ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বা কলেজ অফ ফোর্ট উইলিয়াম ছিল ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর-জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি প্রতিষ্ঠিত একটি প্রাচ্যবিদ্যা শিক্ষাকেন্দ্র। ১৮০০ সালের ০৯ জুলাই কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম চত্বরে এই কলেজ স্থাপিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানে সহস্রাধিক সংস্কৃত, আরবি, ফার্সি, বাংলা, হিন্দি ও উর্দু বই ইংরেজিতে অনূদিত হয়
The College of Fort William emerged as both a centre of research and a publication unit, a cradle of creativity as well as scholarship. Planned originally to train probationer British civilians in the languages and cultures of the subjugated country, the college rendered services tantamount to those of a university in promoting modern Indian literatures, Bengali in particular… Under the leadership of William Carey, the College could also claim credit for drawing together Sanskrit pandits and Perso-Arabic munshis to reshape Bengali prose… The variety of the College’s publication also deserve note. From colloquies and popular stories, chronicles and legends, to definitive editions of literary texts.
Majumdar, Swapan
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপনের উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ আধিকারিকদের ভারতীয় ভাষায় শিক্ষিত করে তোলা। এই প্রক্রিয়ায় বাংলা ও হিন্দির মতো ভারতীয় ভাষাগুলির বিকাশ ত্বরান্বিত হয়। এই সময়টির একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে। ১৮১৫ সালে রাজা রামমোহন রায় পাকাপাকিভাবে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। অনেক ঐতিহাসিক এই সময়টিকেই বঙ্গীয় নবজাগরণের সূচনালগ্ন বলে অভিহিত করেছেন। ১৭৮১ সালে কলকাতা মাদ্রাসা, ১৭৮৪ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি ও ১৮০০ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠা ছিল বৌদ্ধিক চর্চাকেন্দ্র হিসেবে কলকাতা মহানগরীর উত্থানের আদিপর্ব।
যেসকল প্রধান এশীয় ভাষা এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা দেওয়া হত, সেগুলি হল আরবি, হিন্দুস্তানি, ফার্সি, সংস্কৃত ও বাংলা। পরবর্তীকালে মারাঠি ও চীনা ভাষাও শিক্ষা দেওয়া শুরু হয়। কলেজের প্রতিটি বিভাগের শিক্ষকেরা ছিলেন সেযুগের বিশিষ্ট পণ্ডিত ব্যক্তি। ফার্সি বিভাগের প্রধান ছিলেন সরকারি ফার্সি অনুবাদক নেইল বি. এডমন্ডস্টোন। তার সহকারী শিক্ষক ছিলেন সদর দেওয়ানি আদালতের বিচারক জন এইচ. হ্যারিংটন ও সেনা কূটনীতিবিদ ফ্রান্সিস গ্ল্যাডউইন। আরবি শিক্ষা দিতেন বিশিষ্ট আরবিবিদ লেফট্যানেন্ট জন বেইলি। হিন্দুস্তানি ভাষা বিভাগটির দায়িত্ব ছিল বিশিষ্ট ভারততত্ত্ববিদ জন বোর্থউইক গিলক্রিস্টের উপর। বিখ্যাত প্রাচ্যবিদ এইচ. টি. কোলব্রুক ছিলেন সংস্কৃত বিভাগের প্রধান। দেশীয় ভাষা বিভাগের প্রধান ছিলেন বেসরকারি মিশনারি ও একাধিক ভারতীয় ভাষাবিদ উইলিয়াম কেরি। বিভিন্ন ভাষা শিক্ষাদানের জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হলেও সেযুগে কলকাতায় বাংলা শিক্ষা দেওয়ার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। সে যুগের ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা কেবল সংস্কৃত শিক্ষা করতেন। তারা সংস্কৃতকে দেবভাষা মনে করতেন। বাংলা শিক্ষা তারা করতেন না। কলেজ কর্তৃপক্ষ শ্রীরামপুরের ব্যাপটিস্ট মিশনের কেরিকে এই বিভাগে নিয়োগ করেন। কেরি মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারকে হেড পণ্ডিত, রামমোহন বাচস্পতিকে সেকেন্ড পণ্ডিত ও রামরাম বসুকে অন্যতম সহকারী পণ্ডিতের পদে নিয়োগ করেন।
শিক্ষাদানের পাশাপাশি অনুবাদ কর্মকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এই কাজের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ শতাধিক স্থানীয় ভাষাবিদকে নিয়োগ করেছিলেন। সেযুগে বাংলা শিক্ষার জন্য কোনো পাঠ্যপুস্তক পাওয়া যেত না। ১৭৮৯ সালের ২৩ এপ্রিল ক্যালকাটা গেজেট বাংলার অধিবাসীদের নিকট বাংলা ব্যাকরণ ও অভিধান রচনার একটি বিনীত অনুরোধ প্রকাশ করেন।
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবস্থান ছিল কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটের এক কোণে। পরবর্তীকালে ভবনটি মেসার্স ম্যাকেঞ্জি লিয়ল অ্যান্ড কোম্পানি কর্তৃক অধিকৃত হয় এবং এর নাম হয় দ্য এক্সচেঞ্জ। আরও পরবর্তীকালে এই ভবনে বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ের কার্যালয় স্থাপিত হয়। সেযুগে এটি ছিল ফোর্ট উইলিয়ামের প্যারেড গ্রাউন্ডের (বর্তমানে ময়দান) এক ধারে। এইখানেই পরবর্তীকালে রাজভবন (ব্রিটিশ যুগে গভর্নমেন্ট হাউস বা লাটভবন) প্রতিষ্ঠিত হয়।
শিক্ষাদানের প্রয়োজনে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে একটি গ্রন্থাগার গড়ে ওঠে। এই গ্রন্থাগারে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত পুথিপত্র এবং কলেজের নিজস্ব প্রকাশনার বইপত্র রাখা হয়। পরবর্তীকালে বহু ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বই এখানে সংরক্ষণও করা হয়। কলেজ ভেঙে দেওয়ার সময় এই বিরাট গ্রন্থসংগ্রহ নবগঠিত ক্যালকাটা পাবলিক লাইব্রেরিকে (অধুনা ভারতের জাতীয় গ্রন্থাগার) দান করা হয়।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোর্ট অফ ডিরেক্টর কখনই কলকাতায় ট্রেনিং কলেজ চালানো পক্ষপাতী ছিলেন না। কারণ এই ধরনের কলেজ চালানোর জন্য উপযুক্ত অর্থসংস্থান তাঁদের ছিল না। ১৮০৭ সালে একই উদ্দেশে ইংল্যান্ডের হ্যালিবেরিতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলেজ স্থাপিত হয়। যদিও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ভাষাশিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ চালিয়ে যায়।
ব্রিটিশ শাসন দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে, তাদের প্রয়োজনের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তিত হয়। ১৮৩৫ সালে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ইংল্যান্ডে তার গণনির্দেশনার শিক্ষানীতি ঘোষণা করেন। এই নীতির মূল লক্ষ্য ছিল প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনের দিকে দৃষ্টিপাত। তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ডানা ছেঁটে দেন। এরপর ১৮৫৪ সালে ডালহৌসি প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে এই কলেজ ভেঙে দেন।
একাধিক বিশিষ্ট পণ্ডিত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে শিক্ষাদান করেছেন। ভারতীয় ভাষাগুলির বিকাশে এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এঁদের কয়েকজনের তালিকা নিচে দেওয়া হল।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.