মহাসাগর (বা মহাসমুদ্র, মহাসিন্ধু) অতি প্রকাণ্ড ও লবণযুক্ত বিপুল জলরাশি যা পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ওসেন শব্দটির উৎস হল প্রাচীন গ্রিক শব্দ ‘ওকিআনোজ’ (Ὠκεανός)। স্বীকৃত ৫ টি মহাসাগর : প্রশান্ত, আটলান্টিক, ভারতীয়, আর্টিক, এবং দক্ষিণ। মহাসাগরগুলি একত্রে পৃথিবীর মোট আয়তনের (৩.৬১×১০১৪ বর্গ মিটার) প্রায় ৭০.৯% স্থান দখল করে আছে। এ বিপুল জলরাশি আবার অনেকগুলো মহাসাগর ও ছোট ছোট সমুদ্রে বিভক্ত।
মহাসাগরের অর্ধেকেরও বেশি জায়গার গড় গভীরতা ৩,০০০ মিটারেরও (৯,৮০০ বর্গফুট) বেশি। মহাসাগরের জলের গড় লবণাক্ততা ৩.৫% এবং প্রায় সকল সমুদ্রের গড় লবণাক্ততা ৩% থেকে ৩.৮%৮। বৈজ্ঞানিকেরা হিসেব করে দেখেছেন যে, মহাসাগরে প্রায় ২,৩০,০০০ সামুদ্রিক ও জলজ প্রাণী রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সামুদ্রিক ও জলজ প্রাণীর সংখ্যা নির্ণিত সংখ্যার তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি।
প্রচলিতভাবে আমরা বিভিন্ন ধরনের মহাসাগরের নাম দেখতে পাই। একসময় বর্তমানকালের মহাসাগরগুলোর আন্তঃসংযোগকৃত লবণাক্ত জলরাশি ‘বৈশ্বিক মহাসাগর’ হিসেবে নির্দেশ করতো। মহাসাগর মূলতঃ একটি। এ ধারণাটি অবিচ্ছেদ্য ও পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত এবং মুক্ত জলরাশির আন্তঃসংযোগে মহাসাগরীয়বিদ্যার মৌলিক গুরুত্বকেই তুলে ধরে। পাশ্চাত্ত্য ভূগোলবিদরা তাদের নিজেদের সুবিধার্থে মহাসাগরকে ৫টি অংশে বিভক্ত করেছেন। মহাসাগরীয় বিভাজনসমূহ সংজ্ঞায়িত এবং মূল্যায়িত হয়েছে - মহাদেশ, মাটির স্তর এবং অন্যান্য শর্তাবলীর আলোকে। সেগুলো হলোঃ-
প্রশান্ত এবং আটলান্টিক মহাসাগর বিষুবরেখা কর্তৃক উত্তরাংশ ও দক্ষিণাংশকে আন্তঃবিভাজন করেছে। ক্ষুদ্রতম এলাকাগুলোয় মহাসাগরকে সাগর, উপসাগর, উপত্যকা, প্রণালী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণে মহাসাগর বলতে সুবিশাল মহাসাগরীয় জলাধারকে বুঝায়। মহাসাগরীয় জলাধার হচ্ছে আগ্নেয়গিরির বাসাল্টের পাতলা স্তর যা পৃথিবীর অগ্নিকুণ্ডস্বরূপ। মহাসাগরীয় প্লেটের কঠিন আবরণের তুলনায় এর আবরণ পুরু হলেও কম ঘণপূর্ণ। এ দৃষ্টিকোণে পৃথিবীতে তিনটি মহাসাগর আছে যা বিশ্ব মহাসাগর, কাস্পিয়ান সাগর এবং কৃষ্ণ সাগর বা ব্ল্যাক সি নামে পরিচিত। শেষোক্ত দু’টি লওরেসিয়াসহ কাইমেরিয়া এলাকায় একত্রিত হয়েছে। ভূ-মধ্যসাগর ঐ সময়েই মহাসাগর থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, টেকটোনিক প্লেট নড়াচড়ার ফলে জিব্রাল্টার প্রণালী থেকে বিশ্ব মহাসাগরের সাথে সম্পর্কচ্যুত হয়। কৃষ্ণ সাগর বসফরাস প্রণালীর মাধ্যমে ভূ-মধ্যসাগরের সাথে সংযুক্ত হয়। কিন্তু বসফরাস প্রণালীর প্রাকৃতিক খালটি মহাদেশীয় শিলাচ্যুতির কারণে প্রায় ৭,০০০ বছর পূর্বে বিচ্ছিন্ন হয় এবং মহাসাগরীয় সাগরতলের একটি টুকরো জিব্রাল্টার প্রণালীর উদ্ভব ঘটে।
ভূ-মণ্ডলে মহাসাগরের বিপুল প্রভাব লক্ষ করা যায়। মহাসাগরীয় বাষ্পীভবন যা পানিচক্রের একটি ধাপ, তা অনেক বৃষ্টিপাতের উৎসস্থল হিসেবে চিহ্নিত তা মহাসাগরীয় তাপমাত্রা জলবায়ু ও বাতাসের গতিপথের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। এটি ভূ-স্থিত জীবন ও জীবনধারায় বিরাট প্রভাব বিস্তার করে। মহাসাগর গঠনের ৩ বিলিয়ন বছরের মধ্যে ভূ-স্থিত জীবন গড়ে উঠে। উপকূলের গভীরতা এবং দূরত্ব উভয়ই বিরাটভাবে প্রভাবান্বিত করেছে বলেই সাগর উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা জন্মেছে এবং সংশ্লিষ্ট প্রাণীকূল বসবাস করছে।
বৈশ্বিক মহাসাগরের আয়তন প্রায় ৩৬১*১০৬ বর্গকিলোমিটার (১৩৯*১০৬ বর্গমাইল)। প্রতি ঘণকিলোমিটারে পানির আয়তন হচ্ছে ১,১১১ কিলোমিটার। মহাসাগরের গড় গভীরতা ৩,৭৯০ মিটার এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ১০,৯২৩ মিটার। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জলরাশি ৩০০০ মিটারেরও গভীরে রয়েছে। মোট বাষ্পীভবন হচ্ছে ১.৪*১০২১ কেজি যা পৃথিবীর মাত্র ০.০২৩%। ৩ শতাংশের কম স্বাদুপানি; বাকী লবণাক্ত পানির প্রায় সবই মহাসাগরের।
সাধারণের ধারণা যে, মহাসাগরের পানির রং নীল। এছাড়াও, পানিতে খুবই কম পরিমাণে নীল রং থাকে এবং যখন বিপুল জলরাশিকে একত্রে রাখা হয় তখনই মহাসাগরের পানি নীল দেখায়। এছাড়াও, আকাশে নীল রংয়ের প্রতিফলন এর জন্য দায়ী, যদিও তা মূখ্য বিষয় নয়। মূল কারণ হচ্ছে - পানির পরমাণুগুলোতে লাল রংয়ের নিউক্লিয়ার কণা থাকে যা আলো থেকে আসে এবং প্রকৃতি প্রদত্ত রংয়ের উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে ইলেকট্রনিক, ডাইনামিক বিষয়গুলোর তুলনায় প্রাকৃতিক অণুকম্পনকে ফলাফলকে ধরা হয়।
নাবিক এবং অন্যান্য নৌ-বিদদের প্রতিবেদনে জানা জায়, মহাসাগরে প্রায়শঃই দৃশ্যমান রক্তিম আভা, আলোকছটা মাইলের পর মাইল রাত্রে দেখা যায়। ২০০৫ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো প্রকাশ করেন যে, আলোকচিত্রের মাধ্যমে গ্লো’র উপস্থিতি তারা নিশ্চিত করেছেন। এটি জৈব-আলোকছটার সাহায্যে ঘটতে পারে।
মহাসাগরে ভ্রমণ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অতিপ্রাচীনকাল থেকেই নৌকা যোগাযোগের একটি প্রধান পরিবহন হিসেবে সু-খ্যাতি অর্জন করেছে। কিন্তু আধুনিক যুগে জলের নীচ দিয়েও ভ্রমণ করা সম্ভবপর হয়েছে। গভীরতম স্থান হিসেবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ হিসেবে নর্দার্ন মারিয়ানা দ্বীপের মারিয়ানা খাতের স্থান নির্ণিত হয়েছে। এর গভীরতা ১০,৯৭১ মিটার। ব্রিটিশ নৌযান চ্যালেঞ্জার-২ ১৮৫১ সালে স্থানটি জরিপ করে এবং সবচেয়ে গভীর স্থানকে নামকরণ করেছে ‘চ্যালেঞ্জার ডিপ’ হিসেবে। ১৯৬০ সালে ট্রিস্ট দু’জন ক্রু-সহ ‘চ্যালেঞ্জার-২’-এর কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছতে সফলকাম হন। অধিকাংশ মহাসাগরের কেন্দ্রস্থল এখনো আবিস্কৃত হয়নি এবং স্থানও নির্ণিত হয়নি। ১৯৯৫ সালে মহাকর্ষীয় সূত্র প্রয়োগ করে ১০ কিলোমিটারেরও অধিক বৃহৎ ভূ-চিত্রাবলীর দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে।
মহাসাগরবিশারদরা ভূ-গঠন এবং জীবনধারার উপযোগী পরিবেশকে উপজীব্য করে মহাসাগরকে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করেছেন।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article মহাসাগর, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.