কিরগিজস্তান: মধ্য এশিয়ার দেশ

কিরগিজস্তান (কিরগিজ: Кыргызстан) আনুষ্ঠানিকভাবে কিরগিজ প্রজাতন্ত্র (কিরগিজ: Кыргыз Республикасы) মধ্য এশিয়ার স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। এর উত্তরে কাজাখস্তান, পূর্বে চীন, দক্ষিণে চীন ও তাজিকিস্তান এবং পশ্চিমে উজবেকিস্তান। বিশকেক দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।

কিরগিজ প্রজাান্ত্র

কিরগিজস্তানের প্রতীক
প্রতীক
নীতিবাক্য: Кыргыз Республикасы (কিরগিজ)
Kyrgyz Respublikasy
"কিরগিজ প্রজাতন্ত্র"
জাতীয় সঙ্গীত: Кыргыз Республикасынын Мамлекеттик Гимни (কিরগিজ)
"কিরগিজ প্রজাতন্ত্রের জাতীয় সঙ্গীত"
কিরগিজস্তানের অবস্থান (গাঢ় সবুজ)
কিরগিজস্তানের অবস্থান (গাঢ় সবুজ)
রাজধানী
ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি
বিশকেক
৪২°৫২′ উত্তর ৭৪°৩৬′ পূর্ব / ৪২.৮৬৭° উত্তর ৭৪.৬০০° পূর্ব / 42.867; 74.600
সরকারি ভাষাকিরগিজ
সহ-দাপ্তরিকরুশ
কথ্য ভাষা সমূহ
নৃগোষ্ঠী
(২০১৯)
  • ৭৩.৩% কিরগিজ
  • ১৪.৭% উজবেক
  • ৫.৬% রুশ
  • ১.১% দুঙগান
  • ০.৯% উইঘুর
  • ০.৯% তাজিক
  • ০.৭% তুর্কি
  • ২.৭% অন্যান্য
ধর্ম
  • ৯০% ইসলাম
  • ৮% খ্রিস্টান
  • ২% অন্যান্য
জাতীয়তাসূচক বিশেষণকিরগিজ
সরকারএকক রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্র
• রাষ্ট্রপতি
সাদির জাপারভ
• মন্ত্রিপরিষদের চেয়ারম্যান
আকিলবেক জাপারভ
• সুপ্রিম কাউন্সিলের স্পিকার
তালান্ত মামিতোভ
আইন-সভাসুপ্রিম কাউন্সিল
গঠন
• কিরগিজ খাগানাতে
৮৪০
• রাশিয়া থেকে
২৭ নভেম্বর ১৯১৭
• কিরগিজ এসএসআর
৫ ডিসেম্বর ১৯৩৬
• ইউএসএসআর থেকে
৩১ আগস্ট ১৯৯১
• সিআইএস-এ যোগদান
২১ ডিসেম্বর ১৯৯১
২৬ ডিসেম্বর ১৯৯১
• জাতিসংঘে সদস্যপদ লাভ
২ মার্চ ১৯৯২
আয়তন
• মোট
১,৯৯,৯৫১ কিমি (৭৭,২০২ মা) (৮৫তম)
• পানি (%)
৩.৬
জনসংখ্যা
• ২০২০ আনুমানিক
বৃদ্ধি ৬,৫৮৬,৬০০ (১১০তম)
• ২০০৯ আদমশুমারি
৫,৩৬২,৮০০
• ঘনত্ব
২৭.৪/কিমি (৭১.০/বর্গমাইল) (১৭৬তম)
জিডিপি (পিপিপি)২০১৯ আনুমানিক
• মোট
বৃদ্ধি ৩৫.৩২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১২৭তম)
• মাথাপিছু
বৃদ্ধি ৫,৪৭০ মার্কিন ডলার (১৩৪তম)
জিডিপি (মনোনীত)২০১৯ আনুমানিক
• মোট
বৃদ্ধি ৮.৪৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১৪১তম)
• মাথাপিছু
বৃদ্ধি ১,৩০৯ মার্কিন ডলার (১৫৮তম)
জিনি (২০১৮)নেতিবাচক বৃদ্ধি ২৭.৭
নিম্ন
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৯)বৃদ্ধি ০.৬৯৭
মধ্যম · ১২০তম
মুদ্রাকিরগিজস্তানি সোম (c) (কেজিএস)
সময় অঞ্চলইউটিসি+৬ (কেজিটি)
গাড়ী চালনার দিকডান দিক
কলিং কোড+৯৯৬
আইএসও ৩১৬৬ কোডKG
ইন্টারনেট টিএলডি.kg
কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি
বিশকেক, কিরগিজস্তান

কিরগিজস্তানের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ মুসলিম, এর অধিকাংশ জনসংখ্যা সুন্নি ইসলাম অনুসরণ করে। এরা কিরগিজ নামের একটি তুর্কীয় ভাষাতে কথা বলে। এরা কিরগিজিস্তানের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ গঠন করেছে। উজবেক ও রুশ জাতির লোকেরা এখানকার উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। ১৯শ শতকের শেষের দিকে কিরগিজিস্তান রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হয়। ১৯২৪ সালে এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা পায়। ১৯৩৬ সালে এটিকে একটি সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা দেওয়া হয়। এটি তখন কিরগিজিয়া নামেও পরিচিত ছিল। ১৯৯১ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে এবং ১৯৯৩ সালে নতুন সংবিধান পাস করে।

ব্যুৎপত্তি

ধারণা করা হয় কিরগিজ শব্দটি তুর্কি শব্দ "চল্লিশ" থেকে এসেছে, যা মানসের চল্লিশটি গোষ্ঠী সম্পর্কিত, একজন কিংবদন্তি নায়ক যিনি উইঘুরদের বিরুদ্ধে চল্লিশটি আঞ্চলিক গোষ্ঠীকে একত্রিত করেছিলেন। আক্ষরিকভাবে, কিরগিজ অর্থ "আমরা চল্লিশ"। সেই সময়ে, খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীর প্রথম দিকে, উইঘুররা মধ্য এশিয়ার (কিরগিজস্তান সহ) মঙ্গোলিয়া এবং আধুনিক রাশিয়া ও চীনের কিছু অংশে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। ফার্সি ভাষায় "স্তান" শব্দটি একটি প্রত্যয় যার অর্থ "স্থান" বা "দেশ"।

কিরগিজস্তানের পতাকায় ৪০-রশ্মি সূর্য দ্বারা সেই চল্লিশ উপজাতির মধ্যে সম্পর্ক এবং সূর্যের কেন্দ্রে গ্রাফিকাল উপাদানটি দ্বারা কাঠের মুকুটকে বুঝানো হয়েছে, যাকে বলা হয় তুন্দুক, যা একটি ইউর্ট — একটি বহনযোগ্য বাসস্থান যা ঐতিহ্যগতভাবে মধ্য এশিয়ার সোপান অঞ্চলে যাযাবরদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়।

দেশটির সরকারি নাম কিরগিজ প্রজাতন্ত্র, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গন এবং বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ইংরেজি ভাষাভাষী বিশ্বে কিরগিজস্তান বানানটি সাধারণত ব্যবহৃত হয়, যখন এর পূর্ব নাম কিরগিজিয়া খুব কমই ব্যবহৃত হতো।

ইতিহাস

প্রাথমিক ইতিহাস

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
কিরগিজ খাগানাতে

ডেভিড সি. কিং এর মতে, সিথিয়ানরা বর্তমান কিরগিজস্তানের আদি বসতি স্থাপনকারী ছিল।

৮৪০ খ্রিস্টাব্দে উইঘুর খাগানাতে পরাজিত হওরার পর কিরগিজ রাষ্ট্র এর সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণে পৌঁছেছিল। দশম শতাব্দী থেকে কিরগিজরা থিয়েন শান পর্বতমালা পর্যন্ত স্থানান্তরিত হয় এবং প্রায় ২০০ বছর ধরে এই অঞ্চলে তাদের আধিপত্য বজায় রাখে।

মানস মহাকাব্যের একটি ঐতিহ্যপূর্ণ গল্প রয়েছে, যা একজন যোদ্ধাকে নিয়ে যিনি নবম শতাব্দীতে সব বিক্ষিপ্ত উপজাতিকে একক জাতিতে একত্রিত করেছিলেন। ট্রিলজি, ইউনেস্কোর ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ তালিকার একটি অংশ, যা যাযাবর মানুষের স্মৃতিকে প্রকাশ করে।

১২ শতাব্দীতে মঙ্গোল সম্প্রসারণের ফলে কিরগিজ আধিপত্য আলতাই পর্বতমালা এবং সায়ান পর্বতমালায় সঙ্কুচিত হয়েছিল। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের উত্থানের সাথে সাথে কিরগিজরা দক্ষিণে চলে যায়। কিরগিজরা ১২০৭ সালে শান্তিপূর্ণভাবে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের একটি অংশ হয়ে ওঠে।

ইসিক কুল হ্রদ ছিল সিল্ক রোডের একটি যাত্রা বিরতির স্থান, যা দূর প্রাচ্য থেকে ইউরোপে ব্যবসায়ী, বণিক এবং অন্যান্য ভ্রমণকারীদের জন্য একটি স্থল পথ।

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
ইসলামি স্বর্ণযুগে সিল্ক রোডে কাফেলা ব্যবহার করা হতো।

কিরগিজ উপজাতিরা ১৭ শতাব্দীতে মঙ্গোল, ১৮ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে মাঞ্চুরিয়ান কিং রাজবংশ এবং ১৯ শতাব্দীর প্রথম দিকে উজবেক কোকান্দের খানাতে দ্বারা পরাজিত হয়েছিল।

রুশ বিজয়

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বর্তমান কিরগিজস্তানের পূর্ব অংশ, প্রধানত ইসিক-কুল অঞ্চল, তরবাগাতাই চুক্তির মাধ্যমে কিং চীন কর্তৃক রুশ সাম্রাজ্যের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। তখন রুশ ভাষায় "কিরগিজিয়া" নামে পরিচিত অঞ্চলটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮৭৬ সালে রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। রুশ কর্তৃত্ব অনেক বিদ্রোহের মুখোমুখি হয়েছিল এবং কিরগিজদের অনেকেই পামির পর্বতমালা এবং আফগানিস্তানকে নতুন আবাসস্থল হিসাবে বেছে নিয়েছিল।

এছাড়াও মধ্য এশিয়ায় রুশ শাসনের বিরুদ্ধে ১৯১৬ সালের বিদ্রোহ দমনের ফলে অনেক কিরগিজ পরবর্তীকালে চীনে চলে যায়। যেহেতু এই অঞ্চলের অনেক জাতিগোষ্ঠী প্রতিবেশী রাজ্যগুলির মধ্যে বিভক্ত হয়েছিল (এবং এখনও রয়েছে) এমন সময়ে যখন সীমান্তগুলি আরও উন্মুক্ত এবং কম নিয়ন্ত্রিত ছিল।

সোভিয়েত কিরগিজস্তান

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
বিশকেক

সোভিয়েত ক্ষমতা প্রাথমিকভাবে এই অঞ্চলে ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং কারা-কিরগিজ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটি রুশ এসএফএসআর-এর মধ্যে তৈরি করা হয়েছিল (কারা-কিরগিজ শব্দটি রুশরা তাদের কাজাখদের থেকে আলাদা করার জন্য ১৯২০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্যবহার করেছিল, যারা কিরগিজ নামেও পরিচিত)। ১৯৩৬ সালের ৫ ডিসেম্বর, কিরগিজ সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি সংবিধান প্রজাতন্ত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

১৯২০-এর দশকে, কিরগিজস্তান সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত এবং সামাজিক জীবনে যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছিল। সাক্ষরতার হারেও ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল, এবং কিরগিজ জাতীয় পরিচয়ের উপর খুব বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নও ছিল উল্লেখযোগ্য।

গ্লাসনোস্টের প্রথম দিকের বছরগুলি কিরগিজস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর খুব কম প্রভাব ফেলেছিল। যাইহোক, প্রজাতন্ত্রের প্রেসকে আরও উদারপন্থী অবস্থান গ্রহণ করার এবং লেখক ইউনিয়নের দ্বারা লিটারেটার্নি কিরগিজস্তান নামে একটি নতুন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। অনানুষ্ঠানিক রাজনৈতিক দলগুলি নিষিদ্ধ ছিল, তবে তীব্র আবাসন সংকট মোকাবেলায় ১৯৮৯ সালে উদিত কয়েকটি দলকে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

১৯৮৯ সালে শেষ সোভিয়েত আদমশুমারি অনুযায়ী, জাতিগত কিরগিজরা উত্তরের শহর ফ্রুঞ্জের (বর্তমানে বিশকেক) বাসিন্দাদের মাত্র ২২% ছিল, যেখানে ৬০% এরও বেশি ছিল রুশ, ইউক্রেনীয় এবং অন্যান্য স্লাভিক জাতি। রাজধানীর জনসংখ্যার প্রায় ১০% ইহুদি ছিল (ইহুদি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ব্যতীত সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রায় যে কোনও জায়গার জন্য এটি একটি অনন্য বিষয়)।

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
কিরগিজস্তানের ডাকটিকিটে ইউরিয়াল

১৯৯০ সালের জুন মাসে, ওশ অঞ্চলে (দক্ষিণ কিরগিজস্তান) উজবেক এবং কিরগিজদের মধ্যে জাতিগত উত্তেজনা দেখা দেয়, যেখানে উজবেকরা ছিল জনসংখ্যার সংখ্যালঘু। ওসিসে কিরগিজ এবং উজবেকদের মধ্যে উত্তেজনায় ১৮৬ জন নিহত হয়েছিল। আবাসন উন্নয়নের জন্য যথাযথ উজবেক সম্মিলিত খামারের চেষ্টা ওশ দাঙ্গার সূত্রপাত করেছিল। জরুরি অবস্থা ও কারফিউ জারি করা হয় এবং আসকার আকায়েভ হলেন সম্মিলিত খামার শ্রমিকদের একটি পরিবারে (উত্তর কিরগিজস্তানে) জন্ম নেওয়া পাঁচ ছেলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছেলে, যিনি একই বছরের অক্টোবরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ততদিনে, কিরগিজস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলন (কেডিএম) সংসদে সমর্থন নিয়ে একটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। ১৯৯০ সালের ১৫ ডিসেম্বর, সুপ্রিম সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের নাম পরিবর্তন করে কিরগিজস্তান প্রজাতন্ত্র করার পক্ষে ভোট দিয়েছিল। পরের বছরের জানুয়ারিতে, আকায়েভ নতুন সরকারি কাঠামো জারি করেছিলেন এবং প্রধানত তরুণ, সংস্কারমুখী রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে একটি নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, রাজধানী ফ্রুঞ্জের নাম পরিবর্তন করে বিশকেকের প্রাক-বিপ্লবী নাম রাখা হয়।

স্বাধীনতার দিকে এইসব রাজনৈতিক পদক্ষেপ সত্ত্বেও অর্থনৈতিক বাস্তবতা সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে কাজ করেছে বলে প্রতীয়মান হয়েছিল। ১৯৯১ সালের মার্চ মাসে সোভিয়েত ইউনিয়নের সংরক্ষণের উপর একটি গণভোটে ৮৮.৭% ভোটার সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটি "নতুন ফেডারেশন" হিসাবে বজায় রাখার প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল। তথাপি, বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি একই বছরের আগস্টে কিরগিজস্তানের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল।

১৯৯১ সালের ১৯ আগস্ট, যখন রাষ্ট্রীয় জরুরি কমিটি মস্কোতে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল, তখন কিরগিজস্তানে আকায়েভকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। পরের সপ্তাহে অভ্যুত্থান পতনের পর, আকায়েভ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জার্মান কুজনেটসভ সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিএসইউ) থেকে তাদের পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং পুরোপুরি ব্যুরো ও সচিবালয় থেকেও পদত্যাগ করেন। ১৯৯১ সালের ৩১ আগস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে সুপ্রিম সোভিয়েত ভোটের মাধ্যমে এটিকে কিরগিজস্তান প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।

স্বাধীনতা

১৯৯১ সালের অক্টোবরে, আকায়েভ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং সরাসরি ব্যালটে ৯৫ শতাংশ ভোট পেয়ে নতুন স্বাধীন প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি একই মাসে অন্য সাতটি প্রজাতন্ত্রের প্রতিনিধিদের সাথে নতুন অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। অবশেষে, ১৯৯১ সালের ২১ ডিসেম্বর, কিরগিজস্তান অন্য চারটি মধ্য এশীয় প্রজাতন্ত্রের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের কমনওয়েলথে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য যোগ দিয়েছিল। কিরগিজস্তান কয়েকদিন পর ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করেছিল। পরের দিন ১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর, সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৯৯২ সালে, কিরগিজস্তান জাতিসংঘ এবং অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই)-এ যোগদান করেছিল। ১৯৯৩ সালের ৫ মে আনুষ্ঠানিক নাম কিরগিজস্তান প্রজাতন্ত্র থেকে কিরগিজ প্রজাতন্ত্র-এ পরিবর্তিত হয়।

২০০৫ সালে, "টিউলিপ বিপ্লব" নামে পরিচিত একটি জনপ্রিয় বিদ্রোহ, যা একই বছরের মার্চে সংসদীয় নির্বাচনের পর সংঘটিত হয়েছিল। এ বিদ্রোহ ২০০৫ সালের ৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি আসকার আকায়েভকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল। বিরোধী নেতারা একটি জোট গঠন করেন এবং রাষ্ট্রপতি কুরমানবেক বাকিয়েভ ও প্রধানমন্ত্রী ফেলিকস কুলভের অধীনে একটি নতুন সরকার গঠিত হয়েছিল। বিক্ষোভের সময় দেশের রাজধানী লুট করা হয়েছিল।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অধরা বলে মনে হয়েছিল, যদিও বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং উপদল সংগঠিত অপরাধের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে ক্ষমতার জন্য প্রতারণা করেছিল। ২০০৫ সালের মার্চে নির্বাচিত ৭৫ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছিল এবং ২০০৬ সালের ১০ মে, খুন হওয়া একজন সংসদ সদস্যের ভাইয়ের আসনে উপ-নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরপরই অন্য একজন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল। নিহত চারজনই বড় বড় অবৈধ ব্যবসায়িক উদ্যোগের সাথে সরাসরি জড়িত বলে পরিচিত ছিলেন।[কার মতে?] ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল, তালাস শহরে সরকারি দুর্নীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির বিরুদ্ধে একটি বিক্ষোভের পর নাগরিক অস্থিরতা শুরু হয়। বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে, পরের দিন বিশকেকেও ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রপতি বাকিয়েভের কার্যালয়ের পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালিত রেডিও ও টেলিভিশন স্টেশনে হামলা চালিয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোলদোমুসা কোঙ্গাতিয়েভকে মারধর করা হয়েছে বলে পরস্পরবিরোধী খবর ছিল। ২০১০ সালের ৭ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি বাকিয়েভ জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। পুলিশ ও বিশেষ বাহিনী অনেক বিরোধী নেতাকে গ্রেপ্তার করেছিল। প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভকারীরা রাজধানী বিশকেকের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সদর দফতর (সাবেক কেজিবি সদর দফতর) এবং একটি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] কিরগিজস্তানের সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রাজধানীতে পুলিশের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত ৭৫ জন নিহত এবং ৪৫৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ফলে কমপক্ষে ৮০ জন মারা যায়। ২০১০ সালের ৮ এপ্রিলের মধ্যে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোজা ওতুনবায়েভার নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধাগুলি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল, কিন্তু বাকিয়েভ তখনো দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেননি।

রাষ্ট্রপতি বাকিয়েভ জালাল-আবাদে তার বাড়িতে ফিরে আসেন এবং ২০১০ সালের ১৩ এপ্রিল একটি সংবাদ সম্মেলনে তার পদত্যাগের শর্তাবলী জানান। ২০১০ সালের ১৫ এপ্রিল বাকিয়েভ তার স্ত্রী এবং দুই সন্তানসহ দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশ কাজাখস্তানে চলে যান। দেশটির অস্থায়ী নেতারা ঘোষণা করেছিলেন যে বাকিয়েভ তার প্রস্থানের আগে পদত্যাগের একটি আনুষ্ঠানিক চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।

কিরগিজ প্রধানমন্ত্রী দানিয়ার ইউসেনভ প্রতিবাদে সমর্থনের জন্য রাশিয়াকে অভিযুক্ত করেছিলেন; তবে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। বিরোধী সদস্যরাও মার্কিন নিয়ন্ত্রিত মানস বিমান ঘাঁটি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি দিমিত্রি মেদভেদেভ রুশ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য কিরগিজস্তানে রুশ স্থানগুলির চারপাশে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

২০১০ সালে দক্ষিণ কিরগিজস্তানের জাতিগত সংঘর্ষ দুটি প্রধান জাতিগত গোষ্ঠী—উজবেক এবং কিরগিজ এর মধ্যে ঘটেছিল—২০১০ সালের ১১ জুন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ওশে সংঘর্ষের ফলে দেশটি একটি গৃহযুদ্ধের দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
কিরগিজস্তানে যাযাবর

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন মনে করে অন্তর্বর্তী নেতা ওতুনবায়েভা রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি দিমিত্রি মেদভেদেভকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন, যাতে তিনি দেশটির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে রুশ সৈন্য সেনা পাঠাতে বললেন। মেদভেদেভের প্রেস অ্যাটাচে নাটালিয়া টিমাকোভা চিঠির জবাবে বলেছিলেন, "এটি একটি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং আপাতত রাশিয়া তার সমাধানে অংশ নেওয়ার বিষয়টি দেখবেনা"। সংঘর্ষের কারণে ২০১০ সালের ১২ জুন পর্যন্ত ২০০ জনেরও বেশি নিহত এবং ১,৬৮৫ জন আহত ১২ জুন ২০১০ (2010-06-12)-এর হিসাব অনুযায়ী হওয়ার পাশাপাশি খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। রুশ সরকার অবশ্য বলেছিল যে তারা সমস্যাগ্রস্ত দেশটিতে মানবিক সহায়তা পাঠাবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল এবং সহিংসতা শহরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। এমনও খবর পাওয়া গিয়েছিলো যে, সশস্ত্র বাহিনী শহরে প্রবেশকারী জাতিগত কিরগিজ দলকে সমর্থন করেছিল, কিন্তু সরকার অভিযোগ অস্বীকার করেছিল।

দাঙ্গা প্রতিবেশী এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল এবং সরকার সমগ্র দক্ষিণ জালাল-আবাদ অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে বিশেষ গুলি করার ক্ষমতা দিয়েছিল। রুশ সরকার রুশ সুবিধা রক্ষার জন্য দেশে একটি ব্যাটালিয়ন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
ওশ অঞ্চলের সারি-মোগোল গ্রামে কিরগিজ পরিবার

ওতুনবায়েভা বাকিয়েভের পরিবারকে "দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার" অভিযোগ এনেছিলেন। এএফপি জানিয়েছিল, "ধোঁয়ার আবরণ পুরো শহরকে ঢেকে দিয়েছে"। প্রতিবেশী উজবেকিস্তানের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, দাঙ্গা থেকে বাঁচতে অন্তত ৩০,০০০ উজবেক সীমান্ত অতিক্রম করেছিল। ২০১০ সালের ১৪ জুন, ওশ তুলনামূলকভাবে শান্ত হয়ে আসে, কিন্তু জালাল-আবাদে বিক্ষিপ্ত অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। সমগ্র অঞ্চলটি তখনও জরুরি অবস্থার মধ্যে ছিল কারণ উজবেকরা বিক্ষুব্ধ জনতার আক্রমণের ভয়ে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে নারাজ ছিল। পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য জাতিসংঘ একজন দূত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
২০১৮ সালে কিরগিজস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ওশ

অন্তর্বর্তী সরকারের উপপ্রধান তেমির সারিয়েভ বলেছিলেন, স্থানীয় সংঘর্ষ হয়েছে এবং পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা [সরকারের পক্ষে] সম্ভব ছিল না। তিনি আরও যোগ করেন, সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী ছিল না। সংবাদ সংস্থাগুলি ২০১০ সালের ১৪ জুন পর্যন্ত প্রতিবেদন করেছিল যে রুশ সরকার কিরগিজ সরকারের একটি অনুরোধ বিবেচনা করেছিল৷ একই দিনে (১৪ জুন) সম্মিলিত নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থা (সিএসটিও) এর একটি জরুরী সভায় সহিংসতা অবসানে সহায়তা করতে ভূমিকা রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। কিরগিজ সরকারের মতে, ২০১০ সালের ১৫ জুন নাগাদ জাতিগত সহিংসতা হ্রাস পায় এবং কিরগিজ রাষ্ট্রপতি রোজা ওতুনবায়েভা সেদিন একটি সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন এবং ঘোষণা করেছিলেন যে সহিংসতা দমন করতে রাশিয়ার সৈন্য পাঠানোর প্রয়োজন নেই। ২০১০ সালের ১৫ জুনের মধ্যে কমপক্ষে ১৭০ জন মারা গিয়েছিল কিন্তু আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির প্যাসকেল মেইজ ওয়াগনার বলেছিলেন [সরকারি] মৃতের সংখ্যা একটি অবমূল্যায়ন ছিল। জাতিসংঘের হাইকমিশনার জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রমাণ থেকে বোঝা যায় যে সহিংসতা মঞ্চস্থ হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। জাতিগত উজবেকরা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেতে ব্যর্থ হলে ওশের একটি তেলের ডিপো উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। জাতিসংঘ বলেছিল তারা বিশ্বাস করে যে এই হামলাগুলি ছিল "সুসংবদ্ধ, লক্ষ্যবস্তু এবং সুপরিকল্পিত"। কিরগিজ কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন জালাল-আবাদে সহিংসতার পিছনে সন্দেহভাজন একজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছিল।

২০১০ সালের ২ আগস্টে কিরগিজ সরকারের একটি কমিশন সংঘর্ষের কারণ অনুসন্ধান শুরু করেছিল। সাবেক সংসদ স্পিকার আবদিগনি এরকেবায়েভের নেতৃত্বে জাতীয় কমিশনের সদস্যরা ওশ ওব্লাস্টের কারা-সু জেলার মাডি, শার্ক এবং কিজিল-কিশতাকের প্রধান জাতিগত উজবেক গ্রামের লোকদের সাথে দেখা করেছিলেন। রাষ্ট্রপতির একটি আদেশে অনেক জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে এই জাতীয় কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

রাষ্ট্রপতি রোজা ওতুনবায়েভাও ২০১০ সালের আগস্টে বলেছিলেন যে সংঘর্ষের তদন্তের জন্য একটি আন্তর্জাতিক কমিশন গঠন করা হবে। আন্তর্জাতিক কমিশন ব্যাপক তদন্ত করেছিল এবং একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিল- ২০১০ সালের জুনে দক্ষিণ কিরগিজস্তানের ঘটনাগুলির তদন্তের জন্য গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশন (কেআইসি)। এটা বলেছিল যে, "ঘটনার দুই মাস আগে ক্ষমতা গ্রহণকারী অস্থায়ী সরকার হয় দক্ষিণ কিরগিজস্তানে আন্তঃ-জাতিগত সম্পর্কের অবনতি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে বা অবমূল্যায়ন করেছে"। কেআইসি সবশেষে বলেছিল যে, "অস্থায়ী সরকারের দায়িত্ব ছিল নিরাপত্তা বাহিনীকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং নাগরিক অস্থিরতার পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাযথভাবে পদক্ষেপ নেওয়া" কিন্তু কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।

আজ অদ্যাবধি কিরগিজস্তান প্রতি বছর ৩১ আগস্ট এর স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে, ১৯৯১ সালে এর স্বাধীনতা ঘোষিত হয়। স্বাধীনতার পর থেকে, কিরগিজস্তান প্রকৃত মুক্ত সংবাদ মাধ্যম তৈরি করা এবং একটি সক্রিয় রাজনৈতিক বিরোধী দল গড়ে তোলার মতো উন্নয়ন করেছে।

২০২১ সালের এপ্রিলের শেষের দিকে, পানি নিয়ে সংঘাত ১৯৯১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে কিরগিজস্তান এবং তাজিকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর সীমান্ত সংঘর্ষে পরিণত হয়।

রাজনীতি

কিরগিজিস্তানের রাজনীতি একটি অর্ধ-রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। সরকারপ্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার এবং আইনসভা উভয়ের উপর ন্যস্ত।

রাজনৈতিক ব্যবস্থা

সোরনবে জিনবেকভ, রাষ্ট্রপতি পদে ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন

১৯৯৩ সালের সংবিধান একটি গণতান্ত্রিক এককক্ষ বিশিষ্ট প্রজাতন্ত্র হিসাবে সরকারের গঠনকে নির্দেশ করে। নির্বাহী শাখায় একজন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী অন্তর্ভুক্ত থাকেন। বর্তমানে সংসদ এককক্ষ বিশিষ্ট। বিচার বিভাগীয় শাখা সর্বোচ্চ আদালত, স্থানীয় আদালত এবং একজন প্রধান প্রসিকিউটর নিয়ে গঠিত।

২০০২ সালের মার্চ মাসে, দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা আকসিতে একজন বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদকে বিধিবহির্ভূত গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে পাঁচজন ব্যক্তিকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছিল, ফলে দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। রাষ্ট্রপতি আসকার আকায়েভ একটি সাংবিধানিক সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন যা প্রাথমিকভাবে একটি উন্মুক্ত সংলাপে সরকার, নাগরিক এবং সামাজিক প্রতিনিধিদের বিস্তৃত পরিসরের অংশগ্রহণ ছিল, যার ফলে ভোটের অনিয়মের কারণে ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণভোট হয়েছিল।

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
বিশকেকের সুপ্রিম কাউন্সিল ভবন।

গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত সংবিধান সংশোধনীর ফলে রাষ্ট্রপতির শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ এবং সংসদ ও সাংবিধানিক আদালত দুর্বল হয়ে পড়ে। ২০০৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং ১৩ মার্চ, ৭৫-আসনের এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার জন্য একটি নতুন সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, কিন্তু এতে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তী বিক্ষোভের ফলে ২০০৫ সালের ২৪ মার্চ একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান ঘটে, যার পরে আকায়েভ তার পরিবারের সাথে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং কুরমানবেক বাকিয়েভ (দেখুন: টিউলিপ বিপ্লব) ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন।

২০০৫ সালের ১০ জুলাই, ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি বাকিয়েভ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৮৮.৯% ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন এবং ১৪ আগস্ট অভিষিক্ত হয়েছিলেন। যাইহোক, সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দেশটিতে সংসদের বেশ কয়েকজন সদস্যকে হত্যাসহ দুর্নীতির সমস্যা সমাধানে এর স্পষ্ট অক্ষমতার ফলে নতুন প্রশাসনের জন্য প্রাথমিক জনসমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল। ২০০৬ সালের এপ্রিল এবং নভেম্বরে বিশকেকে রাষ্ট্রপতি বাকিয়েভের বিরুদ্ধে বড় আকারের বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছিল, যেখানে বিরোধী নেতারা রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে দেশের সংবিধান সংস্কার ও তার রাষ্ট্রপতির অনেক ক্ষমতা সংসদে হস্তান্তর করা সহ তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলি ব্যর্থ হওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন।

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
রাষ্ট্রপতি সুরোনবে জিনবেকভ এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন, ১৪ মে ২০১৮

কিরগিজস্তান অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই) এরও সদস্য, ৫৬টি অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রের একটি লীগ যা ইউরেশিয়ায় শান্তি, স্বচ্ছতা এবং মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ওএসসিই-এর অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র হিসেবে কিরগিজস্তানের আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতিগুলো মার্কিন হেলসিঙ্কি কমিশনের আদেশের অধীনে পর্যবেক্ষণের বিষয়।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্প্রচার কেটিআরকে ঘোষণা করেছিল যে এটির জন্য রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি প্রোগ্রামগুলি আগে জমা দিতে হবে, যা ২০০৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী কেটিআরকেতে পুনরায় প্রেরণ করতে হবে। কেটিআরকে ২০০৮ সালের অক্টোবরে আরএফই/আরএল অনুষ্ঠান পুনঃপ্রচার বন্ধ করে দিয়েছিল, এটি এক সপ্তাহ পরে 'অসুবিধাজনক প্রশ্ন' নামে একটি আরএফই/আরএল অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে ব্যর্থ হয়েছিল যা অক্টোবরের নির্বাচনকে নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলো, দাবি করে যে প্রাসঙ্গিক উপাদানগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপতি বাকিয়েভ এই প্রোগ্রামের সমালোচনা করেছিলেন এবং বলেন, এ অনুষ্ঠানটি ছিল খুবই নেতিবাচক। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস, যেটিতে কিরগিজস্তান এর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সূচকের ১৭৩টি দেশের মধ্যে ১১১তম স্থানে ছিল, তবে এটি এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছিলো।

২০০৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি, রাষ্ট্রপতি কুরমানবেক বাকিয়েভ মধ্য এশিয়ায় অবশিষ্ট একমাত্র মার্কিন সামরিক ঘাঁটি মানস বিমান ঘাঁটি দ্রুত বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২০০৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সরকার-সমর্থিত বিলের পক্ষে ৭৮-১ ভোটের মাধ্যমে সংসদ দ্বারা বন্ধটি অনুমোদিত হয়েছিল। যাইহোক, কিরগিজ, রুশ এবং আমেরিকান কূটনীতিকদের মধ্যে তদবিরে আলোচনার পরে, ২০০৯ সালের জুনে সিদ্ধান্তটি ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। আমেরিকানদের একটি নতুন চুক্তির অধীনে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে বছরে ভাড়া ১৭.৪ মিলিয়ন থেকে ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি পায়।

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
চীনে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি সুরোনবে জিনবেকভ, জুন ২০১৮

বিশ্বের পঞ্চাশটি দেশের মধ্যে কিরগিজস্তানে দুর্নীতির সর্বোচ্চ স্তর রয়েছে: ২০১৬ সালে দুর্নীতি উপলব্ধি সূচকের ০ (সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত) থেকে ১০০ (সর্বনিম্ন দুর্নীতিগ্রস্ত) স্কেলের মধ্যে ২৮ স্কোর ছিল কিরগিজস্তানের।

২০১০ সালে দেশে আরেকটি বিপ্লবের সূত্রপাত হয়েছিল (দেখুন: এপ্রিল অভ্যুত্থান)। রাষ্ট্রপতি কুরমানবেক বাকিয়েভ তার পুত্র মাকসিম এবং ভাই জানিশ সহ তার আত্মীয়দের সাথে কাজাখস্তানে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন এবং তারপরে বেলারুশে আশ্রয় চেয়েছিলেন। রোজা ওতুনবায়েভা, যিনি অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হয়েছিলেন, ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি ২০১১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান না। নির্বাচনটি নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আলমাজবেক আতামবায়েভ জয়লাভ করেছিলেন এবং আতামবায়েভ ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন। ওমুরবেক বাবানভ একই দিনে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং ২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর স্থায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

২০১৭ সালের অক্টোবরে ক্ষমতাসীন আলমাজবেক আতামবায়েভ সমর্থিত একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুরোনবে জিনবেকভ কিরগিজস্তানের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট, কিরগিজস্তানের বিশেষ বাহিনী সাবেক রাষ্ট্রপতি আলমাজবেক আতামবায়েভের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে তার বাসভবনে একটি অভিযান শুরু করেছিলো।নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে রাষ্ট্রপতি জিনবেকভ সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য আতামবায়েভকে অভিযুক্ত করেছিলেন। ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর সংসদীয় নির্বাচনে অনিয়মের কারণে প্রতিবাদের পরে রাষ্ট্রপতি সুরোনবে জিনবেকভ পদত্যাগ করেন। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে, সাদির জাপারভ বিপুল সংখ্যক ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী হয়ে নতুন রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হন।

২০২১ সালের এপ্রিলে, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার সাংবিধানিক গণভোটে একটি নতুন সংবিধান অনুমোদন করেছে যা রাষ্ট্রপতিকে নতুন ক্ষমতা দিয়েছে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করেছে।

সৈন্যবাহিনী

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
কিরগিজ সৈন্যরা মাইন সুইপিং অনুশীলন পরিচালনা করছে।

কিরগিজস্তানের সশস্ত্র বাহিনী সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর গঠিত হয়েছিল এবং এটি স্থল বাহিনী, বিমান বাহিনী, অভ্যন্তরীণ সৈন্য, জাতীয় রক্ষী এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনী নিয়ে গঠিত হয়েছিল। সামরিক বাহিনী মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর সাথে কাজ করেছে, যাদেরকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত বিশকেকের কাছে মানস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মানস ট্রানজিট সেন্টার নামে একটি সুবিধা লিজ দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সশস্ত্র বাহিনী রাশিয়ার সাথে আরও ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে শুরু করেছে যার মধ্যে রয়েছে ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের আধুনিকীকরণ চুক্তি স্বাক্ষর এবং রুশ সৈন্যদের সাথে আরও অনুশীলনে অংশ নেওয়া। জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা সেনাবাহিনীর সাথে কাজ করে এবং এর সোভিয়েত পূর্বসূরী কেজিবি-র অনুরূপ উদ্দেশ্যে কাজ করে। এটি রাশিয়া এবং উজবেকিস্তান সহ অন্যান্য সাবেক সোভিয়েত দেশগুলির দ্বারা ব্যবহৃত একই নাম যা "আলফা" নামে পরিচিত, একটি অভিজাত সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ বাহিনী ইউনিটের তত্ত্বাবধান করে। সীমান্ত রক্ষীসহ পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত হয়।

মানবাধিকার

কিরগিজস্তানকে গণতন্ত্র সূচকে "সংকর গণতন্ত্র" হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে, যা ২০২০ সালে ১৬৭-এর মধ্যে ১০৭তম স্থানে ছিল। কিরগিজস্তান ২৮/১০০ স্কোর নিয়ে ২০২১ সালে ফ্রিডম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড প্রতিবেদনে "মুক্ত নয়" স্থান পেয়েছিল। ২০২০ সালে, এটি ৩৯/১০০ স্কোর নিয়ে "আংশিকভাবে মুক্ত" স্থান পেয়েছিল।

অধিকতর গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার পরও অনেক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। দেশটি মধ্য এশিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্রের তুলনায় ভালো কাজ করছে এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এখনও উন্নতি করছে।

২০১০ সালে দক্ষিণ কিরগিজস্তানে দাঙ্গার পর সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী আজিমজান আসকারভ সহ কয়েক ডজন বিশিষ্ট উজবেক ধর্মীয় ও সম্প্রদায়ের নেতাদের নিরাপত্তা বাহিনী গ্রেফতার করেছিল, যা মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোকে শঙ্কিত করেছিলো। ২০১৩ সালের জুনে কিরগিজ সংসদে "নৈতিকতা বৃদ্ধি এবং জিন পুলের সংরক্ষণ" এর উদ্দেশ্যে ২৩ বছরের কম বয়সী মহিলাদেরকে পিতামাতা বা অভিভাবক ছাড়া বিদেশ ভ্রমণে নিষিদ্ধ করে একটি আইন পাস করেছিলো। ২০১৪ সালের অক্টোবরে আমেরিকান কূটনীতিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, যখন কিরগিজস্তানের আইনপ্রণেতারা একটি আইন পাস করেছিল যা সমকামী-অধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকদের সহ অন্যান্যদের জেলের শর্ত আরোপ করেছিল, যারা "অপ্রথাগত যৌন সম্পর্কের প্রতি একটি ইতিবাচক মনোভাব" তৈরি করে।

কিরগিজস্তানি কর্মী এবং সাংবাদিক আজিমজান আসকারভকে ২০১০ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি, একটি কিরগিজ আদালত আসকারভের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা পুনর্বহাল রেখেছিল।

প্রশাসনিক অঞ্চল

কিরগিজস্তান সাতটি অঞ্চলে বিভক্ত (কিরগিজ: облустар)। অঞ্চলগুলি ৪৪টি জেলায় বিভক্ত (কিরগিজ: аймактар, aymaqtar;)। জেলাগুলিকে প্রশাসনের সর্বনিম্ন স্তরে রেখে গ্রামীণ জেলাগুলিতে আরও উপবিভক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে সংশ্লিষ্ট পৌর সরকার ব্যতীত সব গ্রামীণ জনবসতি (aýyl ökmötü) এবং গ্রাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বিশকেক এবং ওশ শহরগুলির "রাষ্ট্রীয় গুরুত্ব" রয়েছে এবং এগুলি কোনও অঞ্চলের অন্তর্গত নয়।

রাষ্ট্রপতি দ্বারা প্রতিটি অঞ্চলের নেতৃত্বে একজন আকিম (আঞ্চলিক গভর্নর) নিযুক্ত হন। জেলা আকিমকে আঞ্চলিক আকিম দ্বারা নিযুক্ত করা হয়।

টেমপ্লেট:কিরগিজস্তান অঞ্চল চিত্র মানচিত্র উপবিভাগ সহ অঞ্চল এবং স্বাধীন শহরগুলি নিম্নরূপ:

  1. বিশকেক শহর
    1. লেনিন জেলা
    2. ওকতিয়াবর জেলা
    3. বিরিঞ্চি মে জেলা
    4. সেভারদলভ জেলা
  2. বাটকেন অঞ্চল
    1. বাটকেন জেলা
    2. কদমজাই জেলা
    3. লেইলেক জেলা
  3. চুই অঞ্চল
    1. আলামুদুন জেলা
    2. চুই জেলা
    3. জাইল জেলা
    4. কেমিন জেলা
    5. মোস্কভা জেলা
    6. পানফিলভ জেলা
    7. সোকুলুক জেলা
    8. ইসিক-আতা জেলা
  4. জালাল-আবাদ অঞ্চল
    1. আকসি জেলা
    2. আলা-বুকা জেলা
    3. বাজার-করগন জেলা
    4. চাটকাল জেলা
    5. নুকেন জেলা
    6. সুজাক জেলা
    7. তোগুজ-তোরো জেলা
    8. টোকটোগুল জেলা
  5. নারিন অঞ্চল
    1. আক-তালা জেলা
    2. আত-বাশি জেলা
    3. জুমগাল জেলা
    4. কোচকোর জেলা
    5. নারিন জেলা
  6. ওশ অঞ্চল
    1. আলে জেলা
    2. আরাবন জেলা
    3. চং-আলে জেলা
    4. কারা-কুলজা জেলা
    5. কারা-সু জেলা
    6. নুকাত জেলা
    7. ওজগন জেলা
  7. তালাস অঞ্চল
    1. বাকে-আতা জেলা
    2. কড়া-বুউরা জেলা
    3. মানস জেলা
    4. তালাস জেলা
  8. ইসিক-কুল অঞ্চল
    1. আক-সু জেলা
    2. ইসিক-কুল জেলা
    3. জেটি-ওগুজ জেলা
    4. টং জেলা
    5. তুপ জেলা
  9. ওশ শহর

ভূগোল

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
কিরগিজস্তানের ভূসংস্থান
কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
ইসিক কুল হ্রদের দক্ষিণ তীরে, ইসিক কুল অঞ্চল

কিরগিজস্তান মধ্য এশিয়ার একটি স্থলবেষ্টিত দেশ, যা কাজাখস্তান, চীন, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তানের সীমান্তবর্তী। এটি অক্ষাংশ ৩৯° ও ৪৪° উত্তর এবং দ্রাঘিমাংশ ৬৯° ও ৮১° পশ্চিমের মধ্যে অবস্থিত। এটি অন্য যেকোনো স্বতন্ত্র দেশের তুলনায় সমুদ্র থেকে অনেক বেশি দূরে এবং এর সব নদী বদ্ধ নিষ্কাশন ব্যবস্থায় প্রবাহিত হয় যা সমুদ্রে পৌঁছায় না। থিয়েন শানের পার্বত্য অঞ্চলটি দেশের ৮০% এরও বেশি জায়গাজুড়ে রয়েছে (কিরগিজস্তানকে কখনও কখনও "মধ্য এশিয়ার সুইজারল্যান্ড" হিসাবে উল্লেখ করা হয়), যার অবশিষ্টাংশ উপত্যকা এবং অববাহিকা দ্বারা গঠিত।

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
কিরগিজস্তানের মানচিত্র

কিরগিজ ভাষায় ইসিক-কুল হ্রদ বা ইসিক-কোল, উত্তর-পূর্বে থিয়েন শান হল কিরগিজস্তানের বৃহত্তম হ্রদ এবং টিটিকাকার পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্বত হ্রদ। ১৩২ মিটারে সর্বনিম্ন বিন্দু কারা-দরিয়া (কারাদ'রিয়া) এবং সর্বোচ্চ চূড়া কাকশাল-টু পর্বতমালায় রয়েছে, যা চীনা সীমান্ত তৈরি করেছে। ৭,৪৩৯ মি (২৪,৪০৬ ফু) উচ্চতায় জেঙ্গিশ চোকুসুর চূড়া হল সর্বোচ্চ বিন্দু এবং ভূতাত্ত্বিকদের দ্বারা এটিকে বিশ্বের ৭,০০০ মি (২২,৯৬৬ ফু) বেশি উত্তরের চূড়া বলে মনে করা হয়। শীতকালে ভারী তুষারপাত বসন্তের বন্যার দিকে নিয়ে যায় যা প্রায়শই নিচের দিকে মারাত্মক ক্ষতি করে। পাহাড় থেকে বয়ে যাওয়া স্রোতধারা জলবিদ্যুতের জন্যও ব্যবহৃত হয়।

কিরগিজস্তানে স্বর্ণ এবং বিরল-মৃত্তিকা ধাতু সহ ধাতুর উল্লেখযোগ্য মজুদ রয়েছে। প্রধানত দেশের পার্বত্য অঞ্চলের কারণে ৮% এরও কম জমি চাষ করা হয় এবং এটি উত্তরের নিম্নভূমি ও ফারগানা উপত্যকার প্রান্তে কেন্দ্রীভূত।

উত্তরে বিশকেক হল রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর, যেখানে ৯৩৭,৪০০ জন বাসিন্দা রয়েছে (২০১৫ সাল অনুযায়ী)। দ্বিতীয় শহরটি হল প্রাচীন শহর ওশ, যা উজবেকিস্তানের সীমান্তের কাছে ফারগানা উপত্যকায় অবস্থিত। প্রধান নদী হল কারা দরিয়া, যা পশ্চিমে ফারগানা উপত্যকা দিয়ে উজবেকিস্তানে প্রবাহিত হয়েছে। উজবেকিস্তানের সীমান্ত পেরিয়ে এটি আরেকটি প্রধান কিরগিজ নদী নারিনের সাথে মিলিত হয়েছে।

মোহনাটি সির দরিয়া গঠন করে, যা মূলত আরাল সাগরে প্রবাহিত হয়েছে। তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং দক্ষিণ কাজাখস্তানে তুলার ক্ষেতে সেচ দেওয়ার জন্য ২০১০ সাল থেকে এটি আর সমুদ্রে পৌঁছায় না কারণ এর পানি উজানে অপসারিত করা হয়। চু নদীও কাজাখস্তানে প্রবেশের আগে সংক্ষিপ্তভাবে কিরগিজস্তানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।

কিরগিজস্তানে সাতটি স্থলজ বাস্তুতন্ত্র রয়েছে: থিয়েন শান মন্টেন কনিফার বন, আলাই-পশ্চিম থিয়েন শান প্রান্তর, গিসারো-আলাই উন্মুক্ত বনভূমি, থিয়েন শান পাদদেশীয় শুষ্ক প্রান্তর, পামির আলপাইন মরুভূমি ও তুন্দ্রা, তিয়ান শান মন্টেন প্রান্তর ও তৃণভূমি এবং মধ্য এশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় মরুভূমি। এটির ২০১৯ ফরেস্ট ল্যান্ডস্কেপ ইন্টিগ্রিটি ইনডেক্সে গড় স্কোর ছিল ৮.৮৬/১০, ১৭২টি দেশের মধ্যে এটিকে বিশ্বব্যাপী ১৩তম স্থান দেওয়া হয়েছে।

জলবায়ু

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিভাগের কিরগিজস্তানের মানচিত্র

জলবায়ু অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমে নিম্নভূমির ফারগানা উপত্যকা উপ-ক্রান্তীয় এবং গ্রীষ্মকালে অত্যন্ত গরম ও তাপমাত্রা ৪০ °সে (১০৪ °ফা) পৌঁছায়। উত্তরের পাদদেশগুলি নাতিশীতোষ্ণ এবং থিয়েন শান উচ্চতার উপর নির্ভর করে শুষ্ক মহাদেশীয় থেকে মেরু জলবায়ুতে পরিবর্তিত হয়। শীতলতম অঞ্চলে শীতকালে প্রায় ৪০ দিনের জন্য তাপমাত্রা শূন্যের নিচে থাকে, এমনকি কিছু মরুভূমিতেও এই সময়ের মধ্যে অবিরাম তুষারপাত হয়। নিম্নভূমিতে তাপমাত্রা জানুয়ারিতে প্রায় −৬ °সে (২১ °ফা) থেকে জুলাই মাসে ২৪ °সে (৭৫ °ফা) পর্যন্ত থাকে।

জলবায়ু পরিবর্তন

কিরগিজস্তানে জলবায়ু পরিবর্তন ইতিমধ্যেই প্রভাব ফেলছে। পূর্ব ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে কিরগিজস্তান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলির জন্য তৃতীয় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, যেমন আবহাওয়ার ধরনগুলির পরিবর্তন যা দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিপাত এবং খরার কারণ হতে পারে৷ গত ২০ বছরে এদের গড় তাপমাত্রা এখন পর্যন্ত ৫.৮°সে. থেকে ৬°সে. পর্যন্ত বেড়েছে।

২০১৩ সালে বিশ্বব্যাংক ধারণা করেছিল যে ২০৬০ সালের মধ্যে গড় তাপমাত্রা ২°সে. এবং ২১০০ সালের মধ্যে ৪-৫°সে. বৃদ্ধি পাবে, উল্লেখ্য যে দেশের হিমবাহগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং আরও হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হয়েছে৷ তবে তাপমাত্রার খুব সামান্য বৃদ্ধি কৃষি, শক্তি এবং বনায়নের মতো জলবায়ু-সংবেদনশীল খাতগুলিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে কারণ আরও বেশি জমি সর্বোত্তম তাপমাত্রা ব্যান্ডের মধ্যে রয়েছে।

ছিটমহল এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপনিবেশ

ফারগানা উপত্যকায় বরাকের ছোট গ্রামে একটি ক্ষুদ্র উপনিবেশ (জনসংখ্যা ৬২৭) রয়েছে। গ্রামটি উজবেক অঞ্চল দ্বারা বেষ্টিত। এটি ওশ (কিরগিজস্তান) থেকে খোদজাবাদ (উজবেকিস্তান) যাওয়ার রাস্তায় কিরগিজ-উজবেক সীমান্ত থেকে আন্দিজানের দিকে প্রায় ৪ কিলোমিটার (২ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। বরাক প্রশাসনিকভাবে কিরগিজস্তানের ওশ অঞ্চলের কারা-সু জেলার অংশ।

কিরগিজস্তানের মধ্যে চারটি উজবেক ছিটমহল রয়েছে। তাদের মধ্যে দুটি হল সোখ শহর, যার আয়তন ৩২৫ কিমি (১২৫ মা) এবং ১৯৯৩ সালে জনসংখ্যা ছিল ৪২,৮০০ জন—যদিও কিছু হিসাব মতে ৭০,০০০-এর বেশি (৯৯% তাজিক, বাকিরা উজবেক); এবং শাখিমর্দান (শাহিমর্দান, শোহিমর্দন, বা শাহ-ই-মর্দান নামেও পরিচিত, আয়তন ৯০ কিমি (৩৫ মা) এবং ১৮৯৩ সালে জনসংখ্যা ছিল ৫,১০০ জন; ৯১% উজবেক, বাকিরা কিরগিজ); অন্য দুটি হল চং-কারা (প্রায় ৩ কিমি (২ মা) দীর্ঘ এবং ১ কিমি (০.৬ মা) প্রশস্ত) এবং জাঙ্গি-আইলের (মাত্র ২–৩ কিমি (১–২ মা) জুড়ে জমির একটি বিন্দু) ক্ষুদ্র অঞ্চল। চোং-কারা উজবেক সীমান্ত এবং সোখ ছিটমহলের মধ্যে সোখ নদীর উপর অবস্থিত। জাঙ্গি-আইল খালমিওনের কাছে কিরগিজ-উজবেক সীমান্তের উত্তর দিকে অভিক্ষেপে বাটকেন থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার (৩৭ মা) পূর্বে অবস্থিত।

এছাড়াও তাজিকিস্তানের অন্তর্গত দুটি ছিটমহল রয়েছে: ভোরুখ (৯৫–১৩০ কিমি (৩৭–৫০ মা) এর মধ্যে ছিটমহলের আয়তন), আনুমানিক জনসংখ্যা ২৩,০০০ থেকে ২৯,০০০ এর মধ্যে, ৯৫% তাজিক এবং ৫% কিরগিজ, ১৭টি গ্রামের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে), কারাভশিন নদীর ডান তীরে ইসফারার ৪৫ কিলোমিটার (২৮ মা) দক্ষিণে অবস্থিত, এবং কাইরাগাচের কিরগিজ রেলওয়ে স্টেশনের কাছে একটি ছোট বসতি রয়েছে।

অর্থনীতি

সুউচ্চ পাহাড়ি ভূ-প্রকৃতি কিরগিজিস্তানের পরিবহন ব্যবস্থার উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। কিরগিজিস্তানের সড়কগুলি খাড়া পাহাড়ী ঢাল বেয়ে সর্পিলাকারে উঠে নেমে চলে গেছে। অনেকসময় এগুলিকে সমুদ্র সমতল থেকে ৩০০০ মিটার উঁচু গিরিপিথের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। রাস্তাগুলি প্রায়ই ভূমিধস এবং হিমানী সম্প্রপাতের শিকার হয়। শীতকালে উচ্চ উচ্চতার দূরবর্তী অঞ্চলগুলিতে ভ্রমণ অত্যন্ত দুঃসাধ্য। আরেকটি সমস্যা হল সোভিয়েত আমলে নির্মিত বেশির ভাগ সড়কগুলির মধ্য দিয়ে বর্তমানে আন্তর্জাতিক সীমান্ত চলে গেছে, ফলে এসমস্ত সড়কে সীমান্ত প্রোটোকলগুলি মেনে চলতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট হয়। কিরগিজিস্তানে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে এখনও ঘোড়া ব্যবহৃত হয়।

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
কিরগিজস্তানের রপ্তানির আনুপাতিক চিত্র, ২০১৯

"কিরগিজ প্রজাতন্ত্র ন্যাশনাল ব্যাংক" কিরগিজস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে কাজ করে।

কিরগিজস্তান ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নবম দরিদ্রতম দেশ এবং বর্তমানে তাজিকিস্তানের পরে মধ্য এশিয়ার দ্বিতীয় দরিদ্রতম দেশ। দেশের জনসংখ্যার ২২.৪% দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক সহ প্রধান পশ্চিমা ঋণদাতাদের সমর্থন সত্ত্বেও কিরগিজস্তান স্বাধীনতার পর অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছে। প্রাথমিকভাবে, এসব ছিল সোভিয়েত বাণিজ্য সমবায় থেকে বিচ্ছেদের ফল এবং ফলস্বরূপ বাজারের ক্ষতি, যা একটি চাহিদা অর্থনীতিতে প্রজাতন্ত্রের রূপান্তরকে বাধাগ্রস্ত করেছিল।

সরকার ব্যয় কমিয়ে অধিকাংশ মূল্য ভর্তুকি বন্ধ করেছিল এবং মূল্য সংযোজন কর চালু করেছিল। সামগ্রিকভাবে, সরকার বাজার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সংস্কারের মাধ্যমে সরকার দীর্ঘমেয়াদী ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির একটি আদর্শ রূপ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সংস্কারের ফলে কিরগিজস্তান ১৯৯৮ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) যোগদান করে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে কিরগিজ অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং এর বিশাল বাজারেরও ক্ষতি হয়েছিল। ১৯৯০ সালে, কিরগিজ রপ্তানির প্রায় ৯৮% সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যান্য অংশে গিয়েছিল। এইভাবে, ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে দেশের অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আর্মেনিয়া, আজারবাইজান এবং তাজিকিস্তান ছাড়া অন্য যেকোনো সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের চেয়ে খারাপ ছিল, কারণ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে তাদের ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলি হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কারখানা এবং রাষ্ট্রীয় খামারগুলি ভেঙে পড়েছিল। যদিও গত কয়েক বছরে অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছে এবং বিশেষ করে ১৯৯৮ সাল থেকে পর্যাপ্ত আর্থিক রাজস্ব নিশ্চিত করা ও পর্যাপ্ত সামাজিক নিরাপত্তা বলয় প্রদানের ক্ষেত্রে অসুবিধা রয়ে গেছে। রাশিয়ায় কর্মরত প্রায় ৮০০,০০০ জন কিরগিজ অভিবাসীর রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে অবদান রাখছে, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রেমিট্যান্স হ্রাস পেয়েছে।

কৃষি কিরগিজস্তানের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত (দেখুন কিরগিজস্তানে কৃষি)। ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে, বেসরকারী কৃষি খাত কিছু ফসলের এক-তৃতীয়াংশ থেকে এক-অর্ধেকের মধ্যে সরবরাহ করতো। ২০০২ সালে কৃষি জিডিপির ৩৫.৬% এবং কর্মসংস্থানের প্রায় অর্ধেক ছিল। কিরগিজস্তানের ভূখণ্ড পাহাড়ি এলাকা, যাতে প্রাণিসম্পদ পালনের ব্যবস্থা রয়েছে, সবচেয়ে বড় কৃষি কার্যকলাপও হয়ে থাকে, তাই ফলস্বরূপ উল, মাংস এবং দুগ্ধজাত পণ্যের মতো মুখ্য পণ্যদ্রব্যাদি পাওয়া যায়। প্রধান ফসলের মধ্যে রয়েছে গম, চিনির বীট, আলু, তুলা, তামাক, শাকসবজি এবং ফল। আমদানীকৃত কৃষি রাসায়নিক ও পেট্রোলিয়ামের দাম এত বেশি হওয়ায় তাই পূর্বের প্রজন্মের মতো হাত ও ঘোড়া দ্বারা চাষাবাদ করা হচ্ছে। কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প অর্থনীতির একটি মূল উপাদান এবং সেইসাথে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় খাতগুলির মধ্যে একটি।

কিরগিজস্তান খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ কিন্তু পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ খুবই নগণ্য; এটি পেট্রোলিয়াম এবং গ্যাস আমদানি করে। এর খনিজ মজুদের মধ্যে রয়েছে কয়লা, সোনা, ইউরেনিয়াম, অ্যান্টিমনি এবং অন্যান্য মূল্যবান ধাতু। ধাতুবিদ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এবং সরকার এই ক্ষেত্রে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে বলে আশাবাদী। সরকার কুমতোর সোনার খনি এবং অন্যান্য অঞ্চল থেকে স্বর্ণ আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিদেশী সম্পৃক্ততাকে সক্রিয়ভাবে উৎসাহিত করেছে। দেশের প্রচুর পানি সম্পদ এবং পার্বত্য অঞ্চল এটিকে প্রচুর পরিমাণে জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন ও রপ্তানি করতে সক্ষম করেছে।

প্রধান রপ্তানি দ্রব্যাদি হল অ-লৌহঘটিত ধাতু ও খনিজ, পশমী পণ্য ও অন্যান্য কৃষি পণ্য, বৈদ্যুতিক শক্তি ও কিছু প্রকৌশল পণ্য। আমদানির মধ্যে রয়েছে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস, লৌহঘটিত ধাতু, রাসায়নিক, বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি, কাঠ ও কাগজের পণ্য, কিছু খাবার এবং নির্মাণ সামগ্রী। এর নেতৃস্থানীয় বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে জার্মানি, রাশিয়া, চীন, কাজাখস্তান এবং উজবেকিস্তান। বেইজিং ২০১৩ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) চালু করার পরে, চীন এর অর্থনৈতিক উপস্থিতি প্রসারিত করেছে এবং কিরগিজস্তানে বেশ কয়েকটি বড় অবকাঠামো প্রকল্প শুরু করেছে।

টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর ক্ষেত্রে কিরগিজ প্রজাতন্ত্র বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্সে (এনআরআই) মধ্য এশিয়ার শেষ স্থানে রয়েছে – যা একটি দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের স্তর নির্ধারণের জন্য একটি সূচক। কিরগিজ প্রজাতন্ত্র ২০১৪ সালের এনআরআই র‌্যাঙ্কিং-এ সামগ্রিকভাবে ১১৮ নম্বরে রয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে (নেটওয়ার্কড রেডিনেস সূচক দেখুন)।

হেরিটেজ ইনস্টিটিউট দ্বারা ৭৮তম স্থানে রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী কিরগিজ অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে যা পরিষেবা, রেমিটেন্স এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল। ফলস্বরূপ, অর্থনৈতিক ধাক্কা প্রশমিত করতে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অর্জিত উন্নয়ন অগ্রগতির অনেকাংশ সংরক্ষণের জন্য বিশ্বব্যাংক দেশে বেশ কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়নের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করবে।

পর্যটন

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
ইসিক কুল হ্রদের দক্ষিণ তীরে।
কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
ইসিক কুল হ্রদ

কিরগিজস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য হল ইসিক-কুল হ্রদ। অসংখ্য হোটেল, রিসোর্ট এবং বোর্ডিং হাউস এর উত্তর তীরে অবস্থিত। সবচেয়ে জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত অঞ্চল হল চোলপন-আতা শহর এবং জনবসতির নিকটে অবস্থিত, যেমন কারা-ওই (ডোলিঙ্কা), বোস্টেরি এবং কোরুমডি। ২০০৬ ও ২০০৭ সালে হ্রদ পরিদর্শনকারী পর্যটকদের সংখ্যা বছরে এক মিলিয়নেরও বেশি ছিল। তবে এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

কিরগিজ বিজ্ঞান একাডেমির সদর দপ্তর বিশকেকে অবস্থিত, যেখানে বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিরগিজ গবেষকরা প্রাকৃতিক পণ্যের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি তৈরি করছেন, যেমন বর্জ্য পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ভারী ধাতুর প্রতিকার। কিরগিজস্তান ২০২০ সালে বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে ৯৪ তম স্থানে ছিল, যা ২০১৯ সালে ৯০তম স্থানে ছিল।

জনসংখ্যা

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
একটি জনসংখ্যার পিরামিডে কিরগিজস্তানের বয়স বণ্টন দেখানো হয়েছে (২০০৫)
কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
কিরগিজস্তানের জনসংখ্যার ঘনত্ব, ২০১৫

২০২০ সালের আগস্টে কিরগিজস্তানের জনসংখ্যা ছিল আনুমানিক ৬,৫৮৬,৬০০ জন। এর মধ্যে, ১৫ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যার হার ছিল যথাক্রমে ৩৪.৪% এবং ৬.২%। দেশটির গ্রামীণ জনসংখ্যার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ শহরাঞ্চলে বসবাস করে। গড় জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২৫ জন।

জাতিগোষ্ঠী

দেশের বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী হল কিরগিজ, যা একটি তুর্কি জাতি, যারা জনসংখ্যার ৭৩.৩% নিয়ে গঠিত। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে উত্তরে কেন্দ্রীভূত রুশ (৫.৬%) এবং দক্ষিণে বসবাসকারী উজবেক (১৪.৬%)। ক্ষুদ্র কিন্তু লক্ষণীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে রয়েছে দুঙগান (১.১%), উইঘুর (১.১%), তাজিক (১.১%), কাজাখ (০.৭%), ও ইউক্রেনীয় (০.৫%) এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগত সংখ্যালঘু (১.৭%)। দেশটিতে ৮০টিরও বেশি জাতিগোষ্ঠী রয়েছে।

কিরগিজরা ঐতিহাসিকভাবে আধা-যাযাবর পশুপালক ছিল, যারা গোলাকার তাঁবুতে বসবাস করে, যাকে ইয়ার্ট বলা হয় এবং ভেড়া, ঘোড়া ও ইয়াক লালনপালন করে। এই যাযাবর প্রথাটি ঋতুগতভাবে চলতে থাকে (ট্রান্সহ্যুম্যান্স দেখুন) কারণ পশুপালক পরিবার গ্রীষ্মে উচ্চ পর্বত চারণভূমিতে (বা জেলু) ফিরে আসে। বসে থাকা উজবেক এবং তাজিকরা ঐতিহ্যগতভাবে ফারগানা উপত্যকায় নিচু সেচের জমিতে চাষাবাদ করে।

কিরগিজস্তান স্বাধীনতার পর থেকে এর জাতিগত গঠনে একটি সুস্পষ্ট পরিবর্তন করেছে। জাতিগত কিরগিজদের শতকরা হার ১৯৭৯ সালে প্রায় ৫০% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৩ সালে ৭০%-এ দাঁড়িয়েছে, যেখানে রুশ, ইউক্রেনীয়, জার্মান এবং তাতারদের মতো জাতিগত গোষ্ঠীর শতকরা হার ৩৫% থেকে হ্রাস পেয়ে প্রায় ৭%-এ দাঁড়িয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে, বিপুল সংখ্যক জার্মান জার্মানিতে প্রবাসিত হয়েছে, ১৯৮৯ সালে যাদের সংখ্যা ছিল ১০১,০০০ জন।

জাতিগত গোষ্ঠী অনুযায়ী কিরগিজস্তানের জনসংখ্যা ১৯২৬-২০১৪
জাতিগত
গোষ্ঠী
১৯২৬ আদমশুমারি ১৯৫৯ আদমশুমারি ১৯৮৯ আদমশুমারি ১৯৯৯ আদমশুমারি ২০১৮ আদমশুমারি
সংখ্যা % সংখ্যা % সংখ্যা % % সংখ্যা %
কিরগিজ ৬৬১,১৭১ ৬৬.৬ ৮৩৬,৪৩১ ৪০.৫ ২,২২৯,৬৬৩ ৫২.৪ ৩,১২৮,১৪৭ ৬৪.৯ ৪,৫৮৭,৪৩৯ ৭৩.৩
উজবেক ১১০,৪৬৩ ১১.১ ২১৮,৬৪০ ১০.৬ ৫৫০,০৯৬ ১২.৯ ৬৬৪,৯৫০ ১৩.৮ ৯১৮,২৬২ ১৪.৬
রুশ ১১৬,৪৩৬ ১১.৭ ৬২৩,৫৬২ ৩০.২ ৯১৬,৫৫৮ ২১.৫ ৬০৩,২০১ ১২.৫ ৩৫২,৯৬০ ৫.৬
ইউক্রেনীয় ৬৪,১২৮ ৬.৫ ১৩৭,০৩১ ৬.৬ ১০৮,০২৭ ২.৫ ৫০,৪৪২ ১.০ ১১,২৫২ ০.১
কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
নারিন অঞ্চলের কিরগিজ পুরুষ
কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
ওশে উজবেক

ভাষা

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
কিরগিজস্তান নামটি ১৩শতাব্দী থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত প্রচলিত লিপিতে ব্যবহৃত হয়েছে।

কিরগিজ হল কিরগিজস্তানের রাষ্ট্রভাষা। এছাড়াও রুশ হল সরকারি ভাষা। রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান এবং তাজিকিস্তানের সাথে কিরগিজস্তান হল পাঁচটি সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের মধ্যে একটি, যেখানে রুশকে একটি ডি-জুর সরকারি ভাষা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলি বিভক্ত হওয়ার পর কিরগিজ ভাষা ১৯৯১ সালে কিরগিজস্তানের "রাষ্ট্রভাষা" হিসাবে গৃহীত হয়। কিরগিজস্তান ১৯৯৭ সালে রুশ ভাষাকে "সরকারি ভাষা" হিসাবে গ্রহণ করে। প্রত্যেক ভাষার বিভিন্ন আইনি মর্যাদা রয়েছে।

কিরগিজ ভাষা কিপচাক শাখার একটি তুর্কি ভাষা, যা কাজাখ, কারাকালপাক এবং নোগে তাতারের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এটি আরবি বর্ণমালায় লেখা হতো। ১৯২৮ সালে স্তালিনের নির্দেশে ল্যাটিন লিপি প্রবর্তিত ও গৃহীত হয় এবং পরবর্তীকালে ১৯৪১ সালে সিরিলীয় লিপি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। এটি একটি সংশোধিত পারসো-আরবি বর্ণমালা, যা কিরগিজ বুদ্ধিজীবী এবং বিজ্ঞানী কাসিম টাইনিস্তানভ দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল এবং এটি গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের কিরগিজ ভাষার সরকারি লিপি। প্রতিবেশী দেশ কাজাখস্তানে অমীমাংসিত ভাষা সংস্কারের ফলে, কিরগিজস্তান কয়েক বছরের মধ্যে একমাত্র স্বাধীন তুর্কি-ভাষী দেশ হবে যেটি শুধুমাত্র সিরিলীয় বর্ণমালা ব্যবহার করবে।

২০০৯ সালে, ৪.১ মিলিয়ন ও ২.৫ মিলিয়ন মানুষ স্থানীয় বা দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে যথাক্রমে কিরগিজ ও রুশ ভাষায় কথা বলে। উজবেক হল ৭০০,০০০ স্থানীয় ভাষাভাষীদের নিয়ে দ্বিতীয় সর্বাধিক সাধারণ ভাষা।

রুশ টিভি গণমাধ্যম কিরগিজস্তানে বিশেষ করে রুশ-ভাষী শহর বিশকেক এবং চুই অঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিরগিজস্তানের জনমতের উপর রুশ গণমাধ্যম আউটলেটগুলির একটি বিশাল প্রভাব রয়েছে, বিশেষ করে মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক উন্নয়নের মতো ক্ষেত্রে।

অনেক কর্ম এবং রাজনৈতিক বিষয় রুশ ভাষায় সঞ্চালিত হয়। সম্প্রতি অদ্যাবধি, কিরগিজ স্বদেশে কথ্য ভাষা হিসাবে রয়ে গেছে এবং তা খুব কমই সভা বা অন্যান্য অনুষ্ঠানের সময় ব্যবহৃত হত। যাইহোক, বর্তমানে অধিকাংশ সংসদীয় সভা কিরগিজ ভাষায় পরিচালিত হয়, যারা কিরগিজ ভাষায় কথা বলতে পারে না তাদের জন্য সমকালীন অনুবাদের ব্যবস্থাও রয়েছে।

ভাষার নাম দেশীয় ভাষাভাষী দ্বিতীয় ভাষাভাষী মোট ভাষাভাষী
কিরগিজ ৩,৮৩০,৫৫৬ ২৭১,১৮৭ ৪,১২১,৭৪৩
রুশ ৪৮২,২৪৩ ২,১০৯,৩৯৩ ২,৫৯১,৬৩৬
উজবেক ৭৭২,৫৬১ ৯৭,৭৫৩ ৮৭০,৩১৪
ইংরেজি ২৮,৪১৬ ২৮,৪১৬
ফ্রেঞ্চ ৬৪১ ৬৪১
জার্মান ১০ ১০
অন্যান্য ২৭৭,৪৩৩ ৩১,৪১১ ৩০৮,৮৪৪

নগর কেন্দ্র

 
কিরগিজস্তানের বৃহত্তম শহরসমূহ বা নগরসমূহ
ক্রম অঞ্চল জনসংখ্যা
কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
বিশকেক
কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
ওশ
বিশকেক বিশকেক ১,০৭৪,০৭৫ কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
জালাল-আবাদ
কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
কারাকোল
ওশ ওশ অঞ্চল ৩২২,১৬৪
জালাল-আবাদ জালাল-আবাদ অঞ্চল ১২৩,৩২৯
কারাকোল ইসিক-কুল অঞ্চল ৮৪,৩৫১
তকমক চুই অঞ্চল ৭১
ওজগোন ওশ অঞ্চল ৬২,৮০২
কারা-বালতা চুই অঞ্চল ৪৮,২৭৮
বালিকচি ইসিক-কুল অঞ্চল ৪২,৮৭৫
নারিন নারিন অঞ্চল ৪১,১৭৮
১০ তালাস তালাস অঞ্চল ৪০,৩৯৮

ধর্ম

কিরগিজস্তানে ধর্ম
ইসলাম
  
৯০%
খ্রিস্টান
  
৮%
অন্যান্য
  
৩%
কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
কারাকোল দুঙগান মসজিদ

ইসলাম কিরগিজস্তানের প্রধান ধর্ম। সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক ধারণা করে যে ২০১৭ সাল অনুযায়ী, জনসংখ্যার ৯০% মুসলিম, এর সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি; ৭% খ্রিস্টান, ৩% রুশ অর্থোডক্সি এবং বাকিরা অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। ২০০৯ সালের পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিরগিজস্তানের জনসংখ্যার ৮৬.৩% ইসলাম মেনে চলে। মুসলমানদের বৃহৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি ও হানাফি মাযহাবের অনুসারী, যদিও ২০১২ সালে একটি পিউ সমীক্ষার প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে যে একটি প্রশ্নাবলীর উত্তরদাতাদের মধ্যে মাত্র ২৩% নিজেদেরকে সুন্নি হিসাবে পরিচয় দিতে বেছে নিয়েছে এবং ৬৪% স্বেচ্ছায় বলেছে যে তারা "শুধু একজন মুসলিম"। কিছু আহমদীয়া মুসলিম আছে, যদিও দেশটিতে এটি স্বীকৃত নয়। সোভিয়েত আমলে রাষ্ট্রীয় নাস্তিকতাকে উৎসাহিত করা হয়েছিল। বর্তমানে, কিরগিজস্তান একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, যদিও ইসলাম রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তার করছে। উদাহরণস্বরূপ, করমুক্ত ব্যবস্থার আওতায় কর্মকর্তাদের "হজ্জ" (মক্কার তীর্থযাত্রা) ভ্রমণের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হয়েছে।

যদিও কিরগিজস্তানে ইসলাম অনেকের কাছে সাগ্রহে দৈনিক অনুশীলনের চেয়ে সাংস্কৃতিক পরিবেশ বেশি, জনগণ ধর্মীয় মূল্যবোধ পুনরধিষ্ঠিত করার জন্য সমর্থন প্রকাশ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, মানবাধিকার ন্যায়পাল তুরসুনবে বাকির-উলু উল্লেখ করেছেন, "স্বাধীনতার এই যুগে, এটা আশ্চর্যজনক নয় যে শুধুমাত্র কিরগিজস্তানেই নয়, কমিউনিস্ট-পরবর্তী অন্যান্য প্রজাতন্ত্রগুলিতেও আধ্যাত্মিক শিকড় ফিরে এসেছে। নৈতিক মাত্রা ছাড়া বাজার-ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা অনৈতিক হবে।"

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
কিরগিজস্তানে নির্মাণাধীন মসজিদ

এছাড়াও কিরগিজস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি আসকার আকায়েভের কন্যা বারমেট আকায়েভা ২০০৭ সালের জুলাইয়ে একটি সাক্ষাতকারে বলেছিলেন যে ইসলাম ক্রমবর্ধমানভাবে সারা দেশে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি জোর দিয়েছিলেন যে সম্প্রতি অনেক মসজিদ তৈরি করা হয়েছে এবং কিরগিজরা ক্রমবর্ধমানভাবে নিজেদেরকে ইসলামে আত্মনিবেদন করছে, যা তিনি উল্লেখ করেছেন যে "নিজেই খারাপ কিছু নয়। এটি আমাদের সমাজকে আরও নৈতিক ও পরিচ্ছন্ন রাখে।" এখানে একটি সমসাময়িক সুফি তরিকা রয়েছে যা প্রচলিত ইসলামের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন ইসলামকে মেনে চলে।

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
বিশকেক ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চ

কিরগিজস্তানে অনুশীলন করা অন্যান্য ধর্মের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে রুশ অর্থোডক্স এবং ইউক্রেনীয় অর্থোডক্স, খ্রিস্টধর্মের সংস্করণ যা মূলত রুশ এবং ইউক্রেনীয়রা অনুশীলন করে থাকে। ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ জন যিহোবার সাক্ষিদের একটি সম্প্রদায়, যারা কিরগিজ এবং রুশ উভয় ভাষী ধর্মসভায় অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি কিছু চীনা এবং তুর্কি-ভাষী গোষ্ঠীতেও অংশগ্রহণ করে থাকে। জাতিগত জার্মানদের একটি ছোট সংখ্যালঘুরাও খ্রিস্টান, অধিকাংশই লুথেরান ও অ্যানাব্যাপ্টিস্ট এবং সেইসাথে প্রায় ৬০০ জন রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের।

সংস্কৃতি

ঐতিহ্য

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
সঙ্গীতশিল্পীরা ঐতিহ্যবাহী কিরগিজ সঙ্গীত পরিবেশন করছে
কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
কারাকোলের একটি ইউর্ট ক্যাম্পে একজন ঐতিহ্যবাহী কিরগিজ মানসচি মানসের মহাকাব্য-এর একটি অংশ পরিবেশন করছে
  • মানস, একটি মহাকাব্য
  • কমুজ, একটি তিন-তারের বাজনা বিশেষ
  • তুশ কিজ, বড়, বিস্তৃতভাবে সূচিশিল্প করা, যা দেয়ালে ঝুলানো যায়
  • শিরডাক, ছায়া-জোড়ায় তৈরি সমতল গদি
  • অন্যান্য টেক্সটাইল, যা বিশেষ করে ফেল্ট থেকে তৈরি
  • আলা কাচুউ, "বধূ অপহরণ", কিরগিজস্তানে বিয়ের একটি ঐতিহ্যবাহী রূপ
  • বাজপাখি
কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
একটি ঈগল সঙ্গে শিকার

বধূ অপহরণ প্রথা বেআইনি তবে এখনও প্রচলিত রয়েছে। বধূ অপহরণ আসলে ঐতিহ্যগত কিনা তা বিতর্কিত। কিছু বিভ্রান্তি এই বিষয় থেকে উদ্ভূত হতে পারে যে আনুষ্ঠানিক বিয়ে ছিল ঐতিহ্যবাহী, এবং আনুষ্ঠানিক বিয়ে থেকে বাঁচার একটি উপায় ছিল সম্মতিমূলক "অপহরণ" ব্যবস্থা।

পতাকা

জাতীয় পতাকার মাঝখানে ৪০-রশ্মিযুক্ত হলুদ সূর্য ৪০টি উপজাতিকে বোঝায় যারা রাশিয়ার হস্তক্ষেপের পূর্বে একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থানের সময় সমগ্র কিরগিজ সংস্কৃতি তৈরি করেছিল। সূর্যের ভিতরের রেখাগুলি একটি ইয়ার্টের মুকুট বা তুন্দুককে (কিরগিজ түндүк) বোঝায়, যা একটি প্রতীক কিরগিজ স্থাপত্যের অনেক ক্ষেত্রে প্রতিলিপি করা হয়েছে। পতাকার লাল অংশ কিরগিজস্তানের শান্তি ও উন্মুক্ততাকে বোঝায়।

সোভিয়েত শাসনের অধীনে এবং ১৯৯২ সালের আগে, এটিতে দুটি বড় নীল ডোরা এবং মাঝখানে একটি সাদা পাতলা ডোরা সহ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতাকা ছিল।

সরকারি ছুটি

প্রতি ১লা জানুয়ারি নববর্ষ উদযাপনের পাশাপাশি কিরগিজরা মহাবিষুবে ঐতিহ্যবাহী নববর্ষ উৎসব নওরোজ পালন করে। এই বসন্তের ছুটির দিনটি ভোজন ও উৎসব সহকারে উদযাপিত হয় যেমন ঘোড়ার খেলা উলাক তারতিশ।

এটি কিরগিজস্তানে সরকারি ছুটির তালিকা:

  • ১ জানুয়ারি – ইংরেজি নববর্ষ
  • ৭ জানুয়ারি – অর্থোডক্স ক্রিসমাস
  • ২৩ ফেব্রুয়ারি – ফাদারল্যান্ড প্রতিবাদী দিবস
  • ৮ মার্চ – নারী দিবস
  • ২১-২৩ মার্চ – নূরুজ মায়রামি, পারস্য নববর্ষ (বসন্ত উৎসব)
  • ৭ এপ্রিল – জাতীয় বিপ্লব দিবস
  • ১ মে – শ্রমিক দিবস
  • ৫ মে – সংবিধান দিবস
  • ৮ মে – স্মরণ দিবস
  • ৯ মে – বিজয় দিবস
  • ৩১ আগস্ট - স্বাধীনতা দিবস
  • ৭-৮ নভেম্বর - পূর্বসূরীদের ইতিহাস এবং স্মরণ দিবস

দুটি অতিরিক্ত মুসলিম ছুটির দিন ওরোজো আইত এবং কোরমান (বা কোরবান) আইত চন্দ্র পঞ্জিকা দ্বারা নির্ধারিত হয়।

ক্রীড়া

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
ব্যান্ডি: জাপানের বিপক্ষে লাল রঙে কিরগিজস্তান

ফুটবল কিরগিজস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। সরকারি পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা কিরগিজ প্রজাতন্ত্র ফুটবল ফেডারেশন পরিচালিত হয়, যা ১৯৯২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভক্ত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি কিরগিজস্তান জাতীয় ফুটবল দল পরিচালনা করে।

কুস্তিও এখানে খুব জনপ্রিয় খেলা। ২০০৮ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে, কিরগিজস্তানের দুই ক্রীড়াবিদ গ্রিকো-রোমান কুস্তিতে পদক জিতেছিল: তারা হলেন কানাটবেক বেগালিয়েভ (রৌপ্য) এবং রুসলান তিউমেনবায়েভ (ব্রোঞ্জ)।

২০০৯ সালে প্রথম আইস হকি চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত কিরগিজস্তানে আইস হকি খেলা তেমন জনপ্রিয় ছিল না। কিরগিজস্তান পুরুষ জাতীয় আইস হকি দল ২০১১ সালের শীতকালীন এশিয়ান গেমসে প্রিমিয়ার ডিভিশন জিতেছিল এবং ছয়টি খেলার মধ্যে ছয়টিতে জয়লাভ করে। এটি ছিল প্রথম বড় আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসর যেটিতে কিরগিজস্তান পুরুষ আইস হকি দল অংশ নিয়েছিল। কিরগিজস্তান পুরুষ আইস হকি দল ২০১১ সালের জুলাইয়ে আইএইচএফ-এ যোগদান করে।

দেশে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ব্যান্ডি খেলা। এশিয়ান শীতকালীন গেমসে কিরগিজ জাতীয় দল কিরগিজস্তানের হয়ে প্রথম পদক অর্জন করেছিল পাশাপাশি ব্রোঞ্জও জিতেছিল। তারা ব্যান্ডি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১২-তে খেলেছিল, এটি ছিল এই টুর্নামেন্টে তাদের প্রথম অংশগ্রহণ।

কারাতে: ভ্যালেন্টিনা শেভচেঙ্কো একজন কিরগিজস্তানি-পেরুভিয়ান পেশাদার মিশ্র মার্শাল আর্টিস্ট যিনি আলটিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপের (ইউএফসি) মহিলাদের ফ্লাইওয়েট বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, যেখানে তিনি বর্তমান মহিলা ফ্লাইওয়েট চ্যাম্পিয়ন।

বক্সিং: দিমিত্রি বিভল হলেন টোকমোকের একজন কিরগিজস্তানি পেশাদার বক্সার, যিনি লাইট হেভিওয়েট বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৭ সাল থেকে, তিনি ওয়ার্ল্ড বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন লাইট হেভিওয়েট শিরোপা ধরে রেখেছেন। ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত, বিভলকে ট্রান্সন্যাশনাল বক্সিং র‍্যাঙ্কিং বোর্ড ও বক্সরেক কর্তৃক বিশ্বের সেরা সক্রিয় লাইট-হেভিওয়েট এবং দ্য রিং ম্যাগাজিনে তৃতীয় স্থান দেওয়া হয়।

কিরগিজস্তান জাতীয় বাস্কেটবল দল ১৯৯৫ সালের আনুষ্ঠানিক এশিয়ান বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশিপে এর সেরা পারফরম্যান্স করেছিল, যেখানে দলটি আশ্চর্যজনকভাবে ইরান, ফিলিপাইন এবং জর্ডানের মতো সম্ভাব্য জয়ী দলদের থেকেও এগিয়ে ছিল।

অশ্বারোহণ

কিরগিজ সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যবাহী জাতীয় খেলা অশ্বারোহণের গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে।

সমগ্র মধ্য এশিয়ার মতো খুবই জনপ্রিয় খেলা হল উলাক টারটিশ, একটি দলগত খেলা যা পোলো এবং রাগবির মতো মুখোমুখি হয়, যেখানে দুটি দলের আরোহীরা একটি ছাগলের মাথাবিহীন মৃতদেহ দখলের জন্য কুস্তি করে, যা তারা প্রতিপক্ষের গোল সীমানা বরাবর বা প্রতিপক্ষের গোলে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে: মাঠে চিহ্নিত একটি একটি বড় টব বা বৃত্ত।

অশ্বপৃষ্ঠের অন্যান্য জনপ্রিয় খেলাগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • চবিশে - একটি দীর্ঘ-দূরত্বের ঘোড়দৌড়, কখনও কখনও ৫০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে হয়ে থাকে
  • জুম্বি আতমাই - মূল্যবান ধাতুর একটি বড় বার ("জুম্বি") একটি সুতো দিয়ে একটি খুঁটির সাথে বাঁধা থাকে এবং প্রতিযোগীরা ছুটে চলার সময় এটিকে গুলি করে সুতোটি ভাঙার চেষ্টা করে
  • কিজ কু - ঘোড়া নিয়ে যখন একজন মেয়ে ছুটে যায় তখন তাকে তাড়া করে চুমু দিতে চায়; যদি পুরুষ যাতে সফল না হয় তাই মেয়েটি তাকে তাড়া করতে পারে এবং তার "কামচি" (ঘোড়ার চাবুক) দিয়ে তাকে মারতে পারে
  • উদারিশ - দুই প্রতিযোগী ঘোড়ার পিঠে কুস্তি করে, প্রত্যেকেই তার ঘোড়া থেকে অন্যকে ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করে
  • টাইন এমেই - সম্পূর্ণ মাঠ দৌড়ে একটি মুদ্রা কুড়াতে হয়

শিক্ষা

কিরগিজস্তানের বিদ্যালয় ব্যবস্থায় প্রাথমিক (প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণী, কিছু বিদ্যালয়ে ঐচ্ছিক ০ শ্রেণী রয়েছে), মাধ্যমিক (পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণী) এবং উচ্চ (দশম থেকে একাদশ শ্রেণী) বিভাগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শিশুরা সাধারণত ৬ বা ৭ বছর বয়সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। প্রতিটি শিশুর জন্য নবম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা সম্পন্ন করা এবং সমাপ্তির একটি সনদপত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। দশম থেকে একাদশ শ্রেণীর শিক্ষা ঐচ্ছিক, তবে স্নাতক এবং একটি রাষ্ট্র-অনুমোদিত বিদ্যালয় ডিপ্লোমা পেতে এ দুটি শ্রেণীর শিক্ষা সম্পূর্ণ করা প্রয়োজন। স্নাতক হওয়ার জন্য, একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ১১-বছরের বিদ্যালয় কোর্স সম্পূর্ণ করতে হবে এবং সাহিত্য, গণিত, ইতিহাস ও একটি বিদেশী ভাষায় ৪টি বাধ্যতামূলক রাষ্ট্রীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। বিশকেকে (রাজধানী শহর) ৭৭টি এবং দেশের বাকি অংশে ২২০টিরও বেশি পাবলিক বিদ্যালয় রয়েছে। কিরগিজস্তানে ৫৫টি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যার মধ্যে ৩৭টি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে, কিরগিজস্তানের নারিনে সেন্ট্রাল এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়।

গ্রন্থাগার

কিরগিজস্তানে মোট ১,০৬৬টি গ্রন্থাগার রয়েছে। কিরগিজ প্রজাতন্ত্র জাতীয় গ্রন্থাগার হল দেশের প্রাচীনতম গ্রন্থাগার, যা ১৯৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিরগিজ গ্রন্থাগারগুলিতে সম্প্রদায়ের প্রবেশ সম্প্রসারণের জন্য কাজ করা হচ্ছে, যা মারাকেশ ভিআইপি চুক্তি স্বাক্ষর এবং উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার পোর্টালের মতো প্রকল্পগুলিতে স্পষ্ট হয়েছে।

পরিবহন

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
বিশকেক পশ্চিম বাস টার্মিনাল

কিরগিজস্তানের পরিবহন দেশটির অত্যুচ্চ ভূসংস্থান দ্বারা কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ। রাস্তাগুলিকে ৩,০০০ মিটার (৯,৮০০ ফুট) উচ্চতা এবং আরও বেশি খাড়া উপত্যকা অতিক্রম করতে হয় ও ঘন ঘন মাটি ধস এবং তুষার তুষারপাতের কবলে পড়তে হয়। অনেক প্রত্যন্ত এবং উচ্চ-উচ্চতা অঞ্চলে শীতকালীন ভ্রমণ অসম্ভব হয়ে পড়ে।

অতিরিক্ত সমস্যাগুলি থেকে এই তথ্য আসে যে, সোভিয়েত আমলে নির্মিত অনেক রাস্তা এবং রেললাইন আজ আন্তর্জাতিক সীমানা দ্বারা বিভক্ত করা হয়েছে, যেখানে সেগুলো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়নি সেখানে অতিক্রম করার জন্য সময়সাপেক্ষ সীমান্ত আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন হয়। ঘোড়া এখনও বিকল্প পরিবহন হিসাবে বহুল ব্যবহৃত, বিশেষ করে কিরগিজস্তানের অনেক গ্রামীণ এলাকায় রাস্তার অবকাঠামো বিস্তৃত না হওয়ায় ঘোড়া এমন জায়গায় পৌঁছাতে সক্ষম হয় এবং আমদানি করা জ্বালানির প্রয়োজন হয় না কারণ সেখানে মোটর গাড়ি চলতে পারে না এবং এসব ব্যয়বহুল।

বিমানবন্দর

সোভিয়েত আমলের শেষের দিকে কিরগিজস্তানে প্রায় ৫০টি বিমানবন্দর এবং বিমানক্ষেত্র ছিল, যার মধ্যে অনেকগুলো মূলত চীনের খুব কাছাকাছি সীমান্ত অঞ্চলে সামরিক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। কিরগিজস্তান বিমান কোম্পানি চীন, রাশিয়া এবং অন্যান্য স্থানীয় দেশগুলিতে বিমান পরিবহন সরবরাহ করে।

  • বিশকেকের কাছে মানস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যেখানে মস্কো, তাসখন্দ, আলমাটি, উরুমকি, ইস্তাম্বুল, বাকু এবং দুবাইয়ের পরিষেবা চালু রয়েছে।
  • ওশ বিমানবন্দরটি দেশের দক্ষিণে প্রধান বিমান টার্মিনাল, যেখানে বিশকেকের সাথে প্রতিদিনের সংযোগ রয়েছে এবং মস্কো, ক্রাসনোয়ারস্ক, আলমাটি ও আরও আন্তর্জাতিক জায়গার পরিষেবা চালু রয়েছে।
  • জালাল-আবাদ বিমানবন্দর দৈনিক ফ্লাইটের মাধ্যমে বিশকেকের সাথে যুক্ত। কিরগিজস্তানের জাতীয় পতাকাবাহী BAe-146 বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করে। গ্রীষ্মের মাসগুলিতে, একটি সাপ্তাহিক ফ্লাইট জালাল-আবাদকে ইসিক-কুল অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করে।
  • সোভিয়েত আমলে নির্মিত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে, শুধুমাত্র মাঝে মাঝে ব্যবহৃত হয় বা সামরিক ব্যবহারের জন্য সীমাবদ্ধ (যেমন, বিশকেকের কাছে কান্ট বিমান ঘাঁটি, যা রুশ বিমান বাহিনী ব্যবহার করে)।

রেলপথ

উত্তরে চুই উপত্যকা এবং দক্ষিণে ফারগানা উপত্যকা ছিল মধ্য এশিয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নের রেল ব্যবস্থার শেষ পথ। সোভিয়েত-পরবর্তী স্বাধীন রাষ্ট্রগুলির উত্থানের পর, প্রশাসনিক সীমানা বিবেচনা না করে যে রেললাইনগুলি তৈরি করা হয়েছিল সেগুলি সীমানা দ্বারা কেটে দেওয়া হয়েছে ফলে যান চলাচল মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। কিরগিজস্তানের মধ্যে রেল লাইনের ছোট বিটগুলি রয়েছে মোট প্রায় ৩৭০ কিমি (২৩০ মাইল) (১,৫২০ মিমি (৫৯.৮ ইঞ্চি) ব্রডগেজ), তাসখন্দ, আলমাটি ও রাশিয়ার শহরগুলির মতো কেন্দ্রগুলিতে দীর্ঘ দূরত্বে পূর্বের বাল্ক ট্র্যাফিকের অনুপস্থিতিতে এটির সামান্য অর্থনৈতিক মূল্য রয়েছে।

উত্তরে বালিকচি থেকে এবং/অথবা দক্ষিণে ওশ থেকে চীন পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের বিষয়ে অস্পষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে, তবে নির্মাণের খরচ প্রচুর হতে পারে।

সংলগ্ন দেশের সাথে রেল যোগাযোগ

  • কাজাখস্তান – হ্যাঁ – বিশকেক শাখা – একই গেজ
  • উজবেকিস্তান – হ্যাঁ – ওশ শাখা – একই গেজ
  • তাজিকিস্তান – না – একই গেজ
  • চীন - না - গেজ বিরতি ১৫২৪ মিমি/১৪৩৫ মিমি

মহাসড়ক

কিরগিজস্তান: ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, রাজনীতি 
ওশের রাস্তার দৃশ্য।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায়, বিশকেক থেকে ওশ পর্যন্ত উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমে সংযোগকারী একটি প্রধান সড়ক সম্প্রতি সম্পন্ন হয়েছে। এটি দেশের দুটি প্রধান জনসংখ্যা কেন্দ্র - উত্তরের চুই উপত্যকা এবং দক্ষিণের ফারগানা উপত্যকার মধ্যে যোগাযোগকে যথেষ্ট সহজ করেছে। এই সড়কের একটি শাখা উত্তর-পশ্চিমে তালাস উপত্যকায় ৩,৫০০ মিটার গিরিপথ জুড়ে চলে গিয়েছে। বর্তমানে ওশ থেকে চীনে একটি প্রধান সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে।

  • মোট: ৩৪,০০০ কিমি (২১,১২৭ মা) (১৫০ কিমি (৮৭ মাইল) এক্সপ্রেসওয়ে অন্তর্ভুক্ত)
  • পাকা: ২২,৬০০ কিমি (১৪,০৪৩ মা) (সব-আবহাওয়ায় নুড়ি-পৃষ্ঠের কিছু সড়ক অন্তর্ভুক্ত)
  • কাঁচা: ৭,৭০০ কিমি (৪,৭৮৫ মা) (এই সড়কগুলি নরম মাটি দিয়ে তৈরি এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় এটি অতিক্রম করা কঠিন) (১৯৯০)

বন্দর এবং পোতাশ্রয়

  • ইসিক কুল হ্রদে বালিকচি (ইসিক-কোল বা রাইবাচিয়ে)।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

    সরকার
    সাধারণ তথ্য
    মানচিত্র


Tags:

কিরগিজস্তান ব্যুৎপত্তিকিরগিজস্তান ইতিহাসকিরগিজস্তান রাজনীতিকিরগিজস্তান ভূগোলকিরগিজস্তান অর্থনীতিকিরগিজস্তান জনসংখ্যাকিরগিজস্তান সংস্কৃতিকিরগিজস্তান শিক্ষাকিরগিজস্তান পরিবহনকিরগিজস্তান আরও দেখুনকিরগিজস্তান তথ্যসূত্রকিরগিজস্তান আরও পড়ুনকিরগিজস্তান বহিঃসংযোগকিরগিজস্তানউজবেকিস্তানকাজাখস্তানকিরগিজ ভাষাচীনতাজিকিস্তানবিশকেকমধ্য এশিয়ারাজধানীশহরস্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলহেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়এইচআইভিদুবাই আমিরাতধানসলিমুল্লাহ খানস্পিন (পদার্থবিজ্ঞান)অনন্যা পাণ্ডেপাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭০আবুল খায়ের গ্রুপঢাকা বিভাগলিওনেল মেসিষাট গম্বুজ মসজিদবাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনমহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সরঞ্জামের তালিকাপর্নোগ্রাফিগায়ত্রী মন্ত্রবাংলাদেশের সংবিধানপাল সাম্রাজ্যঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগশুক্রাণুশিবপায়ুসঙ্গমবগুড়া জেলামৌর্য সাম্রাজ্যশ্রীকৃষ্ণকীর্তনলক্ষ্মীকলকাতা নাইট রাইডার্সভিয়েতনাম যুদ্ধসূর্যচন্দ্রগুপ্ত মৌর্যদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থাবিশ্বের মানচিত্রদক্ষিণ কোরিয়াবাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাআবহাওয়ামুঘল সাম্রাজ্যরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসব্যঞ্জনবর্ণছয় দফা আন্দোলনভারতের জাতীয় পতাকাহার্ডিঞ্জ ব্রিজহরে কৃষ্ণ (মন্ত্র)বেগম রোকেয়াইন্দ্র (দেবতা)বাংলাদেশী অভিনেত্রীদের তালিকারবি (কোম্পানি)বাংলাদেশ নৌবাহিনীনিরাপদ যৌনতাআবু বকরইব্রাহিম (নবী)সাতই মার্চের ভাষণটাঙ্গাইল জেলামারমাবাংলাদেশের ঔষধ শিল্পহাদিসপূর্ণিমা (অভিনেত্রী)চাকমাঅস্ট্রেলিয়াবাঙালি হিন্দু বিবাহপারমাণবিক অস্ত্রচেন্নাই সুপার কিংসজাযাকাল্লাহবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানইতালিমুহাম্মাদইশার নামাজপলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমপ্রিয়তমাইউরোপডিএনএবাংলাদেশের কোম্পানির তালিকাশাকিব খান অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকা🡆 More