হার্নিয়া

হার্নিয়া আমাদের দেশে সচরাচর দেখা যায় এমন একটি পরিচিত রোগ যাতে নাড়িভূড়ির একটি অংশ উদরগ্রাত্র ভেদ করে অণ্ডথলিতে নেমে যায়। মানুষের পেটের ভিতরে খাদ্যনালী মুখ থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত, এবং এটি বিশ থেকে ত্রিশ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়৷ হার্নিয়ার ক্ষেত্রে পেটের কিছু দুর্বল অংশ দিয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রের অংশ বিশেষ অণ্ডথলিতে চলে আসে৷ তখন কুচকি এবং অণ্ডথলি অস্বাভাবিক ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়৷

হার্নিয়া
হার্নিয়া
একটি পরোক্ষ ইনগুইনাল হার্নিয়া এর চিত্র (পাশ থেকে দেখুন)
বিশেষত্বসাধারণ শল্যচিকিৎসা
লক্ষণফোলা জায়গায়, কাশির সাথে বিশেষ করে ব্যথা
জটিলতা অন্ত্র শ্বাসরোধ
রোগের সূত্রপাত< ১ বছর এবং > ৫০ বছর বয়সী (কুঁচকানো হার্নিয়া)
ঝুঁকির কারণধূমপান, দীর্ঘস্থায়ী প্রতিবন্ধক পালমোনারি রোগ, অতিস্থূলতা, গর্ভধারণ, হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন, কোলাজেন ভাস্কুলার রোগ, যোজক টিস্যুর রোগ
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতিউপসর্গের উপর ভিত্তি করে, মেডিকেল ইমেজিং
চিকিৎসাপর্যবেক্ষণ, অস্ত্রোপচার
সংঘটনের হার১৮.৫ মিলিয়ন (2015)
মৃতের সংখ্যা৫৯,৮০০ (২০১৫)

কারণ

আমাদের পেটের কিছু অংশ আছে যেগুলো আশেপাশের অংশ থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল থাকে৷ অনেকের জন্মগতভাবে এ অংশগুলো দুর্বল থাকে৷ পেটের ভিতরের চাপ যদি বেশি হয়, যেমন-অনেক দিনের পুরানো হাঁচি, কাশি বা কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, তাদের বেলাতেও ক্ষুদ্রান্ত্র এই দুর্বল অংশগুলো দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে৷ উদর এবং উরুর সংযোগ স্থলে হার্নিয়া হতে পারে৷ এটা সাধারণত পুরুষদের হয়৷ মহিলাদের বেলাতে উরুর ভেতরের দিকে স্ফীত দেখা যায়৷ নাভির চারপাশে বা কোনো একপাশে ফুলে যায়৷ এটাকে নাভির হার্নিয়া বলা হয়৷ পূর্বে অস্ত্রোপাচার করা হয়েছে এমন জায়গাতেও হার্নিয়া হতে পারে৷ এটাকে ইনসিশনাল হার্নিয়া বলা হয়৷ ভারী জিনিস তুলতে গিয়ে হতে পারে৷ পুরুষদের প্রস্টেটের অসুখ, মুত্রাশয়ের অসুখের কারণে হতে পারে৷ চাপ দিয়ে প্রস্রাব করলে হতে পারে৷ প্রসবের পর ভারি কাজ বা অনবরত সিঁড়ি ভাঙলে হার্নিয়া হতে পারে৷

হার্নিয়ার লক্ষণ

  • কুচকি বা অণ্ডথলি ফুলে যায়৷
  • নাভির একপাশে বা চারপাশে ফুলে যায়৷
  • উরুর গোড়ার ভেতরের দিকে ফুলে যায়৷
  • আগে অপারেশন করা হয়েছে এমন কাটা জায়গা ফুলে যায়৷

রোগ নির্ণয়

সাধারণত শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে ইনগুইনাল হার্নিয়া নির্ণয় করা হয়। চিকিৎসক কুঁচকির এলাকার ফোলা পরীক্ষা করে অনেক সময় হার্নিয়া নির্ণয় করেন। যেহেতু কাশি দিলে হার্নিয়া অধিক স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়, তাই কাশি দেয়াটাও চিকিৎসকের জন্য পরীক্ষার একটা অংশ হতে পারে।

জটিলতা

অপারেশনের মাধ্যমে হার্নিয়া ঠিক না করলে ক্রমে হার্নিয়া বড় হতে থাকে। বড় হার্নিয়া চারপাশের টিস্যুর ওপর চাপ প্রয়োগ করে-পুরুষের ক্ষেত্রে হার্নিয়ার সবচেয়ে মারাত্মক জটিলতা হলো যখন অন্ত্রের অংশ পেটের দেয়ালের দুর্বল জায়গায় আটকে যায়। এ সময়ে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, বমি বমি ভাব ও বমি হয় এবং পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়, কিংবা বায়ু চলাচল করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে অন্ত্রের আটকে পড়া অংশে রক্ত চলাচল কমে যায়-এ অবস্থাকে বলে স্ট্রাংগুলেশন-যার কারণে আক্রান্ত অন্ত্রের টিস্যুর মৃত্যু ঘটতে পারে। স্ট্রাংগুলেটেড হার্নিয়া একটি জীবন-মরণ সমস্যা;- এ ক্ষেত্রে জরুরি অপারেশনের প্রয়োজন হয়।

চিকিৎসা

যদি হার্নিয়া ছোট থাকে এবং কোনো সমস্যা সৃষ্টি না করে তাহলে চিকিৎসকরা অনেক সময পর্যবেক্ষণ করার কথা ও অপেক্ষা করা কথা বলেন। কিন্তু হার্নিয়া যদি বড় হতে থাকে এবং ব্যথা হয় তাহলে অস্বস্তি দূর করতে ও মারাত্মক জটিলতা প্রতিরোধ করতে চিকিৎসকরা সাধারণত অপারেশন করে থাকেন।

হার্নিয়ার দু’ধরনের সাধারণ অপারেশন করা হয়ঃ যথা হার্নিয়োর‍্যাফি ও হার্নিয়োপ্লার্স্টি।

হার্নিয়োর‍্যাফি

এ পদ্ধতিতে সার্জন কুঁচকিতে একটা ইনসিশন দিয়ে বেরিয়ে আসা অন্ত্রকে ঠেলে পেটের মধ্যে ফেরত পাঠান। তারপর দুর্বল বা ছেঁড়া মাংসপেশি সেলাই করে ঠিক করে দেন। অপারেশনের পর স্বাভাবিক কাজ কর্মে ফিরে যেতে চার থেকে ছ’সপ্তাহ সময় লাগে।

হার্নিয়োপ্লার্স্টি

এ পদ্ধতিতে সার্জন কুঁচকি এলাকায় এক টুকরো সিনথেটিক মেশ লাগিয়ে দেন। সেলাই, ক্লিপ অথবা স্টাপল করে এটাকে সাধারণত দীর্ঘজীবী রাখা হয়। হার্নিয়ার ওপরে একটা একক লম্বা ইনসিশন দিয়েও হার্নিয়াপ্লাস্টি করা যেতে পারে। বর্তমানে ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমে, ছোট ছোট কয়েকটি ইনসিশন দিয়ে হার্নিয়োপ্লাস্টি করা হয়। তবে হার্নিয়া বড় হলে ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমে করা যায় না।

প্রতিরোধ

জন্মগত ত্রুটির কারণে হার্নিয়া হলে তা প্রতিরোধ করা যায় না, চিকিৎসা করতে হয়। কিছু পরামর্শগুলো মেনে চললে পেটের মাংসপেশি ও টিস্যু বা কালার টান কমাতে পারা যায়:

  • স্বাস্থ্যকর ওজন রাখাঃ যদি স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে বেশি থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ব্যায়াম ও খাদ্যগ্রহণ করা।
  • উচ্চ আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য ও টানটান অবস্থা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • ভারী বস্তু উত্তোলনে সতর্ক হতে হবে। পারত পক্ষে ভারী বস্তু উত্তোলন করা যাবে না, যদি একান্তই উত্তোলন করতে হয় তাহলে সর্বদা হাঁটু ভাঁজ করে শুরু করতে হবে, কখনো কোমর বাঁকানো যাবে না।
  • ধূমপান বন্ধ করতে হবে। ধূমপান মারাত্মক রোগ যেমন ক্যান্সার, এমফাইসেমা ও হ্নদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এ ছাড়া ধূমপান সচরাচর দীর্ঘস্থায়ী কাশির সৃষ্টি করে, যা ইনগুইনাল হার্নিয়া সৃষ্টিতে উৎসাহ জোগায়।

অবশ্য করণীয়

ঔষধ সেবন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিবন্ধিত চিকিৎকের পরামর্শ নিন।

অতিরিক্ত হাটা ও দৌড়া দৌড়ি এমনকি প্রত্যাহিক ব্যায়াম থেকে বিরত থাকুন।

রোগের ব্যাপারে সবার সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

হার্নিয়া কারণহার্নিয়া র লক্ষণহার্নিয়া রোগ নির্ণয়হার্নিয়া জটিলতাহার্নিয়া চিকিৎসা[৭]হার্নিয়া প্রতিরোধহার্নিয়া অবশ্য করণীয়হার্নিয়া তথ্যসূত্রহার্নিয়া বহিঃসংযোগহার্নিয়াক্ষুদ্রান্ত্র

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

পদ্মা নদীবিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের তালিকাবিতর নামাজসাঁওতালপথের পাঁচালী (চলচ্চিত্র)মুহাম্মাদের স্ত্রীগণরজঃস্রাবচোখমৌলানা আবুল কালাম আজাদ মেট্রো স্টেশনছোলাসূরা লাহাবমসজিদে কুবাইসরায়েল–হামাস যুদ্ধআকবররবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্মবাংলাদেশ সেনাবাহিনীগর্ভধারণশব্দ (ব্যাকরণ)বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরখালিদ বিন ওয়ালিদকোপা আমেরিকারাধাইতিকাফবিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সআবুল আ'লা মওদুদীমাহরামভাইরাস১ (সংখ্যা)হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলবাজি (২০২১-এর চলচ্চিত্র)জনি সিন্সদোলপূর্ণিমাসেজদার আয়াতজাতীয় সংসদআন্দ্রে রাসেলযোহরের নামাজএশিয়ার সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাইহুদিনিউটনের গতিসূত্রসমূহজাতীয় স্মৃতিসৌধহরমোনইক্বামাহ্‌চীনগোপাল ভাঁড়মুম্বই ইন্ডিয়ান্সসমাজআইজাক নিউটনলোকনাথ ব্রহ্মচারীছিয়াত্তরের মন্বন্তরআয়তন অনুযায়ী ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহের তালিকাপর্নোগ্রাফিআংকর বাটতড়িৎকোষঈদুল ফিতরপ্রথম উসমানঢাকা বিভাগসানি লিওনদৈনিক যুগান্তরকারাগারের রোজনামচাফাতিমাচাঁদইসলামের নবি ও রাসুলপেশাডিএনএভিয়েতনাম যুদ্ধবাংলার শক্তিপীঠের তালিকাজনসংখ্যা অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকামুকেশ আম্বানিযুক্তফ্রন্টদুরুদস্বামী বিবেকানন্দযৌনাসনআবহাওয়াহেপাটাইটিস বিক্ষুদিরাম বসুঅপারেশন জ্যাকপট০ (সংখ্যা)🡆 More