গৌতম বুদ্ধ

গৌতম বুদ্ধ হলেন বৌদ্ধধর্মের ২৮তম বুদ্ধ ও একজন সম্যাক সম্বুুদ্ধ (তপস্বী) ও জ্ঞানী, যাঁর তত্ত্ব অনুসারে বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তিত হয়। তিনি সিদ্ধার্থ গৌতম, শাক্যমুনি বুদ্ধ অথবা ‘বুদ্ধ’ উপাধি অনুযায়ী শুধুমাত্র বুদ্ধ নামেও পরিচিত। অনুমান করা হয়, তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৬২৫ অব্দে একদা প্রাচীন ভারতের পূর্বাঞ্চলে জীবিত ছিলেন এবং শিক্ষাদান করেছিলেন। গৌতম বুদ্ধ ভোগবাসনা চরিতার্থ-করণ এবং তার অঞ্চল জুড়ে প্রচলিত শ্রমণ আন্দোলনের আদর্শ অনুসারে অনুসারীদের কঠোর তপস্যার মধ্যে মধ্যপন্থা শিক্ষা দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি মগধ এবং কোশলসহ পূর্ব ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও শিক্ষাদান করেছিলেন। তিনি মিথ্যাদৃষ্টি, অজ্ঞানতা, তৃষ্ণা, পুনর্জন্ম এবং কষ্ট থেকে মুক্ত হয়ে পরম সুখ নির্বাণের পথ শিখিয়েছিলেন।

গৌতম বুদ্ধ
গৌতম বুদ্ধ
ভগবান বুদ্ধ
অন্য নামসিদ্ধার্থ গৌতম, সিদ্ধাত্থ গোতম, শাক্যমুণি বুদ্ধ,শাক্যসিংহ
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
সিদ্ধার্থ গৌতম

আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৬ অথবা ৪৮৬অব্দ
লুম্বিনী, শাক্য গণরাজ্য (বৌদ্ধ মতানুযায়ী)
মৃত্যুমহাপরিনির্বাণ লাভ আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৩ অথবা ৪০০ অব্দে (৮০ বছর)
কুশীনগর, মল্ল গণরাজ্য (বৌদ্ধ মতানুযায়ী)
দাম্পত্য সঙ্গীযশোধরা
সন্তান
পিতামাতা
যে জন্য পরিচিতবৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতা
অন্য নামসিদ্ধার্থ গৌতম, সিদ্ধাত্থ গোতম, শাক্যমুণি বুদ্ধ,শাক্যসিংহ
ঊর্ধ্বতন পদ
পূর্বসূরীকস্‌সপ বুদ্ধ
উত্তরসূরীমৈত্রেয় বুদ্ধ
গৌতম বুদ্ধ
চীনা নাম
চীনা 佛陀
বর্মী নাম
বর্মী ভাষাဂေါတမ ဗုဒ္ဓ
ভিয়েতনামীয় নাম
ভিয়েতনামী বর্ণমালা Tất-đạt-đa Cồ-đàm
থাই নাম
থাইพระพุทธเจ้า
কোরীয় নাম
হাঙ্গুল부처
জাপানি নাম
কাঞ্জি 釈迦
হিরাগানা しゃか
বাংলা নাম
বাংলাগৌতম বুদ্ধ
নেপালি নাম
নেপালিगौतम बुद्ध
san নাম
sanगौतम बुद्ध

বৌদ্ধরা তাকে সেই বোধিপ্রাপ্ত বা দিব্য শিক্ষক মনে করে, যিনি সম্পূর্ণ বুদ্ধত্ব অর্জন করেছেন এবং নিজের অন্তর্দৃষ্টির কথা সবাইকে জানিয়ে দিয়ে চেতন সত্ত্বাদের পুনর্জন্ম এবং দুঃখের সমাপ্তি ঘটাতে সাহায্য করেছেন। বৌদ্ধরা বিশ্বাস করেন যে গৌতম বুদ্ধের জীবনকাহিনী, কথোপকথনের বিবরণ, সন্ন্যাস নিয়মাবলী তার মৃত্যুর পর হতে সঙ্গায়নের মাধ্যমে বুদ্ধের বাণী সংরক্ষণ করে রাখতেন। ইতিহাসে এ রকম এই পর্যন্ত ছয়টি সঙ্গায়ন হয়েছে। প্রথম সঙ্গায়ন হয় বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের পর রাজা অজাতশত্রুর পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতের সপ্তপর্ণী গুহায় এবং এর দ্বিতীয়টি হয় বৈশালীতে কালাশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় । তৃতীয়টি হয় সম্রাট অশোক মৌর্যের পৃষ্ঠপোষকতায়। এভাবে বড় বড় রাজা ও শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় ত্রিপিটক বুদ্ধবচন সংরক্ষিত হয়ে আসছে।

ঐতিহাসিক সিদ্ধার্থ গৌতম

গৌতম বুদ্ধ 
বুদ্ধের সমসাময়িক প্রাচীন ভারতের রাজ্য ও শহরগুলির মানচিত্র

বুদ্ধের জীবনের ঐতিহাসিক তথ্য সম্পর্কে কোনও প্রকার দুর্বল দাবি উত্থাপন করতে গবেষকরা দ্বিধাবোধ করেন। তাদের অধিকাংশই মেনে নিয়েছেন যে, বুদ্ধ মহাজনপদের যুগে মগধ সাম্রাজ্যের শাসক বিম্বিসারের রাজত্বকালে জীবিত ছিলেন, শিক্ষাদান করেছিলেন এবং একটি ভিক্ষু সংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন (আনু. ৫৫৮ – আনু. ৪৯১ BCE), তার মৃত্যু হয়েছিল বিম্বিসারের উত্তরসূরি অজাতশত্রু শাসনকালের প্রথম দিকে। সেই হিসেবে বুদ্ধ ছিলেন জৈন তীর্থঙ্কর মহাবীরের কনিষ্ঠ সমসাময়িক। বৈদিক ব্রাহ্মণ্যবাদ ছাড়াও বুদ্ধের জীবন ছিল আজীবক, চার্বাক, জৈনধর্ম ও অঞ্জন প্রভৃতি প্রভাবশালী শ্রমণ চিন্তাধারার উদয়কালের সমসাময়িক। দীর্ঘ নিকায় গ্রন্থে ব্রহ্মজাল সুত্রে এই ধরনের বাষট্টিটি মতবাদের কথা বিবৃত হয়েছে। সেই যুগেই মহাবীর, পূরণ কস্সপ, মক্খলি গোসাল, অজিত কেশকম্বলী, পকুধ কচ্চায়ন, সঞ্জয় বেলট্ঠিপুত্ত প্রমুখ প্রভাবশালী দার্শনিক তাদের মত প্রচার করেছিলেন। পিটকে সামান্নফল সুত্র এঁদের কথা উল্লিখিত হয়েছে। বুদ্ধ নিশ্চয় এঁদের মতবাদ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। বুদ্ধের প্রধান দুই শিষ্য সারিপুত্ত ও মৌদ্গল্যায়ন প্রথম জীবনে ছিলেন সংশয়বাদী সঞ্জয় বেলট্ঠিপুত্তর প্রধান শিষ্য। ত্রিপিটকে প্রায়শই দেখা যায় যে, বুদ্ধ তার প্রতিদ্বন্দ্বী মতধারার সমর্থকদের সঙ্গে বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন। অর্থাৎ, বুদ্ধ নিজেও ছিলেন সমসাময়িক কালের অন্যতম শ্রমণ দার্শনিক। এমনও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে আলার কালাম ও উদ্দক রামপুত্ত নামে দুই দার্শনিকও ঐতিহাসিক চরিত্র। বুদ্ধের জীবনকথায় “জন্ম, বয়ঃপ্রাপ্তি, সন্ন্যাসগ্রহণ, আধাত্মিক অনুসন্ধান, বোধিলাভ, শিক্ষাদান ও মহাপরিনির্বাণ”র ধারাটি সাধারণভাবে স্বীকৃত হলেও, প্রথাগত জীবনীগ্রন্থগুলিতে বিভিন্ন বিবরণের সত্যতা সম্পর্কে মতৈক্য খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা যায়।

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিককার অধিকাংশ ঐতিহাসিক ৫৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে তাঁর জীবনকাল হিসেবে নিরূপণ করেন। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে বুদ্ধের জীবনীর ওপর আয়োজিত একটি সম্মেলনে অধিকাংশের বক্তৃতায় ৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের নিকটবর্তী বছরগুলির মধ্যে বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের সময়কাল বলে নিরূপণ করেন। এই বিকল্প মতবাদগুলি সমস্ত ঐতিহাসিকদের দ্বারা স্বীকৃত নয়।

প্রাচীন গ্রন্থগুলি থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, সিদ্ধার্থ গৌতম শাক্য জনগোষ্ঠীতে জন্মগ্রহণ করেন। এই গোষ্ঠী খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মূল ভূখণ্ড থেকে সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক ভাবে কিছুটা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় একটি ক্ষুদ্র গণতন্ত্র বা গোষ্ঠীতন্ত্র হিসেবে শাসন করত। সিদ্ধার্থ গৌতমের পিতা শুদ্ধোধন একজন নির্বাচিত গোষ্ঠীপতি ছিলেন, যার ওপর রাজ্যশাসনের দায়িত্ব ছিল। বৌদ্ধ ঐতিহ্যানুসারে, গৌতম অধুনা নেপালের লুম্বিনী নগরে জন্মগ্রহণ করেন ও কপিলাবস্তুতে বড় হয়ে ওঠেন। প্রায় দুই শতাব্দী পরে সম্রাট অশোক গৌতমের জন্মস্থানে তীর্থ করতে গিয়ে লুম্বিনীতে স্তম্ভ স্থাপন করেন। এবং গৌতমের স্মৃতিবিজরিত স্থানগুলোতে তীর্থ যাত্রা করে সম্রাট স্তম্ভ, বিহার নির্মাণ করেন। তার অন্য একটি স্তম্ভে বিভিন্ন ধম্ম পুথির উল্লেখ রয়েছে, যার দ্বারা মৌর্য যুগে লিখিত বৌদ্ধ ঐতিহ্যের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়। পূর্ব আফগানিস্তানের জালালাবাদের নিকটে হাড্ডা হতে আবিষ্কৃত খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় থেকে প্রথম শতাব্দীতে গান্ধারী ভাষায় রচিত ও খরোষ্ঠী লিপিতে লিখিত সাতাশটি বার্চের ছালের গান্ধার বৌদ্ধ পুঁথিগুলি বর্তমানে টিকে থাকা বৌদ্ধ পুঁথিগুলির মধ্যে প্রাচীনতম।

জীবনীগ্রন্থ

বিভিন্ন ঐতিহ্যশালী জীবনীগ্রন্থগুলি সিদ্ধার্থ গৌতমের জীবনীর মূল উৎস। ত্রিপিটকে বুদ্ধবংস নামক গ্রন্থে গৌতম বুদ্ধের জীবনীও পাওয়া যায়। যেহেতু পালি ত্রিপিটক বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের পর হতে সংকলিত হয়েছে তাই এই গ্রন্থের সত্যতা মেনে নিলেও ভুল হবে না। এই গ্রন্থে বর্ণনা তথাগত বুদ্ধ নিজেই প্রকাশ করেছেন।দ্বিতীয় শতাব্দীতে অশ্বঘোষ দ্বারা রচিত বুদ্ধচরিত নামক মহাকাব্যটি বুদ্ধের প্রথম পূর্ণ জীবনীগ্রন্থ। তৃতীয় শতকে রচিত ললিতবিস্তার সূত্র গৌতম বুদ্ধের জীবনী নিয়ে লিখিত পরবর্তী গ্রন্থ। সম্ভবতঃ চতুর্থ শতাব্দীতে রচিত মহাসাঙ্ঘিক লোকোত্তরবাদ ঐতিহ্যের মহাবস্তু গ্রন্থটি অপর একটি প্রধান জীবনী গ্রন্থ হিসেবে পরিগণিত হয়। তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীতে রচিত ধর্মগুপ্তক ঐতিহ্যের অভিনিষ্ক্রমণ সূত্র গ্রন্থটি বুদ্ধের একটি বিরাট জীবনীগ্রন্থ। সর্বশেষে পঞ্চম শতাব্দীতে রচিত বুদ্ধঘোষ রচিত থেরবাদ ঐতিহ্যের নিদানকথা উল্লেখ্য। ত্রিপিটকের অংশ হিসেবে জাতক, মহাপদন সূত্ত ও আচারিয়াভুত সুত্তে বুদ্ধের পূর্ণ জীবনী না থাকলেও কিছু নির্বাচিত অংশ রয়েছে।। আর বুদ্ধঘোষের রচিত পদ্যচূড়ামণি গ্রন্থেও বুদ্ধের জীবনী পাওয়া যায়। এই সমস্ত ঐতিহ্যশালী জীবনীগ্রন্থে বুদ্ধের জীবনী পাওয়া যায়। মহাবস্তু প্রভৃতি গ্রন্থে বুদ্ধকে লোকোত্তর সর্বোৎকৃষ্ট চরিত্র হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি জাগতিক বিশ্বের সমস্ত ভার থেকে মুক্ত। কিন্তু তা হলেও এই সমস্ত গ্রন্থ থেকে খুঁটিনাটি সাধারণ বিবরণগুলিকে একত্র করে বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে আলোকপাত সম্ভব হয়েছে।

প্রাচীন যুগের ভারতীয়রা ইতিহাস ও কালপঞ্জীর ব্যাপারে নির্লিপ্ত ছিলেন, বরং তারা দর্শনের ওপর বেশি মনোযোগী ছিলেন। বৌদ্ধ গ্রন্থগুলিতে এই ধারার চিত্র লক্ষ্য করা যায়, যেখানে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি সম্বন্ধে যত বা উল্লেখ রয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে তার শিক্ষা ও দর্শনের বর্ণনা করা হয়েছে। এই গ্রন্থগুলিতে প্রাচীন ভারতের সংস্কৃতি ও দৈনন্দিন জীবন সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। যাই হোক না কেন, এসব ঐতিহাসিক গ্রন্থ থেকে গৌতম বুদ্ধের ঐতিহাসিকতা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

নাম এবং উপাধি

"বুদ্ধ" এবং সিদ্ধার্থ গৌতম (পালি: Siddhattha Gotama) নাম ছাড়াও, তিনি শাক্যমুনি (" শাক্যদের ঋষি") এর মতো অন্যান্য নাম ও উপাধিতেও পরিচিত ছিলেন। গৌতমের বংশীয় নামের অর্থ "গোতমার বংশধর", "গোতম" অর্থ "যার কাছে সবচেয়ে বেশি আলো আছে", এবং ক্ষত্রিয় গোষ্ঠী তাদের বাড়ির পুরোহিতদের নাম গ্রহণ করে। .

গৌতম বুদ্ধ 
হাদ্দা, আফগানিস্তানের তাপা শোটর মঠ থেকে উপবিষ্ট বুদ্ধ, খ্রিস্টীয় ২য় শতকে

উপাখ্যানগুলির একটি সাধারণ তালিকা সাধারণত ক্যানোনিকাল গ্রন্থগুলিতে একসাথে দেখা যায় এবং তার কিছু আধ্যাত্মিক গুণাবলীকে চিত্রিত করে:

  • সম্সমবুদ্ধো - পুরোপুরি স্ব-জাগ্রত
  • ভিজ্জা-কারনা-সাম্পানো - উচ্চতর জ্ঞান এবং আদর্শ আচরণে সমৃদ্ধ।
  • সুগত - ভাল গেছে বা ভাল কথা বলা.
  • লোকভিদু - বহু জগতের জ্ঞানী।
  • অনুত্তরো পুরীসা-দম্ম-সারথি - অপ্রশিক্ষিত লোকদের অদক্ষ প্রশিক্ষক।
  • সত্থদেব-মনুসানা - দেবতা ও মানুষের শিক্ষক।
  • ভাগবতো - ধন্য এক
  • অরহং - শ্রদ্ধার যোগ্য। অরহন্ত হল "কলঙ্কের সাথে ধ্বংসপ্রাপ্ত একজন, যিনি পবিত্র জীবন যাপন করেছেন, যা করতে হবে তা করেছেন, বোঝা চাপিয়েছেন, প্রকৃত লক্ষ্যে পৌঁছেছেন, সত্তার শৃঙ্খল ধ্বংস করেছেন এবং চূড়ান্ত জ্ঞানের মাধ্যমে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়েছেন।"
  • জিনা - বিজয়ী। যদিও এই শব্দটি সাধারণত জৈন ধর্মে মুক্তি লাভ করেছেন এমন একজন ব্যক্তির নাম বলতে ব্যবহৃত হয়, এটি বুদ্ধের জন্য একটি বিকল্প উপাধিও।

পালি ত্রিপিটকে বুদ্ধের জন্য আরও অসংখ্য উপাধি এবং উপাধি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: সর্বদর্শী, সর্ব-অতিক্রমী ঋষি, পুরুষদের মধ্যে ষাঁড়, ক্যারাভান নেতা, অন্ধকার দূরীকরণকারী, চোখ, সারথিদের অগ্রণী, যারা অতিক্রম করতে পারে তাদের মধ্যে অগ্রণী।, ধর্মের রাজা ( ধর্মরাজ ), সূর্যের আত্মীয়, জগতের সাহায্যকারী ( লোকনাথ ), সিংহ ( সিহা ), ধম্মের প্রভু, চমৎকার জ্ঞানের ( ভারপানা ), দীপ্তিমান এক, মানবজাতির মশালবাহক, অতুলনীয় ডাক্তার এবং সার্জন, যুদ্ধে বিজয়ী, এবং শক্তির চালক।

জীবনী

প্রথম জীবন

গৌতম বুদ্ধ 
লুম্বিনী নগরে সিদ্ধার্থের জন্ম

শ্বশুরালয় কপিলাবস্তু থেকে পিতৃরাজ্যে যাবার পথে অধুনা নেপালের তরাই অঞ্চলেরে অন্তর্গত লুম্বিনী গ্রামে এক শালগাছের তলায় সিদ্ধার্থের জন্ম দেন। তার জন্মের সময় বা সপ্তম দিনে মায়াদেবীর জীবনাবসান হয়। শুদ্ধোধন শিশুর জন্মের পঞ্চম দিনে নামকরণের জন্য আটজন ব্রাহ্মণকে আমন্ত্রণ জানালে তারা শিশুর নাম রাখেন সিদ্ধার্থ অর্থাৎ যিনি সিদ্ধিলাভ করেছেন। এই সময় পর্বতদেশ থেকে আগত অসিত নাম একজন সাধু নবজাত শিশুকে দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে এই শিশু পরবর্তীকালে একজন রাজচক্রবর্তী অথবা একজন সিদ্ধ সাধক হবেন। একমাত্র সর্বকনিষ্ঠ আমন্ত্রিত ব্রাহ্মণ কৌণ্ডিন্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, এই শিশু পরবর্তীকালে বুদ্ধত্ব লাভ করবেন। মাতার মৃত্যুর পর তিনি বিমাতা মহাপজাপতি গোতমী কর্তৃক লালিত হন। ষোলো বছর বয়সে তাকে সংসারের প্রতি মনোযোগী করার জন্য তার পিতামাতা তাকে কোলিয় গণের সুন্দরী কন্যা যশোধরার সাথে বিবাহ দেন ও রাহুল নামক এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। সিদ্ধার্থ তার জীবনের প্রথম উনত্রিশ বছর রাজপুত্র হিসেবে অতিবাহিত করেন। বৌদ্ধ পুঁথিগুলি অনুসারে পিতা শুদ্ধোধন তার জীবনে বিলাসিতার সমস্ত রকম ব্যবস্থা করা সত্ত্বেও সিদ্ধার্থ বস্তুগত ঐশ্বর্য্য যে জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না, তা উপলব্ধি করা শুরু করেন।

মহাভিনিষ্ক্রমণ

গৌতম বুদ্ধ 
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তুলিতে সিদ্ধার্থের মহাভিনিষ্ক্রমণ

কথিত আছে, উনত্রিশ বছর বয়সে রাজকুমার সিদ্ধার্থ প্রাসাদ থেকে কয়েকবার ভ্রমণে বেরোলে তিনি একজন বৃদ্ধ মানুষ, একজন অসুস্থ মানুষ, একজন মৃত মানুষ ও একজন সন্ন্যাসীকে দেখতে পান। সাংসারিক দুঃখ কষ্টে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ সিদ্ধার্থ তার সারথি ছন্নকে এঁদের প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে, ছন্ন তাকে বুঝিয়ে বলেন যে সকল মানুষের নিয়তি যে তারা একসময় বৃদ্ধ, অসুস্থ হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হবে। মুণ্ডিতমস্তক পীতবর্ণের জীর্ণ বাস পরিহিত সন্ন্যাসী সম্বন্ধে ছন্ন তাকে বলেন, যে তিনি মানুষের দুঃখের জন্য নিজ গার্হস্থ্য জীবন ত্যাগ করেছেন, তিনিই সন্ন্যাসী। এই নূতন অভিজ্ঞতায় বিষাদগ্রস্ত সিদ্ধার্থ বাধর্ক্য, জরা ও মৃত্যুকে জয় করার জন্য বদ্ধপরিকর হয়ে একজন সন্ন্যাসীর জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নেন। সংসারের প্রতি বীতরাগ সিদ্ধার্থ এক রাত্রে ঘুমন্ত স্ত্রী, পুত্র, পরিবারকে নিঃশব্দ বিদায় জানিয়ে প্রিয় অশ্ব কন্থক]] নিয়ে প্রাসাদ ত্যাগ করেন। প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে বনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে রাজবস্ত্র ত্যাগ করে তলোয়ার দিয়ে তার লম্বা চুল কেটে মুণ্ডিতমস্তক হন। এরপর কন্থক ও ছন্নকে বিদায় জানিয়ে রাজগৃহের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

বোধিলাভ

গৌতম বুদ্ধ 
কঠিন তপস্যার ফলে অস্থিচর্মসার সিদ্ধার্থ

প্রথমে তিনি আলার কালাম নামক একজন সন্ন্যাসীর নিকট যোগ শিক্ষা করেন। কিন্তু তার প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর লাভ না করায় এরপর তিনি উদ্দক রামপুত্ত নামক অপর একজন সন্ন্যাসীর নিকট শিষ্যত্ব গ্রহণ করে যোগশিক্ষা লাভ করেন। কিন্তু এখানেও তার জিজ্ঞাসা পূরণ না হওয়ায় তিনি তাকে ত্যাগ করে বুদ্ধগয়ার নিকট উরুবিল্ব নামক একটি রম্য স্থানে গমন করেন।

শরীরকে অপরিসীম কষ্ট প্রদানের মাধ্যমে মুক্তিলাভ হয় এই বিশ্বাসে তিনি ও অন্য পাঁচজন তপস্বী ছয় বছর ধরে অনশন, শারীরিক নিপীড়ন ও কঠোর সাধনায় অতিবাহিত করেন। দীর্ঘকাল ধরে কঠোর তপস্যার পর তার শরীর অস্থিচর্মসার হয়ে পড়ে ও তার অঙ্গসঞ্চালনের ক্ষমতা কমে গিয়ে তিনি মরণাপন্ন হলে তার উপলব্ধি হয় যে, অনশনক্লিষ্ট দুর্বল দেহে শরীরকে অপরিসীম কষ্ট দিয়ে কঠোর তপস্যা করে বোধিলাভ সম্ভব নয়। ধর্মচক্রপ্রবর্তন সূত্রানুসারে, অসংযত বিলাসবহুল জীবনযাপন এবং কঠোর তপস্যার মধ্যবর্তী একটি মধ্যম পথের সন্ধান করে বোধিলাভ সম্ভব বলে তিনি উপলব্ধি করেন। তিনি তাই আবার খাদ্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেন ও সুজাতা নাম্নী এক স্থানীয় গ্রাম্য কন্যার কাছ থেকে তিনি এক পাত্র পরমান্ন আহার করেন। সিদ্ধার্থকে খাদ্য গ্রহণ করতে দেখে তার পাঁচজন সঙ্গী তার ওপর বিরক্ত হয়ে তাকে ছেড়ে চলে যান।

এই ঘটনার পরে একটি অশ্বত্থ গাছের তলায় তিনি ধ্যানে বসেন এবং সত্যলাভ না করে স্থানত্যাগ করবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেন। উনপঞ্চাশ দিন ধরে ধ্যান করার পর তিনি বোধি প্রাপ্ত হন। এই সময় তিনি মানব জীবনে দুঃখ ও তার কারণ এবং দুঃখ নিবারণের উপায় সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেন, যা চতুরার্য সত্য নামে খ্যাত হয়। তার মতে এই সত্য সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করলে মুক্তি বা নির্বাণ লাভ সম্ভব।

ধর্মপ্রচার

গৌতম বুদ্ধ 
সারনাথে অবস্থিত যে স্থানে গৌতম বুদ্ধ পাঁচজন শিষ্যকে প্রথম ধর্মশিক্ষা প্রদান করেন, সেই স্থানে নির্মিত ধমেখ স্তূপ

বোধিলাভের পর গৌতম বুদ্ধের সঙ্গে তপুস্স ও ভল্লিক নামক বলখ অঞ্চলের দুইজন ব্যবসায়ীর সাক্ষাত হহয়, যারা তাকে মধু ও বার্লি নিবেদন করেন। এই দুইজন বুদ্ধের প্রথম সাধারণ শিষ্য। বুদ্ধ তার প্রাক্তন শিক্ষক আলার কালাম ও উদ্দক রামপুত্তের সাথে সাক্ষাত করে তার নবলব্ধ জ্ঞানের কথা আলোচনার জন্য উৎসাহী ছিলেন, কিন্তু তাদের দুইজনেরই ততদিনে জীবনাবসান হয়ে গেছিল। এরপর তিনি বারাণসীর নিকট ঋষিপতনের মৃগ উদ্যানে যাত্রা করে তার সাধনার সময়ের পাঁচ প্রাক্তন সঙ্গী, যারা তাকে একসম পরিত্যাগ করেছিলেন, তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন ও তাদেরকে তার প্রথম শিক্ষা প্রদান করেন, যা বৌদ্ধ ঐতিহ্যে ধর্মচক্রপ্রবর্তন নামে খ্যাত। এই ভাবে তাদের নিয়ে ইতিহাসের প্রথম বৌদ্ধ সংঘ গঠিত হয়।

এরপর মহাকশ্যপ নামক এক অগ্নি-উপাসক ব্রাহ্মণ ও তার অনুগামীরা সংঘে যোগদান করেন। বুদ্ধ সম্রাট বিম্বিসারকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিমতো বুদ্ধত্ব লাভের পরে রাজগৃহ যাত্রা করলে সঞ্জয় বেলাঢ্বিপুত্তের দুইজন শিষ্য সারিপুত্ত ও মৌদ্গল্যায়ন সংঘে যোগদান করেন। বুদ্ধত্ব লাভের এক বছর পরে শুদ্ধোধন তার পুত্রকে কপিলাবস্তু শহরে আমন্ত্রণ জানান। একদা রাজপুত্র গৌতম রাজধানীতে সংঘের সাথে ভিক্ষা করে খাদ্য সংগ্রহ করেন। কপিলাবস্তুতে তার পুত্র রাহুল তার নিকট শ্রমণের দীক্ষাগ্রহণ করেন। এছাড়া আনন্দ ও অনুরুদ্ধ নামক তার দুইজন আত্মীয় তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। মহাকশ্যপ, সারিপুত্ত, মৌদ্গল্যায়ন, আনন্দ, অনুরুদ্ধ ও রাহুল ছাড়াও উপলি, মহাকাত্যায়ন, পুণ্ণ ও সুভূতি বুদ্ধের দশজন প্রধান শিষ্য ছিলেন।

তিন বছর পরে রোহিণী নদীর জলের অংশ নিয়ে শাক্যদের সাথে কোলীয় গণের একটি বিবাদ উপস্থিত হলে বুদ্ধ সেই বিবাদের মীমাংসা করেন। এর কয়েকদিনের মধ্যে শুদ্ধোধন মৃত্যুবরণ করলে গৌতম বুদ্ধের বিমাতা মহাপজাপতি গোতমী সংঘে যোগদানে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। গৌতম প্রথমে নারীদের সংঘে যোগদানের ব্যাপারে অমত প্রকাশ করলেও আনন্দের উৎসাহে তিনি সংঘ গঠনের পাঁচ বছর পরে সংঘে নারীদের ভিক্ষুণী হিসেবে প্রবেশের অনুমতি দেন।

আগের জীবন

পালি বুদ্ধবংশ এবং সংস্কৃত জাতকমলা - এর মতো কিংবদন্তি জীবনীগুলি বুদ্ধের (তাঁর জাগরণের আগে " বোধিসত্ত্ব " হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে) কর্মজীবনকে গৌতম হিসাবে তাঁর শেষ জন্মের আগে শত শত জীবনকাল বিস্তৃত হিসাবে চিত্রিত করে। জাতকদের মধ্যে এই পূর্ববর্তী জীবনের অনেক কাহিনী চিত্রিত হয়েছে। জাতকের বিন্যাসটি সাধারণত বর্তমানের একটি গল্প বলার মাধ্যমে শুরু হয় যা পরে কারও পূর্ব জীবনের গল্প দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়।

প্রাক-বৌদ্ধ অতীতকে একটি গভীর কর্মময় ইতিহাসের সাথে আবদ্ধ করার পাশাপাশি, জাতকগণ বোধিসত্ত্বের (বুদ্ধ হতে) বুদ্ধত্বের পথ ব্যাখ্যা করতেও কাজ করে। বুদ্ধবংশের মতো জীবনীতে, এই পথটিকে "চারটি অনির্দিষ্ট যুগ" ( অসমখেয়াস ) নিয়ে দীর্ঘ এবং কঠিন বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

এই কিংবদন্তি জীবনীগুলিতে, বোধিসত্ত্ব অনেকগুলি বিভিন্ন জন্মের মধ্য দিয়ে যায় (প্রাণী এবং মানব), তার অতীত বুদ্ধের সাথে সাক্ষাতের দ্বারা অনুপ্রাণিত হন, এবং তারপর নিজেই বুদ্ধ হওয়ার জন্য একাধিক সংকল্প বা ব্রত ( প্রণিধান ) করেন। তারপর তিনি অতীতের বুদ্ধদের দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী পেতে শুরু করেন। এই গল্পগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল দীপঙ্কর বুদ্ধের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ, যিনি বোধিসত্ত্বকে ভবিষ্যতের বুদ্ধত্বের ভবিষ্যদ্বাণী দেন।

পালি জাতক ভাষ্য ( Jātakaṭṭhakathā ) এবং সংস্কৃত জাতকমালায় পাওয়া আরেকটি বিষয় হল কীভাবে বুদ্ধ-কে বুদ্ধত্বে পৌঁছানোর জন্য বেশ কিছু "পরিপূর্ণতা" ( পারমিতা ) অনুশীলন করতে হয়েছিল। জাতকরাও কখনও কখনও বোধিসত্ত্বের দ্বারা পূর্ববর্তী জীবনে করা নেতিবাচক কর্মগুলিকে চিত্রিত করে, যা গৌতম হিসাবে তার শেষ জীবনে তিনি যে অসুবিধাগুলি অনুভব করেছিলেন তা ব্যাখ্যা করে।

শিক্ষা

প্রাচীনতম শিক্ষা খোঁজা

বৌদ্ধধর্মের প্রাচীনতম মূল বিষয়ে তথ্য পাওয়ার একটি পদ্ধতি হল পালি ক্যাননের প্রাচীনতম সংস্করণ এবং অন্যান্য গ্রন্থের তুলনা করা, যেমন সার্বস্তিবাদ, মুলসার্বস্তিবাদ, মহিষাসাক, ধর্মগুপ্তক এবং চীনা আগামাগুলির বেঁচে থাকা অংশগুলি। এই উত্সগুলির নির্ভরযোগ্যতা এবং প্রাচীনতম শিক্ষাগুলির একটি মূল আউট করার সম্ভাবনা একটি বিতর্কের বিষয়। টিলম্যান ভেটারের মতে, অসঙ্গতিগুলি রয়ে গেছে, এবং সেই অসঙ্গতিগুলি সমাধান করার জন্য অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।[৯১]

ল্যাম্বার্ট স্মিথাউসেন-এর মতে, বৌদ্ধধর্মের আধুনিক পণ্ডিতদের তিনটি পদ রয়েছে:

  1. "নিকায়িক উপকরণের অন্তত একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মৌলিক একজাতীয়তা এবং যথেষ্ট সত্যতার উপর চাপ।"
  2. "প্রাথমিক বৌদ্ধধর্মের মতবাদ পুনরুদ্ধার করার সম্ভাবনার বিষয়ে সংশয়বাদ।"
  3. "এই বিষয়ে সতর্ক আশাবাদ।"

ঐতিহাসিক বুদ্ধ গৌতম "শাক্যমুনি" এর প্রতি তাদের গুনাবলী সম্পর্কে, রিচার্ড গোমব্রিচ, আকিরা হিরাকাওয়া, আলেকজান্ডার ওয়াইন এবং এ.কে. ওয়ার্ডার মনে করেন যে এই প্রারম্ভিক বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলিতে এমন উপাদান রয়েছে যা সম্ভবত এই চিত্রটিতে সনাক্ত করা যেতে পারে।[১০৩]

শারীরিক বৈশিষ্ট্যাবলী

গৌতম বুদ্ধ 
নেপালের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। প্রাচীনতম সূত্র অনুসারে, বুদ্ধকে উত্তর-পূর্ব ভারতের একজন সাধারণ কামানো মানুষের মতো দেখাচ্ছিল।

প্রারম্ভিক সূত্রগুলি বুদ্ধকে অন্যান্য বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মতোই চিত্রিত করে। বিভিন্ন বক্তৃতায় বর্ণনা করা হয়েছে যে কীভাবে তিনি পৃথিবী ত্যাগ করার সময় "তার চুল এবং দাড়ি কেটে ফেলেছিলেন"। একইভাবে, দীর্ঘ নিকায় ৩-এ একজন ব্রাহ্মণ বুদ্ধকে কামানো বা টাক ( মুন্ডক ) মানুষ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। দীর্ঘ নিকায় ২ এও বর্ণনা করা হয়েছে যে কীভাবে রাজা অজাতশত্রু সংঘের কাছে যাওয়ার সময় বুদ্ধ সন্ন্যাসীদের মধ্যে কোনটি তা বলতে অক্ষম হন এবং তার মন্ত্রীকে তাকে নির্দেশ করতে বলতে হবে। অনুরূপভাবে, মধ্যম নিকায়-এ, একজন পুরুষ যিনি নিজেকে বুদ্ধের অনুসারী হিসাবে দেখেন তিনি ব্যক্তিগতভাবে বুদ্ধের সাথে দেখা করেন কিন্তু তাকে চিনতে অক্ষম।

বুদ্ধকে সুদর্শন এবং স্পষ্ট বর্ণের (দীর্ঘ I:115; অঙ্গুত্তর নিকায় I:১৮১) হিসেবেও বর্ণনা করা হয়েছে, অন্তত তার যৌবনে। বৃদ্ধ বয়সে, তবে, তিনি একটি স্তব্ধ শরীর, শিথিল এবং কুঁচকানো অঙ্গ সহ বর্ণনা করা হয়।

বিভিন্ন বৌদ্ধ গ্রন্থে বুদ্ধের অসাধারণ দৈহিক বৈশিষ্ট্যের একটি ধারা উল্লেখ করা হয়েছে, যা "মহাপুরুষের ৩২টি লক্ষণ " (সংস্কৃত: mahāpuruṣa lakṣaṇa ) নামে পরিচিত।

আনালয়োর মতে, যখন তারা প্রথম বৌদ্ধ গ্রন্থে আবির্ভূত হয়, তখন এই শারীরিক চিহ্নগুলিকে প্রাথমিকভাবে সাধারণ ব্যক্তির কাছে অদৃশ্য বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল এবং সনাক্ত করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল। যদিও পরে, তারা নিয়মিত লোকেদের দ্বারা দৃশ্যমান এবং বুদ্ধের প্রতি অনুপ্রেরণামূলক বিশ্বাস হিসাবে চিত্রিত হয়েছে।

এই বৈশিষ্ট্যগুলি দীর্ঘ নিকায়ের লক্ষ্মণ সুত্ত (D, I:142) এ বর্ণিত হয়েছে।

বিভিন্ন ধর্মে বুদ্ধ

হিন্দুধর্ম

হিন্দুধর্মে গৌতম বুদ্ধকে কিছু পুরাণ অনুযায়ী বিষ্ণুর অবতার বলা হয়েছে। তবে ভাগবত পুরাণ অনুযায়ী অঞ্জনের পুত্র অর্থাৎ সুগত বুদ্ধ বিষ্ণুর অবতার।

প্রকৃতপক্ষে, বুদ্ধের শিক্ষা পবিত্র বেদের কর্তৃত্ব এবং ব্রহ্ম-আত্মার ধারণাকে অস্বীকার করে। ফলস্বরূপ, হিন্দু ধর্মের ছয়টি নৈষ্ঠিক আস্তিক দর্শন শাখার বিপরীতে বৌদ্ধধর্মকে সাধারণত একটি নাস্তিক দর্শন হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। এছাড়াও ত্রিপিটকের দীর্ঘ নিকায়ে ভগবান বুদ্ধ বলেছেন যে তিনি কারও অবতার নন।

শিখধর্ম

শিখ গুরু গোবিন্দ সিং এর লেখা দশম গ্রন্থ নামক শিখ গ্রন্থের চব্বিশ অবতার নামক রচনায় গৌতম বুদ্ধকে বিষ্ণুর ২৩তম অবতার বলা হয়েছে।

ইসলাম

পবিত্র কুরআনের সূরা ৯৫:১ অনুযায়ী কেউ কেউ ইসলামের নবি যুল কিফ্‌লকে গৌতম বুদ্ধ হিসেবে শনাক্ত করে থাকে, যেখানে একটি বট বৃক্ষের কথা বলা হয়েছে যা কুরআনে উল্লেখিত অন্যান্য নবিদের জীবনের সাথে জড়িত নয়। কোনো অনুবাদকের মতে তাঁর জন্মস্থান কপিলাবস্তুতে হতে পারে।

অল্প পরিমাণ আহ্‌মদীয়া সম্প্রদায়ের মতেও তাঁকে নবি হিসেবে মানা হয়।

খ্রীষ্টধর্ম

ঋষি বারলাম ও জোসাফাতের জীবনী গৌতম বুদ্ধের জীবনী নির্ভর।

পাদটীকা

Notes

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

What Was The Buddha Like? by Ven S. Dhammika

বৌদ্ধ পদবীসমূহ
পূর্বসূরী
কাশ্যপ বুদ্ধ
বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতা উত্তরসূরী
আর্য মৈত্রেয় বুদ্ধ

Tags:

গৌতম বুদ্ধ ঐতিহাসিক সিদ্ধার্থ গৌতমগৌতম বুদ্ধ জীবনীগ্রন্থগৌতম বুদ্ধ নাম এবং উপাধিগৌতম বুদ্ধ জীবনীগৌতম বুদ্ধ আগের জীবনগৌতম বুদ্ধ শিক্ষাগৌতম বুদ্ধ শারীরিক বৈশিষ্ট্যাবলীগৌতম বুদ্ধ বিভিন্ন ধর্মে বুদ্ধগৌতম বুদ্ধ পাদটীকাগৌতম বুদ্ধ তথ্যসূত্রগৌতম বুদ্ধ বহিঃসংযোগগৌতম বুদ্ধকোশলখ্রিস্টপূর্বজ্ঞানতপস্যাপ্রাচীন ভারতবুদ্ধবুদ্ধত্ববৌদ্ধধর্মমগধমধ্যপন্থাশ্রমণ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

বাংলাদেশী টাকাযাকাতআতিফ আসলামর‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নচর্যাপদইশার নামাজবাংলাদেশের মন্ত্রিসভাতুলসীগৌতম বুদ্ধহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরবাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রসমূহের তালিকাপর্যায় সারণিআবু হানিফাইন্সটাগ্রামপদ্মা সেতুআশারায়ে মুবাশশারাবিষ্ণুত্রিভুজদৈনিক প্রথম আলোধর্মএল ক্লাসিকোভগবদ্গীতাস্যাম কারেনইস্তেখারার নামাজথাইল্যান্ডবাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকক্সবাজার জেলালালসালু (উপন্যাস)শবনম বুবলিবাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকজান্নাতুল ফেরদৌস পিয়াঈদুল ফিতরবদরের যুদ্ধশাবনূরকালোজিরাবৌদ্ধধর্মআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলমাইকেল মধুসূদন দত্তপারমাণবিক ভরের ভিত্তিতে মৌলসমূহের তালিকাডায়াজিপামশীর্ষে নারী (যৌনাসন)আসামঢাকা বিভাগপ্রমথ চৌধুরীইহুদিবগুড়া জেলাগরুউমাইয়া খিলাফতম্যালেরিয়াপ্রাণ-আরএফএল গ্রুপশনি (দেবতা)এ. পি. জে. আবদুল কালামঐশ্বর্যা রাইপদ (ব্যাকরণ)সূরা ফালাকইউরোখলিফাদের তালিকাআকিজ গ্রুপবাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রআদমনামের ভিত্তিতে মৌলসমূহের তালিকাসমাজতন্ত্রওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েববাংলাদেশের জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২বাংলাদেশের বিভাগসমূহআলিবাংলা স্বরবর্ণইসরায়েলমুসাদক্ষিণ কোরিয়াচৈতন্য মহাপ্রভুবাংলাদেশ ব্যাংকভারতের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকাবাঙালি হিন্দুদের পদবিসমূহ🡆 More