সূরা নাস: কুরআন শরীফের ১১৪তম সূরা

সূরা আন-নাস (আরবি: سورة الناس; মানবজাতি) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১১৪ তম এবং সর্বশেষ সূরা; এর আয়াত, অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৬ এবং রূকু, তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ১। সূরা আন-নাস মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে; যদিও কোন কোন বর্ণনায় একে মক্কায় অবতীর্ণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এর ছয় আয়াতে শয়তানের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষার জন্য সংক্ষেপে আল্লাহর নিকট প্রার্থণা করা হয়। এই সূরাটি এবং এর পূর্ববর্তী সূরা আল-ফালাককে একত্রে মু'আওবিযাতাইন (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দু'টি সূরা) নামে উল্লেখ করা হয়। অসুস্থ অবস্থায় বা ঘুমের আগে এই সূরাটি পড়া একটি ঐতিহ্যগত সুন্নত।

আন-নাস
الناس
সূরা নাস: নামকরণ, শানে নুযূল, আয়াতসমূহ ও অর্থ
শ্রেণীমাদানী সূরা
নামের অর্থমানবজাতি
অন্য নামমানুষ
পরিসংখ্যান
সূরার ক্রম১১৪
আয়াতের সংখ্যা
পারার ক্রম৩০ পারা
রুকুর সংখ্যা
সিজদাহ্‌র সংখ্যানেই
শব্দের সংখ্যা২০
অক্ষরের সংখ্যা৮০
← পূর্ববর্তী সূরাসূরা ফালাক
আরবি পাঠ্য · বাংলা অনুবাদ

নামকরণ

সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস আলাদা আলাদা সূরা হলেও এদের পারস্পরিক সম্পর্ক এত গভীর ও উভয়ের বিষয়বস্তু পরস্পরের সাথে এত বেশি নিকট সম্পর্কিত যে এদেরকে একত্রে “মু’আওবিযাতাইন” (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দু’টি সূরা) নামে ডাকা হয়; আর এই সূরা দু’টি নাযিলও হয়েছে একই সাথে একই ঘটনার পরি-প্রেক্ষিতে।

শানে নুযূল

সূরা ফালাক ও পরবর্তী সূরা আন নাস একই সাথে একই ঘটনায় অবতীর্ণ হয়েছে। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে, জনৈক ইহু্দী রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)- এর উপর জাদু করেছিল। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জিবরাঈল আগমন করে সংবাদ দিলেন যে, জনৈক ইহু্দী জাদু করেছে এবং যে জিনিসে জাদু করা হয়েছে, তা অমুক কুপের মধ্যে আছে। রসূলুল্লাহ্‌ লোক পাঠিয়ে সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করে আনলেন। তাতে কয়েকটি গিরু ছিল। তিনি এই সূরা দুটি পড়ে ফুক দেওয়ায় গিরুগুলো সাথে সাথে খুলে যায় এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে শয্যা ত্যাগ করেন।

হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ্‌ - এর উপর জাদু করলে তার প্রভাবে তিনি মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়তেন এবং যে কাজটি করেননি, তাও করেছেন বলে অনুভব করতেন। একদিন তিনি হযরত আয়েশা -কে বললেনঃ আমার রোগটা কি, আল্লাহ্ তা'আলা তা আমাকে বলে দিয়েছেন। (স্বপ্নে) দুব্যক্তি আমার কাছে আসল এবং একজন শিয়রের কাছে ও অন্যজন পায়ের কাছে বসে গেল। শিয়রের কাছে উপবিষ্ট ব্যক্তি অন্য জনকে বলল, তাঁর অসুখটা কি? অন্যজন বললঃ ইনি জাদুগ্রস্ত। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ কে জাদু করেছে? উত্তর হল, ইহুদীদের মিত্র মুনাফিক লবীদ ইবনে আ'সাম জাদু করেছে। আবার প্রশ্ন হলঃ কি বস্তুতে জাদু করেছে? উত্তর হল, একটি চিরুনীতে। আবার প্রশ্ন হল, চিরুনীটি কোথায়? উত্তর হল, খেজুর ফলের আবরণীতে 'বির যরোয়ান' কূপে একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ্‌ তিনি কূপে গেলেন এবং বললেনঃ স্বপ্নে আমাকে এই কূপই দেখানো হয়েছে। অতঃপর চিরুনীটি সেখান থেকে বের করে আনলেন।

আয়াতসমূহ ও অর্থ

    بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ۝‎
    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
    পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে।
  1. قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ ۝
    ক্বুল আউযু বিরাব্বিন নাস।
    বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার
  2. مَلِكِ ٱلنَّاسِ ۝
    মালিকিন্নাস।
    মানুষের অধিপতির।
  3. إِلَـٰهِ ٱلنَّاسِ ۝
    ইলাহিন্নাস।
    মানুষের মা'বুদের।
  4. مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ ۝
    মিন শাররীল ওয়াস ওয়াসিল খান্নাস।
    তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্মগোপন করে।
  5. الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ ۝
    আল্লাযি ইউওয়াস ইসু ফী সুদুরিন্নাস।
    যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে।
  6. مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ ۝ ‎
    মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস।
    জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।
আরবি ভাষায় উচ্চারণ বাংলায় অনুবাদ
বিস্‌মিল্লাহির রাহ্‌মানির রাহীম

قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ
مَلِكِ ٱلنَّاسِ
إِلَـٰهِ ٱلنَّاسِ
مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ
الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ
مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ

ক্বুল আউযু বিরাব্বিন নাস।
মালিকিন্নাস।
ইলাহিন্নাস।
মিন শাররীল ওয়াস ওয়াসিল খান্নাস।
আল্লাযি ইউওয়াস ইসু ফী সুদুরিন্নাস।
মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস।

বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার।
মানুষের অধিপতির,
মানুষের মা' বুদের,
তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্মগোপন করে,
যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে,
জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।

হাদিস

  • আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসায়ীর এক দীর্ঘ রেওয়ায়েতে রসুলুল্লাহ বলেনঃ

    যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মুসীবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট হয়। - (ইবনে-কাসীর)

  • সহীহ মুসলিমে ওকবা ইবনে আমের -এর বর্ণিত হাদীসে রসূলুল্লাহ বলেনঃ

    তোমরা লক্ষ্য করেছ কি, অদ্য রাত্রিতে আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি এমন আয়াত নাযিল করেছেন, যার সমতুল্য আয়াত দেখা যায় না। অর্থাৎ ক্বুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক এবং ক্বুল আউযু বিরাব্বিন নাস আয়াতসমূহ। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, তওরাত, ইঞ্জীল, যাবুর এবং কোরআনেও অনুরূপ অন্য কোন সূরা নেই।

  • এক সফরে রসূলুল্লাহ ওকবা ইবনে আমেন -কে সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করালেন, অত:পর মাগরিবের নামাযে এ সূরাদ্বয়ই তেলাওয়াত করে বললেনঃ

    এই সূরাদ্বয় নিদ্রা যাওয়ার সময় এবং নিদ্রা শেষে বিছানা থেকে উঠার সময়ও পাঠ করো।

    অন্য হাদীসে তিনি প্রত্যেক নামাযের পর সূরাদ্বয় পাঠ করার আদেশ করেছেন। - (আবু দাউদ, নাসায়ী)
  • হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হাবীব বর্ণনা করেন,

    এক রাত্রিতে বৃষ্টি ও ভীষণ অন্ধকার ছিল। আমরা রসূলুল্লাহ -কে খুঁজতে বের হলাম। যাখন তাকে পেলাম, তখন প্রথমেই তিনি বললেনঃ বল। আমি আরয করলাম, কি বলব? তিনি বললেনঃ সূরা এখলাস ও কূল আউযু সূরাদ্বয়। সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো তিন বার পাঠ করলে তুমি প্রত্যেক কষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে।

    - (মাযহারী)

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

সূরা নাস নামকরণসূরা নাস শানে নুযূলসূরা নাস আয়াতসমূহ ও অর্থসূরা নাস হাদিসসূরা নাস তথ্যসূত্রসূরা নাস বহিঃসংযোগসূরা নাসআয়াতআরবি ভাষাআল্লাহকুরআনমক্কামদীনামুসলমানরূকুশয়তানসুন্নাহসূরাসূরা ফালাক

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

বাংলাদেশের ইতিহাসস্ক্যাবিসশাবনূরফরায়েজি আন্দোলন২০২২ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জিম্বাবুয়ে সফরসজনেদুর্গাপূজাকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তামাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ময়মনসিংহজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়এশিয়াতুরস্করূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রশচীন তেন্ডুলকরপরীমনিতাজউদ্দীন আহমদসাদ্দাম হুসাইনভারতীয় সংসদআইসোটোপধানশিবম দুবেবাস্তুতন্ত্রলোকনাথ ব্রহ্মচারীবৃহস্পতি গ্রহশ্বেতকণিকাপ্রধান পাতাইসলামের ইতিহাসবাংলা ভাষা আন্দোলনবাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরদের তালিকাসিরাজগঞ্জ জেলাজনি সিন্সদেব (অভিনেতা)ডেঙ্গু জ্বরফরিদপুর জেলা২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগকিশোরগঞ্জ জেলাসোনানামলালননিউমোনিয়াতাইওয়ানমুরগিকাশ্মীরবিসিএস পরীক্ষাচৈতন্যভাগবতশরীয়তপুর জেলাবাংলা স্বরবর্ণভারতের স্বাধীনতা বিপ্লবীদের তালিকাবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিপাবনা জেলাগাঁজাবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদবিভারতের সংবিধানভালোবাসাপাল সাম্রাজ্যইসলামে যৌনতাপ্রাকৃতিক পরিবেশওয়াসিকা আয়শা খানঅলিউল হক রুমিআরবি বর্ণমালাবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানহিন্দুধর্মসালমান শাহবাংলা সংখ্যা পদ্ধতিকুতুব মিনারশারীরিক ব্যায়ামসৈয়দ সায়েদুল হক সুমনজাতিমোশাররফ করিমইসরায়েল–হামাস যুদ্ধপ্রথম ওরহানলিঙ্গ উত্থান ত্রুটিআমার দেখা নয়াচীনআল্লাহশিবনারায়ণ দাসঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়বাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাতিতুমীর🡆 More