ভারতের সংস্কৃতি

ভারতের ভাষা, ধর্মবিশ্বাস, নৃত্যকলা, সংগীত, স্থাপত্যশৈলী, খাদ্যাভ্যাস ও পোষাকপরিচ্ছদ এক এক অঞ্চলে এক এক প্রকারের। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই সবের মধ্যে একটি সাধারণ একাত্মতা লক্ষিত হয়। ভারতের সংস্কৃতি কয়েক সহস্রাব্দ-প্রাচীন এই সব বৈচিত্র্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি ও রীতিনীতিগুলির একটি সম্মিলিত রূপ।

ভারতের সংস্কৃতি
"কত্থক" নৃত্য। এই নৃত্যটি দেশের আটটি শাস্ত্রীয় নৃত্যের অন্যতম। খ্রিস্টপূর্ব একাদশ শতাব্দীতে বৈদিক যুগ উদ্ভূত "কথক" হিন্দু পুরাণের একটি গল্পকথন শৈলী থেকে উদ্ভূত। এই নাচে একাধিক হিন্দু ধর্মীয় মুদ্রা প্রদর্শিত হয়ে থাকে।

ভারতীয় সভ্যতা প্রায় আট হাজার বছরের পুরনো। এই সভ্যতার একটি আড়াই হাজার বছরের লিখিত ইতিহাসও রয়েছে। এই কারণে কোনো কোনো ঐতিহাসিক এই সভ্যতাটিকে "বিশ্বের প্রাচীনতম জীবন্ত সভ্যতা" মনে করেন। ভারতীয় ধর্মসমূহ, যোগ ও ভারতীয় খাদ্য — ভারতীয় সভ্যতার এই উপাদানগুলি সমগ্র বিশ্বে গভীর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে

ধর্মবিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতা

ভারতের সংস্কৃতি 
মৈত্রেয়, থিকসে গুম্ফা, লাদাখহিন্দুধর্মবৌদ্ধধর্ম হল ভারতের দেশীয় ধর্মবিশ্বাস।

ভারত হল হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, জৈনধর্ম ও শিখধর্মের উৎপত্তিস্থল। এই চারটি ধর্ম একত্রে ভারতীয় ধর্ম নামে পরিচিত। ভারতীয় ধর্মগুলি আব্রাহামীয় ধর্মগুলির মতোই বিশ্বের একটি অন্যতম প্রধান ধর্মীয় যূথ। বর্তমানে হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম যথাক্রমে বিশ্বের তৃতীয় ও চতুর্থ বৃহত্তম ধর্মবিশ্বাস। এই দুই ধর্মের অনুগামীদের সংখ্যা ২ বিলিয়নেরও বেশি (সম্ভবত ২.৫ বা ২.৬ বিলিয়ন)। লিঙ্গায়েত ও আহমদিয়া ধর্মমতের উৎপত্তিস্থানও ভারত।

ভারতের জনসাধারণের মধ্যে যে ধর্মকেন্দ্রিক পার্থক্য দেখা যায়, তা বিশ্বের আর কোনো দেশে দেখা যায় না। এই দেশের সমাজ ও সংস্কৃতির উপর মানুষের ধর্মবিশ্বাসের প্রভাব অত্যন্ত গভীর। দেশের অধিকাংশ মানুষের জীবনযাত্রা ধর্মই কেন্দ্রীয় ও প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে। ডান্ডি সংস্কৃতির সাথে জড়িত। বিভিন্ন রাজ্য ডান্ডিবাদি মানুষ বসবাস করে তারা যারা প্রকাশ্য অন্য ধর্ম কে অবঙ্গা করে। ডান্ডিরা নিজ ধর্ম ছাড়া অন্য কোন মানুষ কে মেনে নিতে পারে না। তা নিয়ে কিছু সমস্যা হলেও ভারত একটি মিশ্র রাষ্ট্র।

ভারতের 79% মানুষ হিন্দুধর্মের অনুগামী। 14.9% মানুষের ধর্ম ইসলাম। তা সত্ত্বেও শিখধর্ম, জৈনধর্ম ও বিশেষ করে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব শুধু ভারতে নয়, সমগ্র বিশ্বে প্রতীয়মান। খ্রিস্টধর্ম, জরথুস্ত্রবাদ, ইহুদি ধর্ম ও বাহাই ধর্মের কিছু প্রভাব ভারতের সংস্কৃতিতে থাকলেও, এই ধর্মগুলির অনুগামীর সংখ্যা এদেশে অত্যন্ত কম। ধর্ম ভারতীয়দের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেও নাস্তিকতা ও সংশয়বাদের অস্তিত্বও এদেশের সমাজে দেখা যায়। পরধর্মসহিষ্ণুতাও সাধারণ ভারতীয়দের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

সমাজ

সামগ্রিক বর্ণনা

ইউজিন এম. মাকারের মতে, ভারতের প্রথাগত সংস্কৃতির ভিত্তি আপেক্ষিকভাবে কঠোর এক সামাজিক ক্রমোচ্চ শ্রেণিবিন্যাস। তিনি আরও বলেছেন, শিশুদের অতি অল্পবয়স থেকেই তাদের সামাজিক কর্তব্য ও অবস্থান সম্পর্কে সচেতন করে তোলা হয়। অনেকেই মনে করেন যে, মানুষের জীবনকে চালনা করেন দেবতা ও উপদেবতারা। বর্ণাশ্রম প্রথা দেশের একটি শক্তিশালী সামাজিক বিভাজন রেখা। সহস্রাধিক বছর ধরে উচ্চবর্ণের মানুষেরা সামাজিক বিধিনিষেধগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে এসেছেন। তবে সাম্প্রতিককালে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে, এই বিভাজন অনেকটাই নির্মূল হয়েছে। গোত্রব্যবস্থা হিন্দুদের পারিবারিক জীবনের একটি বিশিষ্টতা। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিবারগুলির সঙ্গে তাদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্ক রক্ষিত হয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলে, এমনকি কখনও কখনও শহরাঞ্চলেও একই পরিবারের তিন কিংবা চারটি প্রজন্মকে একই ছাদের তলায় বসবাস করতে দেখা যায়। পুরুষতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পারিবারিক সমস্যাগুলির সমাধান করা হয়ে থাকে।

পরিবার

ভারতের সংস্কৃতি 
পাঞ্জাবি হিন্দু বিবাহ অনুষ্ঠানে বধূ

ভারতের সংস্কৃতিতে পরিবারের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এদেশে একান্নবর্তী পরিবারের প্রথা চলে আসছে। এই ব্যবস্থায় পিতামাতা, পুত্র-পুত্রবধূ ও তাদের সন্তানসন্ততি প্রভৃতি একসঙ্গে বসবাস করে। সাধারণত বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ সদস্যই একান্নবর্তী পরিবারের কর্তা হন। তিনিই সমস্ত সিদ্ধান্ত নেন এবং নিয়মকানুন স্থির করে দেন। পরিবারের অন্য সকলে তাকে মান্য করে চলে।

বিবাহ

পূর্বপরিকল্পিত বিবাহ বা সম্বন্ধ করে বিয়ে ভারতের একটি শতাব্দীপ্রাচীন প্রথা। আজও ভারতীয়দের অধিকাংশের বিবাহ হয় পিতামাতা ও পরিবারের অন্যান্য সম্মানীয় সদস্যবর্গের পরিকল্পনা এবং বর ও বধূর সম্মতিক্রমে। পণপ্রথা থাকলেও, ভারত সরকার তা বেআইনি ঘোষণা করেছে। তবে ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতিতে এই প্রথা রয়েই গেছে। সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে পণ দেওয়া-নেওয়ার ব্যাপারটি গোপন রাখা হয়ে থাকে। সম্বন্ধ করে বিয়েতে বয়স, উচ্চতা, ব্যক্তিগত মূল্যবোধ ও রুচি, পারিবারিক প্রেক্ষাপট (অর্থবল ও সামাজিক প্রতিষ্ঠা), বর্ণ ও ঠিকুজি-কোষ্ঠী বিচার করে পাত্রপাত্রী নির্বাচন করা হয়।

ভারতীয় সংস্কারে বিবাহ হল সারাজীবনের সম্পর্ক। ভারতে বিবাহবিচ্ছেদের হার অত্যন্ত কম (মাত্র ১.১%, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ৫০%)। সম্বন্ধ করে বিয়েতে বিবাহবিচ্ছেদের হার আরও কম। তবে সাম্প্রতিককালে বিবাহবিচ্ছেদের হার তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাচীনপন্থীরা বিবাহবিচ্ছেদকে সামাজিক রীতি লঙ্ঘন মনে করলেও, আধুনিকতাবাদীরা নারীর অধিকার রক্ষায় এটিকে জরুরি মনে করেন।

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী


Tags:

ভারতের সংস্কৃতি ধর্মবিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতাভারতের সংস্কৃতি সমাজভারতের সংস্কৃতি তথ্যসূত্রভারতের সংস্কৃতি আরও দেখুনভারতের সংস্কৃতিভারতভারতের ধর্মবিশ্বাসভারতের ভাষাসমূহভারতের সংগীতভারতের স্থাপত্যসংস্কৃতি

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

সূরা ফালাকগণতন্ত্রযুক্তরাজ্যবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়টাঙ্গাইল জেলাইহুদি ধর্মভালোবাসাবাংলাদেশী অভিনেত্রীদের তালিকাজার্মানিফরিদপুর জেলানকশীকাঁথা এক্সপ্রেসসানি লিওনসূর্যম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাববৌদ্ধধর্মপান (পাতা)প্রস্তর যুগরাসায়নিক সূত্রকাজী নজরুল ইসলাম১ (সংখ্যা)মঙ্গলকাব্যভীমরাও রামজি আম্বেদকরমাওবাদক্রিকেটবাংলাদেশের প্রশাসনিক অঞ্চলযোনিআয়তন অনুযায়ী ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহের তালিকাপূবালী ব্যাংক পিএলসিসূরা ফাতিহামুহাম্মদ ইউনূসশায়খ আহমাদুল্লাহউসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতানদের তালিকাগঙ্গা নদীউসমানীয় খিলাফতপারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রসমূহের তালিকাউজবেকিস্তানআহল-ই-হাদীসসূরা ইয়াসীনমুহাম্মাদ ফাতিহআবদুল হামিদ খান ভাসানীএইচআইভিকামরুল হাসানআন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসইসলামের নবি ও রাসুললোকসভা কেন্দ্রের তালিকাব্যঞ্জনবর্ণসীতাবাংলাদেশের জাতীয় পতাকাইস্তেখারার নামাজনারায়ণগঞ্জ জেলাউপন্যাসবর্ডার গার্ড বাংলাদেশজগদীশ চন্দ্র বসুবাংলাদেশের জেলাসমূহের তালিকাবিজরী বরকতুল্লাহবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীনাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, ২০১৯রাজনীতিহুমায়ূন আহমেদকাবাইরাক–ইরান যুদ্ধরিলায়েন্স ফাউন্ডেশনসুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সার্বজনীন পেনশনইসলামে বিবাহর‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নযোনি পিচ্ছিলকারকভূমি পরিমাপবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ক্লিওপেট্রাবাঙালি জাতিপানিপথের প্রথম যুদ্ধঅমর সিং চমকিলালেবাননঅর্থনীতিঅরবরইমালয়েশিয়াআয়াতুল কুরসিইব্রাহিম রাইসি🡆 More