চাশতের নামাজ

চাশতের নামাজ বা দোহার সালাত বা সালাতুদ দোহা (আরবি: صلاة الضحى) হল ফজর ও যোহরের নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ার জন্য নফল/ঐচ্ছিক নামাজ। । আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে তিনটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন – যা আমি মৃত্যু পর্যন্ত কখনো ছাড়বো না। ১.

প্রতি মাসের তিনটি রোজা ২. চাশতের নামাজ ৩. এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিতর নামাজ আদায় করা।’ (বুখারী, হাদিস : ১৩৭৫; মুসলিম, হাদিস : ৭২১)

চাশতের নামাজ
নামাযে সেজদারত আবস্তা।

সময়

হাদীসে বলা হয়েছে ‘চাশতের নামাজ পড়া হবে যখন সূর্যের তাপ প্রখর হয়।’ (সহীহ্‌ মুসলিম, হাদীস : ৭৪৮) বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন দিনের এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ, দিনের চার ভাগের একভাগ পার হয় তখন এই নামাজ আদায় করা উত্তম। কাজেই, চাশতের নামাজ বা সালাতুদ্‌ দুহা আদায় করার উত্তম সময়টি হচ্ছে সূর্যোদয় এবং যোহর নামাযের মধ্যবর্তী সময়টা। অপর এক হাদীসে আছে আল্লাহর রসূল বলেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতে পড়ে, অতঃপর সূর্যোদয় অবধি বসে আল্লাহর যিক্‌র করে তারপর দুই রাকআত নামায পড়ে, সেই ব্যক্তির একটি হজ্জ ও উমরার সওয়াব লাভ হয়।” বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রসূল বললেন, “পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ।” অর্থাৎ কোন অসম্পূর্ণ হজ্জ-উমরার সওয়াব নয় বরং পূর্ণ হজ্জ-উমরার সওয়াব। (তিরমিযী, সুনান, সহিহ তারগিব ৪৬১নং)

রাকাত

চাশতের নামাজ কমপক্ষে দুই রাকাত পড়তে হয়। এছাড়া চার, আট এবং বারো রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। উম্মেহানী কর্তৃক বর্ণিত, মহানবী(স:) মক্কা বিজয়ের দিন তাঁর ঘরে চাশতের সময় ৮ রাকআত নামায পড়েছেন। (বুখারী, মুসলিম,  মিশকাত ১৩০৯নং)। আয়েশা(রা:) বলেন, মহানবী(স:) ৪ রাকআত চাশতের নামায পড়তেন এবং আল্লাহর তওফীক অনুসারে আরও বেশি পড়তেন। (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম,  ইমা, মিশকাত ১৩১০নং) তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি চাশতের ৪ রাকআত এবং প্রথম নামায (যোহরের) পূর্বে ৪ রাকআত পড়বে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে” (ত্বাবরানী আওসাত্ব, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৩৪৯নং)। আয়েশা(রা:) ৮ রাকআত চাশত পড়তেন আর বলতেন, যদি আমার মা-বাপকেও জীবিত করে দেওয়া হয় তবুও আমি তা ছাড়ব না (মালেক, মুঅত্তা, মিশকাত ১৩১৯নং)। হযরত আবু দারদা(রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল(স:) বলেছেন, “যে ব্যক্তি চাশতের দু রাকআত নামায পড়বে সে উদাসীনদের তালিকাভুক্ত হবে না। যে ব্যক্তি চার রাকআত পড়বে সে আবেদগণের তালিকাভুক্ত হবে। যে ব্যক্তি ছয় রাকআত পড়বে তার জন্য ঐ দিনে (আল্লাহ তার অমঙ্গলের বিরুদ্ধে) যথেষ্ট হবেন। যে ব্যক্তি আট রাকআত পড়বে আল্লাহ তাকে একান্ত অনুগতদের তালিকাভুক্ত করবেন। যে ব্যক্তি বারো রাকআত পড়বে তার জন্য আল্লাহ জান্নাতে একটি গৃহ্‌ নির্মাণ করবেন। এমন কোন দিন বা রাত্রি নেই যাতে আল্লাহর কোন অনুগ্রহ নেই; তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা দানস্বরুপ উক্ত অনুগ্রহ দান করে থাকেন। আর তাঁর যিক্‌রে প্রেরণা দান করা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে কোন বান্দার প্রতিই করেননি।” (ত্বাবারানীর কাবীর, সহিহ তারগিব ৬৭১ নং)

উপকারীতা

চাশতের নামাজ সম্পর্কে হাদিসে অনেক ফজিলতের কথা বলা হয়েছে। যেমনঃ

  1. হযরত আবু যার হতে বর্ণিত, নবী বলেন, “প্রত্যহ্‌ সকালে তোমাদের প্রত্যেক অস্থি-গ্রন্থির উপর (তরফ থেকে) দাতব্য সদকাহ্‌ রয়েছে; সুতরাং প্রত্যেক  তাসবীহ্‌ হল সদকাহ্‌ প্রত্যেক তাহ্‌মীদ (আলহামদু লিল্লা-হ্‌ পাঠ) সদকাহ্‌, প্রত্যেক তাহ্‌লীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ্‌ পাঠ) সদকাহ্‌, প্রত্যেক তকবীর (আল্লা-হু আকবার পাঠ) সদকাহ্‌, সৎকাজের আদেশকরণ সদকাহ্‌ এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধকরণও সদকাহ্‌। আর এসব থেকে যথেষ্ট হবে চাশতের দুই রাকআত নামায।” (মুসলিম, হাদীস নাম্বার ৭২০)
  2. হযরত আবু উমামা কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহ রসূল বলেন “যে ব্যক্তি কোন ফরয নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে স্বগৃহে থেকে ওযূ করে (মসজিদের দিকে) বের হয় সেই ব্যক্তির সওয়াব হয় ইহ্‌রাম বাঁধা হাজীর ন্যায়। আর যে ব্যক্তি কেবলমাত্র চাশতের নামায পড়ার উদ্দেশ্যেই বের হয়, তার সওয়াব হয় উমরাকারীর সমান। এক নামাযের পর অপর নামায; যে দুয়ের মাঝে কোন অসার (পার্থিব) ক্রিয়াকলাপ না থাকে তা এমন আমল যা  ইল্লিয়্যীনে (সৎলোকের সৎকর্মাদি লিপিবদ্ধ করার নিবন্ধ গ্রন্থে) লিপিবদ্ধ করা হয়।” (আবূদাঊদ, সুনান, সহিহ তারগিব ৩১৫নং)
  3. হযরত বুরাইদাহ্‌ কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, “মানবদেহে ৩৬০টি গ্রন্থি আছে। প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ঐ প্রত্যেক গ্রন্থির তরফ থেকে দেয় সদকাহ্‌ রয়েছে।” সকলে বলল, ‘এত সদকাহ্‌ দিতে আর কে সক্ষম হবে, হে আল্লাহর রসূল?’ তিনি বললেন, “মসজিদ হতে কফ (ইত্যাদি নোংরা) দূর করা, পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু (কাঁটা-পাথর প্রভৃতি) দূর করা এক একটা সদকাহ্‌। যদি তাতে সক্ষম না হও তবে দুই রাকআত চাশতের নামায তোমার সে প্রয়োজন পূর্ণ করবে।” (আহ্‌মদ,ও শব্দগুলি তাঁরই, আবু দাঊদ, ইবনে খুযাইমাহ্‌, ইবনে হিব্বান, সহীহ তারগীব হাদীস নাম্বার ৬৬১)
  4. হযরত আব্দুল্লাহ বিন আম্‌র বিন আস বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল এক যোদ্ধাবাহিনী প্রেরণ করেন। এই যুদ্ধ সফরে তারা বহু যুদ্ধলব্ধ সম্পদ লাভ ক’রে খুব শীঘ্রই ফিরে আসে। লোকেরা তাদের যুদ্ধক্ষেত্রের নিকটবর্তিতা, লব্ধ সম্পদের আধিক্য এবং ফিরে আসার শীঘ্রতা নিয়ে সবিময় বিভিন্ন আলোচনা করতে লাগল। তা শুনে আল্লাহর রসূল বললেন, “আমি কি তোমাদেরকে ওদের চেয়ে নিকটতর যুদ্ধক্ষেত্র, ওদের চেয়ে অধিকতর লব্ধ সম্পদ এবং ওদের চেয়ে শীঘ্রতর ফিরে আসার কথার সন্ধান বলে দেব না? যে ব্যক্তি সকালে ওযু করে চাশতের নামাযের উদ্দেশ্যে মসজিদে যায় সে ব্যক্তি ওদের চেয়ে নিকটতর যুদ্ধক্ষেত্রে যোগদান করে, ওদের চেয়ে অধিকতর সম্পদ লাভ করে এবং ওদের চেয়ে অধিকতর শীঘ্র ঘরে ফিরে আসে।” (আহ্‌মদ, ত্বাবারানী, সহীহ তারগীব হাদীস নাম্বার ৬৬৩)
  5. হযরত উক্ববাহ্‌ বিন আমের জুহানী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আল্লাহর রসূল বলেছেন, “আল্লাহ আয্‌যা অজাল্ল্‌ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! দিনের প্রথমাংশে তুমি আমার জন্য চার রাকআত নামায পড়তে অক্ষম হ্‌য়ো না, আমি তার প্রতিদানে তোমার দিনের শেষাংশের জন্য যথেষ্ট হ্‌ব।” (আহ্‌মদ, আবু য়্যালা, সহীহ তারগীব ৬৬৬ নং)

কুসংস্কার

চাশতের নামাজ নিয়ে অনেক [কুসংস্কার] প্রচলিত আছে সমাজে। এই নামাজে সূরা শামস ও যুহা পড়ার হাদীসটি মিথ্যা (সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ৩৭৭৪নং)। তাছাড়া চাশতের নামায পড়লে ‘বাবুয যুহা’ দিয়ে জান্নাতে যাওয়ার হাদীসটিও সহীহ নয়। (দেখুন : যাদুল মাআদ, ইবনুল কাইয়েম ১/৩৪৯ টীকা নং ১)

তথ্যসূত্র

Tags:

চাশতের নামাজ সময়চাশতের নামাজ রাকাতচাশতের নামাজ উপকারীতাচাশতের নামাজ কুসংস্কারচাশতের নামাজ তথ্যসূত্রচাশতের নামাজআবু হুরাইরাহআরবি ভাষানফল নামাজফজরের নামাজবিতর নামাজযোহরের নামাজসহীহ বুখারী

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

পাণ্ডু রাজার ঢিবিকাবাবিরাট কোহলিরামকৃষ্ণ পরমহংসপশ্চিমবঙ্গযৌনাসননোয়াখালী জেলামার্ক জাকারবার্গভাষামহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রমুহাম্মাদের বংশধারামক্কা বিজয়আসমানী কিতাবইনডেমনিটি অধ্যাদেশধর্ষণমুখমৈথুনইন্দিরা গান্ধীমহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলদৈনিক ইনকিলাবফেনী জেলাত্রিপুরাসুনীল গঙ্গোপাধ্যায়আদমঅরিজিৎ সিংঅসহযোগ আন্দোলন (ব্রিটিশ ভারত)স্পিন (পদার্থবিজ্ঞান)আল্লাহমুদ্রাস্ফীতিজবাতুলসীমুহাম্মাদের সন্তানগণপুলিশবৃষ্টিজান্নাতপারমাণবিক অস্ত্রশীর্ষে নারী (যৌনাসন)পশ্চিমবঙ্গে ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪রবিশ্রীনিবাসন সাই কিশোররাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)পশ্চিমবঙ্গের জেলাআলাউদ্দিন খিলজিপ্রাক-ইসলামি আরবের নারীমাশাআল্লাহসুকুমার রায়ভোটদেওয়ানরূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রদুধখন্দকের যুদ্ধদর্শনডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসিজলবায়ু পরিবর্তনের রাজনীতিহিজরতবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকোকা-কোলামেঘনাদবধ কাব্যস্যাম কারেনএস এম শফিউদ্দিন আহমেদতামান্না ভাটিয়াআল্লাহর ৯৯টি নামদারাজঅপু বিশ্বাসএ. পি. জে. আবদুল কালামমুআল্লাকারক্তকারবালার যুদ্ধজৈন ধর্মইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজিবাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রসমূহের তালিকামিশ্র অর্থনীতিদশাবতারউপসর্গ (ব্যাকরণ)পায়ুসঙ্গমবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মরত জেনারেলদের তালিকাএল ক্লাসিকোপ্রিমিয়ার লিগ🡆 More