শান্তি

শান্তি (ইংরেজি: Peace) কোন প্রকার সংঘাত কিংবা যুদ্ধবিহীন সময়কাল। বৃহৎ পরিসরে শান্তি বলতে রাষ্ট্রের ঐক্য, শান্ত অবস্থা বিরাজমান যা অন্য কোন কিছু বিঘ্নতা সৃষ্টিকারী পরিবেশ দ্বারা আক্রান্ত না হওয়াকে বুঝায়। জনগণ ও সংগঠনের অভ্যন্তরে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করাই রাষ্ট্রের ইপ্সিত লক্ষ্য হওয়া উচিত। ১ম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে দেশে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায়ের স্বার্থে রাষ্ট্রপুঞ্জ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্রসংঘ ২য় বিশ্বযুদ্ধ বন্ধ করতে পারেনি। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর রাষ্ট্রসংঘের স্থলাভিষিক্ত হয়ে জাতিসংঘের সৃষ্টি হয়। এরফলে জাতিসংঘের সদস্যভূক্ত দেশসমূহের মধ্যে পারস্পরিক নিরাপত্তা রক্ষা ও বিশ্ব শান্তিরক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সদস্যভূক্ত কোন দেশ যদি অন্য কোন দেশ কর্তৃক আক্রান্ত কিংবা অধিগ্রহণের মুখোমুখি হয় তাহলে অন্যান্য সকল দেশ আক্রান্ত প্রথম দেশকে সাহায্যের জন্যে এগিয়ে আসে। এ ধরনের চিন্তা-ভাবনার ফসলরূপে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে দক্ষিণ কোরিয়া ও কুয়েতের উপর প্রয়োগ করা হয়েছিল।

শান্তি
ঘেন্ট চুক্তির অধীনে গ্রেট ব্রিটেনমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার শান্তি বজায়ের স্বার্থে ১৮১৪ সালে নির্মিত ফাউন্টেন অব টাইম ভাস্কর্য শিল্পকলা নির্মিত হয়।

শান্তির স্বপক্ষে চিরজাগরুক ব্যক্তিত্ব মার্টিন লুথার কিং, জুনিয়র বার্মিংহ্যাম কারাগার থেকে এক চিঠিতে লিখেছেন যে -

সত্যিকারের শান্তি কেবলমাত্র উদ্বিগ্নেরই অনুপস্থিতি ঘটায় না; বরঞ্চ ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও উপস্থিতিজনিত কারণে হয়ে থাকে।

অন্যভাবে বলা যায় যে, প্রকৃত শান্তি তখনই ঘটে যখন সমস্যা, ভয়-ভীতির পরিবেশ দূরীভূত হয়।

শান্তির উপযোগিতা বিচার-বিশ্লেষণ করেই বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক আলফ্রেড নোবেলের নামানুসারে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে যা বিশ্বের যে-কোন ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অবদানের জন্যে মূল্যায়িত হয়ে থাকেন।

ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি

শান্তি 
গ্যারি মেলচার্স, শান্তির দেয়ালচিত্র, ১৯৮৬।

ধর্মীয় বিশ্বাসের মাধ্যমে প্রায়শঃই মানব জীবনের যাবতীয় সমস্যাসহ অন্য ব্যক্তির সাথে পরস্পর বিপরীতমুখী চিন্তা-ভাবনাকে চিহ্নিত ও পরিচিতি ঘটানোর সুযোগ তৈরী করা হয়।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন যে, কেবলমাত্র সকল প্রকার দুঃখ-দূর্দশা শেষে শান্তি লাভ করা সম্ভব। দুঃখ থেকে পরিত্রাণ লাভ কর ও শান্তি লাভ কর - বৌদ্ধদের দার্শনিক মতবাদের চারটি মহৎ গুণাবলীর অন্যতম একটি হিসেবে স্বীকৃত।

ইহুদী এবং খ্রীষ্টানগণ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন যে, একমাত্র ঈশ্বরের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও সান্নিধ্য স্থাপনের মাধ্যমেই প্রকৃত শান্তি আসবে। খ্রীষ্টানরা দাবী করেন যে নাজারেথের যীশু শান্তির রাজপুত্র। ব্যক্তি, সমাজ এবং সকল প্রকার সৃষ্টির মধ্যে অবস্থানপূর্বক শয়তানকে দূর করে মসীহ খ্রীষ্ট শান্তির রাজত্ব প্রতিপালন করবেন। প্রভু যীশু খ্রিষ্ট বলেছেন,

তোমাদের শান্তিকে নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি; আমার শান্তি আমি তোমাদেরকে দিব। বৈশ্বিকভাবে যে শান্তি তোমরা কামনা করছ আমি সে শান্তি দিব না। তোমরা ভেঙ্গে পড়ো না এবং ভীত-সন্ত্রস্ত হইও না। - জন

— ১৪:২৭

ইসলাম ধর্মে শান্তিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি ইসলাম ধর্মের অন্যতম মূলনীতি। ইসলাম শব্দটি সালাম ও "সিলম" শব্দ থেকে এসেছে যেগুলোর অর্থ হল যথাক্রমে শান্তি এবং আত্মসমর্পণ। ব্যাপকার্থে, শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণ করাকেই ইসলাম ধর্ম হিসেবে সঙ্গায়িত করা হয়। এছাড়া ইসলামকে বোঝাতে "রিলিজিয়ন অব পিস" বা "শান্তির ধর্ম" শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] আল্লাহর ("ঈশ্বর" শব্দের আরবি বিশেষ্য, এক এবং অদ্বিতীয়) নিকট আত্মসমর্পণের ভিত্তি হল নম্রতা। ইসলাম মতে, কোন ব্যক্তির নিজস্ব কোন নম্র আচরণ সহিংসতা বর্জন ও শান্তির উদ্দেশ্যে তা অভিমুখীকরণ ব্যতীত পরিপূর্ণরূপে সম্পন্ন হবে না।

মানসিক শান্তি

অভ্যন্তরীণ শান্তি বা মানসিক শান্তি বলতে মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে অর্জিত শান্তিকে বুঝায়। অগাধ জ্ঞান এবং নিজেকে জানার মাধ্যমে মতভেদ দূর ও চাপ প্রয়োগের মুখোমুখি হয়ে তা অর্জন করতে হয়। অনেকেই শান্তিতে থাকাকে সুস্থ ও সভ্য মানুষের প্রতিচ্ছবি এবং চাপ ও দুঃশ্চিন্তার বৈপরীত্য হিসেবে মনে করে থাকেন। সচরাচর মানসিক শান্তিকে পরম সুখ ও সুখী জীবনের সাথে সম্পৃক্ত বলে গণ্য করা হয়।

চাপের প্রভাব, বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্তি লাভের মাধ্যমে মানসিক শান্তি তৈরী হয়। কিছু কিছু সমাজে মানসিক শান্তিকে সচেতনতা অথবা শিক্ষার প্রতীকরূপে গণ্য করা হয়। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ, সাধনা, প্রার্থনা, মন্ত্র, তাই চি চুয়ান বা যোগ ব্যায়ামের নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমেই এ শান্তি অর্জন করা সম্ভব। অনেক আধ্যাত্মিক অনুশীলনে নিজেকে জানা যায়। সনাতন ধারায় সংশ্লিষ্ট বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মতে মানসিক শান্তিকে খুঁজে পাওয়া গেছে।

ব্যাপক অর্থে

ব্যাপক অর্থে শান্তি বলতে সাধারণত বিশ্ব শান্তিকেই বোঝায়। "বিশ্ব শান্তি" বলতে সমগ্র বিশ্বের সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের মধ্যকার শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধকে বোঝায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই ধারণাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে এবং ফলস্বরূপ জন্ম হয় সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের। এটি ছিল এমন একটা বৈশ্বিক সংস্থা যাকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্য শান্তি, একতা, সমঝোতা ও মিত্রতা ধরে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এর উত্তরসূরী হিসাবে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। জাতিসংঘই বিশ্বের প্রথম আন্তঃদেশীয় সংস্থা যেটি বিশ্ব শান্তি ধরে রাখতে সফল হয়েছে।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

শান্তি ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিশান্তি মানসিক শান্তি ব্যাপক অর্থেশান্তি তথ্যসূত্রশান্তি বহিঃসংযোগশান্তিইংরেজি ভাষাকুয়েতজাতিসংঘজাতিসংঘের সদস্য দেশদক্ষিণ কোরিয়াদেশনিরাপত্তাপরিবেশযুদ্ধরাষ্ট্রপুঞ্জরাষ্ট্রসংঘ২য় বিশ্বযুদ্ধ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ইসরায়েলের জনসংখ্যার পরিসংখ্যানজায়েদ খান (বাংলাদেশী অভিনেতা)ছয় দফা আন্দোলনআরবি বর্ণমালাতাপপ্রবাহপাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭০আলী খামেনেয়ীদশাবতারসুনীল নারাইনসুলতান সুলাইমানআরবি ভাষাটাইফয়েড জ্বরভৌগোলিক আয়তন অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকামুজিবনগরএ. পি. জে. আবদুল কালামবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধহিমোগ্লোবিনবাঙালি মুসলিমদের পদবিসমূহমাযহাবসূরা ফাতিহাসাঁওতালবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহদুর্গাকিশোরগঞ্জ জেলামাইকেল মধুসূদন দত্তরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরজাপানইসলামসুনীল গঙ্গোপাধ্যায়লেবাননবর্ডার গার্ড বাংলাদেশবাঘপদ্মা সেতুদৈনিক যুগান্তরকাজী নজরুল ইসলামনামাজসার্বজনীন পেনশনকালীসুকুমার রায়বাংলাদেশ বিমান বাহিনীসামরিক ব্যয় অনুযায়ী দেশের তালিকাইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতপশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদমুহাম্মাদের সন্তানগণতেল আবিবমূত্রনালীর সংক্রমণশিয়া ইসলামএকতা এক্সপ্রেসভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসপাল সাম্রাজ্যমাহরামআখড়াই গানমুসাফিরের নামাজবৈদিক যুগআকিদামুসলিমক্রিস্তিয়ানো রোনালদোখন্দকার মোশতাক আহমেদ১৮৫৭ সিপাহি বিদ্রোহটাঙ্গাইল জেলাসাকিব আল হাসানব্যাকটেরিয়ামৈমনসিংহ গীতিকাআল্লাহর ৯৯টি নামভোলা ময়রাবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কুরআনের ইতিহাসঅর্শরোগপ্রাণ-আরএফএল গ্রুপরাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)জগদীশ চন্দ্র বসুঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েগায়ত্রী মন্ত্রওমানভৌগোলিক নির্দেশকদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিআন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস🡆 More