ব্যাকরণ উপসর্গ

উপসর্গ বা আদ্যপ্রত্যয় হলো ভাষায় ব্যবহৃত কিছু অব্যয়সূচক শব্দাংশ যাদের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই, কিন্তু অর্থের দ্যোতনা তৈরির ক্ষমতা আছে। উপসর্গ শব্দ বা শব্দমূলের শুরুতে বসে নতুন অর্থবহ শব্দ তৈরি করে, শব্দাংশের শুরুতে বসে না।

উপসর্গ যুক্ত হলে কোনো শব্দের বিপরীত শব্দ তৈরি হয় অথবা অর্থের উৎকর্ষ বা সংকোচন হয়। উপসর্গ সম্পর্কিত আলোচনা ব্যাকরণের রূপতত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত।

ব্যুৎপত্তি ও সংজ্ঞা

‘উপসর্গ’ শব্দটির রূপতত্ত্বগত বিশ্লেষণ – উপ + √সৃজ্‌ + অ। ‘উপসর্গ’ কথাটির মূল অর্থ ‘উপসৃষ্ট’। "যেসব অর্থহীন অব্যয় পদ নামবাচক বা কৃদান্ত শব্দের পূর্বে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে এবং অর্থের পরির্বতন সাধন করে, এগুলোকে উপসর্গ বলে।"

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে,

“সংস্কৃতে কতগুলো অব্যয় শব্দ আছে, এগুলো ধাতুর পূর্বে বসে এবং ধাতুর মূল ক্রিয়ার গতি নির্দেশ করে এর অর্থের প্রসারণ, সঙ্কোচন বা অন্য পরিবর্তন আনয়ন করে দেয়। এরূপ অব্যয় শব্দকে উপসর্গ বলে।”

ড. মুহাম্মদ এনামুল হকের মতে,

“যেসব অব্যয় শব্দ কৃদান্ত বা নামপদের পূর্বে বসে শব্দগুলোর অর্থের সংকোচন, সম্প্রসারণ বা অন্য কোন পরিবর্তন সাধন করে, ঐ সব অব্যয় শব্দকে বাংলা ভাষায় উপসর্গ বলে।”

অশোক মুখোপাধ্যায়ের মতে,

“বাংলা ভাষায় কিছু অব্যয় আছে যারা ধাতু বা শব্দের আগে যুক্ত হয়ে তাদের অর্থ বদল করে দেয়। এদেরই বলা হয় উপসর্গ।”

ড. রামেশ্বর শ'-এর মতে,

“শব্দ বা ধাতুর আদিতে যা যোগ হয় তাকে বলে উপসর্গ।”

উপসর্গ ও অনুসর্গ

অনুসর্গ হলো কিছু অব্যয়সূচক শব্দ যেগুলো কখনো স্বাধীন পদরূপে, আবার কখনো শব্দ বিভক্তির মতো বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে। উপসর্গ ও অনুসর্গের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। উপসর্গ ধাতু বা নাম-প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি শব্দের মতো আচরণ করলেও অনুসর্গ পূর্বের পদ থেকে পৃথকভাবে আশ্রিত হিসাবে অবস্থান করে। ‘প্রতি' ও 'অতি' – উপসর্গ দুটি ব্যতীত আর কোনো উপসর্গের স্বতন্ত্র প্রয়োগ নেই, কিন্তু সকল অনুসর্গের স্বতন্ত্র প্রয়োগ আছে।

উপসর্গ ধাতু বা নাম-প্রকৃতির আগে বসে সেই ধাতু বা নাম-প্রকৃতির অর্থ-পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন শব্দ গঠন করে। অন্যদিকে, অনুসর্গ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের পরে বসে শব্দ বিভক্তির কাজ করে।

প্রকারভেদ

বাংলা ভাষায় অর্ধশতাধিক উপসর্গ রয়েছে। এই উপসর্গগুলোকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে:

  • তৎসম (সংস্কৃত) উপসর্গ: এ ধরনের উপসর্গ সংস্কৃত শব্দের আগে বসে। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তৎসম উপসর্গ ২০টি, যথা: অতি-, অধি-, অনু-, অপ-, অপি-, অব-, অভি-, আ-, উপ-, উত্‌-, দুর্‌-, নি- নির্‌-/নির-, পরা-, পরি-, প্র-, প্রতি-, বি-, সু-সম্‌-
  • খাঁটি বাংলা উপসর্গ: এ ধরনের উপসর্গ বাংলা শব্দের আগে বসে। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত খাঁটি বাংলা উপসর্গ ২২টি, যথা: অ-, অঘা-, অজ-, অনা-, আ-, আড়্‌-, আন-, আব-, ইতি-, উন্‌-, কদ-, কু-, নি-, পাতি-, বি-, ভর-, রাম-,অন-, স-, সা-, সু-হা-

উল্লেখ্য, আ-, নি-, বি-, সু- — এই চারটি উপসর্গ সংস্কৃত ও বাংলা উভয় ভাষাতে ব্যবহৃত হয়। ব্যবহারের উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয় এরা খাঁটি বাংলা না সংস্কৃত উপসর্গ।

  • বিদেশি উপসর্গ:
    • ফারসি উপসর্গ - কম-, কার-, দর-, না-, নিম-, ফি-, ব-, বে-, বর-, বদ-।
    • আরবি উপসর্গ - আম-, খাস-, খয়ের-, গর্-, বাজে-, লা-।
    • উর্দু হিন্দি উপসর্গ - হর-, হরেক।
    • ইংরেজি উপসর্গ - ফুল-, সাব-, হাফ-,  হেড-।

উপসর্গে হাইফেন

উপসর্গে কখনো কখনো হাইফেন ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে যখন হাইফেনবিহীন বানান অন্য কোনো শব্দের অনুরূপ হয়ে যায় অথবা যখন উপসর্গ যোগ করলে সাধিত শব্দটি ভুল ব্যাখ্যাযোগ্য, অস্পষ্ট বা একরকম "আজব" বলে মনে হয় (উদাহরণস্বরূপ, যেভাবে ‘ঐ’ দ্বারা যেন বর্ণ না বোঝায় তাই বিভ্রান্তি এড়াতে বাক্যে ‘ওই’ ব্যবহার করা হয়)। যাইহোক, শব্দগঠনে সাধারণত হাইফেনহীন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে তখন, যখন সাধিত শব্দটি বিভিন্ন প্রসঙ্গে ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে তুলনামূলকভাবে পরিচিত বা জনপ্রিয় হয়ে উঠে। প্রচলিত নিয়মে হাইফেনের অভাবে কোনো সাধিত শব্দের অর্থের স্পষ্টতা বিঘ্নিত না হওয়া পর্যন্ত উপসর্গের পর হাইফেন দেওয়া হয় না।

সাধারণত বিদেশি উপসর্গের ক্ষেত্রে, স্বরধ্বনি দ্বারা শুরু হওয়া শব্দ ও উপসর্গকে পৃথক করে বোঝাতে বা অর্থের ভুল উচ্চারণ রোধে উপসর্গের পর হাইফেন ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন- ইংরেজি subunit (সাবিউনিট) এর পরিবর্তে sub-unit (সাব-ইউনিট)। কোনো শব্দ অধিক প্রচলিত হয়ে গেলে হাইফেন ব্যবহৃত হয় না, যেমন হেড-মাস্টার এর পরিবর্তে হেডমাস্টার। সাধারণত বর্তমানে উপসর্গযোগে শব্দ গঠনে ‌হাইপেন ব্যবহার করা হয় না | কিন্তু করলে কোন সমস্যা নেই |

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

Tags:

ব্যাকরণ উপসর্গ ব্যুৎপত্তি ও সংজ্ঞাব্যাকরণ উপসর্গ উপসর্গ ও অনুসর্গব্যাকরণ উপসর্গ প্রকারভেদব্যাকরণ উপসর্গ উপসর্গে হাইফেনব্যাকরণ উপসর্গ আরও দেখুনব্যাকরণ উপসর্গ তথ্যসূত্রব্যাকরণ উপসর্গঅব্যয় পদ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

মালদ্বীপের ইতিহাসওয়ালাইকুমুস-সালামমেঘনা বিভাগবিদ্যালয়মুস্তাফিজুর রহমানআমার দেখা নয়াচীনপলাশীর যুদ্ধপানিকারকজনি সিন্সনারীদের জন্য পর্নসৌদি আরবদৈনিক যুগান্তরবাংলাদেশের বিমানবন্দরের তালিকামিয়া খলিফামহাস্থানগড়বাংলাদেশ টেলিভিশনমৃণাল ঠাকুরছয় দফা আন্দোলনবাংলা ভাষা আন্দোলনবিজ্ঞানকুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টউমর ইবনে আবদুল আজিজবাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষযুক্তফ্রন্টবাংলা একাডেমিবেঞ্জামিন নেতানিয়াহুঢাকা মেট্রোরেলের স্টেশনের তালিকাবিদ্রোহী (কবিতা)আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীমাইকেল মধুসূদন দত্তবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদবিউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগময়মনসিংহ জেলামুহাম্মাদের সন্তানগণএল নিনোইসলামের পঞ্চস্তম্ভবাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্রখলিফাদের তালিকাআসমানী কিতাবরবীন্দ্রসঙ্গীতবাংলাদেশের জলবায়ুকিরগিজস্তানহোমিওপ্যাথি৬৯ (যৌনাসন)শিল্প বিপ্লবদিল্লিবাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের তালিকাকৃত্রিম বৃষ্টিপাতবাংলাদেশের সংবাদপত্রের তালিকাটেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাব্যাংকদীনবন্ধু মিত্রব্যবস্থাপনামানিক বন্দ্যোপাধ্যায়আব্বাসীয় খিলাফতখারিজিবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়আকিজ গ্রুপআল্লাহমাইটোসিসবাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসবাগানবিলাসসাদিয়া জাহান প্রভাবিজয় দিবস (বাংলাদেশ)ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবীর শ্রেষ্ঠহার্নিয়াক্যালসিয়ামচট্টগ্রাম জেলাযতিচিহ্ন🡆 More