স্যার অ্যালফ্রেড যোসেফ হিচকক (১৩ আগস্ট ১৮৯৯ - ২৯ এপ্রিল ১৯৮০) একজন ইংরেজ চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক ছিলেন। যুক্তরাজ্যের চলচ্চিত্র শিল্পে তিনি নির্বাক ও সবাক দুইধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেই সাফল্য পেয়েছিলেন। তিনি ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে সাফল্য পাওয়ার পর ১৯৩৯ সালে ইংল্যান্ড থেকে হলিউডে চলে আসেন এবং তিনি ১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন।
অ্যালফ্রেড হিচকক | |
---|---|
জন্ম | অ্যালফ্রেড যোসেফ হিচকক ১৩ আগস্ট ১৮৯৯ লেটনস্টোন, ইসেক্স, ইংল্যান্ড |
মৃত্যু | ২৯ এপ্রিল ১৯৮০ বেল এয়ার, লস অ্যাঞ্জেল্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স ৮০)
অন্যান্য নাম | হিচ দ্য মাস্টার অফ সাসপেন্স |
মাতৃশিক্ষায়তন | সেলিসিয়ান কলেজ, সেন্ট ইগ্নেসিয়াস কলেজ |
পেশা | চলচ্চিত্র পরিচালক, চলচ্চিত্র প্রযোজক |
কর্মজীবন | ১৯১৯-৮০ |
দাম্পত্য সঙ্গী | অ্যালমা র্যাভিল্লী (বি. ১৯২৬; মৃ. ১৯৮০) |
সন্তান | প্যাট্রেসিয়া হিচকক |
অ্যালফ্রেড হিচকক পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তার দীর্ঘ পরিচালনা জীবনে নিজের জন্য পরিচালনার সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও জনপ্রিয় একটি ধারা তৈরি করেছেন যা এখন প্রায়শই 'হিচককিয়ান' নামে উল্লেখ করা হয়। উদ্বেগ, ভয়, কল্পনা অথবা সহানুভূতির অভিব্যক্তি বাড়িয়ে দিয়ে তিনি শটকে এমন ভাবে ফ্রেমবন্দি করতেন ও সম্পাদনা করতেন যা সম্পূর্ণ ছবিকে এক অন্যন্য মাত্রায় উপস্থাপন করত। তার চলচ্চিত্রের অধিকাংশের কাহিনীতেই নারী চরিত্র পাওয়া যায় যারা পুলিশের কাছ থেকে সবসময় পালিয়ে থাকে। হিচককের বহু ছবির সমাপ্তি ঘটেছে মিশ্র ঘটনার মধ্য দিয়ে এবং রোমহর্ষক প্লটগুলো চিত্রায়িত হয়েছে ভায়োলেন্স, খুন এবং অপরাধের ঘটনা দিয়ে।
অ্যালফ্রেড হিচকক ইংল্যান্ডের লন্ডনে এক রোমান ক্যাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৯ সালের ১৩ আগস্ট। বাবা-মায়ের দ্বিতীয় পুত্র সন্তান ছিলেন তিনি । তার স্কুল এবং কলেজ ছিল জিসুইট ক্লাসিক স্কুল সেন্ট ইগনাতিয়াস কলেজ ও সালেসিয়ান কলেজ। তার মা ও পিতামহী ছিল আইরিশ বংশভূত।
প্রায় পাঁচ বছর বয়সে, তার বাবা তার খারাপ ব্যবহারের জন্যে নিকটবর্তী থানা পুলিশের কাছে প্রেরণ করেন তাকে পাঁচ মিনিট বন্দী করে রাখার জন্যে। আর অল্প বয়সের এরকম অদ্ভুত পরিস্থিতিই পরবর্তীকালে তার সিনেমাজুড়ে আতঙ্ক, সাসপেন্স এ ব্যাপারগুলোকে বেশি আনতে আগ্রহী করে তুলে।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাবাকে হারানোর পর তিনি লন্ডন কাউন্টি স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড নেভিগেশন এ যান সেন্ট ইগনাতিয়াস ছেড়ে। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি ড্রাফটসম্যান এবং অ্যাডভারটাইজিং ডিজাইনার হিসেবে ক্যাবল কোম্পানি “হেনলি”তে কাজ করেন।
১৯১৯ সালে হেনলি টেলিগ্রাফ প্রতিষ্ঠিত হয় আর তার প্রথম সংকলনে প্রকাশিত হয় তার লেখা “গ্যাস” , যেখানে অল্পবয়সী এক নারীকে তার লেখা আবর্তিত হয় । তার পরবর্তী লেখার নাম ছিল “দ্য ওমেন পার্ট”, এটাও একই সালে প্রকাশিত হয় একই পত্রিকায়। এখানে একজন স্বামী ও তার স্ত্রীর মাঝে সাংঘর্ষিক জীবনের কথা ফুটে উঠে। এছাড়া “সরদিদ”, “এন্ড দেয়ার ওয়াজ নো রেইনবো” এর মত লেখাও তিনি লিখেছেন। তার সর্বশেষ লেখা ছিল “ফেডোরা” , যেখানে তিনি বলতে চেয়েছেন তার ভবিষ্যৎ স্ত্রী কেমন হবে তা নিয়ে।
১৯২০ সালের দিকে এসে অ্যালফ্রেড হিচকক আগ্রহী হয়ে উঠেন ফটোগ্রাফি এবং চলচ্চিত্রের প্রতি। তিনি লন্ডনে ফিল্ম প্রোডাক্টশনে কাজ করা শুরু করেন। “প্যারামাউন্ট পিকাঁচার”র লন্ডন শাখায় তিনি টাইটেল কার্ড ডিজাইনার হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। এরপর তিনি “ইসলিংটন স্টুডিও”তে কাজ করেন। এরপর টাইটেল কার্ড ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে করতে চিত্রপরিচালক তিনি আত্নপ্রকাশ করেন।
১৯২২ সালে “নাম্বার থার্টিন” নামে চলচ্চিত্রের কাজ শুরু করেন। কিন্তু তার জীবনের প্রথম চলচ্চিত্রটি অসম্পূর্ণই থেকে যায়। এরপর একের পর এক তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে যান। আর চলচ্চিত্রে তিনি ফুটিয়ে তুলতে থাকেন তার নান্দনিকতা । ১৯২২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি একাধারে নির্মাণ করে যান বিভিন্ন চলচ্চিত্র । যাতে উঠে এসেছে সাসপেন্স , থ্রিলিং, রোমান্স। ১৯২৫ সালে তিনি নির্মাণ করেন “দ্য প্লেজার গার্ডেন” । এ চলচ্চিত্রটি ছিল ব্রিটিশ-জার্মান প্রোডাক্টশনের এবং চলচ্চিত্রটি দারুণ জনপ্রিয় হয় । এরপর হিচকককে আর তাকিয়ে থাকতে হয়না । এরপর তিনি বিভিন্ন প্রোডাক্টশনের ব্যানারে একের পর এক চলচ্চিত্র নির্মাণ করে যেতে থাকেন । ১৯২৭ সালে মুক্তি পায় তার চলচ্চিত্র “দ্য লডজার” । একই বছরের ডিসেম্বরে হিচকক বিয়ে করেন আলমা রিভিলিকে । “দ্য লেডি ভেনিশেস(১৯৩৮)” ও “জ্যামাইকা ইন(১৯৩৯) “ এর মত চলচ্চিত্র নির্মাণ এর পর তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে আমেরিকাতেও ।
অ্যালফ্রেড হিচকক ১৯৪০ সালে পুরো পরিবার নিয়ে হলিউডে যান। শুরু হয় তার হলিউডে চলচ্চিত্র জীবন । ডেভিডও সেলযনিকের প্রযোজনায় চলচ্চিত্র “রেবেকা”। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৪০ সালে। রেবেকা তখন অস্কারের আসরে বছরের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কার লাভ করে। ১৯৪২ সালে “সাবতিউর” মুক্তির পায়। এরপর হলিউডে মুক্তি পায় একের পর এক ক্ল্যাসিক সব চলচ্চিত্র। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, লাইফবোট (১৯৪৪), স্পেলবাউন্ড (১৯৪৫), নটোরিয়াস (১৯৪৬), রোপ (১৯৪৮), স্ট্রেন্জারস অন এ ট্রেইন (১৯৫১), ডায়াল এম ফর মার্ডার (১৯৫৪), ঐ একই বছর মুক্তি পায় আরেকটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র রিয়ার উইন্ডো।
১৯৫৮ আর ১৯৫৯ সালে মুক্তি পায় দুইটি চলচ্চিত্র যথাক্রমে ভার্টিগো আর নর্থ বাই নর্থওয়েষ্ট। এরপর আসে সেই বিখ্যাত ১৯৬০ সাল। হিচককের ফিল্মোগ্রাফি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এসময় মুক্তি পাওয়া “সাইকো (১৯৬০)” চলচ্চিত্রটির ব্যবসায়িক সাফল্য আর দর্শকপ্রিয়তা ছিলো চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম মাইলফলক। অতি সম্প্রতি হিচককের সাইকোর সিনেমা নির্মাণের ভিতরের কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে ব্রিটিশ চলচ্চিত্র “হিচকক”, যেখানে অ্যান্থনি হপকিন্স অভিনয় করেছেন হিচককের চরিত্রে।
সাইকোর পর ১৯৬৩ সালে মুক্তি পায় আরেক সাড়াজাগানো চলচ্চিত্র দ্যা বার্ডস। “ফ্যামিলি প্লট (১৯৭৬)” ছিলো তার পরিচালিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র। হিচককের ফিল্মোগ্রাফিতে আরেকটি উজ্জ্বলতম অধ্যায় হয়ে আছে ১৯৫৫ সালে প্রচারিত অ্যালফ্রেড হিচকক প্রেজেন্টস। এটি ছিলো একটি টিভি শো, যার প্রতিটি পর্বের ব্যাপ্তিকাল ছিলো ২৫ মিনিট। ১৯৫৫ সাল থেকে শুরু হওয়া এই সিরিজটি চলে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত।
১৯৭৯ সালের ৭ মার্চ অ্যালফ্রেড হিচকক আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউট লাইফ এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পান । অনুষ্ঠানে তিনি একটা কথাই বলেন আর তা হচ্ছে চারজন মানুষের কথা । তারা হচ্ছেন এডিটর , লেখক ,তার মেয়ে প্যাট এবং তার স্ত্রী আলমা রিভিলি । যাদের স্নেহ , ভালোবাসা ও উৎসাহ ছাড়া তিনি এতদূর আসতে পারতেননা ।
“এন্টারটেইনমেন্ট উইকলি” ম্যাগাজিনে বিশ্বের সেরা একশত চলচ্চিত্রের মধ্যে তার চলচ্চিত্র “সাইকো”, “ভারটিগো”, “নর্থ বাই নর্থওয়েস্ট”, “নটোরিয়াস” স্থান পায় । এছাড়া ব্রিটেনের বিখ্যাত এম্পায়ার ম্যাগাজিনের “গ্রেটেস্ট ডিরেক্টরস এভার” তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন হিচকক। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটের হান্ড্রেড মোস্ট হার্ট পাউন্ডিং মুভিজ তালিকায় ৯ টি সিনেমাই হিচককের। যার মধ্যে প্রথমস্থানটি অর্জন করেছে “সাইকো “।
তিনি গোল্ডেন গ্লোব , সিনেমা জাম্পো অ্যাওয়ার্ড , লরিয়াল অ্যাওয়ার্ড , ডিরেক্টরস গিল্ড অফ আমেরিকা অ্যাওয়ার্ড ,আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউট অ্যাওয়ার্ড , একাডেমী অ্যাওয়ার্ড এর সম্মাননা সহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন ।
১৯৭৭ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি পরবর্তী প্রজন্মের লেখকদের সাথে “দ্য শর্ট নাইট” নিয়ে কাজ করেন যা তার মৃত্যুর পরে স্ক্রিনপ্লে হয়।
১৯৮০ সালের ২৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের কার্লিফোনিয়াতে তিনি ৮০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর কয়েক মাস আগে রাণী এলিজাবেথের কাছে তিনি নাইট উপাধি লাভ করেছিলেন।
|
|
|
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article অ্যালফ্রেড হিচকক, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.