দশাবতার: বিষ্ণু দশ প্রধান অবতার

দশাবতার বিষ্ণু দশ প্রধান অবতার। বৈষ্ণব দর্শনে, কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে মর্ত্যে অবতীর্ণ পরম সত্ত্বাকে অবতার নামে অভিহিত করা হয়। বিষ্ণুর (বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কৃষ্ণের) দশ মুখ্য অবতারের সমষ্টিগত নামই দশাবতার। এই দশাবতারের কথা জানা যায় গরুড় পুরাণ থেকে। এই দশ অবতার মানব সমাজে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তির ভিত্তিতে সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হন।

দশাবতার: ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ, তালিকা, বিকল্প তালিকা
বিষ্ণুর দশাবতার (উপরের বাম কোণ থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে) মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, বামন, কৃষ্ণ, কল্কি, বুদ্ধ, পরশুরাম, রামনৃসিংহ, (মধ্যে) কৃষ্ণ

দশাবতারের অধিকাংশই অভিহিত হন লীলা-অবতার নামে। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, প্রথম চার অবতারের আবির্ভাবকাল সত্যযুগ। পরবর্তী তিন অবতার ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হন। অষ্টম ও নবম অবতারের আবির্ভাবকাল যথাক্রমে দ্বাপরযুগকলিযুগ। দশম অবতার কল্কির আবির্ভাব ৪২৭,০০০ বছর পর কলিযুগের অন্তিম পর্বে ঘটবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। বিষ্ণু পুরাণ–এও বলা হয়েছে, কল্কি অবতারের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই কলিযুগের সমাপ্তি ঘটবে। কল্কি দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করে এক নতুন সত্যযুগের সূচনা ঘটাবেন।

ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ

অনুমিত হয়, ভাগবতধর্মের অধীনে বুদ্ধকে বিষ্ণুর অবতাররূপে গ্রহণ গুপ্তযুগে (৩৩০-৫৫০ খ্রিষ্টাব্দ) দুই ধর্মের সম্পর্কের নৈকট্যের ফলস্রুতি। এই কারণে মহাযান বৌদ্ধধর্মকে অনেক সময় বুদ্ধ-ভাগবতধর্ম বলা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, গবেষকরা মনে করেন যে এই যুগেই হিন্দুধর্মে অবতারতত্ত্ব পূর্ণ বিকাশ লাভ করে।

ঐতিহাসিক বিষ্ণুধর্মের বিবর্তনের ফলে বর্তমানকালের জটিল বৈষ্ণবধর্মের উদ্ভব। বিষ্ণু, নারায়ণ, বাসুদেব ও কৃষ্ণের আরাধনাকেন্দ্রিক এই ধর্মবিশ্বাস প্রতিষ্ঠালাভ করে ভগবদ্গীতার যুগে (খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী-খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দী)।

দ্বাদশ অলবর নামে পরিচিত সন্তেরা তাদের আধ্যাত্মিক সঙ্গীতের মাধ্যমে এই সম্প্রদায়কে সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌঁছিয়ে দিয়েছিলেন। পূর্বকালের অলবরগণ বিষ্ণুর অবতারদের পৃথকভাবে তালিকাভুক্ত করেননি। এমনকি তারা কৃষ্ণকেও অবতাররূপে পৃথক করেননি। তামিল ভাষায় তাদের বিষ্ণু ও কৃষ্ণ স্তুতিগান নালয়িরা (দিব্য প্রবন্ধ) নামে পরিচিত।

তালিকা

দশাবতার: ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ, তালিকা, বিকল্প তালিকা 
দশাবতার (পুথিচিত্র): (বামদিক থেকে) মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, বলরাম, বুদ্ধ, কল্কি।

বিকল্প তালিকা

দশাবতার: ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ, তালিকা, বিকল্প তালিকা 
গোয়ার শ্রীবালাজি মন্দিরের দরজায় দশাবতার চিত্র; (উপরের বামকোণ থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে) মৎস্যম নৃসিংহ, পরশুরাম, রাম, কৃষ্ণ, কল্কি, বামন, বুদ্ধরূপী বিঠোবা, বরাহ ও কূর্ম।

দক্ষিণ ভারতে বলরামকে দশাবতারের তালিকাভুক্ত করা হয়। এই মত অনুসারে, বুদ্ধের অবতারত্ব স্বীকৃত নয়। কোনো কোনো গ্রন্থে আবার কৃষ্ণকে অবতার তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে। একাধিক মধ্যযুগীয় ধর্মসম্প্রদায়ে কৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান নামে পরিচিত। গৌড়ীয় বৈষ্ণব, বল্লভ সম্প্রদায়, ও নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের মতে তিনি সকল অবতারের উৎস। নিম্বার্ক মতে, কৃষ্ণ আবার শুধু সকল অবতারের উৎসই নন, তিনি স্বয়ং বিষ্ণুরও উৎস। এই বিশ্বাসের মূলে রয়েছে "ভাগবতের একটি প্রসিদ্ধ উক্তি" (১।৩।২৮)।

কোনো কোনো তালিকা অনুসারে, বলরাম কৃষ্ণের জ্যেষ্ঠভ্রাতা এবং গৌতম বুদ্ধের স্থলে বিষ্ণুর নবম অবতার। ভাগবত পুরাণ –এর মতে দ্বাপরযুগে শেষনাগের অবতার রূপে বলরামের আবির্ভাব। অধিকাংশ বৈষ্ণব সম্প্রদায়ে তিনি অবতাররূপে পূজিত হন। এই সকল তালিকায় গৌতম বুদ্ধের নাম দেখা যায় না।

মহারাষ্ট্র ও গোয়ার ঐতিহ্য অনুসারে পঞ্চাঙ্গ ও বিভিন্ন মন্দির স্থাপত্যে বিঠোবা বিষ্ণুর নবম অবতার বুদ্ধরূপে গণ্য হন। মহারাষ্ট্রের সন্তকবিরাও বিঠোবাকে বুদ্ধের রূপে বন্দনা করেছেন।

জয়দেবের দশাবতার স্তোত্র

জয়দেব রচিত প্রলয়পয়োধিজলে (গীতগোবিন্দম্ কাব্যের প্রথম সর্গের প্রথম গীত, দশাবতার স্তোত্র নামে সমধিক পরিচিত) স্তোত্রে দশটি পৃথক স্তবকে দশ অবতারের বিবরণদানের পর নিম্নোক্ত শ্লোকে দশাবতারের কীর্তির একটি সুসংবদ্ধ তালিকা প্রদান করা হয়েছে:

    বেদানুদ্ধরতে জগন্তি বহতে ভূগোলমুদ্বিভ্রতে
    দৈত্যং দারয়তে বলিং ছলয়তে ক্ষত্রক্ষয়ং কুর্বতে।
    পৌলস্ত্যং জয়তে হলং কলয়তে কারুণ্যমাতন্বতে
    ম্লেচ্ছান মূর্চ্ছয়তে দশাকৃতিকৃতে কৃষ্ণায় তুভ্যং নমঃ।।

আরও দেখুন

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

সাধারণ

গবেষণা

Tags:

দশাবতার ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণদশাবতার তালিকাদশাবতার বিকল্প তালিকাদশাবতার জয়দেবের স্তোত্রদশাবতার আরও দেখুনদশাবতার পাদটীকাদশাবতার তথ্যসূত্রদশাবতার বহিঃসংযোগদশাবতারঅবতারকৃষ্ণগরুড় পুরাণবিষ্ণুবৈষ্ণব

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

জার্মানিঠাকুর অনুকূলচন্দ্ররামায়ণবদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবাদের তালিকাকোষ (জীববিজ্ঞান)দুর্গাপূজাজাকির নায়েকদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধবাংলাদেশের জেলাসমূহের তালিকাগুগলহামাসফিল সল্টবেদথ্যালাসেমিয়াসৌদি আরবের শহর ও নগরের তালিকাইব্রাহিম (নবী)মূত্রনালীর সংক্রমণক্যাটরিনা কাইফপশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকাআলী খামেনেয়ীইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্মরামকৃষ্ণ পরমহংসবাঙালি সংস্কৃতিমুখমৈথুনহিমেল আশরাফসামরিক ব্যয় অনুযায়ী দেশের তালিকামধুমতি এক্সপ্রেসবাংলাদেশী অভিনেত্রীদের তালিকাবাংলাদেশের উপজেলার তালিকাপরীমনিআগুনসুকান্ত ভট্টাচার্যইন্দোনেশিয়াবহাগ বিহুপ্রীতি জিনতাদৈনিক প্রথম আলোফেসবুকপহেলা বৈশাখজাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দাকারকমহানগর প্রভাতী/গোধূলী এক্সপ্রেসশশাঙ্কবাংলার শক্তিপীঠের তালিকাইউনিলিভারসতীদাহবাউল সঙ্গীতঅশোকফিলিস্তিনের ইতিহাসদীন-ই-ইলাহিরাম মন্দির, অযোধ্যাজর্ডানসমকামিতাস্পিন (পদার্থবিজ্ঞান)স্বস্তিকানরসিংদী জেলাবাংলা বাগধারার তালিকাসেজদার আয়াতঈদ মোবারকরাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের তালিকাকুরআনহেপাটাইটিস বিকস্তুরীবর্তমান (দৈনিক পত্রিকা)জামালপুর জেলাপর্যায় সারণিইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীমদঅনাভেদী যৌনক্রিয়াযৌনপল্লিকুরআনের ইতিহাসনকশীকাঁথা এক্সপ্রেসহিন্দুধর্মনরেন্দ্র মোদীযোনিম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাব🡆 More