স্বভাব কবি গঙ্গাধর মেহের (ওড়িয়া: ସ୍ୱଭାବକବି ଗଙ୍ଗାଧର ମେହେର) ছিলেন উনিশ শতকের খ্যাতিমান ওড়িয়া ভাষার কবি। সম্পদ ও শিক্ষার ক্ষেত্রে দরিদ্র হলেও তিনি ওড়িয়া সাহিত্যের অন্যতম অগ্রণী এবং মূল অবদানকারী হয়ে রয়েছেন।
স্বভাব কবি গঙ্গাধর মেহের | |
---|---|
ଗଙ୍ଗାଧର ମେହେର | |
জন্ম | |
মৃত্যু | ৪ এপ্রিল ১৯২৪ | (বয়স ৬১)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
শিক্ষা | পঞ্চম শ্রেণি |
পেশা | মুহুরী (হিসাবরক্ষক) |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | তপস্বিনী, রস-রত্নাকর, বলরাম-দেব, প্রাণায়া বল্লারি, কীচক বাধা, ইন্দুমতী(প্রথম প্রকাশিত বই), অযোধ্যা দ্রুস্য, পদ্মিনী (শেষ লেখা) |
দাম্পত্য সঙ্গী | শান্তি দেবী, চম্পা দেবী (শান্তি দেবীর মৃত্যুর পর) |
সন্তান | অর্জুন মেহের (১২ বছর বয়সে মৃত), ভগবান মেহের (কবিপুত্র নামে পরিচিত), বসুমতী মেহের, লক্ষ্মী মেহের |
পিতা-মাতা |
|
ওয়েবসাইট | www.gangadharmeher.org |
গঙ্গাধর ১৮৬২ সালে বর্তমান ওড়িশার বড়গড় জেলার বারপালিতে শ্রাবণ পূর্ণিমা তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা চৈতন্য মেহের তাঁত বুননের পারিবারিক পেশার পাশাপাশি গ্রাম্য বৈদ্য (আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক) হিসাবে কাজ করতেন। কিন্তু এই কাজগুলির উপার্জন দিয়ে তিনি পরিবারের আর্থিক চাহিদা না মেটায় তিনি একটি গ্রামের স্কুল খুলেছিলেন এবং কয়েকটি শিশুকে পড়াতে শুরু করেছিলেন। গঙ্গাধর মেহের বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে ভার্নাকুলার স্ট্যান্ডার্ড পর্যন্ত পড়তে পেরেছিলেন এবং সাহিত্যের প্রতি তার আগ্রহ শেষ পর্যন্ত কবিতা লেখার ক্ষেত্রে তার দক্ষতার জন্ম দিয়েছিল।
অল্প বয়সে বলরাম দাস রচিত ওড়িয়া রামায়ণ শুনেছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনি নিজে ও সরলা দাসের ওড়িয়া মহাভারতটি পড়েছিলেন। তিনি প্রচুর সংখ্যক সংস্কৃত বই পড়েন ও সংস্কৃত সাহিত্য রপ্ত করেন; যার মধ্যে ‘রঘুবংশম’ উল্লেখযোগ্য । তিনি তুলসী রামায়ণ অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে অধ্যয়ন করতেন। এছাড়াও তিনি বাংলা পত্রিকা এবং সংবাদপত্র পড়তেন।
গঙ্গাধর ১০ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। তার বাবার আর্থিক অবস্থা সন্তোষজনক না হওয়ায় গঙ্গাধর সকালে স্কুলে যেতেন এবং বিকেলে বাবাকে সাহায্য করতেন। স্পষ্ট এবং সুন্দর হাতের লেখার দ্বারাও তিনি বহু লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। পরিশ্রমের কারণে পরিবারের আর্থিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্ভাগ্যবশত সেইসময় তার পৈতৃক বাড়িতে আগুন লাগে।
তৎকালীন বারপালির জমিদার লাল নৃপরাজ সিং তাকে আমিন (পাটোয়ারী) পদ গ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। গঙ্গাধরের দয়াময় আচরণ এবং উত্তম গুণাবলী অবলোকন করে জমিদার তাকে মুহুরীর পদে উন্নীত করেছিলেন। তিনি উক্ত পদে নির্ভুলভাবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখেন। পরবর্তীকালে তিনি সম্বলপুর, বিজপুর এবং পদ্মাপুরে স্থানান্তরিত হন এবং শেষ পর্যন্ত তাকে নিজের জন্মস্থান বড়পালিতে প্রতি মাসে ৩০,০০০ রুপি বেতনে স্থানান্তরিত করা হয়।
কবি মানসিকভাবে অনেক উদার এবং প্রগতিশীল মনোভাবাপন্ন ছিলেন। শেষজীবনে কবি সমগ্র তাঁতি সমাজকে উন্নত করার লক্ষ্যে 'কনফারেন্স অফ মেহেরস অফ ওড়িশা' নামক সামাজিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন উড়িষ্যার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় তিন হাজার মেহের পদবী যুক্ত তাঁতি পেশাদার মানুষ সম্মেলনে জড়ো হয়েছিলেন। কবি সমাজের সংস্কারের জন্য বারোটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং সবগুলি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।
গঙ্গাধর খুব কোমল বয়স থেকেই কবিতা রচনা শুরু করেছিলেন। তার প্রথম লেখাগুলি প্রাচীন ওড়িয়া লেখকদের রীতি এবং কৌশল অনুসরণ করে। তার প্রথম কাব্য (কাব্য রচনা) ছিল “রস-রত্নাকর”। তারপরে কিছু বন্ধুদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে তিনি তার উপায় পরিবর্তন করেছিলেন এবং আধুনিক ওড়িয়া স্টাইলে কবিতা লিখেছিলেন। কবিবর রাধানাথ রায় তাঁর লেখার খুব প্রশংসা করেছেন। গঙ্গাধর মেহের লিখিত রচনাগুলি স্পষ্ট কল্পনা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে, ভাষার সৌন্দর্য এবং স্বচ্ছতার সাথে শৈলীর অভিনবত্বের ক্ষেত্রে, জোরালো চরিত্রের চিত্রের বিন্দুতে এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকৃতির প্রাণবন্ত বর্ণনায় তা অভিনব। লেখাগুলি ওড়িয়া সাহিত্যের অন্যতম সেরা সৃষ্টি হিসাবে রয়ে গেছে।
১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সম্বলপুর জেলা ১৯৪৯ সালে তার সম্মানে গঙ্গাধর মেহের কলেজের নামকরণ করে এবং পরে ২০১৫ সালে, এই কলেজটি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছিল। বুড়লাতে অবস্থিত সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয় গঙ্গাধর মেহের জাতীয় পুরস্কার আয়োজন করে যা প্রতি বছর সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সম্মানিত করা হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে 'গঙ্গাধর মেহের জাতীয় পুরস্কার' বিশ্বনাথ প্রসাদ তিওয়ারিকে ভূষিত করা হয়।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article গঙ্গাধর মেহের, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.