বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বা বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার (ইংরেজি ভাষায়: Foreign Exchange Reserves) বলতে কোনও দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে (বা মুদ্রাবিষয়ক কর্তৃপক্ষের কাছে) বৈদেশিক মুদ্রায় গচ্ছিত সম্পদের মজুদকে বোঝায়। এভাবে গচ্ছিত বৈদেশিক মুদ্রা প্রধানত আমদানি মূল্য এবং বৈদেশিক ঋণ ও ঋণের সুদ, ইত্যাদি পরিশোধে ব্যবহৃত হয়। পণ্য ও সেবা রপ্তানি ও বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের স্বদেশে পাঠানো অর্থ (ইংরেজিতে যাকে Remittance রেমিট্যান্স বলা হয়) থেকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ গড়ে ওঠে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বৈদেশিক ঋণবাবদ প্রাপ্ত অর্থ এবং সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের অর্থ। সাধারণত শক্তিশালী বা অনমনীয় মুদ্রা (ইংরেজি Hard currency) যা আন্তর্জাতিক বাজারে সহজে বিনিময়যোগ্য (যেমন মার্কিন ডলার, ব্রিটিশ পাউণ্ড, ইউরো, ইয়েন, ইত্যাদি), সেটিতেই বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ গড়ে তোলা হয়। কোন দেশ স্বীয় দেশেরই কোন ব্যাংকে বা কোন বিদেশে অবস্থিত ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ সংরক্ষণ করতে পারে।

ইতিহাস

অতীতে বহু বছর ধরে বেশির ভাগ দেশে সোনার মজুদকে মূল মুদ্রা মজুদ হিসেবে ব্যবহার করা হত। সোনাকে আদর্শ মজুদ সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হত, কেননা অর্থনৈতিক মহামন্দার সময়েও এর মানের কোন হেরফের হত না। কিন্তু ১৯৭১ সালে ব্রেটন-উডস ব্যবস্থার পতনের পর থেকে সোনার দাম পড়তে থাকে। এর আগে ১৯৪৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের ব্রেটন উডস শহরে একটি সম্মেলনে আন্তর্জাতিক বাজারে মুদ্রাসমূহকে সোনা অথবা মার্কিন ডলারের সাথে সংযুক্ত করা হয়। তখন বিশ্বের সমস্ত সোনার অর্ধেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে ছিল। কিন্তু ১৯৭১ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন মার্কিন ডলার থেকে সোনায় সম্পদ রূপান্তরের ব্যবস্থা বন্ধ করে দেন। এর পর থেকে মার্কিন ডলারই বর্তমানের মজুদগুলিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বৈদেশিক মুদ্রা।

সাম্প্রতিক মুদ্রামাধ্যম

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ 
বিশ্বের বেশির ভাগ বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ মার্কিন ডলারে সংরক্ষিত।

সাধারণত শক্তিশালী বা অনমনীয় মুদ্রা (ইংরেজি Hard currency হার্ড কারেন্সি) বা আন্তর্জাতিক বাজারে সহজে বিনিময়যোগ্য মুদ্রায় (যেমন মার্কিন ডলার, ব্রিটিশ পাউণ্ড, ইউরো, ইয়েন) ইত্যাদিতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ গড়ে তোলা হয়। বৈদেশিক মুদ্রাভিত্তিক সম্পদ বলতে বৈদেশিক ব্যাংকের টাকার নোট, বন্ড, ট্রেজারি বিল ও অন্যান্য সরকারী সিকিউরিটি হতে পারে। অনেক সময় সোনার মজুদও এর আওতায় পড়ে।

আয়তন নির্বিশেষে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আছে। এই মজুদগুলির অর্ধেকেরও বেশি অংশ মার্কিন ডলারে রাখা হয়েছে কারণ এটিই বিশ্ববাজারের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত মুদ্রা। এছাড়াও ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং, ইউরো এবং জাপানি ইয়েন বৈদেশিক মুদ্রা মজুদে ব্যবহৃত মুদ্রাগুলির মধ্যে অন্যতম।

অর্থনৈতিক প্রভাব

এই মজুদটি দেশটির নিজস্ব মুদ্রার দেনা পরিশোধ ও মুদ্রানীতি প্রভাবিত করতে ব্যবহৃত হতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ দেশের অর্থনীতির ঘাত প্রতিরোধ ক্ষমতা (shock resistance) ও নমনীয়তা (flexibility) বৃদ্ধি করে। দেশীয় মুদ্রামানের দ্রুত অবমূল্যায়ন (devaluation) ঘটলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ব্যবহার করে বাজারের ঘাত প্রতিরোধ করা হয়।

অনেক তাত্ত্বিক মনে করেন এমন মুদ্রাতেই বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ করা উচিত যা দেশীয় মুদ্রার সাথে সরাসরি সংযুক্ত নয়, যাতে ঘাত প্রতিরোধ সহজ হয়। কিন্তু বর্তমান যুগে এটি করা কঠিন, কেননা বিশ্বের সব মুদ্রা এখন একে অপরের সাথে অনেক বেশি সংযুক্ত।

বর্তমানে গণচীনে বিশ্বের সর্ববৃহত্‌ বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ রয়েছে। এর পরিমাণ ৩০ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার বা ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার-এর সমান। এর বেশির ভাগই মার্কিন ডলারে মজুদ আছে।

টীকা

তথ্যসূত্র

Tags:

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ইতিহাসবৈদেশিক মুদ্রার মজুদ সাম্প্রতিক মুদ্রামাধ্যমবৈদেশিক মুদ্রার মজুদ অর্থনৈতিক প্রভাববৈদেশিক মুদ্রার মজুদ টীকাবৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তথ্যসূত্রবৈদেশিক মুদ্রার মজুদইংরেজি ভাষাকেন্দ্রীয় ব্যাংকবৈদেশিক মুদ্রাসুদ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০১৯পহেলা বৈশাখনামাজের নিয়মাবলীনদীসমাসআলেপ্পোধর্ষণদ্বাদশ জাতীয় সংসদজুমার নামাজসুন্দরবনআলাওলভালোবাসাকুমিল্লা জেলাবিজয় দিবস (বাংলাদেশ)পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমরাজশাহী বিভাগহরিকেলথাইল্যান্ডচন্দ্রবোড়াবিষ্ণু দেবাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলহিট স্ট্রোকআইসোটোপবাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিগঙ্গা নদীওয়ালটন গ্রুপআফগানিস্তানসত্যজিৎ রায়শরীয়তপুর জেলাক্যান্সারব্রিটিশ রাজের ইতিহাসবাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরযোনিরাজনীতিআল্লাহর ৯৯টি নামবাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসকৃষ্ণচূড়াপাখিইতালিসূরা ইয়াসীনব্রহ্মপুত্র নদভরিকৃষকএপ্রিলরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবপ্রিমিয়ার লিগপশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন, ২০২১বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীআন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নআন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসূরা কাহফরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৮৬১–১৯০১)বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মরত জেনারেলদের তালিকাইউক্যালিপটাসফেসবুকউসমানীয় খিলাফতবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীময়ূরী (অভিনেত্রী)ব্যাকটেরিয়াশরচ্চন্দ্র পণ্ডিততাপপ্রবাহজলাতংকনারায়ণ সান্যালমুহাম্মাদের সন্তানগণ১ (সংখ্যা)পূরণবাচক সংখ্যা (ভাষাতত্ত্ব)বিভিন্ন দেশের মুদ্রাবাংলার ইতিহাসসিরাজগঞ্জ জেলাআবদুল হাকিমদার্জিলিংভারতের রাজনৈতিক দলসমূহের তালিকাশব্দ (ব্যাকরণ)শিক্ষাস্বামী বিবেকানন্দধান🡆 More