স্থিতিশীল হতে পারে, অতএব, এই তত্ত্বের মুলকথা হচ্ছে, মুল্য স্তর পরিবর্তিত হতে পারে অর্থের যোগান পরিবর্তনের মাধ্যমে। অর্থের বুনিয়াদী পরিমাণ তত্ত্ব প্রকাশ করে যে, অর্থের চাহিদা স্থিতিশীল এবং অন্যান্য উপাদান যেমন সুদের হার হতে স্বাধীন। অর্থনীতিবিদগন মহামন্দার সময়ে অর্থের বুনিয়াদী পরিমাণ তত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন যেখানে অর্থের চাহিদা ও অর্থের প্রবাহ ব্যর্থ হয়।

কেইন্সীয় মতবাদ

১৯৩০ সাল পর্যন্ত বেশির ভাগ অর্থনৈতিক বিশ্লেষন সামগ্রিক আচরণ থেকে বের হয়ে একক আচরণ বিশিষ্ট হতে পারেনি। ১৯৩০ সালের মহামন্দা ও জাতীয় আয় ও উৎপাদন পরিসংখ্যানের ধারণা উন্নয়নের সাথে সাথে সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্র সমুহ প্রসারিত হতে থাকে। বর্তমানে আমরা জানি ঐ সময়ের পুর্বে সম্পূর্ণ জাতীয় হিসাব ছিলনা। ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জন মাইনার্ড কেইন্স যিনি মহামন্দাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন তার ধারণা সঠিক ভাবে ফলপ্রসূ হয়।

কেইন্সের পরবর্তী সময়কাল

অর্থনীতির একটি চ্যালেঞ্জ ছিল যে সামষ্টিক অর্থনীতি ও ব্যষ্টিক অর্থনীতি মডেলের মধ্যে সমন্বয় সাধন। ১৯৫০ সাল হতে শুরু করে সামষ্টিক অর্থনীতিতে সামষ্টিক আচরনের ব্যষ্টিক ভিত্তিক মডেল সমুহেরে উন্নয়ন সাধিত হতে থাকে, যেমন ভোগ সমীকরন। ডাচ অর্থনীতিবিদ জান টিম্বার্গেন সর্বপ্রথম জাতীয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক মডেল উন্নয়ন করেন, যা তিনি নেদারল্যান্ডের জন্য তৈরি করেন এবং পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর [মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র], যুক্তরাজ্যে প্রয়োগ করেন। প্রথম বিশ্ব সামষ্টিক অর্থনৈতিক মডেল হার্টন ইকোনোমেট্রিক ফোরকাষ্টিং এ্যাসোসিয়েট (Wharton Econometric Forecasting Associates)-এর লিন্ক প্রকল্পে (LINK project) লরেন্স ক্লেইন আরম্ভ করেন এবং তার ফলে তিনি ১৯৮০ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।

তত্ত্ববিদ যেমন [জে আর রবার্ট লুকাস] পরামর্শ (১৯৭০ সালে) দেন যে, সামষ্টিক অর্থনীতির অন্তত: কিছু প্রচলিত কেন্সীয়ান মতবাদ ( জন মায়ার্ড কেইন্স পরবর্তী) বিতর্কিত যেমন সেগুলো ব্যক্তিগত আচরণ সম্পর্কে অনুমিত শর্ত থেকে পাওয়া নয়, কিন্তু সামষ্টিক অর্থনীতির চলক সমুহের মধ্যে পর্যবেক্ষণমুলক বিগত সহসম্পর্ক ভিত্তির বিপরীত। কখনও কখনও নব্য কেন্সীয়ান সামষ্টিক অর্থনীতিতে ব্যষ্টিক অর্থনীতির মডেল গুলোকে সামষ্টিক অর্থনীতির তত্ত্বের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার জন্য সাধারণ ভাবে উপস্থাপন করা হয় এবং কিছু কেইন্সীয়ান বাদী একটি ধারনার প্রতিদন্দ্বিতা করে যে, যদি মডেল সমুহ বিশ্লেষন গুরুত্বপূর্ণ হলে ব্যষ্টিক অর্থনীতি কাঠামো আবশ্যিক। একটি সাদৃশ্য পাওয়া যায় যে, পরিমাপ গত পদার্থ বিদ্যার বিষয় সমুহ বাস্তব তত্ত্বের সহিত পুরোপুরি সামঞ্জস্য পূর্ণ নয় এর মানে এই নয় যে, বাস্তব মতবাদ ভুল।

চিন্তাধারার বিভিন্ন স্কুল সমুহ সবসময় সরাসরি প্রতিযোগিতা করেনা, কখনও কখনও তারা ভিন্ন ভিন্ন উপসংহারে পৌছে। সামষ্টিক অর্থনীতি গবেষণার একটি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ক্ষেত্র। অর্থনৈতিক গবেষণার লক্ষ্য একেবারে সঠিক ফলাফল বের করা নয়, বরঞ্চ কিছুটা কার্যকরী ( এম. ফ্রেডম্যান, ১৯৫৩)। ফ্রেডম্যানের মতে, একটি অর্থনৈতিক মডেল তথ্যের সঠিক ব্যবহার বা মডেল প্রতিষ্ঠার উপযুক্ত করার জন্য সঠিক ভাবে পুন: পুন: পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

বিশ্লেষনের প্রকৃতি

অর্থনীতির দুইটি ভিন্ন প্রকৃতির মধ্যে সাধারণ পার্থক্য হচ্ছে: কেইন্সীয়ান অর্থনীতিতে চাহিদার উপর আলোকপাত করা হয় এবং যোগান অর্থনীতিতে যোগানের উপর আলোকপাত করা হয়। অন্যের পুরোপুরি ব্যতিক্রম গৃহীত হতে দেখা যায়না, কিন্তু বেশির ভাগ স্কুল অন্যের তাত্ত্বিক কাঠামোর উপর প্রভাব রাখার চেষ্টা চালায়।

সামষ্টিক অর্থনীতির পরিধিঃ সামষ্টিক চলক ব্যাখ্যা, আয় ও নিয়োগ তত্ত্ব ব্যাখ্যা, জাতীও আয় ব্যাখ্যা।

তথ্যসূত্র

Tags:

সামষ্টিক অর্থনীতি সামষ্টিক অর্থনৈতিক তত্ত্ব উন্নয়নসামষ্টিক অর্থনীতি বুনিয়াদী অর্থনীতি ও অর্থের পরিমাণ তত্ত্বসামষ্টিক অর্থনীতি কেইন্সীয় মতবাদসামষ্টিক অর্থনীতি কেইন্সের পরবর্তী সময়কালসামষ্টিক অর্থনীতি বিশ্লেষনের প্রকৃতিসামষ্টিক অর্থনীতি তথ্যসূত্রসামষ্টিক অর্থনীতি

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

উজবেকিস্তানদক্ষিণ কোরিয়াসাতই মার্চের ভাষণবাংলাদেশ ছাত্রলীগসিঙ্গাপুরকক্সবাজার সমুদ্র সৈকতযৌন অসামঞ্জস্যতাভৌগোলিক আয়তন অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাহামাসযুক্তফ্রন্টকবিগানপেশাকলাশিয়া ইসলামঅকালবোধনযাকাতমধ্যপ্রাচ্যসীতাওজোন স্তর২০২২–২৩ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগআসমানী কিতাবদিল্লিআলহামদুলিল্লাহগর্ভধারণইউনিলিভারপ্রথম উসমানশনি (দেবতা)ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সব্যঞ্জনবর্ণবুর্জ খলিফাদারাজনরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাকাবাযোনিবিশেষণতানযীমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশলক্ষ্মীপুর জেলাযৌনপল্লিচিরস্থায়ী বন্দোবস্তভারতীয় জনতা পার্টিঢাকা জেলাই-মেইলমহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রভিটামিনরাসায়নিক সূত্রবেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশউহুদের যুদ্ধকানাডাহিন্দুপ্রার্থনা ফারদিন দীঘিকাজল আগরওয়ালবাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রমচৈতন্যচরিতামৃতচড়ক পূজাচাঁদজরায়ুবাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডএ. পি. জে. আবদুল কালামহার্ডিঞ্জ ব্রিজবিদ্রোহী (কবিতা)কুয়েতডেঙ্গু জ্বরবাংলাদেশ নৌবাহিনীহুমায়ূন আহমেদমিয়ানমারবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসুনীল গঙ্গোপাধ্যায়বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মরত জেনারেলদের তালিকাধানঐশ্বর্যা রাইবেল (ফল)মানব শিশ্নের আকারহোমিওপ্যাথিআল্লাহর ৯৯টি নামমিয়োসিসলিঙ্গ উত্থান ত্রুটিরঘুপতি রাঘব রাজা রাম🡆 More