বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১২ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ – ১ নভেম্বর, ১৯৫০) ছিলেন একজন জনপ্রিয় ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক। তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। পথের পাঁচালী ও অপরাজিত তাঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আরণ্যক, চাঁদের পাহাড়,আদর্শ হিন্দু হোটেল, ইছামতী ও অশনি সংকেত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপন্যাসের পাশাপাশি বিভূতিভূষণ প্রায় ২০টি গল্পগ্রন্থ, কয়েকটি কিশোরপাঠ্য উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনি এবং দিনলিপিও রচনা করেন। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। বিভূতিভূষণের অধিকাংশ উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপায়িত করা হয়েছে।১৯৫১ সালে ইছামতী উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | মুরাতিপুর গ্রাম, উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলা, বাংলা প্রদেশ (এখন পশ্চিমবঙ্গ), ভারত | ১২ সেপ্টেম্বর ১৮৯৪
মৃত্যু | ১ নভেম্বর ১৯৫০ ঘাটশিলা, বিহার (এখন ঝাড়খণ্ড), ভারত | (বয়স ৫৬)
পেশা | লেখক |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ভারত |
সময়কাল | ১৯২৯-৫০ |
ধরন | উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণসাহিত্য, দিনলিপি |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | পথের পাঁচালী, অপরাজিত, আরণ্যক, আদর্শ হিন্দু হোটেল, ইছামতী, অশনি সংকেত, মেঘমল্লার, তালনবমী, চাঁদের পাহাড়, দৃষ্টিপ্রদীপ,দেবযান |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর, ১৯৫১) |
দাম্পত্যসঙ্গী | গৌরী দেবী (১৯১৭-১৮) রমা দেবী (১৯৪০-৫০) |
সন্তান | তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় |
বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কাঁচরাপাড়ার নিকটবর্তী ঘোষপাড়া-মুরাতিপুর গ্রামে নিজ মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বনগাঁ'র নিকট বারাকপুর গ্রামে। তবে তাদের আদিবাস ছিল উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাট মহকুমার অন্তর্গত পানিতর গ্রাম৷ তার প্রপিতামহ ছিলেন কবিরাজ এবং তিনি বনগাঁর নিকট বারাকপুর গ্রামে কবিরাজি করতে আসতেন৷ তার পিতা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত। পাণ্ডিত্য এবং কথকতার জন্য তিনি শাস্ত্রী উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। মাতা মৃণালিনী দেবী। পিতামাতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে বিভূতিভূষণ বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন।
পিতার কাছে বিভূতিভূষণের পড়ালেখার পাঠ শুরু হয়। এরপর নিজ গ্রাম ও অন্য গ্রামের কয়েকটি পাঠশালায় পড়াশোনার পর বনগ্রাম উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে তিনি অবৈতনিক শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছিলেন।
১৯১৯ সালে হুগলী জেলার জাঙ্গীপাড়ায় দ্বারকানাথ হাইস্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ানোর সময় বসিরহাটের মোক্তার কালীভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কন্যা গৌরী দেবীর সাথে বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের এক বছর পরই গৌরী দেবী মারা যান। স্ত্রীর শোকে তিনি কিছুদিন প্রায় সন্ন্যাসীর মতো জীবনযাপন করেন। পরে ১৩৪৭ সালের ১৭ অগ্রহায়ণ (ইংরেজি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৪০) তারিখে ফরিদপুর জেলার ছয়গাঁও নিবাসী ষোড়শীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে রমা দেবীকে বিয়ে করেন। বিয়ের সাত বছর পর একমাত্র সন্তান তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (ডাকনাম বাবলু) জন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষকতার পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেন। এসময় কিছুদিন গোরক্ষিণী সভার প্রচারক হিসেবে বাংলা, ত্রিপুরা ও আরাকানের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। পরে খেলাৎচন্দ্র ঘোষের বাড়িতে সেক্রেটারি, গৃহশিক্ষক এবং তার এস্টেটের ভাগলপুর সার্কেলের সহকারী ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিছুদিন আবার ধর্মতলার খেলাৎচন্দ্র মেমোরিয়াল স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এরপর যোগ দেন বনগাঁর নিকট গোপালনগর হরিপদ ইনস্টিটিউশন স্কুলে। এ স্কুলেই তিনি আমৃত্যু কর্মরত ছিলেন। এ মহান কথাসাহিত্যিক ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১লা নভেম্বর তারিখে বিহারের (বর্তমানে ঝাড়খণ্ড) ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তার বাড়িটির নাম স্ত্রীর নামে 'গৌরীকুঞ্জ' রেখেছিলেন। সামনের রাস্তাটি অপুর পথ হিসেবে পরিচিত।
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে (১৩২৮ বঙ্গাব্দ) প্রবাসী পত্রিকার মাঘ সংখ্যায় উপেক্ষিতা নামক গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার সাহিত্যিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। ভাগলপুরে কাজ করার সময় ১৯২৫ সালে তিনি পথের পাঁচালী রচনা শুরু করেন। এ বই লেখার কাজ শেষ হয় ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে। এটি বিভূতিভূষণের প্রথম এবং সবচেয়ে বিখ্যাত রচনা। সাহিত্যিক-সম্পাদক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় এ লেখাটি পছন্দ করে বিচিত্রা পত্রিকায় প্রকাশ করলে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় পথের পাঁচালী উপন্যাসের কাহিনীকে চলচ্চিত্রে রূপদানের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা করেছিলেন। এ সিনেমাটির নামও ছিল পথের পাঁচালী। এ চলচ্চিত্রটি দেশী-বিদেশী প্রচুর পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছিল। এরপর "অপরাজিত" নামক উপন্যাস রচনা করেন, যেটি "পথের পাঁচালির"ই পরবর্তী অংশ। সত্যজিৎ এ উপন্যাস নিয়েও দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, যা ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। উভয় উপন্যাসেই তার ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিফলন ঘটেছে। পথের পাঁচালী উপন্যাসটি বিভিন্ন ভারতীয় ভাষা এবং ইংরেজি ও ফরাসি সহ বিভিন্ন পাশ্চাত্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিভূতিভূষণের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গল্পগ্রন্থ হল: মেঘমল্লার, মৌরীফুল, যাত্রাবদল। তার লেখা চাঁদের পাহাড় একটি অনবদ্য অভিযানমূলক কাহিনী, যার পটভূমি আফ্রিকা। ২০১৩ সালে বিখ্যাত চিত্রপরিচালক কমলেশ্বর মুখার্জী "চাঁদের পাহাড়" কে বাংলা চলচ্চিত্রে রূপান্তর করেন। এ চলচ্চিত্রটিও বাংলা চলচ্চিত্র জগতে যথেষ্ট খ্যাতি লাভ করে।
তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:
উপন্যাস
| গল্প-সংকলন
| কিশোরপাঠ্য
ভ্রমণকাহিনী ও দিনলিপি
| অন্যান্য
|
অধুনা ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলাতে, ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর (১৭ই কার্তিক ১৩৫৭ বঙ্গাব্দ,বুধবার) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। পরদিন দুপুরে সুবর্ণরেখা নদীর ওপরে 'পঞ্চপাণ্ডব ঘাট'-এ তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।
বিভূতিভূষণ স্মৃতিঘাট উত্তর চব্বিশপরগনা জেলার বনগাঁর নিকটে টালিখোলা মোড়ের কাছে ইছামতী নদীর পাড়ে অবস্থিত। এখানে বিভূতিভূষণের চেয়ারে বসে থাকা একটি প্রতিকৃতি আছে। একটি অতিথিশালা নির্মাণ করা হয়েছে। এর পাশে আছে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ। এখনও ইছামতীর কলরব অনেক কথায় মনে করিয়ে দেয় সেদিনের। শীতকালে এখানে অনেকে বনভোজন করতে এসে থাকে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.