খোজাকরণ উদ্বিগ্নতা

খোজাকরণ উদ্বিগ্নতা বা ক্যাস্ট্রেশন এনজাইটি হচ্ছে আক্ষরিক এবং উপমা উভয় অর্থেই লিঙ্গকর্তন বা খোজাকরণের ভয়। খোজাকরণ হচ্ছে লিঙ্গের নষ্ট হওয়া বা হারানোর অতিরিক্ত ভয়, যা সিগমুন্ড ফ্রয়েডের প্রথম দিকের মনোসমীক্ষণ তত্ত্বসমূহের মধ্যে একটি। যদিও ফ্রয়েড খোজাকরণ উদ্বিগ্নতাকে সর্বজনীন মানব অভিজ্ঞতা বলে দাবী করেছেন, এই বিষয়ে খুব কম গবেষণাই সংঘটিত হয়েছে। এই গবেষণার বেশিরভাগই কয়েক দশক আগে পরিচালিত হয়, তবুও আজকের দিনেও এটা প্রাসঙ্গিক। এই তত্ত্ব অনুসারে, একটি শিশু তার সমলিঙ্গের প্যারেন্টের দ্বারা (পুত্র পিতার প্রতি ভয় পাবে) বিপরীত লিঙ্গের প্যারেন্টের প্রতি যৌন অনুভূতি বোধ করার জন্য (পুত্র মাতার প্রতি) পিতার দ্বারা তার যৌনাঙ্গ নষ্ট হয়ে যাবার ভয় পায়। তত্ত্ব অনুসারে, খোজাকরণ উদ্বিগ্নতা ৩ থেকে ৫ বছর বয়সের মধ্যে শুরু হয়, যা ফ্রয়েডের মতে ফ্যালিক স্টেজ বা লৈঙ্গিক পর্যায়। যদিও এটি পুরুষের সাথে সম্পর্কিত, তত্ত্ব অনুসারে খোজাকরণ উদ্বিগ্নতা নারী, পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই কাজ করে।

আক্ষরিক অর্থে

খোজাকরণ উদ্বিগ্নতা হচ্ছে যৌনাঙ্গের সমস্ত অংশ হারাবার বা এর কার্যকারিতা হারাবার সচেতন বা অচেতন ভয়। আক্ষরিক অর্থে, খোজাকরণ উদ্বিগ্নতা দ্বারা কারও যৌনাঙ্গ বিকৃত বা সরিয়ে নেবার ভয় নির্দেশ করে যা শিশুর যৌন অনুভূতির শাস্তিস্বরূপ করা হবে বলে মনে করা হয়।

ফ্রয়েডীয় মনোসমীক্ষায়, খোজাকরণ উদ্বিগ্নতা দ্বারা মনোযৌন বিকাশের লৈঙ্গিক পর্যায়ে লিঙ্গ হারাবার অচেতন ভয় নির্দেশ করা হয় এবং সারা জীবন ধরে থাকে। ফ্রয়েডের মতে, যখন একটি পুরুষ শিশু নারী ও পুরুষ যৌনাঙ্গের পার্থক্য সম্পর্কে অবগত হয়, সে ধরে নেয় যে নারীর পুরুষাঙ্গকে সরিয়েনেয়া হয়েছে এবং সেও এব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয় যে, মাকে কামনার জন্য তার পুরুষাঙ্গও তার প্রতিদ্বন্দ্বী পিতার দ্বারা কর্তন করা হবে।

১৯ শতকের ইউরোপে অসদাচরণ করা পুত্রদেরকে পিতামাতা কর্তৃক খোজাকরন বা অন্য কোন ভাবে যৌনাঙ্গে আঘাত দেবার হুমকি সাধারণ ছিল। ফরাসী লেখক মাইকেল টুরনিয়ের এর গল্পসমগ্র লে কক ডি ব্রুয়েরে (১৯৭৮) এর একটি গল্প টুপিক-এ এই ব্যাপারটি দেখা যায়, আর ফ্রয়েডও এটি বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেন। একই সময় ডঃ কেলগ এবং অন্যরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইংরেজি ভাষাভাষী দেশসমূহের ভিক্টোরিয়ান পিতামাতাদেরকে সন্তানদের খৎনাকরণ এবং খুব প্রয়োজন পড়লে ছেলেমেয়েদের বিস্তৃত পরিসরের বেয়াদবীর (বিশেষ করে হস্তমৈথুন) শাস্তিস্বরূপ খোজাকরণের ব্যবস্থা করতেন। এবং সেইসময় এটা খুব জনপ্রিয় ছিল।

রূপক হিসেবে

খোজাকরণ উদ্বিগ্নতা একই সাথে প্রতীকি অর্থেও ব্যবহৃত হতে পারে। রূপক অর্থে, এর দ্বারা মূল্যহীন হওয়া বা বোধ করা বোঝাতে পারে, সম্পর্কের ক্ষেত্রে বা সামাজিক ক্ষেত্রে অধীনস্ততা থেকে মুক্ত হবার তাগিদ বোঝাতে পারে। প্রতীকী খোজাকরণ উদ্বিগ্নতা দ্বারা অধঃপতিত, অধীনস্থ বা মূল্যহীন হবার ভয় বুঝিয়ে থাকে। এটার দ্বারা সাধারণত অযৌক্তিক ভীতি নির্দেশ করা হয় যেখানে ব্যক্তি তার সম্মান রক্ষা করতে চরম পর্যায়ে যেতে পারেন এবং/অথবা সামান্য কিছু নষ্ট হয়েছে বলে মনে হলেই তাদের উদ্বিগ্নতা অনেক বেড়ে যায় এবং মনে হয় কিছু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর সাথে জীবনীশক্তি বা যৌন প্রাধান্য হারাবার ভয়ের জন্য আক্ষরিক খোজাকরণ উদ্বিগ্নতাও যুক্ত হতে পারে।

ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পর্ক

ব্যক্তির মাঝের এই উদ্বিগ্নতার বিষয়টি ব্যক্তির জন্য সম্পূর্ণভাবে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে, এবং এটি তার জীবনের অন্যান্য বিষয়েও প্রবেশ করতে পারে। খোজাকরণ উদ্বিগ্নতার সাথে মৃত্যুভয়ের একটি সম্পর্ক পাওয়া গেছে। যদিও উদ্বিগ্নতার বিভিন্ন মাত্রা দেখা যায়, তরুণরা যারা তাদের তারুণ্যে সবচেয়ে বেশি হুমকির মধ্যে থাকে, তাদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী উদ্বিগ্নতা বা ক্রোনিক এনজাইটি দেখা যায়। কারণ এর ফলাফল চরম হতে পারে, সাম্ভাব্য অঙ্গহানি বা অঙ্গবিকৃতির ভয় পরবর্তীতে জীবনহানির ভয়ে পরিণতও হতে পারে। খোজাকরণ উদ্বিগ্নতা থেকে মৃত্যুভয়, এবং কারও জীবন থেকে নিয়ন্ত্রণ হারাবার ভয় তৈরি হতে পারে।

নিজেকে খুব ক্ষমতাহীন বোধ করা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই সব ক্ষেত্রে সবচাইতে চিন্তার সমস্যাটি হচ্ছে ব্যক্তি বুঝতে পারেন না যে তার আবেগজনিত যন্ত্রণার উৎস্য হচ্ছে তার যৌন আকাঙ্ক্ষা। মনোবিশ্লেষণের তত্ত্বানুযায়ী, অচেতন চিন্তার কারণে, উদ্বিগ্নতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যেখানে এর অভিজ্ঞতা প্রতীকীভাবেই গ্রহণ করা হয়। এই কারণে খোজাকরণ উদ্বিগ্নতা থেকে ভয় শারীরিক আঘাত ও পরবর্তীতে মৃত্যুভয় বা কারও দ্বারা নিজের হত্যার ভয়ে পরিণত হতে পারে।

নারীদের বেলায়

ফ্রয়েডীয় মনোবিজ্ঞানে নির্দেশ করা হয়, নারী ও পুরুষ উভয়ই একই বিকাশমান পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাবে যেগুলো হল: মৌখিক, পায়ু এবং লৈঙ্গিক পর্যায়। যদিও ফ্রয়েড মনে করতেন কারণ লিঙ্গদ্বয়ের শারীরিবৃত্তীয় বিভিন্নতার দরুন এর ফলাফল বিভিন্ন হবে।

খোজাকরণ উদ্বিগ্নতার নারী কাউন্টারপার্ট হচ্ছে পেনিস ইনভি না পুরুষাঙ্গ ঈর্ষা। এই ধারণাটি ফ্রয়েড ১৯০৮ সালে তার প্রকাশিত আর্টিকেল "অন দ্য সেক্সুয়াল থিওরিজ অব চিলড্রেন" এ প্রথম নিয়ে আসেন। এই ধারণা অনুসারে নারীরা/মেয়েরা পুরুষাঙ্গের জন্য ঈর্ষা করে থাকে (বিশেষ করে তাদের পিতাকে) কারণ তাদের মনে হয় তাদের থেকে পুরুষাঙ্গ নিয়ে নেয়া হয়েছে, অর্থাৎ ইতিমধ্যেই তাদের খোজাকরণ করা হয়ে গেছে। ফ্রয়েড বলেন, তারা যে ঈর্ষা করে থাকে তা হচ্ছে তাদের ছেলে হবার জন্য বা পুরুষাঙ্গ অধিকারের জন্য একটি অচেতন ইচ্ছা।

ফ্রয়েডীয় মনোবিজ্ঞানে পুরুষাঙ্গ ঈর্ষা দ্বারা, নারীদের বিকাশের সময়ে যখন তারা বুঝতে পারে যে তার পুরুষাঙ্গ নেই তখনকার প্রতিক্রিয়া বোঝায়। ফ্রয়েডের মতে, এটা নারীর লৈঙ্গিক বা যৌন পরিচয়ের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকাশ। সমসাময়িক সংস্কৃতিতে ধরে নেয়া হয় যে, নারীর মধ্যে পুরুষাঙ্গ ঈর্ষা বলতে তারা যদি পুরুষ হতে পারত এরকম ইচ্ছাকে বোঝায়। এটি "স্মল পেনিস সিনড্রোম" এর সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় যেখানে পুরুষরা ধরে নেয় তাদের পুরুষাঙ্গ প্রয়োজনের তুলনায় ছোট। ফ্রয়েডের বিশ্বাস অনুযায়ী, নারীদের মধ্যে দুর্বলতর সুপারইগো তৈরি হয়, যাকে তিনি পুরুষাঙ্গ ঈর্ষার ফলাফল বলে মনে করেন।

নারীদের উপর সিগমুন্ড ফ্রয়েডের দৃষ্টিভঙ্গি মনোবিজ্ঞানের খাতে প্রোফেশনাল ও ননপ্রফেশনালদের মধ্যে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি করে। তার ১৯২৫ সালের পেপার "দ্য সাইকিক কনসিকোয়েন্সেস ব এনাটমিক ডিসটিংকশন বিটুইন সেক্সেস"-এ ফ্রয়েড লেখেন, "নারীরা পরিবর্তনের বিরোধিতা করে, নিষ্ক্রীয়তার সহিত গ্রহণকরে, এবং নিজে থেকে কিছুই দেয় না"। ফ্রয়েডের অনেকগুলো প্রস্তাবনার মধ্যে, তিনি বিশ্বাস করতেন, লৈঙ্গিক পর্যায়ে তরুণী নারীরা মায়েদের থেকে নিজেদের মধ্যে একটি দূরত্ব তৈরির করে এবং তাদের পিতার প্রতি ঈর্ষার বদলে পিতার প্রতি ভালবাসা ও অনুরাগ প্রদর্শনের মাধ্যমে এই ঈর্ষা প্রদর্শন করে। কোহলার এবং গালাতজারের মতে, ফ্রয়েড বিশ্বাস করতেন, পুরুষাঙ্গ ঈর্ষা সংক্রান্ত সকল ধারণা তার বিশাল অর্জনের মধ্যেই পড়ে। যদিও এগুলো একই সাথে সবচাইতে বেশি সমালোচিত তত্ত্ব, যেগুলোর বেশিরভাগই ক্যারেন হরনির দ্বারা সমালোচিত হয়।

ছেলেদের মধ্যে ঈডীপাস কমপ্লেক্স

ফ্রয়েড এই শব্দটি গ্রীক বিয়োগান্তক নাটক ঈডীপাস রেক্স থেকে গ্রহণ করেছিলেন। এই বিয়োগান্তক নাটকে প্রধান চরিত্র ঈডীপাস তার পিতাকে হত্যা করেন এবং নিজের অজান্তে তার মাতাকে হত্যা করে। এই পরিহাসের কারণে ফ্রয়েড এই অচেতন কামনাকে ঈডীপাস কমপ্লেক্স বলে উল্লেখ করেছেন।

ফ্রয়েডের মতে, ঈডীপাস কমপ্লেক্স দ্বারা বালকদের সার্বজনীনভাবে মাকে সম্পূর্ণভাবে নিজের করে পাওয়া এবং বাবাকে সরিয়ে দেবার ইচ্ছাকে বোঝায়। এই কমপ্লেক্স ফ্রয়েডের মনোযৌন বিকাশের তৃতীয় ঘটে যা লৈঙ্গিক পর্যায় নামে পরিচিত। এটা সেই পর্যায় যখন শিশু শেখে যে তার একটি পুরুষাঙ্গ আছে এবং সেটা স্পর্ষ করে সে আনন্দ পায়। সেই সাথে, শিশুটি তার বিপরীত লিঙ্গের প্যারেন্ট বা মায়ের উপর যৌনাকাঙ্ক্ষার ব্যাপারেও সচেতন হয়। ফ্রয়েডের মতে, মায়ের প্রতি এই আকাঙ্ক্ষার অর্থ হচ্ছে সে তার সাথে যৌন সংসর্গ ঘটাতে ইচ্ছুক থাকে। এই আকাঙ্ক্ষার কারণে শিশুটি তার পিতাকে মায়ের মনোযোগ ও ভালবাসার কারণে প্রতিযোগী হিসেবে দেখে। এই প্রতিযোগিতার কারণে, বালকটি তার পিতাকে তার সাথে তার মায়ের মিলনের ক্ষেত্রে বাঁধা বলে মনে করে।

ঈডীপাস কমপ্লেক্স এর সাংঘর্ষিক ব্যাপারটি শিশুর ভেতর থেকেই তৈরি হয়। শিশুটি তার পিতাকে ভালবাসতে ও শ্রদ্ধা করতে জানে, তবুও মায়ের প্রতি ভালবাসার জন্য সে তার পিতাকে তার প্রতিযোগী বলে মনে করে। অধিকন্তু, শিশুটি এও জানে বাসা থেকে পিতাকে সরিয়ে দেয়াটা ভুল। কিন্তু তবুও সে তার প্রতিযোগীকে সরিয়ে দিতে চায় যাতে সে পুরোপুরিভাবে তার মাকে পায়।

আবার শিশুটি তার পিতাকে ভয় পেতে শুরু করে। শিশুটি বোঝে যে, তার পিতাটি আকারে ও শক্তিতে তার থেকে অনেক এগিয়ে এবং পিতা সহজেই তাকে এই সুবিধাগুলোকে কাজে লাগিয়ে তাকে তার মাকে অধিকার করা থেকে প্রতিরোধ করতে পারবে। সেই সাথে, শিশুটি ভয় পায় যে, তার পিতা তার মধ্যকার এই সংঘাতের মূল কারণটিকেই তুলে নেবে, যা হচ্ছে শিশুটির পুরুষাঙ্গ। বালকটির এই পুরুষাঙ্গ হারাবার উদ্বিগ্নতাকেই খোজাকরণ উদ্বিগ্নতা বলা হয়। এই উদ্বিগ্নতার ফলে শিশুটি তার মায়ের প্রতি যৌন আকাঙ্ক্ষা ছেড়ে দিতে তাড়িত হয়, এবং নিজের পিতার মত হওয়ার জন্য মনোযোগ স্থাপন করে, যাকে আইডেন্টিফিকেশন বা শনাক্তকরণ বলা হয়। এই সময় সন্তান পিতাকে নিজের রোল মডেলহিসেবে শনাক্ত করে। শিশুর মধ্যকার ঈডীপাল সংঘাত এর সমাপ্তির মধ্য দিয়ে তার বৃদ্ধি শুরু হয়।

কিন্তু ফ্রয়েড বিশ্বাস করতেন, ঈডীপাস কমপ্লেক্স কখনই পুরোপুরি নিঃশেষিত হয় না। তিনি উপসংহার টানেন, কামনার অনুভূতি অবশ্যই তার ভেতরের সচেতন অবগতির দ্বারা অবদমিত থাকে। এই অবদমন হচ্ছে শিশুকে এই কমপ্লেক্স সম্পর্কিত বিরক্তিকর উদ্বিগ্নতা থেকে মুক্ত করার জন্য মনের কৌশল। ফ্রয়েড আরও বলেন, এই যৌন কামনা শিশুর মধ্যে তবুও থেকে যায় এবং প্রায়ই আরও পরোক্ষ এবং সঠিক আচরণের আকারে প্রকাশিত হয়। শিশুর স্বপ্নে এটা পাওয়া যায়, স্বপ্নে শিশু একটি উদ্বিগ্নতাহীন এবং সমাজ স্বীকৃত রীতিতেই তার অবদমিত কামনা নিরাপদে প্রকাশ করতে পারে।

মেয়েদের মধ্যে ইলেক্ট্রা কমপ্লেক্স

ইলেক্ট্রা শব্দটি এসেছে গ্রীক পুরাণ থেকে। ইলেক্ট্রা একটি গ্রীক চরিত্র যে তার ভাইকে তাদের মাকে হত্যার জন্য প্ররোচিত করে, কারণ তার মা তার পিতার হত্যা করেছিল। কার্ল ইয়ং মেয়েদের বেলায় ঈডীপাস কমপ্লেক্স এর জন্য ইলেক্ট্রা কমপ্লেক্স শব্দটি ব্যবহা করেন, যা ঈডীপাস কমপ্লেক্স এর মতই মনোযোউন বিকাশের তৃতীয় পর্যায়েই ঘটে থাকে। ইয়ং বর্ণনা করেন, মেয়েদের মধ্যে এই কমপ্লেক্স তখনই শুরু হয় যখন তার মধ্যে তার লিঙ্গ সম্পর্কিত সচেতনতা তৈরি হয়। এই সচেতনতার কারণে সে অন্যান্য শিশুকে ছেলে ও মেয়ে হিসেবে শনাক্ত করতে পারে ও সেই সাথে পিতামাতার লিঙ্গও বুঝতে সক্ষম হয়।

ফ্রয়েডের মতে, এই পর্যায়ে শিশু প্রাথমিকভাবে তার মায়ের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ থাকে। কিন্তু যখন শিশুটি আবিষ্কার করে যে তার পুরুষাঙ্গ নেই, তখন সে তার আকর্ষণ পিতার প্রতি পুনর্নির্দেশিত করে। শিশুটি তখন তাকে খোজাকরণ করার জন্য তার মাকে দোষারোপ করে। পিতার প্রতি ভালবাসার জন্য শিশুটি পিতার ভালবাসা হারানোর ভয়ের কারণে তার মায়ের নকল করা শুরু করে। ঈডীপাস কমপ্লেক্সের মতই, মেয়েটি মায়ের সাহায্যে নিজের ভূমিকা শনাক্ত করে এবং তার মায়ের মাধ্যমে প্রবলভাবে তার পিতাকে কামনা করে।

ফ্রয়েড ইলেক্ট্রা কমপ্লেক্সের ধারণাটি বর্জন করেছিলেন এবং লৈঙ্গিক পর্যায়ে শিশুর মনোযৌন বিকাশ কীভাবে ঘটে এব্যাপারে তার তত্ত্ব অস্পষ্ট ছিল। ফ্রয়েড বলেন, মেয়েদের বেলায় এই কমপ্লেক্স কখনই শেষ হয়ে যায় না। যেহেতু সুপারইগো এর বিকাশের মাধ্যমেই এই কমপ্লেক্স সফলভাবে নিঃশেষিত হয়, এবং নারীদের বেলায় না সুপারইগো শক্তিশালী হয়, না এটি সম্পূর্ণভাবে নিঃশেষিত হয়, ফ্রয়েড বলেন, নারী তাই অবশ্যই পুরুষের থেকে নৈতিকভাবে নিকৃষ্ট। ফ্রয়েডের এই ধারনার কারণেই তার বিকাশের এই তত্ত্ব আজ বিস্তৃত পরিসরে স্বীকৃত হয় না।

পিতার অনুপস্থিতিতে

একটি প্রকল্প আছে যা অনুসারে ঈডীপাস কমপ্লেক্স ঠিক হয়ে যায় যখন বালক পিতাকে শনাক্ত করে এবং সে তার মায়ের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে পারবে এমন ধারণা ত্যাগ করে। অনেক গবেষণায় শিশুর বিকাশে পিতার অনুপস্থিতির প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা হয়েছে। যদিও, পিতা যদি শিশুর কাছে একেবারে নাই থাকে এই অবস্থায় এমন কোন গবেষণা হয়নি যেখানে এই নিষ্পত্তিকে নির্ণয় করা যায়। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির ম্যারি লেইশটি প্রকল্প তৈরি করেছেন, "এই সময় (ইডীপাস কমপ্লেক্স তৈরি করার সময়ে) যদি পিতা তার ভূমিকা পালন করার জন্য উপস্থিত না থাকেন, তাহলে এই সংঘাতের পর্যাপ্ত নিষ্পত্তি ঘটবে না।"

এই প্রকল্পটি নির্দেশ করছে, এই অবস্থায় বালকটি সাম্ভাব্য অসুরক্ষিত পর্যায়ে থাকে যেখানে সে তখনও মনে করতে পারে যে মায়ের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া তখনও তার কাছে একটি উপায়। ফ্রয়েড ধরে নিয়েছিলেন পিতার এই অনুপস্থিতির ফলে বালকের মধ্যে একই বিকাশ ঘটবে যা বালিকা দ্বারা অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত হয়। ফ্রয়েডের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই বালক একটি অবিকশিত সুপারইগো লাভ করবে, এবং এর ফলে সে কম নৈতিকতাপূর্ণ মানুষে পরিণত হবে।

গবেষণায় পরীক্ষা

সারনফ এট. আল. বলেন, শিশুকালে খোজাকরণ হুমকির অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যক্তির মাঝে খোজাকরণ উদ্বিগ্নতার মাত্রা বিভিন্ন হতে পারে। তাই একই যৌন উত্তেজক স্টিমুলাসে বিভিন্ন ব্যক্তি উদ্বিগ্নতার মাত্রা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারেন। গবেষকগণের লক্ষ্য ছিল এটা দেখানো যে, একটি নির্দিষ্ট স্টিমুলাস এর অনুপস্থিতিতে খোজাকরণ উদ্বিগ্নতায় তুমুল্ভাবে ভোগা ব্যক্তি দীর্ঘমেয়াদী উদ্বিগ্নতা ভোগ করতে পারেন। গবেষকগণ দাবী করেন, এই উদ্বিগ্নতা নারীর সাথে যৌন সম্পর্কের কামনার অবদমনের ফলাফল। এটা চিন্তা করা হত যে, এই কামনাগুলো পুরুষের চেতনায় পৌঁছতে চেষ্টা করছে। গবেষকগণ দেখান, খোজাকৃত হবার অচেতন উদ্বিগ্নতা শারীরিক আঘাতের ভয়ের সচেতনতা থেকে আসতে পারে। গবেষকগণ উপসংহার টানেন, খুব ভাল স্বাস্থ্যের ব্যক্তিরা, এবং যারা কখনও কোন গুরুতর দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন নি তারাও মারা যাবার বা কারও দ্বারা খুব হবার কঠিন এবং অবিরাম ভয় দ্বারা অবসেসড থাকতে পারেন।

খোজাকরণ উদ্বিগ্নতা সংক্রান্ত আরেকটি নিবন্ধে, হল এট. আল. ব্যক্তির স্বপ্নে খোজাকরণ উদ্বিগ্নতায় লৈঙ্গিক পার্থক্য বা সেক্স ডিফারেন্স আছে কিনা তা তদন্ত করেন। গবেষকগণ প্রকল্প তৈরি করেন যে, পুরুষেরা খোজাকরণ ইচ্ছা বা পুরুষাঙ্গ ঈর্ষার তুলনায় খোজাকরণ ভীতি সংক্রান্ত স্বপ্ন বেশি দেখেন। তারা আরও প্রকল্প তৈরি করেন যে, নারীদের মধ্যে বিপরীত প্রতিক্রিয়া কাজ করে। সেটা হল, নারীরা খোজাকরণ উদ্বিগ্নতার তুলনায় খোজাকরণ ইচ্ছার ভীতি এবং পুরুষাঙ্গ ঈর্ষা সম্পর্কিত স্বপ্ন বেশি দেখেন। এই ফলাফলগুলো দেখায় পুরুষের চেয়ে নারীরা অনেক বেশি শিশু, বিবাহ নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, এবং পুরুষেরা নারীদের চেয়ে বেশি পরিমাণে খোজাকরণ উদ্বিগ্নতা নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। এই ফলাফলগুলো ফ্রয়েডের খোজাকরণ উদ্বিগ্নতা তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।

আরও দেখুন

  • এন্টি-ঈডীপাস
  • জাক লাকাঁ
  • জেনিটাল রিট্র্যাকশন সিনড্রোম
  • লুস ইরিগারে
  • মেডুসার মস্তক
  • ফ্যালিক নারী
  • ফ্যালোগোসেন্ট্রিজম
  • ভাজাইনা ডেন্টাটা
  • মনোসমীক্ষণ তত্ত্ব
  • লৈঙ্গিক পর্যায়
  • মনোসমীক্ষণ
  • পুরুষাঙ্গ ঈর্ষা
  • সুপারইগো
  • ঈডীপাস কমপ্লেক্স

তথ্যসূত্র

Tags:

খোজাকরণ উদ্বিগ্নতা আক্ষরিক অর্থেখোজাকরণ উদ্বিগ্নতা রূপক হিসেবেখোজাকরণ উদ্বিগ্নতা ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পর্কখোজাকরণ উদ্বিগ্নতা নারীদের বেলায়খোজাকরণ উদ্বিগ্নতা ছেলেদের মধ্যে ঈডীপাস কমপ্লেক্সখোজাকরণ উদ্বিগ্নতা মেয়েদের মধ্যে ইলেক্ট্রা কমপ্লেক্সখোজাকরণ উদ্বিগ্নতা পিতার অনুপস্থিতিতেখোজাকরণ উদ্বিগ্নতা গবেষণায় পরীক্ষাখোজাকরণ উদ্বিগ্নতা আরও দেখুনখোজাকরণ উদ্বিগ্নতা তথ্যসূত্রখোজাকরণ উদ্বিগ্নতাসিগমুন্ড ফ্রয়েড

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

আল্লাহর ৯৯টি নামউত্তম কুমারমুজিবনগর সরকারআমার সোনার বাংলাবঙ্গবন্ধু সেতুইসলামে যৌন দাসত্বপ্রীতম হাসানইসলাম ও হস্তমৈথুনরাজকুমার রাওসংযুক্ত আরব আমিরাতযোনিসৌদি রিয়ালহার্দিক পাণ্ড্যজলাতংকবাংলাদেশ ছাত্রলীগজামালপুর জেলামাথিশা পাথিরানামক্কামাশাআল্লাহজনগণমন-অধিনায়ক জয় হেক্যাটরিনা কাইফজালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমিপায়ুসঙ্গমইউটিউবযৌন খেলনাআলিবাংলাদেশ ব্যাংকওবায়দুল কাদেরসূরা বাকারাখাদ্যইউরোপযৌন প্রবেশক্রিয়াহিন্দুগাজা ভূখণ্ডইসরায়েল–হামাস যুদ্ধঢাকা মেট্রোরেলের স্টেশনের তালিকাআমলকীচাঁদএটেল আদনানঋতুপুরুষাঙ্গের চুল অপসারণজসীম উদ্‌দীনক্রোমোজোমবিশ্ব দিবস তালিকাদক্ষিণ কোরিয়াবাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার তালিকাপাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারহুমায়ূন আহমেদফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকাখাজা সলিমুল্লাহক্যামেরাপলাশীর যুদ্ধজায়েদ খান (বাংলাদেশী অভিনেতা)গনোরিয়ামহাস্থানগড়কালো জাদুশিক্ষাপাথরকুচিশারীরিক ব্যায়ামবসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রশিয়া-সুন্নি সম্পর্কশাবি আলোনসোবাংলা সাহিত্যতাপপ্রবাহপরমাণুবাংলা ব্যঞ্জনবর্ণকলি যুগঅর্থ (টাকা)রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্মএকতা এক্সপ্রেসজাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দাআয়াতুল কুরসিইসরায়েলের জনসংখ্যার পরিসংখ্যানআরবি বর্ণমালাসিরিয়ারোমান্টিকতাশিয়া ইসলামের ইতিহাসআবুল কাশেম ফজলুল হক🡆 More