হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ (১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ - ১৯ জুলাই ২০১২) ছিলেন একজন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় লেখক বলে গণ্য করা হয়। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। অন্য দিকে তিনি আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। তার বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। মিসির আলি এবং হিমু তার সৃষ্ট অন্যতম দুটি জনপ্রিয় চরিত্র।

হুমায়ূন আহমেদ
৫৯তম জন্মদিনে নিজের ঘরে হুমায়ূন আহমেদ
৫৯তম জন্মদিনে নিজের ঘরে হুমায়ূন আহমেদ
স্থানীয় নাম
কাজল
জন্মশামসুর রহমান
(১৯৪৮-১১-১৩)১৩ নভেম্বর ১৯৪৮
নেত্রকোণা, পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু১৯ জুলাই ২০১২(2012-07-19) (বয়স ৬৩)
নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
সমাধিস্থলনুহাশ পল্লী, গাজীপুর
পেশা
জাতীয়তাবাংলাদেশী
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
নিজ শহরকুতুবপুর, কেন্দুয়া, নেত্রকোণা
সময়কাল১৯৭২–২০১২
ধরন
বিষয়রসায়ন, সমসাময়িক জীবন
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিদেখুন সৃষ্টিকর্ম
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবাংলা একাডেমি পুরস্কার
একুশে পদক
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
দাম্পত্যসঙ্গীগুলতেকিন খান (বি. ১৯৭৩; বিচ্ছেদ. ২০০৪)
মেহের আফরোজ শাওন (বি. ২০০৫; মৃ. ২০১২)
সন্তান৬জন শীলা আহমেদ, নুহাশ হুমায়ূন-সহ
আত্মীয়মুহম্মদ জাফর ইকবাল (ভাই)
আহসান হাবীব (ভাই)

স্বাক্ষরহুমায়ূন আহমেদ

ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন এবং নর্থ ডাকোটা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিমার রসায়ন শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীকালে লেখালেখি এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বার্থে অধ্যাপনা ছেড়ে দেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে আটক করে এবং নির্যাতনের পর হত্যার জন্য গুলি চালায়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। হুমায়ূন আহমেদ রচিত প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয়। সত্তর দশকের সময় থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি তিনি ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর। এই কালপর্বে তার গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনারহিত। তার অভূতপূর্ব সৃষ্টি হিমু এবং মিসির আলিশুভ্র চরিত্রগুলি বাংলাদেশের যুবকশ্রেণীকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। বিজ্ঞান কল্পকাহিনীও তার সৃষ্টিকর্মের অন্তর্গত, তার রচিত প্রথম বিজ্ঞান কল্পকাহিনী তোমাদের জন্য ভালোবাসা। তার টেলিভিশন নাটকসমূহ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। সংখ্যায় বেশি না হলেও তার রচিত গানগুলোও জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার রচিত অন্যতম উপন্যাসসমূহ হলো মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া, লীলাবতী, কবি, বাদশাহ নামদার ইত্যাদি। বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস শাখায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি প্রদত্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তার অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।

তার নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো সর্ব সাধারণ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। ১৯৯৪-এ তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক আগুনের পরশমণি মুক্তি লাভ করে। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সহ আটটি পুরস্কার লাভ করে। তার নির্মিত অন্যান্য সমাদৃত চলচ্চিত্রগুলো হলো শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), দুই দুয়ারী (২০০০), শ্যামল ছায়া (২০০৪), ও ঘেটু পুত্র কমলা (২০১২)। শ্যামল ছায়াঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্র দুটি বাংলাদেশ থেকে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে অস্কারের জন্য দাখিল করা হয়েছিল। এছাড়া ঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

জীবনী

জন্ম ও শৈশব

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নেত্রকোণা মহকুমার মোহনগঞ্জে তার মাতামহের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ী নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। তার পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মাতা আয়েশা ফয়েজ। তার পিতা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তৎকালীন পিরোজপুর মহকুমার উপ-বিভাগীয় পুলিশ অফিসার (এসডিপিও) হিসেবে কর্তব্যরত অবস্থায় শহীদ হন। তার বাবা সাহিত্যনুরাগী মানুষ ছিলেন। তিনি পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। বগুড়া থাকার সময় তিনি একটি গ্রন্থও প্রকাশ করেছিলেন, গ্রন্থের নাম দ্বীপ নেভা যার ঘরে। তার মা'র লেখালেখির অভ্যাস না থাকলেও শেষ জীবনে একটি আত্মজীবনী গ্রন্থ রচনা করেছেন যার নাম জীবন যে রকম। পরিবারে সাহিত্যমনস্ক আবহাওয়া ছিল। তার অনুজ মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশের একজন শিক্ষাবিদ এবং কথাসাহিত্যিক; সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা আহসান হাবীব রম্য সাহিত্যিক এবং কার্টুনিস্ট। তার তিন বোন হলেন সুফিয়া হায়দার, মমতাজ শহিদ, ও রোকসানা আহমেদ।

তার রচিত আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় যে ছোটকালে হুমায়ূন আহমেদের নাম রাখা হয়েছিল শামসুর রহমান; ডাকনাম কাজল। তার পিতা (ফয়জুর রহমান) নিজের নামের সাথে মিল রেখে ছেলের নাম রাখেন শামসুর রহমান। পরবর্তীতে আবার তিনি নিজেই ছেলের নাম পরিবর্তন করে ‌হুমায়ূন আহমেদ রাখেন। হুমায়ূন আহমেদের ভাষায়, তার পিতা ছেলে-মেয়েদের নাম পরিবর্তন করতে পছন্দ করতেন। তার ছোট ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবালের নাম আগে ছিল বাবুল এবং ছোটবোন সুফিয়ার নাম ছিল শেফালি। ১৯৬২-৬৪ সালে চট্টগ্রামে থাকাকালে হুমায়ুন আহমেদের নাম ছিল বাচ্চু।

তার দাদা আজিমুদ্দিন আহমেদের বাবার নাম জাঙ্গির মুনশি। জাঙ্গির মুনশির এলাকায় পীরসাহেব হিসেবে খ্যাতি ছিল। তার দাদার বাড়ি মৌলভী বাড়ি নামে পরিচিত ছিল। তার বড় মামা ফজলুল করিমের কাছ থেকে তিনি ছবি আঁকা শেখেন।

শিক্ষাজীবন

হুমায়ূন আহমেদ 
বগুড়া জিলা স্কুল, আহমেদ এই বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন।

তার বাবা চাকরি সূত্রে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেছেন বিধায় হুমায়ূন আহমেদ দেশের বিভিন্ন স্কুলে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছেন। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৫৫ সালে সিলেটের কিশোরী মোহন পাঠশালায় (বর্তমান কিশোরী মোহন (বালক) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)। সেখানে তিনি ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি ১৯৬৩ সালে বগুড়া জিলা স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে তিনি এই বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন এবং ৫৬৪ নং কক্ষে তার ছাত্রজীবন অতিবাহিত করেন (নন্দিত নরকে উপন্যাসটি মুহসীন হলেই লেখা)।

১৯৭০-এর দশক

১৯৭১

১৯৭১ সালে হুমায়ুন আহমেদের বয়স ছিল ২৩ বছর। থাকতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানিদের হাতে গ্রেপ্তার হন। ১৯৭১ সালে ঢাকায় পাকিস্তানি সৈন্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হল থেকে হুমায়ূন আহমেদ ও রফিক কায়সারকে গ্রেপ্তার করে। প্রথমে চড়থাপ্পড়–লাথি, এরপর এক চেয়ারে মাথা এবং আরেক চেয়ারে পা রেখে পিটিয়ে টানা তিন দিন রেখে দিয়েছিল। শেষে দুজনের হাতের দশ আঙুলে মোটা সুই ঢুকিয়ে রেখেছিল।

নন্দিত নরকে ও শঙ্খনীল কারাগার

হুমায়ূন আহমেদ 
স্বগৃহে বৈঠকী আড্ডায় হুমায়ূন আহমেদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জীবনে একটি নাতিদীর্ঘ উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য জীবনের শুরু। এই উপন্যাসটির নাম নন্দিত নরকে। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উপন্যাসটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭২-এ কবি-সাহিত্যিক আহমদ ছফার উদ্যোগে উপন্যাসটি খান ব্রাদার্স কর্তৃক গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রখ্যাত বাংলা ভাষাশাস্ত্র পণ্ডিত আহমদ শরীফ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এ গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দিলে বাংলাদেশের সাহিত্যমোদী মহলে কৌতূহল সৃষ্টি হয়। বইটির প্রচ্ছদ করেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ভাস্কর শামীম শিকদার। উপন্যাসটি লেখক শিবির হতে বর্ষসেরা উপন্যাসের পুরস্কার লাভ করে। শঙ্খনীল কারাগার তার লেখা প্রথম উপন্যাস, কিন্তু প্রকাশিত ২য় গ্রন্থ। তার রচিত তৃতীয় উপন্যাস বিজ্ঞান কল্পকাহিনীমূলক তোমাদের জন্য ভালোবাসাবিজ্ঞান সাময়িকী সাপ্তাহিক পত্রিকায় উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।

অধ্যাপনা ও পিএইচডি

১৯৭৩ সালে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তার বেতন ছিল ৬৫০ টাকা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় তিনি তার প্রথম ছোটগল্প রচনা করেন। সৌরভ নামক গল্পটি বিচিত্রা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে যোগদান করেন। এই বছর বিচিত্রা পত্রিকায় ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয় তার রচিত উপন্যাস অচিনপুর। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন।

বিবাহ

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৭৩ সালে গুলতেকিন খানকে বিয়ে করেন। গুলতেকিন প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর নাতনী। এই দম্পতির তিন মেয়ে এবং এক ছেলে। বড় মেয়ে নোভা আহমেদ, মেজো মেয়ে শীলা আহমেদ এবং ছোট মেয়ে বিপাশা আহমেদ। তার বড় ছেলের নাম নুহাশ হুমায়ূন। বাবার মত নুহাশও পরিচালনায় মনোনিবেশ করেন। অন্য আরেকটি ছেলে সন্তান অকালে মারা যায়। তিনি তার নাম রেখেছিলেন রাশেদ হুমায়ূন।

১৯৮০-এর দশক

প্রথম প্রহর ও এইসব দিনরাত্রি

টেলিভিশন নাট্যকার হিসেবে হুমায়ূন আহমেদকে আবিষ্কার করেন নওয়াজিশ আলী খান । হুমায়ূন আহমেদের "নন্দিত নরকেশঙ্খনীল" কারাগার পড়ার পর তিনি একদিন ধানমন্ডির দখিন হাওয়াতে "রত্নদ্বীপ " নাটকের চিত্রায়নকালে নওয়াজিশ আলী খান হুমায়ূন আহমেদ এর সাথে পরিচিত হন। তিনি আহমেদকে টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখতে আহ্বান জানান। টেলিভিশনের জন্য হুমায়ূন আহমেদের প্রথম কাজ হল টেলিভিশন নাটক "প্রথম প্রহর"। এটি ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়। নাটকটি পরিচালনা করেন নওয়াজিশ আলি খান। মানুষের সততাকে কেন্দ্র করে নির্মিত নাটকটি প্রচারের পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরবর্তীতে খান আহমেদ রচিত অসময়, অযাত্রা, বিবাহ, এসো নিপবনে, নিমফুল নাটক প্রযোজনা করেন। হুমায়ূন আহমেদ এর রচিত প্রথম ধারাবাহিক নাটক এইসব দিনরাত্রি (১৯৮৫)। নাটকে লিউকোমিয়া আক্রান্ত শিশু চরিত্র 'টুনি'কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য হুমায়ূন আহমেদের কাছে এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে দর্শকের প্রচুর চিঠি আসে, কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ তার চিত্রনাট্য এর ধারায় অটল থাকেন।

বহুব্রীহি ও কোথাও কেউ নেই

নওয়াজিশ আলি খানের প্রযোজনায় হুমায়ূন আহমেদ এর রচনায় প্রথম টেলিভিশন ধারাবাহিক নাটক বহুব্রীহি। এটি ১৯৮৮-৮৯ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। এই ধারবাহিকটির প্রতিটি পর্ব ছিল বিষয়ভিত্তিক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ, যা ছিল বাংলাদেশের টিভি নাটকের অভিনব অধ্যায়। এই ধারাবাহিকের মাধ্যমে কিছু সামাজিক বিষয় যেমন - মিথ্যা না বলা ও পুষ্টি সংরক্ষণের জন্য সপ্তাহে এক দিন মাছ না খাওয়া, এবং মুক্তিযুদ্ধ এর চেতনা নতুন ভাব্ব জাগিয়ে তোলা ইত্যাদি । ধারাবাহিকের একটি সংলাপ "তুই রাজাকার" এটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। ওই সময়ে নির্মিত হয় টেলিভিশন ধারাবাহিক নাটক অয়োময় । এই নাটকেই তার কন্যা শীলা আহমেদের অভিনয়ে অভিষেক হয়। শীলা আহমেদের অভিনীত আরেকটি জনপ্রিয় নাটক হচ্ছে "আজ রবিবার''। আহমেদ এই নাটকের মহড়া, চিত্রায়ণ ও সম্পাদনার সাথে যুক্ত ছিলেন, যা তাকে পরবর্তীতে পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে। তার রচিত আরেকটি অন্যতম জনপ্রিয় টেলিভিশন ধারাবাহিক হল কোথাও কেউ নেই (১৯৯০)। এই ধারাবাহিকের বাকের ভাই চরিত্রটি তুমুল দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বাকের ভাইয়ের ফাঁসি রুখতে দর্শক 'বাকের ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে' স্লোগান দিয়ে মিছিল বের করে। এমনকি-হুমায়ূন আহমেদের ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাড়িতে দর্শকেরা আক্রমণ করে। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে তিনি রমনা থানায় জিডিও করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বহু এক পর্বের নাটক নির্মাণ করেছেন। যার মধ্যে খেলা, অচিন বৃক্ষ, খাদক, একি কাণ্ড, একদিন হঠাৎ, অন্য- ভুবন উল্লেখযোগ্য।

মিসির আলি চরিত্র

মিসির আলি চরিত্রটি আহমেদের মাথায় আসে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটার ফার্গো শহরে স্ত্রী গুলতেকিনের সাথে গাড়িতে ভ্রমণকালে। এই ঘটনার অনেকদিন পর তিনি মিসির আলি বিষয়ক প্রথম উপন্যাস দেবী লিখেন। ১৯৮৫ সালে উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে তিনি এই চরিত্রকে কেন্দ্র করে রচনা করেন নিশীথিনী (১৯৮৭), নিষাদ (১৯৮৮), অন্য ভুবন (১৯৮৯) ও বৃহন্নলা (১৯৮৯)। এছাড়াও হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলিকে নিয়ে লেখা প্রথম উপন্যাস দেবী থেকে ২০১৮ সালে নির্মিত হয় দেবী নামের একটি চলচ্চিত্র। যেটির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো মিসির আলির বড় পর্দায় অভিষেক হয়। ছবিটি পরিচালনা করেন অনম বিশ্বাস। এতে মিসির আলির ভূমিকায় অভিনয় করেন চঞ্চল চৌধুরী

১৯৯০-এর দশক

হিমু ও শুভ্র চরিত্র

হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্ট হিমু চরিত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে ময়ূরাক্ষী উপন্যাস দিয়ে। ১৯৯০ সালে মে মাসে অনন্যা প্রকাশনী থেকে বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে চরিত্রটি পাঠকদের, বিশেষ করে তরুণ সাহিত্যপ্রেমীদের মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে একে একে প্রকাশিত হতে থাকে দরজার ওপাশে (১৯৯২), হিমু (১৯৯৩), পারাপার (১৯৯৪), এবং হিমু (১৯৯৫), হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম (১৯৯৬), হিমুর দ্বিতীয় প্রহর (১৯৯৭), হিমুর রূপালী রাত্রি (১৯৯৮), এবং একজন হিমু কয়েকটি ঝিঁ ঝিঁ পোকা (১৯৯৯) ইত্যাদি। এছাড়া এই উপন্যাসগুলো নিয়ে হিমু সমগ্র (১৯৯৪), হিমু সমগ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) (১৯৯৮), এবং হিমু অমনিবাস (২০০০) প্রকাশিত হয়। হুমায়ূন আহমেদ এর লেখায় রাজনৈতিক প্রণোদনা অনুপস্থিত- এরকম একটি কথা বলাও হলেও হিমুর লেখাগুলোর ক্ষেত্রে তা সত্যি নয়।

শুভ্র চরিত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে দারুচিনি দ্বীপ উপন্যাস দিয়ে। যদিও শুভ্র চরিত্রটি প্রথম আসে তার লেখা একটি ছোটগল্পে, যার নাম 'শাদা গাড়ি।' দারুচিনি দ্বীপ বইটি অনুপম প্রকাশনী থেকে ১৯৯১ সালে প্রকাশিত হয়। শুভ্রকে নিয়ে রচিত তার দ্বিতীয় উপন্যাস হল মেঘের ছায়া। এটি ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয়। দারুচিনি দ্বীপ উপন্যাসের গল্পের শেষ থেকে শুরু হয় পরবর্তী উপন্যাস রূপালী দ্বীপ (১৯৯৪)।

শঙ্খনীল কারাগার ও আগুনের পরশমণি

১৯৯২ সালে হুমায়ূন আহমেদ রচিত শঙ্খনীল কারাগার উপন্যাস অবলম্বনে মোস্তাফিজুর রহমান একই নামের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ছবিটি নির্মাণের জন্য পরিচালক বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুদান পান এবং আহমেদ চিত্রনাট্য লেখার সম্মানী হিসেবে ১০,০০০ টাকা পান। মুক্তির পর চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মধ্যে ছবিটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে, কিন্তু শাকুর মজিদ কাহিনী, কাহিনীর সময়কাল, সেট ও পোশাকে গড়মিল খুঁজে পান। তবে শঙ্খনীল কারাগার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ চারটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে এবং আহমেদ শ্রেষ্ঠ কাহিনীকারের পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৪ সালে আগুনের পরশমণি চলচ্চিত্র দিয়ে তার পরিচালনায় অভিষেক হয়। এই চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য তিনি ২৫,০০০ টাকা সরকারি অনুদান পান। তিনি মূলত তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু চলচ্চিত্রকার আনিস সাবেতের অকাল মৃত্যুর খবর শোনার পর চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী হন। চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়া শিক্ষকতার চাকরি থেকে অব্যহতি দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক চমৎকার গল্প ও দুর্দান্ত নির্মাণশৈলী দিয়ে তিনি দর্শকের মন জয় করেন। চলচ্চিত্র পরিচালক কবীর আনোয়ার বলেন, "এতোবড় মাপের ছবি বাংলাদেশে আগে কখনো হয় নি, জানি না সামনে কেউ আসবেন কিনা এরকম ছবি বানানোর মেধা নিয়ে।" চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ আটটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে এবং আহমেদ শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার ও সংলাপ রচয়িতা বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তার উপন্যাস কবি। এতে তিনজন কবির গল্প বিবৃত হয়েছে। ১৯৯৫ সাল থেকে ছোটদের কাগজ পত্রিকায় কালো জাদুকর উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে থাকেন। পার্ল পাবলিকেশন্স ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একুশে বইমেলায় বইটি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে।

শ্রাবণ মেঘের দিন ও গীত রচনা

১৯৯৯ সালে তিনি নির্মাণ করেন লোক-নাট্যধর্মী শ্রাবণ মেঘের দিন। এটি তার নিজের রচিত একই নামের উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ণ। চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে এবং ২০০২ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের অধিভুক্ত সাইট অ্যান্ড সাউন্ড ম্যাগাজিনের করা জরিপে সমালোচকদের বিচারে এটি সেরা দশ বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের তালিকায় নবম স্থান অধিকার করে। এছাড়া ছবিটি সাতটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। হুমায়ূন আহমেদ মূলত গান রচয়িতা বা গীতিকার নন। কেবল নাটক ও চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে তিনি গান রচনা করে থাকেন। এই চলচ্চিত্রের জন্য তার রচিত "একটা ছিল সোনার কন্যা" এবং "আমার ভাঙা ঘরে" গান দুটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রথম গানটিতে কণ্ঠ দিয়ে গায়ক সুবীর নন্দী শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

২০০০-এর দশক

হুমায়ূন আহমেদ 
হুমায়ূন আহমেদ তার নিজের সৃষ্ট হিমু চরিত্র লেখা সংবলিত পেয়ালায় চা পানরত

২০০০ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয় তার রচিত উপন্যাস বৃষ্টিবিলাস। মধ্যবিত্ত পরিবারের টানাপোড়েন নিয়ে লেখা বইটি তার সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের একটি। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই বইটির দ্বাদশ মুদ্রণ বের করতে হয়। ২০০১ সালে দুই দুয়ারী চলচ্চিত্র সকল শ্রেণির দর্শকদের কাছে দারুণ গ্রহণযোগ্যতা পায়। ছবিতে জাদু বাস্তবতার প্রকাশ পায় রিয়াজ অভিনীত রহস্য মানব চরিত্রের আশ্চর্য উপায়ে মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চিত্রায়নের মধ্য দিয়ে। এই চরিত্রে অভিনয় করে রিয়াজ শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ২০০৩-এ নির্মাণ করে জমিদারদের কঠোর মনোভাব, বিলাসিতা আর শিল্পকর্মের প্রতি গভীর অনুরাগ নিয়ে চিত্রিত চলচ্চিত্র চন্দ্রকথা। এই ছবিতে তিনি একই সাথে মানবতা ও নিষ্ঠুরতার প্রতিফলন ঘটান। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন শ্যামল ছায়া চলচ্চিত্রটি। এটি ২০০৬ সালে শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এছাড়াও চলচ্চিত্রটি কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয় তার রচিত যুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস জোছনা ও জননীর গল্প

বিবাহবিচ্ছেদ ও দ্বিতীয় বিবাহ

১৯৯০ দশকের মধ্যভাগ থেকে তার কন্যা শীলার সমবয়সী এবং তার বেশ কিছু নাটক-চলচ্চিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী শাওনের সাথে হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠতা জন্মে। এর ফলে সৃষ্ট পারিবারিক অশান্তির অবসানকল্পে ২০০৩ সালে গুলতেকিনের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয় এবং ঐ বছরই তিনি শাওনকে বিয়ে করেন। এ ঘরে তাদের তিন ছেলে-মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। প্রথম ভূমিষ্ঠ কন্যাটি মারা যায়। এ কন্যার নাম তিনি রাখতে চেয়েছিলেন লীলাবতী। ছেলেদের নাম নিষাদ ও নিনিত হুমায়ূন।

২০০৬ সালে হুমায়ূন আহমেদের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র, সেগুলো হল মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত দূরত্ব, বেলাল আহমেদ পরিচালিত নন্দিত নরকে এবং আবু সাইয়ীদ পরিচালিত নিরন্তর। ২০০৬ সালে অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয় তার ইতিহাস-আশ্রিত উপন্যাস মধ্যাহ্ন-এর প্রথম খণ্ড এবং পরের বছর এর দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়। ২০০৭ সালে তার উপন্যাস অবলম্বনে শাহ আলম কিরণ নির্মাণ করেন সাজঘর এবং তৌকীর আহমেদ নির্মাণ করেন দারুচিনি দ্বীপ। চলচ্চিত্র দুটি ৩২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে একাধিক বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে। এ সময়ে তিনি হাস্যরসাত্মক নয় নম্বর বিপদ সংকেত (২০০৭) এবং ত্রিভুজ প্রেমের গল্প নিয়ে আমার আছে জল (২০০৮) নির্মাণ করেন।

২০১০-এর দশক

হুমায়ূন আহমেদ 
আহমেদ বইয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন (২০১০)।

ঘেটুপুত্র কমলা ও দেয়াল

ঘেটুপুত্র কমলা (২০১২) তার পরিচালিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি ৮৫তম একাডেমি পুরস্কারে সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগের জন্য বাংলাদেশ থেকে নিবেদন করা হয়েছিল। ২০১২ সালের মে মাসে দৈনিক প্রথম আলোর সাহিত্য সাময়িক দেয়াল উপন্যাসের দুটি অধ্যায় প্রকাশিত হয়। সেখানে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনার বিবরণে তথ্যগত ভুল থাকায় আদালত তা সংশোধনের নির্দেশ দেয় এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের ভাষ্যমতে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে খন্দকার মোশতাক আহমেদ জড়িত ছিলেন বলে মামলার সাক্ষ্য প্রমাণে উঠে এসেছে। কিন্তু মোশতাক আহমেদ কিছুই জানতেন না, এমনটাই তুলে ধরা হয়েছে ঐ উপন্যাসে। তবে এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, "দেয়াল কোনো রাজনৈতিক উপন্যাস নয়, এ এক ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস৷ এতে ইতিহাসের খলনায়কদেরকে খলনায়ক হিসেবেই দেখানো হয়েছে"। পরবর্তীকালে হুমায়ূন আহমেদ কর্তৃক সংশোধিত বইটি অন্যপ্রকাশ ২০১৩ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশ করে।

ক্যান্সার ও মৃত্যু

হুমায়ূন আহমেদ 
নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের কবর।

জীবনের শেষভাগে ঢাকা শহরের অভিজাত আবাসিক এলাকা ধানমন্ডির ৩/এ রোডে নির্মিত দখিন হাওয়া ভবনের একটি ফ্লাটে তিনি বসবাস করতেন। খুব ভোর বেলা ওঠা অভ্যাস ছিল তার, ভোর থেকে সকাল ১০-১১টা অবধি লিখতেন তিনি। মাটিতে বসে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। কখনো অবসর পেলে ছবি আঁকতেন।

২০১১-এর সেপ্টেম্বের মাসে সিঙ্গাপুরে ডাক্তারী চিকিৎসার সময় তার দেহে মলাশয়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। তিনি নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান-কেটরিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তবে টিউমার বাইরে ছড়িয়ে না-পড়ায় সহজে তার চিকিৎসা প্রাথমিকভাবে সম্ভব হলেও অল্প সময়ের মাঝেই তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ১২ দফায় তাকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর তার কিছুটা শারীরিক উন্নতি হলেও, শেষ মুহূর্তে শরীরে অজ্ঞাত ভাইরাস আক্রমণ করায় তার অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যায়। মলাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ নয় মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন। কৃত্রিমভাবে লাইভ সাপোর্টে রাখার পর ১৯শে জুলাই ২০১২ তারিখে তিনি নিউ ইয়র্কের বেলেভ্যু হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে নুহাশ পল্লীতে দাফন করা হয়।

নুহাশ পল্লী

হুমায়ূন আহমেদ 
নুহাশ পল্লীতে প্রকাশকের সঙ্গে আলাপরত হুমায়ূন, ২০১০।
হুমায়ূন আহমেদ 
হুমায়ূন আহমেদের তৈরি নুহাশ পল্লীতে "বৃষ্টি বিলাস", যেখানে হুমায়ূন আহমেদ বসে কাব্যিক মেজাজে বৃষ্টি উপভোগ করতেন

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৮৭ সালে ঢাকার অদূরে গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পিরুজালী গ্রামে ২২ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত বাগান বাড়ি নুহাশ পল্লী গড়ে তুলেন। বাড়িটির নামকরণ করা হয় স্ত্রী গুলতেকিন ও তার প্রথম পুত্র নুহাশ হুমায়ূনের নামে। বর্তমানে এর আয়তন আরও বৃদ্ধি করে ৪০ বিঘা করা হয়েছে। অভিনেতা এজাজুল ইসলাম তাকে এই জমি কেনা ও ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করেন। বাড়িটির সর্ব উত্তরে একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরটির নাম 'লীলাবতী'। এর নামকরণ করা হয় শাওন ও তার অকালপ্রয়াত কন্যার নামে, যে পৃথিবীর আলো দেখার পূর্বে মৃত্যুবরণ করে। পুকুরে একটি কাঠের পুল রয়েছে। পুকুরের মাঝখানে একটি কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে তাবু পোঁতা আছে।

রচনাশৈলী

হুমায়ূন আহমেদ 
সমুদ্র বিলাস যেখানে হুমায়ুন আহমেদ অবসরে লেখালেখি করতেন

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দুই শতাধিক গল্পগ্রন্থ ও উপন্যাস রচনা করেছেন। তার রচনার প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হলো 'গল্প-সমৃদ্ধি'। এছাড়া তিনি অনায়াসে ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে অতিবাস্তব ঘটনাবলীর অবতারণা করেন যাকে একরূপ যাদু বাস্তবতা হিসেবে গণ্য করা যায়। তার গল্প ও উপন্যাস সংলাপপ্রধান। তার বর্ণনা পরিমিত এবং সামান্য পরিসরে কয়েকটি মাত্র বাক্যের মাধ্যমে চরিত্র চিত্রণের অদৃষ্টপূর্ব প্রতিভা তার রয়েছে। যদিও সমাজসচেতনতার অভাব নেই তবু লক্ষ্যণীয় যে তার রচনায় রাজনৈতিক প্রণোদনা অনুপস্থিত। তিনি কোন চরিত্রে তার নিজস্ব মতামত চাপিয়ে দেননি। সকল রচনাতেই একটি প্রগাঢ় শুভবোধ ক্রিয়াশীল থাকে এবং চরিত্রের বয়ানে তিনি পক্ষপাতদুষ্ট নয়। তিনি চরিত্রের পক্ষপাত ও প্রবঞ্চনা থেকে দূরে থাকেন, যার ফলে 'নেতিবাচক' চরিত্রও তার লেখনীতে লাভ করে দরদী রূপায়ণ। এ বিষয়ে তিনি মার্কিন লেখক জন স্টাইনবেক দ্বারা প্রভাবিত। এছাড়া অনেক রচনার মধ্যে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধির প্রচ্ছাপ লক্ষ্য করা যায়।

তার প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে-এ তিনি ক্ষমতা, অর্থবিত্ত ও সামাজিক স্তরের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিপাত করেন। তিনি নিজে গল্পকথক হয়ে আমাদের মধ্যে বাস করা অপশক্তিকে উন্মোচন করেছেন। তার দ্বিতীয় উপন্যাস শঙ্খনীল কারাগার-এ তিনি শ্যামবর্ণের যুবতী মেয়ের জন্য পাত্র খোঁজা, যুবক ছেলের চাকরি অন্বেষণ, প্রতিনিয়ত সমাজের শ্লেষোক্তি শোনা ও অসংখ্য বিধি-নিষেধ-সহ নানা পারিবারিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেন। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাস মধ্যাহ্ন তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে পরিগণিত। এছাড়া জোছনা ও জননীর গল্প আরেকটি বড় মাপের রচনা, যা ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অবলম্বন করে রচিত। তবে সাধারণত তিনি সমসাময়িক ঘটনাবলী নিয়ে লিখতেন।

দর্শক ও সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া

নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস হুমায়ূন আহমেদের সামগ্রিক প্রভাব মূল্যায়ন করে বলেন, "হুমায়ূনের কাজসমূহ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকাজী নজরুল ইসলামের পরে সবচেয়ে গভীর ভাবসম্পন্ন ও সবচেয়ে ফলপ্রসূ।" একই রকমভাবে, বাংলাদেশী কবি আল মাহমুদ তার সম্পর্কে বলেন, "ঠাকুরনজরুলের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যের একটি স্বর্ণযুগ শেষ হয়েছে এবং আরেকটি শুরু হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের মধ্য দিয়ে।" বাংলাদেশী লেখক ইমদাদুল হক মিলন তাকে "বাংলা সাহিত্যের সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকারী" বলে উল্লেখ করেন, যিনি তার সৃষ্ট চরিত্রের সকল কাজ ও চিন্তা-ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করেন।" বাঙালি লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাকে "বাংলা সাহিত্যে একটি শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক" উল্লেখ করেন, এবং তার মতে "আহমেদ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধায়ের চেয়েও জনপ্রিয় ছিলেন।" বাঙালি লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় তাকে "উপমহাদেশের অন্যতম সেরা লেখক" বলে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশী লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, "তিনি বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন।" পাকিস্তানের প্রাচীনতম ও সর্বাধিক পঠিত ইংরেজি সংবাদপত্র ডন তাকে "বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কিংবদন্তি" বলে উল্লেখ করে।

প্রভাব ও উত্তরাধিকার

হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার

এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিনের যৌথ উদ্যোগে "হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার" প্রবর্তন করা হয়েছে। প্রতি বছর আহমেদের জন্মদিনে ১২ নভেম্বর দুজন সাহিত্যিককে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ২০১৭ সালে তার জন্মদিনে গুগল তাদের হোমপেজে হুমায়ূন আহমেদের গুগল ডুডল প্রদর্শন করে উদ্‌যাপন করে। গুগল ডুডলটিতে দেখা যায় চায়ের টেবিলে বই হাতে বসে আছেন হ‌ুমায়ূন আহমেদ। তার তৈরি জনপ্রিয় চরিত্র হিমু হলুদ পাঞ্জাবি পরে খালি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে। আর চারপাশে প্রকৃতির আবহ দিয়ে সাজানো হয়েছে ইংরেজি গুগল লেখাটি।

অনুপ্রেরণা

হুমায়ূন আহমেদের তুমুল জনপ্রিয় টেলিভিশন ধারাবাহিক কোথাও কেউ নেই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাতা রেদওয়ান রনি নির্মাণ করেন সাত পর্বের একটি মিনি-ধারাবাহিক বাকের ভাই, হিমু। এর গল্প শুরু হয় কোথাও কেউ নেই-এর পর থেকে, যেখানে হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্র হিমু মুনাকে কথা দেয় সে বাকের ভাইকে খুঁজে বের করবে। ঘটনাপ্রবাহে একদিন সত্যি সত্যি বাকের ভাইয়ের সাথে দেখা হয় হিমুর। ধারাবাহিকটি ২০১০ সালের ঈদুল ফিতরে দেশ টিভিতে প্রচারিত হয়।

সৃষ্টিকর্ম

লেখক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ অসংখ্য গান রচনা করেছেন। গানগুলো তিনি তাঁর নাটক ও চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেন। গানগুলোর সুরকার ও শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন মকসুদ জামিল মিন্টু, সেলিম চৌধুরী, সুবীর নন্দী, এস আই টুটুল, মেহের আফরোজ শাওন, সাবিনা ইয়াসমিন, খান আসিফুর রহমান আগুন, হাবিব ওয়াহিদ, ফজলুর রহমান বাবু প্রমুখ। তাঁর সর্বাধিক পরিচিত গান দুটো হলো একটা ছিল সোনার কন্যাযদি মন কাঁদে। এছাড়া রয়েছে চলো বৃষ্টিতে ভিজি, আমার আছে জল, নদীর নাম ময়ূরাক্ষী, চলো না যাই, আজ জরির বিয়ে, ও আমার রসিক বন্ধু রে, ও আমার উড়াল পঙ্খী রে, আমার ভাঙ্গা ঘরের ভাঙ্গা চালা, মাথায় পরেছি সাদা ক্যাপ, কন্যা নাচিল রে, ঠিকানা আমার নোটবুকে আছে, বাজে বংশী, বরষার প্রথম দিনে, আমি আজ ভেজাব চোখ সমুদ্র জলে, চান্নি পসরে কে আমায় স্মরণ করে, চান্নি পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয় ইত্যাদি।

পুরস্কার ও সম্মাননা

হুমায়ুন আহমেদ তার অসংখ্য বহুমাত্রিক সৃষ্টির জন্য নানা পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলা কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৩ সালে লেখক শিবির পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা উপন্যাসে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ শিশু একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি মাইকেল মধুসুদন পদক লাভ করেন। ১৯৯০ সালে তিনি হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক লাভ করেন।

১৯৯২ সালের শঙ্খনীল কারাগার চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার বিভাগে তার প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৯৪ সালে দেশের দ্বিতীয় বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। একই বছরের আগুনের পরশমণি চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার ও শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা বিভাগে তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার ও শ্রেষ্ঠ গীতিকার বিভাগে বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া চলচ্চিত্রটি সাইট অ্যান্ড সাউন্ড ম্যাগাজিনের জরিপে সমালোচকদের বিচারে সেরা দশ বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের তালিকায় নবম স্থান লাভ করে।

তার উপন্যাস অবলম্বনে তৌকির আহমেদ নির্মিত দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। আমার আছে জল (২০০৮) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ১১তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে সমালোচক পুরস্কার শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক বিভাগে মনোনয়ন লাভ করেন। তার উপন্যাস অবলম্বনে মোরশেদুল ইসলাম নির্মিত প্রিয়তমেষু (২০০৯) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার বিভাগে বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন। ঘেটুপুত্র কমলা (২০১২) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক এবং শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ১৫তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে সমালোচক পুরস্কার শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালকের পুরস্কার লাভ করেন। তার উপন্যাস অবলম্বনে মোরশেদুল ইসলাম নির্মিত অনিল বাগচীর একদিন (২০১৫) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ৪০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে মরণোত্তর শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতার পুরস্কার লাভ করেন।

চিত্রশালা

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

বহিঃসংযোগ

Tags:

হুমায়ূন আহমেদ জীবনীহুমায়ূন আহমেদ রচনাশৈলীহুমায়ূন আহমেদ দর্শক ও সমালোচকদের প্রতিক্রিয়াহুমায়ূন আহমেদ প্রভাব ও উত্তরাধিকারহুমায়ূন আহমেদ সৃষ্টিকর্মহুমায়ূন আহমেদ পুরস্কার ও সম্মাননাহুমায়ূন আহমেদ চিত্রশালাহুমায়ূন আহমেদ আরও দেখুনহুমায়ূন আহমেদ তথ্যসূত্রহুমায়ূন আহমেদ গ্রন্থপঞ্জিহুমায়ূন আহমেদ বহিঃসংযোগহুমায়ূন আহমেদ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

মিশরদক্ষিণ কোরিয়াবিশ্ব বই দিবসআল্লাহর ৯৯টি নামবাংলাদেশের প্রশাসনিক অঞ্চলবীর্যসালমান শাহউত্তম কুমারআর্কিমিডিসের নীতিচাঁদপুর জেলাবাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শকঅন্নদামঙ্গলপলাশীর যুদ্ধচৈতন্য মহাপ্রভুকাবাসাইপ্রাসমধ্যপ্রাচ্যধরিত্রী দিবসইসলামে আদমহারুন-অর-রশিদ (পুলিশ কর্মকর্তা)জাতীয় সংসদের স্পিকারদের তালিকাকাজলরেখাজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ঋতুফরিদপুর জেলাযৌন প্রবেশক্রিয়াবাংলাদেশবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরপরমাণুআইজাক নিউটনআবদুল হামিদ খান ভাসানীনোরা ফাতেহিবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহথ্যালাসেমিয়াফিলিস্তিনের ইতিহাসচণ্ডীমঙ্গলবাংলাদেশের জাতিগোষ্ঠীদ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনতিতুমীরমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রবাংলাদেশের নদীবন্দরের তালিকারিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবপ্রাকৃতিক ভূগোলপূর্ণিমাপাগলা মসজিদম্যাকবেথবিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের তালিকাইউরোপীয় দেশগুলো ও অধীনস্থ ভূভাগের তালিকাগঙ্গা নদীসার্বজনীন পেনশনযোনিসাতক্ষীরা জেলাসানরাইজার্স হায়দ্রাবাদকাতারবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলবিসিএস পরীক্ষাময়মনসিংহ বিভাগবায়ুদূষণসন্দীপ শর্মাবাংলা স্বরবর্ণযৌনসঙ্গমস্বামী বিবেকানন্দআশারায়ে মুবাশশারামুহাম্মাদের স্ত্রীগণমুহাম্মদ ইকবালসিলেটচেঙ্গিজ খানবৃষ্টিআয়করযৌনপল্লিমলাশয়ের ক্যান্সারম্যালেরিয়াপুরুষে পুরুষে যৌনতাথানকুনিভাষা🡆 More