বিকাশ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোনভিত্তিক অর্থ স্থানান্তর (এমএফএস) সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান। ব্যাঙ্ক হিসাববিহীন ব্যক্তিদের আর্থিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিকাশ চালু করা হয়েছিল। গ্রাহকরা *২৪৭# ডায়াল করে এবং বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে নগদ অর্থ জমা করা, নগদ অর্থ উত্তোলন করা, টাকা পাঠানো, টাকা যোগ করা, রেমিট্যান্স, মোবাইল রিচার্জ, মূল্য প্রদান ও বিল দেয়া ইত্যাদি সেবাগুলো নিতে পারেন। বিকাশ হিসাব খুলতে একজন গ্রাহককে পুর্ণাঙ্গ তথ্য দিয়ে নির্ধারিত গ্রাহক নিবন্ধন ফর্ম (কেওয়াইসি) পূরণ করতে হয়।
ব্যবসার প্রকার | বেসরকারি কোম্পানি |
---|---|
সদরদপ্তর | স্বাধীনতা টাওয়ার, ১, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ জাহাঙ্গীর গেট, ঢাকা ক্যন্টনমেন্ট, ঢাকা ১২০৬, বাংলাদেশ |
প্রধান ব্যক্তি | কামাল কাদির সিইও |
পরিসেবাসমূহ | অর্থ আদান-প্রদান |
ধারক কোম্পানী | ব্র্যাক ব্যাংক, অ্যান্ট ফিনান্সিয়াল, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, মানি ইন মোশন এলএলসি, ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স কর্পোরেশন , সফ্টব্যাংক |
ওয়েবসাইট | www |
চালুর তারিখ | ২০১১ |
বর্তমান অবস্থা | অনলাইন |
বিকাশ আমেরিকার মানি ইন মোশন এলএলসি এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগ হিসাবে ২০১১ সালে শুরু হয়েছিল। এপ্রিল ২০১৩-তে, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সদস্য, ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) বিকাশের নায্য অংশীদার হয় এবং মার্চ ২০১৪-এ বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এর বিনিয়োগকারী হয়। এপ্রিল ২০১৮ সালে চীনের আলিবাবা গ্রুপের অঙ্গসংস্থা আলিপে’র আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ্যান্ট ফিনান্সিয়াল বিকাশের ইক্যুইটি অংশীদার হয়। বিকাশ ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের অংশিদার হিসাবে কাজ করে এবং অন্যান্য ব্যাংক এবং অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করে।
ফরচুন ম্যাগাজিন ২০১৭ সালে তাদের "চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড" তালিকার শীর্ষ ৫০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিকাশকে ২৩ তম স্থানে রেখেছে। এশিয়ামানি পত্রিকাটি বিকাশকে ২০১৮- এর সেরা ডিজিটাল ব্যাংক হিসাবে ঘোষণা করেছে, এবং ওয়ার্ল্ড এইচআরডি কংগ্রেস এটিকে ২০১৭ সালে এশিয়ার সেরা কর্মী হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিকাশকে সমস্ত ব্র্যান্ডের পাশাপাশি এমএফএস ব্র্যান্ডের বিভাগের মধ্যে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম "সেরা ব্র্যান্ড পুরস্কার ২০১৯"-এ ভূষিত করেছে।
বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী রয়েছে। ব্যাংকিং সেবা দেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্যে দেশব্যাপী বিস্তৃত মোবাইল নেটওয়ার্ক একটি দ্রুত ও দক্ষ মাধ্যম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এমন ধারণা থেকেই বাংলাদেশে বিকাশ পরিসেবার উৎপত্তি।
অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতই বাংলাদেশেও মানুষ গ্রামে পরিবারের ভরণপোষণের লক্ষ্যে কাজের জন্যে শহরমুখী হয়। এ ধরনের কর্মজীবিদের জন্যে সহজ ও সুবিধাজনক উপায়ে বাড়িতে টাকা পাঠানোর একটি ব্যবস্থা তৈরির করার প্রয়োজনীয়তা "বিকাশ" উদ্ভাবনের পেছনে একটি অন্যতম মৌলিক ধারণা হিসেবে কাজ করে।
এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের জন্যে ব্যাপক পরিসরে আর্থিক সেবা প্রদান সম্ভব হবে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীকে সুবিধাজনক, সাশ্রয়ী, এবং নির্ভরযোগ্য সেবা প্রদানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কার্যকলাপের সাথে সম্পৃক্ত করা যাবে।
বিকাশ দ্রুত, নিরাপদ, সুবিধাজনক এবং সাশ্রয়ী ভাবে আর্থিক সমাধান করে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় আর্থিক নতুনত্বের মাধ্যমে মানুষকে ক্ষমতায়িত করেছে।
মোবাইল রিচার্জ: মোবাইল রিচার্জ বিকাশ গ্রাহককে তাদের বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে মোবাইল এয়ারটাইম রিচার্জ করতে দেয়। এটি নিজের মোবাইল ফোনের জন্য বা অন্য কারও মোবাইল ফোনের জন্য করা যেতে পারে।
বিকাশের ভাষ্য অনুযায়ী তাদের ৭ কোটি যাচাইকৃত অ্যাকাউন্ট ও ৩৩০,০০০ এজেন্ট আছে। [১]
বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে যে কোনও লেনদেন সহজ, দ্রুত করা যায়। অ্যাপ্লিকেশনটি গ্রাহকদের তাদের লেনদেনের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে। অ্যাপটি ব্যবহার করতে, গ্রাহকের একটি সক্রিয় বিকাশ অ্যাকাউন্ট এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হয়। অ্যাপ্লিকেশনটি ভয়েস সহকারীর সেবা সহায়তায় ইংরেজি এবং বাংলা উভয় ভাষাতেই ব্যবহার করা যেতে পারে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা এখন কিউআর কোড স্ক্যান করে দোকানে দাম দিতে পারবেন এবং অংশীদার ব্যাংকগুলো থেকে ওয়ালেটে অর্থ যোগ করতে পারবেন। অ্যাপটিতে বাংলা পাঠ্য এবং ভয়েস প্রম্পটের মতো ফিচারও রয়েছে, যা শারীরিক জটিলতা এবং অল্প শিক্ষিত ব্যবহারকারীদের পক্ষে সহায়ক হিসাবে কার্যকর হয়েছে। ২০১৯ সালে বিকাশ অ্যাপটি একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং নতুন ফিচার নিয়ে পুনরায় চালু করা[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
গ্রাহকরা তাদের মোবাইল ফোন থেকে *২৪৭# ডায়াল করে বিকাশ সেবা পেতে পারেন। অর্থ প্রেরণ, মোবাইল রিচার্জ, পেমেন্ট, ক্যাশ আউট, পে বিল, ব্যালেন্স চেকিং, বিবরণের অনুরোধ ইত্যাদি সেবাগুলো ইউএসএসডি-এর মাধ্যমে সীমিতভাবে পাওয়া যায়।
অংশীদার মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টগুলি থেকে গ্রাহকরা পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে সরাসরি অর্থ প্রদান করতে পারেন। গ্রাহকরা সাথে সাথে অনলাইন ব্যবসায়ীদের এবং রাইড শেয়ারিং সেবার বিল দেবার সুবিধা পান। তারা তাদের সুবিধাজনক সময়ে কয়েকটি সাধারণ ধাপে তাদের ইউটিলিটি বিলও পরিশোধ করতে পারেন। পে বিলে নতুন সংযোজন হিসেবে আছে ভিসা ক্রেডিট কার্ড বিল পেমেন্ট। এবং নতুন মার্চেন্ট একাউন্ট যুক্ত হয়েছে। যেটাকে পার্সোনাল রিটেল একাউন্ট বলা হয়।
আর্থিক খাতে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মোবাইল প্রযুক্তির সুবিধাকে সত্যিকারের বিশ্ব সমাধানে পরিণত করার লক্ষ্যে, বিকাশ লিমিটেড (বিকাশ) ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বিদেশী সেবা সংস্থার মানি ইন মোশন এলএলসি-এর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের সহায়ক সংস্থা হিসাবে বিকাশ বাংলাদেশে মোবাইল আর্থিক সেবা দানের মাধ্যমে ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে। ২০১৩ সালে, বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের সদস্য, ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) বিকাশের ইক্যুইটি পার্টনার হয়ে ওঠে, এরপরে আসে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। ২০১৮ সালে বিকাশ এবং অ্যান্ট ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস গ্রুপ (আলিপে সিঙ্গাপুর ই-কমার্স প্রাইভেট লিমিটেড), বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন ও পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়ের জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রচারে কৌশলগত অংশীদারিত্বের ঘোষণা করেছে। নভেম্বর, ২০২১ এ, জাপানের সফ্টব্যাংক বিকাশের ২০ শতাংশ অংশীদারিত্ব কিনে। ব্র্যাক ব্যাংকের মালিকানাধীন শেয়ারের শতাংশের এতে পরিবর্তন হয়নি।
শতকরা হারে অংশীদারত্ব যথাক্রমে ব্র্যাক ব্যাংক ৫১ শতাংশের, মানি ইন দ্য মোশন, যুক্তরাষ্ট্র ২৯ শতাংশ, আইএফসির, বিশ্ব ব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান, ৯.৯ শতাংশ এবং আলিবাবা গ্রুপের কোম্পানি আলিপের কাছে বাকি ১০.১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে৷ বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং আলিপে সিংগাপুর প্রেফারেন্স শেয়ার আকারেও বিকাশে বিনিয়োগ করেছে৷
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব সপ্তম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের পাতা ছিঁড়ে রূপান্তরকাম বিরোধী প্রতিবাদ প্রদর্শন করলে তার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আসিফ মাহতাব চাকরিচ্যুত হওয়ার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্র্যাক সংশ্লিষ্ট মোবাইল ভিত্তিক অর্থ স্থানান্তর (এমএফএস) সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান 'বিকাশ' বয়কটের আহ্বান জানান। তাছাড়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রূপান্তরকাম বিরোধী প্রতিবাদের অংশ হিসেবে 'বিকাশ' বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article বিকাশ, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.