বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান

বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান বা ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান বিশেষ ধরনের (বন, পাহাড়, হ্রদ, মরুভূমি, স্মৃতিস্তম্ভ, দালান, প্রাসাদ বা শহর) একটি স্থান যা ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রণীত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় লিপিবদ্ধ হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের প্রতীক
ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের প্রতীক

২০১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশের পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার এবং বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ - এ দুটি ঐতিহাসিক স্থানকে তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়। এছাড়া মহাস্থানগড়, লালমাই-ময়নামতি, লালবাগ কেল্লা, হলুদ বিহার এবং জগদ্দল বিহার - এই পাঁচটি স্থানকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করা হয়েছে (২০১৬ পর্যন্ত)। তদুপরি সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

নির্বাচন প্রক্রিয়া

এ বিষয়ে ইউনেস্কোর একটি প্রকল্প রয়েছে যার নাম আন্তর্জাতিক বিশ্ব ঐতিহ্য প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় ২১টি রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি এই তালিকা প্রণয়নের কাজটি করে থাকে। এই সদস্য দেশগুলোকে প্রকল্পের স্টেট পার্টি বলা হয়। সদস্য দেশগুলো জেনারেল এসেম্বলি অফ স্টেট পার্টিস কর্তৃক একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত হয়। এই কমিটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুরূপ।

এই প্রকল্পের কাজ হল বিশ্বের নানা স্থানে ছড়িয়ে থাকা অনন্যসাধারণ সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক গুরুত্ববিশিষ্ট স্থানসমূহ চিহ্নিত করা এবং তা একটি বৈশ্বিক তালিকায় নাম লিপিবদ্ধ করা। একইসঙ্গে তালিকাভূক্ত স্থানসমূহকে শ্রেণীভুক্ত করা হয়ে থাকে। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ ধরনের মোট ৮৩০টি স্থানের নাম বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪৪টি সাংস্কৃতিক, ১৬২টি প্রাকৃতিক এবং ২৪টি মিশ্র শ্রেণীর। মোট ১৩৮টি রাষ্ট্রে এই স্থানগুলো অবস্থিত।

ইউনেস্কোর নীতি অনুসারে প্রতিটি ঐতিহ্যবাহী স্থানের একটি পরিচয়বাহী নম্বর দেওয়া হয়। বর্তমানে এই নম্বরের সংখ্যা ১২০০ ছাড়িয়ে গেছে যদিও স্থানের সংখ্যা আরও কম। প্রতিটি ঐতিহ্যবাহী স্থানের সমুদয় সম্পত্তি ও জমির মালিক ঐ স্থানটি যে দেশে অবস্থিত সেই দেশ। তবে এই স্থানগুলো রক্ষার দায়িত্ব বর্তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর। তাই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান প্রকল্পের আওতাভুক্ত সকল রাষ্ট্রই প্রতিটি স্থান রক্ষার ব্যাপারে ভূমিকা নিতে পারে। কিছু বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই স্থানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইউনেস্কো গঠিত বিশ্ব ঐতিহ্য ফান্ড থেকে অর্থ সাহায্য দেয়া হয়।

নির্বাচন মানদণ্ড

২০০৪ সাল পর্যন্ত, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য ছয়টি এবং প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের জন্য চারটি মানদণ্ড ছিল। ২০০৫ সালে, দশটি মানদণ্ড মিলিয়ে একটি সেট করা হয়েছে। মনোনয়নপ্রাপ্ত সাইট "অসামান্য সার্বজনীন মান" এর হতে হবে এবং দশটি মানদণ্ডের নুন্যতম একটি শর্ত পূরণ করতে হবে।

সাংস্কৃতিক মানদণ্ড

  1. মানুষের সৃজনশীল প্রতিভার সেরা শিল্পকর্ম
  2. স্থাপত্য বা প্রযুক্তি, স্মারক শিল্পকলা, শহরে-পরিকল্পনা বা আড়াআড়ি নকশা উন্নয়ন, দীর্ঘ ব্যাপ্তিকাল বা বিশ্বের একটি সাংস্কৃতিক যুগের মধ্যে, মানবিক মূল্যবোধের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থা প্রদর্শন করা;
  3. একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, যা বর্তমানে আছে বা হারিয়ে গেছে, যা একটি সভ্যতার অনন্য বা অন্তত ব্যতিক্রমী সাক্ষ্য বহন করে;
  4. একটি ঐতিহ্যগত মানুষের নিষ্পত্তির, ভূমি ব্যবহার, বা সমুদ্রের ব্যবহারের একটি অসামান্য উদাহরণ, যেটি পরিবেশের সঙ্গে একটি সংস্কৃতি বা মানুষের সঙ্গে পরিবেশের যোগাযোগ প্রতিনিধিত্ব করে বিশেষত অপরিবর্তনীয় পরিবর্তন প্রভাব অধীনে ধংসপ্রবন।
  5. সরাসরি বা বাস্তব ঘটনা বা জীবিত ঐতিহ্য, ধারণা, বা বিশ্বাস, যার সাথে শৈল্পিক ও সাহিত্যের অসামান্য সার্বজনীন তাত্পর্য যুক্ত

প্রাকৃতিক মানদণ্ড

  1. মহীয়ান প্রাকৃতিক শক্তি বা ব্যতিক্রমী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নান্দনিক গুরুত্ব রয়েছে
  2. পৃথিবীর ইতিহাসের প্রধান প্রধান যুগের প্রতিনিধিত্বমূলক অসামান্য উদাহরণ,যার মধ্যে জীবনের ইতিহাস, গুরুত্বপূর্ণ চলমান মহাদেশ উন্নয়নের ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া, বা গুরুত্বপূর্ণ ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
  3. চলমান উদ্ভিদ ও প্রাণীর পরিবেশগত ও জৈব বিবর্তন এবং স্থলজ, বিশুদ্ধ জল, উপকূলীয় ও সামুদ্রিক পরিবেশ উন্নয়ন প্রক্রিয়া, এবং উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকার অসামান্য উদাহরণ
  4. বিজ্ঞান বা সংরক্ষণ দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক আবাসস্থল সংরক্ষণ বিশেষত জৈব বৈচিত্র্য ইন-সিটু, জীব বৈচিত্র্য হুমকি প্রজাতির ধারণকারী এলাকা সংরক্ষণ।

পরিসংখ্যান

অঞ্চল এবং তাদের শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী স্থানের তালিকাঃ

জোন / অঞ্চল প্রাকৃতিক সাংস্কৃতিক মিশ্র মোট
আফ্রিকা ৩৭ ৫১ ৯৩
আরব রাজ্য ৭৪ ৮২
ইউরোপ ও আমেরিকা ৬২ ৪৩৪ ১০ ৫০৬
এশিয়া ও প্যাসিফিক ৬৪ ১৭৭ ১২ ২৫৩
ল্যাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় ৩৮ ৯৬ ১৩৯
মোট ২০৯ ৮৩২ ৩৫ ১০৭৩

* অনেক স্থান একাধিক দেশে অবস্থিত।

অঞ্চলভিত্তিক স্থান

বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান 
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানসমূহ

নোট: শুধুমাত্র দশ বা তার বেশি স্থানের অধিকারী দেশ দেখানো হয়েছে,

  • বাদামী: ৪০ বা আরো বেশি ঐতিহ্য স্থানের দেশ
  • হালকা বাদামী: ৩০ - ৩৯ ঐতিহ্য স্থানের দেশ
  • কমলা: ২০-২৯ ঐতিহ্য স্থানের দেশ
  • নীল: ১৫-১৯ ঐতিহ্য স্থানের দেশ
  • সবুজ: ১০-১৪ ঐতিহ্য স্থানের দেশ
বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান নির্বাচন প্রক্রিয়াবিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান নির্বাচন মানদণ্ডবিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান পরিসংখ্যানবিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান অঞ্চলভিত্তিক স্থানবিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান আরও দেখুনবিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান তথ্যসূত্রবিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান বহিঃসংযোগবিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানইউনেস্কোপাহাড়বনমরুভূমিশহরহ্রদ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহসালাহুদ্দিন আইয়ুবি২০২২–২৩ নিউজিল্যান্ড পুরুষ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর (ডিসেম্বর ২০২২)আডলফ হিটলারের ধর্মীয় বিশ্বাসসোনাঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানসানি লিওনধর্মপ্রীতি জিনতামৌলসমূহের ইলেকট্রন বিন্যাস (উপাত্ত পাতা)গরুপৃথিবীর বায়ুমণ্ডলহরমোনআলাউদ্দিন খিলজিবাংলাদেশ আওয়ামী লীগবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্মইসলামের ইতিহাসকলকাতাঅমর্ত্য সেনমিঠুন চক্রবর্তীঅষ্টাঙ্গিক মার্গযৌনসঙ্গমবৌদ্ধধর্মশ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়প্রাকৃতিক পরিবেশকোকা-কোলাদর্শনবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীমুন্সীগঞ্জ জেলাকোষ (জীববিজ্ঞান)জান্নাতওয়াসিকা আয়শা খানবাংলাদেশের জাতীয় পতাকাসমাজবিজ্ঞানচৈতন্যচরিতামৃতশ্রীকৃষ্ণকীর্তনগাণিতিক প্রতীকের তালিকাজগদীশ চন্দ্র বসুআয়াতুল কুরসিরামমোহন রায়পলাশীর যুদ্ধঅস্ট্রেলিয়াদুরুদসিরাজউদ্দৌলাঠাকুরমার ঝুলিকাবাহিন্দুকাঠগোলাপমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকাজী নজরুল ইসলামের রচনাবলিগ্রীষ্মকম্পিউটার কিবোর্ডশেষের কবিতাশিবম দুবেবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাইন্ডিয়ান সুপার লিগদক্ষিণ এশিয়ালিওনেল মেসিবাংলার প্ৰাচীন জনপদসমূহদারাজবাংলাদেশের বিভাগসমূহযক্ষ্মাআমলাতন্ত্রআগ্নেয় শিলাআল্লাহর ৯৯টি নামজব্বারের বলীখেলাসাইবার অপরাধদ্বৈত শাসন ব্যবস্থাএস এম শফিউদ্দিন আহমেদব্রিটিশ রাজের ইতিহাসমোশাররফ করিমজাতিসংঘজলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবইসরায়েলনারী ক্ষমতায়নঅসহযোগ আন্দোলন (ব্রিটিশ ভারত)🡆 More