চালচিত্র

চালচিত্র হল সাবেকি দুর্গা প্রতিমার উপরিভাগে অঙ্কিত দেবদেবীর কাহিনিমূলক পটচিত্র, যা প্রধানত অর্ধগোলাকৃতি হয়। চালচিত্রে পঞ্চানন শিব, মহিষাসুর বধ, নন্দীভৃঙ্গী, শুম্ভ-নিশুম্ভের যুদ্ধ প্রভৃতি কাহিনির ধারায় বর্ণিত থাকে। এই চিত্রকলার একটি নিজস্ব রূপরেখা ও শৈলীগত দৃঢ় বুনিয়াদ রয়েছে। শিল্পীদের ভাষায় এই চালচিত্র হল ‘‘পট লেখা’’, যা বাংলার পটচিত্রের একটি বিশেষ ধারা।

চালচিত্র
চালচিত্র
চালচিত্র, সাবেকি দুর্গা প্রতিমার উপরিভাগে অঙ্কিত দেবদেবীর কাহিনিমূলক পটচিত্র
অন্য নামপট লেখ, দুর্গা চালা, দেবীচাল
ব্যাকরণগত অর্থচালচিত্র শব্দের চাল শব্দের অর্থ আচ্ছাদন। প্রতিমার চালির উপরে আঁকা হয় বলে এর নাম চালচিত্র
উপজীব্যশিবদুর্গা, কৈলাস, শিব অনুচর নন্দীভৃঙ্গী, মহিষাসুর বধ, দশাবতার
প্রাচীনত্বআনুমানিক ১২০০ বছর
তৈরির উপকরণবাঁশ, মোটা কাপড়, কাদা, রং
সম্পর্কিত উৎসবনবদ্বীপের শাক্তরাস, দুর্গা পূজা
এছাড়া

নামকরণ

চালচিত্র 
চালচিত্র সহ নবদ্বীপের ভদ্রকালী মাতার হাতে আঁকা চিত্র

চালচিত্র শব্দের ‘‘চাল’’ শব্দের অর্থ আচ্ছাদন। প্রতিমার চালির উপরে আঁকা হয় বলে এর নাম চালচিত্র। বীরভূমের দুর্গা পটের উপর আচ্ছাদন হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়। শিল্পীদের ভাষায় এই চালচিত্র হল আসলে ‘‘পটলেখা’’। এটি দুর্গা চালা বা দেবীচাল নামেও পরিচিত।

প্রকারভেদ

প্রতিমার চালির বিভিন্নতার উপর নির্ভর করে প্রতিমার চালচিত্রকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন বাংলা চালি, খোপচালি, টানাচৌড়ি, মঠচৌড়ি ও মার্কিনিচালিতে চালচিত্রের বিভিন্নতা দেখা যায়। আবার চালচিত্রের বিষয়বস্তু অনুসারে একে কয়েকভাগে ভাগ করা যায়, যেমন কৈলাসী, দশাবতারী, বৃন্দাবনী, রামচন্দ্রী ইত্যাদি। তবে বাংলার বনেদি বাড়ির প্রতিমায় কৈলাসী ও দশাবতারী চালচিত্রের অধিক প্রচলন।

বিষয়বস্তু

চালচিত্র 
চালচিত্রসহ সাবেকি দুর্গা প্রতিমা

চালচিত্রের মূল বিষয়বস্তু হল শিবদুর্গা, কৈলাস, শিব অনুচর নন্দীভৃঙ্গী, মহিষাসুর বধ, দশাবতার ইত্যাদি। বীরভূম জেলার হাটসেরান্দির সূত্রধর সমাজে এই ধরনের এক বিশেষ চিত্রসম্ভার দেখা যায়, যাকে দুর্গা পট বলা হয়। তবে এখানে দুর্গা প্রতিমার বদলে দুর্গা পটেই পূজার্চনা করা হয়। দুর্গা পটের উপর অর্ধবৃত্তাকার চালচিত্র থাকে। এই ধরনের চালচিত্রে রাম, সীতা, শিব, নন্দীভৃঙ্গী, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শুম্ভ-নিশুম্ভ অঙ্কিত থাকে। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির রাজরাজেশ্বরী দুর্গার চালচিত্রের মধ্যে অনন্যতা লক্ষ্য করা যায়। এখানকার চালচিত্রে মাঝখানে থাকে পঞ্চানন শিব ও পাশে পার্বতী, তার একপাশে থাকে দশমহাবিদ্যা ও অন্য পাশে দশাবতার। ভারতীয় সংগ্রহালয়ের প্রাক্তন অধিকর্তা বলেছেন- বাংলায় বিভিন্ন ধরনের চালচিত্রের প্রয়োগ আছে ও তাদের মধ্যে বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। মঠচৌরি চালির চালচিত্রে দেবীর অবয়বগুলি থাকে উপর থেকে নিচে, একটির নিচে অপরটি। আবার সাবেক বাংলা চালিতে সেগুলো থাক থাক করে আলাদা আলাদা ভাবে থাকে। অন্য দিকে, মার্কিনি চালিতে পটচিত্রগুলি থাকে পাশাপাশি।

প্রাচীনত্ব

চালচিত্র 
চারিচারাপাড়ার ভদ্রকালী মাতা ও প্রতিমার চালচিত্র, নবদ্বীপ

বাংলায় প্রতিমা নির্মান ধারার দুটি উল্লেখযোগ্য রীতি হল বিষ্ণুপুর রীতির প্রতিমা ও কংসনারায়ণ রীতির প্রতিমা। এর মধ্যে অধিক জনপ্রিয় কংসনারায়ণ রীতির প্রতিমার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল চালচিত্র। সেই সময়েও প্রতিমার পিছনে অর্ধবৃত্তাকার চালির ব্যবহার ছিল। নবদ্বীপ শাক্তরাসের ৩০০-৪০০ বছরের প্রাচীন প্রতিমাগুলিতে চালচিত্রের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বৈষ্ণব রাসের সাথে সাথে যখন শাক্ত রাসের প্রচলন হয় তখন সুবিশাল দেবীচালা বা চালচিত্রের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেলেও বর্তমানে অনেক ঠাকুরেই চালচিত্রের ঐতিহ্য ফিরেছে। নবদ্বীপের চালচিত্র শিল্পী তপন ভট্টাচার্য বলেছেন-

ঐতিহ্য

কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির রাজরাজেশ্বরী দুর্গায় চালচিত্রের ব্যবহারে অনন্যতা লক্ষ্য করা যায়। কলকাতার দর্পনারায়ণ ঠাকুর স্ট্রিটের বৈষ্ণবদাস মল্লিক ও হাওড়ার রামকৃষ্ণপুরের বসু পরিবারে পট লেখার ঐতিহ্য এখনও ঠিকে আছে। উত্তর কলকাতার চোরাবাগানের রামচাঁদ শীল পরিবারের বিমানবিহারী শীল চালচিত্র প্রসঙ্গে বলেছেন-

কৃষ্ণনগরের চালচিত্র শিল্পী বিশ্বনাথ পাল কলকাতার বিভিন্ন বনেদি পরিবারে পট লেখেন। তিনি বলেছেন-

পদ্ধতি

প্রতিমার চালির উপরিভাগে অর্ধগোলাকৃতি বাঁশের খাঁচা করে তার উপর কাদালেপা এক প্রস্থ মোটা কাপড় টানটান করে লাগিয়ে কাপড়ের বারতি অংশ বাঁশের খাঁচার পিছন দিকে মুড়ে দেওয়া হয়। কাদালেপা কাপড়টি শুকিয়ে গেলে তার উপর খড়ি গোলার কয়েকটি আস্তরণ দেওয়া হয়। এর উপর পরিকল্পিত কাহিনিমূলক চিত্র আঁকা হয়।

ব্যবহৃত রঙ

রঙ করার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহৃত হয়, যা বাংলার পটচিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। চালচিত্রে সাধারণত নীল, হলুদ, সবুজ, লাল, খয়েরি, কালো ও সাদা রঙ ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে চালচিত্রের অঙ্কনরীতি বাংলার পটচিত্রের অনুকরণ করেছে। চালচিত্রে সাদা রঙের জন্য খড়িমাটি, হলুদ রঙের জন্য পিউরি, নীলের জন্য খেতের নীল, কালো রঙের জন্য ভুষোকালি ও লাল রঙের জন্য মেটে সিন্দুর ব্যবহার করা হয়।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

Tags:

চালচিত্র নামকরণচালচিত্র প্রকারভেদচালচিত্র বিষয়বস্তুচালচিত্র প্রাচীনত্বচালচিত্র ঐতিহ্যচালচিত্র পদ্ধতিচালচিত্র আরও দেখুনচালচিত্র তথ্যসূত্রচালচিত্রদুর্গাপটচিত্রমহিষাসুরশিবশুম্ভ ও নিশুম্ভ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

দুর্নীতি দমন কমিশন (বাংলাদেশ)ব্যাকটেরিয়ামানিক বন্দ্যোপাধ্যায়প্রেমালু১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনকারাগারের রোজনামচাঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনবাবরবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ২০২৩দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাতুলসীবাঙালি হিন্দু বিবাহনেতৃত্বসুলতান সুলাইমানঅভিস্রবণশেখ হাসিনাতারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোপাকিস্তানফারাক্কা বাঁধ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপকোষ (জীববিজ্ঞান)চিকিৎসকচৈতন্যচরিতামৃতরামপ্রসাদ সেনরামজসীম উদ্‌দীনপ্রথম মালিক শাহময়মনসিংহইবনে বতুতাজব্বারের বলীখেলাআসসালামু আলাইকুমপ্রাকৃতিক সম্পদডায়াজিপামজনসংখ্যা অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাখিলাফতমেটা প্ল্যাটফর্মসবাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলবারো ভূঁইয়ামানবজমিন (পত্রিকা)টুইটারতাজমহলবাংলাদেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার তালিকাডিপজলএল নিনোন্যাটোনাদিয়া আহমেদএ. পি. জে. আবদুল কালামইতিহাসবিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবসব্যঞ্জনবর্ণবৃষ্টিসমকামিতামহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলপ্লাস্টিক দূষণমহাস্থানগড়ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরাহৃৎপিণ্ডঊষা (পৌরাণিক চরিত্র)বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের তালিকা২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়বাগদাদ অবরোধ (১২৫৮)স্বরধ্বনিজাতীয় সংসদ ভবনখুলনা বিভাগআলিইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগইসলামের ইতিহাসরাজা মানসিংহদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধইংরেজি ভাষাকক্সবাজারবাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরদের তালিকাবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়🡆 More